আসক্তি পর্ব ২

আসক্তি পর্ব ২
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

কিন্তু কয়েক মূহূর্তের মাঝে অবাকের চরম সীমা পৌঁছে যায় হামিদার মুখের রং, চোখের ভাষা…..
“শোন হামিদা,তুমি আমার ছোট বোন বলে তোমায় একটা ভালো মেয়ে খুঁজতে বলেছিলাম,গুনী।সুন্দরী নয়।আমার সংসারে সুন্দরের অভাব নেই গুনের অভাব রয়েছে ঢেড়।আর সুন্দরী বলতে যদি সাদা চামড়াকে মনে করে থাকো তবে ভুল ভাবছো।ঐ মেয়ের মাঝে এমন কিছু আছে যা তোমার ঐ কালো কুৎসিত মন কখনোই খুঁজে বের করতে পারবে না।”-হামিদার একরোখা কথায় বেশ কর্কশ কন্ঠে জবাব দেন শর্মিলা।
“আপা!এসব কি ভাবে কথা বলছো তুমি!?”

হামিদার কথার কোন জবাব না দিয়ে ক্ষন কিছু কাল বিলম্ব করে আবার শর্মিলা বলেন,”একটা কথা মাথায় রেখো,তোমায় মেয়ে খুঁজতে বলেছিলাম কার সাথে আমার ছেলের বিয়ে দেবো কার সাথে বিয়ে দেবো না তার সিদ্ধান্ত চাই নি।তোমার যদি ইচ্ছে হয় তুমি এ বিয়ের ঘটকালি করবে নচেৎ আরকি, আমার নিজেকেই যা করার করতে হবে”।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফুপিয়ে ন্যাকা কান্না জুড়ে দেন হামিদা।আজ তার বড় বোন এমন ভাবে কথা বললেন!তার অহমিকায় বড্ডো টান পরলো বোনের ব্যবহারে।তৎক্ষণাৎ তার মনে হলো বোনের প্রতিশ্রুতির কথা।
ছেলের বিয়েতে শর্মিলা নিজের গলার ঐ মোটা স্বর্নের চেইন টা দিতে চেয়েছিলো।এই বুঝি তা হাত ছাড়া হয়ে যায়।আগ পিছ না ভেবেই হামিদা জবাব দেয়, “আচ্ছা আচ্ছা আপা তোমার ছেলে, তোমার বউ, তোমার সংসার। তুমি যা ভালো মনে করবে করো।আমি পাখির মা বাবার সাথে কথা বলছি”।

এদিকে বিয়ের সমন্ধ আসার পর থেকে পাখির মাঝে অস্বাভাবিক আচরন ফুটে উঠছে।এর আগেও এমন হতো।যখনি বিয়ের কথা উঠতো তার নাওয়া খাওয়া সব বন্ধ হতো।বার কয়েক তাকে এ ব্যপারে জিজ্ঞেসা করা হলে মনযুক্ত কোন উত্তর খুঁজে পান নি রাশিদা বেগম।সবসময় ছন্নছাড়া ভাব ধরা দিতো পাখির চেহারায়।আর যদি কোন কারণে বিয়ে ভাঙ্গত তখন তার উপচে পরা খুশি চেহারায় চিকচিক করতো।এবারও বিয়ের কথায় মনমরা হয়ে হতাশ দিন কাটাতে লাগে পাখি।বিয়ে যেন তার কাছে একটা শঙ্কা স্বরূপ।

অন্যদিকে মেয়ে অনার্স শেষ করেছে।মাস্টার্সে কারমাইকেলে ভর্তি হয়েছে।করোনার কারণে কোন দিক আগাতে পারছে না। এতো বয়সি মেয়ে অবিবাহিত থাকে গ্রামাঞ্চলে এটা বিরলই বলা চলে। তাই আর দেরি না করে পাখির পরিবার হামিদার সাথে বিয়ের ব্যপারে কথাবার্তা চূড়ান্ত করে।আর শানের মতো পাত্রকে কোন পরিবারই ফিরাতে পারবে না তাই তারা সমন্ধটা হাতছাড়া করতে চায় নি।
পাখির পরিবারের সম্মতি যেন শর্মিলার চোখে মুখে অন্য জগৎের রেশ ফুটিয়ে তুলেছে।দুদিনের মাথায় খুব সহজ সাধারন ভাবেই বিয়ের কাজ টা সেরে ফেলতে চান তিনি।পাখিকে অন্য কোথাও উড়তে দেবেন না তিনি।

মায়ের পছন্দকে বরারবই নিজের পছন্দের উর্ধ্বে রেখে জীবন কাটাচ্ছে শান।তার এই ব্যস্ত জীবনে পরিবারের সিদ্ধন্তকে নিজের সিদ্ধান্ত করে তুলেছে।তার প্রেক্ষিতেই কার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেটাও দেখার সুযোগ তার হয় নি।অবশ্য এর পিছনে আরেকটা কারণও আছে, যাকে বিয়ে করবে তাকে সরাসরিই ফুল শয্যার রাতেই দেখার ফ্যান্টাসি তার মাঝে সুপ্ত ছিলো।শান তার প্রফেশনে এতোটাই সেন্সেটিভ যে বিয়ের দিন সকাল বেলাতেও তাকে অপারেশন থিয়েটারে থাকতে হয়েছিলো।

আনন্দমুখোর পরিবেশে খুবই ঘরোয়াভাবেই বিয়ের কাজটা সম্পন্ন হয়ে গেল।পাখিকে দেখার পর শানের পরিবারের কিছু কিছু সদস্য নাক কুচকালেও মুখে কিছু বলার সাহস করে নি। কারণ শর্মিলা বেগমের উপর কথা বলার সৎ সাহস কারোর নেই ঐ বাড়িতে।আর সবাই জানে তিনি যা করেন তার পিছনে নিশ্চই কোন না কারণ থেকে যায়।

পাখিকে শানের ভাবি সামিহা ও কাজিনরা শানের রুমে বসিয়ে দিয়ে যায়।পুরো অন্ধকার নয় রুম টা।চারিদিকে ছড়িয়ে রাখা রঙবেরঙের মোম জ্বলছে আর ফ্রেশনারের কড়া সুগন্ধ ছেয়েছে সে ঘরে।চারদিকের নিস্তব্ধতা যেন এবার জেঁকে ধরলো পাখিকে।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে আর মোটামুটি ঠোঁট চোখা করে নিঃশ্বাস ছাড়ছে।তার মাথায় কিছু ঢুকছে না।কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার।শুধু একটা কথাই মনে আসছে সে কি করে সম্পর্কের রাশ ধরবে!কি করে মেনে নেবে শানকে!
সে কি আদৌ পারবে কানে কানে বলে যাওয়া সামিহার টিপ্পনী কাটা কথা গুলো রাখতে!তার তো ভাবতেই গা গুলিয়ে যাচ্ছে। পারলে বমি করে সারা ঘর ভাসিয়ে দেয়!

এসব ভাবনার মাঝেই দরজা ভেড়ানোর কর্কশ শব্দে কেঁপে ওঠে পাখি।দুহাতে খামচে নেয় নিজের লেহেঙ্গা সমেত বিছনার সাদা চাদর।আগত মানুষটাকে তার কাছে বিপদ ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না।
“আচ্ছা মানুষটা কি তাকে বুঝবে!যদি না বোঝে!আজই যদি উঠে পরে লাগে স্বামীর অধিকার ফলাতে!কি করে আটকাবে সে!নাকি আজই তার পৃথিবীতে শেষ দিন হতে চলেছে”-
“উহুহহ উহুহহ। এতো ভারি ড্রেস পরে আছো কি করে?গরম লাগছে না?এসিটাও নষ্ট হওয়ার সময় পেলো না!

ঐ যে ঐদিকে ওয়াশ রুম।তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।”
পাখির জবাব না পেয়ে আবার বলতে শুরু করে,
“তুমি আমার ছোট হবা তাই ফর্মালিটি করতে পারছি না।তুমি করেই বলছি।মাইন্ড করো না, পা খি”-একটু মজার ছলেই শেষের কথাগুলো বললো শান
শানের কথায় ভাবনায় বাজ পরলো পাখির।অস্বস্তি লাগছিলো তার সবকিছু। ল্যাগেজ থেকে সুতি শাড়ি টা বের করে গুটি গুটি পায়ে ওয়াশরুমের দিক এগোলো।

এদিকে শানের মনে হাজার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।এখন পর্যন্ত না হলো দেখা, না হলো কন্ঠের স্বর টা শোনা।শুধু শুনেছে গায়ের রং টা অনেক বেশিই চাপা।ভাবছে কেমন হবে মেয়েটা!শানের মনযুক্ত হবে তো! পরোক্ষনেই মনে আসে যেমনই হোক তার মা পাখিকে পছন্দ করেছে তার জন্যে এটাই অনেক।বেলকনিতে দাড়িয়ে ভাবছে আর মুচকি হাসি শানের ঠোঁটে।অজানা একজনের সাথে আজ প্রথম এভাবে রাত কাটাতে হবে।ভাবতেই যেন মুখে রক্তিম আভা জেগে উঠছে।যা শানের সৌন্দর্যকে দ্বিগুন বাড়িয়ে তুলছে।

শানকে সেরা সুদর্শন যুবকদের কাতারে রাখাটা কোন দিক থেকেই ভুল হবে না।সুঠাম দেহের অধিকারী শান।ভেবে চিন্তে আহার গ্রহন করে নিজেকে সাবলীল রাখতে।মোটের উপর ডাক্তার কিনা!নিজেকে তো ফিট রাখতেই হবে।প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন আভিজাত্য আর ফিটনেসের দাম্ভিকতা জানান দিচ্ছে।
ইতোমধ্যে পাখি রুমে এসে যেন এক প্রকার পায়চারি করছে।বিছানায় বসতে পারছে না যদি খপ করে ধরে ফেলে,স্থির থাকতে পারছে না সে।

“What happend! Are you ok?Anything wrong?”
পাখি আঁচল মাথায় রেখেই মাথা দুপাশে হালকা নেড়ে না সূচক অর্থ বোঝায়
“বসো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি” বলেই শান ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।
একটা ঢিলেঢালা টিশার্ট সাথে ব্ল্যাক ট্রাউজার পরে বের হয়ে আসে।
এর মাঝে একটি বারও কেউ কারও মুখ পর্যন্ত দেখে নি
“Hey Pakhi “শান সামনে এসে তুড়ি বাজিয়ে ডাক দেয়।

পাখির সেদিকে কোন হেলদোল নেই।নির্লিপ্ত চাহনীতে চেয়ে আছে মেঝের টাইলসের দিকে।
খেয়াল হতে সিটকে সরে যায় সে।এমন ভাবে সরে যায় যেন সামনে ভয়ানক কিছু দেখেছে সে।
“Relax,Relax.It’s me,Shan.” বলতে বলতেই পাখির ডান হাতটা হাতে নিয়ে বিছানার দিকে নিয়ে আসে শান।
এদিকে পাখির যেন সব যায় যায় অবস্থা।এই বুঝি সব শেষ হয়ে গেলো!দাঁতে দাঁত চেপে ও রাখির কথা গুলো মনে মনে আওরাতে থাকে।

“শোন পাখি,প্রত্যেকটা মানুষের মাঝেই সৃষ্টিগত ভাবে সৃষ্টিকর্তা একটা আকাঙ্খা রেখেছেন।আর শান তোর স্বামী।বিয়ে নামোক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ তোরা আমি তোকে খোলামেলা ভাবে বলতে পারছি না, কিন্তু তুই বুঝতে পারছিস তো আমি কি বুঝাতে চাইছি?সিন ক্রিয়েট করিস না।মাথায় রাখবি তোরা দুজনই ম্যাচিউরড পার্সোন।”-পাখি যে আজ কিছু একটা ঘটাবে তা কেউ না আঁচ করতে পারলেও ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড রাখি বেশ ভালো করেই আঁচ করতে পেরেছিলো।তাই তো ফোন করে পইপই করে সব বুঝিয়েছিলো পাখিকে।”

এদিকে শান ওকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে ঘোমটা খুলতে নিলেই পাখির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। সে আর কিছুতেই রাখির কথা গুলো মাথায় রাখতে পারছে না।শানের হাত ধরাটা কিছুতেই মানতে পারছে না।চোখের সামনে সবকিছু ঘোলাটে লাগছে ওর।এই বুঝি বমি এসে গেলো।চোখের দুই কোন বেয়ে অঝোর ধারায় বর্ষন শুরু হলো ওর।একপ্রকার ফুফিয়েই কেঁদে উঠলো মেয়েটা।এক ঝটকায় শানের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয় পাখি।আর হাতটা আরেক হাতে মুচরাতে থাকে।

“আপনারা সব ছেলেই এক।বিয়ে হয়েছে আপনার কেনা দাসি হয়ে যাই নি আমি, please stay away from me.Give me some time to prepare myself. I’m not ready for this relation.Just go to the hell.'”-গড়গড় করে কি বললো তা পাখি নিজেও বুঝতে পারলো না।মুখ ফসকে কি সব বললো সে।পরোক্ষনেই আন্দাজ করতে পারলো কতো বাজে বাজে কথাই না বললো!

“তোমার কি কোথাও এফেয়ার আছে পাখি?”-ঠান্ডা কন্ঠে প্রশ্ন করে শান
দাঁতে দাঁত চেপে পাখি জবাব দেয়”না”
“Ok Pakhi relax.You are getting me wrong.I just wanted to see you,nothing else.কারণ আমি এখন অবধি তোমায় দেখি নি।I can feel your feeling’s.It’s our arrange marriage.Hmmm. Don’t misunderstand me.আমি কখনোই তোমাকে ফোর্স করব না।So be easy & take rest.”কথাগুলো বলেই শান রুম থেকে বেরিয়ে যায়

আসক্তি পর্ব ১

পাখির ব্যবহার কিছুতেই তার মাথায় ঢুকছে না।আবার যেহেতু বলছে কোন এফেয়ার নেই তারমানে, নেই।তার মায়ের সিদ্ধান্ত কখনো ভুল হতে পারে না।মেয়েটা হয়তো একটু বেশিই টেন্সড আর যেহেতু এ্যারেন্জ ম্যারেজ সেহেতু উচিত তাকে সময় দেয়া।After all এতোদিনের পরিচিত আবাস ছেড়ে নতুন জায়গায় এসেছে মেয়েটা।সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে আর ভেবে চলছে শান।

রাত ৩ টার দিক রুমে ঢোকে শান।চেয়ে দেখে গায়ে মাথায় পুরোদস্তর শাড়ি দিয়ে ঢেকে ঘুমিয়ে পরেছে মেয়েটা।ওর এমন জবুথবু অবস্থা দেখে নিঃশব্দে হাসে শান। খুব ইচ্ছে হলো একটি বার পাখির মুখটা দেখার।এক পা বাড়াতেই তখনকার ঘটনা মনে উঠে পিছিয়ে আসে ।এসে পাশ ফিরেই বিছানার অপর পাশে শুয়ে পরে।

রাতের নিকশ কালো আঁধার ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে।ঘুটঘুটে অন্ধকার নয় আবার রাশি রাশি আলোও নয়।বরাবরই আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় পাখির।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।পিটপিটিয়ে চোখ মেলে অচেনা ঘরের ছাদ চোখে পরতেই ধড়ফড়িয়ে দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে সে।উঠেই নিজের আদ্যোপান্ত দেখে নেয়।
“লোকটা তার সুযোগ নেয় নি তো!”শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতেই বিছানার দিক চোখ ফেলে পাখি।পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে সেদিকে…..

আসক্তি পর্ব ৩