এই শহর আমার পর্ব ২ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

এই শহর আমার পর্ব ২
Suraiya Aayat

স্পর্শ আর এক মিনিট ও অপেক্ষা করলো না, যদি একটুর জন্য সবটা শেষ হয়ে যাই তাহলে স্পর্শ তা কখনোই মেনে নিতে পারবে না , ও নিজের ও যে কি অবস্থা করবে তা হয়তো ও নিজেও জানে না ৷ স্পর্শ সিঁড়ি দিয়ে উঠছে আর বাইরে প্রবল মেঘের গর্জন শুনতে পাচ্ছে ৷ ও বাসা থেকে বার হবার সময় আকাশ পরিষ্কার ই ছিলো , তারপর হঠাৎ রাস্তায় নীতু আর মধুর সাথে দেখা হলো ৷

স্পর্শ বেশ গতি নিয়েই যাচ্ছিল তখন হঠাৎই পিছন থেকে কেউ স্পর্শর নাম ধরে ডেকেছে , তা শুনে স্পর্শ থেমে গেল ৷ পিছনে তাকাতেই দেখল নীতু আর মধু ৷ নীতুকে দেখে স্পর্শর কপাল চাপড়ানোর মতো অবস্থা , ভাবতে লাগলো যে কি জন্য ও থামতে গেল , এখন এই মেয়ের জন্য ওর মুগ্ধতার কাছে যেতে গিয়ে আরো বেশ কিছুখন সময় লাগবে ৷
স্পর্শ নরম গলায় বলল

” কিছু বলবে ?”
নীতু তাড়াতাড়ি মধুর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে স্পর্শর কাছে গিয়ে বলল
” ভাইয়া আমরা একটু সমস্যায় পড়েছি , তাই আপনাকে হঠাৎ রাস্তার মাঝে দেখলাম , আর আপনাকে যেহেতু আমি মানে আমরা চিনি, আপনি পরিচিত একজন তাই ভাবলাম আপনার কাছেই সাহা্য্য চাই ৷ ”
স্পর্শ বুঝতে পারলো এই মেয়ে এখন ঠিক উদ্ভট কিছু দাবী করবে ৷ তবুও বাধ্য হয়ে বলল
” কি সাহায্য লাগবে বলো ?”
নীতু উত্তেজিত হয়ে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আসলে ভাইয়া আপনি তো দেখছেন ই যে আকাশে কি পরিমান মেঘ করেছে তাই এখন রিকশা করে বাসায় যেতে গেলে যদি মাঝপথে ভিজে যাই তাহলে তো একটা বাজে ব্যাপার হবে, জ্বর কাশি ও হয়ে যেতে পারে, আর আমার আবার জ্বর হলে পরের দিন বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারিনা , তাছাড়া কালকে কলেজে ল্যাব টেস্ট ও আছে , তাই এবসেন্ট হতে চাইছি না ৷ ভাবছিলাম কিছুটা হেটে কোন কার বা সিএনজি পেয়ে যাবো কিন্তু কিছুই তো পেলাম না ৷ তাই আর কি ,তুমি যদি ,সরি আপনি যদি এখন আমাদেরকে একটু বাসায় ড্রপ করে দিতেন তাহলে ভালোই হতো আর কি ৷ যদি আপনার কোন সমস্যা না থাকে আরকি, আর আপনিও তো মনে হয় ওই পথেই যাচ্ছেন তাই বললাম আরকি ৷”
মধু শুধু অবাক হচ্ছে, কিভাবে অণ্রগল মিথ্যা বলে চলেছে ৷ এমনটা ওরা ভাবেইনি ৷ মধুর বি এফ ওদের বাসায় দিতে আসবে এমনটাই কথা হয়েছিলো ওদের কিন্তু এই মেয়ে যে স্পর্শ কে পটানোর জন্য ক্রমাগত মিথ্যা বলে চলেছে ৷
মধু একবার নীতুর দিকে তাকিয়ে চোখের ঈশারা করে বলল যে

” কোন দরকার নেই, ওরা স্পর্শর সাথে যাবে না ৷”
কিন্তু কে শোনে কার কথা, নীতু মধুর কথা শুনলে তো !
স্পর্শর উত্তরের আর অপেক্ষা না করে নীতু বাইকে উঠে পড়লো, মধুকেও ইশার করছে, মধু তো উঠতে নারাজ , ও বি এফ ওর বাসা থেকে এতটা আসছে শুধু ওদের ড্রপ করতে, এসে যদি শোনে যে চলে গেছে তাহলে কুরুক্ষেত্র বানাবে ৷
নীতু বাইকে উঠে স্পর্শকে কিন্তু কিন্তু করে বলল.” ভাইয়া কাধে হাত রাখতে পারি ? না মানে রাস্তায় ঝাকুনি হলে যদি পড়ে যাই তাই আরকি ৷”
স্পর্শ একটু ভারী গলায় বলল
“হমম ৷”
মধুও আমতা আমতা করতে করতে উঠলো ৷

স্পর্শ মনে মনে চরম বিরক্ত হচ্ছে, একেই অনেক লেট তার ওপর সারাদিন হসপিটাল, হসপিটাল থেকে মুগ্ধতাকে সময় দেওয়া, ওকে বাসায় ড্রপ করে দেওয়া, বাসার লোকের জন্য খানিকটা সময় বার করা, নিজের জন্য একটু সময় বার করা , এগুলো করতে করতে ও হাপিয়ে যাই তবুও মুগ্ধতার কারনে কখনো বিরক্তি প্রকাশ করেনি ও , যতই হোক মুগ্ধপরীটা যে ওর নিজেরই ৷
স্পর্শ বেশ জোরেই বাইক চালাচ্ছে , ঠিক যতোটা সময় লাগে তার থেকে সময় বার করার চেষ্টা করছে ৷
মুগ্ধতার বাসা বনানী 11 নং রোডে ,কিন্তু নীতুর বাসা ঠিক কোথাই স্পর্শ জানে না, কোনকিছু না বলেই মেয়েটা হুঠ করে বাইকে উঠে গেল ৷

মুগ্ধতার বাসার কাছাকাছি পৌছে গেছে প্রায়, কিন্তু নীতু কোথায় নামবে কিছুই বলছেনা দেখে স্পর্শ বলল
” তোমরা কোথায় নামবে ?”
” বনানী ডিওএইচএস এ ৷”
স্পর্শ মুগ্ধতার বাসা ক্রস করে যেতে হয় নীতুর বাসায় ৷ মেয়েটা একটা উটকো ঝামেলায় জড়ালো ৷
স্পর্শ মুগ্ধতার বাসার সামনে বেশ জোরেই বাইক চালালো ৷
মীরপুর টু বনানীর রাস্তা স্পর্শর মগজে যেন ভেসে বেড়ায় , রোজ একই রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে সবটা চেনা হয়ে উঠেছে ৷ রোজ ঢাকা হসপিটাল থেকে মুগতার মেডিকেল কলেজ (পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার) থেকে মুগ্ধতাকে পিক করে মুগ্ধতাকে বনানী দিয়ে এসে নিজেকে আবার মীরপুরের বাসায় যেতে হয় ৷ সরাদিনে অনেক খাটনি হয়ে যাই, কিন্তু যেদিন ও মুগ্ধকে পেয়ে যাবে সেদিন থেকে এসব কষ্ট আর অনুভব হবে না ৷

” অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ! কি বলে যে ধন্যবাদ দেব আপনাকে ৷”
স্পর্শ মিথ্যা একটা হাসি ফোটালো ৷ নীতুর দিকে একপলক তাকিয়ে মধুর দিকে তাকালো , মধুর চোখমুখ শুকনো লাগছে ৷তা দেখে স্পর্শ বলল
” আর ইউ ওকে ?”
স্পর্শ কে থামিয়ে দিয়ে নীতু বলল
” হমম, ও ওকে, আর ও মধু আর আমি নীতু ৷”
” ওহহ ৷”
” বা ইদা ওয়ে ভাইয়া আপনাকে দেখে সিনিয়র মনে হয় ৷”
” হমম, আমি ঢাকা হসপিটালের একজন সার্জন ৷”
নীতু আর মধু দুজনেই অবাক ৷
” ?৷”

নীতু কৌতুহল দেখিয়ে বলল
” ভাইয়া বাসার ভিতরে এসে কথা বলা যাই তো !”
” নাহ অন্য কোনদিন , আজে তাড়া আছে ৷”
” একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো ?
কথাটা শুনতে না শুনতেই স্পর্শ বাইক স্টার্ট দিলো, এই মেয়ের আজাইরা প্যাচাল শোনার মতো সময় ওর হাতে নেই ৷
” আচ্ছা আজ আসি !”
বলে স্পর্শ চলে গেল ৷
স্পর্শ চলে যেতেই মধু বলল

” তুই কিন্তু যা করলি ঠিক করলি না,ওনার সাথে আসলি কেন তুই , বারন করলাম তো আমি ৷”
নীতু দেখল মধু অনেক রেগে আছে তাই ওর কথা কাটানোর জন্য বলল
” দেখেছিস স্পর্শ ভাইয়া কীভাবে কথাটা এড়িয়ে গেল, উনি ঠিক জানতেন যে আমি ওই মুগ্ধতা না কি ওর কথা জিজ্ঞাসা করবো ৷ আর উনিও আমাকে মে বি পছন্দ করেন তাই বললো না কিছু ৷”
মধুর এমনিতেই রাগ হচ্ছে তার ওপর নীতুর আজগুবি আজাইরা কথা ওর আর সহ্য হচ্ছে না ,ও রেগে গিয়ে বলল
“স্পর্শ না স্পর্শ ভাইয়া বল ৷”

কথাটা বলে মধু হনহনিয়ে চলে গেল ৷ নুতুর আর কি সে তো আনন্দে সপ্তম আসমানে ভাসছে ৷
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে স্পর্শ সিড়ি বেয়ে উঠছে জানি কখন কি অঘটন ঘটিয়ে বসে মেয়েটা ৷ যতোই ছাদের দিকে এগোচ্ছে ততই হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে স্পর্শর ৷ এমন ভয় ওর আগে কখনো হয়নি মুগ্ধতাকে নিয়ে,মুগ্ধতা যদি ওর যাওয়ার আগেই ছাদ থেকে ঝাঁপ দেই তাহলে ! না না ওর আর কিছু ভাবতে পারছে না ৷

দৌড়ে ছাদে গিয়ে মুগ্ধতাকে কোথাও পেল না, এদিক ওদিক খুজছে, মুগ্ধতাকে কোথাও দেখছে না স্পর্শ ,হয়তো ওর চোখ দুটো বড্ড বেশিই চঞ্চল দৃষ্টি নিয়ে দেখছে তাই ৷ তাহলে কি মূগ্ধতা এতখনে ছাদ থেকে ঝাপ দিয়েছে?আর যাই হোক এই তিন তলার ছাদ থেকে কেউ ঝাপ দিলে তার যে আর বাঁচার সম্ভবনা নেই তা স্পর্শ জানে ৷
হঠাৎ কানে ট্যাপকলের জলের চুইচুই আওয়াজ কানে আসতেই স্পর্শ ঘাড় ঘুরিয়ে বামদিকে তাকিয়ে দেখল
মুগ্ধতা ওর আ্যকোরিয়ামের মরা মাছগুলোকে জলে চোবাচ্ছে,আর বিড়বিড় করে কিসব বলছে , হয়তো ওদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে ৷

স্পর্শর মাথায় যেন আগুন চড়ে গেল ওকে এভাবে দেখে, মূগ্ধতার কাছে গিয়ে ওকে আচমকাই হাত ধরে টেনে মুগ্ধতার গালে একটা চড় বসিয়ে দিল,এই প্রথম ও মুগ্ধতার গায়ে হাত তুলেছে ,এর আগে কেউ মুগ্ধতাকে মারার সাহস দেখাইনি, কিন্তু আজ স্পর্শ মারলো ৷
মুগ্ধতা গালে হাত দিয়ে স্পর্শর দিকে তাকিয়ে আছে,চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে, আর এদিকে স্পর্শ ক্রমাগত ওকে বকেই চলেছে ৷ একটা সময় মুগ্ধতা ফুপিয়ে কেঁদে দিতেই স্পর্শর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, মুগ্ধতা এত সহজে কখনো কাদে না খুব কষ্ট না পেলে ৷
স্পর্শ মগ্ধতার প্রতি দূর্বল হচ্ছে, কিন্তু মুগ্ধতাকে বোঝানো দরকার যে বারবার এই পাগলামো গুলো করার মানেই হয়না তাও এত ছোট ছোট কারনে ৷

মুগ্ধতা গালে হাত দিয়ে কাঁদছে, স্পর্শ ওকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে গেল, নীচে গিয়ে জোর গলায় চেঁচিয়ে বলল
” মামী, আমি মুগ্ধকে নিয়ে যচ্ছি ৷”
শিফা খান হাত মুছতে মুছতে দৌড়ে এসে বললেন
” কি হয়েছে বাবা ! আর মুগ্ধ কাঁদছে কেন?”
” আমি ওকে আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি ৷”
” কিন্তু তুমি না বলেছিলে যতদিন তোমাদের বিয়ে হচ্ছে ততদনি ও ওই বাসায় যাবে না ৷”
” হমমম বলেছিলাম, কিন্তু এখন দেখছি পাগলের পাগলামি বন্ধ করার দরকার আছে ৷”
বলে মুগ্ধতার দিকে রাগী চোখে তাকালো ৷ পাগল কথা শুনে মুগ্ধতার ও রাগ উঠে গেল
ওর মা কিছু বলতে যাবে তার আগে স্পর্শ হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল ৷
স্পর্শ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
” ওঠো ৷”
মুগ্ধতা উঠছে না

” ওঠো বলছি ৷”( তীব্র গর্জন করে )
মুগ্ধতা ভয়ে বাইকে উঠলো ৷ বাইকের পিছনের অংশ ধরে আছে কিন্তু স্পর্শকে ধরছে না, স্পর্শ বেশ জোরেই গাড়ি চালাচ্ছে ৷
হঠাৎ স্পর্শ বলল
” আমাকে ধরো ৷”
মুগ্ধতা ধরলো না ৷ স্পর্শ এবার ইচ্ছা করে ভাঙা রাস্তার মাঝে গাড়ি নিয়ে গেল, আর সেই ধাক্কায় মুগ্ধতার উল্টে পড়ে যাওয়ার উপক্রম ৷
তাড়াতাড়ি করে মুগ্ধতা স্পর্শকে ধরে নিলো ৷রেগে গিয়ে বলল
” ঠিক ভাবে চালাতে পারেন না, এক্ষুনি আমি যদি পড়ে যেতাম কি হতো ! আর আমাকে ড্রেস এ যে কাদা লেগে গেল তার বেলাই ৷”
স্পর্শ রাগী গলায় বলল
” ভালোই হতো, তোমার মরার শখটা মিটতো ৷”
কথাটা বলে গাড়ি চালানোই মনোযোগ দিলো ৷

মুগ্ধতা রাগী মুখ করে বাইরের দিকে তাকাচ্ছে, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে ,চুলগুলো বাতাসে উড়ছে, অনুভুতিটা দারুন ৷
স্পর্শ লুকিং গ্লাসটা ঠিক করে মুগ্ধতার মুখ বরাবর রাখলো, মুগ্ধতাকে দেখা যাচ্ছে , আর বাতাসে উড়ছে ওর খোলা চুল, নিশ্পাপ আর প্রানবন্ত লাগছে, কে দেখে বলবে যে এই মেয়েটা স্পর্শকে নিয়ে এতো পোসেসিভ ,এমন বচ্চামো স্বভাবের ‌৷
স্পর্শ মুচকি হেসে ড্রাইভ করায় মন দিলো ৷
স্পর্শর বাসার সামনে এসে বাইক থামাছেই মুগ্ধতা বীক থেকে একপ্রকার লাফ দিয়ে নেমে পড়লো ৷ ছিটেছিটে বৃষ্টিতে ও ভিজে গেছে পুরো, পোশাকটাও চেঞ্জ করতে হবে ৷তাড়াতাড়ি নেমে দৌড় দিল বাসার ভিতরে,দৌড়াতে দৌড়াতে একজায়গায় স্লিপ কেটে ধাম করে পড়েও গেল ৷
আহহ করে শব্দ করে উঠলো, সাথে সাথে মুখ চূপে ধরলো, স্পর্শ দেখলে ওর খবর খারাপ করে দেবে ৷ তাড়াতাড়ি উঠে বাসার ভিতরে ছুটলো ৷

” ফুপি, ও ফুপি, কই তুমি , ফুপি মা , কই ? দেখো তোমার বেয়াদপ ছেলের জন্য আমার কি অবস্থা ৷ ফুপি কই তুমি !”
মুগ্ধতার গলার আওয়াজ শুনে স্পর্শর মা তনিমা আহমেদ কিচেন থেকে বেরিয়ে এলেন ৷
মুগ্ধতাকে দেখে একপ্রকার অবাক হলেন , কারন প্রায় পাঁচ বছর হলো মুগ্ধতাকে স্পর্শ এ বাসায় আসার অনুমতি দেইনি তাই কারোর সাধ্যে কুলাই না মুগ্ধতাকে এক বাসায় একদিনের জন্য হলেও নিয়ে আসার ৷
উনি মুগ্ধতার অবস্থা দেখলেন, চুলগুলো ভেজা, প্লাজোটাও ভিজে গেছে, আর কাঁদা লেগে গেছে, আর পোশাকও ও ভিজে গেছে ৷
উনি অবাক হয়ে বললেন
” মুগ্ধ তুই এ বাসায় ? !”

মুগ্ধতা গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরে বলল
” ফুপি তোমার ছেলে জোর করে এনেছে, তুমি আমাকে বাঁচাও ৷”( ওনার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে)
উনিও মুগ্ধকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন
” তা তুই আবার নতুন করে কি করেছিস শুনি ?”
মুগ্ধতা এবার ওনাকে ছেড়ে চেঁচিয়ে বলল
” কিছুই করিনি, আমার আ্যকোরিয়ামের প্রিয় মাছ গুলো মরে যাচ্ছিল তাই ছাদে উঠে ওদেরকে জল দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম, ওরা বেঁচে ছিলোনা যদিও তাও ওরা আমার অনেক প্রিয় , ওরা মরে গেছে মানতে পারছিলাম না ৷ আর তাই জন্য তোমার বেয়াদপ ছেলে আমাকে কিনা চড় মেরেছে, আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ মারার সাহস পাইনি আর উনি এভাবে মারবে আমাকে !”

কথাটা বলে মুগ্ধতা ওর ফুপি তনিমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো ৷
তখনই স্পর্শ বাসায় ঢুকলো, মাথার ভিজে চুলগুলো আলতো করে হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে রুমে ঢুকে গেল ৷ রুমে ঢুকে বলল
” আম্মু খিদে পেয়েছে ৷”
?
” কি পরেছ এটা তুমি ? শাড়ি পরতে কে বলেছে?”
হালকা নরম গলায় মুগ্ধতাকে জিঞ্জসা করলো স্পর্শ ৷ মুগ্ধতা না ওর কথার কোন উত্তর দিচ্ছে , না স্পর্শ র দিকে তাকাচ্ছে ৷
মুগ্ধতার ভাবগতিক দেখে স্পর্শ মুগ্ধতার কাছে গিয়ে ওর গাল চেপে ধরে বলল শুনতে পাচ্ছ না কি বলছি !
মুগ্ধতা রেগে গিয়ে স্পর্শর হাতে একা ঝাড়া বাড়ি মেরে উঠতে গেলেই স্পর্শ বিছানার সাথে মুগ্ধতাকে চেপে ধরে বলল
” কোথায় যাচ্ছ তুমি , আমি কি পারমিশন দিয়েছি ?”
” ? ৷”(মুগ্ধতা )

স্পর্শ ওকে ওখানে বসিয়ে ওর ওয়াড্রব থেকে একটা জিন্স আর একটা টপ বার করে মুগ্ধতাকে বলল
” নাও চেন্জ ইট ৷”
মুগ্ধতা দেখে অবাক হয়ে বলল
” উঈইইমা, আপনার ঘরে মেয়েদের ড্রেস, মাঝেমাঝে ট্রায়াল দেন নাকি ???”
স্পর্শ রেগে বলল
“একটা থাপ্পড় দিবো, ফাস্ট চেন্জ করো, আর তখন যে ধপাস করে ওখানে পড়লে ব্যাথা পাওনি ? পা কাটেনি ? খোঁড়া হয়ে যাওনি ?”
“? ৷”
” এভাবে তাকাচ্ছ কেন? আর ছাদে কি করতে গিয়েছিলে ? ”
” আপনি দেখতে পাননি আমি কি জন্য গিয়েছিলাম?”
” ফাজলামি করো আমার সাথে ৷”
মুগ্ধতা রেগে গিয়ে মুখ ফসকে বলল
” আরে ভী মরতেই তো গিয়েছিলাম কিন্তু যাওয়ার আগে দেখলাম আমার প্রিয় মাছ গুলো মরে যাচ্ছে, ওদের ফেরে আমি কি করে যাই ! তাই নিজের সুইসাইড ক্যান্সেল করে ওদের বাঁচাচ্ছিলাম ৷ আর আপনি আমাকে এভাবে বকছেন !? ”

এই শহর আমার পর্ব ১

স্পর্শর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে, মুখে রাগের আভা, মুগতা স্পর্শর দিকে তাকিয়ে দেখলো স্পর্শ রগী চোখে তাকিয়ে আছে ভাব ভালো না, তাই পালানোই ভালো, তাই মুগ্ধতা তাড়াতাড়ি করে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল ৷
মুগ্ধতা ওয়াশরুমে ঢুকতেই মুগ্ধ বলল
” ড্রেস গুলো আমার বউ এর জন্য কিনেছিলাম কিন্তু একটা পিংকি পিংকি নাগিন আমার বাসায় ঢুকে পড়েছে তাই বাধ্য হয়ে দিলাম, নাথিং এল্স ,নাহলে তোমার মতো একটা নাগিনকে তো কখনোই দিতাম না হাহ ৷ ”
ভিতর থেকে মুগ্ধতকর বিড়বিড় করে আওয়াজ আসছে

” হাহ ! আজ আমার এই দূরদশা না হলে পিংকি পিংকি বান্দর তোর বউয়ের এই ড্রেস আমি নিতাম না, এই ড্রেস মুগ্ধতা রোজ কেনে আর বেচে, আমাকে শোনাচ্ছে হাহ !?”
রুমের ভিতর থেকে স্পর্শ সব শুনছে আর পেটফাটা হাসি বার হচ্ছে ৷ মানুষ কতোটা অবুঝ হলে এসব বলে,? ৷
স্পর্শ ওর ল্যাপটপ নিয়ে ওর রুমের বারান্দায় গেল, আর যাই হোক রুমে বসে শান্তিতে কাজ করতে পারবে না, মুগ্ধতা করতে দেবে না ৷”

এই শহর আমার পর্ব ৩