আমার শহরে তুমি পর্ব ৫ || লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি পর্ব ৫
লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

বিছানায় বসিয়ে সে একদম আমার কাছে এসে বললো,
~সকালের শর্তের কথা মনে আছে?আমি না জানার ভান করে বললাম,
~কীসের শর্ত?আমার তো কিছু মনে পরছে না।রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,
~এখনো মনে পরছে না?তার ছোয়ায় আমার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে আমি তাকে বললাম,
~আমার সব মনে আছে আপনি আমাকে ছাড়েন।আমার কথায় সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
~এইতো good girl.wait তোমার জন্য একটা surprise আছে।বলেই কাবার্ড খুলে দুটো ব্যাগ বের করে বললেন,

~একটায় তোমার জন্য ফোন আরেকটায় শাড়ি আছে আর কার্বাডে অনেক গুলো চিপস আর চকলেট এনেছি। আমি ফোন টা বের করে বললাম,
~সব সেট করা আছে?আমি কী মায়ের সাথে কথা বলতে পারবো।সে বললো,
~তোমার পুরোনো সীমটাই সেট করা আছে।আমি আর দেরি না করে মাকে ফোন করলাম দুতিনবার রিং হতেই না ফোন ধরলো আমি মাকে সালাম দিয়ে বললাম,
~মা কেমন আছে?বাসায় সবাই কেমন আছে আর ভাইয়েরা কী করছে?মা আমার সালামের জবাব দিয়ে বললো,
~সবাই ভালো আছে আর তোর ভাইয়েরা পড়তে বসেছে।তুই ভালো আছিস?বাসায় সব ঠিক আছে তো?আমি বললাম,
~ভালো আছি।বাসায় সব ঠিক আছে তুমি চিন্তা করো না।মায়ের সাথে অনেকক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলাম মনটা হালকা লাগছে ফোনটা রাখতেই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রক্তিম গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আমি ভ্রুকুচকে বললাম,

~কী হয়েছে?সে অসহায় মুখে বললো,
~ফোন পেয়ে তুমি বর ভুলে গেছো।আমি বললাম,
~ঢং যত্তসব চলেন খাবার খেতে রাত ৯.০০ বাজে খাবার খেয়ে আবার বাহিরে যেতে হবে।রক্তিম বললো,
~রেডি হও ডিনার বাহিরে করবো।আর যে শাড়িটা এনেছি সেটাই পরবে আমি দাদীমাকে দেখে আসছি বলেই রুম থেকে বাহিরে চলে গেলেন আমি শাড়ি হাতে নিয়ে রেডি হতে শুরু করলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

৩০মিনিট পর রক্তিম রুমে এসে দেখে অধরা রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে।রক্তিমকে সে খেয়াল করেনি রক্তিম ধীরে ধীরে অধরার কাছে এসে তার চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো। অধরা রক্তিমের সর্প্শ পেয়ে চোখ বড় বড় করে আয়নার দিকে তাকালো আর দেখলো রক্তিম তার চুলে মুখ গুজে আছে। অধরা তার থেকে সরে এসে বললো,
~রেডি না হয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঢং করছেন কেন?রক্তিম বললো,
~কারণ ঢং করতে ভালো লাগে তাই বলেই কার্বাড থেকে একটা টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
রাত রায়জাদা আগামীকাল বাসায় ফিরবে তাই তার মা অনেক খুশি কারণ রাত চলে আসলেই সে অধরাকে জব্দ করতে পারবে। অধরা রাতের সামনে দূর্বল হয়ে পরবে এতে সে তাকে অপমান করে এই বাসা থেকে বের করে দিতে পারবে আর রক্তিমও কিছু বলতে পারবেনা।এসব ভেবেই সাহারা রায়জাদা খুশি হচ্ছে কিন্তু সে এটা জানেনা অধরা আর দূর্বল হবে না কারণ সে গত ২বছরে নিজেকে অনেক কঠিন করে গড়ে তুলেছে সে হারবে না বরং তার সামনে সবাইকে হারমানাবে।
রাত ১০টা আমি আর রক্তিম একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করে গাড়িতে উঠে পরি অজানা জায়গায় যাওয়ার জন্য। আমার জন্য তো অজানা কারণ আমি তো জানিনা রক্তিম আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।

কিছুক্ষন পর একটা বড় বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি এসে দাড়ায়।রক্তিম আর আমি দুজনই গাড়ি থেকে নেমে পরি আমি বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে দেখি বড় বড় অক্ষরে সাইনবোর্ডে লেখা রায়জাদা আপ্যার্টমেন্ট।দেখেই মনে হচ্ছে এটা রক্তিমদের আপ্যার্টমেন্ট আমি সেখান থেকে চোখ সরিয়ে রক্তিমের দিকে তাকাতেই সে বললো,
~চলো ভিতরে।আমি বললাম,
~এখানে কে থাকে?রক্তিম বললো,
~থাকে একজন।আর আজ রাতটা আমরা এখানে কাটাবো।বলেই সে হাঁটা শুরু করলো আমি তার পিছে পিছে হাটঁতে শুরু করলাম সে লিফটের সামনে এসে দাড়ালো তারপর লিফটে উঠে পরলো আমিও উঠে পরলান সে ৭তলা বাটন চেপে দিলো।একটুপর লিফটের দরজা খুলে গেলো আমরা ৭তলায় পৌছে গেছি।রক্তিম আমার হাত ধরে একটা ফ্যাল্টের সামনে গিয়ে দাড়ালো তারপর কলিংবেলে টিপ দিলো।সাথে সাথেই দরজা খুলে দাড়ালো একজন মহিলা।সে রক্তিমকে দেখেই বললো,

~তুই এখানে এতো রাতে সব ঠিক আছে বাবা।রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~আরে ফুপি সব ঠিক আছে। আমি তো তোমাকে আমার বউ দেখাতে নিয়ে আসলাম।রক্তিমের কথায় বুঝতে পারলাম যে এই মহিলাটি রক্তিমের ফুপি কিন্তু তাকে আমি কোনো দিন দেখেনি।রক্তিমের ফুপি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তোর পাশে যে দাড়িয়ে আছে সে কি আমার ছেলের বউ?রক্তিম মাথা উপর নিচ করে সম্মতি জানালো ফুপি সাথে সাথে আমার হাত ধরে বললো,
~ভিতরে আসো।আমরা ভিতরে গিয়ে সোফায় বসলাম ফুপি বললো,
~তোমার নাম অধরা।আমাকে রক্তিম তোমার কথা বলেছে তুমি দেখতে অনেক মিষ্টি।আমি মুচকি হেসে তাকে সালাম দিয়ে বললাম,
~আপনি কেমন আছেন ফুপি?সে বললো,
~ভালো আছি।তোমরা বসো আমি চা করে নিয়ে আসি আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে চলে যায়।

সে চলে যেতেই আমি রক্তিমকে বললাম,
~আপনার ফুপিও আছে আমি তো জানতাম না।রক্তিম অল্প হেসে বললো,
~ফুপির সাথে মায়ের সম্পর্ক ভালো না তাই বাবা তাকে এখানে রেখেছে।আমার ফুপি ছোটবেলা থেকে আমাকে অনেক আদর করতো তাই আমি যখনই সময় পাই দাদীদমাকে নিয়ে এখানে চলে আসি।আমি বললাম,
~আপনার ফুপা কোথায়?রক্তিম বললো,
~আমার ফুপি বিয়ে করেনি।আমি অবাক হয়ে বললাম,
~কেন? রক্তিম বললো,

~এই যে ভালোবাসা। তার ভালোবাসা তাকে ছেড়ে ২৪বছর আগেই চলে গেছে পরপারে সে থেকেই ফুপি আর বিয়ে করেনি।রক্তিমের কথায় অবাক হলাম একটা মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে তাকে মনে করেই জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।এসব ভাবছি তখনই ফুপি চা নিয়ে আসলেন রক্তিম বললেন,
~ফুপি আজ আমরা এখানে থাকবো। ফুপি খুশি হয়ে বললেন,
~সত্যি আমি ফুলিকে দিয়ে রুম পরিষ্কার করে দিচ্ছি।আর তোরা কী খাবি?আমি বললাম,
~ফুপি আমরা খেয়ে এসেছি।ফুপি বললো,
~সেকি কথা আচ্ছা আমি ফুলিকে ডেকে রুম পরিষ্কার করে দিচ্ছি।বলেই সে চলে গেলো কিছুক্ষন পর একটা মেয়ে ঢুলুঢুলু চোখে বের হয়ে রক্তিমকে বললো,
~রক্তিম ভাই যে,এতো রাইতে বউ লয়া আইসেন।ভাবি কিমুন আসেন?আমি মুচকি হেসে বললাম,
~ভালো।তুমি কেমন আছো?সে বললো,

~ভালা আছি।আমি আপনাগো ঘরটা পরিষ্কার কইরাদিসি যান যায়া ঘুমাইয়া পড়েন।বলেই সে চলে গেলো।রক্তিম বললো,
~চলো রুমে যাওয়া যাক।আমি রক্তিমের পিছে পিছে রুমে চলে আসলাম আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি রক্তিম একটা ফ্রেম নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর এতে হাত বুলাচ্ছে।আমি একটু সামনে গিয়ে দেখলাম একটা বাচ্চা মেয়ের ছবি আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
~এটা কার ছবি?রক্তিম আমার কথায় পিছন ফিরে বললেন,
~এটা ফুপির ছোট বেলার ছবি সুন্দর না?আমি বললাম,
~হুমম অনেক সুন্দর।রক্তিম কিছুক্ষন ছবির দিকে তাকিয়ে বললেন,
~অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে যাই।আমি বিছানায় একপাশে শুয়ে পরলাম রক্তিম এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো আজ আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম না।থাক না মানুষটা আজ আমার নিকটে

আমার শহরে তুমি পর্ব ৪

সকালে ঘুমটা রক্তিমের আগে ভাঙ্গলো সে চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলো অধরাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। সে অধরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওর কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে। অধরাকে ছেড়ে উঠে বসলো তখনই ফোনের রিংটন বেজে উঠলো সে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার মা সাহারা রায়জাদার ফোন দিয়েছে। রক্তিম ভ্রুকুচকে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তার মা বলে উঠলো,
~ফুপির কাছে থাকা হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসো তোমার ভাই আর বাবা এসেছে।রক্তিম বললো,
~তো আমি এসে কী করবো?তার মা বললো,
~তোমার বাবা তোমার সাথে কথা বলতে চায় আর তোমার গুনধর বউকে নিয়ে এসো।মাকে আর কিছু বলতে দিলোনা রক্তিম ফোন রেখে একধ্যানে সামনে দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমার ঘুম ভাঙ্গতেই আমি দেখলাম রক্তিম একধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি উঠে বসে তাকে বললাম,
~কী হয়েছে?সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~রেডি হও বাসায় যেতে হবে বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো আমি বললাম,
~শাড়ি আনিনি কী পরবো?সে বললো,
~ফুপির কাছে অনেক শাড়ি আছে তাই ফুপি আগেই কার্বাডে শাড়ি রেখে গেছে। বলেই রুম থেকে চলে গেলো আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।আর ভাবতে থাকলাম কী হলো লোকটার?

সকাল ১০টা আমরা ফুপিকে বিদায় জানিয়ে
বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।পুরো রাস্তা রক্তিম আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলো।যখনই ছাড়াবার চেষ্টা করেছি সে ততোই শক্ত করে ধরে রেখেছে।বাসায় পৌছে রক্তিম আমার হাত ছেড়ে গাড়ি থেকে নামলো আমিও নেমে দাড়ালাম।সে আবার আমার হাত শক্ত করে ধরে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলেন তখনই কেউ বলে উঠলো,
~বাহ তোমাদের তো খুব মানিয়েছে একসাথে তো বিয়ে করেই একসাথে আছো নাকি বিয়ের আগেই?এই কন্ঠটা শুনে আমার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো।এতো আর কেউ না

আমার শহরে তুমি পর্ব ৬