আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২৩

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২৩
Raiha Zubair Ripte

শেষ সন্ধ্যায় ছাঁদে দাঁড়িয়ে রাস্তায় জ্বলতে থাকা কৃত্রিম আলোর ল্যাম্পপোস্ট দেখ চলছে চিত্রা। কানে রয়েছে মুঠোফোন। ফোনের ওপাশ থেকে পরপর দুটো জোরে নিশ্বাস ফেলার শব্দ শোনা গেলো। এতে একটুও বিচলিত হলো না চিত্রা। সে আগের ন্যায় ঐ ল্যাম্পপোস্ট টা দেখেই চললো। হঠাৎ আকাশে অসময়ে মেঘের ডাক শুনতেই চিত্রা দৃষ্টি সরায়। আশেপাশে তাকিয়ে আকাশ পানে তাকায়। আস্তে আস্তে চারপাশ থেকে বাতাস বইতে শুরু করলো। খুব গর্জে বৃষ্টি নামার সংকেত দিচ্ছে।

-“ ফোন কেটে দিব?
তুষার মুহুর্তে কথার পিঠে কথা বলতে পারলো না। সময় নিলো,কিয়ৎ ক্ষন চুপ থেকে বলল-
-“ ফোন কেটে দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছি?
-“ তাহলে কি কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছেন?
-“ হুমম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ তাহলে কথা কোথায় মুখে? মৌনব্রত পালন করার ইচ্ছে হলে ফোন কেটে মৌনব্রত পালন করুন।
-“ কাল রেডি হয়ে থাকবেন আমি আসবো নিতে।
-“ কোথায় নিয়ে যাবেন?
-“ বিয়ের কেনাকাটা করতে। ভুলে গেছেন নাকি সামনে যে বিয়ে?
-“ ভুলতে দিলেন কই? সেই তো মনে করিয়েই দিলেন।
-“ রেগে আছেন মনে হচ্ছে?
-“ এতক্ষণ লাগলো এটা বুঝতে?

-“ না আগেই বুঝেছি সেজন্য নিশ্চুপ ছিলাম। হয়েছে টা কি, রেগে আছেন কেনো?
চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো। অভিযোগ সুরে বলল-
-“ সারাদিন ফোন দেন নি কেনো? ফোন কোথায় থাকে? ফোনের যথাযথ ব্যাবহার করতে জানেন না নাকি সময় হয় না আমাকে একটা ফোন দেওয়া কোনটা?
তুষার আগের ন্যায় থেকে জবাব দিলো-

-“ কথা বলার জন্য এই সময়টাই উপযুক্ত সেজন্য অন্য সময় ফোন দেওয়ার খুব একটা প্রয়োজন বোধ করছিলাম না। আকাশে তাকান দেখুন আকাশের রং পরিবর্তন হচ্ছে। কালো মেঘ গুলো জমাট বাঁধছে। চাঁদ টাও আড়াল হয়ে যাচ্ছে সেই মেঘে। আর দমকা ঠান্ডা হাওয়া গুলো শরীর কে মাতোয়ারা করে তুলছে সেই সাথে অনুভূতি গুলো কে সজাগ। বুঝলেন কিছু?

চিত্রা গায়ের ওড়না টা ভালো করে শরীরে জড়িয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ বুঝলাম,মুশলধারায় বৃষ্টি নামবে হয়তো, এই বাতাস আমার সর্বাঙ্গ দেহে একমাত্র শীতের অনুভূতি কে মাতোয়ারা করছে খুব শীত লাগছে।
-“ রোমান্টিক পরিবেশ আর মুড টার এভাবে ১২ টা বাজাচ্ছেন কেনো।
-“ আপনি কোথায় এখন?
-“ বেলকনিতে।

-“ রুমে যান,কম্বলের তলে গিয়ে ঘুম দিন। আমারও ঘুম পাচ্ছে।
-“ আচ্ছা ঘুমান তাহলে।
কথাটা বলেই তুষার ফোন কে’টে দেয়। চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। ফোন টা মুখের সামনে এনে তাকিয়ে রইলো। বুঝতে পারলো না তুষার রেগে ফোন কাটলো নাকি স্বাভাবিক হয়েই।
-“ হবু স্বামীর সাথে কথা বলা শেষ?

চিত্রা ছাঁদ থেকে চলে যাওয়ার জন্য পেছন ঘুরতেই রিয়াদ কথাটা বলে উঠে। রিয়াদ তার মানে চুপিচুপি ছাঁদে এসো চিত্রার কথাগুলো শুনছিলো। অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে রিয়াদের পানে চেয়ে কিছু না বলে হনহন করে ছাঁদ থেকে নেমে চলে যায়। রিয়াদ চিত্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হো হো করে হেঁসে উঠে।

চয়নিকা বেগম আর সিমি মিলে রান্না ঘরে রান্না করছে। চিত্রা বসার ঘরে ঢুকে সোফায় বসে। চোখ বন্ধ করতেই বুঝতে পারে সে একা নেই বসার ঘরে। তার আশেপাশে কেউ বসেছে। ফট করে চোখ মেলে তাকায়। রিয়াদ কে দেখে এবার রাগ সপ্ত আকাশে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ আমি যেখানে থাকছি আপনিও সেখানে সেখানেই থাকছেন কেনো?
-“ আমার অস্তিত্ব জানাতে।

রিয়াদের গা-ছাড়া কথা শুনে চিত্রা নিজের রাগ কন্ট্রোল করে। এর সাথে রেগে কথা মানে একে জিতিয়ে দেওয়া যা চিত্রা করবে না। শান্ত করলো নিজেকে।
-“ শুনেছিলাম কুত্তার লেজ কখনও সোজা হয় না। ওমা আজ দেখি মানুষ সেই লেজা বেকা হওয়া কুত্তার মতো। হাউ ইন্টারেস্টিং!

মুহুর্তে রিয়াদের মুখের ভঙ্গিমা পাল্টে যায়।
-“ হোয়াট ডু ইউ মিন?
-“ নাথিং ব্রো,জাস্ট চিলল করুন আজকের রাত টা। বোনের বিয়ে খেতে এসেছেন,সারাদিন শুয়ে বসে এর ওর পেছন ঘুরাঘুরি বন্ধ করে কাল থেকে আমার বিয়ের যাবতীয় কাজ আছে সব হাতে হাতে সাহায্য করবেন।
-“ কেনো কাজের লোকের অভাব পড়েছে নাকি চেয়ারম্যান বাড়িতে?
-“ না তবে বেকার মানুষের আনাগোনা কি করে যেনো চেয়ারম্যান বাড়িতে বেড়ে যাচ্ছে।

চিত্রা চিন্তিত ভঙ্গিমায় কথাটা বলে। রিয়াদ বেশ বুঝলো কথাটা তাকেই মিন করা। তাই কথার প্রসঙ্গ টা বদলাতে হাক ছেড়ে সিমি কে ডেকে কফি চাইলো। চিত্রা সেটা দেখে হাসতে হাসতে রুমে চলে আসলো।
ছাঁদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হেঁসে হেঁসে ফোনে কথা বলছে তৃষ্ণা। ফোনের ওপাশে আছে তুর্য। আর ছাঁদে উল্টোপাশে কান খাঁড়া করে ফোন স্ক্রোল করছে রাফি। নামের ফোন টিপছে তার সব মস্তিষ্ক রয়েছে তৃষ্ণার পেছনে। তৃষ্ণা হাসি অসহ্য লাগছে রাফির কাছে। কিছু বলতে গেলেই শুধু বলে বসে “ আপনার সমস্যা কি? আমি যা ইচ্ছে তাই করবো।”

অতঃপর রাফিকে চুপ থাকতে হয়। বলতেও পারছে না তার খারাপ লাগছে। এভাবে আর কতদিন চলবে কে জানে?
তৃষ্ণা কথা বলার পরপর আড়চোখে বারবার রাফিকে দেখছে। এই সুযোগ টা সে কোনো মতেই হাত ছাড়া করবে না। সুযোগের ব্যাবহার টা সে এবার ভালো করেই করে ছাড়বে। তুর্য ছেলেটা ভালোই। মজার ভিষণ যার জন্য কাজ খুব সহজেই হয়ে যাবে।

-“ তৃষ্ণা কাল ফ্রী আছো?
তৃষ্ণা রাফির থেকে দৃষ্টি সরায়। রাফিকে শুনিয়ে শুনিয়ে কিছুটা জোরে বলে-
-“ হ্যাঁ ফ্রী আছি কাল। কিন্তু কেনো?
ওপাশ থেকে কি বললো রাফি শুনতে পারলো না। তৃষ্ণা বলে উঠে-
-“ হ্যাঁ যাওয়াই যায়।

রাফি বুঝে গেলো তারা কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করছে। মেজাজ বিগড়ে গেলো। তুর্য ছেলে টাকে শাসিয়ে আসতে হবে তৃষ্ণার থেকে যেনো দূরে থাকে। সে নিজেই এখনও তৃষ্ণা কে নিয়ে বাহিরে যায় নি সেখানে তুর্য এই সাহস দেখাচ্ছে। তৃষ্ণা আরো টুকটাক কথা বললো তুর্যর সাথে। দাঁতে দাঁত চেপে সেসব কথা রাফি সহ্য করলো। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন হতেই তৃষ্ণা ফোন কেটে ছাঁদ থেকে নেমে যেতে নিলে রাফি পেছন থেকে ডেকে উঠে –

-“ এই ছোট প্যাকেট এদিকে আসো।
তৃষ্ণা মনে মনে হেঁসে মুখে গম্ভীর ভাব এনে রাফির দিকে এগিয়ে যায়।
-“ হ্যাঁ ভাইয়া বলুন।
-“ কাল কোথায় যাচ্ছ তুমি?
-“ এই তো ভাইয়া একটু ঘুরতে যাব।
-“ কোথায় যাবে সেটা জিজ্ঞেস করছি।
-“ সেটা তো ভাইয়া তুর্য জানে।
-“ তুর্য তোমার কি লাগে?
-“ কিছুই না।

-“ তাহলে কোন সাহসে তুমি ওর সাথে বাহিরে যেতে চাচ্ছো?
-“ উনি তো নিজে থেকেই বললো। আমি কি করে মুখের উপর না করে দেই বলুন তো?
-“ ফোন করে বলে দাও তুমি কাল ফ্রী নেই। আমার সাথে বের হবে।
-“ মিথ্যা বলবো?
-“ মিথ্যা কেনো বলবে? সত্যি ই বলবে।
-“ এটা তো সত্যি না।
-“ সত্যি না কেনো?

-“ আপনি তো আমায় শিখিয়ে দিচ্ছেন।
-“ না সত্যি বের হবে কাল আমার সাথে।
-“ কোথায় যাব?
-“ ঘুরতে।

-“ না আমি আপনার সাথে যাব না। তুর্যর সাথেই যাব ভাইয়া।
-“ আর একবার ভাইয়া ভাইয়া করলে ছাঁদ থেকে নিচে ফেলে দিব।
-“ বলবোই ভাইয়া।
-“ না বলবে না।

-“ আপনার ইচ্ছেতে নাকি? আমার যা মন চায় তাই ডাকবো।
-“ ওকে দ্যান তাহলে ছ্যাইয়া,জান বাবু শোনা,কলিজা বলে ডাকো।
তৃষ্ণা রাফির কথা শুনে নাক ছিটকালো।
-“ আপনি আমার জান,কলিজা,বাবু শোনা বা ছ্যাইয়া নন যে এসব বলে ডাকবো। আপনি তো আমার প্রিয় চাচার ছেলে প্রিয় ভাইয়া।

-“ চাচার ছেলে ভাই থেকে জান কলিজা বাবু শোনা, ছ্যাইয়া হতে বেশি সময় লাগে না।
-“ তাতে আমার কি?
-“ তোমারই তো সব শোনা।
তৃষ্ণা আড়চোখে তাকালো রাফির পানে। রাফির মুখে লেগে আছে দুষ্টু হাসি।
-“ আপনার ভাবসাব ভালো লাগছে না। কিসব বলছেন সকাল হলেই ভুলে যাবেন ভাইয়া।
-“ আর ভুলবো না জান।

-“ কি শোনা জান বলছেন ভাইয়া। মাথা ঠিক আছে?
-“ হ্যাঁ বাবু আমার মাথা একদম ঠিক ছিলো কিন্তু তোমাকে দেখে মাথা আউলে গেছে।
-“ লেবুর শরবত খান ভাইয়া। মাথা ঠিক হয়ে যাবে।

-“ তোমার হাতে শুধু লেবুর শরবত কেনো ডার্লিং করল্লার শরবত ও অমৃত ভেবে খেয়ে নিব।
তৃষ্ণা এবার আর দেরি করলো না হন্তদন্ত হয়ে ছাঁদ থেকে নেমে পড়লো। কিসব ডেকে সম্বোধন করছে। সকাল হলে নির্ঘাত ভুলে যাবে। রাফি তৃষ্ণার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হোহো করে হেসে উঠে। বিরবির করে বলে-
-“ আমাকে ভালো থাকতেই দিলে না। ভাইয়া বলে বলে হৃদপিণ্ড টা ঝলসে দিলে এবার তোমার হৃদপিণ্ড টা ঝলসানোর বাকি।

শেষ রাতের দিকে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছিল। রাস্তা কিছুটা কাদায় কানা কানা হয়ে আছে। আকাশ এখনও মেঘলা। অধরা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আরেক হাতে ছাতা নিয়ে হেঁটে চলছে। গন্তব্য তার ভার্সিটি। পড়নে আজ সাদা রঙের গোল জামা। রাস্তার কাদা নোংরা পানি ছিটকে তার পায়ের লেগে গেছে। যার দরুন সেলোয়ারের নিচের দিকটায় কাদা লাগে।

বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে অধরা। চারুকলা ভবনে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে কাদা ধুয়ে নেয়। এরপর চারুকলা ভবন থেকে বেরিয়ে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টে ঢুকে। ক্লাস শেষ করে বটতলা চলে যায়। আপাতত ভর্তা ভাত খাবে সে। বটতলা গিয়ে ভর্তা দিয়ে ভাত খায়। তারপর আবার সেই পদ্ম বিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আজ মনে বাসনা জেগেছে পদ্মবিল থেকে একটা পদ্ম তোলার। কিন্তু নাগালে পাওয়া অসম্ভব পদ্ম। তাই চুপচাপ বসে রইলো। আর তখনই হুড়মুড়িয়ে কাউকে পাশে বসতে দেখলো। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে তৃষ্ণা বসেছে।
হঠাৎ তৃষ্ণা কে দেখে আপনা-আপনি অধরার কপালে দু ভাজ পড়ে। অবাক হয়ে বলে-

-“ তুই এখানে কেনো?
তৃষ্ণা অধরার কাঁধে মাথা দিয়ে বলে-
-“ আজ তো বিয়ের শপিং করার কথা ভুলে গেছো? ভাইয়া গাড়ি নিয়ে এসেছে তোমাকে যেতে বললো।
অধরার বেলুমাল ভুলে গেছিলো আজ যে তুষার চিত্রার বিয়ের শপিং করার কথা। মন কিছুটা খারাপ হলেও সেটাকে পাত্তা দিলো না। এখন থেকেই তাকে বাস্তবতা মানতে হবে। কষ্ট পেলে নিজ ব্যাতিত অন্য কাউকে বুঝতে দেওয়া চলবে না।

অধরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তৃষ্ণা ও বসা থেকে উঠে অধরার হাত ধরে হাঁটতে থাকে। মেন রোডে আসতেই দেখে তুষারের ব্লাক রঙের গাড়িটা। অধরা তৃষ্ণা এগিয়ে গেলো। ড্রাইভিং সিটে তুষার আর তার পাশে চিত্রা বসে আছে।চিত্রা অধরা কে দেখা মাত্রই মিষ্টি করে হেঁসে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কেমন আছো আপু?
অধরা প্রতিত্তোরে চমৎকার হাসি উপহার দিয়ে বলে-
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো চিত্রা?
-“ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।

অধরা আর কিছু বললো না। তৃষ্ণা আর অধরা পেছনের সিটে বসে পড়লো। তুষার তৎক্ষনাৎ গাড়ি স্টার্ট দেয়। ওদের শপিং করিয়ে তারপর পার্টি অফিসে ছুটতে হবে। ইলেকশন যতো এগিয়ে আসছে ততই তুষারের এদিক ওদিক ছোটাছুটির মাত্রা বেড়ে গেছে। তুষার খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া চিত্রার সাথে কথা বলছে না।

এ নিয়ে চিত্রার মন প্রচুর খারাপ। কাল কি বেশি করে ফেলছে সে? চিত্রা কি খুব বেশি কিছু চেয়েছে তার কাছে? প্রিয় মানুষটার কাছ থেকে কি নিজের জন্য একটু গুরুত্ব চাওয়া অপরাধ? সবাই চায় তার প্রিয় মানুষ টা তাকে একটু পরপর ফোন করে খোঁজ খবর নিক। চিত্রা ও তো তাই চেয়েছে সে নিয়ে না হয় একটু অভিমানে বলেছে তাই বলে কথা বলবে না?

বসুন্ধরা শপিং মলের সামনে এসে গাড়ি থামায় তুষার। গাড়ি থেকে বের হয়ে ইশারায় চিত্রা কে নামতে বলে। চিত্রা চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে তুষারের পাশে দাঁড়ায়।
এদিকে তৃষ্ণা অধরা গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকাতেই দেখে রাফি আর রাতুল দাঁড়িয়ে আছে। রাফি তুষার কে দেখা মাত্র ই তুষারের কাছে এসে বলে-
-“ আসতে এতো দেরি করে কেউ ব্রো?

তুষার উত্তর দিলো না। চিত্রর ডান হাত নিজের বা হাত দ্বারা মুঠোবন্দি করে মলের ভেতর ঢুকে। রাতুল আঁড়চোখে অধরা কে দেখে নেয় একবার। মেয়েটার শরীরে আজ ও সাদা পোষাক দেখে অবিলম্বে একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে। মেয়েটার উচিত সাদা রং এর পরিবর্তে অন্য রং এর পোষাক ট্রাই করার।
রাতুল কে দেখে অধরা সৌজন্যমূলক হাসি উপহার দিয়ে ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করে-
-“ আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন?
রাতুল সালামে জবাব দেয়। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বলে।
রাফি তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ তুমিও শপিং করবে নাকি জান?
তৃষ্ণা সরু চোখে তাকালো রাফির দিকে।
-“ কি শুরু করছেন কাল থেকে। কথায় কথায় এসব বলে ডাকছেন কেনো? বিরক্তিকর লাগছে এসব ডাক।
রাফি গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে-
-“ আমার বেশ লাগছে এসব বলে ডাকতে শোনা।
-“ ছোট বোন হই আমি আপনার ভাইয়া।
-“ মায়ের পেটের তো না।
-“ আপনার চাচির পেটের তো।

-“ হুদাই বেহুদা লজিক দাঁড় করিয়ো না তো। চলো ভেতরে তোমাকে শপিং করিয়ে দেই।
তৃষ্ণা ভেঙচি কেটে বলে-
-“ এ্যাহ এমন ভাবে বলছেন মনে হচ্ছে আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড বা বউ।
-“ তুমি তো আমার জান।
তৃষ্ণা রাগান্বিত হলো।
-“ আর একবার জান জান করলে একদম জান টাই কেঁড়ে নিবো।
-“ আমি হাসতে হাসতে সেটাও দিয়ে দিব।
-“ অসহ্যকর।

কথাটা বলে তৃষ্ণা অধরার হাত ধরে মলের ভেতর ঢুকে পড়ে।
রাফি হাসতে হাসতে রাতুলের কাছে এসে বলে-
-“ ভাই চলো ভেতরে যাই।
রাতুল রাফির পিঠে ধপাস করে একটা কিল বসিয়ে বলে-
-“ ছোট বোনকে জালাচ্ছিস কেনো?
-“ ওর এটাই প্রাপ্য।
-“ কিছু চলছে নাকি দু’জনের মাঝে?
-“ সে-রকম ই কিছু একটা। চলো এবার আমার উপর গোয়েন্দাগিরি না করে।

তুষার চিত্রা কে নিয়ে লেহেঙ্গার দোকানে ঢুকে। দোকানদার তুষার কে দেখামাত্র ই সালাম দেয়। তুষার সালামের জবাব দেয়। দোকানদার কে বিয়ের জন্য টপ কালেকশনের লেহেঙ্গা দেখাতে বলে। দোকান দার তার দোকানে থাকা টপ কালেকশনের দশটা ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের লেহেঙ্গা দেখায়। চিত্রার চোখ আটকে যায় লেমন কালারের একটা লেহেঙ্গায়। বিয়েতে কেউ লেমন কালারের লেহেঙ্গা পড়ে আশ্চর্য! তুষার ইশারায় চয়েস করতে বললো। চিত্রা ভেবে পেলো না কোনটা নিবে।

-“ আপনি পছন্দ করে দিন।
তুষার বাক্য ব্যয় করলো না। লেমন কালারের লেহেঙ্গা টা তুলে প্যাক করে দিতে বললো। চিত্রা ফিসফিস করে তুষার কে বলল-
-“ বিয়েতে কেউ লেমন কালার পড়ে?
-“ ব্লাক পড়বে?

চিত্রা ভরকে গেলো। প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। শাড়ির দোকানে গিয়ে গায়ে হলুদ আর বউ ভাত সহ বিয়ের পরে পড়ার জন্য শাড়ি কিনলো। সাথে কিছু সেলোয়ার-কামিজ। জুতার দোকানে গিয়ে জুতা কিনে গয়নার দোকানে ঢুকে। ডায়মন্ডের নিউ কালেশনের কয়েকটা গয়না সহ স্বর্নের গহনা কিনে।

পুরো টা সময় চিত্রা চুপ ছিলো। পুরো শপিং তুষার একাই করলো। চিত্রা হা হু না কিছুই বলে নি।
এদিকে রাতুল রাফি অধরা আর তৃষ্ণার সাথে। তৃষ্ণা একের পর এক ড্রেস লেহেঙ্গা দেখেই চলছে কিন্তু কোনটা রেখে কোনটা নিবে ভেবে পাচ্ছে না। রাফি তৃষ্ণার কানে ফিসফিস করে বলে-
-“ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাবে শোনা কিন্তু একটাও সিলেক্ট করতে পারবে না। আর আমি তো সেটা হতে দিতে পারি না তাই না। বরং আমিই সিলেক্ট করে দেই।
কথাটা বলে রাফি কমলা রঙের একটা লেহেঙ্গা তুলে ধরে।

-“ এটা নিতে পারো মানবাে সুন্দর।
তৃষ্ণা লেহেঙ্গা টার দিকে তাকালো। সত্যি সুন্দর লেহেঙ্গা টা। তৃষ্ণার চুপচাপ কে সম্মতি ভেবে রাফি দোকানদার কে সেটা প্যাক করে দিতে বলে। তারপর তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আর কি কি নিবে বলো?
-“ সবে তো একটা লেহেঙ্গা নিলাম। আর কত কিছু নেওয়ার বাকি, গায়ে হলুদ বউ ভাতের পোষাক কিনা লাগবে সাথে জুতা কসমেটিক, জুয়েলারি।

-“ আচ্ছা চলো।
রাফি তৃষ্ণা কে নিয়ে চলে যায়। এদিকে অধরাকে কোনো কিছু নিতে না দেখে রাতুল গলা ঝেড়ে বলে-
-“ আপনি কিছু নিবেন না?
অধরা এদিক ওদিল চেয়ে সব দেখছিলো আকস্মিক রাতুলের কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে-
-“ তেমন কিছুই পছন্দ হচ্ছে না।
-“ এতো এতো পোষাক লেহেঙ্গা শাড়ি তবুও আপনার পছন্দ হচ্ছে না?
-“ আসলে আমার এমন চাকচিক্য পোষাক পছন্দ না।
রাতুল দোকানদারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে-

-“ ভাই সিম্পলের ভেতর কয়েকটা শাড়ির কালেকশন দেখান।
দোকানদার সিম্পলের ভেতর কয়েকটা শাড়ি বের করলো। রাতুল অধরার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ এদিকে আসুন দেখুন কোনটা পছন্দ হয়।
অধরা এগিয়ে আসে। শাড়ি গুলো এক নজর দেখে। শাড়ি গুলোর মধ্যে থাকা কাতানের সাদা রঙের শাড়ি টার দিকে হাত বাড়াতেই রাতুল গম্ভীর কন্ঠে বলে-

-“ সাদা টা বাদে সিলেক্ট করুন।
অধরা হাত সরিয়ে আনে।
-“ সাদা টা বাদ কেনো?
-“ কারন আপনি এবার সাদা পড়তে পারবেন না। বিয়ে বাড়িতে কেউ সাদা রঙের পোষাক পড়ে?
-“ আমার সাদা রঙ পছন্দের।
-“ বিয়ে বাড়ির কয়েক টা দিন না হয় পছন্দ কে অপছন্দের তালিকায় রাখুন আর রঙিন কিছু সিলেক্ট করুন।
অধরা ঠোঁট কামড়ে পার্পল আর সবুজ কালারের শাড়ি সিলেক্ট করে। সেই সাথে রাতুল পাশ থেকে সিম্পলের মধ্যে হালকা টিয়া কালারে একটা লেহেঙ্গা আনে। তিনটে জিনিস প্যাক করতে বলে রাতুল।
অধরা লেহেঙ্গার দিকে তাকিয়ে বলে-

-” গার্লফ্রেন্ডের জন্য নিলেন ওটা?
রাতুল ঠোঁট চেপে হাসলো।
-“ না আপনার জন্য।
অধরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই রাতুল বলে উঠলো-

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২২

-“ কোনো ওয়ার্ড যেনো বের না হয় মুখ দিয়ে। প্যাক করা শেষ পেমেন্ট ও করা শেষ সো আপনাকে নিতে হবে ওটা। বিয়ের দিন পড়বেন লেহেঙ্গা টা।
অধরা আর কিছু বললো না।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২৪