আসক্তি পর্ব ৩

আসক্তি পর্ব ৩
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

গল্প নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়।ডিয়ার রিডার্স #আসক্তি গল্পটার সবে মাত্র দুটো পার্ট আপনারা পড়েছেন।গল্পের আগা-গোড়া সব আমি আগে থেকেই কল্পনা করে রেখেছি সে অনুযায়ী গল্পটা আগাচ্ছি।পাখি কে মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেই মূলত আমি গল্পটা সাজিয়েছি।আপনারা পাখিকে দোষারোপ করছেন অথচ এটা বুঝছেন না একটা মাস্টার্স পড়ুয়া মেয়ের এমন অস্বাভাবিক আচরনের কারণ কী?

একটা ভ্যালিড কারন অবশ্যই আছে।তাই বলব গল্পটার আর কয়েকটা পর্ব পড়ুন তখন নিজেরাই বুঝতে পারবেন পাখির অবস্থান।আমি নতুন, হয়ত আপনাদের সামনে সেভাবে গল্পটা প্রেজেন্ট করতে পারছি না।এর জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।পারলে আমার গল্পটার গঠনমূলক মন্তব্য করে আমায় শিখিয়ে দেবেন?।আর আপনাদের কমেন্ট পড়ে আমি তৃতীয় পর্ব দেয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না।আমার মাইন্ডকে প্লিজ ডাইভার্ট করবেন না।আপনাদের কমেন্টের উপর বেইজ করে গল্পটার মোড় ঘোরালে সেটা একদমই ভালো লাগবে না।তাই বলব আর দু একটা পর্ব পড়ুন গল্পের রহস্য ধীরেধীরেই উন্মোচন হবে।গতানুগতিক লাভ রিলেশন টাইপ রহস্য থাকবে না ;অন্যকিছুই থাকবে।So please keep patience. Don’t be hopeless ??]?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

লোকটা তার সুযোগ নেয় নি তো!”শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতেই বিছানার দিক চোখ ফেলে পাখি।পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে সেদিকে…..
“একজন ছেলে মানুষ এতো সুন্দর হতে পারে!কতো সুন্দর চোখ, কি গোলাপি ঠোঁট,কপালের উপর ছড়িয়ে রাখা সিল্কি চুল, ভ্রুজুগলের উপর বিস্তর কপাল।ডান ভ্রু টার গোড়ার দিকে কালো তিলটা যেন মুখের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে।বাম ভ্রুর ঠিক মাঝখানেই কাটা দাগ স্পষ্ট।ফিনফিনে গড়ন।বাঁশির মতো টনটনে নাক। সদ্য করা ক্লিন শেইভ।ইনিই কি সেই, যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম আমি!”-ঘুমন্ত শানকে অবাক চোখে চেয়ে ভাবছে পাখি

ভাবনার মাঝেই শান পিটপিট করে চোখ খুলে বিছানায় উঠে বসে।শানকে নড়তে দেখে পাখির ভাবনায় ছেঁদ পরে যায়।আচমকাই চোখ সরিয়ে নেয় শানের কাছ থেকে ।

শান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সেদিকে।অজানা, অচেনা একটা মেয়ে তার সামনে স্থির আজ।তারমানে এই সেই রহস্যময়ী। পাখির মুখটা কেমন যেন বড্ডো মায়াবি লাগছে।ঘোরের মাঝে চলে যায় সে।আস্তে আস্তে পাখির এতো কাছে চলে এসেছে টেরও পায় নি ।সামনে দাড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অপলক ভাবে দেখছে পাখিকে।ছোট ছোট দুটো চোখে কালো কুচকুচে দুটো মনি,ভ্রুযুগলের মাঝে চুম্বন এঁকে দেয়ার বিস্তর ফাকা জায়গা,ভাসা ভাসা খয়েরি দুটো ঠোঁট।

ঠোঁটের নিচে থুতনির বাম পাশের তিল টা যেন গভীর ভাবে শানকে আকৃষ্ট করছে।চাপা রংটা যেন তার মায়াবি চেহারাকে আর পাঁচটা ফরসা মেয়ের থেকেও আকৃষ্ট করে তুলছে।শানের দেখা শ্রেষ্ঠ সুন্দরী মনে হচ্ছে পাখিকে।মোহনীয় নজরে চেয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
শানের ভাব ভঙ্গি বুঝতে পেরে কাছুমাছু করে ধীর পায়ে পিছাতে থাকে পাখি।শানের সেদিকে কোনই খেয়াল নেই।সে এগিয়েই আসছে পাখির দিকে।

কয়েক মূহূর্তের মাঝে শান নিজের দুহাতে আঁজলা ভরে তুলে ধরে পাখির মুখটা।অজান্তেই এগিয়ে যায় ঠোঁটের নিচের ঐ তিলটার কাছে….
“কি করছেন এসব! ছাড়ুন আমায়,লিভ মি ইউ চিপ!অসভ্য লোক কোথাকার”-শানের এমন অদ্ভুত আচরনে হকচকিয়ে ওঠে পাখি।শানের হাত দুটো নিজের হাত দিয়ে এক ঝটকায় ফেলে দিয়ে কথা গুলো বলে

এদিকে পাখির কথার ঝনঝন আওয়াজে হতবিহ্বল বনে যায় শান।হুশ ফেরে শানের।কি হতে চলছিলো একটু আগে।নিজের ভুলেই যেন নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে তার
“কাল তো খুব বড় বড় করে বললেন, আপনি ওমন না, সময় দেবেন আমাকে! তাহলে আজ!নোংড়া লোক, অসভ্য লোক নিজেকে এতোটুকুও সংযত রাখতে পারলেন না ”

পাখির কথার দ্বিরুক্তিতে শান কি করবে কি বলবে বুঝে পায় নি। গভীর গলায় “সরি” বলে তাওয়াল নিয়ে দ্রুতই ওয়াশরুমে চলে আসে।শাওয়ার ছেড়ে ভাবতে থাকে কি হচ্ছে তার সাথে এসব!চোখ বুজে নিতেই পাখির মায়াবি মুখ চোখে ভাসছে।এতো মোহনীয় হয় কেউ জানা ছিলো না তো!পাখি না জানি তাকে কতোটা খারাপ ভাবছে যে একটা রাতও সহ্য হলো না! নিজের ব্যবহারে নিজেরই কপালে চাপড়াতে মন চাচ্ছে তার।
সেদিন আর এক বারও শান পাখির মুখোমুখি হতে পারে নি।ইমেরজেন্সি কেইস ছিলো সকালেই তাই ব্রেকফাস্ট না করে ভোর বেলায়ই দ্রুত মেডিকেলে চলে আসে।

পাখি ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে বিছানায় থম মেরে বসে পরে।কাল রাতে এ ঘরে এসেছে আর বের হতে পারে নি। দরজা খুলতেই চোখে পরে দরজার উপরের ডিজাইন টায়।ঘরটাও দেখা হয় নি তার।
ঘুরে ঘুরে ঘরটা দেখছে সে।আসবাবপত্রের অভাব নেই ঘরে।মানুষটা যে বেশ সৌখিন আর পরিষ্কার তা তার ফার্নিচার দেখেই বুঝা যায়।সব যেন ঝা চকচক করছে।ঘরের ডেকোরেশন বেশ ভালো লাগলো পাখির।
দরজা খুলে বাহিরে পা রাখতে না রাখতেই দেখা মিলে সামিহা সহ দুজন মেয়ের।বুঝাই যায় এরা দরজা খোলার অপেক্ষাতেই ছিলো।

“এদিকে আসো, দেখি তোমার চুল খোলতো?”আচমকা হাত টেনে পাশে এনে জিজ্ঞেসা করে সামিহা।
“ভাবি চচুল ককেনও?”সামিহার হঠাৎ আক্রমনে আমতা আমতা করে বলে উঠে পাখি
“ওমা! চুল শুকনো যে!গোসল করো নি?”
“গগোসল কেন করব?”
“ও নতুন ভাবি বলো না গো কেমন কাটলো রাতটা!”

পাশে থাকা মেয়েগুলোর কথা শুনে কি উত্তর দিবে বা সামিহা ভাবির প্রশ্নের কি জবাব দেবে পাখি বুঝতে পারে না।
সামিহা ঘরে উকি মেরে দেখে শান নেই।
“শান কই পাখি?”
“উনি তো একটু আগে বের হয়ে গেলেন”
সামিহার মনের সন্দেহ যেন দ্বিগুন চাড়া দিয়ে উঠলো।যা ভেবেছিলো তাই হলো।হয়ত পাখিকে ওর পছন্দ হয় নি, তাই পাখিরও মাথার চুল এখনো শুকনো আর শানও রুমে নেই।

সামিহা ওর মনের সন্দেহ দূর করতেই শানের কাছে কল দেয়”কি ব্যপার শান তুমি কাউকে না জানিয়ে ওতো ভোরবেলা কোথায় চলে গেলে?সব ঠিকাছে তো?”
“ইমারজেন্সি ছিলো তাই কাউকে বলার সুযোগ হয় নি।
“হ্যা, ওটি রেডি করো আমি আসছি।রাখছি ভাবি ”
বলেই শান কল কেটে দিয়ে ওটিতে ঢুকে পরে।
সামিহা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে

এদিকে সারাদিনে সবার সাথে বেশ ভালোই মানিয়ে নিতে পেরেছে পাখি।পরিবারটার সবাই খুবই ভালো যতোদূর মনে হলো।দিন পেরিয়ে রাত হলো গত কয়েক রাতে বিয়ের দূঃচিন্তায় ঘুম না হওয়ায় এশা নামাজ টা পড়ে বিছানার একপাশেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো পাখি।অন্যদিকে সারাদিন চেম্বার মেডিকেল সব সামলিয়ে রাতের ১২ টার সময় রুমে ঢোকে শান।আজও তাকিয়ে দেখে মেয়েটা জড়সড় হয়ে খাটের এক কোনায় শুয়ে আছে।মুচকি হেসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরে সে।

পরদিন আবারও ইনিয়েবিনিয়ে সামিহা পাখির চুল দেখে;নিরাশ হয় সে।
আজ পাখিদের বাড়ি যাবার দিন ছিলো অথচ গত রাতে লকডাউনের ঘোষনা দেয়ার ফলে তাদের যাওয়া ক্যান্সেল হয়ে যায়।
খাবার টেবিলে সামিহা শুধু শান আর পাখির দিকেই নজর ফেলছে।
“তাদের মাঝে সবটা কি করে এখনো আগের মতো সেটাই বুঝতে পারছি না। কিছু তো একটা কাহিনী অবশ্যই আছে।শান পাখি নাস্তা শেষে আমার রুমে একটু এসো কথা আছে।”
-“I’m already late..
-“আসতে বলেছি”
কিছুক্ষন পর শান সামিহার রুমে আসে
-“বলো, কি বলবে”
শানের পিছে পিছে পাখিও এসে দূরে দাড়িয়ে থাকে
-“ওখানে কি রে, এদিকে এসো বিছানায় বসো”

সামিহা উঠে গিয়ে এক প্রকার জোড় করেই পাখিকে এনে শানের পাশে বসিয়ে দেয়।আর সামিহা সিঙ্গেল সোফাটা টেনে ওদের সামনে বসে।
“তোমাদের দুজনের মাঝে সবটা এতো নরমাল কি করে শান?নতুন বিয়ে হয়েছে আর তুমি সকাল সকাল আগের মতোই চেম্বারে যাচ্ছো মেডিকেলে যাচ্ছো এসব কি?আর পাখিরই বা প্রতিদিন শুকনো চল কেন দেখা লাগবে?তোমরা কি জানো ব্যপার টা কতোটা দৃষ্টিকটু লাগছে?দাদিমা তো বলেই বসলেন তোমাদের দুজনেরই নাকি শারীরিক প্রবলেম? ”

সামিহার কথা শুনে পাখির যেন লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
“ছিঃ সামিহা ভাবি এতো ঠোঁটকাটা? “আর এসব ব্যপার এভাবেও আলোচনা হয় জানা ছিলো না তো”
ভাবতে ভাবতেই পাখির ডান হাতে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পরে। তাকিয়ে দেখে শান।দ্রুতই হাত সরিয়ে এমন ভাবে উঠে দাড়ায় যেন কারেন্ট শক ছিলো।
“see her reaction ?”
সামিহা হা করে চেয়ে থাকে পাখির দিকে। এতোটা শক মেয়েটা কেন পাবে?মানলাম এ্যারেঞ্জ ম্যারেইজ তাই বলে এভাবে!

“কোন সমস্যা নেই । আমার নিজেরই তো বউ।হারিয়ে তো আর যাচ্ছে না।আজ হয় নি কাল হবে, কাল না তো পরশু হবে।একদিন সবটা ঠিক হবে ভাবি।আর যে মেয়ে আমার হাতের স্পর্শেই সিটকে সরে যায় আর যাই হোক তাকে আমি জোড় করতে পারি না।সে কাপুরুষতা আমার নেই।আর আমিও ব্যস্ত সময় পার করছি।”-কিছুটা রাগ -অভিমানের স্বরে কথাগুলো বলেই রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায় শান।
“ওকে ওর ঘুমটা কমাতে বলিও আর ফোনটা জেনারেল মুডে রাখতে বলিও”-দরজায় আচমকা ফিরে এসে চাপা স্বরে কথাগুলো বলে আবার চলে যায় শান।

আসক্তি পর্ব ২

এদিকে সামিহা নিজের সমস্ত অভিজ্ঞতা থেকে পাখিকে এই সম্পর্কটায় স্বাভাবিক হওয়ার জন্যে বুঝাচ্ছে।আর শানের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করার ট্রিকস দিচ্ছে।পাখি লজ্জায় আর অস্বস্তিতে মাথা তুলে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।কেমন যেন যেন গা গুলাচ্ছে ওর।লজ্জার থেকেও অস্বস্তি লাগছে বেশি।এসবের জন্যেই এতোদিন বিয়ে নামোক সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ ছিলো না পাখির
“লোকটা ফোনের কথা বললো কেন? দেখি তো ”

ভাবতে ভাবতেই রুমে চলে আসে পাখি।বরাবরই ফোন অনলাইন থেকে দূরে থাকে সে।কারোর সাথে ফোনে দ্বীর্ঘক্ষন কথা বলতেও তার ঘোর আপত্তি।কারোর সাথে প্রয়োজনীয় কথাও তার বিরক্ত লাগে।তাই ফোনটা সাইলেন্টই থাকে।এ বাড়ি এসছে থেকে একদিনও ফোনটা হাতে নিতে পারে নি।
ফোনে ২০ টা মিসড কল। মোটেও অবাক হয়নি পাখি।মা ফোন করেছে,রাখি ফোন করেছিলো আর একটা আননোন নম্বর।এরকম অনেক কলই মিসড কল হয়ে থাকে ওর ফোনে।মায়ের সাথে কথা বলে ফোনটা রাখতে নিলেই শানের বলা কথাটা মাথায় আসে”ফোন জেনারেল মুডে রাখতে”
পাখি ফোনটা জেনারেল মুডে ফেলে রাখলো..

আসক্তি পর্ব ৪