আমার শহরে তুমি পর্ব ৩ || লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি পর্ব ৩
লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

সেই হাত জোড়ার মালিক বলে উঠলো,
~এতো ছটফট কেন করছো?আমি কী তোমায় খেয়ে খেয়ে ফেলবো।তার কন্ঠ শুনেই আমার বুঝতে বাকি রইলনা এই ব্যক্তিটি কে?রক্তিম আমাকে পিছন থেকে এভাবে জড়িয়ে রেখেছেন আমি কনুই দিয়ে তার পেটে গুতা দিয়ে বললাম,
~ছাড়ুন অসভ্য এভাবে সাপের মতো পেচিয়ে আছেন কেন?তিনি আমাকে না ছেড়ে উল্টো আরো নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে বললেন,

~তোমাকে শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে একদম আমার বউ লাগছে।বলেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে সামনে ঘুড়িয়ে তার কপালে আঙ্গুল ঘষে বললেন,
~কী যেন একটা মিসিং আছে?তার এরকম কথায় আমি নিজের চারপাশ দেখে বললাম,
~কী মিসিং আছে আমার আল্লাহ তা আলা আমাকে আপনার মতোই ২টি হাত, ২টি পা একটি নাক এসব দিয়েই তৈরি করেছে।আমার কথায় সে হো হো করে হেসে বললেন,
~তোমার নাক তো আছে কিন্তু নাকফুল নেই wait আমি তোমার জন্য নিয়ে এসেছি।বলেই দৌড়ে রুমে চলে গেলেন কিছুক্ষন পর তার হাতে একটি বাক্স নিয়ে চলে আসলেন।বাক্সটা আমার হাতে দিয়ে বললেন,
~নেও এটা খুলে দেখো।আমি বাক্সটা খুলে দেখলাম ডায়মন্ডের নাকফুল তা দেখে আমি তার দিকে তাকালাম সে মুচকি হেসে বললো,

~তোমার নাকে এটা খুব সুন্দর লাগবে।একটু পরে দেখো তো।আমি বাক্সটা বন্ধ করে বললাম,
~আপনার বাবার টাকার কোনো জিনিস আমি নিবো না বেনারসিটা পরেছি শুধুমাত্র আমার পরিবারের জন্য। কিন্তু আপনার বাবার টাকার কোনো জিনিস আমি নিবো না।আর এ শাড়িটাও বাধ্য হয়ে পরেছি কালকেই আমার জিনিসপত্র আমি নিয়ে আসবো। সে অনেকটাই শান্ত কন্ঠে বললেন,
~তুমি হয়তো ভুলে গেছো যে আমি নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি আর আমার প্রথম বেতনের টাকাটা দিয়েই আমি এই বেনারসি আর এই নাকফুলটা কিনেছি।তার কথায় আমি বললাম,
~সত্যি আপনার প্রথম বেতন দিয়ে এগুলো কিনেছেন?
সে বললো,
~জ্বী ম্যাডাম। আমি বাক্সটা হাতে নিয়ে রুমের ভিতরে চলে আসলাম তারপর আয়নার সামনে দাড়িয়ে সেই নাকফুলটা আমার নাকে অনেক ঘষামানজার পর পরতে পারলাম।নাকফুলটা পরে আয়নার দিকে তাকালাম পিছনে রক্তিম দাড়িয়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নাকের দিকে খেয়াল করতেই দেখলাম নাকফুলটা একদম জ্বলজ্বল করছে।আমাকে দেখতে একদম অন্যরকম লাগছে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে দেখি সে একধ্যানে মুগ্ধ নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার লজ্জা লাগলো কিন্তু তা প্রকাশ না করে অকপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
~কী দেখেন এভাবে?রক্তিম এক পা দু পা করে একদম আমার কাছে এসে পরলো তার নিশ্বাসের গরম হাওয়া আমার মুখে আছড়ে পরছে।নিজেকে এক অন্য জগতের প্রাণী মনে হচ্ছে আমার বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে।রক্তিম আমার দিকে ঝুঁকে নাকফুলে ঠোঁট ছুয়িয়ে বললেন,

~তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে একদম আমার স্বপ্নের রানীর মতো লাগছে।আমি তার এসব কথা সহ্য করতে না পেরে তাকে হালকা ধাক্কা মেরে তাকে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
~আজকের জন্য যদি নাটক শেষ হয়ে থাকে তাহলে আমি ঘুমাতে গেলাম।বলেই আমি বিছানার দিকে যাবো রক্তিম বললো,
~বাসর রাতে কে ঘুমায়?আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~আমি ঘুমাই।বলেই বিছানায় শুয়ে পরলাম তার এসব নাটক দেখার সময় আমার নেই এভাবেই আগামীকাল শশুর বাড়ি যেতে হবে অনেক এনার্জির প্রয়োজন।কালকে রক্তিমের মা কীভাবে রিয়েক্ট করবে কে জানে কিন্তু আমি তার সামনে দূর্বল হবো না তাকে তার সব পাপের হিসাব দিতে হবে।এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো কারণ দুবছর আগের সব কথা আবার মনে পরছে অতীত বড্ড খারাপ জিনিস যত ভুলতে চান ততই আপনার তাড়া করতে থাকে।

অন্যদিকে রক্তিম রাতের শহর দেখতে ব্যস্ত এই মেয়েটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।অধরাকে সে অনেক ভালোবাসে হয়তো নিজের সব বিলীন করে হলেও সে অধরাকে খুশি রাখতে চায়।আজ সে তাই বাসায় যায়নি কারণ মা অধরাকে অপমান করবে আর বিয়ের রাতটাকে সে কোনো ক্রমেই খারাপ করতে চায়নি।হঠাৎ রক্তিমের ফোন বেজে উঠলো সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো একটা নাম জ্বলজ্বল করছে।এই ব্যক্তিটি তাকে ফোন করেছে এরমানে মা তাকে সব জানিয়ে দিয়েছে নাহলে বড় ভাইয়ের কথা তার কখনো মনে পরেনি।হ্যাঁ রক্তিমের ছোট ভাই রাত রায়জাদা তাকে ফোন করেছে।রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশের যুবকটি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,

~ভাইয়া তোমার লজ্জা করলো না একটা চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করতে।আর কীভাবে তুমি তোমার ছোট ভাইয়ের থাক আমি এসব কথা বলতে চাই না। শুধু এতটুকু বলতে চাই shame on u ভাইয়া।রক্তিমের রাগে মাথায় রক্ত চড়ে গেলো অধরাকে সে চরিত্রহীন বলছে।রক্তিম রাগী গলায় বললো,
~মুখের জবান সামলিয়ে কথা বলবে তুমি?সে তোমার ভাবি হয় আপন মায়ের পেটের ভাইয়ের বউ তোমার সম্মান করতে শিখো।আমি তো আমেরিকা থেকে এসেছি তাই আমি বেয়াদব কিন্তু তুমি কেন বেয়াদবি করছো?after all you are a very well-manner person।কী ঠিক বলেছিনা?বড় ভাইয়ের বিদ্রুপ করা কথায় রাতের মাথায় আগুন উঠে গেলো সে ফোন কেটে দিলো।রক্তিম তার ভাইয়ের কথা না শুনতে পেয়ে ফোন কান থেকে নামিয়ে রেখে মুচকি হেসে বললো,
~হিরে চিনতে ভুল করেছো তাই এখন হিরেকেই নকল বলছো।ফোন হাতে নিয়েই সে রুমের ভিতরে গিয়ে দেখলো

অধরা গালে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রক্তিম কপাল চাপড়ে মনে মনে বললো,
~কোথায় বউ নিয়ে একটু রাতের আকাশ দেখবো সেখানে আমার বউ ঘুমের দেশ দেখছে।রক্তিম ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় অধরার পাশে শুয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।সে একটু একটু করে অধরার কাছে চলে গেলো তারপর তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললো,
~তোমার জন্য মনের গহীনে সযত্নে আগলে রেখেছি কিছু নীলপদ্ম।বলেই অধোরার কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে সে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে আরামের ঘুম দিচ্ছেন আমি তাকে সরানোর অনেক চেষ্টা করলাম সে সরাতো দূর আরো বেশি করে জড়িয়ে ধরছেন। তারপর আমি অনেক কষ্টে হাত ছাড়িয়ে তার পেটে অনেক জোড়ে চিমটি কাটি সে ব্যাথা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চিল্লিয়ে বললেন,
~কী হয়েছে এমন করছো কেন?আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে বিছানা থেকে উঠে চুলগুলো হাত খোপা করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি রক্তিম উপুর হয়ে শুয়ে আছেন।আমাকে দেখে সে বললো,
~নাস্তা করে তোমার বাসায় ফোন করে কথা বলে নিও তারপর রেডি হবে আমরা বাসায় যাবো।তার কথায় আমার বুক ধুকপুক করা শুরু করলো সত্যিই আমি সে বাসায় যাবো যে বাসায় একদিন আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছিল।রক্তিমের কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গলো সে বললো,
~আমি নাস্তার ওর্ডার দিয়েছি।একটু ওয়েট করো চলে আসবে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।বলেই সে চলে গেলো আমি বসে বসে ভাবছি ভাগ্য কী আবার আমায় নিয়ে খেলছে।

আমার শহরে তুমি পর্ব ২

নাস্তা করে আমি মা-বাবার সাথে কথা বলে নিলাম।রক্তিম আমাকে বললো,
~তুমি রেডি থাকলে বের হওয়া যাক।আমার কেমন জানি লাগছে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে একদম ফিটফাট যেমন কিছুই হয়নি।রক্তিম আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
~কী দেখো আমি অনেক handsome তা আমি জানি।তার কথায় মুখ ভেংচি কেটে বললাম,
~চলেন দেরি হচ্ছে।হোটেল থেকে বের হয়ে আমরা গাড়িতে বসে পরলাম গাড়ি যতো আগে বাড়ছে আমার বুকের ধুকপুক করছে কী হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।৩০ মিনিট পর আমরা রায়জাদা ভিলায় পৌছে গেলাম রক্তিম গাড়ি থামিয়ে বললো,

~গাড়ি থেকে নেমে আসো।আমি কাঁপাকাঁপা হাতে গাড়ির গেইট খুলে গাড়ি থেকে নেমে রায়জাদা ভিলায় চোখ বুলিয়ে নিলাম অনেক খারাপ লাগছে।চোখ পানিতে টলমল করছে হঠাৎ রক্তিম বলে উঠলো,
~অধরা তোমার যদি এ বাসায় থাকতে মন না চায় তাহলে চলো আমরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবো।আমি এক আঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি মুছে মুচকি হেসে তার দিকে ফিরে বললাম,
~এতো ভয় পান মাকে তাহলে বিয়ে করলেন কেন?আর আমি আমার শশুর বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না after all my sweet mother in law is waiting for me.বলেই হাঁটা ধরলাম বাড়ির ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আর রক্তিম অধরার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

আমার শহরে তুমি পর্ব ৪