এই মন তোমারি পর্ব ২৭

এই মন তোমারি পর্ব ২৭
নুজাইফা নূন

-” বাইরের একটা বাজে মেয়ে এসে নির্লজ্জের মতো তোমার বর কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ,আর তুমি এখানে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছো ভাবি মনি? কথাটা কর্ণপাত হতে’ই ঘুম হালকা হয়ে যায় সূরার। মেয়েটা গতরাতে শাফায়াতের রুম থেকে এসে না খেয়ে নাজমা দেওয়ান এর কোলে মাথা রেখে অনেক রাত পর্যন্ত কান্নাকাটি করেছে।

যার দরুন প্রচন্ড মাথা হয়েছে।রাতে ঘুমোতে পারে নি।সারা রাত বিছানায় ছটফট করেছে মেয়েটা। শেষ রাতে যখন দুচোখের পাতা এক হয়েছে তখনি ফজরের আযানের ধ্বনি শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সূরা তড়িঘড়ি করে উঠে রোজকার মতো ওযু করে নামাজ পড়ে ব‌ই খাতা নিয়ে পড়তে বসে যায়। কিন্তু ঘুমের কারণে পড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না।যা দেখে নাজমা দেওয়ান ব‌ইখাতা রেখে তাকে ঘুমোতে বলে।সূরা ও যেনো এই সুযোগ টায় খুঁজছিলো।সে নাজমা দেওয়ান কে জড়িয়ে ধরে বললো , আপনি আমার সব কথা কিভাবে বুঝতে পারেন মা?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-” কারণ আমি যে মা। সন্তানদের কিছু হলে কেউ বুঝতে পারুক বা না পারুক একজন মা ঠি‌ক‌ই বুঝতে পারে।এই যেমন আমি বুঝতে পারছি কিছুদিন থেকে তোর মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিস তুই। তুই এখন যথেষ্ট নিজের ভালো বুঝতে শিখেছিস।যায় হয়ে যাক না কেন কখনো নিজের স্বামী, নিজের সংসার ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববি না মা। নিজেকে শক্ত কর। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখতে হবে তোকে।মনে রাখিস বাঙ্গালী মেয়েদের কিন্তু একবার’ই বিয়ে হয়।বিয়ের পর স্বামীর সাথে আপোষ করে চলতে না পারলে, ডির্ভোস এর পর পুরো পৃথিবীর সাথে আপোষ করে চলতে হয়।তাই স্বামী, সংসার যেমনি হোক মানিয়ে চলতে হয়। ঠিক যেমন টা আমি করে চলছি।”

-” মানে টা কি মা? আপনার এতো টাকা পয়সা ধন দৌলত থাকার পর ও আপনি সুখি নন?”
-” টাকা পয়সা কি আর সর্বসুখ দিতে পারে রে মা? পুরুষ মানুষ যদি খারাপ হয় টাকার পাহাড় থাকলেও সুখি হ‌ওয়া যায় না।আর পুরুষ মানুষ যদি ভালো হয় কুঁড়ে ঘরে সারাজীবন সুখে শান্তিতে বসবাস করা যায়। শফিকুল কখনো আমাকে ভালোবাসে নি।ও ভালোবাসতো আমার ছোট বোন নাইমা কে। এমনকি বাবা নাইমার সাথে শফিকুল এর বিয়ে ঠিক করে। কিন্তু বিয়ের দিন নাইমা বাবার মুখে চুলকানি মেখে অন্য ছেলের হাত ধরে চলে যায়।বাবার মানসম্মানের কথা চিন্তা করে সবাই মিলে শফিকুলের সাথে আমার বিয়ে দেয়।”

-” আপনার আরো একটা বোন আছে? সে কোথায় এখন?”
-” জানি না। সেদিন বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নাইমার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। জানি ও না সে এখন কোথায় কিভাবে আছে?তবে শফিকুলের মনে প্রাণে এখনো নাইমা রয়ে গেছে।যায় হোক অনেক কথা বলে ফেলেছি। সারারাত ঘুমোস নি তুই। এখন একটু ঘুমো।দেখবি ভালো লাগবে।”

-” ঠিক আছে মা।তবে আমাকে নাস্তা করার জন্য ডাকার দরকার নেই। আমার ঘুম ভাঙ্গলে আমি উঠে খেয়ে নিবো।”
-” ঠিক আছে ডাকবো না । সেই তখন মেয়েটা ঘুমিয়েছে আর বেলা এগারোটা বাজে নুজাইফার ডাকে তার ঘুম ভাঙ্গে। সূরা অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো, কে এসেছে নুজাইফা?”
-” তুমি চলো নিজের চোখে’ই গিয়ে দেখো।”

-” সূরা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে নিচে চলে আসে।নিচে এসে যেনো সূরার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। প্রায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা একটা মেয়ে।যার দুধে আলতা গায়ের রং,সরু নাক,হরিনীর মতো টানা টানা চোখ,ঘাড় অবধি লেয়ার কাট করা খয়েরী রঙের চুল,পরনে কালো কালারের হাতা কাটা ছোট একটা টপস।

মেয়েটা শাফায়াত কে দুহাতে আকড়ে ধরে রেখেছে।যা দেখে মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যায় সূরার। দুচোখ দেখে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ে।মেয়েরা প্রসব বেদনার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারলেও তার শখের পুরুষের সাথে অন্য কোনো নারী কে সহ্য করতে পারে না। সেইখানে শাফায়াত তো সূরার প্রাণভোমরা।সে কিভাবে পারবে তার সুন্দর ব্যাডা মানুষের পাশে অন্য মেয়েকে সহ্য করতে? ”

-” মেয়েটা শাফায়াত কে জড়িয়ে ধরলেও শাফায়াত মেয়েটা কে জড়িয়ে ধরে না।সে বিরক্তি নিয়ে নিজেকে মেয়েটার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চায়। কিন্তু যখন তার লাল চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সূরার দিকে নজর যায় তখন সে সূরার হৃদয় আরো ক্ষত বিক্ষত করে দিতে মেয়েটাকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, তরী বেইবি তুমি এইখানে?হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ?”

-” তুমি খুশি হ‌ও নি বেইবি?”
-” শাফায়াত দাঁতে দাঁত চেপে বললো, হ্যাঁ বেইবি খুব খুশি হয়েছি। তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে বেইবি।যাও গিয়ে রেস্ট করো।”

-” ইশ্ বিয়ের আগেই আমার বাবুটা আমার কত্তো খেয়াল রাখছে। লাভ ইউ বাবু।”
-” শাফায়াত তরীর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, তুমি সোফায় গিয়ে বসো।বাসার সবার সাথে গল্প করো। আমার একটু কাজ আছে ।আসছি আমি।”
-” আসছি আমি মানে কি হ্যাঁ? ড্যাড বলেছে এই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের বিয়ে দিয়ে চার হাত এক করে দিবে।এখন আমাদের কতো প্ল্যানিং রয়েছে।আর তুমি কি না কাজ কাজ করে বেড়াচ্ছো বেইবি?”

-” তুমি টেনশন করো না। শহরের নামকরা
বিজনেস ম্যান শফিকুল দেওয়ান এর একমাত্র ছেলে শাফায়াত দেওয়ান এর বিয়ে বলে কথা।সারা শহরের মানুষ জানবে। হলুদ হবে, মেহেন্দী হবে নাচ,গান হৈ হুল্লোড় সব হবে।”
-” আমি তো মনে মনে এমনটাই প্ল্যান করে রেখেছি। তুমি কিভাবে আমার মনের কথা বুঝতে পারলে বেইবি?”
-” কারণ মনটা যে আমারি।”

-” হাউ সুইট! তুমি আমাকে এত্তো ভালোবাসো বাবু? শাফায়াত প্রতিত্তরে কিছু বলে না।যার জন্য বেশ অপমান বোধ করে তরী ।সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ তার কথা শুনেছে নাকি? আর তখনি তার চোখ যায় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সূরার দিকে।সে তৎক্ষণাৎ শাফায়াত কে জিজ্ঞেস করলো, বাবু এর আগে আমি তোমাদের বাসায় কয়েক বার এসেছি। কিন্তু এই মেয়েটা কে তো এর আগে কখনো দেখিনি।

মেয়েটা কি তোমাদের বাসার নতুন সার্ভেন্ট?বাই দ্যা ওয়ে মেয়েটা দেখতে কিন্তু অনেক কিউট আছে।লুক লাইক রসগোল্লা। সাধারণত শহরে সার্ভেন্ট পাওয়া খুবই ডিফিকাল্ট ব্যাপার। সেখানে তুমি এতো রসগোল্লা টাইপের সার্ভেন্ট কোথা থেকে জোগাড় করলে বাবু?”

-” সূরার নামে এমন আজে বাজে কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় শাফায়াতের।সে একপ্রকার চিৎকার করে বলে উঠলো, স্টপ অল দিস ননসেন্স । আমি কি একবারও বলেছি মেয়েটা আমাদের বাসার সার্ভেন্ট?”
-” শাফায়াতের এহেন ব্যবহারে অনেক টা ঘাবড়ে যায় তরী।সে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো, সার্ভেন্ট নয় তো কে?”

-” ও আমার ব ..।
-” ব মানে?”
-” আম্মির বোনের মেয়ে।আই মিন আমার কাজিন।”

-” ওহ্ তাই বলো আরকি। অতঃপর তরী সূরাকে উদ্দেশ্য করো বললো, এই মেয়ে এইদিকে এসো।কাম অন।”
-” তরীর অপমানজনক কথাবার্তা শুনে সূরার খুব খারাপ লাগছিলো। কিন্তু যখন সে তার সুন্দর ব্যাডা মানুষ তার হয়ে কথা বলছে এক নিমিষে’ই তার খারাপ লাগা দূর হয়ে গেল।সূরা গুটি গুটি পায়ে তরীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, জ্বি বলুন।”

-” নাম কি তোমার?”
-” সূরা।”
-” ওয়াও নাইস নেইম।তো আমার শ্বশুর বাড়ি কি শুধু বসে বসে অন্ন ধংস করা হয় নাকি কোনো কাজ কর্ম ও করা হয়?আর যদি বসে বসে খেয়েও থাকো , আজকের পর থেকে সেটা হবে না। এখন যাও কিচেনে গিয়ে আমার জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এসো।কাম ফার্স্ট।”

এই মন তোমারি পর্ব ২৬

-” সূরা যায় না। বরং ঠাঁই সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।যা দেখে শাফায়াত বললো, কি হলো শুনতে পাও নি তরী কি বলেছে? ও আমার হবু বউ।আজ থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত ওর সব দায়িত্ব তোমার।ওর কখন কি প্রয়োজন সবটা দেখবে তুমি। আফটার অল শাফায়াত দেওয়ানের হবু বউ বলে কথা বলে শাফায়াত সূরা কে চোখ টিপ মেরে দিলো।”
-” ও আমার হবু ব‌উ। কথাটা বারংবার কানে বাজতে লাগলো সূরার।”

এই মন তোমারি পর্ব ২৮