আসক্তি পর্ব ৬

আসক্তি পর্ব ৬
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সারারাত বাহিরে কাটিয়ে সকাল বেলা বিধ্বস্ত চেহারায় বাড়ি ফেরে শান।এই কয়েকদিনের ধকলে বেচারা নাজেহাল।মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি,চুলগুলা উষ্কখুষ্ক, শার্টের বুকের কাছের কয়েকটা বোতাম খোলা,উন্মুক্ত লোমশ বক্ষ যেন জানান দিচ্ছে কতো বছরের ক্লান্ত পথিক সে।

ঘরে ঢুকেই চোখে পড়ে সোফার এককোণায় মাথা রেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে পাখি।কাঁটা জায়গা থেকে রক্ত আর পরছে না।জমাট বেঁধেছে সেখানেই।টলমলে পায়ে এগিয়ে যায় পাখির দিকে।ঘুমন্ত মুখটার দিকে চেয়ে কয়েকফোটা চোখের জল গড়িয়ে পরতেই চট করে নিজেকে সামলে নেয়।খুব সাবধানতার সহিত কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়।এরপর পাখির কপালে আলতো চুমু এঁকে দেয় শান।গত রাতের করা বাজে ব্যবহারের জন্যে নিজে নিজেই অনুতপ্ত সে।সাবধানে কাটা জায়গাটা পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এক ফাঁকে পাখির ফোন চেইক করে শান।সন্দেহানুযায়ী কিছুই পায় না।পাখিকে রেখে সে ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়েই দেখে পাখি উঠে বিছানায় বসে নিজের অবস্থান অনুমান করছে।ভ্রুর কাটা জায়গায়টা টনটন করছে।ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ টা হাতে লাগছে।শানের চোখে চোখ পড়তেই ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে মিইয়ে যায় সে।

শান ওর দিকে ভ্রুকুচকে চেয়ে তারা দেয়”উঠে ফ্রেশ হও, আমরা এক জায়গায় যাবো”
-“কককোথায়”,লালমনিরহাট? “বাড়ি নিয়ে যাবেন? প্লিজ চলুন না!আমায় বাড়ি দিয়ে আসুন”
-“রেডি হতে বলেছি রেডি হও। বেশি কথা বলো না এবং ফাস্ট ”
শানের গতরাতের ব্যবহারের ভয় এখনো কাটেনি ওর।তাই আর কথা না বলে সারা শরীরে ব্যথা সমেত ধীর পায়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোয়। শান আড়চোখে সেদিকে চেয়ে মনে মনে বলে,

“আমার ধারনা যদি সত্যি হয় তাহলে গত রাতের ব্যবহারের কারণে আমি নিজেকে কক্ষনোই ক্ষমা করতে পারবো না পাখি।তোমার কাছে সারাটা জীবন বিবেকের কাঠগড়ায় অপরাধী হয়ে রবো।আমার আগেই সবটা বোঝা উচিত ছিলো।বড্ডো দেরি হয়ে গেলো”

গত রাতে শান ঘর ছেড়ে বাগান বাড়ি ঘরে ছিলো।বাড়ি থেকে বেশ দূরে নয়;কাছেই।সিগারেটের শেষ মাথা পুড়তেই পাপড়ি ফোন করে।কথার এক ফাঁকে জানতে পারে শান বিয়ে করেছে।এ নিয়ে হাসি তামাশা করার পরমূহূর্তেই জানতে পারে এ বিয়ে শানের জীবনে কতোটা বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে।শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাখির সমস্ত কথা সে পাপড়িকে জানায়।এমনকি শানের গত রাতের ব্যবহারও।শানের কথা শুনে তাকে ভীষণ রকম বকাঝকা করে এবং পাখিকে নিয়ে ভালো প্রসূতি ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কনসাল্ট করতে বলে।শানের মাথায় একবারের জন্যে এটা আসে নি, পাখির মাঝে কোন প্রকার রোগ বা ফোবিয়া নেই তো!পাপড়ির কথাকে অগ্রাহ্য করতে পারে নি।তার দেয়া ডক্টরের ঠিকানায় পাখিকে নিয়ে পৌঁছায়।

“What a big surprise! The great heart surgeon ফয়সাল আহমেদ শান আমার কাছে!”-দাঁতে দাঁত চেপে কিছুটা তাচ্ছিল্যের স্বরে সম্ভাষণ জানায় রংপুরের সেরা গাইনোক্লোসিস্ট ডাক্তার নিরা।
শান টেবিলের উপর নিরার নেইম প্লেইট দেখে চোখ বন্ধ করে জবাব দেয়,”প্রয়োজনটা ওয়াইফের না হলে তোমার ছায়া মারানোর কোন শখ ছিলো না আমার”
সাথে সাথেই পাশে দাড়ানো পাখিকে এক হাতে জড়িয়ে কথাটা বলে।
নিরার গাইনোক্লোজির সাথে সাথে সাইকোলোজিতেও বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।তাই পাপড়ি সবটা জানার পরেও নিরার কাছেই শানকে যেতে বলে।

“প্লিজ প্লিজ সিট, তাহলে পাপড়ি আপনাদের জন্যেই সময় চেয়েছিলো আমার থেকে”
“বেশি না বকে মেডিকেলের রুলস এন্ড রেগুলেশন মেনে নিজের কাজে মন দাও”
“বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনার ওয়াইফের?”
ওদের কথার পুরোটা সময় পাখি মাথা নিচু করে ছিলো।
“আমি কেবিনের বাহিরে আছি তুমি পাখির সাথে কথা বলো।আমার সামনে ও খোলামেলা কথা বলবে না “-বলেই চট করে বাহিরে চলে যায় শান

শানকে ডেকে নেয় নিরা।কয়েকটা টেষ্ট লিখে দিয়ে টেষ্ট গুলো করাতে বলে।কিছুক্ষন পর শান টেষ্ট গুলো করিয়ে এনে নিরার হাতে দেয়। বেশ গম্ভীর আর থমথমে মুখে পাখিকে কেবিনের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে।
“মিস্টার শান.আমায় গায়ে পরা মেয়ে বলতে না?prostitute ও বলতে। কেন?কারণ আমি তোমার কাছে অন্য কিছু এক্সেপেক্ট করেছিলাম বলে।মডার্ণ যুগে ওটা নিছকই স্বাভাবিক জিনিস ছিলো। আর আজ!তোমার বউ তোমায় কাছেই ঘেঁষতে দেয় না। হাহাহাহা”-অট্টোহাসিতে ফেটে পরে নিরা।
“নিজের অতীতের জন্যে লজ্জিত হও নিরা।আমার মুখ খুলিও না।বাকেট খুললে মুখ রাখার জায়গা পাবা না।নতুন করে জল ঘোলা না করে ওর প্রবলেম কি সেটা বলো”-একপ্রকার চাপা রাগে জানতে চায় শান

“শোন, তোমার ওয়াইফের গাইনি কোন প্রবলেম পেলাম না।কথা বলে যা বুঝলাম ও Asexuality তে আক্রান্ত।তুমি ডাক্তার মানুষ বেশি বুঝানো লাগবে না জানি।তাও বলি শোন,এর মানে হলো বিপরীত মানুষটার প্রতি কোন প্রকার যৌনাকাঙ্খা না থাকা।অথবা যৌনাকাঙ্খার অভাব বোধ করা।আর যারা এ রোগে আক্রান্ত হয় তাদের বলা হয় Asexual. অর্থাৎ যাদের কোন প্রকার যৌনাকাঙ্ক্ষা নেই বা থাকলেও সেটা স্থান, কাল, ব্যক্তিভেদে প্রকাশ পায়।এটার দুটো ধরন আছে “-বলেই শানকে কাগজে কিছু একটা দেখিয়ে দেয় নিরা

তারপর আবার বলতে শুরু করে, “দুটো ধরনই বেশ ক্রিটিক্যাল।এই যে দেখছো এর মাঝে একটা হলো
১.ডেমিসেক্সুয়্যাল
এ রোগের রোগী তারাই যারা সম্পর্কে জুড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অ্যাসেক্সুয়াল থাকে।মানসিক একটা সম্পর্ক তৈরীর পর তারা নিজেদের মাঝে অনুভূতির অস্তিত্ব খুঁজে পায়।
আরেকটা হলো
২.গ্রাইসেক্সুয়্যাল

এরা হলো তারাই যারা মাঝে মাঝেই নিজেদের মাঝে অনুভূতির নিদর্শন পায় আবার মাঝে মাঝেই সেটা হারিয়ে ফেলে।অনেকটা বিতৃষ্ণা এসে যায়।
এটাকে এক প্রকার যৌন ফোবিয়া হিসেবে ধরা হয়।অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের প্রতি যাদের বিতৃষ্ণা।
এই রোগের পিছনে অনেক গুলো কারণ থাকতে পারে।

হতে পারে ছোটবেলায় সে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের স্বীকার হয় নয়ত বাল্যকাল থেকে সেক্সুয়াল জ্ঞান কম থাকার ফলেও এমন হয়।যেমন ধরো, পুরুষ মানুষের থেকে দ্বীর্ঘ সময় দূরে থাকার ফলে এই সমস্যা টা তৈরী হয়।বা অনেক সময় এমন হয় সেক্সুয়াল কোন ট্রমার ভীতরে নিজেকে গুমোট রাখলেও এই রোগের সম্ভাবনা থেকে যায়।অনেক সময় অধিক রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ে হলেও এমন রোগ হয়;সবার না।
তোমার ওয়াইফের থেকে যা বুঝলাম অ্যাসেক্সুয়ালটির দুটো ধরনের প্রত্যেকটা লক্ষনই তার মাঝে বিদ্যমান।

তবে হ্যা যারা এই রোগে আক্রান্ত হয় তারা কিন্তু নিজেও জানে না তাদের মাঝে কি চলছে।মাঝে মাঝেই তারা সঙ্গীর প্রতি আকর্ষন অনুভব করে আবার তৎক্ষনাৎই তা ঘৃনায় পরিনত হয়।এই প্রবলেম গুলো ইন্ট্রোভার্ট মানুষের বেশি হয়।কারণ তারা বাহিরের জগৎ সম্পর্কে তেমন জানার আগ্রহ রাখে না।”
“ওকে কখনোই ফোর্স করা যাবে না।ওকে ভয় দেখানো যাবে না।তোমাকে যেন ওর বন্ধু মনে হয়।ওর থেকে ওর অতীত সম্পর্কে জেনে নাও।যদি উপরোক্ত কারণ গুলো ওর অতীতে থাকে তবে তোমায় ভীষণ বেগ পেতে হবে।

এতোটুকু ধৈর্য তো ধরতেই হবে তোমাকে মিস্টার ফয়সাল”-শেষের কথাটা বেশ তাচ্ছিল্য করেই বলে নিরা।
শানের নিজের মাঝে বড্ডো বেশি খারাপ লাগা কাজ করছে।পাখির মুখটা বার বার ভেসে উঠছে চোখের সামনে।কাল বিনা কারণে কতো আঘাত করে ফেললো মেয়েটাকে।
“শান,শান”
“হুহহহম বলো!”
“আরে চিন্তা কইরো না সব ঠিক হয়ে যাবে তবে সময় লাগবে।আগে ওর সম্পর্কে ভালো করে জেনে নাও তারপর না হয়….”

নিরাকে থামিয়ে শান জিজ্ঞেসা করে, “এর ট্রিটমেন্ট?”
“আছে।ট্রিটমেন্ট বলতে তাকে গুমোট থাকতে দেয়া যাবে না।তোমার নিজেকে তার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।অর্থাৎ সে যেন তোমার প্রতি আসক্ত হয়।তুমি যেন ওর আসক্তিতে পরিনত হও। ”
“সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারো না? মেডিসিন কি ওর? ”
“রিল্যাক্স, রিল্যাক্স। সব বলছি এতো হাইপার হইও না”-মৃদু হেসে বলে নিরা।

“শোন, তোমাকে না ভার্সিটি লাইফের শান হতে হবে।ঐ যে যেমন আমার জন্যে হোস্টেলের সামনে রাত ১২ টার পর ফুল নিয়ে থাকতা,গার্লস হোস্টেলের বাথরুম থেকে ধরা পরলা।এক কথায় তোমায় প্রেমিক পুরুষ হতে হবে।প্রেম করতে হবে পাখির সাথে এবং পাখির মনেও প্রেমের অনুভূতি জাগাতে হবে।ওকে বোঝাতে হবে ওর মাঝেও এই অনুভূতি বা চাহিদা টা আছে।আর মেডিসিন দিচ্ছি ওকে মানসিক দূঃচিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার।তবে কি জানো শান,ব্যপার টা খুবই স্লো মোশনে হতে হবে।কচ্ছোপের গতির মতো।হুটহাট তোমার ধৈর্য হারালে চলবে না।এর মাঝে আরো অনেক প্রসেস আছে যেগুলো ধাপেধাপে আমি তোমায় জানাব আর তুমি সে অনুযায়ী স্টেপ নেবে।১৫ দিন পর আরেকবার আসবে পাখিকে নিয়ে।”

“ওকে”-বলেই শান নিরার ভিজিট পে করতে চায়
“আরে রাখো রাখো, আমি মাঝে মাঝে এমনিও রোগী দেখি”
“আমি কারোর কাছে ঋণ রাখি না তোমার কাছে তো নয়ই”-বলেই বিলটা নিরার টেবিলের উপর রাখে। বাহিরের উদ্দেশ্যে পা রাখতেই নিরা ডেকে ওঠে
-“বউকে আগা-গোড়া মুড়িয়ে এনেছো, কই সুন্দর তো না;কালো।তবে অনেক মায়াবি, মিষ্টি একটা মেয়ে”
-“যেমনি হোক আমার বউ সে। অন্তত তোমার মতো নোংড়া রুচির নয়।আমার মায়ের সিদ্ধান্ত বলে কথা!ভুল হতেই পারে না।সেদিনও না, আজও না!

চোখের জল মুছে নিরা আবার প্রশ্ন করে,”ও বাড়িতে সবাই কেমন আছে?”
-“জানো না যেন! ঢং করবে না আমার সাথে।ও বাড়ির দিনের খবর দিনে দিনেই তুমি পেয়ে যাও। সো নো মোর ঢং, ওকে!
“শান”
…..(শান নিশ্চুপ)
“এই সুখে আছো তাহলে?”

“একটা কথা কান খুলে শুনে নাও,আমার ওয়াইফ তোমার পেশেন্ট সো ডক্টর আর পেশেন্টের যা সম্পর্ক তাই মানতে বাধ্য তুমি।ট্রিটমেন্টে যদি কোন রকমের কোন গড়িমসি করো তো ভালো করেই জানো তোমাকে রংপুর ছাড়াতে ২ মিনিটও সময় লাগবে না আমার। আর ক্যারিয়ারের কথা ভুলে যেও।সুখ আমি ওর মাঝেই খুঁজে নিবো”-নিরাকে কঠিন গলায় কথাগুলো বলে শান কেবিন ছেড়ে বের হয়।
“পাখির সাথে কি করে চোখে চোখ রেখে কথা বলবো আমি!ও কি কখনোই আমায় ক্ষমা করতে পারবে!”-ভাবতেই কেবিনের বাহিরে এসে পাখিকে খুঁজতে থাকে।কোথাও নেই সে।একটু বাহিরে এসে দেখে চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে নিচু হয়ে আছে।

পাখিকে ওভাবে দেখে শানের ভিতর যেন মোচড় দিয়ে ওঠে।আস্তে করে পাশে গিয়ে বসে। পাখি টেবিলে কপাল ঠেকিয়েই শান্ত চাহনীতে চেয়ে থাকে শানের দিকে।পাখিকে ওভাবে চেয়ে থাকতে দেখে নিজেকে সংবরণ করতে পারে না সে।দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে ভেতর বাহির নিজের বাজে ব্যবহারের জন্যে।চোখ ফিরিয়ে নিয়ে পাশ ফিরে চোখের কোণে জমানো জলটা বুড়ো আঙ্গুলে মুছে নেয়।
শানকে নড়তে দেখে পাখি ঠিকঠাক হয়ে বসে।
“ডক্টর নিরাকে চেনেন আপনি?”-নিজের রোগের কথা না জানতে চেয়ে নিরার সাথে শানের পরিচয়ের কথা জানতে চায়(মেয়েরা এমনিই, না! ?)
“বাড়ি চলো পাখি”
“হুমম,চলুন”-পাখি আর কিছু জানতে না চেয়ে ক্ষীন স্বরে শানের কথায় তাল মেলায়।

রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে শান আর রাখি।শানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখির দিকে। পাখিকে বাড়ি পৌঁছে শান রাখির সাথে দেখা করতে রাখিকে রেস্টুরেন্টে ডাকে।
“Answer me Rakhi, quick. পাখির জীবনে কি ঘটেছিলো”
“কি ঘটেছিলো বলতে ভাইয়া!”ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় রাখি।
“কোন কিছু লুকাবে না।সাফ সাফ বলো পাখির অস্বাভাবিক আচরনের কারণ তুমি জানো?”
“আমরা একসাথে ক্লাস ওয়ান থেকে পড়াশুনা করি।সবটা সময় ও খুব একা একা থাকত।কারোর সাথে মিশত না।ছেলেদের থেকে সবসময় হাজার মাইল দূরে থাকার চেষ্টা করতো।ক্লাস এইটে উঠে আমাদের এক ফ্রেন্ড ওকে লাভ প্রোপোজ করে”-শেষের কথাটা বলে রাখি আমতা আমতা করে শানের মুখের দিকে তাকায়।
শান চোখ বন্ধ করে জবাব দেয়,”continue ”

“পাখি ওকে রিজেক্ট করে দেয় আর কেঁদে ফেলে।এরপর যখন আমরা ক্লাস টেনে উঠি তখন আবারও সেই ফ্রেন্ডটা পাখিকে প্রোপোজ করে বসে।এর মাঝে প্রত্যেকদিন পাখিকে ফলো করতো সে।পাখি ভীষণ অস্বস্তিতে পরে যায়।আমাদের সবার চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে হ্যা বলে দেয়। কিন্তু পাখি কখনোই তার সাথে মিশতো না, না তার সাথে ফোনে কথা বলতে আগ্রহী ছিলো।আমরা ভাবতাম হয়ত মতের বাহিরে গিয়ে রিলেশন তাই এমন। কিন্তু না পাখি একদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঠের মাঝখানে সজোরে থাপ্পোর বসিয়ে দেয় ঐ ছেলেটাকে।ছেলেটার অপরাধ ছিলো সে নাকি ক্লাস রুমে পাখিকে একা পেয়ে বাম গালে চুমু খায়”-এটুকু বলতেই রাখির কন্ঠ কেপে ওঠে।বলা থামিয়ে চেয়ে দেখে রাগে শানের চোয়াল কেঁপে উঠছে।
“তারপর”

আসক্তি পর্ব ৫

“মাঠের মাঝে অঘটন ঘটিয়ে পাখি নিজের গাল ডলে ডলে চামরা তুলে ফেলেছিলো।আর ওয়াশরুমে এসে বমি করে দেয়।আমি গিয়ে কিছু বলাতেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে আর বলে আমার ঘৃনা লাগছে নিজের প্রতি।আমার কোন ছেলেকেই সহ্য হয় না রাখি।সেদিন বুঝেছিলাম পাখির ছেলেমানুষে ফোবিয়া আছে।বিয়ের দিন রাত্রে অনেক বুঝিয়েছিলাম ওকে।তারপর আর আপনার ব্যপারে তেমন কিছু বলতে চায় নি ও তাই আমিও ভেবেছিলাম সবটা সমাধান হয়েছে”-গড়গড় করে কথা গুলো বলে রাখি দম নেয়।
“তোমার অন্তত আমায় সবটা বলা উচিত ছিলো।এ্যানি ওয়ে, চলো তোমায় পৌঁছে দিই”-ঠান্ডা কন্ঠে বলে শান
“না ভাইয়া, আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ভালো চোখে দেখবে না।আর এখন থেকে তো মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা।রিক্সা নিয়ে যেতে পারবো”

” sure!”
“হ্যা ভাইয়া”
“ওকে বাই,টেইক কেয়ার”
??
শান রাখিকে বিদায় দিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে ভাবছে আর কিভাবে কি জানা যাবে।কিছুক্ষন পর বের হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা লালমনিরহাট রওনা দেয়…..

আসক্তি পর্ব ৭