এই মন তোমারি পর্ব ২৮

এই মন তোমারি পর্ব ২৮
নুজাইফা নূন

-” ও আমার হবু বউ।আজ থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত ওর সব দায়িত্ব তোমার।ওর কখন কি প্রয়োজন সবটা দেখবে তুমি। আফটার অল শফিকুল দেওয়ান এর হবু বউ বলে কথা বলে শাফায়াত সূরা কে চোখ টিপ মেরে দিলো।”
-” ও আমার হবু বউ কথাটা বারংবার কানে বাজতে লাগলো সূরার।ভেতর টা দুমরে মুচড়ে শেষ হয়ে যেতে লাগলো।সে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে কিচেনে চলে গেল কফি বানাতে।

সূরার পেছন পেছন শাফায়াত ও কিচেনে প্রবেশ করলো। সূরা মনে মনে বললো ডানা কাটা পরী তোরে আজ এমন কফি খাওয়াবো যে তুই জীবনেও ভুলতে পারবি না। অতঃপর সূরা চুলার উপর একটা পাতিলে পানি দিলো গরম হ‌ওয়ার জন্য। আর তখনি শাফায়াত সূরা কে পেছন থেকে জড়িয়ে তার চুলের ঘ্রাণ শুঁকে বললো, জ্বলে বুঝি? দেখেছো তো আমার হবু বউ কতো হট ,কতো স্মার্ট? আমি তো তার থেকে চোখ ই ফেরাতে পারছি না।তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেছি আমি। কি সুন্দর চোখ, নাক , ঠোঁট, চুল সবমিলিয়ে জাস্ট অসাধারণ।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-” সূরা তৎক্ষণাৎ শাফায়াত কে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললো, বাহ্ মিস্টার বাহ্। আপনি গাছের তলায় ও খাবেন আবার গাছের আগায় ও খাবেন।এটা তো আমি হতে দিবো না।ঐ ডানা কাটা পরীর সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হয়েছেন ভালো কথা।তো যান না তার কাছে। কেনো আমার পিছু নিয়েছেন?”

-” শাফায়াত সূরার হাত চেপে ধরে বললো, তুমি কি সত্যিই আমাকে কখনো ভালোবাসো নি সূরা? সবটা তোমার অভিনয় ছিলো? তুমি শুধু একবার আমাকে সব সত্যি টা বলো। তুমি আমাকে যে ক্লু দিয়েছো আমি সেই ক্লু খুঁজে চলেছি। কিন্তু এই ক্লু খুঁজতে যে বড্ড সময় লেগে যাবে। আমার কি মনে হয় জানো এই সব মিথ্যা।

তোমার মনে এখন আরাব বসবাস করছে।তাই তো আমার কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্যে তুমি এই মিথ্যে নাটক সাজিয়েছো। শুধু মাত্র আমার থেকে দূরে চলে যাওয়ার জন্য।প্লিজ সোনা ব‌উ একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো যে , সুন্দর ব্যাডা মানুষ আমি আপনাকে ভালোবাসি।আপনি প্লিজ বিয়ে টা করবেন না।আমি যা করেছি সবটা মিথ্যা ছিলো।আরাবের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।সবটা আপনাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য ছিলো।বলো না সূরা। তুমি শুধু তোমার সুন্দর ব্যাডা মানুষ কেই ভালোবাসো, আর কাউকে না।বলো না তুমি যা বলেছো সব মিথ্যা ছিলো।

-” আমি কোনো মিথ্যা বলছি না পুলিশ।আমাকে সত্যিই বাধ্য করা হয়েছে।আর এ সব কিছুর পেছনে রয়েছে আব বাকিটা বলতে পারে না সূরা।তার আগেই শফিকুল দেওয়ান এসে বললো, এই মেয়ে তোমার কাকা ফোন করেছে। তোমার সাথে কথা বলতে চায়। সূরা শফিকুল দেওয়ান এর থেকে ফোন নিয়ে সালাম দিয়ে বললো,
-” আপনি কেমন আছেন কাকা? এতো দিন পরে আমার কথা মনে পড়লো আপনার?”

-” ভালো নেই রে মা।আজকে বাজার থেকে ফেরার সময় হুট করে কোথা থেকে একটা মোটরসাইকেল এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।যার কারণে অনেক টা আঘাত লেগেছে রে মা।তবে এখন মোটামুটি সুস্থ্য আছি।তোর শ্বশুর অনেক ভালো রে মা। আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে আমাকে দশ হাজার টাকা দিয়েছে ঔষধ খাওয়ার জন্য।সূরা মনে মনে বললো, আপনি বড্ড ভালো মানুষ কাকা।

তাই তো সবাইকে নিজের মতো মনে করেন।ভালো মানুষের আড়ালে থাকা অমানুষ কে আপনি চিনতে পারেন নি।আপনি যাকে ভালো বলছেন সেই ভালো মানুষ টায় নিজের স্বার্থের জন্য আপনার এক্সিডেন্ট করিয়েছে।আবার সবার কাছে ভালো সাজার জন্য আপনাকে টাকা ও দিয়েছে।তার এই অসুস্থতার জন্য সূরা নিজে দায়ী ভাবতেই সূরা কান্না করে দিলো।ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সেলিম সূরার নাক টানার আওয়াজ পেয়ে বললো, তুই কান্না করছিস কেনো মা? আমার সেরকম কিছু হয় নি মা। আমি ঠিক আছি।”

-” আপনার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো বড্ড মনে পড়ছে কাকা।বাবার ভালোবাসা পায় নি । কিন্তু আপনি আমাকে সেই ভালোবাসা দিয়েছেন। আপনার কাছে যে আমি ঋনী কাকা।আমি আমার নিজের সুখের জন্য আপনার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না কাকা।”

-” কি আবোল তাবোল বকছিস মা? তোর জন্য আমার কেনো ক্ষতি হবে? বরং তোর বিয়ের পর আমাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।তোর শ্বাশুড়ি আমাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।এখন আর আমাদের না খেয়ে দিন কাটাতে হয় না।তোর চাচি সারাক্ষণ সূরা সূরা করে। তোদের বিয়ের প্রায় ছয় মাস হতে চললো এর মধ্যে একটা বার আমাকে দেখতে আসলি না।আমি কি এতোটাই পর হয়ে গিয়েছি?”

-” আসবো কাকা।আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন।”
-” ঠিক আছে মা।রাখছি তাহলে ।ভালো থাকিস।”

-‘ হ্যাঁ কাকা বলার সাথে সাথে টু টু শব্দে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।সূরা শফিকুল দেওয়ান এর হাতে ফোন দেওয়ার সময় তিনি কিছু বললেন না। কিন্তু সূরা তার চোখের ভাষা যেন পড়তে সক্ষম হয়ে গেল।তিনি এটাই বলতে চাচ্ছেন যে, ভুলে ও কোনো কথা যদি শাফির কর্ণপাত হয় তাহলে কিন্তু তোমার কাকার সাথে এর থেকেও বড় কিছু হয়ে যাবে।সো বি কেয়ারফুল। সূরা কিছু না বলে চুপচাপ কিচেনের দরজায় যাওয়ার সাথে সাথে শাফায়াত তাকে হ্যাঁচকা টানে ভেতরে নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো, কি বলতে চায়ছিলে তাড়াতাড়ি বলো।একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবে না।যা হয়েছে সবটা সত্যি সত্যি বলবে।”

-” সূরা কিছু না বলে শাফায়াতের থেকে নিজকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের মতো করে কফি বানিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে যায়।সূরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে শাফায়াত দেয়ালে ঘুসি মেরে বললো, ড্যাম ইট।আমাকে ইগনোর করার পরিণতি তুমি হারে হারে টের পাবে সুইটহার্ট।”

-” সূরা তরী কে কফি দেওয়ার সাথে সাথে তরী খুশি মনে কফি তে চুমুক দেয়। আর তাতেই যেন তরীর প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।এটা কফি তো নয় যেনো মরিচের গুঁড়া গুলিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।তরী ওয়াক থু থু করতে করতে বললো, এই মেয়ে এটা কি বানিয়েছো তুমি?যাও আবার নতুন করে বানিয়ে নিয়ে এসো।”

-“লিসেন মিস তরী আমি আপনার মাইনে করা চাকর নয় যে আপনার সব কথা আমার মেনে চলতে হবে। আমি যেভাবে পেরেছি সেভাবে বানিয়েছি।এখন আপনি খাবেন কি খাবেন না সেটা আপনার ব্যাপার।”
-” তোমার সাহস তো কম নয় । তুমি জানো তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো?”

-” এই মুহূর্তে আপনাকে নির্লজ্জ বেহায়া ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না আমার।আপনি নিজেকে এই বাড়ির পুত্রবধূ বলে দাবি করছেন। এইখানে আপনার হবু শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, আপনার হবু বর , বাড়ির ড্রাইভার , সবাই রয়েছে। তাদের সামনে এমন ডানা কাটা, ঠ্যাং বের করা পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছেন, অথচ আপনার মধ্যে নূন্যতম লজ্জাবোধ দেখা যাচ্ছে না।”

-” ইউ ব্লাডি গার্ল বলে তরী সূরার গালে থা’প্প’ড় মা’রা’র আগেই শাফায়াত এসে তরী হাত ধরে বললো, ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ না করায় ভালো ডার্লিং।”

-” ইউ আর রাইট বেইবি।চলো না বাবু আমরা শপিং এ যায়। একবারে বিয়ের শপিং করে নিয়ে আসি।”
-” শাফায়াত সূরার দিকে তাকিয়ে বললো, অবশ্যই যাবো। তুমি শপিং এ যেতে চেয়েছো আর আমি নিয়ে যাবো না এমনটা হয় নাকি? অতঃপর শাফায়াত সূরা কে বললো, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”

এই মন তোমারি পর্ব ২৭

-” শাফায়াতের কথা শুনে তরী চোখ বড় বড় করে বললো, ঐ মেয়েটা রেডি হবে মানে কি বাবু?ও আমাদের সাথে যাবে?”
-” ইয়েস ডেয়ার। তোমার শপিং ব্যাগগুলো ক্যারি করার জন্য হলেও ওকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে ‌হবে।”

এই মন তোমারি পর্ব ২৯