আসক্তি পর্ব ২৩

আসক্তি পর্ব ২৩
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“কে করল?কিভাবে?হাউ”-ঘুম থেকে চমকে উঠে পাখি দেখে ওর দুই হাত ভরা মেহেদী।চোক্ষু চড়কগাছ তার।
অবাক হয়ে শানের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে আছে।
“উনি?”হাউ ইজ ইট পসিবল?”-ভাবতে ভাবতেই পাখির চোখ পড়ে খাটের নিচে এলিয়ে দেয়া শানের হাতের উপর।হাতে মেহেদীর কোণ,দুহাতে মেহেদীর ছোপ ছোপ দাগ।রাতে যে মেহেদীর সাথে একপ্রকার যুদ্ধ হয়েছে তা বুঝতে পারে পাখি।

রাতের বেলা শানের ঘুম আসছিলো না।পাখিকে আরো কাছে টেনে বার বার ঘুমানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলো।এভাবে থাকতে থাকতে হঠাৎ ফোন হাতে নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখা শুরু করে।ঈদ বলেই হঠাৎ কতোক গুলো মেহেদীর ডিজাইন সামনে আসে।একবার পাখির দুইহাত আরেকবার ফোন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

চাওয়াচাওয়ি করে সিদ্ধান্ত নেয় নির্ঘুম রাতটাকে কাজে লাগাবে।যেই ভাবা সেই কাজ।দ্রুত উঠে চশমা টা নিয়ে চোখে দেয়।এরপর বক্স থেকে ৫-৭ টা কোণ বের করে ইউটিউব দেখে দেখে ডিজাইন করা শুরু করে।জীবনে প্রথম মেহেদীর কোণ হাতে নেয়া।কিভাবে ধরে ধরে ডিজাইন করতে হয় তাও জানে না সে।তবুও অনেক বারের চেষ্টার পরে কোণ ধরে এঁকে দেয় বউয়ের হাতে।বেগ পেতে হয়েছে অনেক, কারণ হাতে শিড়শিড়ে অনুভূতি হতেই পাখি বার বার ঘুমের মাঝেই হাত নাড়ায়।মেহেদী দিতে দিতেই ৪ টা বেজে যায়।চোখ যেন এবার খুলে রাখা দায় হয়ে গিয়েছে।কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে নিজেও বুঝতে পারে নি।

পাখি বার বার হাত দুটো ভালো করে পরোখ করে নিজের হাতের ডিজাইন গুলোর উপর আলতো আলতো চুমু এঁকে দেয়।মুচকি হেসে শানের কপালের চুল সরিয়ে সেখানে আলতো ঠোঁট ছুঁয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজে দাঁড়ায়।
শান তখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।নামাজ শেষে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে শানকে ডাকে।ঘুমের মাঝেই ভ্রুকুচকে ওঠে তার।এরপর পাখির একহাত টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে।
চোখ না খুলেই ঘুম জড়ানো গাঢ় কন্ঠে বলে,”কাল তাড়াতাড়ি ঘুমাইছো কেন, হুম?আমার জন্যে একটু অপেক্ষা করতে পারো নি?গাধি”

“ক্লান্ত ছিলাম অনেক, কখন ঘুমিয়েছি জানি না যে!”
পাখির কথা শেষ হতেই শান ওর মাথার পিছনে একহাত রেখে মাথাটাকে এগিয়ে আনে নিজের কাছে।
“উউমমম আপনার মুখে অনেক গন্ধ, যান যান ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ুন আগে”-পাখি ঠেলে দিয়ে বলতে থাকে।
শান ক্ষীণ রাগী চোখে চেয়ে আকষ্মাত পাখির ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের মাঝে চিপে ধরে।
বন্ধ মুখে ফিসফিস করে জানতে চায়,”এবার দেখো কেমন গন্ধ”
পাখি কথা বলার মতো সামর্থ্য খুঁজে পায় না।চোখ বন্ধ করে ফেলে আবেশে।
বেশ খানিকক্ষণ পর শান ওকে ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়

দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে সবেমাত্র।পাখি উঠে বেলকোনিতে চলে যায়।গাছগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে।শান নামাজটা সেড়ে ঘরে এসে দেখে পাখি বেলকোনিতে দাঁড়ানো।পিছনে গিয়ে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাখিকে।ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন শানের দুচোখ।
“হাতের ডিজাইন অনেক সুন্দর হয়েছে।ভালো লেগেছে আমার”-পেটের উপর শানের রাখা দুহাতকে নিজের হাতে মুষ্ঠিবদ্ধ করতে করতে বলে ওঠে পাখি।
শান কোন কথা ছাড়াই ফোঁসফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ছে।
পাখির সারা শরীর শিউরে উঠে। অজানা আবেশ ছেঁয়ে যায় মনের মাঝে।

অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে শান্ত কন্ঠে বলে,”বলছিলাম যে, রান্না ঘরে যাবো।সকালের রান্নাটা কম্পিলিট করে তো আবার আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হতে হবে নাকি?”
শান এবারও চুপ।কোন কথা ছাড়াও পাখির চুলের গোড়ায় গভীর চুম্বনে ভরিয়ে তোলে।
গলার স্বর যেন ভেঙ্গে আসছে পাখির।আমতা আমতা করে বলে,”আপনি যাবেন না ওখান……”
পাখিকে কথা শেষ করতে না দিয়েই চট করে ওকে কোলে তুলে নেয়।মোহনীয় চোখে পাখির চোখে তাকায় শান।যে চাহনীকে এড়িয়ে যাবার কোন ক্ষমতা পাখির নেই।চোখ খিচে বুকের কাছের কলার টা চেপে ধরে।
শান ওকে বিছানায় রাখে পরম যত্নে।
“সকাল সকাল গোসল করতে ইচ্ছে করছে “-ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি রেখে ভ্রু নাচিয়ে বলে শান

সকালের খাবারের পর শানদের পুরো পরিবারের দাওয়াত ছিলো পাখিদের বাড়িতে।সকলেই খুব আগ্রহী;সামিহা ব্যতিত।সে খাচ দিলে নিয়ত করেছে পাখির বাবার বাড়িতে সে যাবে না।তার নাকি কি কাজ আছে।ফয়েজ অনেক বেশি জোড় করার পরেও যাবে না।অগত্যা তাকে রেখেই সকলে গাড়িতে ওঠে।
পাখি খুব যত্ন করে আজ শ্বশুর বাবার দেয়া শাড়িটা সেট করে নিয়েছে নিজের শরীরে।তার ইচ্ছে বাবার বাড়িতে সবাইকে গর্ব করে বলবে, “এটা আমার শ্বশুর মশাই ভালোবেসে আমায় গিফট করেছে”

শাড়ির উপর শানের দেয়া গতকালকের নতুন বোরখাটা পরে নেয় সাথে মুখটা ঢেকে নেয় নিকাবে।
শানের গাড়িতে বসেছে পাখি,টিনা,রনি আর সুমি।ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করে শান।পাখি পাশে বসতেই পাখিকে পিছনের সিট দেখিয়ে দেয়।শানের ব্যবহারে মনটা বেশ খারাপ হয়ে যায় পাখির।
“রনি,তুই সামনে আয়।মেয়ে মানুষ সামনের গাড়ি দেখলে ভয় পাবে”-বলেই ঠোঁট টিপে হাসে শান।
পাখি যে ভিতর ভিতর ফুসছে তা শানের বোধগম্য হতে সময় লাগে না।

শান যেমন গোছালো স্বভাবের তেমনি ভদ্রও।স্মুদ গাড়ি চালাতে বেশ পটু সে।হালকা ভায়োলেটের পাঞ্জাবিটা পরনে,হাত দুটো কনুই অবধি ফোল্ড করা,সাথে কালো হাত ঘড়ি,চোখে চশমা,কপালের সামনে রাখা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। পাখির হঠাৎ চোখ পড়ে সামনে আয়নার দিকে।এক ধ্যানে চেয়ে থাকে সেদিকে।ভালো করে খেয়াল করে দেখে শানও ওর দিকে বার বার তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে।
“ওহহহহ এই ব্যপার তাহলে?আমায় পিছনে বসানোর এই কারণ তবে?”।
শান যে তাকে পিছনে বসিয়েছে বার বার দেখতে, তা বুঝতে পেরে যায় পাখি।
ঠোঁটে হাসি এলিয়ে সুমিকে বলে,”সুমি রে এখানে আমার ভালো লাগছে না।সিট টা চেঞ্জ করবি প্লিজ বোন আমার।”

সুমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে পাখির দিকে।
পাখি আবার বলে,”আমার সিটে আয়,কাল যে তোর মেঝ ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা আসবে সে জন্যে তোকে তো অনেক কাজ করতে হবে তাই না।যাহ,তোর কালকের সব কাজ আমি নিজে হাতে করে দিবো।এবার তো রাজি হ!”
পাখির এমন প্রস্তাবে কাম চুন্নি সুমি রাজি না হয়ে পারে না।দুজনে সিট এক্সচেঞ্জ করে।
এদিকে শান ওসব দেখে বোঝার চেষ্টা করে কি চলছে ওখানে।হঠাৎ গাড়ি ব্রেক কষে রাস্তার পাশে দাঁড় করায়।ততোক্ষনে তারা তিস্তা ব্যারেজ পার হয়েছে।

“সুমি কি হইছে ওখানে”
“ভাইয়ে, ভাবির বলে এডেকোনা বসার সমস্যা হয় সে জইন্যে মোক(আমায়) সরে ওমরা (উনি)বসিল।”-আমতা আমতা করে জবাব দেয় সুমি।
শান পাখির চালাকি বেশ বুঝতে পারে।রাগি চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় পাখির দিকে।
“উফফ,কি যে ভালো লাগছে।এবার বুঝো বাছা কেমন লাগে!”-

মনে মনে বলেই রনির দিকে তাকায়। রনি ফোনে গেইমস খেলছে দেখে চট করে মুখের নিকাব টা নামিয়ে হাহুতাশের স্বরে বলে,”যা গরম পড়ছে বাপ রে বাপ। গরমে গাড়ির ভিতরে কি যেন পোড়ার গন্ধ বের হচ্ছে।একদম রাগের আগুনে পুড়া যাকে বলে।সূর্য আজ রেগে গেছে তাই না রে টিনা”
টিনা নির্লিপ্ত চাহনিতে বলে, “ভাবি গাড়িতে এসি চলছে”
“তো ওও কি হয়েছে,এএসিতে কি গরম লাগতে পারে না?”
শান পিছনে ফিরে তাকায়।পাখি আবার বলতে শুরু করে,”সূর্যের কি রাগ উঠতে পপারে না নাকি?রাগে কি পুড়তে পারে না”
“পোঁছাতে দাও, আমায় খেপানোর মজা বুঝাবো আজ”-শান শান্ত ভঙ্গিতে পাখির দিকে একবার চেয়ে পূনরায় গাড়ি স্টার্ট করে।

১৫-২০ মিনিট পর গাড়ি এসে দাঁড়ায় পাখিদের আঙ্গিনায়।একে একে সবাই গাড়ি থেকে নেমে যায়।পাখির বোরখার কোণা আটকে যায় সিটের সাথে।টানা টানি করছে সে।ইতোমধ্যে সবাই বাড়ির ভিতর ঢুকে পরে।শান অপর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে পাখির পাশে বসে।হকচকিয়ে ওঠে সে।
“দেখুন না খুলছে না বোরখা টা, খুলে দিন না প্লিজ।ছিড়ে যাবে নয়তো!”
“লাইক সিরিয়াসলি,আই ইউ শিওর এখানেই বোরখা খুলে দিবো? ”
“অবশ্য তোমার সমস্যা না থাকলে আমারও থাকবে না।”

“সমস্যা হচ্ছে বলেই তো খুলে চাচ্ছি। ভিতরে যাবো তো।ওয়াশরুমে যাবো”-মিনমিন করে বলে পাখি।
শান পাখির কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,”গাড়ির ভিতর রোমান্সের অভিজ্ঞতা নেই আমার।তুমি যখন বলছো তখন তো আর না করতে পারি না তাই না জানপাখি!আসো বোরখা খুলি”
পাখির গাল লাল হয়ে যায়। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। চোখ গুলো আপনা আপনি গোল হয়ে যায়।
“ছিহহহ, কতো নোংড়া আপনি!আমার বোরখা আটকে গেছে সেটা খুলতে বলছি বদমাইশ লোক।ডার্টি!”-বলেই নাক মুখ কুচকে ফেলে পাখি।

“গাড়িতে আমায় দেখতে দাও নি,পুরো গাড়িতে জ্বালাইছো আমায়।এবার তার প্রতিদান স্বরূপ দেখো কি কি করি আমি।সবে তো মাত্র শুরু।”
গায়ের আড়মোড়া ভেঙ্গে আবার বলে,”আজ সারাটা দিন এমন এমন ডার্টি টক শোনার জন্যে রেডি হও প্রিয়্যু।”
পাখি অবাক হয়ে চেয় থাকে।আর আগত লজ্জা সরমের কথা ভেবে ভয় পেয়ে ওঠে।শান পাখির খুব কাছে এসে এ পাশ থেকে ওপাশে হাত রেখেই সিটটা একটু উঠিয়ে বোরখাটা বের করে দেয়।এরপর পাখিকে একপ্রকার জড়িয়ে ধরেই হেঁটে হেঁটে ভিতরে ঢোকে।

“কি করছেন, ছাড়ুন।সবাই কি ভাববে?”
“সবার ভাবনাও যদি আমি ভাবি, তবে সবাই কি ভাববে বলো!তাই আমি কাজ করব আর তারা ভাববে।”
সবাই ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে হাসিমুখে বসে এটা ওটা গল্প করছে। সবাইকে সালাম জানায় শান। ওদের এভাবে দেখে ঠোঁট চিপে হাসছে উপস্থিত সবাই।লজ্জায় পাখি মাথা নিচু করেছে।
“মা, জামাইকে নিয়ে যা তোর ঘরে।ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো দুজনে। “-বলেই পাখির মা রান্না ঘরের দিকে চলে যায়।

শান যেন এমন একটা সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো।তাই দ্রুত পাখির হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে পাখির রুমে আসে।ফট করে দরজা দিয়ে একহাতে পাখিকে চেপে ধরে।
“আপনি দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছেন।বাহিরে থেকে দেখলে তো মনে হবে ভদ্রর ভদ্র।যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেন না।আর এদিকে তো…..?

আসক্তি পর্ব ২২

“এদিকে কি ? হুমম?স্পিক আউট জানপাখি।আই ওয়ান্না হেয়ার ইউ”
পাখি লজ্জায় কিছু বলতে পারে না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
শান এবার বোরখা টা খুলে দিয়ে নিকাব টা সরিয়ে দেয়।
“কি করছেন এসব ছিহহ?সবে মাত্রই তো আসলাম।কি ভাববে সবাই?”-পাখি তাড়াহুরো করে বলে দেয়।
শান মুচকি হেসে মুখটা পাখির কানের কাছে এনে ঘোরলাগা কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে,”আমি শুধু ভাজা মাছ না আরো অনেক কিছুই খেতে পারি জান”

বলেই পাখির কানের পিঠে আলতো চুমু এঁকে দেয়।পাখি চোখ দুটা বন্ধ করে আবেশেই।
শান এবার ওর থুঁতনিতে ঠোঁট ছোঁয়ায়।তখনো পাখির চোখ বন্ধ।শান সরে হেসে মুচকি হাসে।
“হইছে চোখ খুলো এবার। একটু ছুঁইলেই গলে জল হয়ে যাও।যাও নিচে যাও।বর পাগলির মতো বরের সাথে সাথে না থেকে। নির্লজ্জ মেয়ে একটা “-

শানের কথায় লজ্জায় পাখির গা জ্বলে যাচ্ছে।
পাখি চোখ খুলে হা হয়ে যায়।শান যে এমন কিছু বলবে তা সে ভাবতেও পারে নি।
“তারমানে লোকটা সত্যিই আজ তাকে বার বার লজ্জায় ফেলার পায়তারা করছে।গাড়িতে ঘটা ঘটনার শাস্তি দিচ্ছে!”-মনে মনে ভাবে পাখি।
শানের দিকে চোখ ছোট ছোট করে পূনরায় ভাবে,”আমিও কম যাই না।দেখবেন মজাটা কারে বলে।যতোই ঘুড়ি উড়াও রাতে,লাটাই তো আমার হাতে।”

আসক্তি পর্ব ২৪