আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২১

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২১
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তোড়া চলে যাওয়ার কথা শুনে কুশানের চোখে জল টলমল করছে।এই বুঝি সে কেঁদে ফেলবে।সে নিজের মুখে কিছু বলতেও পারছে না আবার না বলে থাকতেও পারছে না।কুশান শুধু ভাবছে সে কি করে তোড়াকে ছাড়া থাকবে এ কয়দিন?

যখন তোড়া তার প্রেমিকা ছিলো তখন একদিন কথা না বললে সে অস্থির হয়ে যেতো।আর এখন বিয়ে করে পড়েছে আরেক বিপদে।এখন তোড়াকে এক নজর না দেখলে, তার কাছাকাছি না থাকলে, তাকে দু হাতে স্পর্শ না করলে কুশান কে অস্থির অস্থির তো লাগেই,সাথে তার অবস্থা একদম পাগলের মতো হয়ে যায়।এই কোন মায়ায় পরে গেলো সে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তার মনের এই অনুভূতি সে কি করে এখন তোড়াকে বোঝাবে?কি করে বলবে আমাকে এভাবে একা রেখে যেও না প্লিজ।আমি তোমাকে না দেখে এক সেকেন্ড থাকতে পারবো না।পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষা আবিষ্কৃত হয় নি যে ভাষায় আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো তুমি এখন আমার কত টা অস্তিত্ব জুড়ে আছো।তোমাকে বোঝানোর মতো এমন কোনো ভাষা আমার কাছে নেই যে ভাষায় আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো কতখানি ভালোবাসি তোমাকে।

আমি নিজেও জানি তোমার যোগ্য আমি কখনোই ছিলাম না,আর আমি যে একটা অপদার্থ ছেলে সেটাও ভালো করেই জানি।তাহলে কেনো এমন হচ্ছে আমার?ইট ভাটার মতো জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে হৃদয় আমার।আমি তো তোমাকে ভালোবাসতেই জানি না,তাহলে তুমি চলে যাওয়ার কথা শুনে কেনো হৃদয় টা আমার ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে?
অন্যদিকে তোড়া তার আব্বু আম্মুর সাথে বাড়ি যাবার কথা শুনে খুশিতে একদম গদমদ হয়ে গেলো।

সত্যি এ কয় দিন এক টানা থাকার ফলে তার নিঃশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসছিলো।তার বাবা মা আজ না আসলেও সে দুই এক দিনের মধ্যে চলে যেতো তার বাড়িতে।তোড়া আর তার খুশি ধরে রাখতে পারছিলো না।আনন্দে তাড়াতাড়ি করে তার কাপড় গুছিয়ে নিলো।অন্যদিকে কুশান দাঁড়িয়ে থেকে তোড়ার কাপড় গোছানো দেখছিলো।তোড়া যখন তার কাপড় গোছানো কম্পিলিট করে পিছন ফিরে তাকালো সে দেখতে পেলো কুশান দরজার সাথে হেলান দিয়ে আছে।তোড়া কুশানকে এভাবে দাঁড়ানো দেখে বললো,

কিছু বলবা?
কুশান মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো, না।
তোড়া তখন কুশানের কাছে এগিয়ে এসে বললো আমি কিন্তু এবার অনেক দিন থাকবো।যেদিন ভার্সিটি বন্ধ থাকবে সেদিন যেও আমাদের বাড়িতে।আর হ্যাঁ, ভার্সিটি বা প্রাইভেটে যাওয়া বন্ধ করে খবরদার যাবে না আমাদের বাড়িতে।সামনে যেহেতু ফাইনাল এক্সাম এ কয় দিন খবরদার গাফলতি করবা না।মন দিয়ে পড়াশোনা করবে।ওকে।

কুশান কোনো উত্তর দিলো না।সে শুধু তাকিয়ে আছে তোড়ার দিকে।আর তোড়া কি বলছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
তোড়া কুশানের অসহায় মুখ টার দিকে তাকিয়ে বললো,এই কুশান? কি হয়েছে তোমার?মুখ টা এমন ভার করে আছো কেনো?

কুশান সেই কথা শুনে হঠাৎ তোড়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তবে সে এখনো চুপচাপ ই আছে।সে তোড়াকে একদম তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।একটা কথাও বলতে পারছিলো না সে।
কুশানকে এরকম করা দেখে তোড়া বুঝতে পারলো সে তার বাড়িতে চলে যাচ্ছে দেখে কুশান মোটেও খুশি হয় নি।সেজন্য মুখ টা এমন গোমড়া করে আছে।

তোড়া তখন নিজেও কুশানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আর বললো,
তুমি তো নিজেই আম্মুকে বলেছো যে কয়েকদিন গিয়ে তোড়া থেকে আসুক।তাহলে এখন এরকম করছো কেনো?
কুশান তখন অভিমানের সুরে বললো আমি বলেছি?না উনি বললেন বাবা আমরা আজ তোড়াকে আমাদের সাথে নিয়ে যাচ্ছি।তুমি কি বলো?তখন আমি বলেছি আচ্ছা ঠিক আছে।

তোড়া তখন হাসতে হাসতে বললো,তাহলে এখন এরকম করছো কেনো?তখন আম্মুকে ডাইরেক্ট বলে দিলেই তো হতো?
কুশান তখন তোড়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো, উনি আমার শাশুড়ী হয় তোড়া।ওনাকে আমি এখন কি করে বলি যে যাওয়া হবে না তোড়ার।আপনার মেয়েকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।তাছাড়া আমি আকার ইঙ্গিতে তো বুঝিয়েই দিলাম তবুও বুঝতে পারলেন না তিনি।

তোড়া এবার জোরে করে হেসে উঠলো। আর কুশানের মুখ টা উপরে তুলে বললো,কিভাবে বুঝাইছো যে আম্মু বুঝতেই পারে নি।
–আমি বললাম আম্মু আমার তো ভার্সিটি খোলা আছে।এ কয় দিন ক্লাস করতেই হবে।কিভাবে যাবো আমি আপনাদের বাড়ি?
তিনি আমার এই কথার অর্থ বুঝতেই পারলেন না।তখন তিনি বললেন,আজ তোড়া যাক আমাদের সাথে।তুমি তাহলে পরে যেও।

কুশানের এমন ছেলেমানুষী দেখে তোড়ার ভীষণ হাসি পাচ্ছিলো।তোড়া ভাবতে লাগলো কবে যে কুশান ম্যাচিউর হবে?এখনো সে বাচ্চাদের মতো অভিমান করে।তবে কুশানের এইরকম বোকা বোকা কথাবার্তা শুনতে তোড়ার ভীষণ ভালো লাগে।ঠিক এসব কারণেই সে কুশানকে ছাড়তে পারে না।সে ভালো করেই জানে এই বোকা ছেলেটা তাকে কত বেশি ভালোবাসে?তাকে ছাড়া যে সে এক সেকেন্ড থাকতে পারবে না সেটাও জানে তোড়া।তোড়া এবার কুশানকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো,

ওকে কুশান।মন খারাপ করো না।এই যে ব্যাগ রাখলাম।তুমি যখন চাচ্ছো না আমি যাই,তাহলে গেলাম না।সবাইকে বলে দিচ্ছি যে আমি যাবো না।
কুশান তোড়ার মুখে এরকম কথা শুনে বললো এখন কি আর সেই কথা বললে হবে?যা করার তা তো আগেই করেছো।তুমি মায়ের সামনে যেভাবে কান্দাকাটি শুরু করে দিয়েছো মনে হচ্ছে তোমার উপর আমি ভীষণ অত্যাচার করছি।আর সেজন্য আমার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছো।আম্মু তো তোমার কান্নাকাটি দেখেই এভাবে সাথে করে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।

তোড়া কুশানের কথা শুনে বললো,
অত্যাচার ই তো করা হচ্ছে আমার উপর।তুমি অত্যাচার না করলেও দিনরাত তোমার মা আর বোনদের কথার অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে আমাকে।আমার নিঃশ্বাস একদম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কুশান।সত্যি আমার ভালো লাগছে না কিছু।সেজন্য কিছুদিন একটু বাড়ি গিয়ে থেকে আসতে চাচ্ছিলাম।

কুশান সেই কথা শুনে বললো, আমার আম্মু তোমাকে নানা ধরনের কথা শোনায় সেটা আমি ভালো করেই জানি।আমার বোন রাও যে আম্মুর মতো সেটাও জানি।এদের কে আমি যতই বলি না কেনো এভাবে তোমরা তোড়ার সাথে কথা বলো না তবুও এনারা কিছুতেই শুনবেন না।কারন এরা পুরাই ঘাড়ত্যাড়া টাইপের।নিজেরা যা বুঝে সেটাই করবে।

অন্য কারো কথা এদের কানেই যায় না।এই পরিস্থিতিতে আমি কি করতে পারি বলো?আমি তো এখন প্রতিবাদ করিই।যে আম্মুর মুখে মুখে কখনো উত্তর দেই নি তার সাথে এখন আমাকে তর্ক করতে হয়।যে বোনদের আদেশ শুধু সারাবছর শুনেই গেলাম তাদের কেও এখন আমি ধমক দিয়ে কথা বলি।আর কি করতে পারি আমি তুমি একটু বলবে আমায়?

–কিছুই করতে হবে না তোমাকে।আমি কি একবার বলেছি যে এটা করো,ওটা করো।বলি নি তো?এটা আমার ভাগ্যের লিখন ছিলো।মাশাল্লাহ এমন একটা পরিবার পেয়েছি পুরাই নাটকবাজ পরিবার।কে কখন নাটক করছে বোঝা বড় দায়।
কুশান তখন বললো, এভাবে বলছো কেনো তোড়া?কে আবার নাটক করলো?

–আমি এখন আর কিছু বলতে চাচ্ছি না কুশান।যেহেতু এখন আমি নিজের বাড়ি যাচ্ছি,ওসব কথা আমি বলতে চাচ্ছি না।এই বলে তোড়া ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বের হতে ধরলো।
কুশান বুঝতে পারলো কিছু তো হয়েছেই।সেজন্য তখন থেকে তোড়া তার সাথে এমন খারাপ আচরণ করছে।কিন্তু কি হয়েছে?তোড়া কি লুকাচ্ছে তার থেকে?তাকে জানতেই হবে।এই বলে কুশান তোড়াকে আটকিয়ে দিলো।আর বললো,
কি হয়েছে তোড়া?তুমি কি বলতে ধরে থেমে গেলে?

তোড়া তখন বললো আমাকে এখন যেতে দাও কুশান।সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
–না,যেতে দিবো না তোমাকে।আগে বলো কি হয়েছে?
তোড়া তখন বললো, শুনতে চাও?আচ্ছা শোনোই তাহলে।
তোমার মা যে কিছুক্ষন আগে নাটক টা করলো সেই নাটক টা কি তুমি বুঝতে পেরেছো?

–নাটক?কিসের নাটক?
–এই কিছুক্ষন আগেই যিনি সুস্থ সবল ছিলেন,ভালো মানুষের মতো হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন তিনি হঠাৎ মেহমান দেখেই অসুস্থ হয়ে গেলেন?উনি ভেবেছেন আমার তো আঙুল কাটা গিয়েছে,এখন বুঝি ওনাকেই মেহমানদের খাতির যত্ন করতে হবে।এই ভয়েই ব্যাথার অভিনয় শুরু করে দিয়েছেন।এসব অভিনয় আলা মানুষ না আমার একদম অসহ্য?এই কথা এখন আমি বলি কাকে?বললেও তো বিশ্বাস করবে না কেউ।আর তুমি তো নও ই।

কুশান সেই কথা শুনে বললো, আম্মু অভিনয় করছে মানে?না জেনে বুঝে আন্দাজেই একটা কথা বললেই হলো নাকি?আম্মুর তো সত্যি সত্যি বাতের ব্যাথা তোড়া।তুমি কেনো যে ওনার সাথে লাগতে যাও সত্যি আমি বুঝি না।ওনাকে ওনার মতো থাকতে দাও না।কেনো এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে রাগারাগি করছো?

তোড়া তখন বললো, সামান্য ব্যাপার?এটা তোমার কাছে সামান্য ব্যাপার মনে হচ্ছে?আমার বাবা মা কি সারাদিন তোমাদের বাড়ি আসে?বিয়ের পর আজ প্রথমবার এলো।ওনার কি উচিত ছিলো না নিজ দায়িত্বে তাদের আপ্যায়ন করানো।তাদের সাথে ভালোমন্দ গল্প করা।তা না করে উনি ঘরের মধ্যে চুপটি করে বসে আছেন।এটা কি ধরনের আচরণ কুশান?এটা কি ঠিক হয়েছে ওনার?উনি নিজেকে মনে করেন টা কি?যে অহংকারের জন্য কারো সাথে কথা বললেন না।আব্বু আম্মু দাদী আর চাচী কি মনে করলো কে জানে?

কুশান তা শুনে বললো আম্মু এমনই।তা এখন কি করতে পারি আমি?ওনাকে কি বাসা থেকে বের করে দিবো?না তোমাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাবো?তুমিই বলো কি করবো এখন?
তোড়া কুশানের মুখে এরকম উত্তর কখনোই আশা করে নি।তোড়া তখন বললো, বাহঃ কুশান।বাহঃ।আমি কখন বললাম যে তোমার মাকে বের করে দাও বাড়ি থেকে বা আমি তোমার সাথে আলাদা ভাবে থাকতে চাই?বলেছি একবার আমি?তাহলে তুমি বললে কেনো সে কথা?

–বলো নি।কিন্তু তোমার কথাবার্তা শুনে সেটাই মনে হচ্ছে আমার।তোমার প্রবলেম তো আমাকে নিয়ে নয়।আমার মা আর বোনদের নিয়ে।
তোড়া তখন বললো, তোমাকে নিয়েও আমার প্রবলেম কুশান?তুমি সোজা জিনিস উলটো ভাবে বোঝো সবসময়।তোমাকে আমি বললাম কি আর তুমি বুঝলে কি?এই বলে তোড়া চলে গেলো।

কুশান আর রুম থেকে বের হলো না।সে ধপাস করে শুয়ে পড়লো বিছানায়। আর বালিশ টা মাথার নিচে দিয়ে ভাবতে লাগলো তাদের দুইজনের সম্পর্ক মনে হয় কখনোই ভালো হবে না।সারাক্ষণ তাদের ঝগড়া লেগেই থাকবে।বাড়ি চলে যাওয়ার সময়ও তোড়াকে সে হাসি মুখে বিদায় দিতে পারলো না।কুশান নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো,এই ঝগড়ার শেষ কোথায়?কবে তাদের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে?

তোড়ার বাড়ির লোকেরা তোড়ার জন্যই অপেক্ষা করছে।সবাই বাসা থেকে বের হয়েছে কিন্তু তোড়ার ই তো আসার কোনো খবর নেই।তোড়ার মা বাবারা চলে যাওয়ার সময় ও কামিনী রুম থেকে বের হলো না।জারিফ চৌধুরী কত করে বললো একটিবার অন্তত তাদের থাকার কথা বলো,তারা তো আর বললেই থাকবে না।

কামিনী সাফ জানিয়ে দিলো তারা আমার কিসের আপনজন?যে থাকার কথা বলতে হবে।তারা চলে গেলেই কি আর থেকে গেলেই কি?আমার পছন্দ না ওনাদের।যাদের মেয়েকেই আমার পছন্দ না।তাদের ফ্যামিলির লোকজনকে পছন্দ হবে কি করে?

জারিফ চৌধুরী একদম অবাক হয়ে গেলো কামিনীর কথা শুনে।তিনি তো ভেবেছেন কিছু টা হলেও কামিনীর মধ্যে পরিবর্তন এসেছে।সেজন্য তোড়াকে বাড়ির বউ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আর তাকে সংসারের সব দায়িত্ব বুঝে দিয়েছে।আজ দিয়ে পরিষ্কার ভাবে বুঝে গেলো জারিফ সাহেব, এটা কামিনীর পুরোই একটা নাটক ছিলো।

আসলে কামিনী কুশানের চোখে ভালো সাজার জন্যই তোড়াকে এসব দায়িত্ব দিয়েছিলো।কারণ কামিনী বুঝতে পেরেছে তার ছেলে তোড়াকে ছাড়তে পারবে না কিছুতেই,সেজন্য অযথা তোড়াকে ডিভোর্সের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না।তবে কামিনী এমন কিছু পরিকল্পনা করেছে যাতে তোড়া নিজের থেকে এ বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়।

এতে করে সে তার ছেলের চোখেও ভালো থাকবে আর তার আপদও দূর হবে।এখন দেখা যাক তোড়া কামিনীর পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে কুশানকে ভুল বুঝে তাকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় কিনা?না সে সবকিছু সহ্য করেও কুশানের সাথেই রয়ে যায়?

স্বর্নাকে চলে যাওয়া দেখে সোনিয়ার ভীষণ মন খারাপ হলো।স্বর্ণা নিজেও ভীষণ আপসেট হয়ে আছে।তার ইচ্ছা করছিলো আজ সোনিয়ার সাথে থাকতে।দুইজনে একদিনেই ভীষণ ক্লোজ হয়ে গিয়েছিলো।সোনিয়া হঠাৎ স্বর্নাকে জড়িয়ে ধরে বললো আবার আসিও।
স্বর্ণা সেই কথা শুনে বললো তুমিও যেও আমাদের বাসায়।

–আচ্ছা ঠিক আছে।
হঠাৎ স্বর্ণার সুমনের দিকে চোখ গেলো।সুমন দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।স্বর্ণাকে এভাবে তাকানো দেখে সুমন তার রুমের ভিতর চলে গেলো।
তোড়া চোখ মুছতে মুছতে ব্যাগ হাতে নিয়ে আসলো সবার সামনে।তোড়াকে একা আসতে দেখে গোলাপ সাহেব বললো, মা কুশান কই?ও আসলো না যে?

তোড়া কিছু বলার আগেই তোড়ার চাচী বললো,তোড়াকে তোমরা বড়লোক ঘরে বিয়ে দিয়েছো ঠিকই কিন্তু মানুষ গুলোর মন মোটেও বড় নয়।কেমন যেনো অন্য ধরনের।কি অহংকার ভাই তোড়ার শাশুড়ীর।উনি তো ঘর থেকেই বের হলেন না।আর মেয়েগুলো যে অফিস থেকে আসলো।তারা ওই যে ঘরে প্রবেশ করলো আর বের হলো না।এরকম বাড়িতে কেউ আসে নাকি?অন্যদিকে তোমাদের জামাইকে দেখো,সেও যাওয়ার সময় একটু বিদায় দিতেও আসলো না।

স্বর্না তার মায়ের কথা শুনে বললো,আম্মু তুমি একটু বেশিই বোঝো,দেখলেই তো তোড়া আপুর শাশুড়ী ব্যাথায় উঠতে পারছেন না,তিনি কি করে রুম থেকে বের হবেন?আর ওনাদের মেয়েরা অফিস করে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরেছেন কখন তোমাদের সাথে গল্প করবে?আর আমাদের কুশান দুলাভাই এর কথা বলছো তো?তোড়া আপু আমাদের সাথে চলে যাচ্ছে দেখে উনি একটু আপসেট হয়ে আছেন, এ জন্য আসলেন না?

স্বর্নার মা তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো,তুই হঠাৎ এদের গুনগান গাচ্ছিস কেনো?তোর আবার কি হলো?
স্বর্না তখন বললো কি আবার হয়েছে?যা সত্য তাই বললাম।
তোড়া তখন বললো, আমি একটু সবাইকে বলে আসি।তোমরা আরেকটু অপেক্ষা করো।এই বলে তোড়া প্রথমে তার শাশুড়ীর রুমে ঢুকলো।আর কামিনী কে বললো,মা আসছি।

কামিনী কোনো উত্তর দিলো না।
জারিফ চৌধুরী কামিনীর সাথেই ছিলেন।তোড়া জারিফ চৌধুরী কেও বললো।জারিফ চৌধুরী তখন বিছানা থেকে নেমে এসে বললো,
মা তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করিও।ঠিক আছে?

–আচ্ছা আব্বু।এই বলে তোড়া তার ননদদের থেকে বিদায় নিতে গেলো।
আর জারিফ চৌধুরী গোলাপ সাহেবের কাছে গিয়ে ওনার হাত ধরে বললো,
বিয়াই সাহেব!এটা কিন্তু ঠিক হলো না।আজকের রাত টা কিন্তু আপনারা থেকে যেতে পারতেন।এসেই চলে যাচ্ছেন কেমন একটা কথা?
গোলাপ সাহেব সেই কথা শুনে বললো অন্য আরেকদিন আসবো বিয়াই।সেদিন থেকে যাওয়ার মন মানসিকতা নিয়েই আসবো।আপনি বিয়াইন কে নিয়ে আসিয়েন আমাদের বাড়িতে।

–আচ্ছা, যাবো।
হঠাৎ কুশান এসে দাঁড়ালো সবার সামনে।কিন্তু তোড়া ছিলো না।কারণ তোড়া তো এক এক করে ইরা,মিরা,লিরার কাছে থেকে বিদায় নিতে গিয়েছে।

কুশান গোলাপ সাহেব আর চামেলি বেগমের কাছে গিয়ে বললো,
আম্মু আবার আসিয়েন,আব্বু যখন মনে হবে মেয়ের কথা তখনই আসবেন।
গোলাপ সাহেব কুশানের কথা শুনে বললো ঠিক আছে বাবা।সেটা আর বলতে হবে না।তুমিও যেও বাবা।গিয়ে তোড়াকে নিয়ে আসিও।

কুশান মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো।
এবার কুশান হেনা বেগমের হাত ধরে বললো,দাদী মাঝেমধ্যে একটু নাতনির বাড়িতে বেড়াতে আসলেই তো নাতনীর মন ভালো থাকে।
–আসবো আসবো।অবশ্যই আসবো।এই বলে হেনা বেগম সবাইকে বললো,তোমরা সবাই সামনে এগোয়।আমি একটু আমার নাতি জামাই এর সাথে একাকি কিছু কথা বলবো।
হেনার কথা শুনে সবাই বাসা থেকে বের হলো।

সবাই চলে গেলে হেনা কুশানকে ফিসফিস করে বললো,তাড়াতাড়ি বাচ্চা কাচ্চা নেওয়ার ব্যবস্থা কর ভাই।কয় দিন বাঁচি কে জানে?তোদের বাচ্চা কাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করার ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে আমার।
কুশান দাদীর মুখে বাচ্চাকাচ্চার কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিলো।
দাদী তখন বললো ওভাবে হাসলে তো হবে না।যা বললাম অবশ্যই মাথায় রাখবি।আর তুই কি এখনো ছোটো আছিস?এতো লজ্জা পাস কেনো?

হঠাৎ তোড়া আসলো সেখানে।দাদীকে একা দেখে বললো, দাদী আম্মুরা কই?
–ওরা চলে গেছে বাহিরে।আমি একটু কুশানের সাথে কথা বলছিলাম।এই বলে দাদী কুশানের কানে কানে বললো, যা বললাম মনে যেনো থাকে।এই বলে দাদী চলে গেলো।আর তোড়াকে বলে গেলো তাড়াতাড়ি আসিস তুই।আমরা কিন্তু বেশিক্ষন দেরি করতে পারবো না।
দাদী চলে যাওয়ার সাথে সাথে কুশান তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, সাবধানে যেও।আর বাসায় পৌঁছে আমাকে কল করিও।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২০

তোড়া সেই কথা শুনে বললো,হ্যাঁ করবো।তুমিও নিজের যত্ন নিও।আর আমাকে নিয়ে অযথা টেনশন করার দরকার নেই।এই বলে তোড়া বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে।
কুশানও তোড়ার পিছু পিছু চলে গেলো।আর ওদের গাড়ি যতক্ষন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিলো ততোক্ষণ পর্যন্ত সে তাকিয়ে রইলো।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২২