আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৫

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৫
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সকালে মায়ের সাথে কথা বলে শান ঘরে এসে হাতের কাজগুলো শেষ করে নেয়।ল্যাপটপের খুঁটখাট ক্ষীণ শব্দটা ফাঁকা ঘরে বেশ আওয়াজ তুলছে।পাখি গোসল সেড়ে বের হয়।শানের দিকে একবার তাকিয়ে তোয়ালেতে মাথা টা মুছে নেয়।সব কাজে আজ খুব তাড়া পাখির।কারণ আজ শনিবার।স্কুল খোলা সাথে স্কুলে এক্সামেরও সময় ঘনিয়ে এসেছে।পাখির দিকে একবার তাকাতেই শান বুঝতে পারে বীষণ তাড়ার মাঝে আছে।কোলের উপর থেকে ল্যাপটপ সড়িয়ে বিছানায় রাখল।ধীরপায়ে হেয়ার ড্রায়ার হাতে নিয়ে পাখির চুল গুলো শুকাতে সাহায্য করে।

পিছন ফিরে মুচকি হেসে ওঠে পাখি।কিন্তু ব্যপার টা মন্দ লাগছে না। বরং খুবই ভালো লাগছে।হঠাৎ ডেকে ওঠে শান
“পাখি”
“হুমমম”
“জবটা ছেড়ে দাও”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অবাক হয়ে পাখি শানের দিকে ফেরে।চোখেমুখে অনেক প্রশ্ন জমলো যেন।শান বুঝতে পেরে স্বাভাবিক ভাবে আবারও পাখিকে ঘুরিয়ে দেয়।চুলে বিলি কেটে বলে,”আমি চাই তুমি মাস্টার্সে এডমিশন হও।আপাতত জব ছাড়ো।জব আর পড়াশুনা আবার সংসার সামলানো কোন অংশেই যুদ্ধের থেকে কম কিছু না।আগে পড়াশুনাটা শেষ করো।তারপর যদি ইচ্ছে হয় জব করবে, তাহলে করবে । না ইচ্ছে হলে করো না।আমার তরফ থেকে কোন প্রেসার থাকবে না।তোমার সব ডিসিশনেই আমায় পাশে পাবে”
মূহূর্তেই পাখির মুখটা কালো হয়ে যায়।কারণ সে আর চায় না পড়াশুনা করতে।সে চায় সংসার আর চাকরি টা করতে।

“আমি আর পড়ব না ডাক্তার সাহেব।আমার পড়তে ভালো লাগে না আর।কতো পড়ে আর!
আমি জবটা কন্টিনিউ করতে চাই”,অনুরোধের সুরে বলে পাখি।
শান ওকে টেনে এনে বিছানায় বাসায়।মুখোমুখি নিজেও বসে।
“লিসেন পাখি।আমার এমন কোন অভাব ধরে নি যে জবটা তোমার লাগবেই লাগবে।তাই আমি বলি আগে যোগ্যতা অর্জন করো তারপর তোমার চয়েজ তুমি কি করবে।তবে যাই করো তোমায় জব করতে দেবো না।আমি দেখেছি কয়েক রাতে তোমার মাথা যন্ত্রনা করছিলো”

পাখি আর কিছু বলতে পারে না।সত্যি কিছুদিন থেকে রাত হলে প্রচুর মাথা যন্ত্রনা করে পাখির।যদিও শানকে মুখ ফুটে কিছু বলে না।তবুও শান বুঝে যায়।
“আচ্ছা করবো না।তাহলে ম্যামকে জানিয়ে দেই”
“আমি জানিয়েছি গত পরশু”
“কিহহহহ”

রান্নাঘরে সকাল থেকে এটা ওটা রাঁধছেন শর্মিলা।এতোদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে দিশেহারা তিনি।কোনটা কখন রাঁধবেন সব যেন তার নখদর্পণে।
“মা, আজকেই চলে যাবেন?”
হঠাৎ পাখির কথায় মাথা তুলে তাকায় শর্মিলা।আবার কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে, “হ্যা মা আজই যাবো।”
“আমাদের সাথে থাকুন না মা”,বেশ দরদমাখা স্বরে অনুরোধ করে পাখি।
“উুহু, ও বাড়িতে একজন বয়স্ক লোক।তাকে রেখে এভাবে থাকা উচিত হবে না”,দরজা দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলে শান।পাখি কিছুক্ষন নজর ঘুরিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো

“সত্যিই তো তিনি তো ভুল কিছু বলেন নি।”
শানের কথায় শর্মিলা ভিতরে ভিতরে একটু খুশি হোন।শান মায়ের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায়।
“কি রান্না করছো আম্মা?”,
“তোর পছন্দের তরকারি কুচো চিংড়ি মাছ দিয়ে লাউ ভাজি।”
“আহহহ,ভাবতেই জিহ্বে পানি চলে এসছে”
সবাই নিঃশব্দে হেসে ফেলে।কোথা থেকে ইনায়াহ্ এসে পাখির কাছে দাঁড়ায়
“একটা কথা বলবে, মা?”

“কি কথা বল না”,আশ্বস্ত করে শর্মিলা।
“আমি তোমার সন্তান হওয়ার মতো কোন যোগ্যতা রাখি না তাই না?”
খুন্তি ছেড়ে দেয় শর্মিলা।সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পরে।পাশ ফেরে শানের দিকে চেয়ে বলে,”এসব আবার কি ভাবো বাবু?”
“মনে হচ্ছে ”

“সেরকম টা নয়।এখানে তোমার কোন দোষ নেই।নিয়তি আমাদের আলাদা করেছিলো আর আজ নিয়তিই এক করেছে।এসব ভেবে মন ছোট করিস না।”,ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে শর্মিলা।
শান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবজির জালি থেকে দুটো পাকা টমেটো হাতে নিয়ে পাখির দিকে তাকিয়ে শর্মিলাকে বলে,”আম্মা ধুয়ে দেও।জানো তো এ বাড়িতে কেউ আমার হাতের কাজ করে দেয় না”
সরুচোখে পাখি শানের দিকে তাকায়।বেশ অবাক হয় পাখি।শর্মিলা টমেটোগুলো ধুয়ে শানের হাতে দিতে দিতে বলে,”ওসব তুই না বললেও আমি জানি বউ মা তোর কতো খেয়াল রাখে”

পাখি এবার বাম ভ্রু টা উচিয়ে বুকের কাছে দুহাত গুঁজে শানের দিকে তাকায়। শান উপায়ন্তর না পেয়ে পাখিকে পাশ কাটিয়ে চলে আসে ড্রয়িং রুমে।পাখি বিড়বিড় করে বলে,”দাঁড়াও মজা দেখাই”
“মা, ও মা “,মুখ ভরে শর্মিলাকে ডাকে পাখি।পাখির ডাকে কান খাড়া করে দেয় শান।কারণ ডাকেই বুঝা যাচ্ছে ঘাপলা আছে।
“হ্যাহ, বলো”

“বলছি যে মা,আমি ইনায়াহ্ সহ আপনার সাথে যাই?মানে ওখানে কয়েকটা দিন থাকি?”
শর্মিলা সন্দিহান চোখে পাখির আগা-গোড়া দেখে নেয়।পাখি সেদিকে তোয়াক্কা না করে ন্যাকামির স্বরে আবার বলে,”আপনাদের মা ছেলের পূনর্মিলন দেখে মাকে আজ খুব মনে পড়ছে।ওখানে আপনার সাথে কয়েকদিন থাকি”
শর্মিলা আর কিছু বলতে পারে না।অনুভব করতে পারেন তার ছেলে যেভাবে বড় হয়েছে এই মেয়েটাও তো সেরকম কষ্ট করেই বড় হয়েছে।
“কিন্তু বাবু কি যেতে দেবে?”

“কেন দেবে না মা,আপনি বললে ঠিকই দেবে।আর আমরা কাল বা পরশু না হয় চলে আসব”,বলেই আড়চোখে শর্মিলার দিকে তাকায় পাখি। বোঝার চেষ্টা করে ট্রিকস টা কতোটা কাজে লাগলো।
“আচ্ছা আমি কথা বলে দেখি কি বলে ও”,বলে ড্রয়িংরুমে শানের কাছে আসে শর্মিলা।
“অসম্ভব”

চমকে ওঠে শান।চিল্লিয়ে বলে কথাটা। একবার রান্নাঘরের দিকে নজর ফেলে বুঝতে পারে পাখি চোখ ছোট ছোট করে মুচকি হাসছে। শানের মুখের অবস্থাটা দেখার মতো।
নজর সরিয়ে বলে, “আম্মা ওর কোথাও যাওয়া হবে না।সসামনে ওকে মাস্টার্সে ভর্তি হতে হবে।পপড়াশুনার চাপ”,থতমত হয়ে বলে শান
“মেয়েটা দুটোদিন থাকতে চাইছে আমার সাথে। যাক না।”
“না আম্মা।তুমি বুঝতেছ না”,চোখ মুখ কুচকে বলে শান।
পাখি দ্রুত এগিয়ে এসে শর্মিলার পাশে বসে বলে,”আমি যাবো মা।মনটা কেমন করছে আমার।কয়দিন থাকলে ভালো লাগবে”

শানের দিকে তাকাতেই শান যেন চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে ওকে।কটমটে দৃষ্টিতে চেয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”যাওয়া হবে না বলেছি তো ”
শর্মিলা বাঁকা হেসে বলে,”আচ্ছা তুইও চল তবে”
“যাবো না আমি, ওরে নিয়ে যাও”,ঠান্ডা কন্ঠে বলে শান উপরে চলে যায়।পাখি হেসে ফেলে শব্দ করে।শান সিঁড়ি থেকে দেখে আবার উঠে যায়

সকাল বেলা রাফি ইনায়াহ্’কে স্কুলে দিয়ে আসে।রাখিকে বলে দেয় জব ছাড়ার কথা।একটু মন খারাপ করলেও পরোক্ষণে শানের সিদ্ধান্তে একমত হয় রাখিও।
শর্মিলা পাখিকে সাথে করে চলে যায় ও বাড়ি।শান মুখ গোমড়া করে হসপিটালে যায়।
এ বাড়িতে আসার ঘন্টা খানিক হয়েছে এর মাঝে একটি বারও শান কল করে নি।পাখি কল করলেও রিসিভ করে নি।কেমন যেন চাপা অভিমান জমা হয় মনে।মনকে বোঝায় আর কল দেবে না সে শানের কাছে।পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছে সে।তবুও মন ভালো লাগছে না তার।শানকে একটু মজা বুঝাতে নিজেই সে মজা হারে হারে টের পাচ্ছে যেন।

উপরের বেলকোনি ওয়ালা ছোট ঘরটায় পাখির থাকার বন্দোবস্ত করেন শর্মিলা।কতোবার নিজের সাথে রাখতে চেয়েছিলো শর্মিলা। কিন্তু পাখি থাকে নি।কারণ তার বিশ্বাস শান তাকে সারাদিন ভুলে থাকলেও ঘরে ফিরে অবশ্যই তাকে কল করবে।আর রাতে শ্বাশুরির ঘরে থাকাটা কেমন সমীচীন লাগল না তার।তাই এই ঘরেই থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
“উনি কি করছে এখন?একটি বারও কি কল টা রিসিভ করা যায় না?এতো রাগ? দুপুরে খেয়েছে কিনা তাও তো জানতে পারছি না”
“বউ মা খেতে আসো”

শর্মিলার ডাকে ভাবনার সুতো ছেড়ে পাখির।মুখটা পাংশুটে করে আপন মনে বলে, “খেতেই তো ইচ্ছে করছে না”
“ভাবি, বড় মা খেতে ডাকছে।খাবেন না?”,বলতে বলতে ঘরে ঢোকে রানু।
মুখে মিছে হাসি টেনে পাখি বলে,”হ্যা খাবো।কিন্তু আমার তো এখন ইচ্ছে করছে না।”
“বড় মা আপনাকে টেনে নিয়ে যেতে বলেছে। চলুন।নয়ত আমাকেই বকবে”,হরবরিয়ে কথাগুলো বললো রানু।

“আচ্ছা, চলো”,বলে অভিমানে বিছানার উপর ফোনটা ছুড়ে ফেলে চলে যায় পাখি।
ডায়নিং টেবিলে হরেকরকমের খাবারের আয়োজন করেছে সবাই।পাখির চোখ কপালে উঠে যায়।খান সাহেব একে একে সার্ভ করছে দেখে পাখির ঠোঁটে আপনাআপনি হাসি ফুটে ওঠে।শর্মিলা চেয়ার টেনে বসতে বসতে পাখিকে ইশারা করে বসতে।চোখের ইশারায় খান সাহেবকে দেখিয়ে বলে,”এতোসব কিছু উনিই যোগাড় করেছে।আমাকে কিছুই করতে দেয় নি”

পাখি অবাক হয়ে তাকায় খান সাহেবের দিকে।মুচকি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলে,”এ বাড়িতে যদিও এটা দ্বিতীয় বার আসা তবুও এটাই প্রথম।আর একমাত্র ছেলের বউকে ভালো মন্দ খাওয়াবো না তা কি হয়”
খান সাহেবের কথায় সবাই হেসে ওঠে।প্লেটে খাবার নিয়ে একের পর এক নাড়াচাড়া করছে পাখি।
“বউ মা, রান্না ভালো হয় নি”

চমকে পাখি মাথা তুলে তাকায়।জোড় করে হাসি টেনে বলে,”সেরকমটা নয় মা”
“তাহলে?”
“কিছু না মা”,বলে জোড় করে খাবারে মনোযোগ দেয় পাখি।
শর্মিলা বেশ বুঝতে পেরেছে শানের সাথে এখনো কথা হয় নি পাখির যার জন্যেই মন খারাপ।মুচকি হেসে খেতে খেতে বলে,”দেখি তো ছেলেটা কি করছে”

খাওয়ার ফাঁকে ফোন দেয় শানের কাছে।মাথা তুলে অধীর আগ্রহে শর্মিলার দিকে তাকিয়ে থাকে পাখি।
কিছুক্ষন কথা বলার পর শর্মিলা ফোন রেখে দেয়।পাংশুটে মুখে পাখি ভাবতে থাকে,”আমি এতোগুলো ফোন দিলাম…..!”
“বাবুর নাকি খাওয়ার মতো সময় হয় নি। একটু পরেই খেয়ে নিবে”,

পাখির এতোসব খাবার একদমই আর ভালো লাগছিলো না।কোনমতে কিছু মুখে দিয়ে দ্রুতই উঠে যায় উপরে।হতভম্ব হয়ে সেদিকে চেয়ে থাকে খান সাহেব।
শর্মিলা হেসে বলে,”ওদের দুজনের মাঝে একটু মনোমালিন্য হয়েছে।চাপ নিয়েন না।আমার বিশ্বাস বাবু আসবে এ বাড়িতে”
“আচ্ছা আচ্ছা “,বলেই আবারও খাওয়ায় মন দেয় খান সাহেব।

দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয় তবুও শানের কোন খবর মেলে না। এদিকে ঠিকই মায়ের সাথে সারাক্ষন কথা বলেই চলেছে।পাখি বেশ বুঝতে পেরেছে এভাবে আসাটা উচিত হয় নি তার।নিজে নিজেই বিড়বিড় করে, “মাত্র কয়েকটা ঘন্টা তাকে ছেড়ে এসেছি তাতেই এতো অস্থির লাগছে কেন।মনে হচ্ছে কতো বছর তার সাথে দেখা হয় না,কথা হয় না।আমার কি এভাবে আসাটা ভুল হলো?”

শানের চিন্তায় চিন্তায় কেটে যায় পুরো সন্ধ্যা।দুপুরের পর ইনায়াহ্’ও এ বাড়ি চলে আসে।বার বার চেষ্টা করছে সবার মাঝে, সবার সাথে হাসিখুশি থাকতে কিন্তু পারে নি।শানের কথা মনে পড়েছে খুব।মনটা বিষিয়ে উঠেছে যেন।সকলের জোড়াজুড়িতে রাতের খাবারটা কোনমতে খেয়ে নিয়েছে পাখি।এরপর গোমড়া মুখে ঘরে চলে আসে।

বার বার ঘুমানোর চেষ্টা করেও কোন লাভ হচ্ছে না আজ।শানের চিন্তা আর শানের মুখটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না সে।কল করে শানের কাছে।দুই বার রিং হয়ে কেটে যায়।তৃতীয় বার কল করতেই রিসিভ করে শান।পাখির মুখের সমস্ত বুলি যেন ফুরিয়ে গেছে।
“হ্যা কিছু বলবা? “,কাটকাট কন্ঠে প্রশ্ন করে শান।
পাখি কিছু বলতে পারে না।বালিশে মুখ গুঁজে চুপ করে থাকে।

“তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শোনাতে কল করেছো বুঝি?”,পাখির জবাব না পেয়ে আবার বলে শান।
পাখি মাথা তুলে বিছানার উপর বসে পরে। ঠোঁট উল্টে বলে,”সারাদিন কল ধরলেন না যে? ”
“এমনিই, আমার ইচ্ছে”
পাখি আর কোন কথা খুঁজে পায় না।কেমন যেন গায়ে পড়া লাগছে তার নিজেকে।খট করে ফোন টা কেটে বালিশের কাছে রেখে দেয় সাইলেন্ট করে।

শান বাড়ি ফিরেছে অনেকক্ষন হলো।পুরো ঘরে পাখির শরীরে গন্ধ এখনো রয়ে গেছে।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াশরমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে ফ্রিজ খুলে খাবার গরম করে নেয়।একা একা খেতে মোটেই ইচ্ছে করছে না তার।ফোনের গ্যালারিতে নিজেদের নানা খুঁনসুটির ছবি বের করে দেখতে শুরু করে শান।খাওয়া শেষে পুরো বাড়িটা ভালো করে দেখে নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম এসে জড়ো হয় চোখের পাতায়।

মাত্র কয়েক মিনিট পরেই সে ঘুম উবে যায় কর্পুরের মতো।পাশ ফিরে পাখির শোবার জায়গার দিকে তাকায় নিষ্পলক।কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে তার।

মন খারাপের কাছে ব্যর্থ হয়ে পাখি বেলকোনিতে এসে দাঁড়ায়।ছোট ছোট ফুলের টব সেখানে টাঙ্গানো।চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে পাতাগুলো।এমনি সময় এ সামান্য সৌন্দর্যটুকুই পাখির মন ভালো করার জন্যে যথেষ্ঠ ছিলো কিন্তু আজ হচ্ছে না।

সময় তখন ১ বেজে ২০ মিনিট।বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড় হয়।চাঁদের আলোয় চারপাশ পরিষ্কার বোঝা গেলেও গাড়ির মানুষ টা কে বুঝতে পারছে না পাখি। কারণ এ বাড়ির গেইটের সাথে বড় কৃষ্ণচূড়া গাছটার ছায়া ঢেকে দিয়েছে মানুষটার পুরো শরীর।ভ্রুকুচকে সেদিকে তাকিয়ে থাকে পাখি।

লোকটা ফোন বের করে কাউকে কল করছে যেন।একবার কেটে যেতেই আবার কল করে। তাতেও কেটে যায়। এবার বিরক্ত হয়ে গাড়ির শেডে একটা কিল বসায়।চাঁদের আলোয় মুখের বাম পাশ বুঝতে পারে পাখি। এবার ভাবনার উদায় হয় দৌঁড়ে ঘরে গিয়ে দেখে অনেকগুলো মিসড্ কল।লক খুলে চোখ ছানাবড়া তার।

“এতোবার উনি কল করেছে”
তড়িঘড়ি করে ব্যাক করতেই চাপাস্বরে ধমকিয়ে ওঠে শান।
“কতোক্ষন ধরে কল করছি আমি।গাধি কোথাকার।ফোন কোথায় তোমার?”
পাখি কিছু বলতে পারে না।মুখে অজানা ভালো লাগায় হাসি ফুটে ওঠে।ফোন কানে নিয়েই বেলকোনিতে চলে আসে নিশ্চিত হওয়ার জন্যে।

এদিকে শান হ্যালো হ্যালো করে বিরক্ত হয়ে কেটে দিয়ে আবার কল দেয়।সবটাই উপর থেকে পরোখ করে পাখি।এবার কল রিসিভ না করেই খুব সাবধানে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। সদর দরজা খুলতেই ভিতর থেকে কেউ শব্দ করে
“উহুম উহুম”
চমকে তাকায় পাখি।কাচুমাচু করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।
“এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো বউ মা?আর তুমি তো এ জায়গার কিছু চেনো না তাহলে?”
শর্মিলা সবটাই দেখেছে তার ঘরের জানালা দিয়ে।

খান সাহেব বেশ রাত অবধি জেগে জেগে বই পড়েন।আজও তার ব্যতিক্রম নয়।জানলা দিয়ে তিনি বেশ বুঝতে পারলেন গেইটের সামনে কেউ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে।শর্মিলাকে ডেকে বলেন,”দেখো তো চেনা যায়?”
“আরে এটা তো বাবু।এতো রাতে এখানে কেন”,ধড়ফড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বলে শর্মিলা।গা ঝাঁকিয়ে হেসে খান সাহেব বলেন, “যাও বউ মা গেলে, দরজা লাগিয়ে এসো”
“কি হলো বউ মা কিছু বলছ না যে”,বলে মিটিমিটি হেসে ওঠে শর্মিলা।
আমতাআমতা করে পাখি বলে,”মা উনি এসেছে”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৪

এবার আর হাসি আটকে রাখতে পারে না শর্মিলা।হেসে কুটিকুটি হয়ে কাছে এসে বলে,”এরকম আর কখনো করবে না।আমার ছেলেকে ছেড়ে কোনদিন কোথাও যাবে না।”
মাথায় গাট্টা মেরে বলে,”নিজেও থাকতে পারো না আর আমার ছেলেটাও তো পারে না দেখছি।যাও আমি কাল বা পরশু ইনায়াহ্’কে নিয়ে যাবো”
পাখি মাথা তুলে লজ্জা পেয়ে বলে, “আসি মা”
“পাগলি ”

গাড়িতে বসে আছে পাখি।শান কোন কথা ছাড়াই ড্রাইভ করে চলছে।বাড়ি পৌঁছিয়েও একটা কথা বলে নি সে।পাখি পা টিপে টিপে ঘরে ঢোকে।ঘড়ের অবস্থা দেখে আপনাআপনি হা হয়ে যায় পাখির মুখ। সারাঘরের সব জিনিস লণ্ডভণ্ড।সিগরেটের শেষ মাথা,সাথে সিগারেটের ছাঁই তো ফ্রি। কাবার্ডের একটা কাপড়ও ঠিক জায়গায় নেই।
খানিক পরেই শান ঘরে ঢোকে।
“এসব কি?”,অাহতস্বরে প্রশ্ন করে পাখি।
শান কোন উত্তর না দিয়ে পাখিতে টেনে আনে বিছানায়।জোড় করতেই পাখি হকচকিয়ে ওঠে।
“কি হচ্ছে কি? আগে বলুন এসবের মানে কি? ”

শান তাতেও কিছু না বলে পাখিকে বুকের সাথে চেপে ধরে শুয়ে থাকে।ঘনঘন শ্বাস ফেলে কাঁধে। পাখি ছোট্ট ছানার ন্যায় চুপচাপ শুয়ে থাকে।নীরবতা ভেঙ্গে শান কাঁধে চুমু দিয়ে বলে, “ফের যদি কোন আমায় ছেড়ে থাকার কথা ভাবো এর থেকেও ভয়ানক ঝড় তুলব বাড়িতে”
শানের কন্ঠের প্রগাঢ় কথা যেন অন্তরকে ভরিয়ে তোলে।মিষ্টি হেসে বলে,”যাবো না”
“ঘুমাও এবার। আর আমাকেও ঘুমাতে দাও”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৬