আমি ফাইসা গেছি পর্ব ১৩

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ১৩
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

গোলাপি রঙের কাপড়ে সোনালি সুতা দিয়ে কাজ করা কালো পাড়ের একটা সুতি শাড়ি পড়ে নিলো তোড়া।ভেজা চুলগুলো ঘাড়ের উপর এলিয়ে দিয়ে হালকা একটু সাজুগুজু করে রুম থেকে বের হলো সে।রুম থেকে বের হওয়ার আগে চাবির গোছাটা আঁচলে বেঁধে নিতে ভুললো না।

কুশান এখনো ওঠে নি।কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে যে তোড়া সেই
কখন থেকে ঘরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নাই।তবে তোড়াকে আজ একটু সকাল সকাল উঠতে হয়েছে।শুধু আজ না এখন প্রতিদিন তোড়াকে সকাল বেলা উঠতে হবে।কারণ কামিনী নিজে তোড়ার হাতে সংসারের চাবি তুলে দিয়েছে।সংসারের পুরো দায়িত্ব এখন তোড়া নিজে পালন করবে। ঘরের একমাত্র বউ হিসেবে সবকিছু দেখার দায়িত্ব এখন তোড়ারই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

টুনি আর জয়া তোড়ার আগেই রান্নাঘরে প্রবেশ করেছে।তোড়াকে আসা দেখে টুনি জিজ্ঞেস করলো,
আজ কি কি রান্না হবে ভাবি?
তোড়া তখন বললো,আগের নিয়ম অনুযায়ীই সবকিছু চলবে।তোমরা খাবারের মেন্যু বের করে রান্নাবান্না শুরু করে দাও।একদম নিজের মতো করে কাজ করবে।আজ থেকে কেউ আর তোমাদের উপর হুকুমদারি করতে পারবে না।তোমাদের সাথে সাথে আমিও রান্না করবো।ওকে?

–ঠিক আছে ভাবি।এই বলে টুনি আর জয়া কাজ শুরু করে দিলো।কত বছর ধরে কাজ করছে তারা এ বাড়িতে।আজ দিয়ে মনে হয় কেউ তাদের সাথে এভাবে কথা বললো। এতোদিন লুতফা ছিলো রান্নাঘরের দায়িত্বে।যে সারাক্ষণ শুধু বকাবকি করতো তাদের।কোনো জিনিস একটু এদিক ওদিক হলেই যা নয় তাই বলে গালিগালাজও করতো।
তোড়া টুনি আর জয়া কে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতেই দেখে শাহিন,মাহিন,তুহিন একসাথে এদিকেই আসছে।

তোড়া ওদের কে দেখে নিজেই এগিয়ে গেলো।আর বললো,
দুলাভাই আপনারা এতো সকালে?
শাহিন সেই কথা শুনে বললো, প্রতিদিনের অভ্যাস তো সেজন্য ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
–ও আচ্ছা।তা আপনাদের কিছু লাগলে বলিয়েন।চা বা কফি কিছু কি দিবো?

–না, না।লাগবে না কিছু।আমরা আসলে তোমাকে একটা ধন্যবাদ দিতে আসছিলাম।সব তোমার জন্যই সম্ভব হয়েছে তোড়া।আমাদের কে যেভাবে এই বাড়ির লোকজন ব্যবহার করেছে সত্যি আমরা কারো সামনে মুখ দেখাতে পারতাম না।আজ থেকে আমাদের ও একটা কর্ম হবে।আমরাও অফিসে যাবো।সত্যি খুব আনন্দ হচ্ছে আমাদের।
শাহিনের কথা শুনে তোড়া বললো, ইটস ওকে দুলাভাই।ধন্যবাদ দিতে হবে না।আর হ্যাঁ অনেক মনোযোগ দিয়ে কাজকর্ম করবেন।সবকিছু ভালোভাবে বুঝিয়ে নিবেন।

তুহিন তখন বললো আমরা আমাদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবো।দেখি এখন ভাগ্য আমাদের কোন পর্যায়ে নিয়ে যায়?
হঠাৎ পিছন দিক থেকে মিরা চিৎকার করে ডাক দিলো মাহিন কে।
মাহিন? তুমি ওখানে কি করছো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে? আমার কফি দিবে কখন?
এক এক করে বাকি দুই কাল নাগিনীও রুম থেকে বের হয়ে আসলো।আর তারাও তাদের হাজব্যান্ড দের হুকুম করলো।
ইরা শাহিন কে বললো, তার আদা আর লেবু চা কই?

লিরা তুহিন কে বললো, Where’s my black coffee Tuhin?
তোড়া তখন বললো আপু আপনারা জাস্ট কয়েক মিনিট সময় দিন আমি রেডি করে আনছি।
ইরা সেই কথা শুনে বললো, তোমাকে কে বলেছে? আমরা কি তোমার থেকে চেয়েছি?
মিরা তখন বললো, নিজের লিমিটের মধ্যে থাকো।কারণ বেশি বাড়াবাড়ি কিন্তু ভালো নয়।
তোড়া সেই কথা শুনে তিন বোনের কাছে গিয়ে বললো,আমি কি করলাম যে আপনারা আমাকে এভাবে বলছেন?আমি জাস্ট আপনাদের চা,কফি রেডি করতে চাইলাম।

লিরা তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো, তোমার হাতের চা কফি আমরা খাবো?ভাবলে কি করে?
তোড়া তখন বললো সেটা আপনাদের ব্যাপার।টুনি আর জয়া সকালের নাস্তা বানাতে ব্যস্ত আছে।আমি ফ্রি ছিলাম সেজন্য নিজেই রেডি করতে চাইছিলাম।
ইরা তোড়ার কথার গুরুত্ব না দিয়ে শাহিন,মাহিন,আর তুহিনের দিকে চোখ বড় বড় করে বললো, ওভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো তোমরা?আমাদের কথা কি তোমাদের কানে যায় নি?

তোড়া তখন বললো আপু?ভাইয়াদের উপর চোখ রাঙানো বন্ধ করুন।কারণ আজ থেকে কোন ছেলেই রান্নাঘরে যাবে না।যার যেটা প্রয়োজন টুনি,জয়া আর আমাকে বলবেন।আর যদি মনে করেন আমাদের হাতের কিছু খাবেন না তাহলে নিজে রান্না করে খাবেন এই বলে তোড়া আবার রান্নাঘরে প্রবেশ করলো।তোড়া যখন হন হন করে হেঁটে যাচ্ছিলো তার আঁচলে থাকা চাবিটি ঝনঝন করে বাজছিলো।তা শুনে তিন বোন একদম হিংসায় জ্বলে পুড়ে যেতে লাগলো।
এদিকে ইরা তোড়ার এমন কথা শুনে মিরা আর লিরা কে বললো,এই ছোটো লোকের বাচ্চা আমাদের কি বলে গেলো রে?আমাদের রান্না করতে বলছে?এতো বড় সাহস এর?আম্মু কই রে?ডাক দে আম্মুকে?

মিরা তখন বললো আপু শান্ত হ।ওই মেয়েকে এতো বড় পাওয়ার তো আম্মু নিজেই দিয়েছে।জানি না আম্মুর কি হয়েছে?আম্মু কেনো এরকম করলো সত্যি আমার মাথাতেই ঢুকছে না।
তিনবোন বৈঠক করতেই জারিফ চৌধুরী আর কামিনী চৌধুরী তাদের মর্নিং ওয়াক শেষ করে বাসায় প্রবেশ করলো।
কামিনী তাদের মেয়েদের একসাথে দেখে বললো, মা তোরা এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস যে?কোনো সমস্যা?
ইরা,মিরা,লিরা কামিনীর প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।কারণ তারা তিনজনই তাদের মায়ের উপর ভীষণ ভাবে রেগে আছে।

কামিনীর গলার আওয়াজ শুনে তোড়া তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসলো। আর এসেই বললো,আম্মু কি লাগবে আপনার?আব্বু আপনার কি প্রয়োজন?
জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,তোমার শাশুড়ী কে শুধু এক গ্লাস সাদা পানি দাও।আর আমাকে একটু আদা লেবুর চা করে দিলেই হবে আপাতত।

–ঠিক আছে আব্বু।এই বলে তোড়া এক গ্লাস পানি এনে কামিনীর হাতে দিলো তারপর হন হন করে রান্না ঘরে ঢুকলো।
জারিফ চৌধুরী তখন কামিনী কে বললো, দেখছো কামিনী তোড়ার ব্যবহার?একদিনেই কত চেঞ্জ হইছে তোড়া?আসলে ঘরের বউ দের ব্যবহার শশুড় বাড়ির লোকদের উপর নির্ভর করে।শশুড় বাড়ির লোকজন বউ দের সাথে যেমন আচরণ করবে বউ রাও ঠিক তেমন আচরণ ই করবে।

কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা পুরো না শুনেই চেয়ারে গিয়ে বসলো।আর কি যেনো ভাবতে লাগলো?কামিনীর মতিগতি জারিফ চৌধুরী কিছু বুঝতে পারলো না।কামিনী কে অন্য মনস্ক দেখে জারিফ চৌধুরী বললো,
তোমার আবার কি হলো?পানি না পান করে ওভাবে হাতে ধরে আছো কেনো?
কামিনী সেই কথা শুনে জারিফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে পানি পান করতে লাগলো।
হঠাৎ যুথি এসে বললো খালা!খালা।আমি বাড়ি যেতে চাচ্ছি আজ।

–কেনো?আসছিস যখন থাক কিছুদিন।
–না খালা।থাকতে ইচ্ছে করছে না।আম্মুকে ছাড়া একা একা ভালো লাগছে না।ভীষণ বোরিং লাগছে আমার।
কামিনী তখন বললো, কিসের বোরিং রে?সোনিয়া আছে না?ওর সাথে গল্প করতে পারিস না?এভাবে ঘরের মধ্যে চুপ করে বসে থাকলে তো বিরক্ত লাগবেই?

যুথি কামিনীর কথা শুনে চুপ করে রইলো।আসলে যুথি বোঝাতে চাচ্ছে সে আর কেনো এভাবে পড়ে থাকবে এ বাড়িতে?কামিনী তো বলেছিলো কুশানের বউ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।সেজন্য কিছুদিনের মধ্যেই কুশান তোড়াকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবে।তারপর কামিনী যুথির সাথে কুশানের নতুন করে আবার বিয়ে দেবে।কিন্তু কামিনী তো নিজেই তোড়াকে বাড়ি এনেছে আর সংসারের সব দায়িত্ব তাকেই দিয়েছে।
তোড়া তার শশুড়ের জন্য চা এনে দিতেই দেখে যুথি দাঁড়িয়ে আছে। তখন তোড়া বললো, কি লাগবে যুথি তোমার?

–কিছু না।এই বলে যুথি তার রুমে চলে গেলো।
–তোড়া?তোড়া?কই তুমি?
তোড়া কুশানের কন্ঠ শোনামাত্র তার রুমের দিকে যেতেই কুশান নিজে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।
আর তোড়াকে দেখামাত্র বললো, তোমাকে না বলেছিলাম এলার্ম বাজলে আমাকে জাগিয়ে দিতে।
তোড়া সেই কথা শুনে বললো, আমি কতবার তোমাকে যে ডেকেছি তোমার তো কোনো হুঁশই নাই।এখন তুমি যদি না ওঠো তাতে আমার কি দোষ?

কামিনী হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠলো আর তার রুমের দিকে পা বাড়াতেই কুশান তার মায়ের কাছে চলে গেলো।আর কামিনীর হাত ধরে বললো,সরি আম্মু!আজ জাগা পাই নি।
কামিনী কোনো কথা বললো না।
জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, আজ থেকে আর তোকে উঠতে হবে না বাবা।আমি এখন থেকে রোজ রোজ যাবো তোর মায়ের সাথে।

কুশান সেই কথা শুনে বললো, না আব্বু।তা হয় না।কাল থেকে আমিই যাবো আম্মুর সাথে।
কামিনী এতোক্ষণে কথা বলে উঠলো,
কামিনী বললো, বাবা এখন থেকে আর তোকে কষ্ট করে রোজ রোজ আমার সাথে যেতে হবে না।তোর বাবার সাথে যাবো।এই বলে কামিনী তার রুমে চলে গেলো।

কুশান বুঝতে পারলো তার মা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।এমন কেনো হলো আজ তার?সে তো সকালে উঠতে কখনো আলসেমি করে না?আম্মু নিশ্চয় ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।এখন আম্মুর রাগ ভাঙাবে সে কেমন করে?
এরই মধ্যে তোড়া জিজ্ঞেস করলো,কি খাবে এখন?
কুশান এতে একটু বিরক্তই হলো।সে তখন বললো, খাবো না কিছু।এই বলে সে তার রুমে চলে গেলো।

তোড়া তখন নিজেও কুশানের পিছু পিছু চলে গেলো।আর বললো,সকালে উঠতে না পেরে আর আম্মু কে মর্নিং ওয়াকে না নিয়ে যেতে পেরে সেই রাগ কি আমার উপর ঝাড়ছো তুমি?
–আমি কখন তোমার উপর রাগ ঝাড়লাম তোড়া?
–তাহলে আমার সাথে রাগ রাগ কন্ঠ নিয়ে কথা বললে কেনো? তুমি কিছু খাবে না সেটা তো একটু ভালো করে বলতে পারতে?তা না করে মেজাজ দেখিয়ে বললে কিছুই খাবো না।কিন্তু তুমি তো এসময় কফি খাও।

কুশান তোড়ার কথা শুনে বললো,তোড়া তুমি কি এই সকাল সকাল আমার সাথে ঝগড়া করতে চাচ্ছো?আমি তো ভালো ভাবেই বললাম যে আমি কিছু খাবো না।তুমি এখন যাও তো আমার সামনে থেকে।তোমার ঘ্যানর ঘ্যানর আমার ভালো লাগছে না এখন।
–ঘ্যানরঘ্যানর করছি আমি?আমার কথা তোমার কাছে এখনো ঘ্যানরঘ্যানর মনে হচ্ছে?একদিনেই এতো অসহ্য হয়ে গেলাম আমি?
–ও মোর আল্লাহ!বাঁচাও আমাকে।এই বলে কুশান নিজেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

সকালের নাস্তা রেডি হয়ে গেছে।টুনি আর জয়া সব খাবার এক এক করে টেবিলে আনছে।এক এক করে সবাই নাস্তা করার জন্য আসতে লাগলো।শুধুমাত্র ইরা,মিরা, লিরা আসলো না।কামিনী যখন দেখলো তার মেয়েরা এখনো আসে নি তখন তিনি নিজেই চলে গেলেন মেয়েদের রুমে।
কামিনী কে দেখেও মেয়েরা তাদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলো।কামিনী তখন ইরার হাত থেকে ল্যাপটপ, মিরার হাত থেকে মোবাইল আর লিরার হাত থেকে বই কেড়ে নিয়ে বললো,

তাড়াতাড়ি নাস্তার টেবিলে চলে যাও।তোমাদের অফিস যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে।
ইরা তখন বললো, আম্মু আমরা বাহিরে করে নিবো নাস্তা।তোমরা করো গিয়ে।
কামিনী তখন বললো আমি মুখে মুখে তর্ক করা মোটেও পছন্দ করি না।যা বলছি সেটাই করো।তাছাড়া আজ তো একটু তাড়াতাড়িই অফিস যেতে হবে তোমাদের।জামাই দের তো সব বুঝিয়ে দিতে হবে।
মিরা সেই কথা শুনে বললো, আম্মু তুমি কি করে এতো চেঞ্জ হয়ে গেলে বলবে কি একটু?না মানে তুমি কি সত্যি আমাদের আম্মু?কেনো জানি চিনতে পারছি না তোমাকে?

কামিনী তখন বললো আমি ঠিকই আছি।তোমরা নিজেরাই বুঝতে পারছো না কিছু।পাঁচ মিনিটের মধ্যে নাস্তার টেবিলে উপস্থিত চাই সবাইকে এই বলে কামিনী চলে গেলো।
কামিনী চলে যাওয়ার পর পরই তিন বোন একসাথে নাস্তার টেবিলে আসলো।সবাই উপস্থিত হলে তোড়া সবাইকে নাস্তা পরিবেশন করে দিলো।

নাস্তা করতে করতেই হঠাৎ কামিনী বললো,বাবা কুশান?তোর আগেই অফিস যাওয়ার প্রয়োজন নাই।সামনে যেহেতু ফাইনাল এক্সাম তোর, সেজন্য পরীক্ষাটা দিয়েই তবে অফিস যাস।
কুশান সেই কথা শুনে বললো, তোমার যেটা ভালো মনে হয় আম্মু।
কামিনী তখন তোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো, কি বলো তোড়া?
তোড়া কামিনীর প্রশ্ন শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো।কামিনী তাকে জিজ্ঞেস করছে?
কামিনী তখন বললো কি হলো? বলছো না যে কিছু?

তোড়া সেই কথা শুনে বললো হ্যাঁ আম্মু।এক্সাম শেষ হলেই যাক।
ইরা মিরা লিরা তখন মনে মনে ভাবলো তাদের আম্মু তোড়াকে এতো গুরুত্ব কেনো দিচ্ছে?

শাহিন,মাহিন,তুহিন আজ ভীষণ খুশি।তারা আজ থেকে যে অফিসে যাবে।সেজন্য তারা তিনজন রেডি হয়ে জারিফ চৌধুরীকে ডাকতে গেলো।জারিফ চৌধুরী শাহিন,মাহিন,তুহিন কে দেখে বললো,ওরা তিনজন কোথায়?
শাহিন তখন বললো, বাবা ওরা তিনজন চলে গেছে।
–ওকে নো প্রবলেম।তোমরা আমার সাথে যাবে।
এই বলে সবাই বেড়িয়ে পড়লো বাসা থেকে।

সকালের নাস্তা শেষ করেই তোড়া দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি নিতে লাগলো।বেশি মানুষ জনের জন্য বেশি বেশি রান্নাবান্না করতে হয়।এজন্য এখন থেকেই চলছে দুপুরের প্রস্তুতি।
হঠাৎ লুতফা আসলো রান্নাঘরে।তোড়া লুতফাকে দেখে বললো, চাচি কিছু বলবেন?
–না,এমনিতেই দেখতে আসলাম কি করছো তোমরা?
তোড়া সেই কথা শুনে লুতফাকে একটা মোড়া এগিয়ে দিয়ে বললো চাচী বসেন।
–না বসবো না।

তোড়া সেজন্য তার কাজে মন দিলো।হঠাৎ কুশান ও আসলো রান্নাঘরে।আর বললো,তোড়া একটু রুমে আসো তো?
তোড়া কুশানের দিকে না তাকিয়েই বললো, ব্যস্ত আছি এখন।কি বলবে এখানেই বলো?
কুশান তখন বললো আমার একটা দরকারী জিনিস খুঁজে পাচ্ছি না।প্লিজ খুঁজে দিয়ে যাও একটু।
তোড়া কেটে রাখা সবজিগুলো ওয়াশ করছিলো।কুশানের কথা শুনে এবার সে ঘুরে তাকালো আর বললো,কি জিনিস খুঁজে পাচ্ছো না?

কুশান তখন বললো তোমাকে না কাল ইয়ে গুলো দিলাম।সেগুলো দাও।
–ইয়ে?কি ইয়ে?বুঝলাম না।
লুতফা তখন বললো তোড়া তুমি না হয় কুশানের ইয়ে গুলো খুঁজে দিয়ে আসো।আমি দেখছি এদিকে।
হঠাৎ লুতফার হুঁশ হলো।সে ভাবতে লাগলো ইয়ে টা আবার কি?সবার সামনে জিজ্ঞেস করতেও পারছে না।যদি আবার সবাই তাকে বোকা ভাবে?তখন আবার টুনি আর জয়া তাকে দাম দিতে চাইবে না।

রাজত্ব হারিয়েছে ঠিক আছে কিন্তু সম্মান তো হারায় নি সে?বরং আগের থেকে এখনি ভালো আছে সে?কি সুন্দর বসে থেকে দিন পার করছে?কিছুই করতে হচ্ছে না।
তোড়া বুঝতে পারলো কুশান সবার সামনে অভিনয় করছে।সেজন্য তোড়াও একটু অভিনয় করলো।
তোড়া তখন বললো তোমার ইয়ে আলমারির মধ্যে আছে।খুঁজে নাও গিয়ে।

কুশান তোড়ার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।আর মনে মনে বলতে লাগলো একবার শুধু পাই কাছে!
তোড়া তখন বললো ওভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?বললাম তো আলমারির মধ্যে আছে।
–তোমাকে আসতে বলছি তোড়া।তুমি নিজে এসে দিয়ে যাও।
লুতফার ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে ইয়ে টা দেখার জন্য।সে তখন বললো, বাবা কুশান!বউ তো ব্যস্ত আছে এখন রান্নাবান্না নিয়ে।চলো আমি তোমাকে খুঁজে দিয়ে আছি।
কুশান তখন বললো লাগবে না চাচী।আপনি বসে আরাম করুন।আমি নিজেই খুঁজে নিচ্ছি।এই বলে কুশান তার রুমে চলে গেলো।

কুশানের এমন রাগ দেখে তোড়ার আজ ভীষণ হাসি পাচ্ছে।তোড়া হাসছে আর ভাবছে তখন যে আমাকে বকলে এটাই তার শাস্তি।একবারের জন্যও আমি আজ রুমে যাবো না।তোমাকে এই ভাবেই ঘোরাবো।
তোড়াকে এভাবে হাসতে দেখে টুনি বললো, ভাবি হাসছেন যে?
–কই হাসছি?হাসছি না তো?
জয়া তখন বললো, আমি কিন্তু একটু একটু বুঝতে পারছি ভাবি।আপনি কেনো হাসছেন?
–কি বুঝতে পারছিস?

–ওই যে কুশান ভাইয়া বললো না ইয়ের কথা?আমি কিন্তু বুঝি আসলে ইয়ে টা কি?
তোড়া কোনো কথা বললো না।কারণ তাদের সাথে যে লুতফাও বসে আছে।
টুনি তখন বললো কি বুজছিস রে জয়া?মোক একটু বল না?
তোড়া এবার দুইজনকেই ধমক দিয়ে বললো, কি শুরু করলা তোমরা?তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করো।কয় টা বাজে দেখেছো?

তোড়া যেখানেই যাচ্ছে কুশানও পিছু পিছু সেখানেই যাচ্ছে।তোড়া তখন আবার সেখান থেকে চলে অন্য জায়গায় যাচ্ছে।
যৌথ পরিবার তো কুশান দের সেজন্য বাহিরে এসে কুশান তোড়াকে বলতেও পারছে না যে একটু রুমে এসো।কারণ কেউ না কেউ থাকবেই বাহিরে।
দুপুরের রান্নাবান্না শেষ করে তবে দিয়ে তোড়া নিজের রুমে প্রবেশ করলো।কুশান একা একা রুমে শুয়ে আছে।নতুন বিয়ে করেছে সেজন্য ভার্সিটিতেও যাচ্ছে না সে।কারণ বন্ধুরা তার বিয়ে নিয়ে ভীষণ ভাবে ক্ষেপাবে।সবার মধ্যে সেই যে প্রথম বিয়ে করেছে।

তোড়াকে রুমে আসা দেখে কুশান এক লাফে বেড থেকে নেমে আসলো।আর বললো,কি দরকার ছিলো রুমে আসার?রান্নাঘর তো এখন তোমায় ভীষণ ভাবে মিস করবে।
তোড়া কুশানের প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না।সে তার ড্রেস আর তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে ধরলো।
কুশান তখন তোড়ার হাত টেনে ধরে বললো,আমি কিছু বলছি তোমাকে?তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না আমার কথা?
তোড়া তখন কুশানের হাত ঝাটকা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো, আমার লেট হচ্ছে কুশান।কিছুক্ষন পরে সবাই দুপুরের খাবারের জন্য টেবিলে বসবে।

কুশান তখন বললো,সারাক্ষণ যদি শুধু রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া এসবের পিছনেই পড়ে থাকো তাহলে আমাকে সময় দিবে কখন?
–তোমাকে আবার কিসের সময় দিতে হবে?পুরো রাত টা তো পরেই আছে।
–না মানে। আমি কিন্তু সে সময়ের কথা বলছি না তোড়া?তুমি কিন্তু দুই লাইন বেশি বেশি বুঝছো?আমি কিন্তু তোমার মতো অতো অভদ্র না।তুমি তো জানোই ভদ্র একটা ছেলে আমি।
তোড়া সেই কথা শুনে কুশানের কাছে এগিয়ে এসে বললো, হ্যাঁ আমি তো সেটা ভালো করেই জানি তুমি কত টা ভদ্র ছেলে?
তাহলে তুমি কোন সময়ের কথা বলছো কুশান?

–কিছু না।
–ওকে।এই বলে তোড়া আবার ওয়াশরুমের দিকে চলে যেতে ধরলো।
কুশান হঠাৎ করে বললো, তোড়া!আই লাভ ইউ।
কিন্তু তোড়া দাঁড়ালো না।তবে সে মিটিমিটি করে হাসতে লাগলো।
কুশান তখন হঠাৎ করেই তোড়াকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো।আর তোড়ার কাঁধে অনবরত কিস করতে লাগলো।
তোড়া তখন বললো,কি হচ্ছে কি কুশান?
কুশান তখন তোড়ার সামনে গিয়ে বললো, আমার এখন প্রেম প্রেম পাচ্ছে।

–মানে?
–না মানে আমি এখন ভালোবাসবো তোমাকে?
–বুঝলাম না।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ১২

কুশান তখন এক নিঃশ্বাসে বললো, আমি বোঝাতে পারবো না কিছু।আর কিছু বলতেও পারবো না।তোমাকে এখন থেকে নিজের থেকে বুঝে নিতে হবে।আমি যখন ডাক দিবো তখনি তোমাকে রুমে আসতে হবে আর যখন বলবো আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে তখন বুঝতে হবে আমি তোমাকে এখন আদর করতে চাচ্ছি।এই বলেই কুশান তোড়াকে কিস করতে লাগলো।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ১৪