এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৪ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৪
নুর নাফিসা খুশি

সারাদিন আব্বু আম্মুর সঙ্গে সময় কাটিয়ে বিকেলে নানু বাড়ি আসে খুশি। এসে পুরো বাড়ি খুজে মাহির কে পেল না। অর্জুন ও নেই।মামির কাছে জানতে পারে তারা বাইরে বেরিয়েছে।খুশি মাহিরের রুমে চলে যায় গিয়ে দেখে সব কিছু এলোমেলো হয়ে পরে আছে।জামা কাপড় গুছিয়ে রাখেনি।সব বেডে পরে আছে।খুশি গিয়ে সব কিছু গুছিয়ে আলমারিতে তুলে রাখে। ব্যাগ গুছাতে যেয়ে দেখে একটা ছবির ফ্রেম।

খুশি ছবিটা হাতে নিয়ে উলটে দেখে তো অবাক। কারণ ছবিটা খুশি আর মাহিরের সেই ছোট বেলার বর বউ সেজে ছবিটা। খুশির চোখে পানি চলে আসে পুরনো কথা মনে করে। মাহির এখনো এই ছবিটা আগলে রেখেছে।কতটা ভালোবাসে খুশিকে মাহির খুশি বুঝে। খুশির মনেও মাহিরের জন্য ভালোবাসা বেড়ে উঠে। ছবিটার একটা পিক তুলে নেয় নিজের ফোনে।আবার যেভাবে ছিলো সেভাবে রেখে দেয়।খুশির অনেক ভালো লাগছে।আনন্দে লাফাতে ইচ্ছা করছে মাহির তাকে এতো ভালোবাসে জেনে।

খুশি শুয়ে শুয়ে মাহিরের সঙ্গে ছোট বেলার কথা মনে করতে থাকে। তখনই মাহির আর অর্জুনের ভয়েস শুনা যায়। খুশি চোখ বন্ধ করে ঘুমাবার ভান ধরে থাকে। মাহির রুমে এসে খুশিকে তার রুমে ঘুমাতে দেখে অবাক হয়।এই সন্ধ্যায় কে ঘুমায় মাহির ভাবে। মাহির খুশির কাছে যায়। খুশির পাশে বসে খুশির মুখের দিকে এক পলকে তাকিয়ে থাকে।এই দিকে খুশির অনেক অস্বস্তি লাগছে।ঘুমিয়ে থাকলে এক কথা কিন্তু খুশি তো জেগে আছে।আর কোন ছেলে মুখের দিকে এক পলকে তাকিয়ে থাকলে অস্বস্তি তো লাগবেই। তবুও খুশি চুপ করে রইলো মাহির কি করতে চায় দেখবে তাই। কিন্তু এর পর মাহির যা করলো তাতে খুশির শরীর শিউরে উঠে। মাহির খুশির কপালে আর গালে কিস করে। খুশি মনে মনে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ইয়া আল্লাহ এই পোলা কত্ত লুচুরে বাবা।এক ঘুমিয়ে থাকা মেয়ের সুযোগ নেয়। এখন এমন করে না জানি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে থাকলে আরও কতো কি করে। বাঁচয়াও খোদা বাঁচাও আমারে।”(মনে মনে)
মাহির উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।মাহির যেতেই খুশি লাফিয়ে উঠে বুকে কয়েক বার থু থু দিয়ে হাঁপাতে থাকে। খুশি যেই না উঠে রুমের বাইরে চলে যাবে তখনই মাহির বের হয়ে খুশিকে দেখে বলে,
“আরে উঠে গেছিস এতো জলদি।”

“আরও ঘুমালে তোর আরও ভালো হতো আর কথায় কথায় কিস করা বাকিরে তোর লুচু।”(মনে মনে বলে খুশি মাহিরের দিকে তাকিয়ে)
” কি রে এমন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন।আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে এভাবে তাকাতে হয় নাকি।”
“চাল হাট বান্দর।”
” কি বললি তুই! আমি বান্দর? আমি বান্দর হলে তুই বান্দরনি ডাইনি রাক্ষসী বুঝলি।”

“তুমি এতো ঝগড়া কেমনে করিস বলতো?ছেলে হয়ে একটা মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া করতে লজ্জা করে না?”
“কথায় লেখা আছে মেয়েদের সঙ্গে ছেলেরা ঝগড়া করতে পারবে না,বল?”
” তোমার সঙ্গে কথা বলাই বেকার বুঝছো।থাকো তুমি আমি গেলাম।”
বলেই খুশি চলে যেতে নিচ্ছিলো তখন মাহির খুশির হাত ধরে ফেলে আর বলে,
“কোথাও যাওয়া হবে না তোর। তুই এখন আমার মাথা টিপে দিবি।খুব ব্যাথা করছে রাতে ঘুম হয়নি তাই।”
“এএ এসেছে দেখো।আমি কি তোর কাজের মেয়ে নাকি।”

“হ্যাঁ সেটাই তো তুই।এখন বকবক না করে মাথা টিপে দে। নয়তো আজ রাতে তোর খাওয়া বন্ধ প্লাস আমার রুমে সারারাত থাকতে হবে তোকে।”
মাহির খুশিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়।খুশির কোলে মাথা দিয়ে মাহির শুয়ে পরে। এখন খুশির পালানোও হবে না। কিন্তু খুশির একটা ভালোলাগা কাজ করছে মাহিরের এমন কান্ডতে।খুশি পরম যত্নে মাহিরের মাথা টিপে দিতে লাগে।মাহির চোখ বন্ধ করে আছে। দুই জনেই চুপ করে আছে তখন মাহির বলে,

” কাল আমরা পিকনিকে যাচ্ছি।”
“কে কে?”
” আমি অর্জুন আর অরিন।”
“মানে কি তুমি আমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে পিকনিকে যাবা আর আমাকে নিবা না কেন?”(রেগে বলে খুশি)
” তুই বাচ্চা পিকনিকের কি বুঝিস?”
“আমি বাচ্চা না।আর অরিনকে নিলে আমি কেন না?”
” চুপ থাক।তুই যাবি না ব্যস।”
খুশি রেগে মাহিরের চুল টেনে ধরে বলে,

“বল আমাকে নিয়ে যাবি বল।নয়তো তোর এই সিল্কি চুল একটাও থাকবে না।তোকে টাকলু কাকু বানিয়ে দিব। বল নিয়ে যাবি কি?”
“আরে আহহ খুশি আমার ব্যাথা লাগে। নিয়ে যাবো ছাড় ছাড়।”
খুশি এবার ছেড়ে দেয় আর বলে,
“গুড বয়।”

” তোকে কেউ বিয়ে করবে না দেখিস। যে বিয়ে করবে তার লাইফ শেষ।”
“কেউ বিয়ে না করলে তোকে বিয়ে করে নিব আর তোর লাইফ শেষ করবো।জোস না বল?”(খুশি হয়ে বলে খুশি)
” এহ আসছে দেখ আমাকে বিয়ে করতে। আমি তোকে বিয়েই করবো না। ”
“তুই করবি তোর ঘাড় করবে।”
” জোর করে বিয়ে করবি নাকি?”
“দরকার হলে তাই করবো এখন চুপ থাক নয়তো মাথা টিপে দিব না।”
” ওকে।”

মাহির খুশির কথা গুলো খুব ইনজয় করছিলো। খুশি কি বলছে সে নিজেই জানে না কিন্তু এতে মাহির মজা পেয়েছে অনেক।
পরের দিন সকালে পিকনিকে যাবে তাই সব ঠিক করছে মাহির,অর্জুন।মামি অনেক রকম খাবার, ফল দিয়ে দিয়েছে। খুশি রেডি হয়ে নিচে নামে। সাদা রঙের লং কুর্তি পরেছে খুশি।দেখতে বেশ লাগছে কিন্তু মাহির খুশিকে দেখে কি যেনো ভেবে তার রুমে যেতে বলে খুশিকে।
“খুশি আমার সঙ্গে আয়।”
” কেন?”
“এতো প্রশ্ন করিস কেন?আসতে বলছি আয়।”
খুশি আর কিছু না বলে মাহিরের পিছু পিছু যায়। মাহির রুমে গিয়ে তার ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে খুশিকে দেয়।খুশি বলে,
” কি এটা?”

“শাড়ি,তোর জন্য।তুই আজ এটা পরবি।”
খুশি অনেক খুশি হয় মাহির তার জন্য শাড়ি এনেছে দেখে।কিন্তু পরক্ষনে মনটা খারাপ হয়ে যায়। কারণ খুশি শাড়ি পরতে পারে না।সেই ছোট বেলায় বউ সাজিয়ে দিয়েছিল তখন শাড়ি পরেছিল।তারপরে আর পরা হয়নি। মুখ কালো করে খুশি বলে,
” কিন্তু আমি শাড়ি পরতে পারি না।”
“তুই কিছুই পারিস না পারিস শুধু ঝগড়া করতে আর তিন লাইন বেশি বুঝতে। তোর রুমে যা আমি মামি কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
খুশি আনন্দে বলে।
” ওহহহ আমাল কুচুপু।”(মাহিরের গাল টেনে)

“এটা আবার কি।দিন দিন বেহায়া হচ্ছিস, সরে দাঁড়া।”
” থাক তুই আমি গেলাম রুমে। মামিকে পাঠিয়ে দে।”
বলেই খুশি নিজের রুমে গিয়ে শাড়িটা দেখতে লাগে। সিম্পল ব্লাক শাড়ি,দেখতে অনেক সুন্দর। খুশির ব্লাক পছন্দ খুব।মাহিরের ও ভালো লাগে।কিছুক্ষন পর মামি এসে খুশিকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দেয়। খুশি নিজের মনমতো করে সেজে নেয়।রেডি হয়ে এসে নিচে এসে দেখে অরিন চলে এসেছে।অরিন ও আজ শাড়ি পরেছে নীল কালারের।(অরিন আর অর্জুনের ব্যাপার টা সবাই জানে আর মেনেও নিয়েছে। তাই অরিন অর্জুনের বাড়ি আসা যাওয়া লেগেই থাকে) অর্জুন ও নীল পাঞ্জাবি পরেছে।দুইজনকে অনেক সুন্দর মানিয়েছে।খুশি মনে মনে বলে,

“আমার সঙ্গে ম্যাচিং করে ড্রেস পরা মানুষটা যে কবে পাবো।”
কথা টা মনে মনে বলতেই চোখ যায় মাহিরের দিকে। মাহিরকে দেখে খুশি হা হয়ে যায়।কারণ মাহির খুশির সাথে ম্যাচিং করে ব্লাক পাঞ্জাবি পরেছে।দেখতে পুরাই জোস লাগছে মাহিরকে। খুশির ভাষায় মারাত্মক সুন্দর লাগছে।খুশি পুরা ঘায়েল। মাহির খুশিকে দেখে তেমন পাত্তা দিল না।যেনো দেখেই নি।এই দিকে খুশি বারবার মাহিরের আসেপাশে ঘুরঘুর করছে যাতে শাড়ি পরায় কেমন লাগছে তা মাহির প্রশংসা করুক।কিন্তু মাহির দেখছেই না। কোন মুডি ছেলে রে বাবা, রোমান্টিকই না। খুশি আবার ভাবে হয়তো এইখানে সবাই আছে তাই কিছু বলে না।একা পেলে ঠিক বলবে। এই ভেবে মনকে বুঝায় খুশি।

সব জিনিস নিয়ে বেরিয়ে পরে পিকনিকের জন্য। নদীর অপর পারে একটা ছোট জঙ্গলের মতো আছে সেখানেই যাবে তারা। সেখানে গিয়ে মাহির খুশি অবাক।তারা ভেবেছিল জঙ্গল মানে শুধু গাছ থাকবে। কিন্তু এখানে ফুল গাছে ভরা। এতো সুন্দর জায়গাটা। খুশি ছোট থেকে এই গ্রামে আছে কিন্তু কখনো এইখানে আসে নি। অর্জুন এই জায়গার খোঁজ পেয়ে অনেক আসে অরিন কে নিয়ে প্রেম করতে। তাদের চেনা এই জায়গা। কিছু ফুল গাছ তারাই লাগিয়েছে। এখানে মানুষ খুব কম আসে।গ্রামের মানুষ ভাবে এখানে ভুত আছে।খুশি ও তাই ভাবতপ তাই আসেনি। কিন্তু অর্জুন এসবে বিশ্বাসী ছিলো না।তাই সে এসে দেখে গেছে।

“ওয়াও অর্জুন ভাইয়া এই জায়গা টা কত্ত সুন্দর! আগে জানতাম না তো। জানলে আমি আরও আগেই আসতাম।”(খুশি)
” তুই তো ভুতের ভয়ে আসতি না। আমি কতবার বলেছি তুই শুনেছিস? অরিনকে বলায় অরিনও ভয় পেয়েছিল। কিন্তু আমি জোর করে নিয়ে এসেছিলাম।”(অর্জুন)
“সত্যি জায়গাটা মন মতো সুন্দর।থ্যাঙ্ক ইউ অর্জুন।”(মাহির)

সুন্দর পরিস্কার জায়গাতে নিয়ে আসা শীতলপাটি বিছিয়ে বসে সবাই।অর্জুন অরিন এক সঙ্গে আর মাহির খুশি এক সঙ্গে। ৪ জনে নাস্তা করে নেয়। খাওয়ার পর খুশি সেলফি তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। এতো সুন্দর একটা জায়গা আর সেলফি তুলবে না খুশি,এটা কখনো হয়!মাহির ব্যাগ থেকে তার ডি.এস.এল.আর ক্যামেরা বের করে। সবার ছবি তুলে। খুশি তো আরো খুশিতে লাফিয়ে উঠে ক্যামেরা দেখে। তার পিক তুলতে সেই লাগে। হাজার রকম পোজ দিয়ে পিক তুলছে খুশি।মাহির পিক তুলতে তুলতে হাফিয়ে গেছে। কিন্তু খুশি পোজ দিতে হাফায়নি।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৩

সারাদিন অনেক মজা করে চারজনে। অনেক রকম গেম খেলে,গল্প করে। অর্জুন,অরিন এখন বসে গল্প করছে।
মাহির একটু দূরে দাড়িয়ে প্রকৃতির ছবি তুলতে বিজি। খুশি রেগে মাহিরের কাছে যায় আর বলে,
“এই অসভ্য ছেলে তুই আমার প্রশংসা করলি না কেন? আমাকে শাড়িতে কেমন লাগছে বললি না কেন?”
“বাদরকে মুক্তার মালা পরালেও তাকে বাদরই লাগে।”

মাহির কথাটা মজা করে বললেও খুশির খুব খারাপ লাগে। চোখে পানি চিকচিক করতে লাগে। ৫মিনিট পরও যখন মাহিরেরওপর রেগে কথা বলার ঝড় উঠলো না তখন মাহির পিছনে তাকিয়ে দেখে খুশি নেই। চারিপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও নেই।এখন মাহিরের মনে হচ্ছে সে একটু বেশি বলে ফেলেছে।শাড়িটা সে নিজেই কিনে দিয়েছে।তার কাছে কেমন লাগছে জানতে চাওয়াটা স্বাভাবিক।কিন্তু মাহির কি করলো। মাহির দৌড়ে অরিন অর্জুনের কাছে যায়।

তাদের জিজ্ঞেস করে খুশি কোথায়। কিন্তু তারা দেখে নি। পুরো যায়গাটা খুজে দেখে তিনজনে কিন্তু খুশি কোথাও নেই। মাহিরের পাগলের মতো অবস্থা হয়ে যায়। মাহির নদীর ধারে যায়,সেখানে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খুশিকে। মাহির যেনো প্রান ফিরে পায় খুশিকে দেখে। কিন্তু আবার তাকিয়ে দেখে খুশি নদীতে পরে যাচ্ছে। মাহির দৌড়ে যায়,কিন্তু তার আগেই খুশি পরে যায়।
” খুশিইই!”

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৫