এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৬ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৬
নুর নাফিসা খুশি

দেখতে দেখতে ১৫ টা দিন কেটে যায় এর মধ্যে খুশি ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছে। আজ হস্পিটাল থেকে বাড়িতে ফিরবে খুশি।এই কয়দিনে খুশির আম্মু মাহিরকে খুশির সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। মাহির অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। লুকিয়ে দেখে এসছে তাও দূর থেকে। খুশি তার আম্মু কে বার বার মাহিরের কথা জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু খুশির আম্মু তা এড়িয়ে গেছে বার বার। তাই খুশি আর জিজ্ঞেস করেনি খুশি ভেবেছে বাড়ি তে গিয়ে একে বারে কথা বলবে খুশি মাহিরের সঙ্গে। খুশি এতো দিন হস্পিটালের ড্রেস পরে ছিলো আজ বাড়িতে যাবে তাই খুশির আম্মু একটা জামা কিনে খুশিকে দিল ল।খুশি সেটা পরে নিয়ে বেরিয়ে এলো তার আম্মুর সঙ্গে। অর্জুন খুশির মেডিসিন কিনতে গেছে।

খুশিকে নিয়ে মুনতাহা অর্জুন মাহিরদের বাড়িতে আসে। খুশির আম্মু চাইছিল না আসতে। তবুও সবার জোরাজুরিতে আসতে হয়েছে। বাড়িতে এসে খুশি তার আম্মুর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে ওপরে চলে যায়। এতে কেউ কিছুই মনে করলো না। এমনটা হবে তা যেন তাদের আগে থেকেই জানা। মাহিরের আম্মু তার বোন কে বলে।
“ফ্রেশ হয়ে নে মুনতাহা।আমি খাবার রেডি করছি।”
কেউ আর কিছু কথা না বাড়িয়ে গেস্ট রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। এই দিকে খুশি সোজা মাহিরের রুমে ঢুকে দেখে মাহির শুয়ে ফোন টিপছে। খুশি গিয়ে মাহিরের পেটের ওপর বসে পরে মাহিরের হাত থেকে ফোন নিয়ে সাইডে ফেলে দিয়ে মাহিরের চুল দুই হাতে টেনে ধরে বলে।

” বজ্জাত, এনাকন্ডা, লাল পিপরা, সাদা হাতি, নীল তিমি, জিরাফ, তোর চুল ছিড়ে ফেলবো আমি। তুই কেন আমার সঙ্গে দেখা কেন করিসনি? বল বজ্জাত।”
“আরে খুশি ছাড়বি তো আমাক। চুলে ব্যাথা পাচ্ছি আহহ।”
” ছাড়তাম না।তুই কেন দেখা করিস নি বল। আমি মরে গেলে তোর ভালো হতো?”
“চুপ! তুই এখনো দূর্বল।চুপচাপ বসে থাক।”
” না থাকব না।”(মাহিরের উপরে শুয়ে মাহিরকে জরিয়ে ধরে)
“কেমন আছিস এখন?”(খুশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)
” সেটা তুই জেনে কি করবি? দেখতে তো যাসনি।”(অভিমানী কন্ঠে)
“আমি ঠিক গেছিলাম।তোর হিটলার আম্মু দেখা করতে দেয়নি।”
” আম্মু? কিন্তু কেন?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমার জন্য এমন হয়েছে তোর তাই রেগে আছে আমার ওপরে। আর ওনার রাগ করা স্বাভাবিক তাই ওনার কথার বিরুদ্ধে যাইনি তবে লুকিয়ে ঠিক দেখা করে আসতাম রোজ। ”
” আমার সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতে পারোনি?আমি অনেক অপেক্ষা করেছিলাম।
“জানি তো। বাট কোন রাস্তা ছিলো না। তোর আম্মু সব সময় তোর কাছেই থাকত। তাই দূর থেকে দেখেই চলে আসতাম।”
” আচ্ছা বুঝেছি। কিন্তু আম্মু কি রেগে আমাকে এখান থেকে নিয়ে পালাবে? তোমাকে মেনে নিবে?”
“সেটা তোর আম্মুই ভালো বলতে পারবে।”(মন খারাপ করে)

” তুমি চিন্তা করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।”(মাহিরের গালে চুমু দিয়ে)
তখনি অর্জুন রুমে ঢুকে পরে মাহির আর খুশি কে এভাবে দেখে পিছন দিকে ঘুরে গিয়ে বলে।
“আমি কিছু দেখিনি কিছুই দেখিনি সত্যি।”
” শালা ঢং করিস না। এই দিকে আয়।'(মাহির)
খুশি মাহির কে ছেরে উঠে দাঁড়িয়েছে। অর্জুন মাহিরদের কাছে এসে খুশির মাথায় টকা দিয়ে বলে।
“রোমান্স দরজা বন্ধ করে করতে হয়।””
” তোর কাছে শিখতে হবে না হুহ যাহ।”(খুশি মুখ ভেংচি দিয়ে)
“পেকে গেছিস তাই না!”(অর্জুন খুশির চুল টেনে)
” না তুই বেশি বুঝিস।”(অর্জুন কে মেরে)

“আরে দুই জনেই চুপ কর।বাচ্চাদের মতো কি মারামারি শুরু করেছিস। ”
মাহিরের ধমকে দুই জনেই চুপ করে গেলো। তারপর অর্জুন বলে।
” নিচে ডাকে তোদের।খাবি আয়।”
অর্জুন এর কথায় মাহির, খুশি,অর্জুন তিন জনেই নিচে নেমে আসে। মাহির এসে তার চেয়ারে বসে পরে।কারো সঙ্গে কিছু কথা বলে না।খুশিও এসে মাহিরের পাশে বসে পরে।
অর্জুন খুশির পাশে।সব নিজের মতো খাচ্ছে কেউ কোন কথা বলছে না। তখন খুশির আম্মু বলে,
“খুশি সন্ধায় রেডি থেকো। আমরা রাপমুর ব্যাক করবো আজ।”

খুশির আম্মুর কথায় মাহির সহ উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে খুশির আম্মুর দিকে তাকাল। খুশির আম্মু নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে সবাই যে বড় বড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে কোন হেলদোল নেই তার।
” খুশিকে নিয়ে চলে যাবি কেন?”(মাহিরা)
“খুশি এখানে থাক না ফুফি। আর কোন প্রব্লেম হবে না।”(অর্জুন)
” আমার মনে হয় খুশিকে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। ওর পড়াশোনার ক্ষতি হবে।”(খুশির আব্বু)
“আম্মু আমি যেতে চাই না।”(খুশি)
“রাগের মাথায় এমন করিস না বনু প্লিজ।খুশিকে নিয়ে যাস না।”(মাহিরা)

খুশির আম্মু আড়চোখে মাহিরের দিকে তাকায়। দেখে বেচারার মুখ টা শুকিয়ে একটু হয়ে গেছে।কিছু বলতেও পারছে না করতেও পারছে না খুশির আম্মু মুচকি মুচকি হাসে। তারপরে বলে,
” বিয়ের আগে মেয়ে শশুর বাড়িতে থাকলে কেমন দেখায় না? তার চেয়ে আমরা রামপুরে যাই। তোমরা একদিন সময় করে খুশিকে দেখতে এসো। বিয়ের ডেট ঠিক করে একেবারে বউ করে নিয়ে আসো এই বাড়িতে।”
খুশির আম্মুর এমন কথায় মাহির বিষম খায়। অনেক জোরে কাশতে শুরু করে। খুশি তারাতারি পানি নিয়ে মাহির কে দেয়। মাহির ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে ফেলে। বাকি সবাই ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে খুশির আম্মুর দিকে। খুশির আম্মু আবার বলে।

“এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে? এটা তো হওয়ারই কথা তাই না।অনেক হয়েছে পরিক্ষা নেওয়া এবার ওদের দুই হাত এক করে দিলেই হলো।”
মাহির এই খুশিতে উঠে খুশির আম্মু কে জরিয়ে ধরে। বাকি সবাই মাহিরের কান্ড দেখে হাসতে শুরু করে।
“থ্যাঙ্ক ইউ খালামনি।”(মাহির)
” হুম হুম অনেক হয়েছে।এবার যদি কোন ভুল পাই বা আমার মেয়ের ক্ষতি হয় তো সোজা ডিভোর্স করিয়ে দিব হুহহ।”(খুশির আম্মু মাহিরের কান টেনে)
“হবে না হবে না আর এমন। হতে সুযোগই দিব না। কিন্তু খালামনি পরশু গেলে হয়না তোমাদের?
” কেন?
মাহির বললো,

“রোদ ফোন করেছিল।আগামীকাল ওদের রিসিপশন।সেখানে যেতে হবে।”
“আচ্ছা তাহলে পরশুই যাবো।”
খুশি বললো,
“অর্জুন ভাইয়াকেও সাথে নিয়ে যাবো।”
এই বলে তারা খাওয়ায় মন দিল।খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে গেল।
পরদিন সকালে,

আজ অথৈ আর রোদের রিসিপশন।খুশি সেখানে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।মাহির আর অর্জুন বাইরে অপেক্ষা করছে।এমন সময় খুশি বেরিয়ে এলো।খুশি খুব সাধারণ ভাবে সেজেছে কিন্তু তাতেই তাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।নীল আর গোলাপি রঙের মিশ্রণে একটা শাড়ি পরেছে,চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া,কানে দুল,হাতে চুরি আর হালকা সাজ।মাহির তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।তাকেও খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।তার পরণে কালো পাঞ্জাবি।অর্জুন তাদের যাওয়ার জন্য তাড়া দিল।তারা গাড়িতে উঠে রওনা হলো রোদের এর বাসার উদ্দেশ্যে।
গেটের কাছে এসে গাড়ি থামালে তারা নেমে দাঁড়ালো।তাদের দেখে আবির এগিয়ে আসলো।কুশলাদি বিনিময় শেষে আবির,মাহির আর অর্জুন একসাথে কোথায় যেন চলে গেল আর খুশি অথৈ এর রুমের দিকে গেল।খুশি রুমে গিয়ে দেখে অথৈ কে সাজানো হচ্ছে।প্রায় শেষের দিকে।লাল বেনারসি আর বউ সাজে তাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।খুশি দৌড়ে গিয়ে তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো।খুশিকে দেখে অথৈ এর মুখে হাসি ফুটলো।

“কিরে!কেমন আছিস এখন?”
“আমি তো বিন্দাস আছি।তোর বিয়েতে এসেছি বলে কথা।”
অথৈ বিনিময়ে হাসলো।তাকে সাজানো শেষ হলে পার্লারের মেয়েরা বাইরে চলে গেল।এখন ঘরে শুধু অথৈ,খুশি আর অথৈ এর কিছু কাজিন।কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে শোরগোল এর শব্দ ভেসে আসলো।”বর এসেছে!” বলে চিল্লাচ্ছে সবাই।অথৈ সব কাজিনরা দৌড়ে বেড়িয়ে গেল।খুশিও বারান্দায় গেল দেখার জন্য। রোদ নিজের বাড়িতে নিজেই বর হয়ে এসেছে বিয়ে বিয়ে ফিল আনার জন্য ।অথৈ তখনও বিছানায় বসে আছে।এক মিশ্র অনুভূতিতে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।খুশি এসে আবার অথৈ এর পাশে বসলো।কিছুক্ষণ পর অথৈ এর আম্মু সহ কয়েকজন মহিলা আসলো।নিচে যাওয়ার সময় হয়েছে।অথৈকে সবাই মিলে নিচে নিয়ে গেল।রোদের মুখোমুখি বসানো হলো তাকে।মাঝে বেশ বড় নেটের পর্দা।কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।অথৈকে কবুল বলতে বললে সে একবার তার বাবা-মা আরেকবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় কবুল বলে দিল।আর রোদ ফটাফট বলে দিল।তা দেখে অনেকে হেসে দিল।

বিয়ে পড়ানো শেষে তাদের স্টেজে নিয়ে পাশাপাশি বসানো হলো।অনেকে এসে তাদের সাথে দেখা করে যাচ্ছে।সাথে ফটোশুট তো আছেই।রোদ সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই অথৈ এর দিকে হালকা সরে এসে বললো,
“বিয়েটা তাহলে হয়েই গেল?”
অথৈ কিছু বললো না।একবার বাঁকা চোখে তাকিয়ে তার পা দিয়ে রোদের পায়ে বারি দিল।তারপর আবার সামনে তাকিয়ে রইলো।রোদ মাথা নিচু করে হেসে দিল।
পরের দিন বিকেলে।
বিকেল বেলায় মাহির খুশি ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। দুই জনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।মাহির বলে,
” খালামনি এতো তাড়াতাড়ি সোজা ভেবে মেনে নিবে আমি ভাবতেও পারিনি।”
“আমিও অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম আম্মুর কথা শুনে। বাট শেষের কথায় আমি পুরাই অবাক।”
মাহির খুশিকে জরিয়ে ধরে বলে।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৫

” সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি তোকে। খালামনি রাজি না হলেও জোর করে বিয়ে করতাম। তোর জন্য কতো কষ্ট পেয়েছি আমি নিজের দেশ ছেরে দূরে থেকেছি। প্রতিটা রাত তোকে পাওয়ার আশায় কাটিয়েছি। প্যারিসে এক একটা দিন আমার কাছে খুব কষ্টের ছিলো। ভালোবাসার নগরিতে আমি ছিলাম কিন্তু ভালোবাসার মানুষ ছিলো আমার থেকে অনেক দূরে। তোকে পাওয়ার জন্য আমি কি না করেছি আর কি করে এখন ছেড়ে দিতাম?খালামনি রাজি না হলেও আমি তোকে আমার করেই ছারতাম। অনেক ভালোবাসি তোকে,অনেক বেশি।”
সন্ধ্যায় খুশিরা রামপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। মাহিরের আব্বু মাহির এসেছে খুশিদের স্টেশনে পৌঁছে দিতে। মাহিরের আব্বু খুশিকে এক সাইডে নিয়ে এসে বলে।

“আমাকে ক্ষমা করে দিস মা।আমি তোকে ভুল বুঝেছি,রেহানার কথার ফাদে পরে তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। এটা ক্ষমার যোগ্য না তবুও তুই পারিস না এই অসহায় বাবা কে ক্ষমা করতে?”(হাত জোর করে)
” আরে বাবাই কি করছেন! আমি একদমই রেগে নেই আপনার ওপর, সত্যি।!(মুচকি হেসে)
মাহিরের আব্বু খুশি হয়ে তার পকেট থেকে বড় একটা ডেইরি সিল্ক চকলেট বের করে খুশিকে দেয়। চকলেট পেয়ে খুশি খুশিতে আত্তহারা।

“সেই ছোট বেলার মতোই আছিস। চকলেট পেয়ে এতো খুশি।”
” হিহিহিহি।” (খুশি দাঁত বের করে হাসি দেয়)
তারপরে খুশি ও তার আব্বু,আম্মু, অর্জুন ট্রেনে চেপে যায়। ট্রেন চলতে শুরু করে। মাহির সেই দিকেই তাকিয়ে আছে।খুশি ও জানালা দিয়ে দেখছে। যতোক্ষন দেখা গেলো ততোক্ষন দেখলো একে ওপর কে।ট্রেন টা তার নিজ গতিতে এগিয়ে চলে গেলো মাহিরের চোখের আড়ালে। মাহির ও আর না থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।

এই কেমন ভালোবাসা শেষ পর্ব