আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৪৫

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৪৫
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

রনি-রখির বিয়ের আর মাত্র দুটো দিনই বাকি।শান অনেক বেশি ব্যস্ততার মাঝে সময় পার করছে।একদিকে রনির বিয়ের বন্দোবস্ত আরেকদিকে বাৎসরিক মিটিং এর ডেটও পরে গেছে।চিকিৎসা সেবায় কর্মরত দেশ বিদেশের অনেক মানুষের আগমন ঘটবে সে সিটিং এ।মিটিং এর স্থান হিসেবে শানের মেডিকেলকেই নির্বাচন করা হয়েছে।এর পিছনে যথেষ্টই কারন রয়েছে।বেশ পরিপাটি,পরিচ্ছন্ন,মনোরম শানের মেডিকেল।যেটা ভিজিটরদের বেশ নজর কেড়েছে।

দিনের বেশিরটা ভাগ সময় শানকে মেডিকেলে কাটাতে হচ্ছে।ফোনের মাধ্যমেই বিয়ের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সাথে।এতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে।
আজকের দিনটাকে মেহেদী ফাংশন হিসেবে ঠিক করা হয়েছে। পাখির শরীর অনেক বেশি দূর্বল হওয়া সত্ত্বেও বাড়ির সকল মহিলাদের সাথে নিয়ে চলে যায় রাখিদের ফ্ল্যাটে।বিয়ে উপলক্ষে অনেক মেহমান এসেছে এখানেও।পার্লারের মেয়েরা রাখির হাত সাজিয়ে দিচ্ছে নানান রঙ্গের নকশায়।
মাঝখান থেকে কেউ একজন বলে ওঠে,”হাতের মাঝে আর(R) লিখে দিন আপু”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাটা কানে আসতেই লজ্জায় মিইয়ে যায় রাখি।
দূর থেকে পাখি সেসব দেখে মিটিমিটি হেসে ওঠে।
মেহেদীর ফাংশন শেষ করে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায় ।ভীষণ ক্লান্ত সবাই।যে যার মতো ঘরে গিয়ে শুয়ে পরে।পাখি হাতের টুকিটাকি কাজ শেষ করে সদর দরজার দিকে একনজর তাকায়।সবার অগচোরে মনের মধ্যকার সারাদিনের অপেক্ষাটা এবার আর সময়ের গতি মানতে চায় না। সারাদিনে খুব একটা কথা বলার সুযোগ হয় নি শানের।মনের মাঝে হাজার অভিমান জমছে পাখির।

আবার নিজে থেকেই সে অভিমানগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে।সদর দরজাটা লাগিয়ে খুব ধীর পায়ে পাখি উপরে নিজের ঘরে চলে যায়।ঘরে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই মুচকি হেসে ওঠে নিজের ঘর টা দেখে।মূহূর্তেই সারাদিনের জমানো অভিমান ভেঙ্গে চূর্ণ হয়ে যায়।খুব ধীরপায়ে এগিয়ে ছুঁয়ে দেয় দেয়ালে টাঙ্গানো ছবিগুলো।গাছ গুলো ছুঁতেই যেন একরাশ মুগ্ধতা এসে গ্রাস করে।বেলকোনিতে বসে গ্রিল টা দুহাতে চেপে নিচের দিকে চেয়ে থাকে পাখি।একে তো দূর্বল শরীর তারউপর সারাদিনের ক্লান্তি। ওভাবে থাকতেই কখন চোখ লেগে আসে বুঝতে পারে না।

ঘুম ভেঙ্গে যায় কারো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়ার মিষ্টি অনুভূতিতে।মন না চাইলেও চোখদুটো টেনে খোলে পাখি।চিরচেনা সেই সুগন্ধটা নাকে আসতেই ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিত হাসির রেখা ফুটে ওঠে।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আকাঙ্খিত মানুষটাকে।
“উঠলে তবে!”
পাখির ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে শান।কোলে থেকেই গলার কাছের শার্টের বোতাম দুটো খুলতে খুলতে মুচকি হেসে পাখি জবাব দেয়,”হুমম”

“সারাদিনে একটা ফোনও দিলেন না।আমি ফোন দিলে দু এক মিনিট কথা বলে রেখে দিলেন।আমার খুব রাগ হয়েছিল”,ঠোঁট উল্টে বলে পাখি।
শান কোন জবাব না করে সোজা বিছানায় শোয়ায় পাখিকে।কপালের কাছের চুলে হাত বুলিয়ে শান স্থীর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।
” কীইইই”,ঘুম জড়ানো কন্ঠে প্রশ্ন করে পাখি।
“মিটিং পরে গেলো আগামি পরশু দিন।এদিকে বিয়ের আয়োজন।অনেক বেশিই ব্যস্ত জানপাখি”, পাখির পাশে বসতে বসতে শান বলে।

পাখি ভ্রুকুটি করে বলে,” মানে কি!আগামি পরশু না বিয়ে?আর আপনার মিটিং মানে!
“হুমম,সেটাই তো।কিন্তু কিছু করার নাই।ফরেইন ডক্টররা আসছে। মিটিং পিছানো সম্ভব না।”
শান কাবার্ডের দিকে এগোতে এগোতে বলে,”সমস্যা নেই।কমিউনিটি সেন্টারে সবকিছুর বন্দোবস্ত আমি করেছি।খাবার থেকে শুরু করে বিয়ের শেষ অবধি সবটা আমি এরেইঞ্জ করেছি।এতো দূঃচিন্তা করতে হবে না”

“তারমানে বিয়েতে আপনি থাকবেন না?”, হতাশ কন্ঠে প্রশ্ন করে পাখি
শান একটা ঢিলেঢালা টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে নিয়ে আসে।ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,”মিটিং সারাদিন চলবে।আনুমানিক রাত ৮ টার পর শেষ হতে পারে।তার আগেও শেষ হতে পারে।তো তখন আমি অন্যান্য কলিগদের নিয়ে ডিরেক্ট কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছাব”
পাখি আর কিছু বলতে পারে না।তার আগেই শান ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।বড্ডো ক্লান্ত শরীর তার।গোসল টা সাড়তে পারলেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।

কিছুসময় পর শান তোয়ালেতে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়।পাখি সেদিকে এক ধ্যানে চেয়ে থাকে।
শান সামনে তাকিয়ে এগিয়ে আসে পাখির কাছে।তোয়ালেটা এগিয়ে দিয়ে বিছানায় পাখির সামনে মাথা এলিয়ে বসে পরে।মুচকি হেসে পাখি সোজা দাঁড়িয়ে মাথাটা মুছে দেয়।
“এতো রাত হলো আজ?কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে?দরজা কে খুলে দিয়েছে?”
“আম্মা”

“বাবু তো তার বাবাকে খুব মিস করছিলো “,বলেই নিঃশব্দ হেসে দেয় পাখি।
শান ক্লান্ত শরীরে নোয়ানো মাথাটা ঠেকিয়ে দেয় পাখির পেটে।দুহাতে জড়িয়ে ধরে কোমড়।অস্ফুটস্বরে বলে,” আই মিস ইউ”

শানের কন্ঠে কিছু তো একটা ছিলো যা পাখির মধ্যকার নারীত্বকে জাগিয়ে তোলে।বুঝতে অসুবিধা হয় না শানের না বলা কথাটা।ভেজা তোয়ালেটা রাখতে সরে আসার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই শান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাখির কোমর।ক্ষীণ শব্দে হেসে পাখি তোয়ালে টা ছুড়ে মারে চেয়ারের উপর।
স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে শানের চুলে বিলি কেটে দেয় পাখি।কিছুক্ষন পরে শান মাথাটা উঠিয়ে পাখির দিকে তাকায়।চোখে চোখ পড়তেই ও চোখে আটকে যায় পাখি।কি গহীন সে চাহনী!যা উপেক্ষা করা পাখির সম্ভব না।শানের মুখটা দুহাতে ধরে কপালে গাঢ় চুমু দেয়।প্রশ্নাতুর অসহায় চোখে তাকায় পাখি।

শান সেদিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে।মুচকি হেসে দেয় শান।পেটে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
চট করে কোলে তুলে নেয় পাখিকে।একটা নিষ্পলক চাহনীতে চেয়ে পাখি বলে,”ডাক্তার সাহেব”
“হুমম”
“আমার মনটা কেন এমন করে? চারপাশে এতো মানুষ থাকে সারাদিন তবুও নিজেকে খুব একা লাগে কেন?”

শান মুচকি হেসে বিছানাতে শুয়ে দেয় পাখিকে।নিজেও গিয়ে পাশে শুয়ে বলে,”আগের মতো তোমায় সময় দিতে পারছি না জান।আমিও বুঝি তুমি আমায় কতোটা মিস করো।কি করব বলো,ব্যস্ততা……”
“না সে কারণে নয়”, শানের কথার মাঝেই বলে ওঠে পাখি।
শান পাশ ফিরে মাথার ভার এক হাতে ঠেকিয়ে ভ্রুকুটি করে বলে,” তাহলে!”
পাখি শানের দিকে ফিরে এক ধ্যানে চেয়ে থাকে।অস্পষ্ট স্বরে বলে,”আজকের রাতটা যদি আমাদের শেষ রাত হয়!”

“হোয়াট?…দেখি এদিকে আসো”,
হকচিয়ে ওঠে পাখি। বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে চাপাস্বরে ধমকিয়ে শান বলে,” একটু আগে কি বললে তুমি?”
“নাহহ কিছু না”
শান বুঝতে পারে না পাখি হঠাৎ কেন এভাবে বললো।

কিছুক্ষন পর পাখি আবার বলে,”আমার কেন জানি না মনে হয় আমি বেশি দিন বাঁচব না ডাক্তার সাহেব।তবে আল্লাহ্’র কাছে একটাই চাওয়া আমি যেন আপনাকে বাবা বানিয়ে তবেই পৃথিবী ছাড়তে পারি”
শান পাখিকে তুলে বসায়।নিজে সামনে বসে বলে,”এসব কি ধরনের কথাবার্তা পাখি।এধরনের হাজারও কথা একজন অন্তঃসত্তা নারীর মনে উদয় হয়।তবে সেটা ডেলিভারির আগে আগে।আর তুমি……
তুমি খুব অভার থিংকিং করো।এটাই তোমার প্রবলেম। বুঝেছি এমডির পদ থেকে সরে আসতে হবে।আমি হাজারও তালে বেতাল থাকি;তোমার খোঁজ রাখতে পারছি না ভালো করে।আর সে সুযোগে আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঢুকে গেছে তোমার”

পাখি ছলছলে চোখে মাথা তুলে শানের দিকে তাকায়।এগিয়ে গিয়ে গলা জড়িয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে,”আমার অতো বেশি টাকা পয়সার দরকার নাই ডাক্তার সাহেব।আমার শুধু আপনাকেই দরকার।আপনার সঙ্গ দরকার”
শান বুঝতে পেরেছে পাখির মনের অবস্থা একদমই ভালো না।চুলে হাত বুলিয়ে বলে,”আচ্ছা এই মিটিং টা হয়ে যাক তারপর আমি সবটা আগের মতো করে দিবো। কেমন!”

শানের গলা ছেড়ে পাখি সোজা হয়ে বসে।শান চোখের পানি মুছিয়ে বলে,”আমার পুতুল”
শানের কথায় লজ্জামিশ্রিত মুচকি হাসি উপহার দেয় পাখি।শান দুই গালে চুমু খেয়ে বলে,”বাচ্চার বাবা তে চলেছি অথচ এখনো আপনি আজ্ঞে ছাড়লে না, না?”
শানের দিকে চেয়ে পাখি বলে,”আপনি টাই বেষ্ট”
“না না, আমার ভালো লাগছে না আর।নতুন নতুন ভালো লাগত।এখন কেমন যেন আপনি ডাকটা ভালো লাগছে না। তুমি করে ডাকবা”, ছোটবাচ্চাদের মতো একরোখা জিদ করে শান।
পাখি হেসে দিয়ে বলে,” এমন ছোট বাচ্চাদের মতো করছেন কেন?হুমমম!আপনি টা কতো ভালো!কতো সম্মানের তা কি আপনি জানেন?”

গম্ভীরকন্ঠে শান জবাব দেয়,”আমার জানতে হবে না”
এরপর পাশ ফিরে শুয়ে পরে।পাখি বুঝতে পারে শানের অভিমানটা কোথায়।একটু এগিয়ে শানের গালে চুমু এঁকে বলে,”এভাবে রাগ করো না প্লিজ”
পাখির কথা শানের কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই তড়াক করে উঠে বসে শান।পাখি ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে শানের দিকে।

“কি বললে, আবার বলো?”অবাক হয়ে প্রশ্ন করে শান।
পাখি বুকের কাছে দুবার থু থু ছিটিয়ে বলে,” আপনি কি মানুষ?এতোটা ভয় কেউ দেখায়?”
“কথা কাটাবা না একদম, বলো কি বললে একটু আগে”
পাখি চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে বলে,”আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি”
তৎক্ষনাৎ শান পাখির কন্ঠনালিতে চুমু খেয়ে বলে,”আমিও তোমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসি পাখি।সারাটা জীবন ভালোবেসে যাব একই ভাবে”

সকালের সবটাই আজ আগের মতো মনে হয় পাখির।নিজের উপর জড়িয়ে রাখা শানর হাতটা সরিয়ে আস্তে করে উঠে যায় ওয়াশরুমে।গোসল সেড়ে ভেজা চুল গুলো তোয়ালেতে পেঁচিয়ে বাহিরে আসে পাখি।চোখ পড়ে বিছানার উপর;শান নেই।বেলকোনিতে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে শান।সেদিকে একনজর তাকিয়ে শাড়ির আঁচলটা কোমড়ে গুঁজে নেয় পাখি।এরপর বিছানাটা গুছিয়ে রাখতেই শান পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।ভেজা চুলে শ্যাম্পুর গন্ধ নিতে থাকে লম্বা শ্বাসে।

“কি করছো?”, হেসে বলে পাখি।
নিরুত্তর শান আপনমনে নিজের কাজ করে চলছে।
” ছাড়ো….অনেক মেহমান বাসায়।নিচে যেতে হবে”
“উুহু,তোমার যাওয়া লাগবে না।ওখানে তোমার কোন কাজ নাই।হসপিটালে ফোন দিছিলাম।কাল সারাদিন মিটিং। তাই আজ ছুটি দিলাম অনেককে।নিজেদের মতো প্রেজেন্টেশন গুলো তৈরী করুক বাড়িতে বসে বসে।”

পাখিকে বুকের সাথে পিষে বলে,”আমারও ছুটি”
“সবটাই আমার জন্যে, না?”,প্রশ্ন করে পাখি।
নিঃশব্দে হেসে শান জবাব দেয়,” হুমমম।আমার বউয়ের মন খারাপ।কাল সারাদিনই প্রায় থাকব না।তাই আগের দিনটা পুরোটাই বউয়ের জন্যে লিখে দিলাম”
“বউ মা, বউ মা নিচে আসো একটু৷ কিছু দরকারি কাজ আছে মা”, নিচ থেকে শর্মিলা ডেকে ওঠে গলা ছেড়ে।

শানের বাহুডোরে থেকেই পাখি জবাব দেয়,” আসছি মা”
“ছাড়ো এবার।মা ডাকছে”, পিছনে সামান্য ঘুরে বলে পাখি।
মুখে বিরক্তিসূচক ” চ” শব্দটা বের করে শান ঠোঁট উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।পাখি সেদিকে চেয়ে বলে,”এমন বাচ্চদের করো না। আমি কাজ সেড়ে আসছি”

বলে মুচকি হেসে চলে যেতেই পাখির হাত ধরে ফেলে শান।
“আরেকটু শুকি না চুলের গন্ধটা। বেশ ভালো লাগছিলো”,
” ওয়াশরুমে শ্যাম্পু টা রাখা আছে।”,বলেই পাখি একগাল হেসে দৌঁড়ে নিচে চলে যায়।
“পাখি সাবধানে।দৌঁড়াবা না”, রেগে গিয়ে শব্দ করে বলে শান।
যেতে যেতে গলা উচিয়ে পাখি বলে,” আপনি আছেন না, আর কিছু হবে না আমার”

সারাদিনে এটা নাতো ওটা কাজে বেশ সময় কাটছে পাখির।শানও ছুটিটার বিনিময়ে স্বশরীরে বিয়ের আয়োজনে থাকার সুযোগ পাচ্ছে।আর রনি তো সেই যে ফোন কানে তুলেছে নামানামির নাম গন্ধও নেই।শান রনিকে দেখে বলে,”সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে না গর্দভ। ”
এরপর দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”রাত পোহালেই মেয়েটা তোর।এখন অন্তত নিজের বিয়ের কাজে একটু হাত লাগা”

হন্তদন্ত হয়ে রনি জবাব দেয়,”সময় নেই ব্রো, সময় নেই। আমার বিয়ের কাজ আমিই করলে তোমরা আছো কি করতে”
বলেই হনহন করে উপরে চলে যায়।
শান সেদিকে তাকিয়ে রনির কথা ভেবে হেসে ওঠে।
“কতো ছোট ভাই আমার ,অথচ আজ তারও বিয়ে”

“এই যে এটা খেয়ে নাও।স্বস্তি পাবা”, বলেই পাখি সরবতের গ্লাস টা শানের দিকে এগিয়ে দেয়।শান পাশ ফিরে নিচের ঠোঁট কামড়ে তৃপ্তির হাসি হেসে ওঠে।আশপাশে তাকিয়ে দেখে ড্রয়িং রুমে তেমন কেউই নেই।মহিলারা সবাই রান্নাঘরে হরেকরকম পিঠা বানাতে ব্যস্ত।
শান ফট করে পাখিকে একহাতে জড়িয়ে বলে,” আমার তো অন্যকিছু খেতে ইচ্ছে করছে। লাইক সুইট টাইপ”

পাখির ঠোঁটের দিকে দুষ্টু চাহনী দিয়ে শেষের কথাটা বলে শান।
চারপাশে তাকিয়ে পাখি বলে,”তুমি একটা নির্লজ্জ।ছাড়ো বলছি।কেউ এসে গেলে!”
“কেউ আসবে না।আমজাদ আঙ্কেল আর কাকাকে পাঠিয়েছি সেন্টারে,মহিলাগন রান্নাঘরে আর তোমাকে আমার ঘরে।জাস্ট দু মিনিটের মাঝেই চলে আসবা।নো এক্সকিউজ। ওকে!”
“আমি তোমায় কাছে চাই মানে এই না সারাক্ষন তুমি দুষ্টুমি করবে।তোমাকে চোখের সামনে রাখতে চাই আর তুমি তো কাছে আসলেই…..”

“আর আমি বার বার হাজার বার দুষ্টুমি করতে চাই। এখন ঘরে চলো কথা আছে”
“নাউজুবিল্লাহ্,কিরে তোদের ঘর নাই”, বলতে বলতে চোখ চেপে ধরে রোশনি।
পাখি শানের থেকে সিটকে সরে আসতেই শান বলে ওঠে,” কাকি, আসার আর টাইম পাইলা না, না?”
“ঐ হারামি তোদের ঘরে যা, যা বলছি”

পাখি ভীষণ লজ্জায় পরে যায়।দ্রুত পায়ে অন্যদিকে চলে যায়।শান মাথা চুলকে বলে,”দিলে তো লজ্জা পাইয়ে!এবার আর সারাদিনেও এই মেয়ের ধরা পাবো না”
“হ্যা রে বাবু,মেয়েটা কোথা থেকে পেয়েছিস?খুবই মিশুকে আর ভালো একটা মেয়ে”
শান মুচকি হেসে বলে,”ওর মাঝে আমার জান লুকিয়ে আছে কাকি।আমার আঁধার জীবনের আলো সে।আমি পাইনি ওকে, ও আমায় খুঁজে নিয়েছে।আর শেষমেশ আমি হেরে গেছি ওর কাছে”
হতাশকন্ঠে রোশনি বলে,”তোর মায়ের কপাল রে বাবু, এমন একটা বউ পেয়েছে।আমার যে কি হয়!”
শান রোশনির কাছে এসে বলে,”এভাবে কেন বলছো কাকি।রাখি অনেক ভালো মেয়ে।আর রাখিতো পাখিরই বেষ্ট ফ্রেন্ড”

“বলিস কি?কেউ তো বলিস নি আগে”
স্বগতোক্তি করে রোশনি বলে,”তাহলে আর কোন চিন্তাই নেই রে বাবু। বউ মার একটু হলেও ছোঁয়া আমার বউ মার মাঝে থাকবেই তাহলে!কি বলিস?”
“একদম চাচি”

সারাদিনে একটি বারের জন্যেও পাখি আর শানের কাছাকাছি যায় নি।দূর থেকে দেখা হলে চোখ রাঙ্গিয়েছে শুধু।আর শান মুচকি হেসে পাশ কাটিয়েছে।
পুরো বাড়ি আলোয় ঝলমল করছে।বিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে হলেও বাড়ি সাজাতে কোনরূপ কার্পন্য শান করে নি।মনের মতো করে সাজিয়েছে নিজের বাড়ি।তার ধারনা কেউ যেন বলতে না পারে কাকাত ভাইয়ের বিয়ে বলে খরচাপাতি কম করেছে।

আজ আরো অনেক আত্মীয় স্বজনে বাড়ি ভরে গেছে।বাড়ির মেয়েরা সবাই পাখিকে সাথে নিয়েছে।শান অগত্যা একাই ঘরে শুয়ে আছে।হঠাৎ মনে হয় মেডিকেলের কিছু কাজ রেডি করতে হবে। ল্যাপটপ নিয়ে বসে পরে।কিছুক্ষন কাজ করতেই মাথাটা ঝিমঝিম করে। দুহাতে চেপে ধরে মাথা নুয়ে থাকে।
“হুমম এটা নাও,খেলে মাথা ধরা কমে যাবে”
হঠাৎ পাখির কন্ঠে মাথা তুলে তাকায় শান।হাত বাড়িয়ে কফির মগটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে শান বলে,”সবাই ঘুমিয়েছে?”

“হুমম ঘুমিয়ে গেছে।তুমিও ঘুমাও এবার । আর কাজ করতে হবে না”, বলতে বলতে পাখি বিছানার উপর ছড়ানো ছিটানো সব কাগজ সমেত ল্যাপটপ টা উঠিয়ে রাখে।
” আরে আরে করছো কি?কাজ তো এখনো অনেক বাকি?”,চমকে প্রশ্ন করে শান।
রাগি চোখে তাকিয়ে পাখি বলে,”কাজ কাল করো।আজ ঘুমাও।দেখেছো কি অবস্থা হয়েছে চোখ মুখের।এই তুমি এই পদ ছেড়ে দাও তো।এতো খাটা লাগবে না তোমার”

শান কফির কাপটা হাত থেকে টেবিলে রেখে পাখিকে কোলে বসায়।
“এদিকে আসো।আজ যদি কাজ গুলো শেষ না করি তাহলে কাল সকাল সকাল হাসপাতালে পৌঁছে কাজগুলো শেষ করতে হবে। মিটিং শুরু হতে হতে লেইট হবে তাহলে। আর মিটিংটা শেষ করতে করতেও রাত হয়ে যাবে।”
“হোক, তবুও তুমি এখন ঘুমাও”,বলতে বলতে পাখি শানের মাথাটা আলতো হাতে মেসেজ করে দেয়।
ব্যপার টা মন্দ লাগছে না শানের।পুরো দুনিয়া ভুলে ঘুমের রাজ্যে চলে যায় কয়েক মূহূর্তেই।

সকালে হকারের কড়া ডাকে সবার আগে ঘুম ভাঙ্গে শানের।তড়িঘড়ি করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৭.৩০ বাজে।চোখ কপালে উঠে যায় যেন।ফোন হাতরিয়ে দেখে পরপর অনেকগুলো মিসড গুলো।ফোন সাইলেন্ট করা দেখে খুব একটা অবাক হয় না শান।বুঝতে পারে পাখিই সাইলেন্ট রেখেছে।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাখির দিকে তাকাতেই ঘুমন্ত মলিন মুখটা নজর কাড়ে শানের।এগিয়ে গিয়ে কপালে, গালে,চোখে অজস্র চুমু দিতেই চোখ খোলে পাখি।

শান উঠে দাঁড়িয়ে পাখিকে ঘড়ির দিকে ইশারা করে বলে,”দেখো কতোটা বেজে গেছে।আর ফোন সাইলেন্ট রাখছো কতো জরুরী কল এসেছিলো দেখো।”
পাখি চোখ পিটপিট করে বলে,”আপনি গভীর ঘুমে ছিলেন। বার বার ফোন আসলো তাই…..”
“আচ্ছা বাদ দাও। একটু কষ্ট করে উঠো।কেউ মনে হয় উঠে নি এখনো।কিছু খেতে দাও।তাড়াতাড়ি মেডিকেলে যেতে হবে।”

শান দ্রুত পোশাক হাতে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।
পাখি লম্বা পা ফেলে নিচে নেমে আসে।সত্যিই কেউ এখনো উঠে নি। কাল রাতে বেশ রাত হয়েছে ঘুমাতে ঘুমাতে।বিয়ে বাড়ি বলে কথা। তাই আর পাখি কাউকে না ডেকে নিজেই রান্নাঘরে চলে যায়।শানের জন্যে পাস্তা, জেলি সমেত পাউরুটি,এক গ্লাস কফি হাতে উপরে চলে যায়।
“এসবই করতে পেরেছি, এইটুকু সময়ে”, বলতে বলতে পাখি শানের কাগজ পাতি গুলো গুছিয়ে দেয়।
শান হাত টেনে কপালে চুমু দিয়ে বলে,”এনাফ। আর লাগবে না কিছু”
শান বসে পাস্তা মুখে দিতেই আবারও কল আসে।
“হ্যা রিশাদ বলো”

“ওকে আমি দশ মিনিটের মাঝেই চলে আসছি।ডোন্ট ওরি”
বলেই কল কেটে দেয় শান।পাখির দিকে ব্রেড তুলে বলে,”তুমিও খাও”
“আগে তুমি খেয়ে যাও।আমি সারাদিনেও খেতে পারব”, শানের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে পাখি।
শান নাছোড়বান্দার মতো ব্রেডটা ধরে থাকে।

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৪৪

” কি যে পাগলামি করছো কাল থেকে”,বলে অগত্যা ব্রেডটা খেয়ে নেয় পাখি।
“শোন, সকালের খাবার টা কমপ্লিট করে তোমরা সবাই বাড়িতে তালা মেরে চলে যাবে কমিউনিটি সেন্টারে।ওখানে আমি সবটা সেট করে দিয়েছি।তোমরা যাবা রাখিরাও চলে আসবে। সন্ধ্যার পর পরই বিয়ের কার্যাক্রম শুরু হবে।আমি তাড়াতাড়ি ওখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করব। আর হ্যা যাওয়ার সময় আমার একটা ড্রেস নিও তো।রাত হতে হতে এ ড্রেসে বিয়েতে থাকা যাবে না”, খাবার চিবোতে চিবোতে কথাগুলো বলে শান।

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় পাখি।
খাওয়া শেষে শান উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে আরেকবার আয়নায় সেট করে নিয়ে বলে,” সাবধানে চলাফেরা করবা।ওখানে খারাপ লাগলে মা অথবা রাহেলা চাচিকে বলবা।আমি মিটিং এ থাকব সারাদিন।ফোন হয়ত সাইলেন্ট থাকবে নয়ত বন্ধ থাকবে। আর আমি সুযোগ পেলে তোমায় কল করব কেমন?”
বলতে না বলতে পাখি শানের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে।

“আরেকটু পরে গেলে হয় না!”, অবুঝের মতো আবাদার করে পাখি।
শান একগাল হেসে বলে,” কাল রাতে কাজটা কমপ্লিট করলে আজ দেরিতে গেলেও প্রবলেম হতো না জান।”
বুক থেকে পাখিকে আস্তে উঠিয়ে বলে,”,আমি মিটিং তাড়াতাড়ি শেষ করেই ওখানে যাবো।চিন্তা করো না ”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৪৬