আমার শহরে তুমি পর্ব ৮ || লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি পর্ব ৮
লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

আমি সেখানে গিয়ে দেখি রাত একটা মেয়ের সাথে বসে আছে রাতের হাত সেই মেয়ের কোমড়ে রাখা।এই দৃশ্য দেখে আমার চোখে আপনাআপনি পানি চলে আসে সেই মেয়েটি আর কেউ নয় সারা ছিল।আমি আড়ালে দাড়িয়েই তাদের সব কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করছি রাত সারার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর সারাকে তার কাছে টেনে নিচ্ছে।আমি আর সইতে না পেরে সেখান থেকে চলে আসি বাসায়।বাসায় এসে কাউকে কিছু না বলে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে থাকি তখনই আমার ফোন বেজে উঠে আমি কান্না বন্ধ করে ফোন হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে আমি ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে নারী কন্ঠ কেউ বলে উঠে,

~অধরা,কেমন আছো?
আমি বললাম,
~কে আপনি?
সেই নারী উচ্চস্বরে হেসে বললো,
~আরে তোমার দুঃখের জীবনের শুরুটাতো আমার দ্বারাই হলো আর আমাকে চিনতে পারছো না।
আমি এবার রেগে গিয়ে বললাম,
~কী বলতে চান সরাসরি বলেন।
সেই নারী বললো,
~আমি রাতের মা সাহারা রায়জাদা।
তার নাম শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো রাতের মা এসব করছে আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~আন্টি আপনি এগুলো কেন করছেন?
রাতের মা বললো,

~তুমি কী মনে করছো?তোমার মতো নিম্নবংশের মেয়ে হবে আমার ছেলের বউ কখনো না।
তার কথা শুনে রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।আমি বললাম,
~আন্টি এসব কী বলছেন?আমি আর রাত তো দুজন দুজনাকে ভালোবাসি।
রাতের মা তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন,
~তুমি হয়তো ভালোবাসো। আমার ছেলে তোমাকে আর ভালোবাসে না সে এখন সারাকে ভালোবাসে।
রাতের মায়ের কথায় আমি তাকে বললাম,
~এসব আপনি করেছেন তাইতো।
সে একটু হেসে বললো,
~জ্বী।
আমি বললাম,
~রাতকে আমি সব বলে দিবো আপনি যে কতো নিচু মনের মানুষ তা আমি আজ বুঝলাম।
রাতের মা বললো,
~তুমি বলবে আর আমার ছেলে বিশ্বাস করবে। আমার ছেলে সে কখনো তার মায়ের বিরুদ্ধে যাবে না তবুও যদি তুমি বলতে চাও তাহলে আজ রাতে আমাদের বাসায় এসে রাতকে সব বলে দিও।
আমি বললাম,
~অবশ্যই আপনার মতো খারাপ ব্যক্তির কথা তাকে জানাতেই হবে।
বলেই ফোন রেখে দিলাম আমি রাতের বাসায় যাবো আর আজ রাতেই যাবো তার মায়ের সব কথা তাকে বলবো।তারপরও যদি সে বলে তার ভালোবাসা সারা তাহলে আমি সরে যাবো তার জীবন থেকে।একথা ভেবে চোখ মুছে নিলাম সেই রাতটা আমার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার রাত ছিল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সেই রাতে যখন আমি বাসা থেকে বের হতে যাবো তখনই বাবা বললেন,
~তুই এতো রাতে কোথায় যাস?
আমি বাবার প্রশ্নে অনেক কষ্টে কান্না লুকিয়ে বললাম,
~বাবা একটু কাজ আছে।
বাবা বললো,
~আমি তোকে একা কোথাও যেতে দিবো না।
আমি কান্নামাখা কন্ঠে বললাম,
~বাবা প্লিজ যেতে দেও।
বাবা বললো,
~তুই কান্না করছিস কেন?
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলান না ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম।মা আর ভাইয়েরা আমার আওয়াজ শুনে চলে আসে।মা এসেই আমাকে ধরে বলে,
~কী হয়েছে?মা তোর
আমি কান্না থামিয়ে ভাইদের উদ্দেশ্যে বললাম,
~তোরা রুমে যা।
ভাইরা বললো,
~কী হয়েছে আপী তোমার?
আমি বললাম,
~কিছু না।তোরা রুমে যা

ভাইয়েরা চলে গেলো।তারা চলে যেতেই আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম।মা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করছে।আমি কান্না থামিয়ে মা-বাবাকে সব বললাম মা-বাবা আমার কথা শুনে বললেন তারাও আমার সাথে যাবে আমি তাদের অনেক বুঝালাম কিন্তু শেষমেষ তাদের জেদের কাছে আমি হার মানলাম।
মা-বাবাকে নিয়ে চলে গেলাম রায়জাদা ভিলায়।সেখানে গিয়ে দেখলাম পুরো বাসা সুন্দর করে সাজানো আর মানুষে গিজগিজ করছে আমি বুঝতে পারলাম এখানে পার্টি চলছে।বাবা-মা আর আমি বাসার ভিতরে ডুকলাম রাতকে খুজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও তাকে দেখতে পেলাম না।তখনই একজন সার্ভেন্টকল জিজ্ঞেস করলাম,

~রাত কোথায়?
সেই সার্ভেন্ট বললো,
~রাত স্যার একটু পর আসবে।আপনি কে?
আমি বললাম,
~কেউ না।
রাতের অপেক্ষা করতে লাগলাম কিছুক্ষন পর রাত চলে আসলে সাথে সারাও আছে।তাকে দেখেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমি তার সামনে দৌড়ে চলে গেলাম। রাত আমাকে দেখেই অবাক হয়ে বললো,
~তুমি এখানে কী করছো?
আমি বললাম,
~রাত আমি তোমাকে কিছুকথা বলে চলে যাবো।
রাত বললো,
~অধরা শুনো আমি আর এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। সারাকে আমি ভালোবাসি আমার মনে হয় এখন আমাদের move on করা উচিত।

রাতের কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝরছিল বুকে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছিল আমি নিজেকে সামলিয়ে বললাম,
~রাত তোমার মা আমাকে কখনো মেনে নিতে চাইনি তাইতো তোমাকে এই মেয়ের সাথে লেলিয়ে দিয়েছে।আমাকে সে সবসময় নিচু ভেবে গেছে প্লিজ রাত বিশ্বাস করো।
কথা শেষ করতেই আমার গালে একটা থাপ্পড় পড়ে।আমি সামনে তাকিয়ে দেখি রাত আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে।আমি অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম মা-বাবা আমাকে পিছন থেকে ধরে ফেলে।আশেপাশের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে রাত আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বললো,
~বেয়াদব মেয়ে।আমার মায়ের বেপারে তুই এসব কীভাবে বললি?আমার মা একদম ঠিক বলেছিল তুই ব্যাহায়া আর তোর পুরো পরিবার খারাপ।তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
বাবা রাতের কথা শুনে বললো,
~এই ছেলে মুখের জবান ঠিক করে কথা বলো।
রাত বাবার কথার জবাব না দিয়ে গার্ডদের বললো,
~এই মূহুর্তে এই কীট গুলোকে বাসা থেকে বের করো।
আমি চোখের পানি মুছে বললাম,

~থাক রাত রায়জাদা আমরা আমাদের রাস্তা চিনি আপনার এতো কষ্ট করতে হবে না।ভালো থাকবেন
বলেই বাবা-মাকে নিয়ে চলে আসি তাদের বাসার বাহিরে।সেদিন বাবার চোখেও পানি ছিলো আমি সেদিনের কথা ভাবলে এখনও বুকে ব্যাথা করল এজন্য নয় যে রাত আমাকে ধোঁকা দিয়েছে বরং বাবার আর মায়ের অপমান সেদিন সহ্য করতে পারিনি। সাহারা রায়জাদা শুধু এতটুকুতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি আমার বাবার ব্যবসাও সে বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু বাবা ধীরে ধীরে আবার ব্যবসা শুরু করে।

বর্তমান
অতীতের কথা ভাবতেই চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পরলো।
সেদিনের অপমান আমি কোনোদিন ভুলবো না। হঠাৎ আমি অনুভব করলাম কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আমি পিটপিট করে চোখ খুললাম আর দেখলাম রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। তাকে একদম ছোট বাচ্চার মতো লাগছে ঠোঁট উল্টিয়ে সে ঘুমিয়ে আছে।আমি মুচকি হেসে যখন রক্তিমের কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিতে চাইলাম কিন্তু কীসের যেন জড়তা কাজ করছে।আমি রক্তিমকে বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে পেরেছি কিন্তু স্বামী হিসেবে মানতে হয়তো একটু সময় লাগবে।আমার মনে রক্তিমের জন্য হয়তো সেইরকম কোনো অনুভূতি নেই কিন্তু হ্যাঁ তার প্রতি আমার যেসব দায়িত্ব আছে তা অবশ্যই পালন করবো।তাকে আমার মনে ধীরে ধীরে জায়গা দিতে হবে কারণ সে আমার স্বামী।

সকালে রক্তিমের ঘুম ভাঙ্গতেই সে নিজেকে বিছানায় একা আবিষ্কার করলো।আশেপাশে কোথাও অধরাকে খুজে না পেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে চেক করলো সেখানেও অধরা নেই ওয়াশরুম খালি সে মনে মনে বললো,
~এই মেয়েটা গেলো কথায়।
রক্তিম ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায় কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে তার শার্ট,প্যান্ট,ঘড়ি ওয়ালেট সব বিছানায় সাজিয়ে রাখা।এগুলো এভাবে সাজিয়ে রাখা দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সে রেডি হতে শুরু করলো।
সকালে তাড়াতাড়ি উঠে নামাজ পরে নিচে এসে সবার জন্য নাস্তা রেডি করলাম তারপর দাদীমার রুমে গিয়ে তার সাথে চা খেয়ে আবার উপরে আসি এসে দেখি রক্তিম ওয়াশরুমে তার সব প্রয়োজনীয় জিনিস বিছানায় সাজিয়ে রেখে আবার নিচে এসে সব নাস্তা টেবিলে সাজালাম। সার্ভেন্টরা আমার সাহায্য করলো

রক্তিম নিচে এসে দেখে অধরা নাস্তা টেবিলে রাখছে।সে মুচকি হেসে অধরার পিছে দাড়িয়ে পরে অধরা সামনে ঘুরতেই রক্তিমের সাথে ধাক্কা লাগে। রক্তিম তার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে।অধরা চোখ বড় বড় করে ফেলে তা দেখে রক্তিম বললো,
~এমন বড় করছো কেন চোখ? চোখ বের হয়ে যাবে তো।
আমি নাস্তা টেবিলে রেখে যেইনা পিছে ঘুরবো রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে আমি তার দিকে রাগী চোখে বলি,
~কী করছেন আপনি?এখনই সবাই এসে পরবে।
রক্তিম ভাবলেশহীনভাবে বললো,
~তো কী হয়েছে?আমি তোমার বর তোমাকে জড়িয়ে ধরতেই পারি এতে কী সমস্যা।
আমি তার দিকে রাগে কটমট করে তাকালাম আর বললাম,
~আপনি তো বড্ড অসভ্য।
রক্তিম মুখ টিপে হাসলো তারপর আমাকে আরো কাছে টেনে বললো,
~তোমার জন্যই তো আমি অসভ্য।
আমি ভেংচি কেটে বললাম,
~আপনি শুধু অসভ্য না ফাজিলও।

রক্তিম কিছু বলবে তার আগেই পিছন থেকে পুরুষালী কন্ঠে বলে উঠলো,
~ডাইনিং রুমকেও তোমরা বেডরুম বানিয়ে নিয়েছো।
সেই ব্যক্তির কথায় রক্তিম আমাকে ছেড়ে দেয় তারপর আমার সাথে দাড়িয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দাড়িয়ে আছে।তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক রেগে আছে।রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~রাত, অধরা আমার বউ ওর সাথে কোথায় কীভাবে থাকতে হবে তা আমাকে না বললেই খুশী হবো।
রাত রেগে বললো,
~ভাইয়া তুমি তো এমন ছিলেনা।
রক্তিম বললো,
~যে যেমন তার সাথে ব্যবহারও তেমন করতে হয়।
এই বলেই রক্তিম চেয়ারে বসে পরলো তারপর আমাকে বললো,
~অধরা, নাস্তা দাও আমার অনেক জরুরি কাজ আছে।
আমি রক্তিমের কথা শুনে তার প্লেটে খাবার তুলে দিলাম।রাতও এগিয়ে এসে চেয়ারে বসে পরলো প্লেট হাতে নিয়ে নিজের খাবার নিজেই নিলো।রক্তিমের খাবার শেষ করলো হাত ধুয়ে আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে হাত আর মুখ মুছে বললো,
~অধরা, আমার আজকে আসতে একটু দেরি হবে। তুমি টেনশন করো না।
আমি বললাম,

~আজ মায়ের বাসায় যেতে চেয়েছিলাম।আমার অনেক জিনিসপত্র বাসায় রয়ে গেছে।
রক্তিম বললো,
~আমি কাউকে দিয়ে আনিয়ে দিবো।এখন আমি আসি
বলেই আমার কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে সে চলে গেলো।

আমার শহরে তুমি পর্ব ৭

রক্তিমকে বিদায় দিয়ে নিজের রুমে যেতে নিবো তখনই রাত বলে উঠলো,
~ভালোই চলছে বিয়ের জীবন।
আমি তার কথায় মুচকি হেসে বললাম,
~অনেক ভালো।
রাত বললো,
~ভালো তো আমাকে বাসো সংসার আমার বড় ভাইয়ের সাথে করছো।বেশ ভালো।
এবার আর সহ্য করতে পারলাম না রাতের সামনে এগিয়ে গিয়ে তাকে কষিয়ে থাপ্পর মেরে বললাম,
~আমি আপনার ভাবি হই। so give me the respect.
রাত গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।সেইসময় সাহারা রায়জাদা সেখানে উপস্থিত হলো রাতকে এভাবে দেখে সে জিজ্ঞেস করলো,

~কী হয়েছে তোর এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন?
রাত কিছু না বলে সেখান থেকে হনহন করে চলে যায়।
সাহারা রায়জাদা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আমাকে বললো,
~তুই কী করেছিস?
আমি বললাম,
~জবাব দিয়েছি।
বলেই চলে আসলাম রুমে সারাদিন এভাবেই কেটে গেলো রান্না করলাম আর দাদীর সাথে কথা বললাম।
রাত ৯.৩০ এখন পর্যন্ত রক্তিম বাসায় আসেনি তাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি হঠাৎ কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আমি তার সর্প্শ পেয়ে

আমার শহরে তুমি পর্ব ৯