আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৮

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৮
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সকাল বেলা পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় পাখিরম গতকাল ছাদ থেকে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়।তবুও সবার আগে ঘুম ভাঙ্গে তার। হয়ত জীবনে নতুন এক সকাল তৈরী হবে বলেই!
সকাল সকাল ইনায়াহ্কে ডাকে শান্তকন্ঠে। নড়েচড়ে ছোট্ট কোলবালিশটা দুহাতে চেপে আবার পাশ ফিরে ঘুমায় ইনায়াহ্।মুখে হাসির রেশ অথচ উঠছে না।পাখি ঢেড় বুঝতে পারে ইনায়াহ্ জেগে আছে।তাই আস্তে করে কাতুকুতু দিতেই হাসতে হাসতে উঠে বসে পরে ইনায়াহ্।মিছে বিরক্তি দেখিয়ে বলে,”এতো সকাল সকাল কেন ডাকলে মুন সাইন?আর একটু ঘুমাই না!”

“উহু আর না।তাড়াতাড়ি উঠো। হোমওয়ার্ক আছে অনেক গুলো।আর আজ সব রান্না আমি করে রেখে তবেই স্কুলে যাবো “,তাড়া দিয়ে বিছানার চাদর ঠিক করতে করতে বলে পাখি।
ইনায়াহ্ অগত্যা চোখ কচলে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে।পাখি বিছানা ঠিক করে, ঘর গুছিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।রাহেলা তখনো ওঠে নি।উঠবেই বা কি করে তখন তো মাত্রই আলো ফুটেছে!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পাখি তড়িঘড়ি করে সবার জন্যে টুকটাক সকালের নাস্তার জন্যে ডিম চুলোয় দেয়।হাতের কয়টা কাজ এগিয়ে নেয়।এরপর ফ্রেশ হতে উপরে চলে যায়।শান এতো সকাল বেলা নাস্তা খায় না।উঠেছেও কিনা তাও জানে না পাখি।ইনায়াহ্ পড়তে বসেছে হাত মুখ ধুয়ে।সামনে হালকা কিছু খাবার আর পানির গ্লাস রেখে পাখি কপোট শাসিয়ে বলে,”একদম দুষ্টুমি না ওকে?হোমওয়ার্ক করবা সাথে খাবার গুলো শেষ করবা”
মাথা নেড়ে ঠোঁট উল্টিয়ে জবাব দেয় ইনায়াহ্।

শানের জন্যে কড়া করে একটা কফি রেডি করে উপরে চলে যায় পাখি।দরজার সামনে দাঁড়াতে কেমন যেন আলাদা একটা অনুভূতির জন্ম নেয়।অথচ কতোবার এ ঘরে এসেছে সে।কতোবার এ করিডোরে হেঁটেছে!
ঠোঁটের লাজুক হাসিটা ম্লান হয়ে যায় শানের অতীত ভাবলেই।সাথে সাথে শক্ত হয়ে আসে চোখ মুখ।
নিজের সাথেই বিড়বিড় করে ওঠে,”তোর এখন একটাই কাজ পাখি ভালোবাসার ঐ মানুষটাকে ভালো রাখা।তাকে তার অতীতের কালো আঁধার থেকে টেনে হিচরে বের করে আনা”

বুকের কাছে ঘনঘন কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাখি দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢোকে।
দরজায় ক্যাচ করে দুটো আওয়াজ হয়। পাখি সন্তোর্পনে দরজাটা ধরতেই আওয়াজ টা থেমে যায়।সামনে তাকিয়ে দেখে ভাঁজ করা পা দুটার হাঁটুর কাছে খুব সুন্দর করে হাত দুটো গুঁজে দিয়ে ঘুমাচ্ছে শান।থমকে যায় পাখির চোখ।বুকের ভেতর অজানা হাওয়া বয়ে যায়।ধোঁয়া ওঠা গরম কফির মগটা সাইড টেবিলে রেখে শানের দিকে তাকায় পাখি।কি যে মায়াময় ও মুখ! চোখের পলক ফেলা দায় হয়ে ওঠে।

শানের মুখের সামনে মেঝেতে বসে পরে পাখি।দুহাত বিছানার উপর এলিয়ে তাতে মাথা এলিয়ে দেয়।অপলক চেয়ে থাকে ঘুমন্ত একটা মানুব মূর্তির দিকে।ঘুমালে প্রতিটা মানুষকেই নিষ্পাপ লাগে ;ছোট বাচ্চার মতো মনে হয়। শানকে একটু বেশিই বাচ্চা লাগছে যেন। নাক দিয়ে বের হওয়া ভারি নিঃশ্বাস টা আছড়ে পরছে পাখির কপালের কাছে।শানকে দেখলেই কেন যেন পাখির বড্ডো ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। এখন তো ঘুমন্ত এ সুযোগ কি করে হাতছাড়া করে! ঠোঁটে মুচকি হেসে কপালের উপর নেমে আসা চুল গুলো সরিয়ে দেয় পাখি।বাঁ হাতের পাঁচ আঙ্গুলে আলতো করে ছুঁয়ে দেয় শানের গাল।নাকের ডগাটা আস্তে করে টিপে ধরতেই সামান্য নড়ে ওঠে শান।হাত সরিয়ে নেয় পাখি।ঠোঁট টিপে হেসে আবার চেপে ধরে নাকটা। ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হয়ে আসে শানের।

সামান্য শব্দ করে হেসেই হাতের স্পর্শ চলে যায় শানের নাক আর ঠোঁটের মধ্যবর্তী নিচু সরু জায়গাটার উপর।হেসে দেয় পাখি।মূহূর্তে চোখ খোলে শান। হাতটা ধরে ফেলে আলতো হাতে।
মুচকি হেসে পাখির দিকে তাকাতেই চোখ সরিয়ে নেয় সে।কোন কথা নেই দুজনের।পাখির অবনত মস্তকে কাচুমাচু করার বিরল দৃশ্যটা মন্দ লাগছে না শানের।তাই তো সেটা চুপচুপ অবলোকন করছে। নীরবতা ভেঙ্গে পাখি বলে,”কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে”

ঘোরলাগা দৃষ্টিতে চেয়ে সদ্য জেগে ওঠা ঘুম জড়ানো কন্ঠে শান বলে, “কফি খাবো না”
চমকিত চোখে পাখি অপ্রস্তুত হয়ে বলে,”তাহলে কি খাবেন?চা?দুধ চা না রং চা?ওহহ সরি আপনি তো ডায়েটে? গ্রিন টি করে দেবো?সুগার ছাড়া?”
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে পাখি শানের জবাবের প্রত্যাশায় চেয়ে থাকে।হাতের আলগা বাঁধনটা আরেকটু শক্ত করে চেপে নিজের কাছে নিয়ে আসে শান।হকচকিয়ে ওঠে পাখি।অপ্রতিভ দৃষ্টিতে লাজুক চোখে চেয়ে বলে,”কি করছেন? ”

“আমি তো নতুন কিছু টেষ্ট করতে চাই।সকালটা এখন থেকে নতুন কিছু দিয়ে শুরু করতে চাই”,কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে শান।
শানের কথার গাঢ়তায় থেমে যায় পাখির শ্বাস নেয়া।বোঝার বাকি থাকে না শান ঠিক কি বোঝাতে চাইলো।বুকে ধাক্কা মেরে চলে আসতেই দুহাতে নিজের বুকে চেপে ধরে পাখিকে।ছোট ছোট চোখে ভ্রুজোড়া দুবার উপর নিচ করে শান বলে,”কী? এতো ছটফটানি কিসের?হুমম!ডানা ভেঙ্গে দেব ”

“এতোটাই সহজ?”,অহমিকায় বলে ওঠে পাখি।
“দেখবে কী করে ডানা ভাঙ্গতে হয়?”,দুষ্টুমির হাসি ঠোঁটে এলিয়ে বলে শান।আড়চোখে তাকিয়ে পাখি বলে,”আমার ডানা এতো কমজোর নয়। ওকে মি… ”

পাখির কথা শেষ হতে না হতেই কথা বলার মতো সুযোগ হারিয়ে ফেলে সে।বুঝতে পারে কথা বলার জন্যে যে ঠোঁট দুটো দরকার, তা এখন বাঁধা।কিছুক্ষন চোখ বন্ধ রেখেই শানের বুকে কয়টা কিল বসায় পাখি।শানের তাতে কোনই পরিবর্তন হয় না।কিছুক্ষনের মাঝে নিজে থেকেই নিস্তেজ হয় পাখি।খুব ধীরে চোখ দুটো খুলে নিজের এক ইঞ্চি দূরে রাখা প্রোজ্জ্বলিত চোখ দুটোর দিকে তাকায় ।বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারে না সে।ও চোখের গভীরতা যে বড্ডো বেশি।নিজেকে সেখানে নিছকই ভেসে আসা খড়কুটো মনে হয়। চোখ সরাতেই শান পূর্বের ন্যায় আবারও ভ্রু জোড়া নাচায়।ভীষণ লজ্জায় পরে যায় পাখি।আবারও ছটফট করতে থাকে নিজেকে ছাড়ানোর। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে যায়।
দীর্ঘক্ষণ পরে শান ওকে ছেড়ে বলে,”এটাকেই বলে ডানা ছাটা”

মুখে লজ্জার আভা বেশে ওঠে পাখির।গালের লাল সে আভাটা দৃষ্টিগোচর হতে সময় নেয় না শানের।আঙ্গুল তাক করে বলে,”দেখো গাল দুটো কি লাল হয়েছে তোমার?দেখো দেখো!”,
মনের অজান্তেই গালে হাত চলে যায় পাখির।শান শব্দ করে হেসে বলে,”সেদিন রাতে যখন ড্রাংক হয়ে আমায় কিস করলে এমন তো ছিলো না।”

পাখি বেশ বুঝতে পেরেছে এই লোক তাকে লজ্জায় মেরে ফেলবে আজ। উঠে আসতেই আবারও হাতটা ধরে একটা টান দেয় শান।তাল সামলাতে ব্যর্থ হয়ে পরে যায় বুকের উপর।এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে শান বলে,”আই লাভ ইউ”
মাথা তুলে তাকায় পাখি।কেমন যেন হারানোর ভয় সে চোখে। আস্থার দৃষ্টিতে চেয়ে পাখি বলে,”আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি।কোনদিনও আপনাকে ছেড়ে যাবো না।এতো ভয় পেতে হবে না”
শান নিজের বুকে পাখির মাথাটা চেপে ধরে বলে,”প্রতিদিন চা, কফি’র বদলে সকালে আমি এই সুইটটা চাই”

“বেহায়া লোক”
শান হেসে ফেলে শব্দ করে।

সকালে সবার জন্যে নাস্তার জোগাড় করে পাখি।রাহেলা তা দেখে অবাক হয়ে যায়। কপালে হাত দিয়ে বলে,”হায় হায় বউ মা! কি করেছো এসব?”
তোমারে আমি এসব করতে বলেছি একবারো?আমিই করতাম সবটা।তুমি করতে গেছো কেন এতোসব?”
রাহেলার কথায় স্তম্ভিত হয় পাখি।মনে মনে আওড়াতে থাকে, “চাচি একটু আগে কি ডাকলো আমায়?বউ মা!”

“কি হলো বউ মা?এখন আবার দাঁড়িয়ে অাছো কেন?খাবার বেড়ে দাও”
পাখির ভাবনার সুতো ছেড়ে রাহেলার কথায়।চকিতে চেয়ে বলে,”একরাতেই বউ মা হলাম তাই না?এতো পর করলে?”
রাহেলা লজ্জিত হয় মনে মনে ।নিজের করা দোষের জন্যে ক্ষমা চায় পাখির কাছে।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তোমার শ্বাশুরি মা এ বাড়িতে থাকলে তোমায় আদোর করে বউ মা’ই ডাকতেন।তার অবর্তমানে আমিই না হয় সে দায়িত্ব পালন করলাম।তোমার কি খারাপ লাগে মা?”
পাখি এক গাল হেসে রাহেলাকে আশ্বস্ত করে বলে,”খারাপ লাগো না।তবে…..। আচ্ছা চাচি আজ একটা কথা বলবে?”

কথার মোড় ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে পাখি।সায় দিয়ে রাহেলা প্রশ্ন করে,”কি কথা বলো?”
“ডাক্তার সাহেবের মা কোথায় থাকেন?সবকিছু ছেড়ে, আমার ডাক্তার সাহেবকে একা করে কেন চলে গেলেন?”
পাখির কন্ঠে শানের জন্যে অধিকারবোধের পুরু স্তর বুঝতে পারে রাহেলা।বুকের কোথাও যেন শান্তির পরশ দোল খেলে যায়।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাহেলা জবাব দেয়,”কোন নারী নিজের সাজানো গোছানো সংসার ছেড়ে চলে যেতে চায় না মা।যেতে বাধ্য হয় অনেকেই।আর যারা স্বদিচ্ছেয় চলে যায় তাদের দলের মানুষ আমার ম্যাডাম নয়।তিনি সবার থেকে আলাদা।তার তুলনা তিনি নিজেই।”

পাখির মনে এখন হাজারও প্রশ্নের ছড়াছড়ি।বুঝতে পারছে না কে ঠিক বলছে।
“যদি সন্দেহ মোতাবেক সেদিনের ঐ মহিলাই ডাক্তার সাহেবের মা হোন, তাহলে তার ব্যপারে এতো পজিটিভ ধারনা কী করে মনে পুষে রাখতে পারেন রাহেলা চাচি?বা তাকে এতো সমিহ করেই বা কেন চলেন?ডাক্তারের মুখে যা শুনলাম তাতে তো উনি সত্যিই ঘৃনার পাত্রি”
ভাবনা গুলোকে একপাশে রেখে পাখি আবার প্রশ্ন করে, “এতো ভালো একজন মা কী করে নিজের সন্তানদের ছাড়তে পারে চাচি?তাও আবার নিজের সুখের জন্যে?”

রাহেলা বেশ বুঝতে পেরেছে শান নিজের অতীতের ব্যপারে সবটা বলেছে পাখিকে।ছলছলে চোখ দুটো স্থীর করে বলে,”মা গো, সবটা জানাব তোমায়।একটু সময়টা অনুকূলে আসতে দাও”
“আব্দুল্লাহ্ চাচা,আব্দুল্লাহ্ চাচা”
ডাকতে ডাকতে নিচে নেমে আসে শান।পাখি রাহেলা দুজনে সেদিকে তাকায়।পাখি খাবার পরিবেশনে মন দেয়। রাহেলা এগিয়ে গিয়ে বরে,”তোমার চাচা তো সকালে উঠেই বাজারে গেছে বাবা।গতকাল কিছু বাজার সদাই শেষ হয়ে গেলো বলে।”

স্বগতোক্তি করে বলে, “কিছু লাগবে তোমার? আমারে বলো, তোমার চাচা আসার সাথে সাথেই আমি বলে দিবো নে।
শান চেয়ার টা টেনে বসতে বসতে বলে,”তোমারে বলে লাভ নাই চাচি।এটা চাচারেই দরকার”
“ঠিকাছে আসুক তাহলে। অপেক্ষা করো”
ততোক্ষনে ইনায়াহ্ও চলে আসে নিচে।পাখি খাবার দিতে যাবে তখনি শান গম্ভীর কন্ঠে বলে,”তুমিও বসো।আমরা আমাদের টা নিয়ে নিতে পারব”

পাখি আড়চোখে সেদিকে চেয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়। শান ওর হাত টেনে চেয়ারে বসায় জোড় করে। রাহেলা সেদিকে চেয়ে ঠোঁট টিপে হেসে দেয়। মাঝখান থেকে ইনায়াহ্ মুখে হাত দিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।
খাওয়ার এক পর্যায়ে শান একটা কান্ড করে বসে। পাখির মুখের সামনে একটা লোকমা এগিয়ে বলে,”হু”
লজ্জায় মরিমরি অবস্থা পাখির।রাহেলার দিকে একনজর, ইনায়াহ্’র দিকে একনজর চেয়ে দেখে নেয় পাখি।দুজনেই হা হয় চেয়ে আছে ওদের দিকে।শানের হাতটা সরিয়ে চাপাস্বরে বলে,”কি করছেন, চাচি দেখছে”

রাহেলার কানে কথা ঢোকার সাথে সাথে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে বলে,”দাদুভাই আমরা কিছু দেখছি না তাই না!”
ইনায়াহ্ রাহেলার সাথে তাল মিলিয়ে চোখ ঢেকে বলে,”হ্যা দিদা আমরা কিছু দেখছি নাতো”
একফাঁকে পাখি দ্রুত খাবার টা মুখে নিয়ে শানের দিকে তাকায়।ঘোরলাগা চাহনীতে মাথা চক্কর দেয় পাখির।বেশিক্ষন তাকাতে পারে না শানের দিকে।
ইনায়াহ্’র কানে মৃদু টেনে বলে,”ভারি পাকনা হইছো,না!”
হেসে ওঠে সবাই।

“এই যে নেও ধরো ধরো তোমাদের বাজার।বাবারে বাবারে জান বের হয়ে গেলো যেন।এতো ভীড় এতো সকালে! ভাবা যায়”, আপনমনে বকবক করতে করতে বাজারের ব্যাগ সমেত বাড়িতে ঢোকে আব্দুল্লাহ্।কয়দিনের গরমে জনজীবন অতিষ্ট যেন।আর বাজারের গরম তো আরো অসহ্য লাগে।ঘেমে নেয়ে একাকার আব্দুল্লাহ্’র শরীর।রাহেলা এগিয়ে গিয়ে বলে,”এতোক্ষন সময় লাগালে বাজার করতে”

“না, ওখানে আড্ডা মারতে গিছিলাম, জানো না?”,গরমে রাগে মাথার রগ তিড়তিড় করে কাপছে আব্দুল্লাহর। তার মাঝে রাহেলার এমন কথা।
শান পাখিকে নিজে হাতে তুলে খাওয়াচ্ছে আর পাখি সুযোগ বুঝে টুপ করে খেয়ে নিচ্ছে। আব্দুলাহ আর রাহেলার মিষ্টি তর্ক শুনে শান হেসে বলে,”চাচা এদিকে আসো।তোমার পেট খালি, মাথার ছাদটাও খালি তাই রাগ হচ্ছে।পেটে কিছু দাও, ঠান্ডা হও”

“আর তোমার কাজ আছে”,স্বগতোক্তি করে শান।
আব্দুল্লাহ্ ডায়নিং এ এগোতে এগোতে বলে,”কি কাজ রে বাপ”
শান উঠে বেসিনে হাতটা ধুয়ে তোয়ালেতে মুছে বলে।
“কার্ড ছাপাও।আগামি পরশুদিনের ইনভাইট করো সকলকে ।”,বেশ স্বাভাবিক ভাবে বলে শান।
শানের কথায় উপস্থিত সবাই চমকে যায়।সরু চোখে শানের দিকে তাকায় পাখি।
রাহেলা এগিয়ে এসে বলে,”কিসের কার্ড বাবা?”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৭

“আমার আর পাখির বিবাহত্তোর অনুষ্ঠানের কার্ড।যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি সকলকে জানাতে চাই আমাদের বিয়ের কথা।আব্দুল্লাহ্ চাচা সকল আত্মীয়-স্বজনদের ডাকো।পাশে যে এতিমখানা আছে সেখানকার সবাইকে ডাকো।”,এক নাগাড়ে কথা বলে পাখির দিকে তাকায় শান।চক্ষুচড়ক গাছ পাখির।সকালটা যে এতোটা সুন্দর হবে ধারনা ছিলো না পাখির।চোখের কোণে চিকচিক করা জল টা নজর এড়ায় না শানের।সেদিকে এগিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলে খুব নিংড়িয়ে নেয় সে জল।খানিকক্ষণ পাখির দিকে চেয়ে বলে,”আমাদের একা বাঁচার দিন শেষ;একসাথে বাঁচার দিন শুরু ”

শানের চোখেমুখে তৃপ্তির খুশি ঝলমল করে ওঠে।খুশিতে ইনায়াহ্ হাতে তালি দেয়।সবাই যেন এমন একটা সকালেরই প্রতিক্ষায় ছিলো এতোদিন।
শান উপরে উঠে যেতে যেতে বলে,”পাখি আজ স্কুলে গিয়ে সবাইকে ইনভাইট করে এসো।আর তোমার জানের অর্ধেক রাখিকে বলতে ভুলো না ”
সেদিকে চেয়ে পাখি ঠোঁটের ডগায় বিড়বিড় করে, “রাগি হিটলার”

শান আর পাখির বিয়ের কথা শুনে খুশিতে গদগদ হয় রাখি।অসন্তোষের সাথে দূঃখ প্রকাশ করে যে,তাদের বিয়ে হয়ে গেছে আগে।এখন বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে যাচ্ছে সে।খুশিটা চেপে গাল ফুলিয়ে বলে,”এতো বড় কথাটা লুকাতে পারলি আমার থেকে?এখন বাসি বিয়েতে ধেইধেই করে নাচতে নাচতে যাবো না আমি”
সেদিনের ঘটনা মনে করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পাখি।সব ঘটনা খুলে বলে।রাখি হাসিতে ফেটে পরে বলে,”যাই হোক, তোর আয়ান ভাই একটা থ্যাংকসের হকদার”

“বাদ দে সেসব।কাল আসবি কিন্তু।তোকে কাল থেকে চাই আমি ব্যাস।আর স্কুলে ছুটির এপ্লাই করব আমি। ক্লাস আছে, আসছি এখন। “,বলেই চলে যেতে রাখি খপ করে হাতটা ধরে বলে,”তোকে ছুটি নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।মাকে সবটা আমি বলবোনে।এতে ফর্মালিটিজ করতে হবে না।বিয়েতে ফোকাস কর। গ্লো কর গ্লো, বুঝলি?”
রাখির কথাকে উড়িয়ে পাখি বলে,”আমার এতো গ্লো করা লাগবে না।যে ভালোবাসার সে বাসলেই হলো”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৯