আসক্তি পর্ব ৪১

আসক্তি পর্ব ৪১
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সকাল সকাল পাখির ঘরে হট্টোগোলের শব্দে বাড়ির সবাই উপরে চলে আসে।
“আপনি এখন এই মূহূর্ত থেকে এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন। আমি আপনাকে জাস্ট সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ চলে যান, প্লিজ”-বলতে বলতে কেঁদে ফেলে পাখি।বোনের অভদ্রতামি এবার চরমে।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে সোহানের। হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাগকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে সে বাহিরে থেকে।

“আই ওয়ান্ট ডিভোর্স!”-কাটকাট গলায় পাখি কথাটা বলে চুপ করে যায়।শান সহ ঘরের বাহিরে উপস্থিত সবাই স্তম্ভের ন্যায় দাঁড়িয়ে যায় পাখির কথায়।শান ভাবতেও পারে নি পাখি এরকম কিছু বলবে।
“একজন খুনির সাথে এক ছাদের নিচে আমি থাকতে পারব না।সেটাও আবার নিজের বাবার খুনি।আমি পারছি না আপনাকে মেনে নিতে”-বলতে বলতেই পাখি দুহাতে মুখ ঢেকে উচ্চস্বরে কেঁদে ফেলে।সোহান আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না।দ্রুতপদে ঘরে ঢুকে পাখির সামনে দাঁড়ায়।সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মুখ তোলে পাখি।রক্তাভ চোখে দাঁড়ানো ভাইকে দেখতে পায়।তৎক্ষণাৎ নিজের গালে পরা থাপ্পোরের প্রতিক্রিয়ায় সিটকে পরে যায় বিছানায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“অনেক বলেছিস তুই, আর না।ছেলেটাকে যা নয় তাই বলছিস।ভেবেছিলাম বাবার শোক কাটাতে পারছিস না তাই আবল তাবল বকছিস, কিন্তু তুই তো অকৃতজ্ঞ শেইমলেস রে।”
শান দ্রুত এসে পাখিকে ধরে।রাগিচোখে তাকিয়ে সোহানকে বলে,”ও যা করছে আমার সাথে করছে ভাইয়া, আপনাদের কারোর সাথে নয়।আমি যদি সহ্য করতে পারি আপনাদের সমস্যা টা কি?”

শানের কথায় সবাই অবাক হয়ে যায়।ভাইয়ের করা কাজে চোখ ফেটে জল গড়ায় পাখির।কান্নাজড়িত কন্ঠেই বলে,”ছাড়ুন আমায়।আপনার জন্যে সব হচ্ছে।আমি থাকবো না আপনার……”
বলতে না বলতেই সোহান তেড়ে আসে আবারও। পাখি ভয়ে চুপসে গিয়ে শানের পিছনে পালায়। শানের পিঠে মুখ ঠেকিয়ে কান্না করে।

“ভাইয়া প্লিজ,কি শুরু করলেন?এই অবস্থায় কি ওকে মেরে ফেলতে চান?”
“তুমি বুঝতে পারছো শান ওর গাধামি ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকছে?আজ ও ডিভোর্সের কথা বলছে!ওকে তো আমি মেরেই ফেলবো”-বলতে বলতে সোহান পূনায় তেড়ে আসতেই শান পাখির দিকে ফিরে বুকে জড়িয়ে নিয়ে সোহানকে বলে,”আর একটা আঁচরও যেন ওর গায়ে না পড়ে ভাইয়া, লাস্ট বারের মতো বলছি”

পাখি সোহানের হাবভাব দেখে ভরকে গিয়ে শানের বুকে মুখ লুকায়।শান ইশারা করতেই সবাই বাহিরে চলে যায়।পাখি তখনো ভয়ে কাঁপছে। সে বুঝতেই পারেনি অনেকক্ষণ হলো সবাই চলে গেছে।শান মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”বাচ্চাটা ভালোভাবে ডেলিভারি হোক আমি নিজেই তোমায় ছেড়ে দিবো।ততোদিন প্লিজ আমায় সহ্য করো”

পাখির এবার কান্না বাঁধ ভেঙ্গে যায় ডুকরে কেঁদে ওঠে শানের বুকে, “কেন এমন করলেন সার্জন সাহেব।আমি তো অনেক ভালোবাসি আপনাকে।আমায় একটুও সত্যি সত্যি ভালোবাসা যেতো না!এভাবে আমার বাবাকে কেন মেরে ফেললেন?আমি না পারছি আপনাকে ছেড়ে থাকতে, না পারছি আপনাকে নিয়ে থাকতে।আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না”

শান পাখির মনের অবস্থা বুঝতে পারে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”যদি কোনদিন বুঝো আমি নির্দোষ, ক্ষমা করতে পারবে তো নিজেকে?”
ততোক্ষনে কান্নার বেগ কমে আসে পাখির। কোন কিছু না বলে হেচকি তুলে কাঁদে শুধু।শান বিছানায় বসিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে বলে, “আমি তোমার সামনে পিছনে আশেপাশে কোত্থাও থাকব না শুধু একটা শিওরিটি দাও”

“কি?”
“আমার বাচ্চাটার কোন ক্ষতি হয় এমন কিছু তুমি করবা না।পাখি বিলিভ মি,যখন বাবা হই নি তখন বুঝতে পারি নি এর ফিলিংস টা ঠিক কতোখানি!কিন্তু এখন বুঝতেছি এটা আসলে আল্লাহ্ তাআলার কতোবড় নেয়ামত।আমায় শিওরিটি দাও নিজের খেয়াল রাখবে!”
পাখি চোখ মুছে বলে,”ওর মা আমি। তাই দূঃচিন্তা আমার বেশি।আর আমি কোন খুনি না যে বাচ্চাটাকে মেরে ফেলব”
শান চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ছাড়ে।আচমকা পাখির পেটে পরপর কতোকগুলো চুমু খেয়ে দ্রুত উঠে চলে যায়।

“আমায় মাফ করবেন, আপনার মেয়েকে নিয়ে কোনমতেই আর সংসার করা সম্ভব না আমার। “-বৈঠক থেকে উঠতে উঠতে বলে ফয়েজ।প্যান্টের পকেটে হাত রাখতে রাখতে আবার বলে, “ওকে নিয়ে যান।ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো আমি!”
ফয়েজের কথায় সামিহার বাড়ির সকল লোকজন হা হয়ে যায়।ফয়েজের বাবা মা সহ সবাই আজ নীরব।
কারণ সামিহার কার্যকলাপে সবাই অতিষ্ঠ আজ।ছোট ছেলের সুখী দাম্পত্য জীবনটা বিষময় করে তুলেছে এই সামিহা নীরা।

সামিহার মা কিছু বলতে যাওয়ার আগে ওর বাবা তাকে থামিয়ে বলে, “মেয়েদুটোকে আহ্লাদ দেয়ার পরিনাম বুঝলে তো!কেউ জেলে কেউ ডিভোর্সি!”
সামিহা শান্ত চাহনীতে চেয়ে আছে ফয়েজের দিকে।কখনো ভাবতেও পারে নি ফয়েজের মতো শান্ত ছেলে আজ এভাব ডিভোর্সের কথা বলবে।ফয়েজ একবারও সেদিকে না তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতে যেতে বলে,”দেনমোহর সবটাই বুঝিয়ে দেব।সারাজীবন আপনার মেয়ে বসে বসে খেতে পারবে”

সামিহার চোখ বেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পরছে।সে ভাবতেও পারি নি তার জিদ তাকে কোথায় এনে ছাড়বে।বোনের জন্যে এবার সত্যি সত্যিই সংসার টা ভেঙ্গে গেলো, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে তার

শান চলে গেছে আজ দুদিন হলো। এই দুদিনে পাখির দিকে তাকানো যাচ্ছে না।বাচ্চার খাতিরে ওর পরিবারের সবাই ওর সাথে কথা বলছে; এর বাহিরে কেউ কোন কথা বলে না ।কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে পাখি।হাঁটুতে মুখে গুঁজে ভাবতে থাকে,”কোন দোটানায় পরে গেলাম আমি।এরকম তো জটিল ছিলো না জীবন টা।আমি জানি আমি অসুন্দর।কিন্তু আপনি তো সুন্দর!তাহলে সুন্দরের ভিতরে এতো গলদ কেন তবে?কেন এতো নোংড়া একটা খেলা খেললেন?”

দিনগুলো কোনভাবে কেটে গেলেও রাতের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় শানের কথা ভেবে।তার সাথে কাটানো প্রতিটা সময়, প্রতিটা মূহূর্ত যেন কাঁটার মতো বিধছে পাখির মন-মগজে।হঠাৎ হঠাৎ কিছু খেতে ইচ্ছে করে আবার ইচ্ছেটা দমে যায়।শান থাকলে হয়ত জোড় করে খাওয়াতো।কিছুতেই নিজেকে শানের ভাবনা থেকে সড়াতে পারছে না।রাগে দূঃখে ঘরের কয়েকটা ফুলদানি ভেঙ্গেও ফেলেছে।কখনো ছাদে গিয়ে আনমনে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কেঁদে চলেছে কখনো বা শাওয়ারের নিচে বসে বসে চোখের জল ফেলছে।শানকে ছাড়া তার একটা মূহূর্তও ভালো কাটছে না অথচ এটা ভেবে বসে আছে শানই তার বাবাকে মেরেছে।

দুইদিনের মাঝে একবারও শান ফোন দেয় নি।কল সেন্টার থেকে কল আসে, বন্ধু বান্ধবী, শ্বশুর-শ্বাশুরি সবার থেকে ফোন আসে তবু শানের থেকে ফোন আসে না।বুক ফেটে কান্না আসে পাখির।
পরদিন সকাল বেলা শর্মিলা বেগম, আহমেদ সাহেব চলে আসেন পাখিকে দেখতে।ভীষণ খুশি তারা।এই প্রথম তারা দাদা-দাদি হতে চলেছে।খুশির বাঁধ যেন মানছেই না।তাই তো পাখিদের বাড়ির সবার জন্যে ফল মিষ্টি অন্যান্য খাবারাদি নিয়ে চলে আসেন তারা।তাদের দেখে খুশিতে আত্মহারা রাশিদা বেগম।বসতে দেন ড্রয়িং রুমে।পাখি নিচের আনাগোনা শুনে ধীর পায়ে নেমে আসে।শর্মিলা বেগম সেদিক চেয়ে দ্রুত হাসিমুখে উঠে গিয়ে পাখিকে ধরে।

পাখি অবাক হয়ে বলে,”মা আমি ঠিক আছি”
“তুমি বললেই হলো, প্রথমের দিকের এই সময় গুলো খুব বিপজ্জনক বউ মা।সাবধানে থাকবে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামার কি দরকার বলো!”-পাখিকে ধরে আনতে আনতে বলে শর্মিলা।
রাশিদা ফোঁড়ন কেটে বলে,”ছাড়ুন বেয়ান। উনি শিক্ষিৎ মানুষ;খুব বুঝদার.।আমাদের কোন কথা কি তিনি শুনবে?”

“এভাবে বলবেন না বেয়ান।হাজার হোক আমার বউ মা সে”-আফসোসের সহিত বলে শানের মা।
রাশিদা হতাশাব্যাঞ্জক মুখে বলে,”আপনার বউ মা আমার কোন কথা শোনে না বেয়ান।সারাদিন কেঁদে কেঁদে সময় কাটায়।ওর বাবা চলে যাবার আজ সাত দিন চলছে।”
দূঃখভারাক্রান্ত গলায় একটু থেমে আবার বলে,”কোন মানুষই অমর না।সবাইকেই যেতে হবে;আজ আর কাল।তাই বলে এভাবে না খেয়ে, না দেয়ে থাকতে হবে!ও যে আরেকজনকে দুনিয়া দেখাতে চলছে তার কথাও তো ভাবতে হবে নাকি!”

মলিন মুখে শর্মিলা বলে,”আমার তো মনে হয় বেয়াই সাহেবের শোকে না, অন্যকোন কষ্টে আছে আমাদের বউ মা।”
পাখি অপরাধীর ন্যায় বসে এদিক সেদিক তাকায়।
শর্মিলা ছেলের বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আবার বলে,”আমি ওখানে নিয়ে যাই বেয়ান।এখানে বীনা মার দেখাশোনা আবার বউমার দেখাশোনা আপনার জন্যে অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে”
“আমি যাবো না মা”

পাখির একরোখা কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন রাশিদা বেগম।ওনাদের নাস্তা দিয়ে খাবারের বন্দবস্তে লেগে পড়েন।
“আর কেউ আসেনি মা?মামানে টিনা, রনি ভাইয়া?”
আহমেদ সাহেব মুচকি হেসে শর্মিলার দিকে তাকান।
পানির গ্লাস টা রাখতে রাখতে বলেন,”না মা আর কেউ আসে নি।যাকে দেখতো চাও তাকে ডেকে নিলেও তো পারো”

শ্বাশুরি মায়ের কথায় পাখি লজ্জাবোধ করে ভীষণভাবে।
“আমার মাথা ব্যথা করছে মা, আমি উপরে যাই?”
শর্মিলা হাত টেনে পাখিকে বসিয়ে বলে,”এইটা সাথে করে নিয়া যাও বউ মা”
“কি ওতে মা?”
“আমরা কি জানি। শুধু বললো এটা তোমার হাতে দিতে।তাই না ফয়েজের বাবা”-
আহমেদ হেসে বলে,”বউ মা উপরে নিয়ে খুলে দেখো।আমরা দেখিনি কি ওর ভিতরে”
প্রশ্নবাচক চোখে পাখি তাকাতেই শর্মিলা ইশরায় উপরে যেতে বলে।

প্যাকেট টা খুলে চোখ জ্বল জ্বল করে পাখির।অনেক গুলো টক ঝাল মিষ্টি আচারের ছোট ছোট বয়াম।দেখে অবাক হয়ে যায় সে।বিভিন্ন রকমের চানাচুর সাথে মিষ্টি কুকিজের প্যাকেট।পাশেই ছোট্ট একটা চিরকুট।
“জানি, এই সময় তোমার মন কি চায়!অল্প করে পাঠিয়েছি।শেষ হলে আবার কারো দ্বারা পাঠাব।লাভ ইউ, নিজের যত্ন নিও সাথে আমার বেবিটারও”
পাখির চোখ ভরে আসে।কাঁদার কোন শক্তিই আর শরীরে নাই।তবুও চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়াচ্ছে।একহাতে জল মুছে চিরকুটটা বুকে নিয়ে কেঁদে কেঁদে অস্ফুট স্বরে বলে,”আমি পারব না আপনাকে ছেড়ে থাকতে।আমি পারছি না। ”

হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে।অনিচ্ছে সত্বেও ফোনটা রিসিভ করে পাখি।রাখি ফোন করেছে।পাখিকে অনেক শান্তনা দিয়ে শেষে কলেজের সংবাদ টা দেয়।
“আমাদের মাস্টার্সের ফর্ম ফিলাপ শুরু হয়ে গেছে,এক্সাম দিবি না?”
পাখি হতাশ স্বরে বলে, “দিবো”
রাখি বুঝতে পারে পাখির কিছু এটা হয়েছে।জিজ্ঞেসা করতে যাবে কি হয়েছে তার মাঝেই ফোনটা খট করে কেটে দেয় পাখি।
পাখির অস্বাভাবিক আচরন রাখির ঠিক মনে হলো না।নম্বর ডায়াল করে শানের

সকাল সকাল পাখি রেডি হচ্ছে রংপুরে আসার জন্যে।সোহানের কি কাজ আছে রংপুরে সে নিয়ে যাবে সাথে।নিকাবের পিন লাগাতে লাগাতে কানে বাজে গাড়ির হর্ণের কর্কশ শব্দ।মুখে বিরক্তিসূচক শব্দ করে পাখি বেলকোনিতে চলে যায়। গিয়ে চক্ষু ছানাবড়া তার।
“উনার গাড়ি এখানে”
তৎক্ষনাৎ ফোনে মেসেজের টুংটুং শব্দে ফোন হাতে নেয় পাখি।

“রাফির দ্বারা গাড়ি পাঠিয়েছি।গাড়িতেই কলেজ যাতায়াত করতে হবে।না না করলে অন্য পথ বেছে নিতে বাধ্য হবো”
শানের মেসেজে পাখি অবাক হয়ে যায়।ভাবতে থাকে,”উনি জানলেন কি করে কলেজ যাবো আজ।রাখির বাচ্চা!”
সোহানকে ডাকতে যায়।সোহান উত্তরে বলে,”গাড়ি আসছে গাড়িতে যা। আমার কাজ নাই আজ আর”
“আমি ও গাড়িতে যাবো না।তুই কি নিয়া যাবি? ”
সোহান একরোখা জবাব দেয়, “না”

পাখি হনহন করে নিচে নেমে আসে।রিক্সার জন্যে দাঁড়ায়।রাফি এগিয়ে এসে বলে,”ম্যাডাম স্যার গাড়িতে যেতে বলেছে”
“ভাইয়া উনাকে বলে দিয়েন আমি একাই যেতে পারব।আর আপনি চলে যান।”
রাফির অনেক জোড়াজুড়িতেও পাখি রাজি হচ্ছিলো না।তাই দুষ্টু বুদ্ধি আঁটে রাফি।
“ম্যাডাম, স্যার বলেছে আপনি গাড়িতে না গেলে আমার চাকরি থাকবে না”-কাঁদো কাঁদো স্বরে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে রাফি।

পাখি সেদিকে চেয়ে আর কিছু বলতে পারে। কেন যেন তারও কান্না পাচ্ছিলো।পরে দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে।
ঘন্টা খানিকের মাথায় গাড়ি কলেজের গেইটে এসে থামে।পাখি নেমে যায় গাড়ি থেকে।
“আপনি চলে যান। আর আসতে হবে না।আমি একাই চলে যেতে পারব”-রাফির জানলার কাছে এসে একটু ঝুঁকে বলে পাখি।এরপর গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়।
ফর্ম ফিলাপ চলছে বলে কলেজে আজ শিক্ষার্থীর আনাগোনা অনেক বেশি।এতোবড় এড়িয়ায় রাখিকে কোথায় খুঁজবে পাখি।তাই ফোন বের করে, রাখির দেয়া ঠিকানায় চলে যায়। কাজ চলছে কলেজের অফিস কক্ষে।গরমে অবস্থা খারাপ সবারই।

রাখি সহ অন্যান্য বান্ধবীরা বসে আছে ঠান্ডা ছায়াময় একটা বেঞ্চে।সেদিকে এগিয়ে গিয়ে কয়েকটা কিল বসায় রাখিকে।
রাখির আর বুঝতে বাকি থাকি না এদের দুজনার মাঝে কিছু হয়েছে।
ওদের কথার মাঝেই একজন এসে পাখিকে ডেকে যায়।রাখিসহ সেদিকে যায়।
“তোমাদের মাঝে পাখি কে? ”
“জ্বি আমি!’
“তোমার কাগজপাতি দাও।তাড়াতাড়ি ফর্ম টা ফিলআপ করো”
পাখি অবাক হয়ে যায়।গরমে অবস্থা বেহাল বলে আর কোন কথা না বলে দ্রুত কাজ সেড়ে নেয়।রাখিও একই সময়ে কাজটা সেড়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে।

“আমার মনে হয় তোর সার্জন সাহেব এতোকিছু করছে।তার কথাতেই মনে হয় আমাদের ফর্ম টা তাড়াতাড়ি ফিলআপ হলো।”-
রাখির কথায় পাখি রাগি চোখে তাকিয়ে থাকে।কারণ পাখিরও বোঝার বাকি নেই কাজ টা কে করেছে।
দুজনে এসে বসে আগের জায়গায়।পাশেই কয়েকটা মেয়ে বসে আছে।
“শুনেছিস, ডাক্তার শান নাকি বউ ডিভোর্স দিয়েছে?”
আরেকজন বলে ওঠে,”যাক ভাই আমার সিরিয়াল তবে ক্লিয়ার!”

“যাই বলিস বড়লোকদের ব্যপার সেপার। তাদের কি আর এক বউয়ে জীবন কাঁটে?”
“তা যা বলেছিস।আরে আমি তো নিজেই দেখেছি বউটা দেখতে কেমন কালো কুৎসিত।মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছে তা দিয়ে কি আর সারা জীবন চলা যায়?”
“কিভাবে দেখলি তুই?”
“আমার বান্ধবী টিনা আছে না, ওর ভাবি।”
“ওহহহহহহ,তাই বল!”
পাখির চোখের পানি বাঁধ মানছে না আর।রাখি স্তব্ধের ন্যায় শুনে যাচ্ছে সবটা।

“এসব কি বলছে ওরা?”
পাখি ছলছলে চোখে তাকায় রাখির দিকে।কিছু বলে না।
“কি রে বলবি তো কি হয়েছে?”
পাখি এরপর কাঁদতে কাঁদতে সমস্ত কথা বলে দেয়।
“সামিহা ভাবি বললো আর তুই বিশ্বাস করলি?”
“ওঠো,উঠে দাঁড়াও”-ওদের কথার মাঝে শানের গলার স্বরে পিছন ফিরে সবাই অবাক হয়।
“তুমি টিনার ঐ বান্ধবী তাই না, মেহেদী দিয়ে নিছিলা পাখির থেকে?
“ভাভাইয়া আসলে!”

“জাস্ট শাট আপ!কতোটুকু জানো আমার লাইফের ব্যপারে?আর এভাবেই বুঝি বান্ধবীর পরিবারে কথা বাহিরে বলে বেড়াতে হয়।লজ্জা করলো না! তোমাদের কি মিনিমাম কমন সেন্সটুকুও নেই।শিক্ষিত হচ্ছো অথচ অন্যের লাইফের ব্যপারে গোসিপ করছো!
মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলে মেয়েটা।কিছু বলতে পারে না।ততোক্ষনে একটা গোল সমাহার তৈরী হয়।
পাখি চোখের পানি মুছে।ব্যাগটা কাঁধে টেনে সামনে হাঁটা ধরে।রাখিও পিছন পিছন ছোটে,”পাখি দাঁড়া না। এভাবে যাস না!”

আসক্তি পর্ব ৪০

পাখি ছুটে যায় অনেকটা দূরে।শান এসে ওর হাত ধরে ফেলে।
“হাত ছাড়ুন আমার ”
শান ছোট ছোট চোখে পাখির দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো ছাড়ুন বলছি!”
“কোন প্রকার সিন ক্রিয়েট করবা না এখানে।চুপচাপ হেঁটে গাড়িতে গিয়ে বসবা”
শানের কথায় পাখি রাগি চোখে তাকিয়ে হাত ঝাড়া মেরে সামনে চলতেই শান ওকে কলেজ মাঠেই সবার সামনে কোলে তুলে নেয়।
“নির্লজ্জ লোক।ছাড়ুন আমায়।কি হচ্ছে, সবাই দেখছে না?”
শান ওকে কোলে নিয়ে চলছে সামনে তাকিয়ে।একটু পরে বলে,”সবাই যে ভুল ধারনার উপর সমালোচনা করছে তা ভেঙ্গে যাক”
“ওহহহ আচ্ছা, শোঅফ তাহলে!”
পাখির কথায় শানের পা থেমে যায়।এক নজরে দেখে আবার দ্রুত হাঁটা ধরে গাড়িতে এনে বসায়।

“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়, মগের মুলুক নাকি?আমি আমার বাড়ি যাবো। সোজা চলুন”
ইউটার্ণে গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে শান বলে, “অনেক হয়েছে তোমার নাটক।আর সহ্য করতে পারব না।এখন থেকে আমার ঘরের চার দেয়ালেই তোমার বসবাস।”
“যাবো না আমি। চিৎকার করব কিন্তু বলে রাখছি!
“করো”

পাখি কান্নাভরা চোখে বলে”এমনটা করছেন কিসের জন্যে?”
“এক কথা বার বার বলতে পারব না। আমার বাচ্চার জন্যে। বাচ্চা ডেলিভারি হবে, আমার বাচ্চা আমায় দেবে।তারপর পৃথিবীর কোন প্রান্তে যাও যাও। আমি বাঁধা দিবো না”
শানের কথায় পাখি হা করে চেয়ে থাকে শানের দিকে।
“কক্ষনো না”
“তাহলে তোমার কোন উপায় নাই।খুনির সাথেই ঘর করতে হবে।”

আসক্তি পর্ব ৪২