আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৭

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৭
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে চোখ গরম করে আগন্তুক লোকটির দিকে তাকাতেই থমকে যায় শান।আপনাআপনি মুখ হা হয়ে আসে।বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু। ডান বাহুতে নজর ফেলে চোখ মুখ কুচকে নেয় শান।হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
“রনি!”,অবাক বিষ্ময়ে প্রশ্ন করে শান।কান্না থামিয়ে থতমত খেয়ে যায় পাখি।পিটপিট করে শানের আড়াল থেকে মানুষটাকে দেখার চেষ্টা করে।
“ভাইয়া কিছু একটা করো, খুব জ্বলছে”,ব্যথায় দাঁতে দাঁত পিষে বলে রনি।শান তড়িঘড়ি করে পাখিকে সরিয়ে ছুটে যায় রনির কাছে।
আনমনে বিড়বিড় করে পাখি,”তারমানে ইনি রনি!”

শান টি-শার্টের হাত উচিয়ে দেখে চামড়া থেকে অনেকটাই ছিলে গেছে।মনে মনে আল্লাহ্’কে ধন্যবাদ দেয় শান;বেশি কিছু হয় নি ভেবে।
রনি একবার পাখির দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আগা-গোড়া দেখে নিয়ে হাত টা চেপে ধরে।
পাখি অপরাধীর ন্যায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে শুধু।হঠাৎ শানের ডাকে সম্বিৎ ফেরে।
“পাখি, দ্রুত ফার্স্টএইড বক্সটা নিয়ে আসো কুইক”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পাখি রনির দিকে একবার দেখে নিয়ে উপর ঘরে চলে যায় ফার্স্টএইড বক্স আনতে।
“তুই এভাবে?এই সময়?আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না রনি”,হরবরিয়ে একসাথে কতোগুলো প্রশ্ন করে শান।
“আগে কিছু একটা করো ভাইয়া খুব জ্বলছে আমার।সবটা পরে বলছি “,অনুনয়ের স্বরে বলে রনি।
ইতোমধ্যে পাখি চলে আসে হাতে বক্সটা সমেত।এগিয়ে দেয় শানের দিকে।শান হাত বাড়িয়ে সেটা নিতেই পাখির মলিন মুখটার দিকে একবার তাকায়।পাখি অপরাধীর মতো নজর সরিয়ে নেয়।

“দেখি, হাত দে।”,বলেই রনির হাত টা টেনে নেয় শান।স্বগতোক্তি করে বলে,”তোর তো পুরো শরীর ভেজা কিভাবে কি করব আমি! ”
শানের কথা শেষ হতেই রনি উপরের টি-শার্ট খুলতে উদ্যত হয়।পাখি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
“পাখি একটা শুকনা তোয়ালে নিয়ে আসো”

শানের একেকটা কথায় অবাক হয় রনি।হাজার প্রশ্ন এসে মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে।কিন্তু কিছু করার নেই।আগে নিজেকে কোনমতে এই যন্ত্রনা থেকে উদ্ধার করতে হবে তারপর সমস্ত প্রশ্ন।
পাখি একটা শুকনা তোয়ালে এগিয়ে দিতেই বাঁ হাতে সেটা একপ্রকার টেনে নেয় রনি।পুরো গা কোনমতে মুছে হাতটা এগিয়ে বলে,”তাড়াতাড়ি ভাইয়া”
কিছুক্ষনের মাঝে শান ক্ষত হওয়া জায়গাটা পরিষ্কার করে মেডিসিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

“এবার বল, সুদূর আমেরিকা থেকে আমায় কিছু না জানিয়ে এভাবে আসার কারণ কি?”,থমথমে মুখে প্রশ্ন করে শান।
ব্যথায় টনটন করা হাতটা সোফার হাতলে রেখে রনি শানের দিকে চেয়ে থাকে।পিছনে দাঁড়ানো পাখিকে দেখে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,”আগে এটা বলো, এই ডাকাত মেয়েটা কে?”
“রনি”,কপোট রাগ দেখায় শান।
“তুমি জানো না ভাইয়া, এই মেয়ে কতোটা সিরিয়াস।ভাবা যায়!”
“আমি তো দেখছি পুরো দোষ তোর”
হা হয়ে রনি শানের দিকে তাকায়।
“আমার দোষ মানে!আমি কি করলাম?আর ঐ মেয়েটা কে যে এভাবে বলছো “,কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে রনি।

“এভাবে না জানিয়ে আসাটা উচিত হয় নি।ছুড়িটা যদি ঠিক ভাবে লাগতো বুঝতে পারছিস কি অবস্থা হতো?আর ওর এমন আচরন স্বাভাবিক নয় কি?”
“তুমি আমার পুরো কথা না শুনেই বললে সবটা আমার দোষ?”
“আপাতদৃষ্টিতে তাই তো মনে হচ্ছে।আচ্ছা বল শুনি”

“আমি আসলাম তোমায় সারপ্রাইজ দিবো বলে।জানি এই সময় তুমি বাড়িতেই থাকো।এক্সামের কারণে গত মাস থেকে তোমার সাথে ভালো করে কথা হয় না, দেখাও হয় না।তাই এভাবে আসা।এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে।আকাশ খারাপ ছিলো কিন্তু গেইটে পা রাখতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। পরে দারোয়ানের ওখানে অপেক্ষা করি।ওখান থেকে দেখি পুরো বাড়ি অন্ধকার।বৃষ্টি একটু থামলে বাড়িতে ঢুকি।দরজা এমনি ভেড়ানো ছিলো।তখন ও সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলো ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে ।আমার সাথে তর্কাতর্কি করে হঠাৎ অন্ধকারে ছুড়িটা ছোড়ে।আহহহ ভাইয়া হাত গেলো”,বলে ব্যথায় ককিয়ে ওঠে রনি
শান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা ঘুরিয়ে পিছনে দাঁড়ানো পাখির দিকে দেখে নেয়।ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে আছে সে।

“আরো কি বলে জানো?ও নাকি এ বাড়ির বউ”,পূনরায় বলে রনি।
“হুম ভুল তো কিছু বলে নি”
“আর ইউ কিডিং ব্রো?বউ আর তোমার?হ্যাহহহ”,শানের কথাকে উড়িয়ে দেয় রনি।
“ও হচ্ছে পাখি। আমার ওয়াইফ”
“ভাইয়া মজা করো না তো।এখন ভালো লাগছে না মজা ।তুমি বিয়ে করবে এটা বিশ্বাস করতে পারব না আমি”,চাপা রাগ করে বলে রনি।
শান হাসতে হাসতে জবাব দেয়,”হুমম এটাই ফ্যাক্ট”

বলে উঠে গিয়ে পাখির সামনে দাঁড়ায়।চোখের কোণে চিকচিক করা জলের কণাটা মুছিয়ে দেয়।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তোমায় বলেছিলাম না রনির কথা?কাকার ছেলে?”
মাথা উপর নিচ করে রনির দিকে চেয়ে হ্যা বোধক উত্তর জানায় পাখি।
“এই সেই রনি।কি হতো বলোতো ছুড়িটা যদি হাত ছুঁয়ে পাশ কেটে চলে না যেত?”
পাখি মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,”আমি বুঝতে পারি নি,সরি।খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম”
বলতে বলতে ঠোঁট কাপিয়ে কেঁদে ফেলে পাখি।শান আলতো হাতে মাথাটা বুকের সাথে ধরে।
রনি দ্রুত উঠে শানের হাত টা টেনে এপাশে করে বলে,”লাইক সিরিয়াসলি! তুমি সত্যিই বিয়ে করেছো?”
“তো বলছি কি এতোক্ষন ধরে!”

অবাকের চরম সীমায় অবস্থান করছে রনির মগজ।ভাবতেও পারছে না শান বিয়ে করবে।এটাই তো স্বাভাবিক।
“যা ফ্রেশ হয়ে নে।সবটা বলছি “,বলে রনিকে তাড়া দেয় শান।রনির কাঁধের ব্যাগটা মেঝে থেকে উঠিয়ে ওকে রুমে নিয়ে যায়।
পাখি এতোক্ষনে হাফ ছেড়ে বাঁচে।বুক হাত দিয়ে বিট বোঝার চেষ্টা করে।নিজের প্রতি নিজেরই কেমন যেন খারাপ লাগা কাজ করছে।নিজের করা ভুলের জন্যে বুক কেঁপে ওঠে পাখির।
“একটুর জন্যে কি হয়ে যেত”

পাখি তড়িঘড়ি করে রাতের রান্নাটা সেড়ে নেয়।ফ্রিজ থেকে বাকি তরকারিগুলো গরম করে ডায়নিং এ সাজায়।ততোক্ষনে শান রনিকে সহ নিচে নেমে আসে।
ডায়নিং এর চেয়ার টেনে বসতে বসতে শান বলে,”এবার সত্যি করে বল হঠাৎ কেন আসলি?”
“কি বলছো ভাইয়া? দেশে আসব তার কারণ লাগে?”,অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে রনি।
“আমায় নিজেকে চেনাতে আসিস না।তুই যে কারণ ছাড়া আসিস নি তা আমি জানি।এবার সত্যি সত্যি বল”
“আসলে ভাইয়া, একজনের সাথে মিট করতেই আরকি……”,মিনমিন করে বলে রনি পাখির দিকে তাকায়।

লজ্জাবোধ আর সংকোচে চোখ নিচু করে নেয় পাখি।শানের চেয়ারের কোনা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।
“এক সেকেন্ড….তোমায় কোথাও দেখেছি আমি”,পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলে রনি।
পাখি বিব্রত হয়ে কন্ঠের স্বর খাঁদে ফেলে বলে,”আমাকে?”
“হুমম হুমম তোমাকে”
ভ্রুকুচকে শান একবার রনির দিকে আরেকবার পাখির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে, “ওকে কোথায় দেখবি তুই?”

“দেখেছি তো অবশ্যই ভাইয়া। তবে মনে করতে পারছি না”,ভাবুকের মতো বলে রনি।
“হইছে আর ভাবতে হবে না। খা….তা বললি না কার সাথে মিট করতে দেশে আসলি?”,খাবারের লোকমা টা মুখে দিতে দিতে বলে শান।
রনি নজর এদিক সেদিক করে বলে,”ততেমন কেউ না। এই আরকি ফেসবুক ফ্রেন্ড”
শান মুচকি মুচকি হেসে বলে,”শেষমেশ ফেসবুক ফ্রেন্ডের টানে দেশে আসলি তবে”
থতমত খেয়ে রনি চুপ করে ভাত গুলো নাড়াচাড়া করে।
শান ওদিকে একবার তাকিয়ে বলে,”গার্লফ্রেন্ড ইস্যু”

“তেমনটাই….বাদ দাও না এসব।বলো আগে এই মিরাকল ঘটলো কি করে?আই মিন বিয়ে তাও এই ডাকাত….”
বলতে বলতে শানের দিকে তাকাতেই থেমে যায় রনি।এরপর শুরু থেকে শেষ অবধি সবটা রনিকে বলে শান।শুনে হেচকি ওঠে রনির। পাখি পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। পানিটা খেয়ে নিজেতে ফিরে আসে রনি।

সকাল বেলা পাখির কাছে হন্তদন্ত হয়ে ছুট আসে রাখি।তখন রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার করছে পাখি।রাখিকে হাফাতে দেখে বলে,”কি রে এভাবে হাফাচ্ছিস কিসের জন্যে।”
বলে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দেয়।রাখি পানিটা খেয়ে পাখিকে ড্রয়িংরুম টেনে আনে।
“কি হইছে কি, বলবি তো?”
“আরে ঐ আমেরিকা প্রবাসী ছেলেটা বলেছিলাম না তোরে?”
“হ্যা, মনে আছে। কি যেন নাম বলেছিলি ইবনে ইবনে ”

“আরে ইবনে জুহায়ের। ওর সাথে গত একমাস থেকে শুধু ঝগড়া লাগে।সময় দেয় না। আমারও ভালো লাগছিলো না ওতো ঝগড়া ঝাটি পরে ব্রেক আপ করি।কাল রাতে বিডি সিম থেকে মেসেজ করে বলছে সে নাকি দেশে এসেছে আর আমায় বিয়ে করে তবেই ফিরবে।কি করি, কি করি আমার মাথায় কুলাচ্ছে না”
“তবে সমস্যা কি? আমি যতোদূর জানি তুইও তো ভালোবাসিস। তাহলে?”
“মা বিদেশে থাকা পছন্দ করেন না।ওর কথা মাকে বলাতে ডিরেক্ট না করেছে।আমি কি করব রে কোন উপায় দে…..”
“তুমি?এখানে?”

রাখির কথা শেষ হতেই উপর থেকে রনি চিল্লিয়ে ওঠে।পাখি রাখি দুজনেই মাথা তুলে তাকায়।রাখি হতভম্ব হয়ে বলে,”তুমি এখানে কেন?”
রনি কিছু না বলে সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নেমে আসে।পাখির মাথায় কিছুই ঢুকছে না এখন।ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।
রনি নেমে এসে রাখির সামনে দাঁড়ায়। দাঁত কিড়মিড় করে বলে,”তুমি এখানে কেন? যাক এসে পড়েছ ভালোই হইছে।।আমায় আর কষ্ট করে খুঁজতে হলো না!….এবার বলো তোমার এই সব নাটকের কারণ কি?”
রাখি পিটপিট করে চোখ তুলে তাকায় রনির দিকে।ভাবতেও পারছে না তাদের প্রথম দেখাটা এভাবে হয়ে যাবে।

“কি হলো, আন্সার মি”,রেগে গিয়ে বলে রনি।
পাখি এতোক্ষন চুপ থেকে সবটা বোঝার চেষ্টা করে। এরপর রাখির হাত চেপে বলে,”ও আমার ফ্রেন্ড হয়।আপনি ওকে চেনেন?”
রাখির দিকে তাকিয়ে বলে,”রাখি তুই ওকে চিনিস?
“এইটা রনি “,রিনরিনে কন্ঠে বলে রাখি।
“হ্যা তা তো জানি ”
“এই সেই ইবনে জুহায়ের রনি”
অবাক হয়ে চেয়ে থাকে পাখি।
রনি কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান বলে ওঠে,”এতো চিৎকার কিসের? ”

সবাই উপরের দিকে তাকায়।রনি দুই সিঁড়ি উঠে বলে,”ভাইয়া এই সেই মেয়ে। যার জন্যে দেশে আসা”
কটমটে চোখে পাখির দিকে তাকিয়ে বলে,”আর যার জন্যে তোমার ডাকাত বউয়ের ছুড়ির আঘাত সহ্য করা”
রনির কথায় চমকে যায় রাখি।হন্তদন্ত হয়ে বলে,”কিসের ছুড়ির আঘাত দেখি তো”
রনি হাতাটা উচিয়ে অসহায়ের মতো ব্যান্ডেজের দিকে ইশারা করে।রাখি হাতটা দেখে ভয়ার্ত গলায় বলে,”এতোখানি ব্যান্ডেজ?কি করে হলো?”

এরপর রনি কাল রাতের সব ঘটনা রাখিকে খুলে বলে।চাপা রাগতস্বরে বলে,”সবটা হইছে তোমার জন্য”
“আমি আসতে বলেছি তোমারে?”,পা উচিয়ে রাগি চোখে বলে রাখি।
“তা বলতে যাবা কেন? তুমি তো নতুন পাইছো না? ”
“বাজে কথা বলবা না একদম।মেরে বালিচাপা দিবো।ফালতু ছেলে”
“তোমরা থামো এবার?কি শুরু করলে দুজনে?”,হেসে দিয়ে বলে শান।
রনিকে প্রশ্ন করে,” এসবের মানে কি?”

“ভাইয়া ওর সাথে গত একবছর ধরে রিলেশনে আছি।গত মাস থেকে এক্সামের চাপে ব্যস্ত ছিলাম সসময় দিতে পারি নি বলে, বলে কিনা ব্রেকআপ!কিন্তু ও তো জানে না ওর কার পাল্লায় পরেছে”,রাখির দিকে রাগিচোখে তাকিয়ে বলে রনি।
“মিথ্যা কথা ভাইয়া।ও নিউ রিলেশনে জড়াইছে।আর সবথেকে বড় কথা খালি ঝগড়া করে আমার সাথে।তার থেকেও বড় কথা মা কিছুতেই মানছে না যে প্রবাসী কারোর সাথে আমার বিয়ের হোক”,মলিন মুখে বলে রাখি।

শান পাখির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ঘরিয়ে রাখির দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি কি চাও সেটা বলো?এটা নিশ্চই তোমার মা জানে না যে, রনি আমার ছোট ভাই।”
“আমি কিছু জানি না ভাইয়া, মা যা বলবে তাই….”
রাখির কথায় তেড়ে আসে রনি।
“প্রেম করার সময় মনে ছিলো না, মা মানবে কিনা!”,ভেংচি কেটে কটাক্ষ করে বলে রনি।
“আহ রনি, কি বাচ্চাদের মতো করছিস?আমি কথা বলছি তো”
“তুমি কি করো করো, আমার ওকে চাই।চাই তো চাইই ব্যাস।দরকার পরলে,দরকার পরলে উঠায়ে নিয়ে যাবো”

ভরা মজলিশে এমন কথা রাখিকে বিপাকে ফেলে দেয়। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।মুচকি হাসিতে একনজর তাকায় রনির দিকে।
“আচ্ছা আমি কথা বলছি তোমার মায়ের সাথে”
বলেই শান উপরে উঠে চলে যায়।যাওয়ার আগে পাখিকে একবার রুমে ডেকে যায়।পাখি, রনি আর রাখির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে শানের পিছন পিছন চলে যায় শানের ঘরে।
“ভাবি তোমায় রাখির ফোনে দেখেছি”,সিঁড়ির দিকে চেয়ে গলা উচিয়ে বলে রি।

“কাগজ টা দেখে নাও ভালো করে, ডকুমেন্ট গুলো কালেক্ট করেছি। আমার মনে হয় যা করার এখনি করা উচিত। কি বলো তুমি?”পাখির দিকে কাগজপাতি এগিয়ে বলে শান।
শানের কথার কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না পাখি।তবুও কাগজ গুলো হাতে নিয়ে একের পর এক উল্টিয়ে দেখা শুরু করে।কিছুক্ষন পর কাগজ গুলো বন্ধ করে কয়েক মূহূর্তের জন্যে চোখের পাতা বন্ধ করে নেয়।চোখ খুলে বলে,”ছিহ একটা মানুষ কতোটা নীচ হতে পারে ভাবা যায় না।আমি এসবের কি বুঝব বলেন?আপনার যা ভালো মনে হবে করবেন”

শান মুচকি হেসে পাখির দু বাহুতে হাত রাখে। টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে গালে হাত রেখে বলে,”তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী। মানে বুঝো? মানে তুমি ডক্টর ফয়সাল আহমেদ শানের অর্ধেক অঙ্গ।আমার লাইফের যা কিছু সুন্দর সবই তোমার আগমনে।আর সেই তুমিটাকে ছাড়া কি করে কোন সিদ্ধান্ত নেই বলো তো!”
ছলছলে চোখে পাখি শানের দিকে তাকায়।

“হুমম বলো এবার, কি করব?নাকি আরো কিছুদিন উড়তে দিবো?তবে পাপের সাম্রাজ্য বেশি বড় হতে দিবো না আমি”,বলতে বলতেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে শানের।
“আপনার মন যা বলে তাই করুন।আমি জানি, আপনি বিচক্ষণ। তবে আমি সবসময়ই আপনার পাশে আছি”,শানের হাতটা দুইহাতে ধরে বলে পাখি।
পাখির দুই হাতের উল্টোপিঠে চুমু দিয়ে এগিয়ে যেতেই পাখি পিছিয়ে যায়।

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৬

“কি করছেন? ”
“কি করছি মানে?রাতে তো ভয়ে একদম সিধিয়ে ছিলে। বুকের উপর শুয়ে কখন ঘুমাইছো টেরই পাই নি।পরে দেখি ঘুমে বিভোর”
“হ্যা, তো?”
“তো মানে…. বুঝোই তো ”
“উহু একদম না। আপনাকে দেখলে কেউ বলতে পারবে না আপনি এতোটা দুষ্টু আর অসভ্য”
শব্দ করে হেসে শান জবাব দেয়,”বউয়ের কাছে বাপ্পারাজ হয়ে লাভ নাই।হতে হয় ইমরান হাসমি”
“এই না না, একদম না বলছি”,বলতে বলতেই মিলিয়ে যায় পাখির স্বর।

রাখি থম মেরে তখন থেকে বসে আছে সোফায়।মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছে না যেন।রনি কতোবার কতো প্রশ্ন করেছে সে একটারও জবাব দেয় নি।রাখি বেশ ভালোভাবেই বুঝেছে তার মা এ সম্পর্ক কোনভাবেই মেনে নিবে না।আর সে তার মাকে ফেলে কোনভাবেই পালিয়ে যেতে পারবে না।
“এরকম কেন করতেছো রাখি?কেন বোঝার ট্রাই করছো না আই’ম ইন লাভ উইথ ইউ। ড্যাম ইট”,মুখটা থমথমে করে করূনস্বরে বলে রনি।হুট করে রাখির সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে হাতদুটো ধরে নেয়।

“কিছু তো বলো রাখি।দেখো শুধুমাত্র তোমার জন্যে আমি এতোদূরে এতোবছর পর চলে এসেছি ভাইয়ার কাছে।এভাবে রিফিউজ করো না আমায়।আই কান্ট বেবি, আই কান্ট লিভ উইথআউট ইউ।প্লিজ ট্রাই টু ফিল মাই ফিলিংস।ইট’স রিয়েলি হার্ট’স”,বলতে বলতে পাখির হাতদুটোয় নিজের কপাল ঠেকায় রনি।
কাঁপা কাঁপা হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে রাখি বলে,”ভাইয়া যদি মাকে রাজি করাতে পারে……”

“আমি এককালীন দেশে চলে আসব রাখি “,রাখির কথাকে সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই হরবরিয়ে বলে রনি।কেমন যেন মায়াবি একটা মুখ। এতো অনুনয় করছে রাখিকে।রনিকে উঠিয়ে পাশে বসায় রাখি।
স্মিত হেসে বলে,”আমি আবারও মাকে বোঝাব ”
“সত্যি?”
“একদম”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৮