আমার শহরে তুমি পর্ব ২ || লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি পর্ব ২
লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

কিছুক্ষন পর কাজী সাহবে চলে আসলেন।তিনি বিয়ের কার্যক্রম শুরু করলেন প্রথমে রক্তিমকে কবুল বলতে বললেন সে কোনো সময় ব্যয় না করে কবুল বলে দেয়।তারপর আমাকে বলে কবুল বলতে রক্তিম আমার হাত শক্ত করে ধরে কানে ফিসফিস করে বলে,
~তাড়াতাড়ি কবুলটা বলে দেও আমার আর অপেক্ষা হচ্ছে না।তার কথা শুনে আমার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে কঠিন চোখে তার দিকে তাকালেন
সে বাঁকা হেসে সামনের দিকে তাকালো আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তিনবার কবুল বলে দিলাম।রক্তিম আর আমার বিয়ে সম্পন্ন হলো বাবা-মা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

~আমাদের মাফ করে দিস মা।আমি তাদের কিছু না বলে মলিন হেসে বললাম,
~তোমরা নিজেদের খেয়াল রেখো।ভাইদের সামনে গিয়ে তাদের জড়িয়ে ধরে বললাম,
~তোরা তোদের খেয়াল রাখিস আর জারিফ তুই আরিফের সাথে বেশি মজা করবিনা।জারিফ কেঁদে কেঁদে বললো,
~আপু তোমাকে মিস করবো।আরিফ বললো,
~আপু তুমি আমাদের সাথে দেখা করতে আসবে।আমি তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম তখনই রক্তিম বলে উঠলো,
~আমাদের লেট হচ্ছে আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে।আমি তার কথায় বললাম,
~বাসায় যাওয়ার এতো তাড়া কেন?রক্তিম বাঁকা হেসে বললো,

~বুঝোই তো নতুন বিয়ে বউকে পাশে পাওয়ার তড় সহ্য হচ্ছে না।এই মানুষটির সাথে পারা যায় এতো অসভ্য কথা সে এভাবে চিল্লিয়ে বলতে পারলো।আমি তার সাথে আর কোনো কথা না বলে পরিবারের সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসলাম রক্তিম গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।আমাকে দেখেই সে গাড়ির সামনের দরজা খুলে দিলো আমি চুপচাপ বসে পরলাম সে ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো বাসাটাকে আরেকবার দেখে নিলাম। চোখের পানিগুলোকে সযত্নে চোখের ভিতরই রেখে দিলাম আজ আমি একফোঁটা চোখের পানি ফেলবো না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গাড়িতে আমাদের মাঝে কোনো কথা হয়নি আমি বাহিরের দৃশ্য দেখছি হঠাৎ রক্তিম আমার হাত ধরে বললো,
~জামাই রেখে বাহিরে কী দেখো?আমি নাক ফুলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~আপনাকে দেখে কী করবো?আপনি যতোটা সুন্দর ততটাই আপনার মনটা অসুন্দর আর কিছু শুনতে চান আপনি?আমার কথায় সে হো হো করে হেসে বললো,
~একদম ঠিক বলেছো।এখন বলো কী খাবে?আমি জানি তুমি দুপুরে কিছু খাওনি।আমি বললাম,
~আপনি কীভাবে জানলেন?সে বললো,

~আমার lovely mother in law আমাকে বলেছে যে তার সুপুত্রী দুপুরে খায়নি হয়তো সে তার বরের হাতেই খাবার খাবে। বলেই চোখ টিপ মারলেন তার মুখের থেকে এসব বাণী শুনে মন চাচ্ছে তাকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই।কিন্তু আমি এটি করতে পারবো না।একটুপর সে গাড়ি থামালো একটি রেস্টুরেন্টের সামনে আমারও অনেক ক্ষুধা লেগেছে। রক্তিম গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির গেইট খুলে বললো,
~বের হও খেয়ে দেয়ে তারপর তোমার শশুর বাসায় যাবো।my sweet wife আমি গাড়ি থেকে নেমে আমার কনুই দিয়ে তার পেটে গুতা মেরে বললাম,
~দেখেছেন আমি কতোটা sweet.সে মুচকি হেসে আমার কানে আছে এসে বললো,
~তোমার মতো শুটকি আমার কিছু করতে পারবেনা।বলেই আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভিতরে নিয়ে গেলো।

রেস্টুরেন্টের ম্যানেজের রক্তিমকে দেখেই বললেন,
~স্যার,আপনার টেবিল রেডি করা আছে। রক্তিম বললেন,
~Good.আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~চলো আমাদের টেবিলে।বলেই হাত ধরে টেবিলের সামনে নিয়ে গেলো তারপর আমার হাত ছেড়ে চেয়ার টেনে বললো,
~বসো।আমি শাড়ি ঠিক করে চেয়ারে বসে পরলাম সে মেনু কার্ড দেখে ওয়েটারকে ডাক দিলেন তারপর বললেন,
~তোমাদের madam বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করে তাই দুই প্লেট বিরিয়ানি আর ফানটা নিয়ে এসো।ওয়েটার বললো,
~১০ মিনিটে খাবার এসে পরবে স্যার।বলেই চলে গেলো সে রক্তিম আমার দিকে তাকাতেই আমি তাকে বললাম,
~আপনি কীভাবে জানেন যে আমার বিরিয়ানি পছন্দ?সে মুচকি হেসে বললো,
~আমি যাকে মনে জায়গা দেই তার সব খবরও রাখি।তার কথায় অবাক হলাম কিন্তু তাকে বুঝতে না দিয়ে বললাম,
~আমায় কেন বিয়ে করলেন?যেখানে আপনার পরিবারের সকল লোক আমাকে ঘৃনা করে।রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~আগে পেট পূজা করো তারপর প্রশ্ন পূজা করো।তখনই ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলো রক্তিম বিরিয়ানিতে লেবু চিপরিয়ে এক লোকমা আমার মুখের সামনে ধরে বললো,
~খেয়ে নাও।আমি বললাম,
~আমি নিজে হাতে খেতে পারি।রক্তিম বললো,
~আজকে আমার হাতে খাও আর যদি আমার হাতে না খাও তাহলে তোমাকে আমি এখানেই চুমো খাবো।কী বলো কী করবো আমার হাতে খাবে নাকি তার কথা শেষ করতে না দিয়েই তার হাতের খাবার মুখে নিয়ে নেই।

আমাদের খাওয়া শেষ হলে রক্তিম বিল পে করে।গাড়িরতে গিয়ে বসে পরলাম রক্তিম গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে তার হাসি দেখে আমি ভ্রুকুচকে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~কী সমস্যা এভাবে হাসছেন কেন?রক্তিম না জানার ভান করে উত্তর দেয়,
~কোথায় আমি হাসছি?তুমি চোখে বেশি দেখো। তার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই তাই চুপ করে বসে রইলাম কিছুক্ষন রক্তিম একটা হোটেলের সামনে এসে গাড়ি থামায়।আমি তাকে বললাম,
~এখানে কেন?আমরা তো আপনার বাসায় যাবো তাই না?সে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
~এতো তাড়া কীসের? আমাদের মাত্র নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে আমাদের একান্ত সময় প্রয়োজন তাই আজ রাতটা এখানে কাটাবো।আমি রাগের মাথায় চেচিয়ে বলে উঠি,

~মায়ের ভয়ে এখানে এসে লুকাচ্ছেন তাই তো?তাহলে বিয়ে কেন করছেন?নাটক করতে যত্তসব ন্যাকার দল।আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই সে আমার দুহাতের বাহু চেপে ধরে বললো,
~রক্তিন রায়জাদা কাউকে ভয় পায়না বুঝতে পেরেছো।তুমি এখন আমার বউ তাই আমি যদি তোমায় গাছের নিচেও রাখি তুমি থাকতে বাধ্য মিসেস রায়জাদা।তার চোখের দিকে তাকাতে আমার ভয় করছে তার চোখ লাল হয়ে আছে।আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
~আমি ব্যাথা পাচ্ছি।আমার কথায় সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বড় করে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,

~অযথা কথা আমার পছন্দ না।তা তুমি জানো তাই চুপ করে থাকো ভালো হবে তোমার জন্য। বলেই গাড়ির দরজা খুলে বের হলো আমিও তার সাথে বের হলাম সে আগে আগে হাটঁছে আর আমি পিছে পিছে। হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করতেই একজন সুন্দরী নারী আমাদের স্বাগত জানিয়ে বললেন,
~আমি আপনাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি?রক্তিম বললো,
~আমি রুম আগে থেকেই বুক করে রেখেছি মিস্টার এন্ড মিসেস রায়জাদার নামে।সেই নারী কম্পিউটারে চেক করে বললেন,
~স্যার আপনাদের বুকিং আছে এই যে রুমের চাবি।রক্তিম বললো,
~ধন্যবাদ। Madam এর জন্য কিছু শাড়ি অর্ডার করা হয়েছে সেগুলো আসলে আমাদের রুমে পাঠিয়ে দিবেন।সেই সুন্দরী নারী বললো,
~জ্বী স্যার। রক্তিম চাবি নিয়ে আমার হাত ধরে লিফটের ভিতর ঢুকে গেলো

আমার শহরে তুমি পর্ব ১

লিফট এসে থামলো ৮তলায় আমি রুমের সামনে দাড়িয়ে আছি আর রক্তিম চাবি দিয়ে দরজা খুলে বললো,
~তুমি রুমে ওয়েট করো আমি আসছি আর শোন শাড়ি এসে দিয়ে যাবে। আমি কিছু না বলে রুমের ভিতর চলে আসলাম রুমের ভিতরে ডুকতেই চারপাশে চোখ বুলাতেই আমার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো যেমন বাসর ঘরে সাজানো হয়।এসব দেখে আমার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে কী হিসেবে সে এটা ভাবছে যে আমি তার সাথে বাসর করবো। নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে আমি ওয়াশরুমে চলে আসলাম মুখে পানি ছিটা দিয়ে বের হয়ে রুমে আসলাম তখনই কেউ নক করলো রুমের দরজায় আমি দরজা খুলে দেখলাম সেই সুন্দরী নারী হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে আমাকে দেখে মুচকি হেসে বললো,

~ম্যাম আপনার পার্সেল চলে এসেছে। বলেই হাতে থাকা ব্যাগ গুলো আমার হাতে দিয়ে দিলো।তারপর সে চলে গেলো আমি দরজা বন্ধ করে হাতে থাকা ব্যাগ গুলো খুলে দেখি শাড়ি আর আমার যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস।আমি একটা গোলাপী রঙ্গের শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।শাড়িটা ঠিকঠাক মতো পরে নিলাম বাহিরে বের হয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিলাম তারপর বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। নিস্তব্ধ রাত দেখতে অনেক সুন্দর কিছুক্ষন পর
হঠাৎ কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আমি তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সেই হাতের মালিক বলে উঠলো,

আমার শহরে তুমি পর্ব ৩