আমার শহরে তুমি পর্ব ৬ || লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি পর্ব ৬
লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

এতো আর কেউ না আমার জীবনের সবচেয়ে কলুষিত অধ্যায় মিস্টার রাত রায়জাদা।আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত হাতদুটো বুকে গুজে মুখে শয়তানি হাসি রেখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে আমার রাগ লাগছে মন চাচ্ছে ঠাস করে একটা চড় দেই যেটা ২বছর আগে আমি দিতে পারিনি।আমার পাশে তাকাতেই দেখলাম রক্তিম রাগে কটমট করছে তার চোখ দুটি লাল হয়ে আসছে।সে আমার হাত ছেড়ে একটু এগিয়ে গিয়ে খুবই শান্ত স্বরে বললো,
~জানিস তো কাপুরুষরাই সর্বদা অন্যকে দোষারোপ করে থাকে সে যতই ভুল করুক না কেন তার কাছে অন্যের ভুলটাই চোখে পরে।রক্তিমের কথা শুনে রাত তার দিকে তেড়ে এসে বললো,

~কী বললে তুমি?আমি কাপুরুষ?ভাইয়া মুখ সামলিয়ে কথা বলো।রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~সত্য কথা বললেই সবাই মুখ সামলিয়ে কথা বলতে বলে।রাত নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তো নিজের নামের পরে রায়জাদা ট্যাগ লাগিয়ে কেমন লাগছে?আমাকে তো বশ করতে পারলেনা তাই আমার ভাইকে বশ করলে খুব ভালো।আমি মেকি হাসি দিয়ে বললাম,

~রায়জাদা ট্যাগ লাগিয়ে যতো না ভালো লাগছে তার চেয়ে বেশি ভালো লাগছে রক্তিমের মতো একজন ভালো মনের মানুষের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে বলে।আর আমি যদি বশ করতেই জানতাম তাহলে আপনি আমার সামনে এভাবে দাড়িয়ে থাকতেন না বরং আপনার so called gf সারার পিছে যেভাবে ঘুরেন ঠিক সেভাবেই আমার পিছে ঘুরতেন। রাত আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন,
~অনেক কথা শিখে গেছো।আগে তো মুখ দিয়ে টু শব্দ বের হতো না।আমি বললাম,
~কারণ আগে ভালোবাসা ছিল তাই মুখের উপর কোনো কথা বলতাম না এখন ঘৃণার কারণে মুখে কিছু আটকায় না।রাত বিরক্ত হয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~তোমার এতো লেকচার শুনতে পারবো না। তো ভাইয়া কীভাবে নিজের ভাইয়ের ex কে বিয়ে করলে।রক্তিম বললো,
~এতো তোর কী আসে যায়?রাত বললো,
~আরে আমার use করা জিনিস বিয়ে করেছো তাই জানার অধিকার আমার আছে।রক্তিম রেগে গিয়ে রাতের কলার ধরে বললো,
~মুখ সামলিয়ে কথা বলবি রাত।অধরা তোর ভাবি আর শোন সব মেয়েরা তোর girlfriend এর মতো নির্লজ্জ নয় তাই ভেবে চিন্তে কথা বলবি
বলেই তাকে ছেড়ে দিয়ে আমার হাত ধরে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।

রক্তিম আর অধরার যাওয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।রক্তিমের বলা প্রতিটা কথা তার রাগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে আর অধরার এই পরিবর্তন তার সহ্য হচ্ছে না এই মেয়ে তো কোনোদিন তার মুখের উপর কথা বলেনি।তাহলে আজ এইভাবে সে কথা কীভাবে বলে গেল।রক্তিমকে বুঝাতে হবে নাহলে এই মেয়ে সব শেষ করে দিবে এগুলো ভাবছে তখনই তার মোবাইল বেজে উঠলো সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলো সারা ফোন করছে সে তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলো আর তখনই অপরপাশ থেকে সারা বলে উঠলো,
~কী ব্যাপার ফোন ধরতে এতো লেইট কেন হয়েছে।রাত শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~কোথায় আমি তো ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই ফোন রিসিভ করলাম।সারা বললো,
~এভাবে কেন কথা বলছো?ওই অধরা এসেছে বাসায় তাই গলে গেছো তাই তো।রাত বললো,
~কী বলছো এসব কখনো না তুমি আমার ভালোবাসা তোমাকে ছেড়ে কোনো মেয়ের দিকে তাকই পর্যন্ত না।সারা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

~তোমার চরিত্র যে কতোটা ভালো তা আমি জানি।বলেই ফোন রেখে দিলো রাত ফোন কান থেকে নামিয়ে হাতে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
রক্তিম আমাকে রুমে নিয়ে এসে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে সে রুমের মধ্যে পায়চারি করা শুরু করলো তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে এখন অনেক রেগে আছে।রক্তিম আসলেই অনেক ভালো মনের মানুষ আজ সে যেভাবে আমাকে সার্পোট করছে তার কোনো তুলনা হয় না।রক্তিম এখন জানালার সামনে দাড়িয়ে সেই দূর আকাশ দেখতে ব্যস্ত আমি তার পিছে দাড়ালাম তারপর তার কাঁধে হাত রাখলাম।তার কাঁধে হাত রাখতেই সে সামনে ঘুরে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।তার এমন ব্যবহারে আমি অবাক হলাম কিন্তু তাকে বুঝতে না দিয়ে তার পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম,

~কোনো চিন্তা করবেন না আমি সবাইকে সব কথার জবাব দিতে পারবো।সে কোনো উত্তর না দিয়ে আমাকে আরো নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরলেন।আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সে আমার ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,
~আমি জানি তুমি অনেক সাহসী কিন্তু আমার যে সহ্য হয় না।আমি বললাম,
~লড়াই জিততে হলে সহ্য করতেই হবে।সে আমার ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে বললো,
~তুমি পিচ্চি অধরা থেকে বড় অধরা হয়ে গেছো।আমি তাকে বললাম,
~এখন আমাকে ছাড়েন আমি রান্নাঘরে যাবো। রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~যাও ছেড়ে দিলাম।আমি আর অপেক্ষা না করে নিচে রান্নাঘরে চলে আসলাম তারপর দুকাপ চা বানিয়ে দাদীমার রুমে চলে আসলাম।দাদীমা আমাকে দেখে খুশি হয়ে উঠে বসলেন তারপর তার সাথে কথা বলতে লাগলাম।

দাদীমার সাথে কথা বলতে বলতে দুপুর হয়ে গেলো হঠাৎ করে একজন সার্ভেন্ট রুমে এসে বললো,
~ম্যাডাম আপনাকে বড়সাহেব ডেকেছে। আমি সার্ভেন্টকে বললাম,
~আমি আসছি।সার্ভেন্ট আমার কথা শুনে চলে গেলো আমি দাদীমাকে বললাম,
~দাদীমা আপনি এখন একটু বিশ্রাম করেন।আমি আসছি। দাদীমা বললেন,
~আমিও যাবো তোর সাথে।আমি বললাম,
~না আপনি রুমে থাকেন আমি চলে আসবো।বলেই দাদীমার রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।তারপর সোজা হলরুমে চলে আসলাম সেখানে গিয়ে দেখলাম রক্তিম রাত আর তাদের মা সোফায় বসে আছে ঠিক সামনের সোফায় মুখ গম্ভীর করে বসে আছে রাহাত রায়জাদা রক্তিমের বাবা।একজন সফল ব্যবসায়ী আমাকে দেখে রক্তিম সোফা থেকে উঠে আমার পাশে দাড়িয়ে বললো,

~বাবা,আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি তুমি যদি চাও আমি এ বাসায় আমার বউ নিয়ে না থাকি তাহলে এই মূহুর্তে আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।রক্তিমের বাবা চুপ করে বসে আছেন রক্তিমের মা বললেন,
~তুই এই মেয়ের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে যাবি এতটুকু কদোর নেই আমাদের।রক্তিম বললো,
~বাবা তুমি যা বলবে তাই হবে অন্যকেউ কী ভাবছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।রাত বললো,
~ভাইয়া এই মেয়ে এবাসায় থাকতে পারবে না।বাবা তুমি কিছু বলো
রক্তিমের বাবা নিরবতা ভেঙ্গে বললেন,

~রক্তিম তুমি যা করেছো ভুল করেছো।এভাবে বিয়েটা না করলেই পারতে যেহেতু বিয়ে করছো তো এখন অধরা এই বাসার এই রায়জাদা বংশের বউ।তাই তোমরা কোথাও যাবে না এই বাসায় থাকবে।বলেই সে দাড়িয়ে পরলো রক্তিমের মা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাহাত রায়জাদা বললো,
~সাহারা একটা কথা আর বলবেনা।মাথা ধরেছে আর রক্তিম আমার রুমে এসো একটুপর বলেই সে চলে গেলো।আমি মুচকি হেসে রক্তিমের মায়ের আর রাতের দিকে তাকালাম তারা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে আমি তাদের কিছু না বলে রুমে এসে পরলাম।

রক্তিম তার বাবার রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে
ভিতর থেকে তার বাবা বললো,
~ভিতরে আসো।রক্তিম নিঃশব্দে ভিতরে প্রবেশ করলো রক্তিমে বাবা বললো,
~বসো।রক্তিম তার বাবার সামনের ডিভানে বসে পরলো।তার বাবা বললো,
~রক্তিম তুমি আমার ছেলে তাই আমি অধরাকে অস্বীকার করতে পারবো না কারণ অধরা এখন তোমার বউ তাই তার এবাসায় অধিকার আছে।তোমরা সুখী হও এটাই আমার দোয়া রক্তিম তার বাবার হাত ধরে বলে,
~ধন্যবাদ বাবা আমাকে বুঝার জন্য। রক্তিমে বাবা কার্বাড খুলে একটা বক্স বের করলেন এবং রক্তিমের হাতে সেই বক্স টা দিয়ে বললো,

~এটি তোমার বউয়ের উপহার আমার তরফ থেকে।এখন যাও আমি রেস্ট করবো রক্তিম মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে আসলো তারপর নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
আমি বারান্দায় দাড়িয়ে আছি রক্তিম রুমে এসেই আমার নাম ধরে ডাকলো আমি বারান্দা থেকে বের হয়ে রুমে যেতেই দেখি রক্তিম হাতে একটা বক্স নিয়ে দাড়িয়ে আছে আমি তাকে বললাম,
~এটা কী?রক্তিম আমতা আমতা করে বললো,
~তুমি কিছু মনে করো না বাবা তোমাকে উপহার দিয়েছে।আমি বললাম,
~কী আছে এতে?রক্তিম বক্স খুললো বক্সে একজোড়া বালা আছে।আমি রক্তিমকে বললাম,
~এটা আপনার কাছে রেখেদিন আমার এসবের প্রয়োজন নেই।বাবার দোয়াই যথেষ্ট আমার জন্য যথেষ্ট রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে।আমি চলে আসতে নিবো তখনই রক্তিম আমার হাত ধরে বললো,
~কোথায় যাও?আমি বললাম,

~দাদীমার কাছে।রক্তিম আমাকে একটানে নিজের কাছে এনে বললেন,
~কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
~তাহলে কী করবো?রক্তিম বললো,
~আমাকে দেখো।আমি মুখ বাকিয়ে বললাম,
~আপনাকে দেখে কী করবো?দাদীমার সাথে কথা আছে।ছাড়েন
রক্তিম আমাকে বললো,
~তাহলে চলো আমিও যাবো।অতপর রক্তিম আর আমি দাদীমার রুমে চলে আসলাম দাদীমার সাথে আমরা দুজন অনেকক্ষন কথা বললাম রক্তিমের ভার্সিটিতে important class থাকায় সে চলে যায় আমি দাদীর রুমেই থেকে গেলাম কিছুক্ষন ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করলাম মাকে ফোন করে বললাম যে আমার সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে আমি এসে নিয়ে যাবো কারণ আমার সব নোট বাসায়। এভাবেই আমি পুরো দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটালাম।

রাত ৮টায় রক্তিম ফিরে এসে দেখে অধরা গালে হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছে।রক্তিম অধরাকে এভাবে দেখে বললো,
~কী হয়েছে কী ভাবছো?
বিছানায় বসে বসে ভাবছিলাম যে আমার জীবনে কতোটা পরিবর্তন হয়েছে এই ২দিনে তখনই রক্তিমের কন্ঠ কানে আসে।আমি মুখ তার দিকে করে বললাম,
~কিছু না।আপনার মা সবাইকে একসাথে রাতের খাবার খেতে বলেছেন।রক্তিম বললো,
~তোমাকে নিজে এসে বলেছে?আমি বললাম,
~না সার্ভেন্ট এসে বলে গিয়েছে।রক্তিম বললো,
~অপেক্ষা করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।আমি বললাম,
~আচ্ছা।

কিছুক্ষন পর রক্তিম আর আমি নিচে নেমে দেখি সবাই খাবার টেবিলে বসে পরেছে। রক্তিম চেয়ার টেনে বসে আমাকে ইশারা করলো বসার জন্য আমি বসে পরলাম রক্তিম আমার পাশে বসে পরলো।রক্তিমের বাবা বললো,
~খাওয়া শুরু করো সবাই এসে পরেছে।হঠাৎ রাত বললো,
~নাহ বাবা সারা আসবে একটু অপেক্ষা করো। রাতের কথা শেষ হতেই সারা এসে উপস্থিত রাত সারাকে দেখে তার দিকে এগিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি চোখ সরিয়ে নিলাম দুবছর আগে ঠিক এভাবে আমাকেও নাহ এগুলো কী ভাবছি। সারা আর রাত টেবিলের সামনে এসে দাড়ালো সারা সবাইকে একসাথে কুশলাদি করলো।খাবার টেবিলে রক্তিম আমি আর বাবা কোনো কথা বলিনি রাত সারা আর সাহারা রায়জাদার মুখ চলছিল।খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি রুমে যেতে নিবো তখনই সারা বলে উঠলো,

আমার শহরে তুমি পর্ব ৫

~অধরা অভিনন্দন রক্তিম আর তোমার বিয়ে হয়েছে।যাক এক ভাইকে পাওনি তো কী হয়েছে আরেক ভাইকে বশ করেছো।আমি তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম,
~আমি তো কারও ভালোবাসা ছিনিয়ে নিয়ে সম্পর্ক গড়ে নি বরং কেউ আমাকে ভালোবাসা দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।আর রক্তিম তোমার বড় আর রাতের সাথে তোমার বিয়ে হলে সে হবে তোমার ভাসুর তাই রক্তিম ভাই বলবে got it.বলেই রুমে চলে আসলাম।

রুমে এসে দেখি রক্তিম বিছানায় শুয়ে আছে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।আমি দেরি না করে তার পাশাপাশি শুয়ে পরলাম চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ২ বছর আগের সব স্মৃতি চলে আসছে।
২বছর আগে,

ভার্সিটির প্রথম বর্ষের পরীক্ষা মাত্র শুরু হয়েছে।সব গুলো পরীক্ষা আমি ঠিকভাবে দিতে পেরেছিলাম কিন্তু শেষের পরীক্ষার দিন আমি যে বাসে ছিলাম সেটা নষ্ট হয়ে যায়। আমি বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করি অসাবধানতার কারণে আমি একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে।আমি ব্যাথা পেয়ে রাস্তার মাঝখানে পরে যাই ভাগ্য ভালো ছিল যে শুধু হাত-পায়ে ছোট ছোট ক্ষত হয়েছিল।আমাকে এভাবে পরে যেতে দেখে গাড়ির মালিক বের হয়ে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অস্থির গলায় বললেন,
~আপনাকে এখনই হাসপাতালে নিতে হবে।আমি মাথা উঠিয়ে তার দিকে তাকাতেই দেখলাম

আমার শহরে তুমি পর্ব ৭