এই শহর আমার পর্ব ৩ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

এই শহর আমার পর্ব ৩
Suraiya Aayat

ড্রেসটা চেন্জ করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো মগ্ধতা, রুমে ঢুকে দেখলো স্পর্শ নেই, ওকে আর পাই কে ৷
মুগ্ধতা মনে মনে : ভাগ মুগ্ধ ভাগ, ওই পিংকিশ বুড়ো বান্দর তোকে হাতের কাছে পেলে তোকে তো ছানা বানিয়ে ফেলবে, ভাগ ৷

কথাটা মনে মনে ভেবে মুগ্ধতা শাড়িটা নিয়ে দৌড়ে ছুটলো ৷ স্পর্শ মুগ্ধতার পায়ের আওয়াজ পেয়েছে,বুঝতে পেরেছে যে মুগ্ধতা ভয়ে পালিয়েছে, কিন্তু স্পর্শর থেকে পালানো কি এতোই সহজ ৷ কথাটা ভেবে স্পর্শ মুচকি হাসলো ৷
হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো , রাত 11টা 25 বাজে ,
10 টার দিকে ঝিরঝিরে বৃষ্টির পর 10.30 টার দিকে একটু জোরেই বৃষ্টি হয়েছে ৷ প্রথম বৃষ্টির পর মাটি থেকে যে অদ্ভুদ ঘ্রান ভেসে আসে তা ক্ষনিকের মুষলধারা বৃষ্টিতে মিলিয়ে যাই ৷ তেমনি কিছুখন আগে স্পর্শ সেই সুন্দর ঘ্রানটা পেলেও এখন আর পাচ্ছে না, তবে হালকা ঝোড়ো হাওয়াই গাছের পাতার শনশন আওয়াজ আর মিষ্টি হাওয়াটা ও পাচ্ছে, মুগ্ধতা বলে এই মিষ্টি হাওয়াই ওর নাকি কোন ইন্টারেস্ট নেই তার পরিবর্তে যদি ওকে নাকি একা একটা সাইকেলের সাথে ঢাকা শহরে ছেড়ে দেওয়া যাই তাহলে ও টো টো করতে করতে ঘুরবে ৷ মুগ্ধতা প্রায় প্রায় দাবী করে স্পর্শর কাছে যে ওকে নিয়ে একটু বাইকে করে লংড্রাইভে যাওয়ার জন্য কিন্তু আজ অবধি স্পর্শ কখনো মুগ্ধতার এই ইচ্ছেটা পূরন করেনি, একদিন তো মুগ্ধতা চরম রেগে বলেই ফেলেছিলো

” আপনার বউ হবে একটা দজ্জাল মহিলা,আপনার শাশুড়ি হবে কূটনি বুড়ি , আর আপনার বউ আপনার বাইক কেন আপনার দিকেও ঘুরে তাকাবেনা , আর তার থেকে মস্ত বড়ো নাগিন হবে আপনার মেয়ে ৷”
কাজের মাঝেও হঠাৎ কথাটা মনে পড়ে যাওয়াই স্পর্শ হেসে ফেলল ফিক করে, ল্যাপটপ টা বন্ধ করে মুখ চেপে হাসছে ৷ মাঝে মাঝে ওর খুব জানতে ইচ্ছা করে মেয়েটা এত অবুঝ কেন ? 18+ বয়সী একটা মেয়ের ম্যাচুরিটির এতো অভাব ৷ মাঝে মাঝে নিজেকে খুব লাকি ও ফিল হয় মুগ্ধতার মতো কাউকে ওর জীবনে পাওয়ার জন্য , আর যাই হোক লাইফে এন্টারটেইনমেন্ট আছে মুগ্ধতার জন্য, কখনো রোমান্টিক, কখনো থ্রিলার আবার কখনো আ্যডভেঞ্চারাস ?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুগ্ধতা একটা কাশ্মীরি গ্রিন apple খেতে খেতে বিছানার ওপর আয়েশ করে পা তুলে বলল
” ফুপা তুমি অনেক বড়ো একটা ভুল করে ফেলেছো ৷”
স্পর্শর বাবা মিযান আহমেদ অবাক হয়ে তনিমা আহমেদের দিকে তাকালেন, উনি আবার কি ভুল করে ফেলেছেন?
উনি একটু ঘাবড়ে বললেন
” কি ভুল করেছি মুগ্ধ মামনি ৷”
মুগ্ধতার মুখ ভর্তি আপেল, কথা বলতে গেলে মুখের আপেল শেষ করে তারপর মুগ্ধতাকে কথা বলতে হবে তাই মুগ্ধতা ওর গোলগাল মুখটা নাড়তে নাড়তে বলল

” তুমি তোমার এই বিরাট বাসায় আমার জন্য আলাদ রুম বানাওনি কেন বলোতো ? তোমাদের তো মেয়ে নেই, আমি তো তোমাদের মেয়ের মতো তাই আমার জন্য কি একটা রুম বানানো উচিত ছিল নই কি ?”
মুগ্ধতার এমন কথা শুনে ওনারা দুই জনেই বোকা বনে গেল ৷
তনিমা বলে উঠলেন
” তোর জন্য আলাদা রুম বানানোর কি আছে মা, স্পর্শর রুমটা যে তোর নিজেরই রুম ৷”
“??৷ “(মুগ্ধতা)
তনিমা বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন স্পর্শ দরজার সাথে হেলান দিয়ে অত্যন্ত শান্ত ভঙ্গিমায় দাড়িয়ে আছে ৷
মুগ্ধতা এখনো স্পর্শকে দেখেনি, উনি স্পর্শ কে দেখে আর কিছু বললেন না ৷
মুগ্ধতা বলতে শুরু করলো

” হাহ! তোমরা ভাবলেও কি করে আমি ওই পিংকিশ বেয়াদপ বান্দরটার সাথে একই রুমে থাকবো নেভার, হয় তোমরা আমার জন্য একটা রুম আলাদা ভাবে বানাবে নয়তো আমি এই বাসায়ই থাকবো না আর, আর তোমরা বলো কিনা আমি ওনার রুমে থাকবো? ৷”
মুগ্ধতার কথা শেষ হতেই স্পর্শ বলল
” আম্মু তোমাদের এই পিংকি পিংকি নাগিনকে বলো জলদি আমার রুমে চলে আসতে, আমি ঘুমাবো, আই এম টায়ার্ড এনাফ, সো আই নিড সাম রেস্ট ৷ পাঁচ মিনিটের মধ্যে যেন রুমে ওনার দেখা পাই , এন্ড আই মিন ইট ৷”
কথাটা বলে স্পর্শ চলে যেতে নিলেই মুগ্ধতা চেঁচিয়ে বলল

” এই তুই কাকে বললি তোর রুমে যাওয়ার কথা, আমি কোনদিন তোর রুমে যাবো না ,আমি আমার ফুপি মার সাথে ঘুমাবো ৷আমার টুইটুই ফুপি ? ৷”
কথাটা বলে তনিমা আহমেদকে জড়িয়ে ধরলেন ৷
তনিমা আহমেদ মিযান আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলেন
” আমি স্পর্শর এই ব্যাপারটাতে ঠিক মত দিতে পারলাম না ৷ মানে দুজনের বিয়ের আগে এক রুমে থাকা ব্যাপকরটা কেমন না ৷”
মুগ্ধতা কথাটা শুনেই ওনার গালদুটো টেনে দিয়ে বললেন
” পুরো টুইটুই মার্কা কলিজা ফুপা ৷ লাভ ইউ এত্তগুলো ৷”

মুগ্ধতার কথা শেষ হতে না হতেই স্পর্শ বলে উঠলো ” আম্মু তোমার কলিজা মার্কা মেয়েটাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলো , আই এম গেটিং লেট ৷ আমি ঘুমাবো আর তাছাড়া তোমার এই মেয়ে ততদিন এই বাসায় থাকবে যতদিন না তার এই ঘাড়তেড়ামো স্বভাবটা দূর হয় ৷ তাই এইসব সুখ-দুঃখের কথা অনেক করতে পারবে,ইটস অলরেডি 11.45 pm ৷”
স্পর্শর কথা শুনে মুগ্ধতা ওনাকে জড়িয়ে ধরে বললেন “ফুপি আমি যাব না , আমি গেলে উনি আমাকে পানিশমেন্ট দিবে আমি সিওর , তুমি ওনাকে চেনো না উনি কত বড় বেয়াদব ৷ আমাকে আজকে চড় অবধি মেরেছে? ৷”
মুগ্ধতার এমন কান্ড কারখানা দেখে মিজান আহমেদ বললেন

“তুমি মুগ্ধ কে নিয়ে স্পর্শর কাছে যাও গিয়ে স্পর্শকে বোঝাও ৷”
উনার কথা শুনে তনিমা মুগ্ধতাকে নিয়ে স্পর্শর রুমের দিকে গেল ,যদিও মুগ্ধতা যেতে চাইনি ওকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে গেছে তনিমা আহমেদ ৷
স্পর্শের রুমে ঢুকলেন তনিমা মুগ্ধতাকে নিয়ে ৷ উনি দেখলেন স্পর্শ একটা বই হাতে নিয়ে কিছু খুঁটিয়ে পড়ছে, স্পর্শকে ডেকে বললেন

“দেখ বাবা বিয়ের আগে দুটো অবিবাহিত ছেলে মেয়ে কোন সম্পর্ক ছাড়া একই রুমে থাকা ব্যাপারটা খুবই দৃষ্টিকটু তাই , আমি বলছি শোন মুগ্ধ না হয় আমাদের সাথেই থাকুক যতদিন এই বাসায় আছে, তোদের বিয়ে হলে না হয় ! ”
“তার জন্য নাকি আলাদা ঘরের দরকার , আজ থেকে এই ঘরটা তার, আর এই নিয়ে যেন দ্বিতীয়বার কোন কথা না হয় ৷ আর আম্মু সমাজ কী ভাবল না ভাবল তাতে আমার কোন যায় আসে না, দু’দিন পরও যে আমার হবে সে আজও আমার তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই তাই আমি এটা নিয়ে খুব বেশি ভাবছি না আর ভাবিও না কখনো ৷ আপাতত তার ঘাড়ত্য|ড়ামি বন্ধ করা দরকার ৷ আর ও আমার মুগ্ধ এটাই ওর পরিচয় ৷ স্পর্শের মুগ্ধতা ৷”
মুগ্ধতা রেগেমেগে চলে যেতে নিলেই স্পর্শ বলল

“এক পা ও যদি রুমের বাইরে রেখেছো তবে মেরে একুরিয়ামের মধ্যে পুরে রাখবো সোপিস হিসাবে ৷ আর আম্মু তুমি যাও ৷ঘুমিয়ে পড়ো,পাগলের জন্য নিজেদের ঘুম নষ্ট করা বৃথা ৷”
উনার আর কি সাধ্য স্পর্শর ওপর কথা বলার ৷ স্পর্শের জেদের কাছে সব হার মানে ৷ উনি চলে যেতেই স্পর্শ দরজা বন্ধ করে দিয়ে মুগ্ধতাকে বলল
“এসি কতোতে রাখবো ,আজকে ওয়েদার ঠান্ডা ?”
মুগ্ধতা স্পর্শর কথার কোন জবাব না দিয়ে হঠাৎ কিছু একটা ভেবে বলল
” আচ্ছা আপনি এক্ষুনি না বললেন এই রুমটা আমার, তাহলে আমার রুমে আপনি কেন ??”
স্পর্শ হাতের বইটা রেখে এসির রিমোটটা হাতে নিয়ে বলল
” আমি কিন্তু একবারও এটা বলিনি যে রুমটা সম্পূর্ণ তোমার , রুমটা যেমন তোমার তেমনি আমারও তাই আজাইরা এসব কথা না বলে শুয়ে পড়ো ৷”
মুগ্ধতা রেগে বলল

” আমি ঘুমাবো না ! কি করবেন !”
স্পর্শ মুগ্ধতার দিকে ঝুঁকে গিয়ে বলল
” একটা বন্ধ ঘরে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে একা একা থাকলে ছেলেটা মেয়েটার সাথে ঠিক কি কি করতে পারে সেটা নিয়ে কি তোমার কোন আইডিয়া আছে ?”
স্পর্শর কথা শুনে মুগ্ধতা খানিকটা ভয় পেয়ে গেল ,স্পর্শকে হাতে দিয়ে দূরে ঠেলে দিয়ে বলল
“নাহ ! আপনি এমন কিছু করবেন না, নাহলে কিন্তু আমি চেঁচাবো ৷ আপনাকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল আপনার স্বভাব-চরিত্র ভালো না ৷ আর আপনি আমার মত একটা নিষ্পাপ শিশুকে কি অত্যাচারটাই না করেন ৷ ”
মুগ্ধতা ওর স্বভাব-চরিত্র নিয়ে টানাটানি করলো যেই বিষয়টা স্পর্শর একদমভালো লাগলো না ৷ রাগ ও লাগছে এখন , রেগে গিয়ে বলল

“মুগ্ধ আমাকে আর রাগিওনা, ইউ নিড টু স্টপ, যাও ঘুমাও ৷”
কিন্তু মুগ্ধতা তো মুগ্ধতাই, ও থামছে না , এটা ওটা বলেই চলেছে ৷
স্পর্শ এবার মুগ্ধতার হাত ধরে ওর কাছে টেনে আনলো ৷ মুগ্ধতার গালটা চেপে ধরতেই মুগ্ধতার ঠোঁট দুটো একজায়গায় হয়ে গেল (?)
স্পর্শ আলতো করে ওর ঠোঁঠে ঠোঁট ছোয়াতেই মুগ্ধতার শরীর কেঁপে উঠলো, মুগ্ধতার শরীরের এই কম্পন স্পর্শ বেশ ভালোই অনুভব করতে পারছে ৷ মুগ্ধতা স্পর্শর গলায় খামচি দিয়ে ওর শার্ট চেপে ধরলো ৷
নিমেষেই স্পর্শ মুগ্ধতার কাছ থেকে সরে এলো, মুগ্ধতার মনে যেন গিটার বাজছে ৷
স্পর্শকে খুব অস্থির অস্থির লাগছে, হয়তো মুগ্ধতাকে যেভাবে ভালোবাসতে চেয়ছিলো সেভাবে পেরে উঠতে পারিনি, মনের মধ্যে একরাশ বিরক্তি ও কাজ করছে নিজের প্রতি, এই বিরক্তিভাবটা,না,কাটানো অবধি সস্তি মিলবে না, আর যার একমাত্র ওষুধ হলো ওর মুগ্ধ ৷

মুগ্ধতার ও অজানা এক অনুভূতি হচ্ছে, খানিকটা লজ্জাও পাচ্ছে , এভাবে স্পর্শ কখনো ওর কাছে আসেনি, না পেরে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো ৷
স্পর্শ একবার মুগ্ধতার দিকে তাকালো, মেয়েটা পাশ ফিরে শুয়ে আছে ৷ কেন স্পর্শর দিকে তাকিয়ে ঘুমাচ্ছে না ও ? ওর দিকে তাকিয়ে ঘুমালে মুগ্ধতার মুখটা দেখে কিছুটা হলেও তো একটু এই অস্থিরতা দূর হয় ৷ স্পর্শ এবার মুগ্ধতাকে এক ঝটকায় ওর পাশে ফিরিয়ে মুগ্ধতার ঠৌঁট জোড়া দখল করলো, অদ্ভুত একপ্রকার মাদকের মতো মুগ্ধতার এই ঠোঁটের ছোঁয়া, এই নেশার ঘোর কাটানো মুশকিল ৷ মুগ্ধতা প্রথমে অবাক হলে সময়টাকে উপভোগ করতে ব্যাস্ত ৷ মুগ্ধতা আবেগে স্পর্শর চুলগুলো মুঠ করে ধরলো, হঠাৎ স্পর্শ বুঝলো যে ও এতোটা কাছে না আসলেও পারতো, আবার মুগ্ধতার প্রতিও রাগ হচ্ছে ওর, মেয়েটাও যে কেন ওকে এতোটা কাছে টেনে নিচ্ছে ! স্পর্শ রাগটা কমাতে মুগ্ধতার নীচের ঠোঁটে জোরে একটা কামড় বসালো ৷ ব্যাথা অনুভব করতেই মুগ্ধতা স্পর্শকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো ৷

” আহহহ ! আপনি শুধু বেয়াদপ না লুচুও বটে, এভাবে কেউ কামড় দেই ৷ দেখবেন আপনার কপালে বউ জুটবে না ,জুটলেও আমার মতো এমন টূইটুই মার্কা হবে না জল্লাদ নাগিন হবে ৷ দেখে নেবেন ৷”
কথাটা বলে ব্ল্যাঙ্কেট টেনে ঘুমিয়ে পড়ল ৷
প্রায় 10 মিনিট ধরে স্পর্শর একপ্রকার দ্বিধাগ্রস্থ অনুভব হলো এটা ভেবে যে মুগ্ধতাকে কি ওর আম্মুর রূমে পাঠিয়ে দেবে নাকি এখানেই থাকবে আজকে রাতটা ৷ যা অনুভব করলো তাতে বুঝলো মেয়েটা ওর মারাত্মক এক আসক্তি , যা কাছে থাকলেই আসক্ত হতে মন চাইবে ৷ স্পর্শ ভাবলো মুগ্ধতাকে ওর আম্মুর রূমে পাঠাবে তাই পিছন ঘুরে দেখতেই দেখলো মুগ্ধতা ঘুমিয়ে পড়েছে ৷

হঠাৎ মনে পড়লো কালকে মুগ্ধতাকে নিয়ে একটু শপিং গেলে ভালো হতো, তেমন ড্রেস ওর নেই যে এখানে এক সপ্তাহ কাটাতে পারবে ৷ একদিন শখ,করে মুগ্ধতার জন্য কিনেছিলো কিন্তু কখনো ড্রেসটা দেইনি তাই ওর কাছে থেকে গিয়েছিলো ,আজকে সেটা কাজে দিয়েছে কিন্তু মুগ্ধতা ড্রেসটা পরে স্পর্শর বউকে নিয়ে মা মাসি এক করে ফেলেছে ৷
স্পর্শ ব্যালকনিতে গেল , একটা ফোন করলো ৷
“আসসালামু আলাইকুম sir, আমি আহানাফ স্পর্শ বলছিলাম চিনতে পারছেন?ঢাকা মেডিকেলেই পড়তাম ,2 বছর আগে পস আউট হয়েছি ৷”

“আচ্ছা স্যার কালকে কলেজে ছুটি নেই ! কালকে তো শুক্রবার, সরকারি ছুটি ৷”
” ওকে স্যার থ্যাঙ্ক ইউ sir, একচুয়ালি একজনের থেকে জানতে পারলাম যে কালকেও নাকি ক্লাস আছে ,শুনে অবাক হয়েছিলাম তাই ফোন করলাম ৷”
” sir আমার একজন পরিচিত ফারহাত খান মুগ্ধতা, সে আমার কাজিন , তার ক্লাসে পারফর্মেন্স কেমন ?”
“আই নো Sir she is talented and also genious কিন্তু ওর মাঝে এখনো ম্যাচুওরিটি জানিসটা আসেনি , আচ্ছা আই উইল টেক হার ক্লাস ৷ ওকে sir বাই ৷ আল্লাহ হাফেজ ৷”
ফোন কেটে মুগ্ধতার দিকে তাকাল স্পর্শ ৷ আকাশের কালো মেঘ সরে গিয়েছে , চাঁদের আলোটা ছড়িয়ে গিয়েছে চারিদিকে ৷ মুগ্ধতার মুখের উপরে চাঁদের আলো পড়ছে , অনেক মায়াবী লাগছে দেখতে ৷ মেয়েটা এতো অবুঝ কেন ! সহজ জিনিস গুলোকে কেন সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনা ?”

আসলে sir কে ফোন করার উদ্দেশ্য স্পর্শর কাছে বেশ স্পষ্ট ৷ বাইকে ওঠার আগে নীতু তাড়াহুড়োতে এই অযুহাত দেখিয়েছিলো যে কালকে নাকি ওদের ক্লাস আছে ৷ স্পর্শ অবাক হয়েছিলো কারন কালকে শুক্রবার, অর্থাৎ সরকারি ছুটি , ছুটির দিনের কীভাবে একটা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারে ভেবে অবাক হলো ৷ আসলে উত্তেজনার বসে নীতু যা ইচ্ছা তাই বলে ফেলেছে ৷

এই শহর আমার পর্ব ২

স্পর্শ গিয়ে মুগ্ধতার পাশে শুয়ে পড়লো ৷ মগ্ধতাকে নিজের দিকে ফেরাতেই মুগ্ধতার খোলা চুল গুলো মুখের ওপর পড়লো ৷ মেয়েটার মুখটা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না আর, স্পর্শ চুলগুলো সরিয়ে তাকিয়ে রইলো মুগ্ধতার দিকে, ঠোঁটটা ফুলে গিয়ে লাল টকটকে বর্ন ধারন করেছে ৷স্পর্শ আলতো করে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে স্পর্শ করলো ৷ ওর নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে হবে,না পারলেও চেষ্টা করতে হবে ৷
কারন এই রগের বশেই আজ ও ওর মুগ্ধর গায়ে হাত তুলেছে ৷ এটাই কি ওর সবচেয়ে নেগটিভ পয়েন্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় ?

মাঝরাতে স্পর্শর ঘুম ভেঙে গেলে ওর কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে, এটা ওর ব্যাড হ্যাবিট জেনেও ভালো লাগে ৷ কফি খেলে চোখে আর ঘুম ধরে না ৷
স্পর্শ কফি খাচ্ছে আর বাইরের দিকে তাকাচ্ছে ৷ কত গাড়ি যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে,মাঝরাতেও এ শহর থেমে নেই, প্রতে্্যকটা মানুষই বলতে চাই #এই_শহর_আমার ৷
এ শহর মাঝরাতে কোন প্রেমিক-প্রেমিকার হলে দোষ কি ? কথাটা ভেবে স্পর্শ মুগ্ধতার দিকে তাকালো ৷ আজকে মুগ্ধতার সেই চিরকাঙ্খিত ইচ্ছাটা পূরন করবে স্পর্শ ৷ দুজন মিলে আজ এই ঢাকা শহরের বৃষ্টিভেজা পথজুড়ে ঘুরবে আর হাতে হাত রেখে বলবে #এ_শহর_আমার? ৷

এই শহর আমার পর্ব ৪