আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩২

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩২
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

দোতলা বিশিষ্ট সুন্দর ছিমছাম নীল রঙ্গের একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে পাখি।বাম হাতে ইনায়াহ্’র হাত শক্ত করে ধরে রাখা।অগণিত প্রশ্নের উত্তর জানার কৌতূহল,কিছুটা নতুন অভিজ্ঞতার পূর্বাভাস কিংবা বড় কোন লুকানো রহস্য জানার আগ্রহ, নানা ধরনের অনুভূতির সংমিশ্রনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে পাখি।রাফিকে বিদায় জানিয়েছে দশ মিনিট আগে।ভিতরে এক পা রাখার সাহস যোগাতে দুই পা পিছিয়ে আসতে হচ্ছে।রাফি পইপই করে বলে গেছে এতোবড় কাজটা না করতে। কিন্তু শোনে নি পাখি।শুনবেই বা কী করে, ভালোবাসার মানুষের কষ্ট কেউই সহ্য করতে পারে না আর সেখানে এতো বড় যন্ত্রনা।

“মুন সাইন”,হাত ধরে নিজের দিকে টানে ইনায়াহ্।সম্বিৎ ফিরে পাখি চেয়ে থাকে ইনায়াহ্’র দিকে।একটু ঝাঁকিয়ে বলে,”তুমি ভিতরে কেন যাচ্ছো না,চলো না!এটাতো দিদার বাড়ি।তুমি জানো আমার দিদা, বেষ্ট দিদা!আমায় কত্তো আদোর করে।আর দাদু তো সারাদিন আমায় কত্তো ভালোবাসে।”
ইনায়াহ্’র কথায় ভাবনায় পরে যায় পাখি,”ডাক্তার সাহেবের কাছে এতোটা খারাপ তিনি, অথচ বাকি সবাই বলে তার গুনের শেষ নেই।এর কারণ তো কিছু একটা আছেই।আমায় জানতেই হবে।আমার ডাক্তারকে আমি আর কষ্ট পেতে দেবো না”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভেবেই ইনায়াহ্’র হাত ধরে বুকে সাহস সঞ্চার করে বাড়ির ভিতরের দিকে পা রাখে পাখি।
সকাল বেলা পাখির প্রশ্নের কাটকাট জবাব দিয়েছে রাহেলা,”আমাদের শানবাবা তোমায় যা বলেছে সব ভুল বলেছে।ম্যাডামের মতো মানুষ এ জগতে দ্বিতীয় জন আছে বলে মনে হয় না।এর থেকে বেশি কিছু তোমায় বলতে পারব না।বাকিটা জেনে নেয়ার দায়িত্ব তোমার। আর শানবাবাকে এই ভুল থেকে বের করে আনার দায়িত্বও তোমার মা”

“চাচি, আমায় সবটা জানতে হবে।দয়া করে বলুন প্লিজ”,অনুনয়ের স্বরে বলে পাখি।
রাহেলা সবজি কাটতে কাটতে বলে,”মাগো,সবার কিছু না কিছু দায়িত্ব থাকে। যেটা নিজেকেই সঠিকভাবে পালন করতে হয়।আমার দায়িত্ব এটুকুই যে তোমাকে তোমার প্রশ্নের উত্তরের রাস্তা অবধি দেখানো। বাকিটা যে তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে।এর অবশ্যই কারণ আছে।আমি সবটা উত্তর জানালে তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না।শুধু এটুকু বলি, রাফি তোমায় ঐ বাড়ি অবধি পোঁছে দেবে”
পাখি আর মোটেও কালক্ষেপণ করতে চায় নি।তাই তো স্কুল ছুটি হওয়ার সাথে সাথেই চলে আসে শর্মিলা বেগমের বাড়ি।এ পথ যে অনেকটা কন্টকময় তা আর পাখির অজানা নয়।

“দাদুভাই”,উচ্ছ্বসিত কন্ঠে ডাকে ইনায়াহ্।
ভর দুপুরের ভ্যাপসা গরমে কোথাও বের হওয়ার জো নেই। তাই ঘরে বসে বসেই এসির ঠান্ডা হাওয়াকে প্রাধান্য দেন খান সাহেব।সামনে তার চল্লিশ ইঞ্চির বোকাবাক্সটা অনর্গল বকবক করেই চলছে।ষাটোর্ধ খান সাহেব একসময় নিযুক্ত ছিলেন আর্মির অফিসার পদে।রিটায়ার্ড হওয়ার পর এখন ঘর বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে।তবুও কোথাও বয়সের বিন্দুমাত্র রেশ তার শরীরকে ছুঁতে পারে নি।এখনো আর পাঁচটা নওজোয়ান তার কাছে ডাল-ভাত।

ইনায়াহ্’র কন্ঠে চমকিত হয়ে মাথা ঘুরিয়ে নেন খান সাহেব। মরুর আকাশে এক পশলা বৃষ্টির মতো হাসি ফুটে ওঠে তার চোখে মুখে।নিমিশেই সব বিরক্তি ছুটে যায়।ঠোঁট প্রশস্ত করে দু হাত বাড়িয়ে দেয়।ইনায়াহ্ পাখির থেকে দৌঁড়ে ছুটে যায়।
এদিকে দুপুরের রান্নার কাজে ব্যস্ত শর্মিলার কানে যেন ইনায়াহ্’র গলার স্বর এক আকাশ পরিমান খুশি বয়ে আনে।খুন্তি হাতেই হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে আসেন।পিছন পিছন চলে আসে রানু;আব্দুল্লাহ্ আর রাহেলার মেয়ে।খান সাহেব যখন কর্মরত ছিলেন তখন শর্মিলা নিজের একাকিত্বের সঙ্গী হিসেবে সন্তানের দূঃখ ভুলতে রানুকে নিজের কাছে রাখেন।

ইনায়াহ্’র দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে সদর দরজার কাছে চোখ রাখেন শর্মিলা।এক জোরা উৎসুক চোখ চেয়ে দেখছে তাদের মিলন মেলা।এগিয়ে আসে পাখির দিকে।শর্মিলা বেগম বুঝতে পারেন না এই মূহূর্তে তার কী অভিব্যক্তি প্রকাশ করা উচিত।আগা-গোড়া পরোখ করে তিনি দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন।
“আস্সালামু আলাইকুম মা”

শান্ত কিন্তু ধারালো একটা কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসে শর্মিলার।শেষের সম্বোধনটা যেন বুকের বাঁ পাশে কোথাও নতুন করে চিনচিনে ব্যথার পাল তুলে দেয়।কয়েক মূহূর্ত তিনি চোখের পাতা দুটোকে বিশ্রাম দেন।খুব ধীরে চোখ খুলে স্পষ্ট স্বরে বলে ওঠেন,”মা!কতো পরিচিত অথচ কতোখানি আকুল তোমার ডাক।কি কপাল আমার, ছেলের কন্ঠে মা ডাক শোনার জন্যে হাহাকার করে বুক, অথচ ছেলের বউ এসে…… ”

“বড় মা, ভাবিকে এভাবেই দাঁড় করিয়ে রাখবা?”,রানুর কথায় কন্ঠে ভাঁটা পরে শর্মিলার।খুন্তিটা রানুর হাতে দিয়ে চোখের কোণাদুটো সাবধানে মুছে নেন। স্থীর দৃষ্টিতে চেয়ে বলেন, “ভিতরে আসো”
ভিতরে প্রবেশ করেই খান সাহেবকে সালাম জানায় পাখি।জবাব জানিয়ে ভ্রুদ্বয়ে সামান্য ভাঁজ ফেলে শর্মিলার দিকে তাকায় তিনি।শর্মিলা চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে বলেন,”বউ মা”
চকিতে তাকিয়ে থাকে পাখি।যেন ডাকটা তার মুখের জন্যেই আল্লাহ্ তৈরী করেছেন।পাখিকে অবাক বিষ্ময়ে কিছুক্ষন আগা-গোড়া দেখে খান সাহেব হন্তদন্ত হয়ে বলেন,”আসো মা আসো, বসো বসো”

“এই রানু বউ মা প্রথমবার আসলো আমাদের বাড়ি।দাঁড়িয়ে দেখছিস কি। যা মিষ্টি নিয়ে আয় দৌঁড়া”
“এখুনি আনছি বাবা”
নিজের জন্যে এতো উৎকন্ঠা দেখে বেশ অবাক হয় পাখি। পুলকিত হয়ে বাড়োন করে, “আমায় নিয়ে এতোটা ব্যস্ত হবেন না।আমার খুব অস্বস্তি লাগছে”
বেশ বিব্রতকর অবস্থা পাখির চোখেমুখে।যা নজড় এড়ায় না শর্মিলা।
“বাসায় বলে এসেছো?”

“না মানে,মানে…..আমি স্কুল থেকে আরকি….”,রিনরিনে স্বরে অর্ধ্বকথায় থেমে যায় পাখি।
“স্বামীর বিনা অনুমতিতে এভাবে আসা ঠিক হয় নি। এ বাড়ির কথা শুনলে তোমার সাথে অনেক ঝামেলা হতে পারে”,স্থীর দৃষ্টিতে চোখ মেলে কথাগুলো বলেন শর্মিলা।
কাচুমাচু করে পাখি জবাব দেয়,”আমার কিছু কথা ছিলো মা।যেগুলো জানা আমার খুব জরুরী।”
“তুমি রেস্ট করো।এসেছো,দুপুরে খেয়ে যেও।”
“মা প্লিজ”,অনুনয়ের স্বরে বলে পাখি।

থমকে যায় শর্মিলা।খান সাহেবের দিকে তাকাতেই তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইনায়াহ্’র হাত ধরে উপরে চলে যায়।রানুও চলে যায় রান্নাঘরে।
পাখি চট করে শর্মিলার দুই হাত ধরে বলে,”আপনার ছেলে আপনাকে অনেক ভালোবাসে মা।কিন্তু কোন একটা কারণে তিনি আপনাকে মানতে পারছে না।কী সে কারণ মা। আমায় বলুন ।তার এই চাপা কষ্ট আমার সহ্য হয় না”

ছেলের মনের কথা তিনি বোঝেন।তবুও আজ পাখির মুখে শুনে মনের মাঝে হাহাকার টা বেড়ে যায় দ্বিগুন।
“শান তো তোমায় সবটা বলেই দিয়েছে মা, তাহলে?”
“আমার মনে হয় উনার কোথাও ভুল হয়েছে মা;উনার জানার মাঝে ভুল আছে।আমি সঠিক টা জানাতে চাই উনাকে”

মুচকি হেসে ওঠে শর্মিলা।মূহূর্তেই সে হাসি মিলিয়ে যায় ঠোঁটের কোণে।তাকাতেই চোখ আটকে যায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শানের দিকে।শান এক দৃষ্টে আগুন চোখে তাকিয়ে থাকে পাখির দিকে।পাখি শর্মিলার দৃষ্টি অনুসরন করে দরজার দিকে তাকাতেই বুকে “ধ্বক” করে ওঠে। দুটো শুকনো ঢোক গিলে সন্তোর্পনে দাঁড়ায়। এগিয়ে যায় শানের দিকে।কটমটে দৃষ্টিতে শান নজড় ফেলে শর্মিলার দিকে।
এই প্রথম এ বাড়ির চৌকাঠে পা রেখেছে শান।চোখ ভরা জল নিয়ে শর্মিলা চেয়ে থাকে ছেলের দিকে। দৃষ্টি উপেক্ষা করে পাখির হাত চেপে ধরে শান।টেনে নিয়ে আসে দরজার দিকে।কি ভেবে থেমে যায় সে।
“ইনায়াহ্”,জোড়ে চিৎকার করে ইনায়াহ্’কে ডাকে।কেঁপে ওঠে পুরো বাড়ি।অন্তরাত্মা সমেত কেঁপে ওঠে পাখি।

“ইনায়াহ্ এখানে থাকুক না আজ “,শ্বান্তকন্ঠের অনুরোধ শর্মিলার।
বজ্রকন্ঠে জবাব দেয়,”ইনায়াহ্’কে দেখে রাখার মতো ক্ষমতা আছে আমার”
শানের কর্কশ গলার স্বরে উপর থেকে খান সাহেবের হাত ধরে নেমে আসে ইনায়াহ্। ড্রেস ছাড়িয়ে নরমাল ড্রেসে সে।ফ্রেশও হয়ে গেছে কিছুক্ষন আগেই।তা ইনায়াহ্’র চোখ মুখে পানির ফোটা দেখেই বোঝা যায়।শান একবার খান সাহেবের দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ডাকে ইনায়াহ্’কে।
“ইনায়াহ্ চলে আসো,রাইট নাউ”

“আমি দিদার কাছে থাকব আজ”,সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে নামতে নামতে বলে ইনায়াহ্।
শান অবাক হয়ে যায় ইনায়াহ্’র এমন আচরনে।শর্মিলাকে জড়িয়ে পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ও মুন সাইন, আমি আজ এখানে থাকি না প্লিজ”

ইনায়াহ্’র কথায় পাখি জিহ্বায় শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার পূর্বেই শান ওকে টেনে নিয়ে আসে বাড়ির বাহিরে।গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে বসতে বলে।অপর পাশে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে শান। ফুল স্পিডে গাড়ি চালিয়ে দেয় কোন কথা ছাড়াই।অবাক চোখে ভয়ে ভয়ে তাকায় পাখি।শানের রাগের কাছে কিছু বলার মতো সাহস তার হচ্ছে না।দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে আসে বাড়িতে।আবারও পাখিকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দরজা খুলে বের করে আনে ওকে।হাত চেপে ধরে উঠে যায় সোজা উপরে।রাহেলার বোঝার বাকি নেই পানি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে।আহত স্বরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে যান তিনি।

“কার সাহসে ও বাড়ি গেছো?”,শান্তস্বরে প্রশ্ন করে শান।
একবার শানের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নেয় পাখি।নখ খুঁটতে খুঁটতে বলে, “আমি, মানে….”
“বলো”,আবার প্রশ্ন করে শান।এতো শান্ত সে স্বর অথচ খুব ভয়ানক। ঝড়ের পূর্বাভাস যাকে বলে।
“স্কুল শেষে, গেছিলাম”, আমতাআমতা করে বলে পাখি।
“ও বাড়ি যাওয়ার আগে একটি বারও আমার কথা মনে হলো না তোমার?”,দাঁতে দাঁত পিষে রাগ দেখিয়ে বলে শান।

পাখি এগিয়ে শানকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে,”আপনি প্লিজ শান্ত হোন।আমরা তো ভালোভাবে বসে কথাগুলো বলতে…..”
“ভালোভাবে বসে!”,চোখ মুখ কুচকে বলে শান।স্বগতোক্তি করে বলে, “পাখি সামনে থেকে সরো।রাগের মাথায় কি করে বসব নিজেও জানি না।সরো”
মুখটা থমথমে করে পাখি জবাব দেয়,”মারবেন?”

থেমে যায় শান।মুখ থেকে যেন রাগের কালো মেঘটা সরে যায় পাখির এই একটি মাত্র কথাতে।একহাত টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে শান বলে,”আমি অনেক কিছু হারিয়েছি এ জীবনে।আর কিছু হারাতে পারব না।তোমাকে হারাবার কথা ভাবতেও পারি না।এক মূহূর্তের জন্যেও তোমাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতে পারি না আমি।তুমি আমার সেই আসক্তি যার নেশায় আমি আসক্ত।আমি চাই না তুমি ঐ মহিলার সাথে দ্বিতীয়বার সাক্ষাত করো”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে পাখিকে পাশে সরিয়ে রেখে চলে যায় শান।হতভম্ব হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে পাখি।

বিকেল গড়িয়ে যায় তবু শানের দেখা মেলে না।কয়েকবার ফোন করলে কেটে দিয়েছে শান।বুঝতে পারে পাখি, শান ভীষণ রেগে আছে।রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে কি করা উচিত ভাবতে থাকে।
সন্ধ্যেবেলা রান্নাঘরে রাহেলাকে এ টু জেট সব কথা বলেছে পাখি।এরপর থেকে ভীষণ চিন্তিত রাহেলা সাথে একরাশ হতাশা।

“শানবাবা কি কোনদিনও সত্যিগুলো জানতে পারবে না?”
শানের কাছে আবার ফোন করে পাখি।সোজাসুজি উত্তর দেয় , “দেরি হবে”
মুখ গোমড়া করে বসে থাকে পাখি।আচমকাই একটা অদ্ভুত বুদ্ধি মাথায় আসে।মূহূর্তেই লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। পরোক্ষনে ভাবতে থাকে, “আমারই তো”

কাবার্ড থেকে পাতলা ফিনফিনে জর্জেটের লাল শাড়িটা বের করে পাখি।বিয়েতে রাখি এটা সিক্রেইট গিফট হিসেবে দিয়েছিলো।ভাবতেই লজ্জার লাল আভা গালে ফুটে ওঠে।বেশ পরিপাটি করে সেট করে নেয় শরীরের সাথে।আয়নার সামনের টুলটা টেনে নিয়ে গাঢ় করে কাজল দেয় চোখে।লাল টকটকে রং টা ঠোঁটে রাঙ্গিয়ে নেয় গাঢ় করে।পাউট করে হেসে ফেলে মূহূর্তেই।লম্বা মসৃন চুল গুলো ছেড়ে দেয় পিঠের উপর।দাঁড়িয়ে পা থেকে মাথা অবধি দেখে নেয়।শব্দ করে হেসে ফেলে পাখি।

ঘরে কয়েক রঙ্গের মোম জ্বালিয়ে দেয় পাখি।এরপর লাইটটা অফ করে ঘড়ির দিকে তাকায়।
“এগারটা!এতোক্ষনে তো আসা কথা!”,ভাবতে ভাবতে জানলার কাছে এগিয়ে যায় পাখি।তখনি বাড়ির ভিতরে ঢোকে শানের গাড়ি।বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।তড়িঘড়ি করে নিজেকে আরেকবার দেখে নেয়.

মিনিট পাঁচেকের মাঝেই শান ঘরে ঢোকে।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে থ হয়ে যায়।নাকি আসে কড়া লেডিস পারফিউমের সুঘ্রাণ।চারিদিকে লাল নীল মোমের আলোয় জ্বলজ্বল করছে।একবার চোখ বুলিয়ে হাতের ফোন, গাড়ির চাবি, ওয়ালেট সবটা দরজা পাশের ওয়ারড্রবের উপরে রাখে।বিছানায় বসে মোজা জোড়া খুলতে খুলতে চারিদিকে আবার চোখ বুলিয়ে নেয়।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে ড্রেস নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।

পাখি বেলকোনি থেকে আড়চোখে সেসব দেখছে।কিছুক্ষন পর গোসল সেড়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয় শান।তড়িৎগতিতে পাখি সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।হাত থেকে তোয়ালে টা কেড়ে নিয়ে মাথা মুছে দেয়।শান চোখ মেলে তাকায় ওর দিকে।মাথা থেকে পা অবধি দেখে নজড় গিয়ে আটকে লাল রঙ্গের পুরু আস্তরনে আচ্ছাদিত ঠোঁটের উপর।পাখি সেদিকে আড়চোখে তাকিয়ে শানের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে।
শানের দৃষ্টি এবার থামে কোমড়ের কাছের উন্মুক্ত জায়গায়।ফট করে চোখ সরিয়ে চলে আসে শান।
ব্যপার টা মোটেও ভালো লাগল না পাখির।ঠোঁট উল্টিয়ে থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকে।শান চুল গুলো ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুলে ব্রাশ করতে করতে বলে,”ঠোঁটের ঐ রং সরাও।কি বিশ্রী দেখাচ্ছে!আর এতো সিডিউস করার দরকার নাই”

পাখি চমকে তাকায় শানের দিকে।নজর এদিক সেদিক করে পাখি অন্যত্র চলে যেতেই হাত টেনে ধরে শান।
খুব ধীরে টেনে আনে নিজের কাছে।একহাতে কোমড় জড়িয়ে ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে ঘষে ঠোঁটের রং টা উঠিয়ে দিতে দিতে বলে,”তুমি এমনিই অনেক সুন্দর।”

বৃদ্ধাঙ্গুলে মাখানো রং টা কোমড়ের খোলা জায়গায় মুছে বলে,”এসবের কোন দরকার নাই”
“আপনি যে রেগে আছেন আমার উপর।তাই ভাবলাম……”,মিনমিন করে বলে পাখি।
বেশ সাবলীল ভাবে জবাব দেয় শান,”আমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে তোমার এই খোলা চুল আর শাড়িটাই এনাফ।এসব রঙ চঙ্গের দরকার নাই পাখি।আর সবথেকে বড় কথা আমি রেগে নেই”
শান্ত চাহনীতে তাকায় পাখি। দুপাশের চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে শান বলে,”খুব ভালোবাসি”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩১

চোখ বন্ধ রেখে মুচকি হেসে ওঠে পাখি।কতো সাধারন একটা বাক্য অথচ শানের কন্ঠে কতোই না শ্রুতিমধুর শোনায় তার কাছে।আবেশে গালের উপর রাখা শানের ডান হাতটায় ঠোঁট ছুঁয়ে পাখি জবাব দেয়,”আমার কিছু চাই ডাক্তার সাহেব”
“কী? ”
“কথা দিন”
“দিলাম”
“আমি চাই আপনি মায়ের সাথে একটি বার কথা বলুন।তার থেকে সবটা শুনুন”
পাখির কথায় সরে যায় শান।পিছু ফিরে চিরুনি টা হাতে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।মাথায় চিরুনি চালিয়ে বলে,”এটা তোমার কেমন আবদার পাখি।অন্য কিছু চাও।আমি মা নামোক মানুষটাকে মুছে ফেলেছি ষোল বছর আগে।”
“যদি বলি আমার ভালোবাসার আবদার!”

থেমে যায় শান।হাত যেন অচল হয়ে উঠছে।কিছুক্ষণ আয়নায় তাকিয়ে দেখে পিছনে দাঁড়ানো পাখির প্রতিবিম্বের দিকে।চিরুনি টা টেবিলে রেখে পিছু ফিরে বলে, “ওকে।শুধুমাত্র তোমার জন্যে আমি তার সাথে দেখা করব।তবে মনে রেখো, তার জন্যে জমানো ঘৃনা একরত্তিও কমবে না”
খুশিতে ঝলমলিয়ে ওঠে পাখি।কাল বিলম্ব না করেই শানের বুকে ঝাপিয়ে পরে ।শান টাল সামলাতে পিছনে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে পা ঠেস দেয়।

“আরে আস্তে পরে যাবা “,পাখির চুলে হাত বুলিয়ে বলে শান।
পাখি আরো শক্ত করে চেপে ধরে শানকে।অস্ফুটস্বরে বলে,”আপনি আছেন না, এমন করেই ধরে ফেলবেন”
পাখির চুলের ভাঁজে মুখ লুকিয়ে বলে,”আছি তো”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৩