আমার শহরে তুমি পর্ব ৯ || লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি পর্ব ৯
লেখনীতেঃ Alisha Rahman Fiza

তার স্পর্শ পেয়েই আমি বুঝে গেলাম যে কে এই ব্যক্তি আমি সেই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
~বাসায় এসেই আপনার অসভ্যতামি শুরু করে দিলেন।
সেই ব্যক্তিটি বললো,
~সারাদিন বউকে কাছে পায়নি এখন পেয়েছি তাই জড়িয়ে ধরেছি কোনো সমস্যা আছে।
আমি বললাম,
~রক্তিম ফ্রেশ হয়ে আসেন খাবার সার্ভ করছি।
হ্যাঁ এই ব্যক্তিটি আর কেউ নয় রক্তিম।সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~তুমি খাবার রেডি করো আমি আসছি।
বলেই সে রুমে চলে গেলো আর আমি নিচে রান্নাঘরে চলে আসলাম খাবার নিয়ে উপরে রুমে চলে আসলাম টি-টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে রাখলাম। একটুপর রক্তিম ওয়াশরুম থেকে বের হলেন আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
~তুমি খেয়েছো?
আমি বললাম,
~না।
সে বললো,

~আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে
আমি বললাম,
~এতো বকবক না করে খেতে আসেন?
রক্তিম শয়তানি হেসে বললো,
~তোমাকে খেতে আসবো?
আমি এবার রেগে বললাম,
~আপনি আবার ফাজলামো শুরু করেছেন।
রক্তিম হেসে বললো,
~আচ্ছা আর ফাজলামো করবো না।

বলেই সে খেতে বসে পরলো আমিও তার পাশেই বসে পরলাম।খাওয়া শেষ করে আমি সব গুছিয়ে উপরে এসে দেখলাম রক্তিম বিছানায় বসে তার মোবাইলে গেম খেলছে।আমি দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলে বেনুনি বাধতে শুরু করলাম হঠাৎ আয়নায় চোখ পরতে দেখি রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মিটমিট করে হাসছে।আমি তার হাসি দেখে ভ্রুকুচকে তার দিকে ঘুরে কোমড়ে হাত দিয়ে বললাম,
~হাসছেন কেন?এখানে কী কমেডি সীন হচ্ছে?
রক্তিমের মুখের হাসি আরো চওরা হলো সে বললো,
~তোমাকে এভাবে জ্বালাতে আমার খুব ভালো লাগে।
আমি তার কথায় অবাক হয়ে বললাম,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~আপনি কী পাগল?
সে মুচকি হেসে বললো,
~হ্যাঁ।আর তোমাকে রাগলে অনেক সুন্দর দেখা যায়
এই মানুষটি আসলেই পাগল রাগলে বলে কাউকে সুন্দর দেখা যায়।আমি তার সাথে কথা না বাড়িয়ে চুল ঠিক করে বিছানার এক পাশে বসে পরলাম। আমি বসতেই রক্তিম আমার কোলে মাথা রেখে বলে,
~তোমার কী কোনো অসুবিধা হয়েছে বাসায় একা থাকতে?
আমি বললাম,
~একা কোথায় ছিলাম?কতো মানুষ ছিল বাসায়।
রক্তিম বিরক্তি নিয়ে বললো,
~এই বাসায় আমি আর দাদী ছাড়া কেউ তোমাকে পছন্দ করে না তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম যে আমার অনুপস্থিতে তোমার কী কোনো সমস্যা হয়েছে?
আমি বললাম,

~না কোনো কিছু হয়নি।আর কিছু হলেও আমি সব কিছু সামলাতে পারবো।
রক্তিম বললো,
~হ্যাঁ জানি,আপনি বড়ো সাহসী নারী।
আমি বললাম,
~রক্তিম একটা প্রশ্ন করি?
রক্তিম বললো,
~করো।
আমি বললাম,
~২ বছর আগে কাউকে কিছু না বলে আপনি দেশান্তর কেন হলেন?
এই প্রশ্নটা শুনার সাথে সাথে রক্তিমের মুখে রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সে কিছু বলছেনা শুধু ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে হয়তো নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। আমি তার কোনো জবাব না পেয়ে বললাম,
~কী হয়েছে রক্তিম?কথা বলছেন না কেন?আমার প্রশ্নের জবাব কী আপনি দিবেন না।
আমার কথা শেষ হওয়ার পরই রক্তিম আমার কোল থেকে মাথা উঠিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~অধরা,ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।
বলেই যেই সে শুয়ে পরতে নিবে তখনই আমি বললাম,
~প্রশ্নটা এড়িয়ে যাচ্ছেন?একটা সামান্য প্রশ্নের কোনো জবাব নেই আপনার কাছে?

আমার৷ কথায় রক্তিম আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো।তার চোখ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম তার চোখ দুটি অসম্ভব লাল হাত দুটো মুঠ করে সে বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে পরলো।আর বললো,
~রক্তিম রায়জাদার রাগ সম্পর্কে তোমার ধারনা নেই অধরা।তাই একই প্রশ্ন বারবার করে আমার রাগ বাড়িয়ে দিয়ো না।তোমার জন্য ভালো হবে না।
তার কথায় আমি বিছানা ছেড়ে নেমে তার মুখোমুখি দাড়ালাম তারপর তাকে বললাম,
~রক্তিম,আমি আপনাকে কোনো ভুল কিছু জিজ্ঞেস করেনি।আপনি চাইলেই জবাব দিতে পারতেন হয়তো কোনো রহস্য আছে যার কারণে আপনি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে না।

আমার এ কথা শুনে রক্তিমের রাগ আরো বেড়ে গেলো।সে আমার দুবাহু অনেক জোড়ে চেপে ধরে বললেন,
~এতো জানতে ইচ্ছে করছে কেন তোমার?আমি ২ বছর আগে কী করেছি আমি তো কোনোদিন জানতে চাইনি ২বছর আগে রাতের সাথে তোমার কী কী হয়েছিল?
তার কথায় আমার বুকটা ছেদ করে উঠলো সে কী বলছে?সে তো সবই জানে আমার আর রাতেই মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল। আমার চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে বললাম,
~রক্তিম রায়জাদা,আমার আর রাতের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল তা আপনি জানতেন তবুও আপনি বলছেন তার সাথে আমার কী কী হয়েছে?আপনার অবগতির জন্য জানিয়ে দেই আমি সারা নই যে নিজের ভালোবাসার কাছে নিজের আত্মসম্মানকে বিক্রি করে দিবো।

এতটুকু বলে আমি একটু নিশ্বাস নিলাম রক্তিম কিছু বলতে যাবে তাকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
~আমিতো আপনাকে বলিনি যে আপনি আমাকে বিয়ে করুন উল্টো আপনিই আমার বাসায় গিয়েছিলেন।আরে আমার তো অনেক প্রশ্ন আছে করার কিন্তু আমি করিনা কারণ একটা সম্পর্ক গড়তে সময় লাগে আর আমার নিজেরও সময়ের প্রয়োজন।
আমার কথা শেষ হতেই রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~সরি,আমি এরকম করে বলতে চাইনি।
আমি তাকে বললাম,
~কোনো ব্যাপার না আপনার পুরো পরিবার তো সারাদিন বলতেই থাকে আজ থেকে আপনিও বলা শুরু করলেন।No problem ভুলটা আমারই আমাকে এখন ছাড়েন ঘুম আসছে।
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিলেন আমি ধীর পায়ে বিছানার অপরপাশে মুখ করে শুয়ে পরলাম।চোখের পানি গুলো আমার গাল বেয়ে পরতে লাগলো।

রক্তিম এখন পর্যন্ত সেখানেই দাড়িয়ে আছে।সে অধরাকে এভাবে বলতে চাইনি কিন্তু রাগের মাথায় মুখ থেকে বের হয়ে গেছে।২ বছর আগে তার দেশ ছেড়ে যাওয়ার কারণটা অধরাকে এখন জানানো যাবে না সে জানে অধরা এতে কষ্ট পাবে কিন্তু করার কিছু নেই সুযোগ বুঝে তাকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে।রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অধরার পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো তারপর অধরাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো,
~বউ রাগ করেছে কালকেই এই রাগ ভাঙ্গাতে হবে আর আমি জানি এ রাগ কেমন করে ভাঙ্গাতে হবে।
এসব ভেবেই রক্তিম মুচকি হেসে অধরাী গালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।

ফজরের আযান কানে আসতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।আমি চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলাম রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।তাকে দেখেই কাল রাতের সব কথা মনে পরে গেলো সব অভিমান আমার মনে এসে জড়ো হতে লাগলো।আমি রক্তিমকে ধাক্কা মারা শুরু করলাম তখনই রক্তিম বিরক্ত হয়ে বললো,
~কী হয়েছে?এমন করছো কেন।
আমি বললাম,
~আমাকে ছাড়ুন নামাজ পরবো।
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিলো আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে একবারে বের হলাম।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি রক্তিম বিছানায় বসে আছে আমাকে দেখে সে মুচকি হাসি দিলো আমি তার থেকে মুখ সরিয়ে জায়নামায নিয়ে নামাজে দাড়ালাম।

রক্তিম অধরার এমন ব্যবহার দেখে অবাক হলো না সে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো। সে নিজেও ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আসলো তারপর পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে টুপি মাথায় রুম থেকে বের হয়ে আসলো মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
আমি নামাজ শেষ করে সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ ভাজ করে ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখলাম রক্তিম রুমের কোথাও নেই হয়তো মসজিদে চলে গেছেন।আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম মাথাটা ব্যাথা করছে।চোখ বন্ধ করতেই ঘুম এসে জড়ো হলো চোখে।
রক্তিম নামাজ শেষ করে বাসায় এসে রুমে চলে আসলো।রুমে এসেই দেখলো অধরা ঘুমিয়ে আছে রক্তিম মনে মনে বললো,

~অধরাতো নামাজের পর বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে আজ শরীর খারাপ করলো নাতো?
রক্তিম চিন্তিত হয়ে অধরার মাথায় হাত রাখলো না জ্বর তো নেই হয়তো এভাবেই শুয়ে আছে।
মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে আমি চোখ খুলে দেখি রক্তিম আমার মাথায় হাত দিয়ে রেখেছে আমাকে চোখ খুলতে দেখেই সে বললো,
~তোমার কী শরীর ভালো না?
আমি বললাম,
~আমার কিছু হয়নি।
রক্তিম বললো,
~রাগ করে আছো?
আমি কিছু না বলে বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবো তখনই রক্তিম আমাকে বসিয়ে দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে বললো,
~আমি রাগের মাথায় কথাটি বলে দিয়েছি।সরি।
আমি বললাম,

~ছাড়েন।নিচে যাবো
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~আজ আমার শশুর বাড়ি যাবো।তো রেডি হয়ে থেকো।
আমি বললাম,
~আপনার সাথে কোথাও যাবো না।
রক্তিম বললো,
~তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাবো।আমার কোনো প্রবলেম নেই।
আমি বুঝতে পেরেছি এই পাগলের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই আমি বললাম,
~কখন যাবেন?
সে বললো,
~এখনই চলো।
আমি বললাম,
~মজা করবেন না।
রক্তিম বললো,
~১১টায় রেডি থেকো।

সকালে সবাই নাস্তা টেবিলেই করলো কিন্তু রাতকে কোথাও দেখা গেলো না।আমি নাস্তা শেষে সব গুছিয়ে রুমে যাবো তখনই সাহারা রায়জাদা আমাকে বললো,
~রাত আর সারার বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসবে আগামীকাল। তুই কোনো অঘটন ঘটাবি না।
আমি বললাম,
~আপনার ছেলে রাতকে গিয়ে বলেন যে তার কোনো এক্স গার্লফ্রেন্ড দরজার সামনে এসে না দাড়িয়ে পরে।
বলেই রুমে চলে আসলাম রেডি হতে হবে। রক্তিম বাহিরে গেছে তখনই বিছানার দিকে চোখ পরতেই দেখলাম সেখানে একটা শাড়ি রাখা আর একটা ছোট চিরকুট আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে চিরকুটটা নিয়ে পড়তে শুরু করলাম সেখানে লেখা,
~আমার প্রিয় মানুষটির জন্য একটি সুন্দর উপহার।
শাড়িটা হাতে নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে শাড়িটা ঠিক মতো পরে বাহিরে আসলাম।

আমার শহরে তুমি পর্ব ৮

ঠিক ১০টায় রক্তিম চলে আসলো আমি বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছি।রক্তিম আমাকে দেখে বললো,
~তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।অধরা
আমি তার কথায় লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে ফেললাম। সে আমার কাছে হাটু গেড়ে বসে আমার হাত ধরে বললো,
~কাল রাতে আমি ভুল করেছি।ভুল নয় অন্যায় করেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও।
তার কথায় আমি বললাম,
~এরপর থেকে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করবেন।রাগের মাথায় মুখ দিয়ে অনেক কথা বের হয়ে যায় যা আমরা বলতে চাই না।
রক্তিম বললো,
~চেষ্টা করবো।আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি একটু পর বের হবো
ঠিক ১১টায় আমরা বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।
রক্তিম আজ গাড়ি নেইনি আমরা আজ রিক্সা দিয়ে যাবো।রক্তিমের হাতে অনেক শপিং ব্যাগ আমি রিক্সায় উঠে জিজ্ঞেস করলাম,

~শশুর বাড়ির জন্য এতো কিছু।
রক্তিম হেসে বললো,
~আমার একটা মাত্র শশুর বাড়ি বলে কথা।
তার কথায় আমি হো হো করে হেসে উঠলাম রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~তোমার মুখের হাসির শব্দ বড্ড বেশি ভালোবাসি।
রক্তিমের কথায় আমি লজ্জা পেয়ে অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।সে মুচকি হেসে আমার একহাত তার হাতে আবদ্ধ করলো।
কিছুক্ষন পর বাবার বাসায় পৌছে গেলাম। আমি রিক্সা থেকে নেমে বাসার ভিতরে চলে গেলাম মা দরজা খুলে আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে রক্তিম পিছনে এসে দাড়িয়ে মাকে সালাম দিলো।মা সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
~ভিতরে আসো তোমরা।
ভিতরে ঢুকে আমি আরো বেশি খুশি হয়ে গেলাম কারণ

আমার শহরে তুমি পর্ব ১০