আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৬

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৬
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

ইদানিং শানকে বিছানা ছাড়াতে বেশ বেগ পেতে হয় পাখির।মোটামোটি অলসই বলা চলে।শানকে টেনেটুনে তুলে পাখি ফ্রেশ হতে চলে যায়।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে শান কোলবালিশ জড়িয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে।আবারো ডাকতে গিয়ে থেমে যায় পাখি।ধীরপায়ে এগিয়ে আসে। পাশে বসে ডান হাতে কপালে নেমে আসা অবাধ্য চুলগুলো তুলে ধরে।চশমা ছাড়া কেমন যেন অন্যরকম লাগে শানকে।মুচকি হেসে কপালে চুমু দিয়ে উঠে আসে পাখি।দ্রুত নেমে আসে নিচে।কারণ শান একবার উঠে গেলে কিছু না কিছু তার খেতেই হবে।রাহেলার দরজায় ডাকতে গিয়ে মনে পড়ে কাল কি এক দরকারে গ্রামের বাড়ি গেছে সে।ও বাড়ি থাকতে পাখিকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে রাহেলা।

বিরসবদনে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়।গরম পানি চুলায় দিয়ে পাখি টুকটাক জিনিসগুলো হাতের কাছে নিয়ে আসে।কফি টা করে নিয়ে ব্রেড গুলো সাজিয়ে নেয়। এরপর কফিটা নিয়ে চলে যায় শানের ঘরে।তখনো শান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।হালকা করে দু একবার ডাকতেই চোখ খোলে শান।
কফির দিকে ইশারা করে বলে,”ঠান্ডা হলে নতুন করে করে দিতে পারব না।অনেক কাজ আছে”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শান কোন জবাব না নিয়েই ওয়াশরুমে চলে যায়।পাখি ততোক্ষনে নিচে চলে আসে।সকালের নাস্তার সমস্ত বন্দোবস্ত করে নেয় সে।বড় বাবার সংসারে কাজ করতে করতে কাজের গতি স্বভাবতই একটু বেশি বৈকি!
ঘেমে নেয়ে একাকার হয় পাখি।ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় গা এলিয়ে দিতেই শান বলে ওঠে,”গোসল টা সেড়ে নাও।ঘাম গুলা শুকালে ঠান্ডা লাগবে নয়ত”
ব্রেডের কোনাটা মুখে নিয়ে বলে,”একা একা আমার খেতে ভালো লাগছে না। কেউ যদি কোম্পানী দিতো তাহলে পুরোটা খেতে পারতাম”

পাখি মুচকি হেসে শানের পাশের দাঁড়ায়। গাল টেনে দেয় শানের।হা হয়ে গালে হাত দেয় শান।
“তুমি, তুমি আমার গাল টানলে?”
“তো”
“আমি তোমার থেকে আট বছরের বড় পাখি।আর তুমি আমায়…..”,বলতে বলতেই শান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।পাখি শানের গাতিবিধি বুঝতে পেরে এক দৌঁড়ে সিঁড়িতে উঠে যায়।শান কোমড়ে দু হাত দিয়ে উপরে পাখির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে।
“নামো আরেকবার, দেখো কি করি ”

“কিচ্ছু করতে পারবেন না”,বলেই বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে পাখি।
শান বসে বসে ফোন স্ক্রল করছে।অপেক্ষা,পাখির আগমনের।কিছুক্ষন পর মাথায় তোয়ালে পেচিয়ে পাখি নিচে নেমে আসে।এরপর দুজনের খুঁনসুটির মধ্য দিয়ে সকালের নাস্তা সেড়ে নেয়।
শানের ফোনে কল আসায় রিসিভ করে কানে ধরে।
“হ্যা রাহাত, কিছু পেলে?”

ওপাড়ের ব্যক্তি কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না পাখি।তবে শানের মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।
“ওকে তুমি ডকুমেন্ট গুলো আমায় ইমেইল করো। ওকে থ্যাংকস ভাই।খুব বড় উপকার হলো”
বলেই থমথমে মুখে ফোনটা কেটে দেয় শান।পাশ থেকে শানের কাঁধে হাত রেখে পাখি প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে?এতো টেন্সড লাগছে যে!”
পাখির কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শানের ফোনের আলো জ্বলে ওঠে।তড়িঘড়ি করে শান ফোন স্কল করে।চক্ষু যেন চড়কগাছ তার।
ফোন এগিয়ে পাখিকে দেখায়।পাখি আতকে ওঠে।
“এতো জঘন্য!”

হসপিটাল যাওয়ার সময় হয়েছে শানের।পাখি হাতে হাতে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।পাখির মাঝে তাড়াহুড়ো দেখে শান শব্দ করে হেসে ওঠে।অবাক হয়ে শানের দিকে তাকায় পাখি।
“হাসছেন কেন?”,প্রশ্ন করেই ফ্যালফ্যাল করে শানের দিকে চেয়ে থাকে।
শান পাখির ডান হাত টেনে সামনে সোজা করে দাঁড় করায়।
“এদিকে আসো”
“কী?”
“আমি হসপিটাল যাচ্ছি, তুমি না”
“হ্যা, তো?”

“এতো তাড়াহুড়োর কিছু নেই।একটু আকটু দেরি হলে ওখানে আমায় কেউ মেরে ফেলবে না”
বলেই স্বশব্দে হেসে ওঠে শান।মুখটা পাংশুটে করে পাখি জবাব দেয়,”ওকে গেলাম তবে।ভালো মতো হেল্প করছি গায়ে লাগছে না”
“শোন না”,কন্ঠের স্বর খাঁদে নামিয়ে বলে শান।
পাখি কিছু না বলে বুকের কাছে দুহাত গুঁজে দাঁড়ায়।

“কথা হচ্ছে,আমি যাচ্ছি।আম্মা ফোন করেছিলো। ও বাড়ির সবাই নাকি রাহেলা চাচির বাড়ি গেছে।তার মা মারা গেছে সেখানে।তো তুমি সাবধানে বাড়িতে থাকবা।ফোন সারাক্ষন কাছে কাছে রাখবা।আমি কিন্তু ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করব।আর কোন সমস্যা মনে হলে আমায় কল করবে।”,বলেই পাখির দিকে এগিয়ে আসে শান।কপালে চুমু এঁকে দেয়।
পাখি সরুচোখে চেয়ে বলে,”আর কিছু নাই?”
“আরো তো অনেক কিছুর ইচ্ছে হচ্ছে। বাট তোলা থাক ”
“অসভ্য লোক”,বলে চলে আসে পাখি।
“আর শোন তো,আমি সন্ধ্যার পরপরই বাড়ি ফিরব।আজ আমরা রাতে ঘুরতে বের হবো”
খুশি হয় পাখি।
গলা জড়িয়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,”সত্যি!”
“একদম”

“লাখ লাখ টাকার সম্পদ, আপনি বুঝতে পারছেন?”
“সরি,রায়ান ভাই যেহেতু ওয়ারিশ এখনো জীবিত আর সব সম্পত্তি তার নামেই লিখিত সেহেতু আমি কেন কোন উকিলই কিচ্ছু করতে পারবে না।আপনি বরং খোঁজ নিয়ে দেখুন আমার কথা বিশ্বাস না হলে”,ব্যর্থ কন্ঠে জবাব জানায় মাহমুদ।

মাহমুদের কথায় রাগে ক্ষোভে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে রায়ানের।পারে তো উক্ত স্থানেই গেড়ে দেয় তাকে।মুষ্ঠিবদ্ধ হাত টা টেবিলে জোড়ে আঘাত করে। ডান পায়ে লাত্থি দিয়ে সামনের ফাঁকা চেয়ার টা গুড়িয়ে দেয়।রেগে উকিলের দিকে ঝুঁকে বলে, “শর্টকাট ওয়ে বলুন মিঞা।এতো পেচা পেচির সময় নাই।”
“আহহ্ রায়ান শান্ত হ”

এতোক্ষন বৈঠকে বসে পুরো বৈঠক মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো আয়ান।একই জঠরের হলেও দুই ভাই দুই প্রকৃতির।এ যেন উত্তরমেরু আর দক্ষিণমেরু। কারোর সাথে কারোর স্বভাবের মিল নেই তবে উদ্দেশ্য একই।
রায়ান উগ্র প্রকৃতির। যেকোন কাজ তার তৎক্ষনাৎ হওয়া চাই।ধৈর্যশক্তি শূন্যের কোঠায় বলা চলে।চট করে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে কার্য হাসিল করতে পছন্দ করে।

অন্যদিকে আয়ান ধীরস্থীর, শান্ত স্বভাবের।সে নিজের বুদ্ধি বিবেক খাটিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে।উপস্থিত বুদ্ধির সিদ্ধান্ত বেশির ভাগ সময় ভুল প্রমাণিত হয় কিনা!
রায়ানকে শান্ত হতে বলে উঠে গিয়ে রায়ানের পিঠ চাপড়ায়।
“ভাই আমার, বড় হইলি তবুও মাথা খাটাতে শিখলি না।রিল্যাক্স ব্রো”
বলেই উকিলকে উদ্দেশ্য করে মুচকি হেসে বলে,”আপনি এখন আসুন।পরে প্রয়োজন পরলে আমরা ডেকে নিবো। কেমন!”

আয়ানের ব্যবহার মাহমুদের বরাবরই খুব ভালো লাগে।ফিরতি একটা হাসি উপহার দিয়ে হাত এগিয়ে দেয় মুসাফাহ্’র উদ্দেশ্য।আয়ান হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়।এরপর মাহমুদের চলে যাওয়া নিশ্চিত হতেই আয়ান আবার এসে রায়ানের পাশে বসে।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রায়ান বলে,”এটা কোন কথা ভাই।এতোদিন জেনে আসলাম কাকা জ্যাঠাদের ছেলে না থাকলে সম্পত্তির বেশীরভাগ অংশ ভাতিজারা পায়।আর আমরা? আমরা কি এভাবেই বসে বসে আঙ্গুল চুষব?”

“সবই ঠিক আছে। কিন্তু চাচাজান তো মেয়ের নামে সব দিয়েছে।এ ক্ষেত্রে ওয়ারিশ একমাত্র সেই’ই।ডোন্ট ওরি….একটা না একটা কিছু মাথায় অবশ্যই আসবে।রিল্যাক্স”,আশ্বস্ত করে বলে আয়ান।ইতোমধ্যে ছক কষা শেষ কিভাবে কি করবে।এখন শুধু এগোনোর পালা।

বিকেল পরে যায়। শান প্রতিটা ঘন্টায় কয়েকবার করে ফোন করে খোঁজ নিয়েছে পাখির।বলতে গেলে কাজ থেকে একটু ফুসরত পেলেই পাখিকে কল করে। একা একা সেসব ভেবেই হেসে ওঠে পাখি।
বিকেল বেলা হাতে কোন কাজ নেই বললেই চলে।রাতে যেহেতু বাহিরে যাওয়ার পরিকল্পনা সেহেতু রান্নার বন্দোবস্ত আজ আপাতত আর নেই।ফ্রিজ খুলে আইসক্রিমের বক্স টা হাতে নিতেই অমায়িক হাসি ফোটে পাখির মুখে।

সেদিন মদ খেয়ে মাতলামো করেছিলো পাখি।শান অনেকগুলো চকোলেট আর আইসক্রিম এনেছিলো।যদিও সেগুলো খাওয়ার সুযোগ হয় নি।আজ সুযোগ টা কাজে লাগাতে মূহূর্তও দেরি করতে ইচ্ছে করছে না পাখির।দ্রুতই বাটিতে করে নিয়ে বসে পরে টিভির সামনে।চামুচে করে মুখে দিয়েই চোখ বন্ধ করে পাখি।তার পছন্দের খাবারের মাঝে আইসক্রিম সর্বপ্রথম আর তা যদি হয় প্রিয় মানুষের দেয়া তাহলে তো কথাই নেই।

কয়েক চামুচ মুখে দিতেই শান আবার কল করে। তবে এবার ভিডিও কল।ভ্রুকুচকে ফোনের দিকে তাকায় পাখি।শানের ছবিটা জ্বলজ্বল করছে।আইসক্রিমের বাটিটা বাম হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে পাখি।কেমন যেন লজ্জা লাগছে।শান রিসিভ করে ফোনটা সামনে রেখে দেয়।পেশেন্টের সাথে কথা বলছে। এক ফাঁকে পাখির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে প্রেসক্রিপশন লিখছে।পাখিও চুপচাপ খাচ্ছে আর দেখছে সেসব।
প্রেসক্রিপশন টা পেশেন্টের হাতে ধরিয়ে দেয়।এরপর নেমে আসা চমশমাটা আঙ্গুলে ঠেলে উপরে উঠিয়ে বলে,”কি খাচ্ছো তুমি?”

“এই যে আইসক্রিম”,বাটিটা উচিয়ে জবাব দেয় পাখি।
শান এবার দুইহাত টেবিলে রেখে পাখির দিকে সরুচোখে তাকিয়ে বলে,”সকাল সকাল গোসল করছো তার জন্যে তোমার সর্দি সর্দি ভাব বুঝতে পেরেছি এখন আবার এই বিকেল বেলা আইসক্রিম খাচ্ছো।ঠান্ডা লেগে গেলে?”
“আপনি আছেন কি করতে?”,আইসক্রিম টা মুখে দিতে দিতে বলে পাখি।
“আবাদি ডক্টর, তাই না!”
“হ্যা, তাই তো”

“মারব টেনে এক চর।রাখো বলছি”,কপোট রাগ দেখিয়ে বলে শান।
ঠোঁট উল্টিয়ে পাখি বাটিটা পাশে রেখে দেয়।এরপর অভিমান করে ফোনটা খট করে কেটে দেয়।
কয়েক মূহূর্ত পর আবার কল করে শান।কেটে দেয় পাখি।এভাবে তৃতীয় বারের বেলা পাখি ফোনের দিকে চেয়ে থাকে।আনমনে বলে,”এবার দিলে রিসিভ করব”
কিন্তু বিঁধিবাম, কল আসে ঠিক কিন্তু সম্পূর্ণ কল আসার আগেই কেটে দেয় শান।কারণ ফোনের ওপাশে শান আবার পেশেন্টদের ভীড়ে হারিয়ে যায়।

পাখি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বাড়ির লাইট গুলো একে একে জ্বালিয়ে দেয়।তখন ইতোমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
হঠাৎ ঘনকালো মেঘে ছেঁয়ে যায় আকাশ।ধীরেধীরে আকাশ গুড়ুম গুড়ুম করে ওঠে।বোঝাই যাচ্ছে আকাশের শামিয়ানা ভেঙ্গে আজ বৃষ্টিরা দলবেঁধে নেমে পড়বে ধরনীতে।
খুব একটা ভীতু মেয়ে নয় পাখি।তবুও থেকে থেকে কেমন যেন গা শিউড়ে উঠছে।শানকে একবার কল করে কিন্তু কল উঠায় নি শান।মনে মনে নিজেকে বোঝায়, “হয়ত ব্যস্ত”

বাতাসের বেগ বেড়ে যায় দ্বিগুন।উপরতলা থেকে কিসের যেন ধপাস করে শব্দ হলো।চমকে ওঠে পাখি।মাথা তুলে উপরের দিকে তাকায়।কলিজা যেন শুকিয়ে আসে তার।এদিকে একটু একটু বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেছে।পাখি সব জানালা গুলো বন্ধ করে দিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে সদর দরজার দিকে চেয়ে আছে।কখন শান আসবে।

কিছুক্ষন পর বাতাস টা আরেকটু বেগে ছোটে।আবারও শব্দ হয়।মূহূর্তেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়।সোফার কভার খামচে ধরে পাখি।কেমন যেন ভয়ানক লাগছে সবটা;ভুতুড়ে ভুতুড়ে।হাতরিয়ে ফোনটা খুঁজে ফ্লাশ জ্বালিয়ে পা উচিয়ে দু হাঁটু জড়িয়ে বসে থাকে পাখি।নজর সদর দরজার দিকে।এবার শব্দটা ভীষণ জোড়েই শোনা যায় সাথে বাজ পড়ার বিকট শব্দ।দুহাতে কান চেপে ধরে পাখি।

পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে ফোনটা হাতে শক্ত করে চেপে উপরে দিকে যাওয়ার জন্যে মনঃস্থির করে সে।সিঁড়িতে পা রাখতেই কেমন যেন কলিজা কেঁপে ওঠে।তবুও ভয়ে ভয়ে সবগুলো সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে উঠে সব ঘরের জানালা দরজায় নজর বুলিয়ে নেয়।
“সবই তো বন্ধ। তাহলে……!”

ঠোঁটের ডগায় বিড়বিড় করতেই মনে পড়ে পাখির,”আজ বিকেলে কাপড় উঠিয়ে নেয়ার সময় তো ছাদের দরজা লাগাই নি”
খুব দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায় ছাদের দরজার কাছে।দরজা খোলা, আর সেটাই বাতাসের বেগে ধাক্কা লেগে শব্দ হচ্ছিলো।নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মেরে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দেয় পাখি।মূহূর্তেই সব ভয় যেন কেটে যায় মন থেকে।

এবার নিচ থেকে ঝনঝন শব্দ হতেই আবারও কেঁপে ওঠে পাখি।শানের আগমন মনে করে নিচে সিঁড়ি বেয়ে নামতেই দেখে ফোনের ফ্লাশ জ্বালানো কাউকে।ফ্লাশ টা এদিক সেদিক নড়ছে।পাখি প্রথমে ভেবেছিলো শান। কিন্তু পরোক্ষনে মনে হয়,”তিনি হলে তো এভাবে ফ্লাশ এদিক সেদিক করবে না!আমায় ডাকছেও না কেন?”

ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসে পাখির।মনে সাহস যুগিয়ে তড়িৎগতিতে নেচে নেমে আসে ।
“কে, কে ওখানে”,কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করে পাখি।ফ্লাশ লাইট সমেত আগন্তুক লোকটি দাঁড়িয়ে পরে। কাঁধ থেকে যেন বড় একটা ব্যাগ মেঝেতে সরাত করে পরে যায়।হার্ট বিট বেড়ে যায় পাখির।
“ব্যাগ সমেত কে হতে পারে”,নিজমনে আওরিয়ে আবার প্রশ্ন করে সে।
“কি হলো কথা কেন বলছেন না?”
“তুমি কে?”

গা হিম হয়ে আসে এবার। বাহিরে বৃষ্টির বেগ আবারও বেড়ে গেছে।সাঁইসাঁই করে বৃষ্টি পড়ছে বিরতিহীন ভাবে।
পুরুষালী গাঢ় মোটা কন্ঠস্বর টা অচেনা।কিছুতেই এটা ইতোপূর্বে কোনদিনও শোনে নি পাখি।তড়িৎগতিতে ডায়ালে শানের নম্বর টা ডায়াল করে।
কাপাকাপা হাতে ফোনটা কানে নিতেই লোকটা আবার বলে ওঠে,”কে তুমি?কি হলো কথা কেন বলছো না?”

“হ্যালো,হ্যালো, হ্যালো পাখি ”
“ববাড়িতে ততাড়াতাড়ি আসুন।কে যেন…… ”
‘”হেই তুমি কাকে ফোন করছো?আর কে তুমি?কথা কেন বলছো না?”
পাখির কথা শেষ না হতেই বলে ওঠে আগন্তুক লোকটা।পাখি খট করে ফোন কেটে দেয়।ফোনের ফ্লাশ সামনে এগিয়ে মানুষটাকে দেখতে চায় পাখি।কন্ঠে দৃঢ়তা এনে বলে,”একদম এগোবেন না বলে দিচ্ছি।”
বলতে বলতে ডায়নিং এর কাছে চলে আসে পাখি।

ছুড়িটা হাতে নিয়ে বল,”কাছে আসলে এটা ছুড়ে মারব। খুন হয়ে যাবেন একদম। বের হোন, বের হোন বাড়ির থেকে।বের হোন বলছি”
“আরে আজিব তো।কে তুমি? আর ছুড়ি রাখো বলছি, রাখো”,কপোট রাগ দেখিয়ে বলে লোকটা।
পাখি ভয়ে কেঁদে ফেলে নিঃশব্দে।তবুও নিজের সাহসীকতা বজায় রেখে পাখি বলে, “আমি কে মানে?আমি এ বাড়ির বউ”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৫

“বউ!”,বিড়বিড় করে বলে লোকটা।যেটা পাখির কানে এসে পৌঁছায়।
ছুড়িটা শক্ত করে ধরে বলে,”হ্যা বউ। এবার বের হোন বলছি।একা একটা বাড়িতে কি করে ঢুকলেন আপনি? দারোয়ান কিভাবে ঢুকতে দিলো আপনাকে?আজ আসুক উনি বাড়িতে”
শেষের কথাগুলো ক্ষীনস্বরে বলে পাখি।

আগন্তুক লোকটা এগিয়ে আসতেই পাখি কোন কথা ছাড়াই হুট করে একটা কাজ করে বসে। ছুড়িটা ছুড়ে মারে অন্ধকারে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে।
“আউচচচ”,চাপা আর্তনাদ হতেই লোকটার হাতের ফোনটা মেঝেতে পরে যায় স্বশব্দে।বিদ্যুৎ চলে আসে তখনি।নিজের সামনে এমন সুদর্শন একজন পুরুষকে দেখে অবাক হয়ে যায় পাখি।ডান হাতের দিকে খেয়াল পরতেই দেখে সাদা টি-শার্টের হাতাটা রক্তে লাল হয়ে গেছে।
লোকটা পাখির দিকে চেয়ে চোখ মুখ কুচকে মাথা নিচু করে আর্তনাদ করে। মূহূর্তেই পাখির খেয়াল হতেই চেঁচিয়ে বলে,”বলেছিলাম না আগাবেন না”

লোকটা উঠে দাঁড়াতেই পাখি ভয়ে দুই পা পিছিয়ে যায়।আর তখনই হন্তদন্ত হয়ে দরজায় পা রাখে শান।অবাক হয়ে পাখির দিকে তাকাতেই দেহে প্রাণ ফিরে পায় যেন।হাতের বাঁ পাশে দেখে কেউ একজন ডান হাতের বাহু চেপে কুঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে।পাখি লোকটাকে একবার দেখে নিয়ে সুযোগ বুঝে দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে শানকে।বুকে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলে।এতোক্ষনের চাপা ভয়, কান্না এবার আর বাঁধ মানছে না যেন।
লোকটা পাখির দৌঁড়ানিতে অবাক হয়ে সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।শান পাখির মাথায় হাত দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে।জড়িয়ে রেখে মাথা তুলে তাকায়…

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৭