এই অবেলায় তুমি গল্পের লিংক || Sabihatul Sabha

এই অবেলায় তুমি পর্ব ১
Sabihatul Sabha

নিজের রুমে বসে খুব যত্ন করে সাজছে নূর।খুব সুন্দর করে শাড়ি পরেছে,কালো শাড়ি, খোলা চুলে একদিকে সুন্দর করে দুটি লাল টকটকে গোলাপ লাগালো,মুখে মেকাপ,চোখে কাজল সাথে আইলাইনার,মাসকারা,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগিয়েছে।হাতে দিয়েছে বাহারি সব কালো রঙের চুরি যতই হোক আজ তার প্রিয় মানুষটির বিয়ে বলে কথা।তাকে তো সুন্দর করে সাজতে হবে।আজ আর নূর চোখে চশমা পরেনি।আজ প্রথম সে সেজেছে, খুব যত্ন করে সেজেছে। নিজেকে নিজে আরো একবার ভালো করে দেখে নিলো কোনো কিছুর কমতি পরেছে কি না।

নিজের রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামতেই সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। যেনো দিনের বেলা ভূত দেখার মতো।
নূর কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা আদি ভাইয়ার সামনে গেলাম।
নূরকে নিজের দিকে এই সাজে আসতে দেখে বুকটা কেঁপে উঠল আদির।
নূর গিয়ে বললাম,’ আমাকে কেমন লাগছে আদি ভাইয়া?নূর হাসি দিয়ে ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। উত্তরের অপেক্ষা না করেই নূর আবার বলে উঠলো, ‘ জানি তো খুব সুন্দর লাগছে। এই দেখুন সবাই কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভাইয়ার পাশেই তার সদ্য বিয়ে করা বউ।সম্পর্কে আমাদের ফুপিমণির একমাত্র সুন্দরী মেধাবী, হাজারো গুণের অধিকারি মেয়ে বসে আছে।যার একটাও নূরের মধ্যে নেই।
নূর এবার আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রুহির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ ভাবি আমাকে কেমন লাগছে?
নূরকে টেনে ওখান থেকে নিয়ে আসলো ওর বোন,
নূর কি!! হচ্ছেটা কি হা,পাগল হয়ে গেছিস তুই।কি করছিস কি তুই নিজে জানিস?
নূরঃ কি করেছি আমি আজব তো!তুমি আমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলছো!দেখো মাহি আপু সেজেছি আমি, ঠিক তোমাদের মতো করে সুন্দর লাগছে না আমাকে।

মাহিঃ নূর তুই এমনিতেই অনেক সুন্দর। আয় আমার সাথে।
নূরঃ কেনো আমি এখানে থাকলে কি সমস্যা। আমি থাকি না আমিও মজা করবো, ডান্স করবো।সত হলেও চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।
মাহি নূরের দিকে ছলছল চোখে তাকালো।কতটা কষ্ট লুকিয়ে মেয়েটা হাসছে।কে বলবে এই মেয়ের তিন বছরের প্রেমিকের আজ বিয়ে তাও নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে।

আদি এখনো অবাক চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথমে একটু চিনতে অসুবিধা হলেও যখন নূর বললো,” ভাইয়া আমাকে কেমন লাগছে” তখন আদি সিউর হয় এটাই নূর। সারা দিন টইটই করে ঘুরে বেড়ানো মেয়েটাকে কেমন যেনো হঠাৎ করে বড় হয়ে গেলো মনে হচ্ছে। সব সময় চোখে চশমা, মুখে সাজ বিহীন, সারাক্ষণ জগরাটে মেয়েটাকে এখন পুরো অন্য রকম লাগছে আদির কাছে। সে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।কালো শাড়ি, খোলা চুল,চোখে চশমা বিহীন যেনো কালো পরী লাগছে নূর কে।

এদিকে রুহি রাগে চোখ লাল করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। আদি কেনো ওর দিকে না তাকিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে এই জন্যই রাগে ওর মন চাচ্ছে নূরকে শেষ করে দিতে।
নূরদের বাড়িটা সাড়ে দুইতলা।ছাঁদে একটা খুপরিঘর আছে সেটা নূরের একান্ত বেক্তিগত। এটার মধ্যে অন্য কারো প্রবেশ নিষেধ।
অনুষ্ঠান শেষে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সব কাজিনরা গিয়ে আদির রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে। টাকা না দিয়ে ভেতরে যেতে দেবে না আদিকে।

আদি দরজার সামনে এসে, সবাইকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক নূরকে দেখে হয়েছে।আদি তো ভেবেছে নূর কে আজ দেখাই যাবে না। রুমে বসে কান্না করবে আর আদি তা খুব উপভোগ করবে কিন্তু এতো দেখি উল্টো।
আদিঃ দেখ তোদের যা লাগবে কাল কে দিবো।অনেক রাত হয়ে গেছে। বউ আমার একলা রুমে। নূর কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো।

নূরঃ জি ভাইয়া সেটা তো জানি কিন্তু আগে আমাদের পাওনা না দিলে তো যাওয়া যাবে না।
নীলঃ হা ঠিক বলেছে আগে আমাদের পাওনা দাও তারপর আর তোমাকে কেউ আটকাবে না।
একে একে সব কাজিনরা একি কথা বলা শুরু।আদির চোখ বার বার নূরের দিকে যাচ্ছে। আদি ভেবে পাচ্ছে না এই মেয়ে এতো শান্ত কিভাবে।
সবার পাওনা ওদের দিয়ে আদি তার রুমে চলে যায়।

নিস্তব্ধ রাত, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে এক এলোকেশী রমনী।আকাশে মেঘের গর্জন শুনা যাচ্ছে একটু পর পর। রমণীটির কলিজা ছিড়ে যাবার মতো ব্যথা হচ্ছে। বুক কেঁপে উঠছে এটা ভেবেই তার আদি ভাই আর তার নেই।আজ সে অন্য কারো। যেখানে আদি ভাইয়ার বুকে সে ঘুমানোর কথা সেখানে তারি বেস্ট ফ্রেন্ড ঘুমাচ্ছে। তার সাথে প্রতারণা করলো তার আদি ভাই।তারি প্রান প্রিয় বেস্ট ফ্রেন্ড তার বুকেই ছুরি মারলো।এটা যেনো কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।

আজ তার খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে তার আদি ভাই তো তাকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলো। তাকে লাল টুক টুকে শাড়ি দিয়ে বউ সাজার স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলো তাহলে কেনো আজ তাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলো।আদি ভাই তো শুধু নূরের ছিলো তাহলে আজ কেনো নূর কে একা করে রেখে অন্য কাউকে মনে জায়গা দিয়ে দিলো।এভাবে বিরবির করতে করতে ফুপিয়ে ফুপিয়ে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে গেলো।

ঘুম থেকে যখন উঠলো। উঠে দেখে দুপুর বারোটা বাজে। নূরের চোখ তো বেড়িয়ে আশার মতো অবস্থা। এতো সময় ঘুমালো কিন্তু তাকে একবার কেউ ডাকতে আসলো না।
উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।এখনো কালকের শাড়িটা গায়ে জরানো।শাড়ি খুলে রাউন জামা পরে ওড়না গলায় পেচিয়ে নিচে গেলো।
নূর কে দেখেই নূরের আম্মু আনিতা বেগম তারাতারি নূরের কাছে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে বললো,’ নূর তোর নাকি শরীর ভালো না।?

নূরঃ তোমাকে কে বলেছে?
আনিতা বেগমঃ আমি তকে ডাকতে তোর রুমে যাচ্ছিলাম তখন মাহি বললো।তোর নাকি শরীর ভালো না সারা রাত ঘুমাতে পারিসনি। এখন ঘুমিয়েছিস তকে যেনো না ডাক দেই।
নূর মুচকি হাসলো। আপুটাকে কিছু বলতে হয় না। এমনিতেই সব বুঝে যায়।সবার বোনই কি এমন নাকি আমার আপুটা সবার থেকে আলাদা।

কিরে পেত্নী খাবার সামনে রেখে মুচকি মুচকি হাসছিস কেনো?
নূরঃ আবির ভাইয়া পেত্নী বলবা না। আমি মোটেও পেত্নী না।
তখনি কোথায় থেকে এসে আদি বলে উঠলো, ‘ আরে আমাদের গাধা নূর আফা তো পেত্নী না দেখতে ডাইনীদের মতো।সারা দিন শুধু খাই খাই।’
নূর অপমানে মাথা নিচু করে আছে।চোখ থেকে মনে হয় এখনি পানি পরবে।
আবিরঃ বাসা ভর্তি মানুষের সামনে এটা কেমন ধরনের কথা আদি।বিয়ে করেছিস এখনো আক্কেল জ্ঞান বলতে কিছুই হয়নি।
নূর উঠে চলে যেতে নিলে আবির ওকে আটকে দেয়। এদিকে তাকিয়ে আদি রেগে চলে যায়।তার ভাই একটু বেশিই বেশিই করে নূরকে নিয়ে।

আবির নূরের মেজো চাচার ছেলে।(নূরের আব্বুকে নিয়ে তারা তিন ভাই এক বোন। নূরের বড় আব্বুর এক মেয়ে দুই ছেলে।এক ছেলে বিয়ে করেছে এখন বাবার সাথে ওদের কোম্পানিতে আছে।আর ছোট ছেলে আজ ছয় বছর দেশের বাহিরে আছে পড়াশোনার জন্য। আর মেয়ে পড়ে ক্লাস নাইনে।
মেজো আব্বুর দুই ছেলে আদি আর আবির।আদি ভাইয়া উনার বাবার সাথে ব্যাবসা করেন আর আবির ভাইয়া একজন পুলিশ।

আর নূরের আব্বু, নূরের কোনো ভাই নেই।ওরা দুই বোন।)
নূর খাবার খেয়ে উপরে যাওয়ার সময় রুহির সাথে দেখা হয়।
রুহি একটা গা জ্বালানো হাসি দিয়ে। নূরকে বললো,’ সে কি নূর তোর একদিনেই এই অবস্থা ইসস চোখের নিচে কেমন কালো দাগ পরে গেছে। তারপর কানের কাছে এসে বললো,’ দেখলি তোর প্রানের আদি ভাই এখন আমার বিছানায়। এভাবে এক এক করে তোর সব কেরে নিবো।’

নূরঃ আমি তোকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি সেটা ভেবেই আমার অবাক লাগছে।মানুষ কতোটা নিচে নামতে পারে সেটা তোকে দেখেই বুঝলাম।তোর মত বন্ধু যেনো আল্লাহ যেনো আমার কোনো শত্রু কেও না দেয়।বলে নূর ওর রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে নিচে হাঁটু গেড়ে বসে পরে, এতোক্ষন আটকিয়ে রাখা কান্না গুলা যেনো এখন চিৎকার রুপে বেরিয়ে আসছে…..

এই অবেলায় তুমি পর্ব ২