এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৫ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৫
নুর নাফিসা খুশি

খুশির আম্মু খুশির সঙ্গে দেখা করতে কেবিনে যায়। ঢুকতেই চোখে পরে মুখে অক্সিজেন মাক্স পরা খুশি কে। খুশুকে দেখতেই বুক ফেটে কান্না আসে খুশির আম্মুর।কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়,খুশির সামনে কান্না করা যাবে না। খুশির মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে।সাদা মুখটা কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। আম্মু গিয়ে খুশির বেডের পাশে রাখা চেয়ার টেনে বসে। খুশির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মাথায় কারও ছোঁয়া পেয়ে খুশি চোখ খুলে তাকায়।সামনে আম্মুকে দেখে হাসি ফুটে উঠে মুখে।তবে খুশি মনে মনে মাহিরকে আশা করেছিলো। আম্মু বলে,

“কেমন আছিস মামনি? অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না?
” না আম্মু আমি ঠিক আছি।”(খুব আস্তে বললো খুশি।শরীর এতোই দূর্বল কথাটাও ঠিক ভাবে বলতে পারছে না খুশি)
“সব বুঝি আমি,মা হই তোর।তুই সুস্থ হয়ে উঠ।তোকে নিয়ে আমি গ্রামে চলে যাব।এখানে আর রাখবো না।”
” আম্মু ভাইয়া কথায়?
খুশির ভাইয়া শুনে আম্মুর রাগ হয়।আম্মু জানে খুশি মাহিরকে উদ্দেশ্য করে ভাইয়া বলেছে কিন্তু আম্মু কথা ঘুরিয়ে বলে,
“অর্জুন,সেও এসেছে। বাইরে আছে, তোমার সঙ্গে একজনই দেখা করতে পারবে তাই আমি এসেছি।পরে তোমার অর্জুন ভাইয়া আসবে তোমাকে দেখতে।”
” আম্মু…”

খুশি আরও কিছু বলতে নিচ্ছিলো কিন্তু আম্মু বলতে দিল না।থামিয়ে দিয়ে নিজে বললো,
“আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও আমি এখন যাই। আবার এসে দেখা করব।”
খুশিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাইরে চলে যায় আম্মু। খুশি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার আম্মুর এভাবে যাওয়া দেখে। খুশির আম্মু বাইরে গিয়ে সোজা মাহিরদের কাছে গিয়ে বলে।
” তোমরা এখন যেতে পারো। এখানে তোমাদের আর কোন কাজ নেই। যা যা করেছ তার জন্য ধন্যবাদ। এখন আমার মেয়েকে আমি আর তার বাবা অর্জুন মিলেই দেখতে পারবো।”
খুশির আম্মুর কথা শুনে মাহির কিছু বলতে নিবে তার আগেই মাহিরের আম্মু বলে উঠে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“মুনতাহা তুই রাগ করিস না প্লিজ।এটা একটা এক্সিডেন্ট মাত্র।তার জন্য আমাদের খুশির থেকে আলাদা করিস না।প্লিজ বোন আমার।”
” আপু আমি তোমার মুখের ওপর কথা বলতে পারি না তাই দয়া করে তুমি কিছু বলো না আমাকে। আর পারলে খুশির বাবাকেও নিয়ে যাও এখান থেকে। ও এখানে থাকলে নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবে।” (খুশির আম্মু)
“আচ্ছা আমরা যাচ্ছি,কিন্তু মাহির থাক এখানে?”
” না ও থাকবে না।আমার সঙ্গে অর্জুন আছে।যাও তোমরা।”

মাহিরের আম্মু আরও কিছু বলতে নিচ্ছিলো কিন্তু মাহির ইশারায় বারণ করে দিল। আর মাহিরের আব্বু, আম্মু,মাহির খুশির আব্বু হস্পিটাল থেকে মাহিরদের বাড়িতে চলে গেলো। যদিও খুশির আব্বু যেতে চায়নি কিন্তু বউয়ের ধমকে যেতে রাজি হয়েছে।
মাহির সবাইকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকবে তখনি মাহিরের ফোন বেজে ওঠে। ফোন রিসিভ করলে ওই পাশ থেকে বলে।
“ভাইয়া ওদের পাওয়া গেছে।”
” গ্রেট! এখন তিন জন কে ধরে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসো।”

বলেই ফোন রেখে ভিতরে ঢুকে গেলো। সবাই ফ্রেশ হয়ে নিচে বসে আছে।মাহির ডেকেছে সবাইকে তাই। কেউ বুঝতে পারছে না কেন মাহির তাদের বসিয়ে রেখেছে এমন কি কাউকে কিছু খেতেও দেওয়া হয়নি এখনো। তখনি মাহির আসে নিচে।মাহির কে দেখে মাহিরের আম্মু কিছু বলতে যাবে তখন কলিং বেল বেজে ওঠে। মাহির সোজা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। কিছু লোক রেহানা, নীল।রুকশা কে টেনে হিচরে ভিতরে নিয়ে আসে। রেহানাকে দেখেই মাহিরের আম্মু এসে সজোরে একটা থাপ্পর মেরে দেয় রেহানার গালে। এতে রেহানা ভয় পাওয়া তো দূরে থাক মুখে এখনো সেই শয়তানি হাসি লেগেই আছে।

“এসব করার কারণ কি মিসেস রেহানা?”(মাহির শান্ত হয়ে)
রেহানা চুপ করে আছে।রুকশা বলে,
” আম্মু তোমাদের সম্পত্তি নিতে চায়।আম্মুর একটাই রাগ তার আব্বু সব সম্পত্তি মামার নামে করেছে আম্মুর নামে কেন করেনি? এতেও আম্মুর রাগ ছিলো। আম্মু চেয়েছিলো আমার সঙ্গে মাহিরের বিয়ে দিতে কিন্তু সেটাও মাহির করবে না কারণ সে খুশিকে ভালোবাসে।তাই আম্মু রেগে এমন করেছে তবে আমি মাহির কে বিয়ে করতে চাইনা।আমি এতো দিন যা করেছি সব আম্মুর কথায়।আমি ড্যানি কে ভালোবাসি।”

মাহিরের আব্বু এসে রেহানা কে থাপ্পর মারে আরেকটা। আর বলে,
“তোমার আম্মু এসবের জন্য এমন করে। আমার সব কিছু পরিষ্কার মনে হচ্ছে। শুধু সম্পত্তির জন্য এতো বড় নোংরা খেলা খেলিস নি। তার এটার পিছনে আরও একটা কারণ আছে। রেহানা আমি ভেবেছিলাম তুই ভালো হয়ে গেছিস কিন্তু না তুই সেই একিরকম আছিস।”
” আমি কিছু বুঝতে পারছি না খুলে বলো আব্বু।”(মাহির)

“তোমার আম্মুর সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার ২ বছর আগে থেকে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।তোমার আম্মুর পড়া শেষ না হওয়ায় বিয়ে হয়নি আমাদের। আমার আব্বু আর তোমার নানুর অনেক ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। রামপুর গ্রামেই আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিলো। কিন্তু আমার আব্বু বিজনেস করতে চেয়েছিলো তাই তিনি আমাদের নিয়ে কলকাতা চলে আসে। তবে ছুটিতে আমরা গ্রামেই যেতাম সব সময়। আমার আব্বুর আমি একমাত্র সন্তান ছিলাম।” (কথার মাঝে মাহির আবার বলে)
” তুমি দাদুর একমাত্র সন্তান হলে ফুফি কে? উনি তোমার বোন না?”

“না ও আমার নিজের বোন না।আমার আব্বুর ছোট ভাইয়ের মেয়ে।একটা দূর্ঘটনায় কাকা কাকিমা মারা যায় আর রেহানা কে আমার আব্বু আম্মু নিয়ে আসে। কিন্তু আম্মু আব্বু রেহনা কে এতো বেশিই আদর দিয়ে বড় করেছে যে দিন দিন জেদি হয়ে উঠেছিলো রেহানা। তার যেটার দিকে একবার চোখ পরত সেটা সে নিয়েই ছাড়তো। বড় হওয়ার পর একবার ছুটিতে সবাই মিলে রামপুর ঘুরতে যায় তখন রেহানা আরিয়ানকে(খুশির আব্বু) দেখেই আরিয়ানকে পছন্দ করে ফেলে কিন্তু খোজ নিয়ে জানতে পারে আরিয়ান মুনতাহা কে ভালোবাসে। অনেক চেষ্টা করেও রেহানা আরিয়ান কে পায়নি। অনেক পাগলামি করেছে। মুনতাহার ক্ষতি ও করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। আম্মু আব্বু চিন্তায় পরে যাই রেহানার এমন পাগলামি তে। আরিয়ানের সঙ্গে কথাও বলেছিল যাতে রেহানা কে বিয়ে করে কিন্তু আরিয়ান মুনতাহা কে ভালোবাসে তাই আমি জোর করিনি আরিয়ান কে। আম্মু আব্বু কে বুঝিয়ে ভালো ছেলে দেখে রেহানার বিয়ে দিয়ে প্যারিসে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু সেই রাগ যে ওর মাঝে এখনো আছে এটা আমি ভাবিও নি। আমি ভেবেছি সব কিছু ভুলে গেছে। কিন্তু না, আমার ভাবনা ভুল ছিলো।”
মাহিরের আব্বু একটু থেমে আবার বলে রেহানাকে উদ্দেশ্য করে,

” তুই বলেছিস না আব্বু তোকে কোন সম্পত্তি দেয়নি। আরে এই সম্পত্তিতে তোর কোন অংশই নেই। তোর বেইমান বাপ অনেক আগেই আব্বুর কাছে জালিয়াতি করে সব সম্পত্তি নিয়ে নিছে সব বিক্রি করে মজা করে বেরিয়েছে। এই সব সম্পত্তি আমার আব্বুর আর আমার মেহাতে গড়ানো।তবুও আমার আব্বু তোর নামে একটা বাড়ি আর গ্রামের কিছু জমি রেখেছে। এতোটা স্বার্থপর কি করে হলি তুই?বল তো রাগ জেদটাই তোর কাছে সব? তোর এই রাগের জন্যে একটা নিস্পাপ মেয়ের প্রান নিতেও তোর বুকে বাঁধলো না? ছিহ!”

রেহানা সব কিছু শুনে কান্না করে দেয় এখন তার খারাপ লাগছে আর সে কতবড় ভুল করেছে তা ভাবছে। খুশির আব্বু রেহানার দিকে এগিয়ে এসে বলে।
“তুমি না আমাকে ভালোবেসেছিলে তাহলে ভালোবাসার মানুষ কে নিরাশ কি করে করতে চাইলে। ভালোবাসা মানে বুঝো? ভালোবাসা মানে ভালোবাসার মানুষের ভালো চাওয়া সবসময়। আর তুমি সেই ভালোবাসার মানুষ থেকে তার সুখে থাকার কারণটাই ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলে? এটা তোমার ভালোবাসা ছিলো না রেহানা রাগ জেদ ছিলো।”

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৪

রেহানা নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেই এখন কষ্ট পাচ্ছে। কেউ যদি ভুল করে আর তাকে তার ভুল না ধরিয়েই শাস্তি দেওয়া হয় সেই শাস্তির কোন মানে বুঝবে না অপরাধি। আগে তার ভুল ধরিয়ে দাও তার নিজের করা ভুলে নিজেই কষ্ট পাবে আর উপলব্ধি করতে পারবে সে কতটা ভুল করেছে। রেহানা তার ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলে।
” ভাই আমাকে মাফ করে দাও আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। ভাবি, আরিয়ান, মাহির তোমরাও আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।আমি মরেও শান্তি পাব না এই ভুল নিয়ে।”

“তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ এটাই অনেক। কিন্তু তুমি যা করেছো তার কোন মাফ নেই। যা করার পুলিশ করবে।” (মাহির)
” আমাকে পুলিশে দাও এতে আমার কোন আফসোস নেই। আমি যা করেছি এতে আমার এটাই পাওয়া। কিন্তু এতে আমার মেয়ের কোন দোষ নেই।ওকে আমি ব্লাকমেইল করে যা করিয়েছি তাই করেছে।প্লিজ ওকে ছেড়ে দাও।ওকে ড্যানির কাছে যেতে দাও প্লিজ।”
তখনি পুলিশ চলে আসে। মাহির কিছুই বলে না আর। পুলিশ কে বলে নীল আর রেহানা কে নিয়ে যেতে। রুকশা থেকে যায় তবে আজকের ফ্লাইটেই প্যারিস চলে যাবে রুকশা।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৬