আমার শহরে তুমি পর্ব ৪ || লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি পর্ব ৪
লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই সোফার রুমের চারপাশে আমি চোখ বুলিয়ে নেই।অনেক কিছুই পরিবর্তন করা হয়েছে শুধু পরির্বতন হয়নি এ বাড়ির মানুষের চিন্তাধারা সেটি আগেও ছোট ছিল এখন একইরকম রয়ে গেছে।সোফার রুমের ঠিক সামনের দেওয়ালটায় আমার চোখ পরতেই আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কারণ ছবিতে এমন একজন ব্যক্তি হাসোজ্জল মুখে দাড়িয়ে আছে যে আমার জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে।সেই ব্যক্তি আর কেউ নয় রাত রায়জাদা।আমি ছবি থেকে চোখ সরিয়ে সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম একজন হুইলচেয়ারে বসা বয়স্ক মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে এগিয়ে গেলাম আর বললাম,

~দাদিমা,কেমন আছো?হ্যাঁ এই মহিলাটি রক্তিমের দাদী।আমাকে দেখে সে অবাক হয়েছে তার চেহারাই তা প্রমান করছে সে হাতের ইশারায় আমাকে কাছে আসতে বললো আমি হাঁটুগেড়ে তার পাশে বসলাম সে আমার গাল ছুয়ে দিয়ে বললো,
~তুই এখানে? তোকে দেখলে তো আবার অপমান করবে।আমি কিছু বলার আগেই পিছন থেকে রক্তিম বলে উঠলো,

~আমি থাকতে তোমার সতীনকে কেউ অপমান করতে পারবেনা।তার কথায় দাদীমা একবার আমার দিকে তাকালো আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই সে জোড়ে চিল্লিয়ে বললো,
~তোরা সবাই কইরে?দেখ আমার নাতবউ এসেছে আমার সতীন ঘরে এসেছে যে আজ আমি মিষ্টি খাবো কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।আমার অধরা যে ঘরে রহমত নিয়ে এসেছে।তার কন্ঠ শুনে বাড়ির সব সার্ভেন্ট এসে পরলো আর আমাকে দেখে অবাক হলো।দাদী রক্তিমকে সামনে ডেকে বললেন,
~একা বিয়ে করলি এই দাদীকে একবারও মনে করলিনা।রক্তিম বললো,
~পরেরবার তোমাকে নিয়েই বিয়ে করবো।তার কথায় আমি চোখ বড় বড় করে ফেললাম সে বললো,
~আরে আবারও তোমায় বিয়ে করবো চিন্তা করো না।দাদী তার কান ধরে বললো,
~ওরে ফাজিল রে আমার সতীনের সাথে একদম ফাইজলামি করিস না।তাদের এমন মজা দেখে আমি ফিক করে হেসে উঠলাম কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না দরজার দিকে চোখ পরতেই দেখলাম

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রক্তিমের মা সাহারা রায়জাদা দাড়িয়ে আছে তার হাতে শপিং ব্যাগ। সে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে তাকে দেখে আমার কোনো সম্মান কাজ করছে না।সে শপিং ব্যাগ ফেলে আমার দিকে তেড়ে এসে আঙ্গুল তুলে বললেন,
~এই মেয়ে তোর সাহস কীভাবে হলো আমার বাড়িতে পা রাখার?তোর মতো চরিত্রহীন মেয়ে আমার বাড়িতে কেন উঠেছে আমার বাড়িটাকে অপবিত্র করে দিলো।আমি তার কথায় মুচকি হেসে তার আঙ্গুল নিচে নামিয়ে বললাম,
~My sweet mother in law নতুন বউকে কেউ এভাবে welcome করে।আমি তো ভেবেছিলাম এখানে আমার স্বাগতম টা অনেক সুন্দর করে হবে never mind.তো mother in law আপনি কী শপিং থেকে আসছেন? নতুন বউয়ের জন্য অবশ্যই গিফট আনতে গিয়েছেন তো দেখি কী এনেছেন?আমি দরজার সামনে থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে খুলে দেখলাম একটাতে শাড়ি আরেকটাতে ডায়মন্ডের নেকলেস আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে নিজের গায়ে মেলে রক্তিমকে বললাম,

~কেমন দেখাচ্ছে আমাকে? বলতে হবে আমার শাশুড়ির চয়েজ আছে।রক্তিম বললো,
~অবশ্যই অনেক সুন্দর তোমাকে মানিয়েছে।আমি শাড়িটা ভাজ করে শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে সোফার উপরে রেখে বললাম,
~তো শাশুড়ি মা আজকে কী বাসায় পার্টি হবে না?আপনারা তো আবার ছোট ছোট বিষয়ে পার্টি করেন আর আজ তো রায়জাদা বংশের ছেলে বউ নিয়ে এসেছে।আমার কথা শুনে রক্তিমের মা রাগে ফুসছে সে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~তুই এই মেয়েকে এখানে কেন নিয়ে এসেছিস?আমাকে অপমান করতে এনেছিস।রক্তিম বললো,
~আমি আমার বাবার বাসায় এসেছি যদি সে আমাকে বলে এ বাসা থেকে চলে যেতে বলে তাহলে আমি বিনাবাক্যে এখান থেকে চলে যাবো আর এ সিদ্ধান্ত বাবা আসার পরে হবে।বলেই সে আমার হাত ধরে দাদীমা কে বললো,
~দাদী মা আমরা রুমে যাচ্ছি। বলেই আমাকে হাত ধরে উপরে নিয়ে গেলো তার রুমে নিয়ে এসে বললো,
~অধরা আমি এখন ভার্সিটিতে যাবো জরুরি ক্লাস নিতে হবে তাই তাড়াতাড়ি আমাকে বিদায় kiss দেও।তার কথায় আমার মাথা চরক গাছ এ লোক বলে কী এতো কথা হয়ে গেলো নিচে আর সে এখন আমাকে অসভ্য লোক।

রক্তিম আবার বললো,
~কী হলো দেও?আমি তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম,
~এই আপনি কী পাগল?সে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়প বললেন,
~তোমার পাগল আমি। বলেই তার গাল দিয়ে আমার গালে সর্প্শ করলো আমার সারা শরীর হিম হয়ে যাচ্ছে আমি তাকে বললাম,
~কথায় কথায় এভাবে জড়িয়ে ধরেন কেন?ছাড়েন আমায় বলেই তার হাত আমার কোমড় থেকে সরানোর চেষ্টা করলাম সে আমায় নিজ থেকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~যাও তোমাকে ছেড়ে দিলাম কিন্তু একটা শর্ত আছে রাতে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।আমি ভেংচি কেটে বললাম,
~নিকুচি করি আপনার শর্তের। সে আবার আমার কাছে আসতে শুরু করলে আমি চিল্লিয়ে বলি,
~আপনি আমার কাছে আসবেন না। আপনার সব শর্তে আমি রাজি।সে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
~এইতো আমার লক্ষ্মী বউ।বলেই আমার গালে ঠোঁট ছুয়িয়ে চলে গেলো আমি বোকার মতো গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম।এই লোক এতো অসভ্য কেনো

অপরদিকে রক্তিমের মা নিজ রুমে বসে ভাবছে অধরাকে কীভাবে জব্দ করা যায় কিন্তু সে ২বছর আগের অধরাকে আর এই অধরাকে মিলাতে পারছে না।এতো পরিবর্তন কীভাবে যে তার সামনে একটা শব্দ করতো না সে এখন এতো কড়া কড়া কথা বলছে।২বছর আগে কতো কাঠখর পুড়িয়ে এই মেয়েকে রাতের জীবন থেকে সরিয়ে ছিল এখন রক্তিমকে বশ করে আমার বাসায় চলে আসলো।রাতকে তো আমি যা বুঝিয়েছি তাই বুঝেছে কিন্তু রক্তিন বরাবরই অনেক আলাদা রাত থেকে।এসব ভাবছে আর রাগে ফুসছে সে যেভাবেই হোক এই মেয়েকে রক্তিমের জীবন থেকে সরিয়েই ছাড়বে।

রক্তিম ভার্সিটির সব ক্লাস শেষ করে একটা মোবাইলের শো রুমে ডুকলো অধরার জন্য একটা ব্রান্ড নিউ মোবাইল কিনে।সে ডুকলো শাড়ির দোকানে একটা বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি কিনে অনেক চকলেট চিপস কিনে সে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।কিছুক্ষন পর বাসায় পৌছে সে সোজা রুমে চলে গেলো কিন্তু কোথাও অধরাকে দেখতে পেলো।সে একটু বিচলিত হলো তারপর সে তার দাদীমার রুমে চলে গেলো আর সেখানে গিয়ে দেখলো দাদীমা আর অধরা বিছানায় বসে গল্প করছে আর খিলখিল করে হাসছে।সে হঠাৎ বলে উঠলো,

আমার শহরে তুমি পর্ব ৩

~কী দুই সতীনে মিলে কী ফন্দী আটছে।
আমি আর দাদীমা মিলে আড্ডা দিচ্ছি তখনই রক্তিমের কথা কানে আসলো আমি মুখ বাকিয়ে বললাম,
~দাদীমা মেয়েদের কথা শুনে ছেলেরা এতে কীসের মজা পায়।দাদীমা কিছু না বলে মিটমিট করে হাসছে রক্তিম রাগ দেখিয়ে বললো,
~এই শুনো আমি কারো কথা শুনতে আসেনি আর না আমার interest আছে।এখন তুমি চুপচাপ আমার সাথে রুমে চলো কথা আছে।আমি তাকে মুড দেখিয়ে বললাম,

~আমি আজ দাদীমার সাথে ঘুমাবে আপনি রুমে চলে যান।রক্তিম আমার কথা শুনে বললো,
~তুমি আসবে না আমার সাথে?আমি মাথা দুদিক নাড়িয়ে বুঝালাম না সে হঠাৎ এমন একটি কাজ করে বসলেন যার কারণে আমি লজ্জায় মরে যেতে মন চাইচ্ছে সে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে দাদীমাকে বললো,
~আমার বউ আমি নিয়ে যাচ্ছি।দাদীমা তার কান্ডে খিলখিল করে হেসে বললো,
~নাতবউ কপাল গুনে এমন স্বামী পেয়েছো।রক্তিম আমাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে তার রুমে নিয়ে যেয়ে বিছানায় বসিয়ে একদম আমার কাছে এসে বললো,

আমার শহরে তুমি পর্ব ৫