আসক্তি পর্ব ৪২

আসক্তি পর্ব ৪২
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“বউ মা! “-অবাক হয়ে সদর দরজা দিয়ে পাখিকে ঢুকতে দেখে বলেন শর্মিলা বেগম।হাসিমুখে সবার সাথে পাখি কুশল বিনিময় করে।এরপর শান তাকে অাস্তেধীরে উপরে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।এতোসবের মাঝে বাড়ির সকলেই কানাকানি শুরু করে দিয়েছে।”হঠাৎ কি এমন হলো যে সবটা এতো তাড়াতাড়ি ঠিক হলো!”
শর্মিলা বেগম ঝাঁঝালো গলায় বলেন, “ভাবনা তো আমার মাথাতেও এসেছে। তবে যাইই হোক বউমা এসেছে।সবটা ঠিক হয়েছে এটাই অনেক”

(কিছুক্ষন আগে)
“আমি থাকব না আপনার সাথে। বাড়ি যাবো আমি ”
কি হলো কথা কানে যায় না?”
শান কোন কথা বলে না।রাগে চোয়াল শক্ত করে গাড়ির স্পিড দ্বিগুন পরিমান বাড়িয়ে দেয়।গাড়ির গতি দেখে পাখির কলিজা শুকিয়ে যায়।ভয়ে ভয়ে বলে,”এতো জোড়ে গাড়ি কেন চালাচ্ছেন।কমান বলছি, স্পিড কমান”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শান কোন কথা না বলেই আবারও স্পিড বাড়িয়ে দেয়।এবার পাখি ভয় পেয়ে যায়।কাপাকাপা হাতে শানের হাত ধরে কিন্তু মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না।
“আমি খুনি তাই তো?এই কয়টা দিনে আমায় মানসিকভাবে যতোটা ভেঙ্গে দিয়েছো তার দাম তোমায় দিতে হবে।তোমার দেয়া বাদনাম নিয়ে বাঁচতে পারব না।আবার তোমায় ছাড়া থাকতেও পারব না। তাই একসাথেই মরব দুজন।ওপসসস সরি, তিনজন।ভালো হবে না বলো?”-গাড়ির স্পিড আরো বেশি বাড়িয়ে বলে চলেছে শান।

“না না না না, আমি মরতে চাই না।আপনাকেও মরতে হবে না।আমি আর কোনদিন খুনি বলব না।প্লিজ গাড়ি থামান।আমার ভয় করছে”
শান তবুও গাড়ি থামায় না।ওভার স্পিডে চালাতে চালাতে বলে,”কথা দাও আর কখনো বলবা না।সবটা আগের মতো চলবে?”

“হুমমম হুমম এই যে ককথা দিলাম।আর বলব না”-শানের হাত ধরে বলে পাখি।
হঠাৎ গাড়ি থেমে যায়।হকচকিয়ে ওঠে পাখি।ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলে।ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে।শান অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে গিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় পাখিকে।ভয়ে গুটিশুটি হয়ে যায় পাখি।কলারে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে।শান মুচকি হেসে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।কেউ কোন কথা বলে না।
পাখির কান্নার বেগ একটু কমে আসলে পানির বোতলটা হাতে ধরিয়ে দেয় শান।এরপর স্লো মোশনে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি পৌঁছে যায়।

ঘরে এসেই পাখি গুটিগুটি পায়ে ওয়াশরমে চলে যায়।ভয়ের রেশ টা এখনো কাটে নি তার।ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসে পরে।শান প্লেটে কিছু ফল আর মিষ্টি নিয়ে আসে।
“এই মূহূর্তে এসব শেষ করবে। একটাও যদি প্লেটে অবশিষ্ট দেখেছি তবে মনে রেখো আমি কি রকম খারাপ হতে পারি”-শানের তেজী গলার স্বরে পাখির অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে।ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে পরে।জোড় করে কয়েকটা ফলের স্লাইস মুখে দিতেই হরহর করে বমি করে দেয় সামনে বসে থাকা শানের গায়ে।
মুখ কুচকে ফেলে শান।

হন্তদন্ত হয়ে পাখি বলে,”আমি বলেছিলাম এসব খাবো না।খাবার দেখলে বমি আসে আমার।আমার কি দোষ,তবুও দিলো”
পাখির মুখ দেখে শানের বড্ডো হাসি পায়।হাসি চেপে রাগি চেহারায় উঠে চলে যায় ওয়শরুমে।

রাত বাজে ১.৩০
শান বুঝতে পারে বুকের উপর পাখি নেই।ভয় ঝেঁকে ধরে।তড়িঘড়ি করে চোখ খুলে দেখে পাখি বিছানায় বসে হাত পা মুচরা মুচরি করছে আর ফুফিয়ে কাঁদছে।শানের বুকের ভিতর কেপে উঠলো।জানতে চাইলো
“কি হয়েছে পাখি?”
পাখি একনজর সেদিকে তাকিয়ে আবার আগেরর মতো কাজ করে।
“বলোনা, কি হয়েছে?”
পাখি কান্নাজড়িত কন্ঠে করূনস্বরে বলে,”হাত পা ব্যথা ব্যথা করছে। ঘুমাতে পারছি না।কিছু ভালো লাগছে না”

শান বুঝতে পারে প্রেগন্যান্সির শুরুতে এরকম হাজারও অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিসের উদয় হয়। তাই দেরি না করে দ্রুত হাত গুলো টিপে টিপে দেয় পাখির।পায়ের কাছে যেতেই সিটকে সরে যায় পাখি।
“না না থাক পায়ে না’
“কেন”-ছোট ছোট চোখে বলে শান।
মুখ ঘুরিয়ে জবাব দেয় পাখি”এমনিই”
শান ওর কথার তোয়াক্কা না করে কোলের উপর পা দুটো নিয়ে আলতো আলতো হাতে ম্যাসাজ করে দেয়।একটু রিলিফ পেতেই ঘুমিয়ে পরে পাখি।কিছুক্ষন পর শানও ঘুমিয়ে পরে।

“এই দুধ টা আর ফল গুলো এখনি শেষ করবে। টাইম মাত্র ১০ মিনিট”-শার্টের হাতার বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে শান।
পাখি চোখ মুখ খিচে রাগি স্বরে বলে,”সকাল সকাল এতো টরচারের মানে কি? পারব না…..”
শানের দিকে চেয়ে গলার স্বর মিইয়ে যায় পাখির।শান রাগি চোখে তাকিয়েই আছে।
মিনমিনে গলায় পাখি আবার বলে,”না মানে, দুধ তো আমার আগে থেকেও অপছন্দ আর ফল খেলে কি হয় তা তো কাল বুঝতেই পারলেন তাই না”

শান আবারও ঘুরে ড্রেসিং টেবিলে নিজেকে সেট করতে করতে বলে,”সবটা ঠিক হয়ে যাবে”
আয়না দিয়েই পাখির পেটের উপর চোখ রাখে শান।মুচকি হেসে ওঠে আনমনেই।রেডি হয়ে পাখির সামনে দাঁড়ায়।পাখি রাগে মুখ সরিয়ে নেয়।জানে এখন শান কি করতে চলেছে!.
পাখিকে অবাক করে দিয়ে বিছনায় বসে পেটের উপর হাত রেখে আনমনে শান ভাবে,”সবটা আমি প্রান ভরে উপভোগ করতে চাই”

এরপর মাথাটা নিচু করে সামান্য ফুলে ওঠা পেটের উপর পর পর কতোগুলো চুমু খেয়ে পাখিকে বলে,”সময় মতো গোসল,সময়মতো খাওয়া সবটাই যেন সময়মতোই হয়।নইলে খবর খারাপ করব তোমার।আসছি আমি”
বেরিয়ে যায় শান। যাওয়ার বেলা টিনাকে বলে যেন সবসময় পাখির সাথে গল্প স্বল্প করে।সুমিকে বলে যেন পাখির কোন কিছু লাগলে সাহায্য করে।

“টিনা, সামিহা ভাবি কোথায়? একবারও চোখে পড়ে নি আজ?”
টিনা থমথমে মুখে জবাব দেয়,”ভাবিকে ভাইয়া বাড়ি পাঠিয়েছে। আর ডিভোর্সের কার্যক্রম চলছে।
পাখি অবাক হয়ে যায়। চমকে উঠে বলে,”ডিভোর্স!কিন্তু কেন?”
টিনা সরুচোখে তাকিয়ে বলে,”তোমার কি মনে হয় ভাবি মেঝভাইয়া তোমার বাবাকে মেরেছে?”
ব্যপারটা কে যতো ভোলার চেষ্টা করে ততোই যেন মাথায় চড়ে বসে।রাগে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,”এসব কেন বলছো?আর মনে হওয়ারই বা কি আছে।তোমার ভাই নীরার সাথে দেখা করেছে,আমাকে সড়ানোর প্ল্যান করেছে সবটাই শুনেছে বাবা।এসব তো আর মিথ্যে না।”

টিনা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দেয়, “সবই ঠিক আছে ভাবি। তবুও এখানে কিছু রয়ে যায়।সামিহা ভাবি তোমায় মিথ্যা বলেছে।আর এটা নতুন নয়।নীরা আপুকে নিয়ে এর আগেও অনেক কিছু হয়েছে বাড়িতে।তখনিই ফয়েজ ভাই ভাবিকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলো।মেঝভাইয়ার জন্যে হয় নি।তবে এবার তোমার মাথায় যে ভুলভাল কথা ঢুকিয়েছে সেটার শাস্তিস্বরূপ তাকে ভাইয়া ছেড়ে দিয়েছে”

টিনার কথাগুলো মাথায় সুচের মতো বিঁধছে পাখির।আনমনে ভাবতে থাকে,”তারমানে সত্যিই কি তবে সামিহা ভাবি মিথ্যা বলেছিলো?তা না হলে ডিভোর্সের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে তাও ফয়েজ ভাইয়ের মতো সাদা মানুষ, ভাবাও যায় না।”
পাখি কিছু না বলে চুপ করে আছে।মনের মাঝেও কোথাও যেন তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।মন কোন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না।টিনা আরো কিছুক্ষন গল্প করে চলে যায়।

সিঁড়ি বেয়ে কারোর উপরে আসার আন্দাজ করতে পারে পাখি।নিজেকে ঠিকঠাক করে নেয়।
“ফুপা,তুমি”-শ্বাশুরি মায়ের সাথে নিজের ফুপাকে এভাবে চোখেরর সামনে দেখবে ভাবতেও পারে নি পাখি।
ঘরে এনে সোফায় বসিয়ে দেয়।
“এই নিন আপনার ভাতিজি।এবার কথা বলুন ভাইসাহেব।আমি নিচে যাই”-বলেই শানের মা হাসি মুখে নিচে নেমে এসে সুমিকে তাগাদা দেয় উপরে নাস্তা দিতে।

“হঠাৎ রংপুরে যে ফুপা।তোমার কোন কাজ ছিলো? “-হরবরিয়ে বলে পাখি।জব্বার সাহেব ঘরটায় চোখ বুলিয়ে বলে,”সত্যিই ভাগ্যকরে তোর বাবা এমন জামাই পেয়েছিলো রে”
বাবার কথায় মন খারাপ হয়ে যায় পাখির।চোখের পানি মুছে বলে,”বসো না।আজ থেকে যাবা কিন্তু!”
“না রে মা আজ না;আরেকদিন।একটু ছিলো রংপুরে।ভাবলাম দেখা করে যাই তোর সাথে”
“ভালো করেছো”-হাসিমুখে বলে পাখি।
“তোকে একটা কথা বলব? ”
“হ্যা বলো না ফুপা!”

” জামাই খুবই ভালো মানুষ রে মা।আর কোন ক্যাচাল না করে মন দিয়ে সংসার কর।”-বলতে বলতেই জব্বার সাহেব পাখির দিকে তাকান।
পাখি বুঝতে পেরে চট করে মুখে হাসি এলিয়ে বলে, “আমি খুব ভালো আছি ফুপা।চিন্তা করো না”
জব্বার সাহেব পাখির মুখে হাসি দেখে ভাবলেন হয়ত সবটা ঠিক হয়েছে তাই আর আগের কথা তুলে মেয়েটার মন খারাপ করতে চান নি তিনি।এরপর রাতে খেয়ে চলে যান বাড়িতে।

সারাটাক্ষন টিনার কথাগুলো মাথায় এসেছিলো।ফুপার বলা কথাগুলো মনে উঠছিলো পাখির।”কোথাও কোন ভুল হচ্ছে না তো আমার”
শান রাতে বাড়িতে ফিরে দেখে পাখি ঘুমিয়ে পরেছে।ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে সেদিকে চেয়ে মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে নিচে থেকে খেয়ে আসে।হাতের কয়েকটা কাজ সেরে পাখির পাশে শুয়ে পরে।

সকালে উঠে চোখ পড়ে দেয়ালে টাঙ্গানো নানান রকমের ফুল আর প্রকৃতির ছবির উপর।আনমনে হেসে ফেলে পাখি। বিছানায় চেয়ে দেখে শান নেই।ভ্রকুচকে চারপাশে তাকায়।কোথাও খুঁজে পায় না।
সিঁড়ি বেয়ে গুটিগুটি পায়ে নিচে নেমে আসে।সেখানেও শান কথাও নেই।মনটা খারাপ হয়ে যায়।নাস্তা সেরে দাদির ঘরে গিয়ে কিছুক্ষন গল্প করে।মনটা তবুও ভালো লাগছে না।সারাদিন পার হয় ছটফট করে। কোথাও মন টিকছে না আজ।

সন্ধ্যা হয়ে যায় তবুও সার্জনের দেখা নেই।এবার যেন কষ্ট গুলো কান্না হয়ে ধরা দেয়।
টিনা এসে অনেক গুলো আচারের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে গেছে। সেগুলোই বসে বসে খাচ্ছে আর চোখের পানি নাকের পানিতে একাকার করছে।
দরজা খোলার শব্দে পাখি চোখ মুখ মুছে সেদিকে তাকায়। শান দরজাটা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে এক নজর পাখির দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।মুখ মুছতে মুছতে বের হয়ে বলে,”কান্না করছিলা কেন?”
পাখি কিছু বলে না।আপন মনে আচার খেয়ে যাচ্ছে।

শান তোয়ালেটা মেলে দিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,”এতো আচার খাওয়া যাবে না।রাখো”
পাখি তবুও কিছু বলে না।খেয়েই চলেছে।
শান এবার রেগে গিয়ে চট করে প্যাকেটটা কেড়ে নিয়ে নিজে খাওয়া শুরু করে।
দু একবার মুখে নিতেই মুখে বিশ্রীভাব এনে বলে,”এগুলো কি করে খাচ্ছিলে? এতো টক”
শানের মুখোভাব দেখে মনে হচ্ছে দুনিয়ায় এর থেকে বিশ্রী খাবার আর নেই।

“এসব খাওয়া যাবে না। কাল তোমায় ভালো টা এনে দিবো, ঘুমাও এবার”
পাখি কিছু না বলে আরেকটা প্যাকেট খুলে মুখে নিতেই শান রেগে তেড়ে যায় পাখির দিকে।ঝুঁকে গিয়ে বলে,”এতো তেজ দেখাইও না।আমি রেগে গেলে এবার তোমায় হাত পা বেঁধে গাড়িতে ঢুকাব।আর গাড়ি স্টার্ট করে ছেড়ে দিবো”

পাখির চোখ মুখ শুকিয়ে আসে গতবারের কথা ভেবে।
শুকনো ঢোক গিলে মুখ নিচু করে ফেলে পাখি।পাশ ফিরে শুয়ে পরে।শানও একটু পর এসে শুয়ে পাখিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।কাঁধে মুখ গুঁজে দেয়।পাখির অস্থিরতা বাড়তেই কাচুমাচু করে।শান ধমক দিয়ে মুখে বিরক্ত সুচক শব্দ বের করে বলে,”শাস্তির কথা ভুলে গেলা! ”
পাখি শান্ত হয়ে যায়।

রাত তখন ২.৩০।বাহিরে ভীষণ ঝড় শুরু হয়েছে।জানলার কাপড় গুলো ফরফর করে উড়ছে।বাজে স্বপ্নে ঘুম ভাঙ্গে পাখির।সারা শরীর ঘেমে একাকার।অস্ফুট স্বরে কেঁদে ওঠে।বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় শানের।খেয়াল করে পাখি আজও বসে কাঁদছে।
অস্থির হয়ে হাত পা মালিশ করা শুরু করে।হকচকিয়ে যায় পাখি।
“ব্যথা করছে না”-গম্ভীর গলায় জবাব দেয়।
শান শান্ত ভঙ্গিতে বলে, “কি হয়েছে তবে! ”

পাখি কিছুক্ষন ড্রিম লাইটের আবছা আলোতে শানকে দেখে মুখে ঘৃনার ভাব এনে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
শান ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলে,”কি হয়েছে জানতে চাইছি তো”
“আপনার কি মনে হয়, আমাকে আটকে রাখতে পেরেছেন বলেই আমি আছি? -শক্ত গলায় বলে পাখি।
শান সন্দিহান চোখে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করে পাখি কি বোঝাতে চাইছে।

শানের প্রতিক্রিয়া না বুঝে পাখি আবারও বলে, “আমি চাইলেই আপনার বাড়ি ঘর আপনাকে ছেড়ে চলে যেতে পারি। কিন্তু যাচ্ছি না কেন জানেন?কারণ আমি নিজেই আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারি না।নেহাত আপনার আসক্তিতে আসক্ত আমি।নইলে কি আর নিজের বাবার খুনির সাথে এক বিছানায় থাকে কোন মেয়ে? ”
বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে পাখি।

শান বুঝতে পারে পাখির মনের অবস্থা।হাত টা ধরতে ধরতে বলে,”বাবাকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখেছো”
পাখি হাত টা সরিয়ে বলে,”আপনার না জানলেও চলবে”
শান এবার চট করে পাখির দুবাহু ধরে বলে,”কি বললে,কিভাবে বললে বিশ্বাস করবে আমি বাবাকে মারি নি?বলো?ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড ড্যাম ইট, আমি কিচ্ছু করি নি।”

বেশ চিল্লিয়ে বলে শান।ঝড়ের রাত না হলে হয়ত বাড়ির সবাই জেগে যেত।পাখি ভয়ে সিঁধিয়ে যায়।
দুহাতে মুখ ঢেকে ফুফিয়ে কাঁদে।শান নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে পাখির মুখটা আলতো হাতে আঁজলা ভরে তুলে বলে,”এভাবে কেঁদো না জান।আমাদের বেবির ক্ষতি হবে।আমায় বিশ্বাস না করো ভালো কথা। অপেক্ষা করো দেখবে কোন না কোন ভাবে তুমি তোমার উত্তর পেয়ে যাবা”

আসক্তি পর্ব ৪১

পাখি তবুও কেঁদেই চলেছে অনবরত।শান এবার আলতো করে কপালে চুপু এঁকে দেয়, এরপর ধীরেধীরে পাখির সারা মুখে ঠোঁটের স্পর্শে ভরিয়ে তোলে।পাখি হাত দিয়ে দূরে ঠেলে দিতেই শান একটু সরে যায়।নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।শানের সাড়া না পেয়ে চোখ তুলে তাকায় পাখি।শানের চোখের ভাষা বুঝতে অসুবিধা হয় না পাখির, আর না ক্ষমতা থাকে সেই চাওয়া ফিরিয়ে দেবার।শান এবার ধীরে মুখ ডুবিয়ে দেয় মুখ ফিরিয়ে রাখা পাখির চুলের গভীরে।কতোদিনের স্পর্শ যেন প্রথম স্পর্শ হয়ে ধরা দেয়।মেঘের ঝলকানিতে ঘরময় আলোকিত হয় বার বার।আর শানের স্পর্শে নববধূর মতো কেঁপে কেঁপে ওঠে পাখি।

“চার মাস চলছে পাখি, একবার চেকআপ করাতে হবে।কাল রেডি থেকো আমি নিয়ে যাব মেডিকেলে।”-শান পাখির মাথায় চুমু খেয়ে বলে।
শানের বুকের উপর শুয়ে পাখি অস্ফুট স্বরে জবাব দেয়, “হুমম”
দুজন আজ এতো কাছে তবুও যেন মনের দূরত্ব আজ যোজন যোজন। শান ভাবতে থাকে,” এ দূরত্বও শেষ হবে খুব তাড়াতাড়ি।তবে তোমায় ছোট করে হলেও আমি আমার অনুপস্থিতিটা বুঝাব জান।একটু শাস্তি তোমারও প্রাপ্য আমায় কষ্ট দেয়ার জন্যে।ভাগ্যিস তুমি প্রেগন্যান্ট! ”

আসক্তি পর্ব ৪৩