আসক্তি পর্ব ২২

আসক্তি পর্ব ২২
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

ঈদের দিন ভোর বেলা,অন্ধকার কাটে নি।হয়ত ফজরের আজান সবেমাত্র শেষ হয়েছে।একটা নতুন জীবনের উপলব্ধি,একটা নতুন সকাল।পাখি উঠেছে শানের আগেই।ধীর পায়ে ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে এসেছে।এরপর নামাজ পড়ে শানকে ডাকতে যাওয়ার আগ মূহূর্তে ঐ বাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ আসছে।কানখারা করে শোনার চেষ্টা করছে পাখি ; পারছে না।

“এই যে শুনছেন, উঠুন না?শুনন না ও বাড়িতে যেন কি হয়েছে?”
“উঠছেন না কেন আপনি, নামাজ পড়বেন না নাকি? “-পাখির হাঁকডাকে শানের ঘুম ভাঙ্গা তো দূর ডাক কানে গেছে কিনা সন্দেহ।
“এই মানুষটা শোনেনা ক্যা রে, উঠে না ক্যান এহনো”-বলতে বলতেই শানের গা ঠেলতে থাকে।এক পর্যায়ে শান ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এই কি হয়েছে,কি হয়েছে?”-শানের কন্ঠে উদ্বিগ্নতা
“ও বাড়িতে কি হয়েছে একটু ফোন দিন না,আর নামাজ পড়বেন নাহ?”
শান ফোন বের করে চোখ ডলতে ডলতে রনিকে ফোন দেয়;রিসিভ হয় না।এবার টিনাকে ফোন দেয়।রিং হচ্ছে তুলছে না।শানের চোখ হঠাৎ পাখির দিকে চলে যায়।পাখি দরজায় দাঁড়িয়ে ও বাড়ির সমস্যা পরখ করবার চেষ্টা করছে।

শাওয়ার নেয়া চুলে তোয়ালে পেছানো। কাঁধের উপর লম্বা শাড়ির আঁচল।শানকে আকৃষ্ট করছে প্রতি ক্ষনে ক্ষনে।ফোন রেখে পাখির কাছে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হতে ফোন আসে।টিনা ফোন করেছে।
“বাড়িতে কি হইছে রে?”
টিনা হাসবে না জবাব দিবে তা বুঝতে পারে না।অট্টোহাসিতে ফেটে পরে জবাব দেয়,”ভাইয়া, ছোট ভাইয়া বেশি ভাব ধরে আমার সাথে বাজি ধরেছে একাই নাকি গরুর ঘরে যাবে আর কোরবানির গরু একাই বের করবে।সকাল সকাল সেটা করতে গিয়েই ফেঁসে গেছে।গরু গুতা দিছে আর ছোট ভাইয়া চিৎপটাং “-বলে আবারও হাসি।

“রেডিকুলাস গাধা গুলা,এতো সকাল সকাল কি শুরু করেছিস?দেখ কোথায় ব্যথা ট্যথা পেলো”-বলে শান ফট করে ফোন কেঁটে দেয়।
পাখি সামনে এসে জানতে চায়, “কি বললো ও?”
শান কিছু না বলেই পাখির দিকে অপলক চেয়ে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নেয়।কপালের উপরের চুল গুলো সরাতে সরাতে বলে,”রনি গাধাকে কোরবানির গরু নাকি গুতা দিছে”

“এমা, বলেন কি! চলেন চলেন ও বাড়ি চলেন!আহারে না জানি কতো ব্যথা পেয়েছে!সকাল সকাল গেলোই বা কেন ওখানে!”-পাখি উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে পা বাড়াতেই শান পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তোয়ালে টা খুলে দেয়।এককম মুখ ডুবিয়ে দেয় পাখির ঘন কালো চুলের ভাঁজে।
“কি হচ্ছে, নামাজ পড়বেন নাহ, ও বাড়ি যাবেন নাহ?”-বলতে বলতেই পাখি নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে।
শানের হঠাৎ খেয়াল হয়, “সত্যিই তো, সকাল হচ্ছে।নামাজ কখন পড়বো”
দ্রুত শাওয়ার নিয়ে নামাজ টা আদায় করে নেয়।

শানের কাছে ভোরের সময় গুলো খুব মিষ্টি হয়।আর যদি তা হয় বাগান বাড়িতে তাহলে আর কথাই নেই।শান খোলা গায়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে উপভোগ করছে সবটা।তখনি পাখি এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।শান ওর হাতদুটো বুকে জড়িয়ে ধরেছে আর একটু পর পর হাতে চুমু খাচ্ছে।
“পাখি!”
“হুমমমমমম”
“হাউ ওয়াজ দ্য লাস্ট নাইট”

পাখি নিঃশব্দে হাসে, লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।উত্তরের কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
হঠাৎ পিঠের উপর কোমল হাতের আঁকিবুঁকিতে ভ্রু কুচকে যায় শানের।পাখি নিঃশব্দে লাভ সাইন এঁকে নিজের জবাব জানিয়ে দেয়।শানের খুশি যেন বাঁধ মানছে না।ঘুরে পাখিকে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়।
“আই লাভ ইউ শান”-শানের বুকে মাথা রেখেই চাপাস্বরে নিজের মনের কথা জানায় পাখি।
শান নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।অবাক হয় পাখির দুই বাহুতে হাত রেখে বলে,”আবার বলো!”
পাখি লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে দুহাতে।

“বলো না প্লিজ!”
“আই লাভ ইউ…..”
কথাটা শেষ হবার সাথে সাথেই শান দুহাতে কোমড় জড়িয়ে পাখির ঠোঁট দুটো দখল করে নেয়।
??
গুটিগুটি পায়ে শান আর পাখি বাড়িতে ঢোকে।ড্রয়িং রুম পার হয়ে শান চোখ বুলায় রান্না ঘরের দিকে।বাড়ির মহিলারা রান্নায় ব্যতিব্যস্ত।সামিহা উপর থেকে ওদের দুজনকে এভাবে আসতে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়।আপনাআপনি চোখ বড় হয়ে যায় তার।
পাখি রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতেই হেচকা টেনে ওকে উপরে নিজের রুমে নিয়ে আসে।দরজা লক করে দেয়।পাখি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।

“সে কি, দরজা দিলেন কেন, আমি রান্না ঘরে যাবো না?সবাই কতো ব্যস্ত আজ?”
শান ডেভিল হাসি হেসে এগিয়ে এসে পাখির একহাত টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে মুখটা এগিয়ে নিতেই পাখি এক হাত ঠেলে আটকে দেয়।হাসতে হাসতে জবাব দেয়,”খবরদার না, এখন না এসব।ঈদের দিনের ব্যপার অনেক কাজ আছে ভাই। “-বলেই মৃদু হেসে শানের দিকে চায়।শানের মুখটা ছোটবাচ্চাদের মতো করে রাখা।পাখি সেদিকে কিছুক্ষন চেয়ে শানের ঠোঁটে আলতো চুমু এঁকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।শান হতভম্ব হয়ে ঠোঁটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে যায়।

পাখি রান্না ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই সবাই মুখ টিপে টিপে হাসছে।শ্বাশুরি মা ও বাদ নেই।
“বউ মা চুলের পানি টা ভালো করে না মুছলে সর্দি লাগবে তো!”-শ্বাশুরি মায়ের কথায় ভীষণ লজ্জা পায় সে।শাড়ির আঁচলে কোনমতে পানিটা মুছে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
পরিবেশ স্বাভাবিক করতে শানের মা বলেন, “ছোট বউ মা আজ রান্না তুমি করবে।পারবে না?”
“জ্বি মা অবশ্যই”
সকাল হতে হতেই ড্রয়িং রুমে সবার আনগোনা শুরু হয়ে যাচ্ছে।একটু পরেই বাড়ির ছেলেরা নামাজের জন্যে চলে যায়।রান্নার কাজে পাখি এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে, এরমাঝে আর একবারও শানের সাথে দেখা হয় নি তার।

নামাজ শেষে বাড়িতে ফিরে গরু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে সবাই।শান শুধু বসে বসে তদারকি করছে।মশলাপাতি সব রেডি করে, কয়েক পদের মিষ্টি তৈরী করে সবে মাত্র পাখি রুমে এসেছে ফ্রেশ হতে।গরুর ওখানে হৈ চৈ শুনে জানালার কাঁচ হালকা সরিয়ে সেদিকে তাকায়।চেয়ারে বসা হ্যান্ডসাম যুবকের দিকে নজর পরে তার। পিছন থেকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে।শান একটু মুখটা সাইড করতেই মুচকি হেসে পাখি বলে,”আমারই জন”
পরনে এ্যাশ কালারের একটা পাঞ্জাবি হাতা দুটা ফোল্ড করা, কালো জিন্স, সিল্কি চুলগুলোকে আবৃত করে রেখেছে সাদা টুপিটা, কপালটা বেশ উন্মুক্ত।চোখে চশমা।হেসে হেসে কথা বলছে সবার সাথে।যেকেউ দেখলে চোখ ফেরাতে পারবে না।পাখি অপলক চেয়ে আছে সেদিকে।

শান কিছু একটা ভেবে পিছু ফিরে উপরে তাকাতেই চোখ পড়ে পাখির দিকে।এক বিন্দু সময় ব্যয় না করে একপ্রকার দৌড়ে বাড়ির ভিতর চলে আসে।পাখি বুঝতে পেরে দ্রুত ঘর ছেড়ে বাহিরে পা রাখতেই শানের বুকের সাথে ধাক্কা লাগে।
“পালাচ্ছো?”
“পালাতে যাবো কেন”-পিছাতে পিছাতে বলে পাখি।
“লুকিয়ে লুকিয়ে আমায় দেখছিলে কেন, এখন দেখো!”
“আইসছে আমার কি হ্যান্ডসাম জামাই রে, তারে আবার লুকিয়ে দেখব হুহহহ”
শান কিছু না বলেই ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে পাখির দিকে।পাখি বিষ্ময় নিয়ে তাকাতেই শান ফট করে ওর ডান গালে ঠোঁট ছুয়ে দেয়।বাম গালে আরেকটা দিতেই টিনা এসে দরজায় দাঁড়ায়,”ভাবি!”
“ভাইয়ায়ায়া!”-বলেই নিজের চোখ ঢেকে ধরে

শান বিরক্ত হয়ে যায় কিন্তু পিছনে ঘোরে না।পাখি লজ্জায় মুখ নিচু করে ফেলে।
“দরজা বন্ধ করবি না!”-বলে টিনা দৌড়াতেই পাখি ডেকে ওঠে।
শানের সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে বাহিরে এসে বলে,”কককিছু বললবে টিনা”
“ভাবি, দরজা তো বন্ধ করবা?ভাইয়া এবার আমার বারোটা বাজাবে”-বলেই ঠোঁট উল্টে ফেলে টিনা।
“কিছু হবে না, বলো না কি বলতে চাইছিলে”
“এদিকে আসো,আমার কয়েকজন বান্ধবী এসছে ঘুরতে।আমার হাতের মেহিদী দেখে তারাও বায়না ধরেছে এমন করে দিবে…..”

পাখি মুচকি হেসে জবাব দেয়, “বুঝেছি।চলো!”
একবার ঘরের ভিতর চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় শান গাল ফুলিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ফোন টিপছে।

মোটামুটি ব্যস্ততার মাঝেই দুপুর টা গড়িয়ে যায়।গোসতের মেরামত হতেই শান তাগাদা দেয় সকল আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পৌঁছানোর জন্যে।এরপর বড় এক পোটলা গোসত নিয়ে গাড়ি করে বেড়িয়ে যায়।রাস্তায় কয়েক পদের মিষ্টিও কিনে নেয়।গন্তব্য লালমনিরহাট ;শ্বশুর বাড়ি।
শানকে দেখে অবক হয় পাখির বাড়ির সবাই।ওদের সকলের দাওয়াত করা হয়েছে ঈদের পরের দিন।আজ হঠাৎ পোটলা হাতে আশা করে নি শানকে।শান গোসতটা সমেত মিষ্টিগুলো এগিয়ে দেয়,”মা এখানে কিছু গোসত আছে।রেখে দিন”

।মনের মতো জামাই পেয়েছে তারা;দায়িত্বশীল বটে।শান জানে শ্বশুর বাড়িতেও কোরবানি হবে তবুও…..
শান সামান্য কিছু নাস্তা করে চলে যায়।যেতে না যেতেই পাখির মা পাখিকে ফোন করে শানের কথা বলে।একরাশ ভালো লাগা গ্রাস করে পাখিকে।
“সত্যিই ভাগ্যবতি আমি; না হলে শানের মতো কাউকে পেতাম!”-ভাবতেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।
ঘন্টা দুয়েক পর শান চলে আসে হাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে।নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়।পাখি নিজের হাতে সবকিছু রান্না করে বিকেল হতে হতেই ডায়নিং এ সবকিছু সাজিয়ে দিতে ব্যস্ত।এমন সময় শান ঘর থেকে ডাক ছাড়ে।

“বউ মা তুমি যাও,বাকিটা আমরাই করে নিচ্ছি”-বলতে বলতেই শ্বাশুরি মা কাজে হাত লাগায়।পাখি কিছু না বলে চুপ চাপ শাড়ির আঁচল হাতে পেচাচ্ছে।
“কি হলো মা যাচ্ছো না কেন? শান ডাকছে তো! “-চাচি মা’ও বেশ তাগাদা দেয় যাওয়ার জন্যে।
পাখি পা টিপে টিপে সিঁড়ি ভেঙ্গে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে সবটা পরখ করার চেষ্টা করে।ঘরে শান নেই।পিছন ফিরে চলে আসতেই দরজার আড়াল থেকে হাতটা টেনে ঘরের ভিতর ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
“আপনি আজ এতো জ্বালাচ্ছেন কেন বলুন তো! সবাই কি ভাববে?”

“এদিকে আসো”-মুচকি হেসে চশমা টা ঠিক করে পাখির হাত ধরে বিছানার দিকে নিয়ে যায় শান।
“মমমানে কি, এসব কি শুরু করলেন?এই সময় এসব?বাড়ি ভর্তি মানুষ আর আপনি….”
“চুপ, একদম চুপ “-পাখির কথার মাঝে ওকে ধমকে ওঠে শান।চুপসে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে।
“বক্স টা খোল।”
“কি আছে ওতে”
“খুলতে বলছি, খোল”
পাখি বক্সটা খুলে অবাক হয়ে যায়।

বক্সের উপরের দিকে আরেকটা ব্যাগে ড্রেসের মতো কিছু।পাখি খুলে বুঝতে পারে এ্যাশ কালারের বোরখা একটা, সাথে একটা সুন্দর জায়নামাজ আর আরেকটা পাথরের তাসবিহ।খুশিতে পাখির চোখ ছলছল করে।বুঝার বাকি নেই শান তার ডায়রিতে এটাও দেখেছে।
“আমার ডায়রি ফেরত দিন।”
“উুহু ওটা এখন আমার”
শান এবার পাখির বাম গালে হাত গুঁজে বলে, “পছন্দ হয়েছে?”
“হ্যাএএএ,ভীষণণ পছন্দ হয়েছে”-টেনে টেনে বলে পাখি।
“নিচে দেখো আরেকটা প্যাকেট আছে”

পাখি দেখলো সত্যিই আরেকটা বক্সের মতো কিছু। খুলে বুঝতে পারে এক ডজন মেহেদী কোণ সেখানে।হেসে ফেলে পাখি।
“সবাইকে মেহেদী দিয়ে দিলা আর তুমি দিলা না কেন?”
পাখি বক্স খুলতে খুলতে বলে,”আমার কালো হাতে মেহেদীর রং তেমন ফোটে না, তাই আমি দেই না”
শান ওর হাতটা চেপে ধরে,”এমন কথা নেক্সট টাইম বলবা না।খবর করে ছাড়ব।”
শান এবার গলার স্বর নামিয়ে বলে,”দাও নি ভালো হয়েছে। আসো আমি লাগাই দিচ্ছি”
“আরে আরে এখন না। এখনও অনেক কাজ বাকি আছে।সন্ধ্যের দিকে দিবো”

শান এবার চোখের ইশারায় আরেকটা প্যাকেট দেখায়।কিছুটা হলুদ খাম জাতীয়।পাখি ভ্রুকুচকে শানের দিকে চেয়ে প্যাকেটটা খোলে।দশ টা এক হাজার টাকার নোট চকচক করছে।পাখি এবার ভীষণ অবাক হয়ে যায়। কিছুটা তেতে গিয়ে বলে,”এসব কি? আমি বলেছি একবারও আমার টাকা লাগবে?”
“তোমায় বলতে হবে কেন! আমি কি তোমার মতো গাধা!আজব কথাবার্তা বলো,আমার বউকে আমি সেলামি দিবো তাও তোমার থেকে পারমিশন নিয়ে?”
“তা বলি নি।”
“তো”
“আমার দরকার নেই টাকার। আপনার কাছে রেখে দিন”
শান চোখ মুখ শক্ত করে বলে,”তোমার হাত খরচ।আর যদি একান্তই নিতে না চাও তো কাউকে দান করে দিও”

বলেই শান উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে আসার জন্যে পা বাড়ায়।
পাখি বসা থেকে উঠে শানকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।কিছুক্ষন চুপচাপ থাকে।শানের পিঠ ভেজা ভেজা লাগতেই পাখিকে সামনে এনে দাঁড় করায়।
হন্তদন্ত হয়ে বলে,”কাঁদছো কেন জানপাখি, কি হয়েছে? আমার কথায় হার্ট হলে?আরে আমি তো এমনিই বলেছি”

পাখি এবার শব্দ করে কেঁদে শানের বুকে মুখ লুকায়।কান্নাজড়িত করুন কন্ঠে বলে,”সার্জন সাহেব আজকের পূর্বে কখনোই নিজেকে এতো বেশি বিশেষ কেউ মনে হয় নি। আমি আপনাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।”

শান পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,”আমিও আমার পাখিকে অনেক বেশি ভালোবাসি। এরপর থেকে তোমার প্রত্যেকটা দিনই বিশেষ করে দেয়ার দায়িত্ব আমার”
পাখি শক্ত করে শানকে জড়িয়ে ধরে।
খাওয়া দাওয়া সেড়ে শান বেড়িয়ে যায় বন্ধুদের সাথে।সন্ধ্যার দিকে ক্লান্ত শরীরে সবে মাত্র বিছানায় গা এলিয়েছে পাখি।তখনি শ্বাশুরি মায়ের ডাকে তড়িৎ গতিতে উঠে নিচে নেমে আসে।রুমে গিয়ে দেখে আহমেদ সাহেব আর শর্মিলা বেগম কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছেন।পাখিকে দেখে তারা নড়েচড়ে বসে ভিতরে বসতে বলেন।এরপর শর্মিলা বেগম কাবার্ড থেকে নেভি ব্লু রঙ্গের একটা জামদানি শাড়ি পাখির হাতে তুলে দেন।

আসক্তি পর্ব ২১

“বউ মা, এ বাড়িতে তোমার প্রথম ঈদ।তেমন কেনাকাটা এবার করতে পারি নি। তাই তোমার শ্বশুর সকাল বেলা তোমার জন্যে শাড়িটা এনেছেন।পছন্দ হয়েছে মা?”
পাখি পরম যত্নে শাড়িটা হাতে নিয়ে বলে,”খুউউব পছন্দ হয়েছে মা”
চোখের কোণটা জলে চিকচিক করছে পাখির।
“আমার এতো সুখ সইবে তো!”-মনে মনে বলে পাখি।
পাখি ঘর থেকে বের হবার পর আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, “মনে আছে, ফয়েজের মা বড় বউমা কে ঠিক এমনি একটা শাড়ি দিয়েছিলাম সে কি বলেছিলো?বাবা দিস ইজ নট মাই টাইপ।আর এই বউমা!মেয়েটা সাধারনেই খুশি”-বলেই প্রশান্তির হাসি হাসে।

এদিকে সারাদিনের সকল ক্লান্তি এবার ঘুম হয়ে নেমেছে পাখির চোখে।নামাজ টা সেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।চোখ দুটি বুজে আসতেই চোখ পড়ে মেহেদীর বক্সের দিকে।
“উনি তো বলেছিলেন, এসে যেন হাতে মেহেদী লাগানো পান।আমার তো শরীর আর কুলাচ্ছে না।কি করি!”-ভাবতে ভাবতেই শত চেষ্টাতেও নিজেকে সজাগ রাখতে না পেরে এলোমেলো অগোছালো ভাবেই ঘুমিয়ে পরে পাখি।

রাত ১২ টার দিকে ঘরে ঢোকে শান।ঢুকেই চোখ পড়ে বিছানার মাঝে শুয়ে থাকা পাখিকে।সারাদিনের ক্লান্তি যেন মুখে স্পষ্ট পাখির।গভীর ঘুমের ফলে হালকা হালকা নাক ডাকছে মেয়েটার।ধীর পায়ে এগিয়ে কপালে চুমু দেয় শান।এরপর ফ্রেশ হয়ে এসে পাখিকে একদম নিজের বুকে টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে।পাখি ঘুমের মাঝেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আরো ভালো করে ঘুমিয়ে যায়।

আজানের ধ্বনি কানে বাজতেই ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠে বসে পাখি।
“সেই সন্ধ্যের দিকে ঘুমিয়েছি আর এখন উঠলাম!হায় আল্লাহ্!”-বলেই চোখের নজর ঘুরাতে পাখির চোখ কপালে উঠে যায়।
“কিভাবে,কে করলো?হাউ!”

আসক্তি পর্ব ২৩