আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৯

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৯
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সকালে বেশ তাড়াতাড়ি উঠে পরে পাখি।স্নিগ্ধ একটা সকালের উপস্থিতি মন চাঙ্গা করে তোলে।আজ বাদ কালকে তার বিয়েটা প্রকাশ্যে আসবে। এর থেকে আনন্দের বা কি হতে পারে এই মূহূর্তে!আড়মোড়া ভেঙ্গে ফ্রেশ হতে চলে যায় ওয়াশরুমে।আজ আর ইনায়াহ্’কে ডাকে না।বিয়ের জন্যে যে কয়দিনের ছুটির আবেদন করেছে, তার সাথে ইনায়াহ্’র ও ততোদিনের ছুটি নিয়েছে।ঘুমাচ্ছে ঘুমাক।
রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বুঝতে পারে সদর দরজা খোলা।অবাক হয় পাখি।

“এতো সকালে কে উঠেছে?”,ভাবতেই ভ্রুদ্বয়ে ভাঁজ পরে যায়।এগিয়ে যায় দরজার দিকে।শান দুজন ছেলে সহ ফোন কানে হুরমুর করে এদিকে আসে।হাতে হরেক রকমের ফুল।একটু পর গাড়ির শব্দে মাথা উচিয়ে পাখি দেখার চেষ্টা করে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গাড়িটা এসে থেমে যায় বাড়ির আঙ্গিনায়।পাখি বুঝতে পারছে না শান এতো সকালে কি ওতো করছে।সদর দরজার কাছে এসে পাখিকে চোখে পড়ে শানের। ফোনটা কানে রেখেই বলে,”এখানে কি?ভিতরে যাও”
পাখি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় শান।বুঝতে পারছে না বিয়ে কাল অথচ আজ এতো সকালে এসব করছে শান!
ফিরে এসে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কপোট ধমকে বলে,”এখানে দাঁড়িয়ে ওনাদের দেখে কি চক্ষু শীতল করা হচ্ছে?”

আগত লোকদের ইশারা করে শান।পাখি অবাক হয়ে যায় শানের এমন তেড়ছা কথায়।রাগ দেখিয়ে হনহন করে রান্নাঘরে চলে যায়।শান সেদিকে চেয়ে মুচকি হেসে আবারও লোকগুলোকে তাড়া দেয়।
“তাড়াতাড়ি হাত চালাও, সময় কম”

রান্নাঘর থেকে মাথা বের করে বার বার ড্রয়িং রুমে দেখছে পাখি।একটু পর বুঝতে পারে লোকগুলো বাড়ি সাজাতেই এসেছে।একে একে বাড়ির প্রতিটা দেয়াল, সিঁড়ি সব তাজা ফুলে ভরে ওঠে।চোখ বন্ধ করে প্রান ভরে ফুলের সুবাস নেয় পাখি। কিছুক্ষন পর বাহিরে তাকাতেই শানের সাথে ধাক্কা লাগে।কখন এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারে নি।একটু সরতেই হাত চেপে ধরে শান।

“আমায় খুঁজছিলে বুঝি!”
“বয়ে গেছে”
“সত্যি!”
“একদম”,বলেই পাখি রান্নায় মনোযোগ দেয়।পিছন থেকে দুটো শক্ত হাত পেটের কাছে অনুভব করে।শিউরে ওঠে সাড়া শরীর।কেমন অস্বস্তি হচ্ছে পাখির।নিঃশ্বাস টা আটকে আটকে আসছে যেন।শানকে সরাতে চেয়েও পারছে না।কাঁধের উপর থুতনিটা আলতো করে রেখে শান বলে,”খারাপ লাগছে?”

কি উত্তর দেয়া উচিত পাখির জানা নেই।তবে এটুকু বুঝেছে এখন শান না ছাড়লে দম আটকে মরে যাবে সে।স্পর্শের গতি আরো গাঢ় হতেই পাখি সরে যায়।
লজ্জায় নজর এদিক সেদিক করে বলে,”কি হচ্ছে এগুলো?কেউ দেখে ফেলবে”
“বাড়ির কেউ ওঠে নি এখনও।আর বাহিরের কারো সাহস হবে না তোমার ধারে কাছে আসার। তাই কারো দেখার…… ”

“একদম না,এগোবেন না একদম”,শানকে থামিয়ে বলে পাখি।গরম খুন্তিটা উচু করে ধরে বলে,”এএতো বেহায়া কেন আপনি!আগে তো এমন ছিলেন না?”
শান হেসে ফেলে পাখির অবস্থা দেখে। একহাত কোমড়ে আরেক হাতে কপাল স্লাইড করতে করতে বলে, “তোমার কি মনে হয় আমি আগে ভালো ছিলাম?”
“মানে?”,ভ্রুকুচকে প্রশ্ন করে পাখি।

শান হাত বাড়িয়ে নিজের কাছে এনে আবার জড়িয়ে নেয় পিছন থেকে।কাঁধে মুখ ঠেকিয়ে বলে,”তোমার কপাল,কপোল,কাঁধ এসবকে জিজ্ঞেসা করে দেখো তো এরা আমার স্পর্শ চেনে কিনা!”
চোখ কপালে উঠে যায় পাখির।ভাবতেও পারছে না শান এতোদূর!
“আপনি কবে কবে এসব করেছেন?”

“তা তোমার না জানলেও চলবে।”,বলেই কাঁধে ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ দেয় শান।হাতের খুন্তি পরে যায় পাখির।মেঝেতে সেটার ঝনঝন আওয়াজ উঠতেই শান ঠোঁট প্রসস্ত করে হেসে বলে,”ঘুমালে তো আর মানুষ থাকো না”
খুন্তি টা তুলে হাতে ধরাতে ধরাতে বলে,”ঘরে মেহেদীর ড্রেস রাখা আছে।পরে নিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আসো। মেহেদি ফাংশন শেষ করো।”
হেসে উল্টো পথে পা বাড়াতেই পাখি ডাকে।
“শুনুন”
“কী”

“বললেন না তো! কবে কবে……. “,মিনমিন করে বলে পাখি।
আরেকটু এগিয়ে এসে শান বলে,”কাল রাতে বলব।তৈরী থেকো”
শানের যাওয়ার দিকে হা করে চেয়ে থাকে পাখি।তার মাথায় খেলছে না এসব তিনি কবে করেছেন।কপাল চাপড়ে নিজের ঘুমকে দোষারোপ করছেন বার বার।
হঠাৎ মাথায় হলো মেহেদীর ড্রেসের কথা।
“তারমানে উনি এসবেরও আয়োজন করেছেন!”

অবাক হয়ে ভাবতে থাকে পাখি।একটু পরে বাড়িতে আসে রাখি।পাখির কথামতো আগের দিনই বেশ তাড়াতাড়ি চলে আসে সে।
সবাই সকালের নাস্তা সেড়ে সবে মাত্র উঠতে যাবে তখন আগমন ঘটে দুজন মেয়ের।শানকে দেখে সালাম দিলেন। মুচকি হেসে শান পাখির দিকে ইশারা করলেন।মানে বুঝিয়ে দিলেন উনিই ব্রাইড।
পাখি ভ্রুকুচকে সেদিকে চেয়ে আছে।মেয়েদুটো স্বভাবসুলভ হাসি ঠোঁটে রেখে বলেন,”ম্যাম এবার কি মেহেদীর কাজ শুরু করব!”

আরেক দফা অবাক হয়ে যায় সে।ভাবতেও পারছে না শান পার্লার থেকে মেহেদীর জন্যে লোক আনিয়েছেন।হা করে চেয়ে থাকে শানের দিকে।মুচকি হেসে শান অনত্র চলে যায়।
হাতের সবকাজ মিটিয়ে ইনায়াহ্,রাখি, রাহেলা বসে পরে ড্রয়িং রুমে মেহেদী দেবে বলে।একটু পরেই পাখি শানের দেয়া পাতার রঙ্গের সবুজ ড্রেস টা পরে নিচে আসে।মাথার লম্বা চুলোগুলো বেশ সুন্দর করে বিনুনি করে একপাশে রাখা।শান মুগ্ধ চোখে সেদিকে চেয়ে থাকে।পাখির মাঝে অন্যরকম সৌন্দর্য খুঁজে পায় শান।শুনেছে বিয়ের রঙ্গে নাকি মেয়েরা রঙ্গিন হলে সৌন্দর্য দ্বিগুন বেড়ে যায়। হয়ত পাখিরও তাই চোখ সরানো দায় হয়ে পরে শানের।

একজন মেয়ে খুব নিখুঁতভাবে পাখির হাত সাজিয়ে দিচ্ছে।শান একবার আড় চোখে সেদিকে তাকিয়ে দেখে আবার নিজের কাজে মন দেয়।রাখি ব্যপারটা বুঝতে পারে। উঠে শানের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।গলায় খাঁকারি দিয়ে বলে,”বউকে এভাবে দেখতে হয় না।বীর পুরুষের মতো সিনা টা করে সামনে বসে দেখতে হয়”
রাখির কথায় হেসে ফেলে শান।ওর হাত ধরে পাখির পাশে নিয়ে বসায় রাখি।এরপর পার্লারের মেয়েটাকে বলে, “দিন তো হাতের মাঝে ইংরেজিতে শান লিখে দেন তো বড় করে। বেচারা আড়চোখে তাকিয়ে কূল পাচ্ছে না”

শান লজ্জায় পরে যায় এবার।লজ্জায় মিইয়ে যায় পাখিও।মেয়েটা কথামতো ডান হাতের তালুর মাঝে শান লিখে দেয়।শানের সেখানে থাকাটা কেমন অস্বস্তি লাগছে কারণ রাখি থেকে থেকে এটা সেটা নিয়ে ওর সাথে মজা করছে।আবার পাখির পাশে থাকতে খুব ভালোই লাগছে তার।
মেহেদীর ফাংশন শেষ করে পার্লারের মেয়েদুটো চলে যায়।শান রাখিকে উদ্দেশ্য করে বলে, “আর কি যেন সব রিচুয়াল আছে?আমি তো জানি না আসলে….”.

“উমমম,হলুদ! হলুদ হবে না?”,কিছুক্ষন বিজ্ঞের মতো ভেবে জবাব দেয় রাখি।পাখি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলে,”এতোসবের কি দরকার? ”
“কেন, ডিরেক্ট ঘরে যেতে ইচ্ছে করছে বুঝি”,রাখির ফিসফিসিয়ে বলা কথাটা পাখির কান গরম করে দেয়।তাকিয়ে দেখে শান শুনল কিনা!
মাথা তুলে তাকাতেই শান বাম চোখে টিপ মেরে রাখিকে ইশারা করে।যার মানে রাখির কথা সে শুনেছে।

সময়ের সাথে মেহেদির রংটাও গাঢ় হয়ে ওঠে।বার বার উল্টে পাল্টে হাতদুটো দেখে পাখি।আশপাশ চোখ বুলিয়ে কাউকে পাশে না পেয়ে শানের নাম লেখা জায়গাটায় চুমু এঁকে দেয়।দরজার আড়াল থেকে সেটা শানের দেখতে অসুবিধা হয় না।দরজা পুরোটা খুলে ভিতরে ঢোকে।গলায় একটু কাশির শব্দ করে নিজের উপস্থিতি জানান দিতেই পাখি নড়েচড়ে বসে।
“এভাবে চুমু না খেয়ে ডিরেক্ট বললেই তো হয় যে….”
“এই না না না, থামুন বলছি”,দুহাতে কান চেপে চোখ মুখ কুচকে বলে পাখি।

“এটা হলুদের শাড়ি।পরে তবেই নিচে আসবে।না পড়লে খবর আছে”,বলেই প্যাকেট টা পাখির হাতে ধরিয়ে বাহিরে চলে যায় শান।পাখি একের পর এক অবাক হচ্ছে শানের আচরনে।প্রতিটা মেয়েরই স্বপ্ন থাকে বিয়েতে অনেকটা অানন্দ করার।পাখিরও ব্যতিক্রম ছিলো না।বিয়েটা ওভাবে হওয়াতে সব আশা, সব স্বপ্ন যেন ধূলিসাৎ হয়ে যায়।যা এখন জীবন্ত করছে শান।

বিকেল হতেই পাখি রাখির সহযোগীতায় এবার বেশ ভালো করেই হলুদের শাড়িটা পড়ে নেয়।পরিবারের কয়জন আর রাখি মিলে শুরু হয় পাখির হলুদের আয়োজন।শানকে হলুদ লাগাতে চাইলে সে নাকোচ করে দেয়।এও বলে দেয়, “এ আয়োজন শুধু আমার পাখির জন্যেই”
শানের আচরনে উপস্থিত সবাই আত্মতৃপ্ত হয়।ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি খেলে যায়।একে একে সবাই পাখিকে হলুদ ছুঁইয়ে মিষ্টি মুখ করিয়ে দেয়।

“ম্যাডাম!”,রাহেলার কন্ঠে কথাটা কানে আসতেই শান স্তম্ভিত হয়ে যায়।ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে বিপরীত মুখে।ভদ্র মহিলা মুচকি হেসে পাখির দিকে এগিয়ে আসে। শান উত্তেজিত হয়ে পরে এক মূহূর্তেই।একপ্রকার গর্জন করে ওঠে,”উনাকে কে ডেকেছে এখানে?”
ভয়ে কেপে ওঠে আহমেদ ম্যানশন।রাহেলার দিকে শানের নজর ফিরতেই কটমটে চোখে তাকিয়ে শান বলে,”এমন ঔদ্ধত্য দেখাবে না চাচি।”,

পাখির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”তোমায় বলেছিলাম না একজন নারীর কথা।যিনি সংসার রেখে, সন্তান রেখে নিজের সুখের আশায় চলে গেছে।সে আর কেউ না। ইনি”
স্বগতোক্তি করে বলে,”ইনি হচ্ছেন সেই শর্মিলা আহমেদ।ওপস,শর্মিলা খান।
শানের অপমানে জর্জরিত শর্মিলার চোখ মুখ।তবুও কোথাও যেন নিজেকে ঠিক রেখেছেন। হয়ত সকলের সামনে কেঁদে ফেলাটা বেমানান, তাই নিজেকে শক্ত খোলসে ঢেকে রেখেছেন।
শানের কথার কোন প্রতিউত্তর না করে শর্মিলা এগিয়ে যায় পাখির দিকে।পাখি হতভম্বের ন্যায় চেয়ে দেখছে আগত শানের মুখে শোনা তার মাকে।

কি সুন্দর মুখের শ্রী।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা।তার পুরো গঠনেই যেন আভিজাত্য জানান দিচ্ছে আপন আপন মহিমায়।শানের মুখে শোনা কথাগুলোর সাথে এই মানুষটার এক রত্বিও মেলবন্ধন খুঁজে পায় না পাখি।সেদিনও নান;আজও না।চেয়ে থাকে ফ্যালফ্যাল করে। মনে মনে ভাবে,”আমার তো তাকে ঘৃনা করা উচিত।কিন্তু কেন জানি না তাকে আমার বেশ ভালো লাগছে।চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে মুখটা দেখে। তার সাহচর্য খুব ভালো লাগছে।

পাখির গায়ে হলুদ ছোঁয়াতেই সম্বিৎ ফেরে পাখির।শর্মিলা পাখির সারা মুখে হাত বুলিয়ে চুমু খেয়ে বললেন,”বেঁচে থাকো মা।অনেক সুখী হও জীবনে।পারলে আমার খালি বুকটা আবার ভরে দিও”
পাখি বেশ ভালোভাবে খেয়াল করে শেষের কথাটা বলতে কন্ঠে একটা তীব্র আকুলতা ছিলো।আর চোখের কোণে চিকচিকে জল।এরপর তিনি ঠিক যেভাবে এসেছিলেন সেভাবেই নীরবে চলে গেলেন।রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন।

মাঝেমাঝেই শর্মিলা এ বাড়িতে আসেন বা শানের কেবিনে যান।কিন্তু শান কখনোই তার দিকে ফিরেও তাকায় না।আর যেদিস তিনি আসেন পুরোটা দিন মন খারাপ থাকে শানের।আজও তার ব্যতিক্রম হয় না।বিকেলের পর থেকে অন্যরকম ছটফটানি দেখা যায় শানের মাঝে।হলুদের ফাংশনের পর ইনায়াহ্ রাখি মিলে অনেক নাচ গান করে।এখন ওরা ভীষণ ক্লান্ত।সোফায় শুয়ে,বসে টিভি দেখছে।আর রাহেলা রাতের রান্নার কাজে ব্যস্ত।

পাখি শানের মনের অবস্থা ধরে ফেলে।ফ্রেশ হয়ে শানের ঘরের দিকে চলে যায়।চোখ বুলিয়ে কোথাও খুঁজে পায় না।বেলকোনিতে গিয়েও চোখ ব্যর্থ হয় শানকে খুঁজতে।দরজার কাছে পা রাখতেই সিগারেটের কড়া গন্ধে নাক কুচকে আসে পাখির।নাক টেনে ভালো ভাবে দুবার বোঝার চেষ্টা করে গন্ধটা এতো কড়া কেন।মনে হচ্ছে আশেপাশেই কোথাও!কিন্তু বুঝতে পারে না এ বাড়িতে ছেলে মানুষ বলতে আব্দুল্লাহ্ চাচা আর শান।তারা কেউই সিগারেট খায় না তাহলে?

বাতাসের সাথে গন্ধের দিক অনুসরন করে এগিয়ে যায় পাখি। দরজা ঠেলে পা রাখে ছাদে।আবার নাক টেনে বুঝতে পারে খুবই কাছে গন্ধটা।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে কেউ একজন ছাদের রেলিং এ এক পা তুলে স্টোর রুমটার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে খুব আয়েশ করে সিগারেট টানছে।
পাখি অবাক হয়ে যায়।চাঁদের ক্ষীন আলো আজ।সে আলোয় মুখটা অস্পষ্ট।বুকে সাহস সঞ্চার করে এগিয়ে গিয়ে লাইটের সুইচটা অন করতেই চোখ মুখ কুচকে ফেলে শান।পাখিকে দেখে খুব দ্রুত সিগারেটটা ফেলে দেয়।

“আপনি সিগারেট খান!”,অবাক হয়ে প্রশ্ন করে পাখি।চোর ধরা পরার মতো অবস্থা যেন শানের।আমতা আমতা করে বলে,”ককই ননাতো”
পাখি হনহন করে এগিয়ে গিয়ে কলার চেপে মুখের গন্ধ শুঁকে বলে, “ছিঃআপনি সিগারেট খান ভাবতেও পারছি না।তাও একজন ডাক্তার হয়ে ”
“বাদ দাও এসব,দেখি মেহেদী কেমন রং হলো?”,বলেই পাখিকে নিজের একদম কাছে টেনে আনে শান।
শানের বুকে দুহাত ঠেলে মাথাটা পিছনে পিছিয়ে পাখি বলে, “সরুন।ছাড়ুন আমায়।ছিঃ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে”

শান ফট করে ছেড়ে দেয় পাখিকে।
“কথা বলবেন না আমার সাথে।কাছেও ঘেঁষবেন না একদম”,কাঠকাঠ গলায় অভিমানি সুরে বলে পাখি।
শান অপ্রতিভ হয়ে বলে,”নিয়মিত খাই না; ডিপ্রেশনে”
“জানতে চাই না”
শানকে ছাদে রেখে নিচে চলে আসে পাখি।মনটা বেজায় খারাপ হয় তার।সিগারেটখোর মানুষ পাখির একদম সহ্য হয় না।আর সেই কিনা!

সকালের আলো ফোটার সাথে সাথে বাড়িতে মানুষের সমাগম বেড়ে যায়।আজ এতো বড় আয়োজন বলে কথা।মেহমানদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয় শহরের বেশ নামকরা হোটেল থেকে।আব্দুল্লাহ্ও এটা সেটা কাজে ভীষণ ব্যস্ত।
কাজের মাঝে সময়গুলো খুব দ্রুত কেটে যায়।
সকাল থেকে একবারো দেখা হয় নি পাখির সাথে।পার্লার থেকে লোক আনিয়েছে শান।তারা ঘন্টা দুয়েক ধরে সাজাচ্ছে পাখিকে।আর এসময় ও ঘরে যাওয়া মানে কেলেঙ্কারি।এদিকে মনটাও খুব ছটফট করছে একবার পাখিকে দেখতে।

দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে নিচে কাজ বুঝিয়ে শান চলে যায় পাখির ঘরে।দরজায় দুটো নক করতে দরজা খোলে একটা মেয়ে।হয়ত পাখির স্কুলের কলিগ হবে।শানকে দেখে মুচকি হেসে বলে,”কি চাই?”
“পাপাখি আছে?”
“থাকবে না মানে? অবশ্যই আছে।তবে এখন তো দেখা হচ্ছে না মিস্টার।আর এতো তাড়া কিসের রে ভাই?”
শান অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।মেয়েটার কথায় ঘরের সব মেয়েরা হেসে ওঠে।পাখি দরজার দিকে একবার তাকাতে কেমন যেন খুব মায়া অনুভব হলো।উঠে আসতেই কেউ একজন পিছন থেকে টেনে বসিয়ে বললো,”আর একটা ঘন্টা মাত্র”

ঠোঁটের ডগায় বিড়বিড় করে পাখি,”এক ঘন্টা, তাও মাত্র!”
“আচ্ছা বাকিটা পরে করছি, উনার কিছু লাগবে মনে হয়। আমায় যেতে হবে”
বলেই ভীড় ঠেলে দরজায় আসে পাখি।শান তখন প্রস্তুতি নেয় পিছন ফিরে চলে যাওয়ার।পাখির কন্ঠে থমকে দাঁড়ায়।
“কিছু লাগবে?”,অভিমানী কন্ঠে প্রশ্ন পাখির।শান অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে, “একটু কথা ছিলো।আমার রুমে এসো”

পাখি শানের কথামতো সেদিকে যেতেই হৈহৈ করে ওঠে মেয়েগুলো,”আরে রাতে তো পাচ্ছোই দেখা”
পাখি কর্ণপাত করেনা সেদিকে।সে জানে নিশ্চই কোন দরকার আছে।ঘরে ঢুকতেই শান মাথা নিচু করে বলে,”সরি”
“কেন?”
“আর হবে না”
“লাগবে না। চলছে যখন, চলুক না!”
“বললাম তো”
“মুখ দেখি?”,প্রশ্ন করে পাখি।শান মুখটা তুললেও চোখ খোলে না।জোড় করে চোখ খোলায় পাখি।
“লাল কেন?,ঘুমোন নি রাত?”
“আসে নি”

“সিগারেট কম পরেছিলো বুঝি!”,কটাক্ষ করে বলে পাখি।
শান স্থীর হয়ে এবার তাকায় পাখির দিকে।তার পছন্দের মেরুন রঙ্গের শাড়িটা পড়েছে পাখি।সাজ এখনো বাকি দেখেই বুঝা যায়। অপলক চোখে চেয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,”অপূর্ব!”
মুখ ফিরিয়ে নেয় পাখি।শান অতর্কিত পাখিকে দুহাতে জড়িয়ে বলে,”আমি মা কে খুব ভালোবাসি পাখি।কিন্তু তার থেকে ঘৃনা করি বেশি।তাই কাল ডিপ্রেসড ছিলাম।সিগারেটের নেশা উঠে যায়।বিশ্বাস করো নিয়মিত খাই না।তোমার চোখের আড়াল হতে ছাদকে বেছে নেই।আর কখনো খাবো না, বললাম।তবু রাগ করে থেকো না।আমায় ছেড়ে যেও না”

শানের কথাগুলো কলিজা এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছে যেন।কতো টা ভালোবাসলে এভাবে ভালোবাসা যায় পাখির জানা নেই।কিছুক্ষন ওভাবে থাকতেই দরজায় নক পরে।শান নাক টেনে সরে আসে পাখির থেকে।
“যাও রেডি হয়ে নাও”
“আপনি কখন আসবেন?”
“রেডি হয়ে আসছি”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৮

বেলা বাড়তে বাড়তে আত্মীয়-স্বজনে ড্রয়িংরুম গিজগিজ করছে।শান পাখি বসে আছে পাশাপাশি রাখা দুটো সুন্দর নকশা করা চেয়ারে।সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে।আর শান বার বার আড়চোখে তাকাচ্ছে পাখির দিকে।পাখি সেটা খেয়াল হতেই মুচকি হেসে ওঠে।শান হাতটা চেপে ধরে চাপাস্বরে বলে,”এনাউন্সমেন্ট হয়ে গেলেই আমি তোমায় ঘরে দিয়ে আসব”
“কেন?”
“এখানে হাজার লোকের হাজার নজর।”
“জ্বলছে?”,বলেই ঠোঁট টিপে হাসে পাখি।

কিছুক্ষন পর খাওয়াদাওয়া শেষে সকলের উদ্দেশ্যে শান বিয়ের কথাটা এনাউন্স করে দেয়।পাখির অন্তরাত্মা খুশিতে কেঁপে ওঠে যেন।কান যেন অধীর আগ্রহে বসে ছিলো একটা নামবিহীন সম্পর্কের নতুন আর স্থায়ী নামকরন শোনার জন্যে।অনেকেই খুশি হয় অনেকেই মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে,”বিয়ে ছাড়াই এতোদিন থেকে এখন লোক দেখানো বিয়ে।কতোদিন যে সংসার চলবে জানা আছে”

রিনি ভিতর ভিতর দংশিত হচ্ছে বারংবার।নিজের সাথে পাখিকে মেলাচ্ছে।খুব কষ্ট হচ্ছে তার অথচ প্রকাশ করার জায়গা মিলছে না।এভাবে কতোক্ষন!
সন্তর্পনে চলে যায় সে।

শান রাখিকে চোখের ইশারা করে পাখিকে নিয়ে যেতে।পাখি যাবে না বলে জিদ ধরেছে।কারণ উপস্থিত নাবিদ চারদিকে থেকে পাখিকে দেখছে আর হাসছে। যেটা শানের গায়ে জ্বালা ধরাচ্ছে যেন।আর এ দৃশ্য ঠোঁট টিপে হেসে উপভোগ করছে পাখি।এক পর্যায়ে শান ওকে হাত টেনে উপরে নিয়ে যায়।ঘরে বসিয়ে বলে,”সব খুলে ফেলো।সাজতে হবে না তোমার।সাজার হলে রাতের জন্যে সাজো;আমার জন্যে”
থমথমে মুখে বলে চলে যায় শান।পাখি সেদিকে চেয়ে শব্দ করে হেসে দিয়ে বিড়বিড় করে,”আপনাকে খেপাতে আমার ভালো লাগে ”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩০