আসক্তি পর্ব ২১

আসক্তি পর্ব ২১
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“এবার বলো কি হয়েছে?আমার বউটা আজ এতো অস্থির হলো কেন? সবটা বলো আমায়”-শান পাখিকে আশ্বস্ত করে সবটা জানতে চায়।
পাখি একে একে সবকথা শানকে জানায়।শান ঠোঁটে হাসি এলিয়ে বলে,”দেখি ফোন টা দাও।”
পাখি মলিন মুখে ওর ফোনটা শানের হাতে দেয়।শান ডাটা অন করে ফেইসবুকে এক্টিভ হয়ে পুরো নিউজটা নিজেও পড়ে নেয়।এবার শব্দ করে হেসে দেয় শান

“আমি জানতাম আমার বউটা গাধি, কিন্তু সে যে গাধির মহা গাধি তা জানতাম না।”
“হে বোকা পাখি,পুরো নিউজ পড়েছো তুমি?”
পাখি কাঁদো কাঁদো মুখে জবাব দেয়,”না”
“এই দেখো নিউজের একদম নিচে ডেইট টা দেখো।১৯ সালের নিউজ এটা।হ্যা ১৯ সালে একবার এক্সিডেন্টের স্বীকার হয়েছিলাম।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তবে যতোটা ভাবে নিউজে প্রেসেন্ট করেছে ততোটাও না।জানোই তো সাংবাদিকরা কি রকম হয়।”
পাখি বোকা বোকা মুখে চেয়ে আছে শানের দিকে।
শান আবার নিজের মুখের কাটা দাগটা দেখিয়ে বলে,”এই যে কাটা দাগ টা দেখছো মুখে এটা তখনকার”
“তাহলে নিউজটা এখন কেন আবার শেয়ার দিচ্ছে”-পাখি কপোট রাগ দেখিয়ে বলে।
“হয়তো কয়েকটা লাইক, কমেন্ট বা শেয়ারের আশায়।সমস্যা নেই আমি খোঁজ নিচ্ছি”-বলেই শান হেসে ফেলে।

পাখি টলমলে চোখে একবার শানের দিকে তো আরেকবার মেঝের দিকে দেখছে।
“আমি তো ভাবতেও পারি নি আমার বউ এমন কান্ড ঘটিয়ে বসবে”-শান ভ্রু উঁচুিয়ে মুচকি হাসে।
“আচ্ছা ওসব বুঝলাম, আপনার ফোন কেন বন্ধ ছিলো?আর করিডোরে অটির সামনে ওতোগুলা লোক কেন চাপা কান্না করছিলো? আমি তো ওসব দেখে আরো ঘাবড়ে যাই”-পাখি নিজের কান্নাগুলোকে আটকিয়ে শানকে প্রশ্ন করে।

“আরে ইডিওট, ওটিতে ঢোকার আগে আমি সচরাচর ফোন বন্ধ রাখি না।আজ খুবই ক্রিটিকেল সার্জারি ছিলো।আমি জানতাম সময় লাগবে।তাই ফোন বন্ধ রেখে চলে যাই।তাই পুরো ৩ ঘন্টা আমার ফোন সুইচ অফ ছিলো।”-শান স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়।
“আর আজ এমন একজন মানুষের অপারেশন করলাম যিনি আমাদের সকলের ভালোবাসার মানুষ।এই মেডিকেলের একদম পুরাতন ব্রাদার্স। সবাই তাকে অত্যন্ত ভালোবাসি।তাই অটির সামনে ঐরকম অবস্থা দেখেছো।এবার শান্তি?”-পাখির দুগালে হাত রেখে বলে শান।
পাখি দু বার সাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

“যাক তাও ভালো, এই পুরাতন নিউজেই আমার বউয়ের মনের কথা বুঝতে পারলাম আর যদি নিউজটা বর্তমানের হতো তাহলে……”-শান কথা শেষ করতে পারল না।তার আগে শানের চোখ পড়ে পাখির দিকে, যেন এই মূহূর্তে গিলে ফেলবে ওকে।দুবার ঢোক গিলে বলে,”ররনি কোথায় এরে আজ শেষ ককরব আমি।এক ইডিওটের কথা শুনে যাচাই না করেই বিশ্বাস করে নিলো”

পাখি মাথা টা নিচু করে বসে আছে।শান ওর বোরখা, চুল, নিকাব ঠিকঠাক করে বেঁধে রেডি করিয়ে দেয়।পাখি মুগ্ধ চোখে শানকে দেখছে।মানুষটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।যেই ভাবা সেই কাজ, চট করে শানকে জড়িয়ে ধরে পাখি,”আমি আপনার সাথে বাড়ি যাবো”-আদুরে কন্ঠে আবদার রাখে সে।
শানও ওকে জড়িয়ে চোখের উপর ঠোঁট ছুয়ে বলে,”আমার কাজ আছে।কম্পিলিট করে ৯ টার পর পরপরই চলে আসব।তুমি রনির চলে সাথে যাও”
পাখি আরো শক্ত করে চেপে ধরে শানকে। আস্তে আস্তে শান ওর হাতদুটো ছাড়িয়ে রনিকে ফোন দেয়।এরপর রনিসহ পাখি বাড়ি চলে আসে।

আগামিকাল ঈদ;কোরবানি ঈদ।বাড়িতে তারই তোরজোড় চলছে।কাল সকাল থেকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হবে বাড়ির সকলকে। তাই মেহেদীর জন্যে এক্সট্রা সময় পাওয়া সম্ভব নয়।সাত-পাঁচ ভেবে টিনা পাখির রুমে মেহেদীর কোন নিয়ে হাজির হয়।এরপর পাখি কিছুটা জোড় করেই শ্বাশুরি মা,চাচি মা,সুমি সবার হাতে সুন্দর করে এঁকে দিলো।সামিহাও লোভ সামলাতে না পেরে নিজেও বসে পরলো মেহেদী দিতে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয় ।সকল কাজ প্ল্যান মোতাবেক সম্পন্ন করতে টিনাসহ বাড়ির পাশের বাজারে কিছু কেনাকাটা করতে আসে।বড়ো বড়ো দুটো ব্যাগ ভর্তি করে শানদের বাগান বাড়ি পৌঁছায় তারা।বাগান বাড়ির ফটক দরজা থেকে শানদের বাড়ি দেখা যায়।এই বাড়িতে এই প্রথম আসা পাখির।শানদের যে এমন বাড়ি আছে তা টিনাই খোঁজ দিয়েছে।বাড়িটা পুরোটাই গ্রামের আদোলে বানানো।গেইটের ভিতর ঢুকেই পাখির চোখ কপালে উঠে যায়।চারিদিকে হরেক রকমের ফলগাছ, ফুলগাছের সমারহ।

একটা বিশাল ঘর নিয়ে পুরো বাড়িটা।ঘরটার নিচে রয়েছে ছোট একটা পুকুর;উপরে ঘরটা।পুকুরে লাল শাপলা আর পদ্মফুলের ভুবন।একজন বয়স্ক লোক মুচকি হেসে তাদেরকে ঘরের চাবিটা দেয়।
“ভাবি ইনি আমাদের আব্দুল্লাহ চাচা।মেঝ ভাইয়ার এই বাগান বাড়িটা উনিই দেখাশুনা করেন।আর ইনি কে জানো? আমাদের ড্রাইভার রাফি ভাইয়া আছেন না, তার বাবা”-টিনা উনার সমস্ত পরিচয় দেন।
পাখি মুচকি হেসে সালাম জানিয়ে কুশল বিনিময় করেন।

আব্দুল্লাহ চাচাকেও পাখির সমস্ত পরিচয় দেন টিনা।শুনে খুব খুশি হয় তিনি।”শান বাবার বউ?”
কথা বার্তা শেষে আব্দুল্লাহ চাচা গেইটের বাহিরে পা রাখতেই পাখি ডেকে ওঠে,”চাচা ”
“হ্যা বউ মা, কিছু লাগবে”-হন্তদন্ত হয়ে জবাব দেন তিনি।
“বলছিলাম কি চাচা,আমার একটু সাহায্য করতে পারবেন?”
“এভাবে বলছো কেন বউমা, বলে ফেলো আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব”
“৯.৩০ এর দিকে আপনার শান বাবাকে একটু ফোন করে বলবেন বাগান বাড়িতে আসতে। বলবেন শর্টসার্কিট এর প্রবলেম হয়েছে।পারবেন না চাচা?”

আবদুল্লাহ চাচা কিছু একটা ভেবে জবাব দেয়,”কেন পারব না বউ মা অবশ্যই পারব”বলেই তিনি চলে যায়।
এদিকে পাখি আর টিনা ঘরের দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে।সচরাচর এ বাড়িতে কেউ আসে না।শান তার নিজের রিল্যাক্সের জন্যে এটি একদম গ্রাম্যভাবে সাজিয়েছে।মাথার উপর টিনের ছাদ।মাঝে মাঝে সিমেন্ট সীট দেয়া। ফলে সন্ধ্যার ক্ষীণ আলো সীট ভেদ করে ভিতরে ঢুকছে।ঘরটায় সাংসারিক সবকিছুই মোটামুটি রয়েছে।বুঝাই যায় শান এখানে আসলে নিজের রান্না নিজেই করেন।একটা ছোট কাবার্ড আছে সেখানে।কাবার্ডে রাখা শানের কয়েকটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার।

ঝকঝকে তকতকে ঘরের চারিপাশ।আবদুল্লাহ্ চাচা যে দৈনিক বেশ যত্ন নেন তা বুঝার বাকি থাকে না।পাখি মুচকি হেসে ঘরের প্রতিটা কোণা ঘুরে ফিরে দেখছে।চোখ আটকে যায় একটা দৃশ্য দেখে।সুন্দর ছোট একটা বেলকোনি আছে।তবে সেখানে গ্রিল নেই।বুঝা যাচ্ছে কাজ অর্ধেক বাকি আছে।তবে এটা বেশ ভালো লাগলো।পা ঝুলিয়ে বসা যাবে।সামনে তাকালে দেখা যাচ্ছে বিশাল একটা বিল।চোখ সরছে না সেদিক থেকে।এতো মনোরম কিছু তার স্বামীরই ভাবতেই গর্বে মন ভরে যায়।
টিনার ডাকে পাখির হুশ ফেরে।দ্রুত উঠে যায়।

“ভাবি তারাতারি করো, আমায় আবার আম্মু ডাকবে। পরে না জানি বকা খাই”-ঠোঁট উল্টে বলে টিনা।
“সত্যিই তো!”-ভেবে দ্রুত ব্যাগ গুলো খুলে ফুল গুলো বের করে।দুই ঘন্টা সময় নিয়ে পুরো ঘরটা সাজায় ওরা দুজনে।
“তুমি একা বাড়ি যেতে পারবা তো?”-পাখি দূঃচিন্তা নিয়ে জানতে চায়।
টিনা শব্দ করে হেসে বলে, “ভাবি ঐ যে আমাদের বাড়ি।জাস্ট ১ মিনিটের পথ।”
পাখির মুখে তবুও চিন্তার ভাব।
“ওকে ভাবি আমি গেলাম।সেদিন হেল্প চেয়েছিলে; দিলাম।আমার কাজ শেষ।এবার আজ রাতের পর আমায় ফুপি বানিয়ে দিও।”

টিনার কথায় পাখি লজ্জায় রঙ্গিন হয়ে যায়।
টিনা আবার বলে,”চিন্তা করো না আমি গিয়ে তোমায় মেসেজ করব।ভয় পেও না।ভাইয়া বাগান বাড়ির কথা শুনলে দ্রুত এখানে চলে আসবে”-বলেই টিনা দৌড়ে চলে যায়।পাখি সেদিকে চেয়েই আছে।টিনা সদর দরজা দিয়ে ভিতরে গিয়ে ঢুকলো।পাখিও দরজাটা হালকা ভিড়িয়ে ঘরের ভিতরে এসে ঘরটায় আরেকবার চোখ বুলিয়ে নেয়।নিজেকে প্রস্তুত করে আগামি সময়ের জন্যে।ভাবতেই লজ্জা লাগছে তার।

এদিকে শান বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই আব্দুল্লাহ্ চাচার ফোন,”শান বাবা, বাগান বাড়িতে শর্ট সার্টিকের সমস্যা হয়েছে। একবার এসে দেখবে? “.
“আমি আসছি চাচা “-বলেই দ্রুত আবার বাগান বাড়ি মুখ হয়।

গেইট ভিড়িয়ে ভিতরে ঢুকে দেখে সত্যিই অন্ধকার চারিপাশ।এতোদূর অবধি মেইন বাড়ির আলোও আর আসছে না।ফোনের টর্চ জ্বেলে ধরে শান।ঘরের ভিতর কিসের যেন ক্ষীণ আলো। দরজা ধাক্কা দিতেই দরজার উপরে সাদা কাগজের উপর চোখ পড়ে।খুলে হাতে নিয়ে দেখে অবাক হয় শান,”ফ্রেশ হয়ে ভিতরে আসুন”
লেখাটা না চেনার কোন অবকাশ নেই।কারণ এই হাতের লেখার ডায়রি সে রোজ নিয়ম করে লুকিয়ে পড়ে। মুচকি হেসে সম্পূর্ণ ব্যপার টা বুঝতে পারে শান।

বাহিরের বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে শানের চোখ ছানাবড়া।
ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা ফুলে ফুলে ছেঁয়ে আছে।ফুলের কড়া গন্ধে মাতাল হবার উপক্রম তার।ঘরের মেঝেতে জ্বলছে মোমের ক্ষীণ আলো।পুরো ঘর দেখে চোখ আটকে যায় খাটের মাঝে ফুলের পাপড়ির উপরে বসা রমনীর দিকে।বিমোহিত চোখে চেয়ে আছে সেদিকে।পুরো শরীরে বিয়ের টকটকে মেরুন রঙ্গের লেহেঙ্গা টা জড়ানো।মাথায় পাতলা ঘোমটা ভেদ করে চঞ্চল চোখ দুটোয় নজর আটকে যায় শানের।পিছনে জানালা ভেদ করে চাঁদটা জ্বলজ্বল করছে।তবুও যেন শানের চোখ আজ তার পাখিতেই আটকে আছে।

শানের চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেয় পাখি।মাথা নিচু করে নেয়।স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না সে।
“এমনি সময় তো এতো লজ্জা লাগে না। আজ লাগছে কেন উফফ,ভালো লাগছে না”-ভাবতে ভাবতেই পাখি নিজের লেহেঙ্গা খামচে ধরে।হঠাৎ ওর বিয়ে রাতের কথা মনে পড়ে,”না সেদিনের মতো কিছু হবে না আজ।আজ আমি মানুষটার সব আবদার খুশি খুশি পূরন করব।আজকের দিনটা কে স্মরনীয় করে রাখতেই ঈদের আগের রাত টা বেছে নিয়েছি।”-ভাবনার মাঝেই কাপা কাপা হাতের উপর কারোর শীতল হাতের স্পর্শ লাগে।পাখি চমকে যায় সেদিকে চেয়ে।

শানের ঘোর লাগা চাহনি উপেক্ষা করতে পারছে না আবার সেদিকে চেয়েও থাকতে পারছে না।শানের চোখ আজ কোন বাড়োন মানতে রাজি নয়।উচ্ছৃঙ্খল, চঞ্চল চোখে চেয়েই আছে পাখির দিকে।পাখি হঠাৎ লজ্জা মিশ্রিত হেসে ওঠে।শানের ভাবনার ইতি ঘটে যায়।হাত টা সরিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,”এসব কি পাখি?আমি তো কখনো জোড় করিনি তোমায়?আমি অপেক্ষা করতে রাজি আছি তোমার জন্যে।নিজেকে ভালোভাবে আগে প্রস্তুত করো।তুমি তো এখনো কাপছো আমার স্পর্শে।”

“আমি রেডি’-পাখিও বিছানা ছেড়ে ফট করে দাঁড়িয়ে বলেই নিজের কথায় নিজে জিহ্ব কাটে।লজ্জা লাগছে ভীষণ। কি বললো সে এটা।শান স্তম্ভিত হয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে।পাখি পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বলে ওঠে,”এই জন্যে বুড়ো মানুষের বউ হতে নেই।বয়স তো আর কম হয় নি বুড়ার ঐ জন্যে রোমান্টিজমের র’ও বুঝে না,হুহহহ”
শান ভ্রু কুচকে বলে,”আমি বুড়া?”

“তা নয়ত কি! ডাক্তাররা যে আনস্মার্ট হয় তা জানতাম আনরোমান্টিকও যে হয় তা আজ জানলাম”
“আনরোমান্টিক, না?”-শান ডেভিল হাসি ঠোঁটে রেখে ধীরপায়ে এগিয়ে আসে।
পাখি ঢোক গিলে পিছাতে পিছাতে বলে,”হুহহহহম আনরররোমান্টিকই তোওও”
“আচ্ছাহহ,এবার বুঝাবো রোমান্টিজম কতো প্রকার ও কি কি সঙ্গা সহ উদাহরন দিবো।”-বলেই একহাতে পাখির কোমড় জড়িয়ে ধরে।
পাখি শানের বুকে দুহাত ঠেলে অবাক হয়ে যায়।

“এখন কি হলো, তুমি না রোমান্টিজম দেখবা?ডেমোতেই কাহিল হলে বুঝি?”-ভ্রু উচিয়ে বলে শান।
পাখি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার অভিনয় করে বলে,”আমি একদম ঠিক আছি।কোন কাহিল টাহিল হইনি”
এবার শান ওকে অবাক করে দিয়ে ওর গলায় ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।পাখি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে;পারছে না।পুরো শরীর জমে বরফ হয়ে আসছে ওর।এবার শান গলায় গভীর চুম্বনে পাখিকে জড়িয়ে নেয় নিজের কাছে।অটোমেটিকলি পাখির পুরো শরীর অবশ হয়ে গিয়েছে।শান ওকে ছেড়ে ওর বন্ধ চোখের দিকে চেয়ে আছে।শানের কোন সাড়া না পেয়ে পাখি চোখ খুলে সামনে তাকাতেই লজ্জায় নিজের মুখ লুকায় শানের বুকে।

শান চট ওরে পাখিকে কোলে তুলে নেয়।
“তুমি অনেক মোটা হয়ে গেছো জানপাখি”-ধীরকন্ঠে বলে শান।
…..পাখি নিশ্চুপ

শান ধীরে ধীরে বেলকোনিতে এনে নামায় পাখিকে।পাখি শানের টিশার্টের বুকের বোতাম খামচে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।শান হাত দিয়ে ইশারা করে চাঁদ দেখায়। এতোক্ষনে পাখির হুশ ফেরে।মুগ্ধ চোখে সেদিকে অপলকে চেয়ে আছে।এরপর শান পানির উপর চাঁদের প্রতিফলন দেখায় পাখিকে।পাখির মুখের কথা যেন বিলীন হয়ে গেছে।শান্ত ভাঙ্গিতে পা ঝুলিয়ে বসে পরে নিচে।শানও পাশে বসে পরে।

“তোমার মনের মতো হয়েছে তো?”-শান ঘোর লাগা কন্ঠে জানতে চায়।
পাখি অবাক হয়ে যায়,”আপনি এসব কি করে জানলেন বলুন তো”
“জানলায় উপচে পরা চাঁদের আলো,পানিতে প্রতিচ্ছবি
প্রকৃতির মায়ায় নিজেকে আজ বড্ডো বেশি ভাগ্যবতি ভাবি”-
শানের মুখে নিজের লেখা দুটো পঙক্তি শুনে অবাক চোখে ফিরে তাকায়।

“এসব তো আমার ডায়রি…..”
শান ওকে বলতে না দিয়ে পাখির ঠোঁটের উপর নিজের আঙ্গুল রাখে।
“তোমার কুচকুচে কালো রঙ্গের মোটা ডায়রিটা যে আমার কাছেই”
পাখি অবাক হয়ে যায়,”আপনি ওটা নিয়েছেন?”
“যখন আমায় কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছিলে না তখন তোমার ডায়রিটা আমি নিই।এটা জানতে যে তোমার লাইফে কোন দূর্ঘটনা আছে কিনা ”

আসক্তি পর্ব ২০

চোখ টিপে আবার বলে,”বয়ফ্রেন্ড ছিলো কিনা তা জানতে”
“তা কী জানতে পারলেন?”
নিরাশ মুখে বলে,”সেখানে তোমার সুপ্ত ইচ্ছেগুলো ছাড়া কিছুই খুঁজে পাই নি।”
“আর তারপর সেগুলো পূরনের প্রতিযোগিতায় নাম দিলেন তাই তো!”-পাখি ভালো লাগার আবেশে জানতে চায়।
শান কোন কথার উত্তর না দিয়ে পাখিকে এক হাতে জড়িয়ে চাঁদ দেখছে।আর পাখি অপলকে চেয়ে আছে শানের দিকে।
“আজ চাঁদটাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে;চাঁদ দেখো।আমায় সারাজীবন দেখার সুযোগ পাবা।”-শান স্বাভাবিক থেকেই কথাটা বলে।

পাখি শানের কথার কোন জবাব না দিয়ে শানের গলার উঁচু জায়গাটায় চুমু দেয়।এরপর লজ্জায় মুখটা নিচু করে রাখে।শান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।এরপর চট করে কোলে তুলে নেয় পাখিকে।ঘরে এনে বিছানায় বসিয়ে গায়ের সমস্ত গয়নাগুলো খুলে দেয়।এরপর ঘরের মোমগুলো একে একে সব নিভিয়ে দেয়।
এগিয়ে যায় পাখির দিকে।আবেগের গভীরে পৌঁছে যায়।শানের স্পর্শে বার বার কেপে কেপে উঠছে পাখি।
“তোমার খারাপ লাগছে?”-শান জানতে চায়
পাখি কোন কথা না বলে শক্ত করে শানের গলা জড়িয়ে ধরে…….

আসক্তি পর্ব ২২