আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২৪

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২৪
Raiha Zubair Ripte

-“ আপাতত এই প্যাক গুলো আপনার। আর বাকি গুলো বিয়ের পর পাবেন।
চিত্রা দের বাসার সামনে গাড়ি থামিয়ে চিত্রা কে সাতটা শপিং ব্যাগ দিয়ে কথাটা বলে তুষার। এই সাতটা শপিং ব্যাগে মূলত বিয়ে গায়ে হলুদের সহ আউট দুই তিনটে ড্রেস আর কসমেটিক আছে । চিত্রা শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নেয়। তুষারের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থেকে মিহি কন্ঠে বলে-

-“ ভেতরে আসবেন না?
তুষার গাড়িতে বসতে বাতে জবাব দেয় –
-“ না, আপনি ভেতরে গিয়ে রেস্ট নিন। টায়ার্ড ফিল হচ্ছে নিশ্চয়ই।
-“ রেগে আছেন আমার উপর?
-“ আপনার উপর রেগে থাকা যায় নাকি?
-“ তারমানে ছিলেন রেগে?
-“ না। বাসার ভেতরে যান,রাতে ফোন দিব।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তুষার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। চিত্রা শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে বাসার ভেতর ঢুকে। সোফায় চয়নিকা বেগম, সিমি আর রিয়াদ বসে ছিল। চিত্রা কে দেখা মাত্র ই সিমি দৌড়ে চিত্রার কাছে আসে। ব্যাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে বলে-

-“ দেখি দেখি আপু কি কি কিনলে।
চিত্রা ব্যাগ গুলো সিমির হাতে দিয়ে ক্লান্ত শরীর টা নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো। চয়নিকা বেগম রান্না ঘর থেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে চিত্রার মুখের সামনে ধরে ইশারায় খেতে বলে।
চিত্রার এই পানি টুকুই দরকার ছিলো। ঢকঢক করে গ্লাসের পানি টুকু খেয়ে সামনে থাকা ছোট্ট টেবিল টায় রাখতেই রিয়াদ বলে উঠে –

-“ আমাদের ও বলতে চিত্রা আমি আর সিমি ও যেতাম। আমাদের ও কিছু শপিং বাকি আছে।
চিত্রা পূনরায় সোফায় মাথা ঠেকিয়ে বলে-
-“ সবে তো আমার শপিং শেষ হলো। বাসার সবার এখনও বাকি। তাদের সাথে গিয়ে করবেন,প্যারা কিসের।
রিয়াদ আর কিছু বলল না। সিমি লেমন কালারের লেহেঙ্গা টা বের করে বলে-
-“ ওয়াও আপু লেহেঙ্গা টা দারুন তো। কে পছন্দ করছে তুমি নাকি ভাইয়া?
চিত্রা স্মিত হেঁসে বলে-

-“ সব তোর ভাইয়া কিনে দিছে। আমি তো শুধু নামেই তার সাথে গেছি।
-“ বাহ! ভাইয়ার চয়েস দারুন তো।
-“ দেখা শেষ হলে ব্যাগ গুলো আমার রুমে দিয়ে যাস।
কথাটা বলে চিত্রা নিজের রুমে চলে যায়।

গাড়ির সামের সিটে বসে আছে রাফি আর ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছে রাতুল। রাতুল গাড়ি আনায় চিত্রা আর তুষার কে তুষারের গাড়িতে একা পাঠিয়ে দেয়। গাড়ির আয়না টা দিয়ে রাতুল আড়চোখে বারবার অধরা কে দেখে চলছে। মেয়ে টা অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। দমকা হাওয়া গুলো এসে চুলগুলো বারবার চোখ মুখে উপচে পড়ছে। এতে বেশ বিরক্ত অধরা,চোখ মুখ বারবার কুঁচকে আসছে। ক্লিপ বা কাকড়া থাকলে চুল গুলো কে এতক্ষণে বেঁধে ফেলতো।

কিন্তু হাত খোঁপা করতে চাচ্ছে না সে। হাত খোঁপা করলে আস্ত মহিলা মহিলা লাগবে তাকে। রাতুল নৈঃশব্দ্যে হাসলো। তারপর আবার মনোযোগ দিলো গাড়ি চালানো তে।
তৃষ্ণা ফোন টিপছে গাড়িতে বসে বসে। রাফি শুরু থেকেই লক্ষ করছে তৃষ্ণা ফোন টিপছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। বিষয় টা ভালো লাগছে না রাফির। রাতুল অধরা না থাকলে ফোন টা কেঁড়ে নিয়ে বাহিরে ফেলে দিত।

গাড়িটা এনে খাঁন ভিলার সামনে থামায় রাতুল। রাফি গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। গাড়ির ডিঁকি থেকে শপিং ব্যাগ গুলো এক এক করে বের করে। তৃষ্ণা কে হাঁক ছেড়ে ডাক দিতেই তৃষ্ণা গাড়ি থেকে বের হয়ে রাফির সামনে দাঁড়ায়। রাফি ইশারায় ব্যাগ গুলো নিতে বলে। তৃষ্ণা ব্যাগ গুলো নিয়ে হাঁটা লাগায়। অধরা গাড়ি থেকে নামার আগেই রাতুল গাড়ি থেকে নামে। গাড়ির দরজা খুলে অধরা কে বের হতে সাহায্য করে। অধরা বের হয় গাড়ি থেকে। রাতুল গাড়ির দরজা টা লাগিয়ে অধরার সামনে দাঁড়ায়। বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলে-

-“ বাহিরে বের হলে সব সময় চুল গুলো বেঁধে তারপর বের হবেন। আপনার এই খোলা চুল গুলো আপনি ব্যাতিত অন্য কাউকেও বিরক্ত করে খুব।
রাতুলের এহেন কথা শুনে অধরার কপালে আপনা-আপনি দু ভাজ পড়ে। রাতুল সেটা দেখে গাড়ির ভেতর থেকে একটা শপিং ব্যাগ এনে অধরার সামনে ধরে। ইশারায় নিতে বলে।
অধরা শপিং ব্যাগ টার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নাতীত দৃষ্টি নিয়ে ভ্রু উঁচু করে জিগ্যেস করে, কি?

-“ এটায় সেই সাদা শাড়ি টা আছে যেটা নিতে মানা করেছিলাম।
অধরা অবাকের পর শুধু অবাকই হচ্ছে। তখন তো বলল ঐ শাড়ি নিতে না। আর কিনলোই বা কখন? ব্যাগ টা হাতে না নিয়েই অধরা বলল-

-“ অনেক গুলো তো কিনলাম। এটা আবার কিনলেন কেনো? আর কখনই বা কিনলেন?
-“ সেটা জেনে কাজ কি? আপনার নজর বারবার শাড়ি টার দিকে যাচ্ছিল তাই কিনেছি। আপনি কিন্তু এটা বিয়ের মধ্যে পড়বেন না। যেদিন আপনার মন টা ভীষণ ভালো থাকবে। মনে হবে আজ আর দুঃখ কষ্ট রা আপনার নাগাল পাচ্ছে না সেদিন এই শাড়িতে নিজেকে সাজাবেন।
অধরা শাড়ি টা নিবে কি নিবে না সেই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে। রাতুল বুঝলো বিষয় টা। তাড়া দিয়ে বলল-

-“ মিস অধরা ব্যাগ টা ধরুন হাত ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে তো।
অধরা চট করে ব্যাগ টা নিজের হাতে নিলো। রাতুল মুচকি হেসে বলল-
-“ এবার বাসায় যান। এনজয় করতে থাকুন বিয়ে টা, আসি।
রাতুল গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ির বাহির জানালা দিয়ে একবার তাকালো। অধরা তার পানেই চেয়ে আছে। রাতুল গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়িটা যতক্ষণ দৃষ্টি সীমার মধ্যে ছিলো ততক্ষণ অধরা পলকহীন ভাবে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিলো। গাড়িটা যেই দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেলো ওমনি অধরার বুক টা ধক করে উঠলো। আচমকা বা হাত টা বুকের উপর চলে যায়। ঘনঘন শ্বাস ফেলে বাসার ভেতর ঢুকে পড়ে।

পার্টি অফিসে এসে বসে আছে তুষার। মাস দুয়েক পর ইলেকশন। এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করছে তুষার। সামনে কতবড় দায়িত্ব, সেই সাথে আশেপাশে শত্রুর আনাগোনা বেড়েছে কয়েক ধাপ। প্রতিমুহূর্তে তাকে চিন্তায় থাকতে হয় সাথে সতর্ক। কখন না জানি কোন দিক দিয়ে আক্রমণ করে বসে। তুষার বাবা তামিম খাঁন, আর দাদা তরিকুল খাঁন তুষারের দু পাশে বসে আছে।

সামনের ওপর পাশে বসে আছে হালিম সরকার পাশে তার ছেলে হৃদয়। এখানে এসে শুনতে পারে তুষার এবার নির্বাচনে হালিম সরকারের পরিবর্তে তার ছেলে হৃদয় দাঁড়াবে।
বিষয় টা নিয়ে মোটেও মাথা ব্যাথা নেই তার। মনোনয়ন ফ্রম টা নিয়ে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে আসে তুষার।
আহমেদ বাড়ি আর খাঁন বাড়ি পুরোদমে সাজানো হচ্ছে।

কোথাও কোনো ফাঁক নেই। সিমি চয়নিকা বেগম, রিয়াদ গিয়েছিল শপিং এ তাদের জন্য কেনাকাটা করতে। সাহেল আহমেদ ব্যাস্ত থাকায় যেতে পারে নি। চয়নিকা বেগম নিজেই স্বামীর জন্য নিয়ে এসেছেন। পরশু গায়ে হলুদ,তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। গ্রাম থেকে চিত্রার খালা,মামা,মামি,নানি,ফুফু, এসেছেন। চিত্রার নানা নেই। মারা গেছেন বছর সাতেক আগে। চিত্রার ফুফাতো বোন নুপুর এসে চিত্রার সাথে গল্প করছে।
মেয়েটা এবার ক্লাস নাইনে পড়ে। দেখতে শুনতে ভীষণ কিউট। চিত্রা কথার ছলে বারবার নুপুরের গাল টেনে ধরে। আর প্রতিবারের মতো নুপুর গাল দুটো ফুলিয়ে বলে-

-“ আমার গাল টাকে তুমি ছিড়েই ফেলবে চিত্রা আপু। দেখো সফট্ তুলতুলে গাল টা শক্ত হয়ে গেছে।
চিত্রা খিলখিল করে হেসে উঠতো। কথার মাঝেই হঠাৎ চিত্রার মুঠোফোন টা বেজে উঠে। চিত্রা স্কিনে তাকিয়ে দেখে তুষার ফোন দিয়েছে। বাড়ি জুড়ে মানুষের গিজগিজ। তাই ফোন টা নিয়ে ছাঁদে ছুটলো,পেছন পেছন নুপুর ও আসলো। চিত্রা ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভরাট কন্ঠে ভেসে আসলো-

-“ এতো সময় লাগে ফোনটা ধরতে?
-“ খুব বেশি কিন্তু সময় লাগে নি ফোন রিসিভ করতে।
চিত্রার মিহি কন্ঠে বলা কথাটা শুনে নিরবে ঠোঁট কামড়ে হাসলো তুষার।
-“ বলেছিলাম ফোন দিব,দিয়েছি।
-“ ফোন হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম সেজন্য।
-“ বড্ড অপেক্ষা করিয়েছি?
-“ বেশি না অল্প।
-“ এমন অল্প স্বল্প অপেক্ষা কিন্তু প্রায়ই করতে হতে পারে। তবে অপেক্ষারা দীর্ঘ হবে না। পারবেন না অপেক্ষা করতে এমন?
চিত্রার মুখ জুড়ে হাসির রেখা পাওয়া গেল।

-“ খুব পারবো।
-“ কথা দিচ্ছেন তো?
-“ হুমম।
-“ পরে কিন্তু অভিযোগ করতে পারবেন না।
-“ টুকটাক করবো। আমার অধিকার এটা।
-“ সেটাও ঠিক।
-“ রাত জাগবেন না,তাড়াতাড়ি ঘুমাবেন। কারন এরপর কিন্তু রাতে খুব একটা ঘুমানোর সুযোগ পাবেন না।
মুহূর্তে চিত্রার চোখ মুখ জুড়ে লজ্জারা হানা দিলো। গাল দুটো টকটকে টমেটোর মতো লাল হলো। বিরবির করে বলে উঠল-

-“ অসভ্য।
তুষার শুনে ফেললো।
-“ আমি সাধু পুরুষ নই, সত্যি টা আগেই বলে দিলাম। এতে যদি অসভ্যের ট্যাগ নিতে হয় সেটাও না হয় নিলাম।
চিত্রা আর কিছু বললো না। বেশ খানিকক্ষণ সময় নিশ্চুপ থেকে ফোন রাখছি বলে ফোনটা কেটে দিলো চিত্রা। নুপুর পুরে টা সময় চিত্রার দিকে চেয়ে ছিল।

তুষারদের দোতালা বাড়িটা সাদা মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো। বিয়ের গেটটা কি সুন্দর দেখাচ্ছে! অপূর্ব সাজবাতি!
ইশশ… চোখে চোখে ভীষণ বিঁধছে আলোগুলো? কেন যেনো মনে হচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট মরিচ বাতি বিদ্রুপ করে হাসছে অধরার দিকে চেয়ে।

খোলা ছাদে হলুদের স্টেজ। গাঁদা ফুলের গন্ধ বাতাসের সাথে মিশে একাকার। বাড়ির সবার কি একটা উত্তেজনা, আনন্দ। চারিদিকে রংমহলের খেলায় অধরার যেনো ফিকে এক রঙহীন। ভালবাসার মানুষের ভালো থাকাটাই তো সবচেয়ে প্রিয় হওয়া উচিত। আচ্ছা ভালোবাসলে কি সবাই এমন স্বার্থপর হয়ে যায়?
সাউন্ড স্পিকারের গানবাজনা হচ্ছে! প্রিয় মানুষটার অন্যের হয়ে যাওয়ার উৎসব!
অধরা নির্বিকারচিত্তে ছাঁদের এক পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সব। মনে বইছে অশান্তির ঝড়। আর কয়েক টা প্রহর তারপর এই পুরুষ টি তার জন্য চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।

কথায় আছে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ জন্মায় বেশি। এই পুরুষ টা তার জন্য নিষিদ্ধ কথাটা মনে আসতেই ঠেলে কান্না পাচ্ছে অধরার।
আজ পড়নে তার পার্পল রাঙের সেই শাড়ি। যেটা সেদিন কেনা হলো। মুখে হালকা সাজ,শরীরে তাজা ফুলের গহনা। শরীরের পারফিউম আর তাজা ফুলের গন্ধে পাশে থাকা রাতুলকে বারংবার মাতোয়ারা করে তুলছে। কেউ যে তাকে মুগ্ধ দৃষ্টি তে দেখে চলছে সেদিকে অধরার ভ্রুক্ষেপ নেই। অধরা মনে তো না পাওয়ার যন্ত্রণা টার মাত্রা ভারি হচ্ছে।
তামিম খাঁন এখনও ছেলেকে স্টেজে দেখতে না পেয়ে রাফিকে ডাকেন। ডেকে তাড়াতাড়ি তুষারকে আসতে বলেন। ও বাড়িও তো যেতে হবে।

রাতুল অধরার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাফি সাথে নিচে নামলো।
তুষার নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা ঘেঁটে দেখছে। রাতুল ভেতরে এসে তুষার কে ল্যাপটপে ডুবে থাকতে দেখে তুষারের পিঠে কিল দিয়ে বলে-
-“ আজ তোর গায়ে হলুদ আর তুই এখনও ল্যাপটপে মুখ ডুবিয়ে বসে আছিস!
তুষার ল্যাপটপ বন্ধ করলো। বসা থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিলো। তারপর রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ চল।
তুষারের ছাঁদে আসা মাত্রই অধরার বুক কেঁপে উঠলো। সাদা পাঞ্জাবি তে লোকটাকে কি সুন্দর লাগছে। তৃষ্ণা দৌড়ে গেলো ভাইয়ে কাছে। তুষারের হাত ধরে স্টেজের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল-
-“ উফ ভাইয়া আজকের দিনেও এতো লেট করে কেউ? ওদিকে যে চিত্রা তোমার জন্য অধীর হয়ে বসে আছে।
তুষার বিনিময়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তানিয়া বেগম আর তামিম খাঁন এসে ছেলের গালে হলুদ ছোয়ালো। এরপর তরিকুল খাঁন ও তার স্ত্রী তাসলিমা খাঁন এসে তুষার কে হলুদ ছায়ালো। চিত্রা দের ও বাড়ি থেকে রিয়াদ সিমি নুপুর আর চিত্রার মামা,ফুফু এসেছে। রিয়াদ বারবার তুষারের দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেটা রিয়াদের থেকে অত্যাধিক সুদর্শন এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সিমি বারবার রিয়াদ কে বলে চলেছে-

-“ দেখো চিত্রা আপুর স্বামী টা কি হ্যান্ডসাম।
প্রতিত্তোরে রিয়াদ বিরক্তিকর চাহনি দিচ্ছে সিমি কে। নুপুর অধরার পাশে বসে আছে। সবাই হলুদ শাড়ি পড়েছে কেবল অধরাই পার্পল। চোখে চশমা থাকায় নুপুরে মনে হলো মেয়েটা শান্ত,গম্ভীর আর ভীষণ পড়ুয়া মেয়ে।
অধরা খেয়াল করলো নুপুর নামের মেয়েটা বারবার তার দিকে তাকাচ্ছে। অধরা এবার নুপুরের দিকে ঘুরে বসে বলে-

-“ এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কেনো দেখছো?ভালো করে দেখো।
নুপুর ভরকে গেলো। চুরি করে ধরা পড়লে যেমন টা হয় ঠিক তেমন টাই। অধরা স্মিত হাসলো। মুহূর্তে পাশে কারো বসার অস্তিত্ব টের পেতেই দেখে রাতুল এসে আসেছে। মুখে হাতে তার হলুদ লেগে আছে। অধরার দিকে চেয়ে বলে-
-“ ভাইয়ে বিয়েতে কেউ এমন নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে? হলুদ লাগিয়ে আসুন।
অধরার মন আবার অশান্ত হয়ে গেলো। যতই মন কে শান্ত করতে চাচ্ছে হুটহাট এক একটা কান্ড তাকে সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তৃষ্ণা ও দৌড়ে আসলো অধরার হাত ধরে বলল-

-“ আপু আসো তুমিই বাকি আছো শুধু। তাড়াতাড়ি হলুদ লাগাও ছবি তুলবো।
অধরা যথই স্টেজের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো ততই নিঃশ্বাস টা যেনো বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। এমন যন্ত্রণা কেনো হচ্ছে স্বাভাবিক হতে পারছে না কেনো? মনের উপর রাজত্ব চলে না তাই বলে কি মন বুঝতে পারছে না তার কষ্ট টা? এতোটা নির্দয় হয় কেনো মন?

কাঁপা কাঁপা পায়ে স্টেজে এগিয়ে গেলো। হলুদ টা হাতে ছোঁয়াতেই হৃদপিণ্ড টায় রক্তক্ষরণ হতে লাগলো। ইশ কি অসহ্য ব্যাথা। কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা তুষারের গালে ছোঁয়াল। মনে মনে কয়েকবার উচ্চারণ করলে-
-“ অতঃপর শখের পুরুষ আজ থেকে আপনি আমার কাছে চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন। আপনার আর আমার ভিন্ন রাস্তা ভিন্ন সংসার হবে। আপনাকে আর এ জীবনে পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালো।
আর এক সেকেন্ড ও দেরি করলো না হন্তদন্ত হয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটে গেলো। এভাবে কি কষ্ট আটকে রাখা যায়?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২৩

যায় না,এখন তো সাউন্ড বক্সে গান বাজছে। রুমের ভেতর গলা ফেটে কান্না করলেও কেউ বুঝবে না। কান্না করে যদি একটু মনের কষ্ট টা হালকা হয়ে এই মরণব্যাধি যন্ত্রণা থেকে খানিকটা মুক্তি পাওয়া যায় তাহলে তাই সই।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২৫