এই শহর আমার পর্ব ১১ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

এই শহর আমার পর্ব ১১
Suraiya Aayat

মুগ্ধতার এক্সামের ডেট যতই এগিয়ে আসছে ততই মুগ্ধ তার সাথে স্পর্শর চিন্তাটাও দ্বিগুণ হচ্ছে ৷ মুগ্ধতা বরাবরই ভাল স্টুডেন্ট তবু কোথাও না কোথাও একটা চিন্তা থেকেই যায় ৷
স্পর্শ লাগেজ গুছাচ্ছে আর পাশে মুগ্ধতা বসে বসে ফোনে কার্টুন দেখছে ৷ স্পর্শ মাঝে মাঝেই ওর দিকে আঢ়চোখে তাকাছে, মুগ্ধতা কার্টুন দেখতে দেখতে মুচকি মুচকি হাসছে ৷
স্পর্শ বলে উঠলো

” হেল্প মি মুগ্ধ, এখনো অনেক কিছু গোছানো বাকি আছে আমার ৷”
মুগ্ধতা স্পর্শর কোন কথা কানেই তুললো না , ও ওর মতোই আছে ৷
স্পর্শ আবার বলল
” ফোন রাখো আর আমাকে হেল্প করো, আমি বাসায় না থাকলে তো তোমার ভালোই হয় তখন তো আর বকা ঝকা করার মতো কেউ নেই, তখন যা মন চাই করো, আপাতত আমাকে হেল্প করো ৷”
এখনো মুগ্ধতার মাঝে কোন পরিবর্তন নেই ও ওর মতো ৷
স্পর্শ এবার রেগে গিয়ে ওর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বিছানার ওপর ছুড়ে মারলো ৷ মুগ্ধতা রাগী চোখে তাকিয়ে বলল

” ফেলে দিলেন কেন ফোনটা ? আমি কার্টুন দেখছিলাম তো নাকি ৷”
” আমাকে হেল্প করো ,নইতো আমি ট্রেন মিস করে যাবো ৷”
” আমি কি আপনার কাজের বুয়া লাগি যে আমাকে এসব কাজ করতে বলছেন? ”
স্পর্শ মুগ্ধতার দিকে খানিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
” হেল্প করলে কাজের বুয়া হয়ে যাই জানতাম না তো ৷ ওকে ফাইন লাগবে না তো হেল্প ৷”
কথাটা বলে আবার ব্যাগ গোছাতে শুরু করলো ৷মুগ্ধতা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো স্পর্শর দিকে, এত অল্প একটা কথাতে স্পর্শ এতো রেগে গেল ! আগে মুগ্ধতা এত এত দুষ্টামি করতো তাও স্পর্শ বিরক্ত হতোনা ৷ আজকাল খুব অল্পতেই স্পর্শ রেগে যাই , কারনটা মুগ্ধতা ঠিক বুঝতে পারছে না ৷
মুগ্ধতাও রেগে গিয়ে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” রেগে যাওয়ার কি আছে, আমি এমনিই বললাম কথাটা, কি করতে হবে বলুন ৷”
স্পর্শ কিছু বলল না , ব্যাগের চেনটা দিয়ে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলল
” আর মাত্র 16 দিন পর তোমার এক্সাম, মাথা থেকে সব লেইম চিন্তা ভাবনা সরাও আর পড়াতে কনসনট্রেট করো ৷ রেজাল্ট খারাপ হলে তুমি তো জানোই কি হবে ৷”
স্পর্শর এমন কথাতে মুগ্ধতার মেজাজ ও বিগড়ে গেল ৷ ও জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো ৷
” কি করবেন ! মারবেন আমাকে ?”
স্পর্শ নিজেকে সামলে বলল

“মুগ্ধ আমি এক্ষুনি বার হবো, প্লিজ এখন থামো, আমার রেডি হতে হবে ৷ আর রাত্রে কি কি বলেছি নিশ্চয় মনে আছে তোমার ৷ সারাদিন নো দুষ্টামি, বাইরে যাবে না, বেশি আইসক্রিম খাবে না ঠান্ডা লেগে যাবে, আম্মুর সব কথা শুনবে ৷ আর আমি তাড়াতাড়ি ব্যাক করবো ৷”
মুগ্ধতা ভাবুক সুরে বলল
” আপনি ঠিক কোথায় যাচ্ছেন যেন ! সিলেট তাইনা ?”
” হমমম ৷”
” ওটা পাহাড়ী এলাকা, খুব সুন্দর তাইনা ! ”
” হমম, সুন্দর ৷”
” আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে আদতেও আপনার সেখানে কোন কাজ নেই, আপনি সেখানে একা একা ঘুরতে যাচ্ছেন ?৷”
” মুগ্ধ ৷”(রাগী গলায়)

” হয়েছে হয়েছে, যাচ্ছেন তো মাত্র 3 দিনের জন্য, আর ব্যাগ গোচাচ্ছেন এমন করে যেন কখনো আর ফিরবেন ই না, একেবারে ওখানেই থেকে যাবেন ৷”
স্পর্শ শার্টের বোতাম দিতে দিতে বললো
” আমি না ফিরলে খুশি হও!”
” হমম ভীষন, আমি আমার মতো লাইফ লিড করতে পারবো, শাসন করার কেউ থাকে না? ৷”
” আচ্ছা আর ফিরবো না হ্যাপি ?”( হাসতে হাসতে)
মুগ্ধতা বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল

” ওখানে গিয়ে আবার বিয়ে করে সংসার পাতানোর প্ল্যান করছেন না তো ? ? তেমনটা হলে আমি কিন্তু আপনাকে মেরেই ফেলবো বলে দিলাম ৷”
স্পর্শ হাসতে হাসতে বলল
” হমম, আমার তো আবার একটাতে পোষাই না তাইনা, আমার তো অনেক বউ চাই ৷”
মুগ্ধতা রেগে গিয়ে স্পর্শর দিকে টাওয়ালটা ছুড়ে মারলো ৷
স্পর্শ কিছু বলতে যাবে তখনই মুগ্ধতা বলে উঠলো
” নীতু কুটনি না ? ওর গলারই আওয়াজ তো ৷”
” আমি কি করে জানবো বলোতো ৷”
মুগ্ধতা ভ্রূ কুঁচকে বললো

” হমমম আমি ওর ফাটা বাঁশ গলার আওয়াজ চিনি, ও এখানে এসেছে , কিন্তু কেন? আপনাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে এসেছে ও ৷ ”
স্পর্শ মুচকি হেসে বলল
” আমি আর কিছুক্ষন আছি, যাও গিয়ে ঝগড়া করো ৷”
“সে তো করবোই, ওর এতো বড়ো সাহস ৷”
কথাটা বলে মুগ্ধতা নীচে চলে গেল ৷
মুগ্ধতা গিয়ে দেখলো নীতু সোফাতে মাথা নীচু করে বসে আছে ৷ ওকে দেখে মুগ্ধতা বলল
” তুমি এখানে কি করছো আর কার পারমিশন নিয়ে বাসায় ঢুকেছো ? ”
নীতু মুগ্ধতাকে দেখে বলল

” কেমন আছো ?”
” ভালো আছি, বাট কি চাই এখানে ৷'(ভ্রূ নিচআয়ে বলল)
” স্পর্শ ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছি, আর তার সাথে ওনাকে সরি বলতে ৷”
” উনি বাসাতে নেই, আর সরি বলবা কিসের জন্য ?”
” সেইদিনের ওই কাজের জন্য ৷”
তখনই স্পর্শ নীচে নামতে নামতে বলল
” সরি বলতে হলে মুগ্ধকে বলো আমাকে না ৷ ভিডিওটা তার ছিলো আমার না ৷”
নীতু আর কোন কথা না বাড়িয়ে মুগ্ধতাকে সরি বলল, মুগ্ধতা তো অবাক, নীতু এতো সহজে ওকে সরি বলেছে ৷
” আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি ?” নীতু নরম সুরে বলল ৷
মুগ্ধতা রেগে গিয়ে বলল

” জ্বি না, আমি কোন কুটনি বুড়ির সাথে ফ্রেন্ডশিপ করিনা, তাই তুমিও নট ৷”
নীতু অবাক হয়ে বলল
” সরি, বুঝলাম না কি বলতে চাইলে ৷”
স্পর্শ হাসছে, মেয়েটাকে আরো কিছু বলে বেজ্জাতি করার আগে স্পর্শ বলল
” ও তোমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ এ ইনটারেসটেড নয় ৷”
” আচ্ছা , কোন সমস্যা নেই, আমরা দুর থেকে ফ্রেন্ড কেমন ৷ ”
মুগ্ধতা কোন রিপ্লাই দিলো না ৷
স্পর্শর দিকে একবার তাকিয়ে নীতু বলল

” আজ আসি ৷”
নীতু চলে গেল ৷
নীতু চলে যেতেই মুগ্ধতা স্পর্শর কাছে গিয়ে আড় চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বলল
“সত্যি করে বলুন আপনার আর ঔই নীতু কুটনির মাঝে ঠিক কি চলে না হলে এত সহজে ও সরি বলে দিলো কীভাবে !”
স্পর্শ বিরক্ত হয়ে বলল
” প্লীজ মুগ্ধ স্টপ ইট, আই নিড টু গো নাও ৷ মিস করবে আমাকে ?”
” একদম নট ৷”
স্পর্শ মুগ্ধতার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে বলল
” সাবধানে থেকো ৷ ”

পরের দিন,,,,
” নীতু কুটনি আমাকে এতো সহজে সরি বলে দিলো ভাবা যাই !”( মুগ্ধতা অবাক হয়ে বলল)
শুভ্রতা বাকা চোখে তাকিয়ে বলল
” দোস্ত কিছু তো গড়বড় আছে নাহলে ওই মেয়ে এত সহজে সরি বলবে কেমনে ?”
” আমিও সেটাই ভাবছি ৷”
কথাটা বলতে বলতে ক্লাসে sir চলে এলো ৷
নীতু আজকে আসেনি ৷ নীতু হোস্টেল এ থাকে না, ও বাসা থেকে কলেজ আসে ৷

রাত 9টা,,,
মুগ্ধতা বই পড়ছে টেবিলে, রুমটার মাঝে স্পর্শর কমতি অনুভব করছে , বারবার মনে হচ্ছে কি একটা জিনিস ওর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ৷ পড়তেও একঘেয়েমি লাগছে খুব , মনটাও ছটফট করছে, ওর মন জানে যে স্পর্শর জন্য ওর মন কাঁদছে কিন্তু আনজে তা মানতে নারাজ ৷

স্পর্শ পৌছে গিয়ে ফোন করেছিলো একবার তারপর আর ফোন করেনি এই অবধি, মুগ্ধতাও করেনি, কলেজ থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তারপর উঠে পড়তে বসে গেছে ৷ মুগ্ধতার এখন রাগ হচ্ছে স্পর্শর এমন অদ্ভুত আচরনের ওপর , এইকথিনে স্পর্শর মাঝে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করেছে ও যেগুলো প্রভাব ফেলার মতো ৷ স্পর্শ এখন খুব সহজেই রেগে যাই, আগের মতো মুগ্ধতার সাথে টমের মতো উঠেপড়ে ঝগড়া করে না ৷ যদিওবা এতে করে ওর প্রতি স্পর্শর কেয়ারনেস স্বভাবটার কোন পরিবর্তন হয়নি ৷

মুগ্ধতা বিছানা থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিতেই দেখলো 3 টে মিসডকল ৷ স্পর্শ 3 বার কল করেছিলো কিন্তু ও ধরেনি ৷ ঘুমের যাতে কোন বিঘ্ন না ঘটে সেই জন্য ফোন সাইলেন্ট করে রেখে ছিলো ও ৷
চটপট স্পর্শর কাছে ফোন করলো ৷
বেশ কয়েকবার রিঙ হতেই স্পর্শ ফোন ধরলো ৷
স্পর্শ ফোন ধরতেই মুগ্ধতা মিনমিনে গলায় বলল
” সরি ৷ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ৷”
স্পর্শ মুচকি হেসে বলল

” আমি কি ঠিক শুনছি ! ফারহাত মুগ্ধতা সরি আহানাফ মুগ্ধতা আমাকে সরি বলছে ! শুনে নাগিন ডান্স দিতে ইচ্ছা করছে ৷ বাই দা ওয়ে পড়াশোনা করছো তো ? বাসা থেকে কোথাও যাওনি তো ? আমি বাসায় নেই খুশি তো ? আমাকে মিস করছোনা তো?”
” হমম ৷”
স্পর্শ মুচকি হেসে বলল
” এতগুলো প্রশ্নের উত্তর হিসাবে একটা হমমম পেলাম, কীভাবে বুঝবো কোনটার উত্তর দিয়েছো ৷”
মুগ্ধতা মাথা নীচু করে বলল
” বাসা থেকে কোথাও যাইনি আর পড়াশোনাও করছি ৷”
” আর বাকি গুলোর উত্তর গুলো ?”
মুগ্ধতা কিছু বলল না চুপ করে আছে ৷ স্পর্শর কি একটুও খারাপ লাগছে না মুগ্ধকে রেখে একা থাকতে ! কথাগুলো ভাবছে মুগ্ধতা ৷
মুগ্ধতার নিরবতা দেখে স্পর্শ বলল

এই শহর আমার পর্ব ১০

” কিছু খেয়েছো !”
মুগ্ধতা রেগে গিয়ে বলল.
” আমাকে আর ভালো বাসেন না তাইনা ! আমাকে আর আগের মতো ভালো লাগেনা তাইনা ! আমাকে একা রেখে ভালোই আনন্দে আছেন তাইনা ! হমম আমি জানি তো তাই আমিও মিস করছি নট ৷ হাহ ! আহানাফ মুগ্ধতা কাউকে মিস করে না বুঝেছেন?”
স্পর্শ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
” বুঝলাম ৷”

কথাটা বলতে না বলতেই মুগ্ধতা শুনতে পেলো পাশ থেকে একটা ছেলে ডেকে উঠলো
” রিনি দিদি আপনাকে ডাকছে ,তার গায়ে আপনিই প্রথম হলুদ ছোঁয়াবেন , তাড়াতাড়ি আসেন ৷”
মুগ্ধতার কথাটা কানে গেল, কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্পর্শ বলে উঠলো
” মুগ্ধ আমি বিজি আছি ,পরে কথা হবে ৷”
কাথাটা বলে কেটে দিলো স্পর্শ৷
মুগ্ধতার হাত পা কাপছে, তাহলে স্পর্শ কি ওকে মিথ্যা বলে ওখানে গেছে ? ও ওর কাজের জন্য যাইনি ?

এই শহর আমার পর্ব ১২