এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৪ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৪
নুর নাফিসা খুশি

সজোরে থাপ্পর পরে মাহিরের গালে। মাহির গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। আর কি বলবে,বলার মুখ আছে তার? যদিও এতে মাহিরের কোন দোষ নেই।সব ভাগ্যের দোষ। থাপ্পরটা খুশির আম্মু মাহির কে দিয়েছে।ছোট বেলায় মাহিরের জন্য খুশি মরতে বসেছিলো সেটার জন্য কতো কিছুই না হলো।কিন্তু এবার তো আরও বেশি বিপদে। মেয়ের এমন অবস্থার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছিল খুশির আব্বু,আম্মু সঙ্গে মামা,মামি, অর্জুন।

” আমার মেয়ের যদি কিছু হয় তো আমি সবাইকে পুলিশে দিব। বলেছিলে না মাহির আমার মেয়ের খবর রাখবে তার কিছু হতে দিবে না তাহলে আজ আমার মেয়ের এই অবস্থা কেন!”(কান্না করে চিৎকার করে বলে খুশির আম্মু)
খুশির আম্মু কান্না করতে করতে নিচে বসে পরে।কেউ সামলাতে পারছে না তাকে। একমাত্র মেয়ে মরণের পথে। মা হয়ে কি করে শান্ত থাকবে তিনি । খুশির আব্বু শোনার পর থেকেই পাথরের মতো হয়ে গেছে।কোন কথা বলেনি কাল থেকে। মাহিরের আব্বু ও কষ্ট পাচ্ছে বোনের কথায় মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। খুশির এই অবস্থায় পরিবারের সবাই নিজেকে দায়ী ভাবছে। সবাই ভেঙ্গে পরেছে।মাহিরও চুপ করে আছে।

কাল খুশিকে হোটেল থেকে সোজা হস্পিটালে নিয়ে এসেছিলো মাহির।তারপর,
“ডাক্তার ডাক্তার কোথায় আপনারা। প্লিজ এই দিকে আসুন ডাক্তার!”
হস্পিটালে মাহিরের চিৎকারে সব ডাক্তার নার্স দৌড়ে এসে দেখে মাহিরের কোলে খুশি রক্তে মাখা মাখি হয়ে। নার্স একটা ট্রলিবেড আনলে মাহির খুশিকে শুইয়ে দেয়। ডাক্তার জিজ্ঞেস করে,
” পেসেন্ট এর কি হয়েছে?”
“বিষ,বিষ খাইয়ে দিয়েছে।”(মাহির কান্না করে বলে)
” এটা তো পুলিশ কেস। পুলিশে ডাইরি করে আসুন তার পরে চিকিৎসা করা হবে।”(ডাক্তার)
মাহির রেগে বলে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“পুলিশ কেস বলে কি আপনি পেসেন্ট দেখা বাদ দিয়ে দিবেন? ডাইরির জন্য চিকিৎসা করবেন না।এই সময়ে যদি মারা যায় কি করবেন আপনি? ফিরিয়ে দিতে পারবে আপনার পুলিশের ডাইরি আমার খুশি কে?”(রেগে চিৎকার করে বলে মাহির)
” এটা আমাদের নিয়মের বাইরে।আমরা কিছুই করতে পারবো না। আপনি সময় থাকতে থানায় ডাইরি করে আসুন।
মাহির রেগে ডাক্তারের কলার ধরে বলে।
“আপনি জানেন আমি কে?আমি চাইলে আপনার ডাক্তারি ছাড়িয়ে দিতে পারি। খুশির চিকিৎসা এখনই করা লাগবে। নয়তো বাঁচানো যাবে না তাকে। ও ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।”

কথা গুলো বলে মাহির নিচে বসে অঝর ধারায় কান্না করতে লাগে। মাহিরের কান্না দেখে হস্পিটালের সব মানুষ জরো হয়ে যায়।মাহিরের কান্নায় যেনো পুরো হস্পিটাল কাঁপছে। মাহিরের কান্না দেখে ডাক্তার মাহির কে ধরে দাঁড় করায় আর বলে।
” আমি চিকিৎসা করছি।আপনি থানায় গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে বলে একটা ডাইরি করে আসুন।”
বলেই খুশি কে নিয়ে চলে যায় ডাক্তার। মাহির ফোন করে তার আম্মুকে বলে খুশির খবর। এটা শুনেই মাহিরা কান্নায় ভেঙ্গে পরে।মাহিরাকে কান্না করতে দেখে মাহিরের আব্বু কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে মাহিরের আম্মু উঠে সজোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় মাহিরের আব্বুর গালে আর বলে,

“শান্তি হয়েছে এবার মেয়েটাকে মেরে? শান্তি পেয়েছ এবার?”
” মাহিরা পাগল হয়ে গেছো!কি বলছ এসব?”(গালে হাত দিয়ে)
“” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি।আমার ছেলের সুখ তোমার সহ্য হলো না! বাপ হয়ে ছেলের সুখ দেখতে পারলে না! তাই আমার ছেলের সুখ কেড়ে নিলে তুমি।”
“আমি কেন আমার ছেলের সুখ কেড়ে নিব?
” কেড়ে নেও নি? তোমার বোনের সঙ্গে প্ল্যান করে খুশি কে বাড়ি থেকে বের কর নি?তোমার জন্য খুশি অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলো।আর তোমার বোন খুশি কে বিষ খাইয়ে দিয়েছে। মেরে ফেলতে চেয়েছে,আমার ছেলের সুখ কেড়ে নিয়েছে।”(বলেই কান্না করতে থাকে মাহিরা)

সব কথা শুনে মাহিরের আব্বুর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরে। তার খুশির ওপর রাগ ছিলো ঠিকই কিন্তু কখনো খুশির খারাপ চায়নি বা মেরে ফেলতেও চায়নি। তার বোন এমন একটা কাজ করেছে ভাবতেই বুক ফেঁটে যাচ্ছে তার। আর খুশি,খুশি তো মৃত্যুর মুখে।মাহিরের আব্বুর চোখেও পানি চলে আসে।নিজের করা ভুলের জন্য নিজেই কষ্ট পাচ্ছে এখন।
মাহিরা তার বোন কে নিজে খবর দিতে পারে নি তাই অর্জুন কে ফোন করে সবটা বলেছে। অর্জন খুশির আব্বু আম্মু কে নিয়ে আসবে বলেছে।

“যে করেই হোক ওদের আমার চাই।আকাশে থাক আর পাতালে থাক ওদের আমার সামনে চাই।যতো তারাতারি সম্ভব।” (অগ্নি দৃষ্টি ধারণ করে বলে মাহির)
” জি ভাইয়া।”
বলেই তারা চলে যায়। মাহির হস্পিটালে বসে আছে আছে অপারেশন থিয়েটারের এর দরজার অপর লাল বাত্তি টার দিকে তাকিয়ে। মাহিরের আব্বু আম্মু ও এসে হাজির হয়। মাহির তার আম্মু কে দেখে আবেগ কন্ট্রোল করতে না পেরে জরিয়ে ধরে হাও মাও করে কান্না করে দেয়। মা ছেলে দুই জনেই কান্না করছে। ছেলের এমন কান্না দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে মাহিরের আব্বু।তার চোখেও পানি।না বুঝে কতটা ক্ষতি করে ফেলেছে তিনি। তাই ভাবছে আর চোখের পানি ফেলছে।

“আম্মু খুশির কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচব আম্মু? আম্মু আমার খুশি ঠিক হয়ে যাবে তো?ওরা কেন করলো এমন খুশির সঙ্গে আম্মু। খুশির অনেক কষ্ট হচ্ছে আম্মু। আমি নিজে অনুভব করতে পেরেছি খুশির কতটা কষ্ট হচ্ছে। আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না।অনেক ভালোবাসি আম্মু আমি ওকে।”(মাহির বাচ্চাদের মতো কান্না করছে আর বলছে)
মাহিরের আম্মুর মুখে কথা নেই।কি বলে শান্তনা দিবে ছেলেকে খুজে পাচ্ছে না।সেই ১২ বছর থেকে দেখে আসছে পাগলের মতো ভালোবাসতে খুশিকে। আজ সেই খুশি আবার দূরে যেতে বসেছে।
২-৩ ঘন্টা পরে লাল বাত্তি টা নিভে যায়। ডাক্তার বের হয়ে আসে।ডাক্তার কে দেখেই মাহির সেদিকে যায় আর জিজ্ঞেস করে।

” ডাক্তার খুশি ঠিক আছে তো?”
“ওশ করে বিষ বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উনি কিছু খাইনি,মনে হয় খালি পেটে ছিল। আর খালি পেটে বিষের ডোজ টা বেশি দ্রুত কাজ করে। যদিও বিষ পাইপ ব্যবহার করে বের করা হয়েছে কিন্তু জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না।আল্লাহ কে ডাকুন,দোয়া করুন।একমাত্র উনি শেষ ভরসা। ”
ডাক্তার চলে যায় মাহির আরো ভেঙ্গে পরে।দৌড়ে হস্পিটালের বাইরে চলে আসে। কিছুটা দূরে মসজিদ, সেখানে গিয়ে নামাজ পরে আল্লাহ দরবারে দু হাত তুলে কান্না করে, দোয়া করে খুশিকে যেনো তার কাছে ফিরিয়ে দেয়।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৩

পরের দিন সকালে হস্পিটালে এসে বসেছে মাহির। সারারাত মসজিদে ছিলো। ফজরের নামায পরে হস্পিটালে এসেছে। অর্জুন খুশির আব্বু আম্মুকে নিয়ে সোজা হস্পিটালে আসে আর সব কিছু শুনে মাহিরকে থাপ্পর দেয়।
সকাল ১০ টা বাজে।কাল থেকে মাহির কিচ্ছু খায়নি। মাহিরের আব্বু আম্মু ও খায়নি। কেউই খায়নি তেমন। অর্জুন সবাইকে খাওয়ানোর চেস্টা করছে কিন্তু কেউ শুনে না তার কথা। সবাই চুপ চাপ বসে আছে। তখন একজন ডাক্তার এসে বলে,
” পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।কেবিনে দেওয়া হয়েছে,কিন্তু যেকোনো একজন দেখা করতে পারবেন তার বেশি না। আর খেয়াল রাখবেন বেশি কথা বলাবেন না। পেসেন্টের ক্ষতি হবে।”

খুশির জ্ঞান ফিরেছে শুনে সবাই মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহ কে হাজার শুকরিয়া যানায়। খুশির সঙ্গে দেখা করার জন্য মাহির উঠে যেতে লাগে তখনিই খুশির আম্মু বলে,
“দাঁড়াও! তুমি যাবে না।আমার মেয়ের সঙ্গে আমি দেখা করব।”
মাহির আর এগতে পারলো না,পিছিয়ে গেলো।খুশির আম্মু চলে যায় খুশির সঙ্গে দেখা করতে। মাহির চাইলেই আগে সে দেখা করতে পারত কিন্তু মাহির আরও একবার খালামনির বিশ্বাস নষ্ট করেছে তাই আর গেলো না।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৫