আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৮

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৮
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

রাত প্রায় ১ টা বাজে।বাসার কারো চোখে কোনো ঘুম নেই।সবাই আজ জেগে আছে।টেনশনে কেউ ঘুমাতে পারছে না।এইভাবে পরিবার টা চোখের সামনে এভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে কেউ এটা মেনে নিতে পারছে না।কামিনী কি বুঝে যে এরকম পাগলামি শুরু করেছে সত্যি কারো মাথাতেই ঢুকছে না।যে কামিনী কুশান কুশান করে পাগল সেই কামিনী নিজেই কুশানকে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছে?তোড়া আর কুশানকে আলাদা করে সংসার করতে বলছে।

তোড়া বিছানায় শুয়ে আছে।আর অঝোর ধারায় তার বেডে শুয়ে থেকেই কাঁদছে।কারণ বাসায় কোনো প্রবলেম হলেই সবাই শুধু তাকেই বকাঝকা করে।সবকিছু নাকি তারই কারণে হচ্ছে।কিন্তু সে এখনো বুঝতে পারছে না তার দোষ টা কোথায়?কুশানের বউ হয়ে এ বাড়িতে আসাটাই কি তাহলে তার দোষ?কিন্তু সে তো নিজের ইচ্ছাতে আসে নি।ওনারা সবাই মিলে পছন্দ করেই তো নিয়ে এসেছে তাকে।তারপরেও কেনো এতো কথা শুনতে হয় তাকে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার তো নিজেরও ভীষণ খারাপ লাগছে।এইভাবে তার ননদ রা রাগ করে বাসা থেকে চলে গেলো,কামিনী তাদের কে আলাদা করে সংসার করতে বলছে।যেটা সে কখনোই চায় নি।

তোড়ার মনে একটুও অহংকারের জন্ম নেয় নি যখন সে শুনেছে সবকিছু কুশানের নামে আছে।বা সে একটুও খুশি হয় নি ইরা মিরা লিরা চলে যাওয়ায়।তোড়ার শুধু একটাই চাওয়া ছিলো সবাই যাতে তার সাথে ভালো ব্যবহার করে।আর সেও সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে একজন আদর্শ বউ হয়ে থাকতে চেয়েছিলো।কিন্তু কামিনী কেনো যে এভাবে তাদের আলাদা করে দিচ্ছে সত্যি তার ভীষণ খারাপ লাগছে।

তোড়া এই কথা মনে করে কাঁদছে যখন কামিনী বলেছে,তাড়াতাড়ি কাপড় চোপড় প্যাক করে এ বাড়ি থেকে চলে যাও।আর ভুল করেও এ বাড়িতে আসবে না আর আমাদের সাথে যোগাযোগ ও করবে না।তোড়া কামিনীর এমন উদ্ভট কথা শুনে কুশানকে কল দিয়েছিলো।কিন্তু কুশান রিসিভ করে নি।বাড়িতে এতো কিছু হয়ে গেছে কুশান এখন পর্যন্ত এসবের কিছুই জানে না।

কিন্তু হঠাৎ কিছুক্ষন পরে কুশান বাসায় আসলে কামিনী কুশানের সমস্ত দলিলপত্র ওর মুখের উপর ছুঁড়ে ফেলে দেয়।আর সাফ জানিয়ে দেয় আজকেই যেনো সে তোড়াকে নিয়ে বাসা থেকে চলে যায়।কুশান কামিনীর এমন কথা শুনে তার কাছে অনেক রিকুয়েষ্ট করে যে আম্মু এরকম পাগলামি করো না,আমার সম্পদের উপর বিন্দুমাত্র লোভ নাই,সবকিছু তোমার কাছেই রাখো,তবুও তুমি আমাদের কে আলাদা করে দিও না।

কিন্তু কামিনী কিছুতেই শুনলো না কুশানের কথা।সে বরং তাড়াতাড়ি কুশানকে বের হয়ে যেতে বললো। আর জানিয়ে দিলো সে যতক্ষন পর্যন্ত বাসা থেকে বের হয় নি ততোক্ষণ পর্যন্ত কামিনী রুম থেকে বের হবে না।এমনকি কোনো খাবারও গলা দিয়ে নামাবে না।

কুশান কামিনীর কথা শুনে একদম কেঁদে ফেললো।কি এক সামান্য কথার জন্য তার মা এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।আর সে কি কোনোদিন সম্পত্তির ব্যাপারে কিছু জানতে চেয়েছে তাহলে কেনো কামিনী এরকম আচরণ করছে। আর তার সম্পত্তি তাকে বুঝিয়ে দিতে চাইছে।

কুশান বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে।আর একের পর এক সিগারেট টানছে।এই প্রথম বার সে তোড়ার সামনেই সিগারেট টানতে লাগলো।তোড়া পছন্দ করে না বলে এতো দিন ছাদ থেকে খেয়ে এসে রুমে ঢুকে ব্রাশ করে একটা চকলেট বা পান মুখে দিয়ে তবেই সে তোড়ার সামনে এসে দাঁড়াতো।কিন্তু আজ তার ওসবে কোনো খেয়াল নেই।

সে এখন চিন্তায় আছে তার মাকে নিয়ে।যে মা তাকে এক নজর না দেখলে এক সেকেন্ড থাকতে পারে না সেই মা তাকে আলাদা করে দিতে চাচ্ছে।কিন্তু কুশান এরকম কাজ কখনোই করবে না।যদি তাকে বাসা ছেড়ে যেতেই হয় তাহলে তার মাকে নিয়েই সে যাবে।এটা তার দ্বারা সম্ভব না।মাকে ছেড়ে বউ কে নিয়ে আলাদা সংসার করা কুশানের পক্ষে অসম্ভব একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত নিলেও রাগ কমে গেলে কামিনী আফসোস করতে লাগলো। রাগের বশে সে এসব কি করলো?নিজেই নিজের পায়ে এভাবে কুঁড়াল মারতে পারলো?কিন্তু এখন আর আফসোস করে কোনো লাভ নাই।কারণ ইতোমধ্যে সবাই সত্য টা জেনে গেছে।যে সম্পত্তির জন্য সে সারাজীবন কুশানকে এভাবে আগলে রাখলো আজ সেই সম্পত্তি তার হাত থেকে এভাবে বের হয়ে যাচ্ছে?না এটা হতে পারে না।কামিনী কিছুতেই বুঝতে পারছে না এখন তার কি করা উচিত?

হঠাৎ সে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো।সে কেনো এতো ভয় পাচ্ছে?কুশান কি অন্য মানুষের সন্তান নাকি?কুশান তো তারই সন্তান।ছেলের সম্পদ মানেই তো সেটা মায়েরও সম্পদ।তাহলে?
এইভাবে কামিনী নিজেই নিজেকে শান্ত্বনা দিতে লাগলো।সে আর রাগ দেখালো না কারো উপর।একা একাই শান্ত হয়ে গেলো।

কিন্তু ইরা,মিরা,লিরা তো তাদের স্বামীদের নিয়ে বাসা থেকে চলেও গেছে।কামিনী কিভাবে এতো বড় একটা অন্যায় করলো তার নিজের মেয়েদের উপর?যে করেই হোক, মেয়েদের কে বুঝিয়ে আবার আনতে হবে।আর কুশান তোড়ার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।আর ওদের সাথে কিছুতেই খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।মেয়েদেরকেও বারণ করে দিতে হবে,ওরাও যাতে তোড়ার সাথে ভালো ব্যবহার করে।

অহংকারী কামিনী হঠাৎ করেই একদম ভালো মানুষ হয়ে গেলো।
সে হঠাৎ জারিফ কে বললো,
জারিফ তুমি কি ঘুমাইছো?

–না।
–তাহলে চলো তো একটু কুশানের রুম থেকে ঘুরে আসি।
জারিফ কামিনীর কথা শুনে বললো কয় টা বাজে এখন?এতো রাতে কি জন্য যাবে?
কামিনী তখন বললো ছেলেটাকে তখন কতগুলো কথা শোনালাম,যা মুখে আসলো তাই বললাম।নিশ্চয় ছেলেটা আমার টেনশনে ঘুমাতে পারছে না।

জারিফ চৌধুরী কামিনীর কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,
রাগ তাহলে কমে গেছে?এই রকম অহেতুক রাগ কেনো যে করো তুমি যা কয়েক ঘন্টা না যেতেই শেষ হয়ে যায়।নিজে তো কষ্ট পাও ই,সাথে ফ্যামিলির সবাইকে কষ্ট দাও।

কামিনী তখন বললো, আর অযথা এরকম রাগারাগি, জিদাজিদি কিছুতেই করবো না।ছেলে আর ছেলের বউকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে খাবো দাবো আর এবাদত বন্দেগী করবো।আমার আর কোনো কাজ নাই।এই তোমায় ছুঁয়ে প্রমিজ করলাম।
জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, না,না।আমাকে ছুঁয়ে প্রমিজ করার দরকার নাই।তোমার প্রমিজ করতেও এক সেকেন্ড লাগে না আবার ভাঙতেও এক সেকেন্ড লাগে না।

–তুমি এটা বলতে পারলে জারিফ?আমি কি এতোটাই খারাপ?হ্যাঁ মানছি আমার ব্যবহার টা একটু খারাপ,কথায় কথায় রাগ করি আর মাথা গরম করে ফেলি কিন্তু পরে তো নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাই।
–হ্যাঁ যাও।সেটা তো ঠিকই আছে।কিন্তু এবার তুমি যা করেছো একদম সীমা ছাড়িয়ে গেছো।তুমি এর আগে বলেছিলে আর তোড়ার সাথে খারাপ আচরণ করবে না,ওকে সুন্দর মতো সবকিছু বুঝিয়ে দিলে তারপরেও কি করে আবার সেই আগের রুপে ফিরে আসলে?

–আর আসবো না আগের রুপে।আমার কুশানের জন্য হলেও তোড়াকে আমার নিজের মেয়ের মতো ভাবতেই হবে।আমার কুশান যে আমি ব্যতীত আর অন্য কোনো মেয়েকে এতো বেশি ভালোবাসবে এটা আমি ভাবতেই পারি নি।এজন্যই তো মেয়েটাকে আমার একদম সহ্য হতো না।

জারিফ চৌধুরী তখন কামিনীর হাত ধরে বললো,তোমার এতো বাজে আচরণ সহ্য করেও তোমাকে ছাড়ি নি আমি।তার একটাই কারণ আমার নিজের কোনো ফ্যামিলি নাই।আমার আপন বলতে আমি তোমাদের ফ্যামিলিকেই বুঝি।যার কারণে তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাই না।আমরা তো ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখেই আছি কামিনী?

তারপরেও কেনো আমাদের সংসারে এতো অশান্তি হবে?শেষবারের মতো রিকুয়েষ্ট করছি মন থেকে তোড়াকে একবার ভালোবেসে দেখো,দেখবে তোড়াকে তোমার নিজের মেয়ের থেকেও ভালো মনে হবে।আর কুশানের কথা তো বাদই দিলাম।আমি আগে থেকেই জানি,যতই কুশান সবকিছুর মালিক হোক না কেনো সে কোনোদিনও তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করবে না বা কখনো বলবে না সবকিছু তার।

তুমি যদি এখনি বলো কুশানের সবকিছু তোমার চাই সে সাথে সাথে তোমাকে দিয়ে দিবে।এটা আমি বাবা হিসেবে গ্যারান্টি দিতে পারি।তুমি এতোদিন যে ভয় টা পাচ্ছিলে সেটা তোমার একটা ভুল ধারণা ছিলো।আমার যতটুকু বিশ্বাস তোড়া আর কুশান কখনোই এই সম্পদ নিয়ে ঝামেলা করতো না। দুইজনই তোমাকে যথেষ্ট রেসপেক্ট করে।

হঠাৎ কামিনী তার বেড থেকে নেমে গেলো।
জারিফ তা দেখে চিল্লায়ে বললো এই কামিনী কই যাচ্ছো?
কামিনী কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা কুশানের রুমে চলে গেলো।দরজা খোলা ছিলো বিধায় তাকে আর ডাকতে হলো না কাউকে।

কামিনী কে দেখামাত্র তোড়া বেড থেকে নেমে এলো।আর বললো, আম্মু?আপনি এতো রাতে?
কামিনী তখন রাগ দেখিয়ে বললো তোমরা দেখি এখনো যাও নি?কুশান কই?ওকে বলো সে যেনো আর এক মুহুর্ত না থাকে আমার বাড়িতে।

তোড়া তখন বললো আম্মু এই কথাটা আর বলেন না প্লিজ।আপনার ছেলে কেমন তা আমার থেকে আপনিই ভালো জানেন।ও আপনাকে ছেড়ে এ বাড়ি থেকে চলে যাবে এটা ভাবলেন কি করে?সে কিছুতেই যাবে না।আপনার কথা শুনে সেই থেকে মন খারাপ করে আছে।

কামিনী তখন বললো কোথায় ও।আগে ডাকো ওকে।ওর সাথে আমি একটা ডিল করতে চাই।মাকে যখন এতই ভালোবাসে দেখি আজ কোনটাকে বেছে নেয়।আমার সাথে যদি এই বাড়িতে থাকতে চায় তাহলে ওর সমস্ত কিছু আমার নামে লিখে দিতে হবে।আর যদি মনে করে মায়ের সাথে সে থাকতে চায় না তার প্রোপার্টি নিয়ে সে আলাদা ভাবে থাকতে চায় তাহলে সেটাই হবে।

হঠাৎ কুশান বেলকুনি থেকে এসে কামিনীর সামনে দাঁড়ালো।কাঁদতে কাঁদতে কুশানের চোখ মুখ একদম ফুলে গেছে।সে যে তার মাকে ছাড়া আলাদা হওয়ার কথা ভাবতেই পারে না।
কুশান তার মায়ের সামনে এসে বললো,

কাগজ কোথায়?দাও তোমাকে সবকিছু লিখে দিচ্ছি।তুমি যদি ভেবে থাকো সম্পদ আর টাকা পয়সা দিয়ে এই কুশানকে বিচার করবে তাহলে সেটা কখনোই পারবে না।কারণ আমার এসব সম্পদের প্রতি বিন্দুমাত্র লোভ নাই।নিয়ে নাও সবকিছু।তবুও তুমি আমাকে আলাদা করে দিও না।আর কোথাও যেতে হলে তোমাকে নিয়েই যেতে চাই আমি।

কামিনী কুশানের এরকম কথা শুনে এতো বেশি খুশি হলো যে সে একদম কেঁদে ফেললো।তখন সে কুশানের হাত ধরে বললো,তুই যে আমাকে এতো বেশি ভালোবাসিস তা আমি ভালো করেই জানি।আমিও তোকে না দেখে কিছুতেই থাকতে পারবো না বাবা।তাহলে এক কাজ কর যাকে নিয়ে এতো সমস্যা?যার জন্য এসব অশান্তি তাকে তার বাড়ি পাঠিয়ে দে।
কুশান সেই কথা শুনে বললো মানে?বুঝলাম না তোমার কথা।

তোড়া বুঝতে পারলো কামিনী তার কথাই বলছে।সে তখন বললো, কুশান! তোমার আম্মু আমাকে তোমার সাথে থাকতে দিতে চাইছে না। উনি বোঝাতে চাচ্ছেন তোমার মায়ের সাথে থাকতে হলে তোমায় আমাকে ছেড়ে দিতে হবে।
কামিনী তোড়ার কথা শুনে বললো বুদ্ধিমান মানুষ দের কিছু বুঝিয়ে দিতে হয় না তারা ক বলতেই কলিকাতা বুঝে ফেলে।এখন সিদ্ধান্ত তোর হাতে।কি করবি বল?আমি তোর সম্পদ চাই না।তোর সম্পদ তোরই থাকবে।তবে আমার সাথে আমার বাড়িতে থাকতে হলে তোড়াকে ছেড়ে দিতে হবে।

কুশান কামিনীর কথা শুনে বললো,এটা আবার কেমন চাওয়া আম্মু?মায়ের সাথে থাকতে হলে বউকে ছেড়ে দিতে হবে?বউ কে যদি তোমাদের এতই অপছন্দ তাহলে সেই বিয়েটা করানোর কি প্রয়োজন ছিলো?

কামিনী তখন বললো আমি কি জানতাম নাকি এই বউ এর কারণে আমার ছেলের ভালোবাসা এভাবে ভাগ হয়ে যাবে।দুই দিনেই যেভাবে বউ বউ করছিস এমন একদিন আসবে তুই তো পুরোপুরি ভাবে আমাকে ভুলে যাবি।সেজন্য আমি এই বউকে রাখতে চাচ্ছি না।আমার ছেলে যাতে শুধু আমাকেই ভালোবাসে সেজন্য বউকে তার বাড়ি রেখে আয়।তোকে অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে দেবো আমি।

কুশান তখন বললো আচ্ছা ঠিক আছে মানলাম।তোমার কথামতো তোড়াকে ছেড়ে দিলাম,কিন্তু যাকে দিয়ে পরে বিয়ে দেবে তাকে যে এতো বেশি ভালোবাসবো না তার কি গ্যারান্টি? তাকে যদি এর থেকেও বেশি ভালোবাসি তখন কি হবে?তখন আবার তাকেও ছেড়ে দিতে বলবে?

এদিকে তোড়া কুশানের কথা শুনে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।কুশান তখন তোড়ার পিছু পিছু চলে গিয়ে ওর হাত ধরে বললো, কই যাচ্ছো?
তোড়া সেই কথা শুনে কুশানের হাত ঝাটকা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো আমার হাত ছাড়ো কুশান।

–কেনো?
তোড়া তখন বললো প্লিজ হাত ছাড়ো আমার।আর যেতে দাও আমাকে।
কুশান তখন বললো প্লিজ তোড়া এরকম পাগলামি করো না।এই এতো রাতে কোথায় যাবে?
–যেদিকে মন চায় সেদিকে।

কুশান তখন তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোড়া রাগ করতেছো কেনো এভাবে?আম্মু বললো আর আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম নাকি?আম্মুকে ভালোবাসি এটা ঠিক আছে তাই বলে তার কথামতো তোমাকে ছেড়ে দিবো?ইম্পসিবল?
তোড়া তখন কুশানকে সরিয়ে দিয়ে বললো, তুমি পারবে এটা করতে।আমার বোঝা হয়ে গেছে সব।তোমার মায়ের কথামতো তুমি সব করতে পারো।আমাকে নিয়েই যখন এতো প্রবলেম,তাহলে আমিই সরে যাচ্ছি।

কুশান তখন বললো তোড়া প্লিজ শান্ত হও একটু।
আমার মনের ভিতর দিয়ে কত অশান্তি বয়ে যাচ্ছে
তুমি অন্তত একটু বোঝার চেষ্টা করো।আমি আর নিতে পারছি না এসব যন্ত্রণা।তোমরা সবাই যদি এরকম করো তাহলে আমি এখন কোন দিকে যাবো?

তোড়া তখন বললো তুমি আমার উপর এভাবে রাগ দেখাচ্ছো কেনো কুশান?আমি কি করলাম?আমি কি কখনো বলেছি তোমার মাকে ছেড়ে চলো আমরা আলাদা হয়ে যাই।তোমার মা ই তো অশান্তি করছে।যেখানে তোমার মা বার বার আমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছে সেখানে আমি আর কতই চুপ করে থাকি বলো তো?আমি আর এই কথা টা সহ্য করতে পারছি না।

কুশান তখন তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো তোড়া প্লিজ এবার একটু শান্ত হও।আমি বুঝতে পারছি তোমার কষ্ট টা।কিন্তু বুঝেও কিছু করতে পারছি না।এজন্য আমায় ক্ষমা করে দাও।তোমাকে ছাড়া যে আমি থাকতে পারবো না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।আমি দুজনকেই সমান ভাবে ভালোবাসি।আম্মুকে আম্মুর জায়গায় আর বউকে বউ এর জায়গায়।আমার দুইজনকেই প্রয়োজন।

তাছাড়া আমি মায়ের একমাত্র ছেলে।আরেকটা ছেলে থাকলে তার কাছে রেখে তোমাকে নিয়ে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে পারতাম।কিন্তু আর যে কেউ নেই। সেজন্য এখন কষ্ট সহ্য করেই থাকতে হবে তোমায়।অন্তত আমার দিকে তাকিয়ে।তুমি কি আমাকে ছেড়ে ভালো থাকতে পারবে?জানি পারবে না।

তুমি প্লিজ আর কিছুদিন একটু এসব সহ্য করো একদিন দেখবে আম্মু নিজের ভুল নিজেই বুঝতে পারবে। তিনি যখন বুঝতে পারবেন এতো অত্যাচার করার পরও মেয়েটা মুখ বুঝে আছে তখন তার বিবেকে এমনিতেই নাড়া দিয়ে উঠবে।দুই দিন পর যখন নাতি নাতনির সাথে খেলাখুলা করবে দেখবে সব ভুলে যাবে।প্লিজ ট্রাস্ট মি।

কামিনী দাঁড়িয়ে থেকে কুশান আর তোড়ার কথাবার্তা শুনছিলো।সে তার ছেলের কথা শুনে মনে মনে ভাবলো তার ছেলে ছোটো মানুষ হয়েও কত ধৈর্য্য দিয়েছে তাকে আল্লাহ। একদিকে মাকে সামলাচ্ছে অন্যদিকে তার বউকে।সে নিজে কত কথা শোনায় অন্যদিকে তোড়াও যা নয় তাই বলতে থাকে।কিন্তু কুশান দুইজনকেই বোঝাতে থাকে।

কামিনী তার ছেলেকে নাকি ভালোবাসে?
এটাই কি তার ভালোবাসা?যে ছেলেকে সে শান্তির বদলে দিনরাত মানসিক চাপের মধ্যে রাখছে।তার ছেলে যার সাথে থাকলে খুশি থাকবে তাকে নিয়ে কামিনীর প্রবলেম টা কোথায়?তার তো বরং খুশির হওয়ার কথা।না আর না।এসব ঝামেলা এখানেই স্টপ করা উচিত।

কামিনী হঠাৎ গলা টা খেঁকিয়ে নিলো একটু।তা শুনে কুশান তোড়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো আম্মু?তুমি এখানে?খেয়াল করি নি আমি।
কামিনী তখন বললো শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত নিলি?
কুশান তখন বললো আমি কোনো সিদ্ধান্তই নেই নি।আমি আগেও যেমন ছিলাম এখনো তেমনই আছি।
কামিনী তখন ধমক দিয়ে বললো পরিষ্কার করে বল কুশান।

কুশান তখন বললো আমি দুইজনকেই প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসি আম্মু।মা আর বউকে আমি আলাদা ভাবে দেখি নি কখনো।যদিও মায়ের সাথে বউ এর কখনো তুলনা দেওয়া চলে না।তবুও একটা কথা না বলে পারছি না। তোমার স্থান আমার মাথায়, আর তোড়ার স্থান আমার হৃদয়ে।

তুমি হলে আমার পরম শ্রদ্ধার একজন মানুষ,আর তোড়া বিশ্বাস ও ভালবাসার।
আমার কাছে “মা” ও “স্ত্রী”-র অবদান সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুজনেই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
কামিনী কুশানের কথা শুনে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো থাক আর বলতে হবে না কিছু।তোর বউ ই তোর কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ লোক।আমাকে তো শুধু শুধু শান্ত্বনা দিচ্ছিস।

কুশান কামিনীর কথা শুনে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
না আম্মু,কোনো শান্ত্বনা দিচ্ছি না।আমি সত্যি বলছি।
একজন মা তার সন্তানকে পেটে ধরে, তার জন্ম দিয়ে ভালোবাসা, স্নেহ, সঠিক শিক্ষা ও শাসনে তাকে লালন-পালন করে বড় করে তোলে ও মানুষের মত মানুষ তৈরী করে।

অপরদিকে একজন স্ত্রী তার স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী, তার সুখ-দুঃখের সাথী, এমন ব্যক্তি যে বিবাহিত জীবনের শেষ পর্যন্ত স্বামীর পাশে থাকে, তাকে মনোবল ও অনুপ্রেরণা যোগায়। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে এবং ভালোবাসা ও যত্নে ভরিয়ে রাখে।

সেজন্য মা ও স্ত্রী-র তুলনা চলে না।
মায়ের স্থান কখনই একজন স্ত্রী নিতে পারে না। তেমনি স্ত্রীর স্থান কখনই একজন মা নিতে পারেন না।
“মা” মায়ের জায়গায় বড়, “স্ত্রী” স্ত্রী-য়ের জায়গায় বড়।
হঠাৎ জারিফ চৌধুরীও আসলো সেখানে।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৭

তিনি বললেন কুশান একদম ঠিক কথা বলেছে কামিনী। আর ও সেভাবেই চলছে।
আমার মনে হয় সংসারে শান্তি বজায় রাখতে হলে একজন ছেলের উচিৎ ভারসাম্য রেখে চলা।যা কুশানের মাঝে আমি বরাবরই খেয়াল করেছি।এমন একজন ছেলে জন্ম দিয়ে সত্যি আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৯