একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৫

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৫
সাদিয়া জাহান উম্মি

‘ কি করেছো আজ সারাদিন?হ্যা?ভার্সিটিতে গিয়েও তোমায় পায়নি।এইভাবে আমাকে ইগনোর করার মানে কি প্রাহি?’
অর্থ’র রাগি কন্ঠের প্রশ্ন শুনেও কোন ভ্রু-ক্ষেপ করলো না প্রাহি।নির্বিকার ভঙ্গিতে ও কাঁথা মুরি দিয়ে সুয়ে আছে।অর্থ’র রাগ যেন এইবার আকাশ ছুলো।এই মেয়েটার টেন্সনে ও সারাদিন অস্থির হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছে।কোথায় কোথায় খুজে নি ওকে? বাসায় এসে জানতে পারে প্রাহি নাকি অনেক্ষন আগেই এসেছে বাড়িতে এসেই রুমে গিয়ে ডুকেছে আর নিচে আসেনি।খাবারের জন্যে ডাকলেও খেতে আসেনি।অর্থ সব শুনে দেখে এই মেয়ে ভর সন্ধ্যেবেলা কাথা মুরি দিয়ে সুয়ে আছে।কিছু জিজ্ঞেস করলেও জবাব দিচ্ছে না।অর্থ প্রাহির এমন মৌনতা সহ্য করতে পারলো না।প্রাহির কাথা সরিয়ে এক ঝটকায় প্রাহিকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো।তারপর দাঁতেদাত চিপে বলে,

‘ সারাদিন আমাকে পাগল বানিয়ে এখন অভিনয় করা হচ্ছে।সারাদিনে কতোবার ফোন দিয়েছি আমি হ্যা?একটা কল তো রিসিভ করবে?না তা করোনি।কি সমস্যা হ্যা তোমার?’
প্রাহি তাকালো না পর্যন্ত অর্থ’র দিকে।মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে।অর্থ এইবার রাগ সামলাতে না পেরে প্রাহির মুখ চেপে ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরালো। দাঁত খিচিয়ে বলে,
‘ প্রাহি ভালো হবে না কিন্তু এরকম করলে।কথার জবাব দেও।’
প্রাহি ব্যাথা পাচ্ছিলো গালে।তাই ও রেগে গিয়ে অর্থ’র হাত একঝটাকায় সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে,
‘ কেন জবাব দিবো আপনার কথার?কিসের কৈফিয়ত দিবো? হ্যা?’
অর্থ’র রাগি কন্ঠে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আমি তোমার হাজবেন্ড প্রাহি।’
প্রাহিও সমানতালে জেদ নিয়ে বলে,
‘ ওহ হ্যা! এখন তো আপনি আমার হাজবেন্ড।আর সকালবেলা কি অন্যকারো হাজবেন্ড ছিলেন?হ্যা?আপনি আমার হাজবেন্ড হলে আপনাকে অন্য মেয়ে কেন জড়িয়ে ধরবে হ্যা?কেন জড়িয়ে ধরবে?খুব ভালো লাগছিলো বুঝি ওই মেয়ের জড়িয়ে ধরা?’

অর্থ প্রাহির এইসব কথায় ভয়ংকর পরিমানে রেগে গেলো।ধাক্কা দিয়ে প্রাহিকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে নিজেও ঝুকে গিয়ে প্রাহির অধরে অধর মিলিয়ে দিলো।আকস্মিক এমন করায় প্রাহি কি রিয়েকশন দিবে ভুলে গেছে।মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।শরীর কাঁপছে ভীষনভাবে।হৃদস্পন্দন থেমে গিয়েছে।মনে হচ্ছে এখনি ও মারা যাবে।এটা কি করলো অর্থ?এইদিকে প্রথমে রাগের মাথায় চুমু খেলেও এখন সেটা ভালোবাসাময় স্পর্শ রূপান্তরিত হয়েছে।অর্থ চোখ বুঝে প্রাহিকে নিজের মনের মতো ভালোবাসছে।প্রাহি নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো।বন্ধ চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পরলো তপ্ত একফোটা জল।কিছুক্ষন বাদে অর্থ সরে আসলো।নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকালো প্রাহির মুখশ্রীর দিকে।মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে।অর্থ প্রাহির পাশে সুয়ে প্রাহিকে নিজের বুকে টেনে নিলো।রাগ এখন অনেকটা কমে গিয়েছে ওর।অর্থ প্রাহির মাথায় আদুরে স্পর্শ করতে করতে নরম কন্ঠে বলে,

‘ তাকাও প্রাহি আমার দিকে।’
প্রাহি নিশ্চুপ।অর্থ আবারও বলে,
‘ তাকাবে নাহ?কেন আমাকে রাগাও প্রাহি?তুমি জানো রাগের মাথায় আমি অনেক উল্টাপাল্টা কাজ করে ফেলি।এইযে তোমাকে কতোটা হার্ট করে ফেললাম।চোখ খুলো প্রাহি।আচ্ছা আমি সরি।এইবার তাকাও প্রাহি।’
প্রাহির কোন সারাশব্দ পাওয়া গেলো না।কিন্তু কিয়ৎক্ষন বাদে বুকের উপর পানির স্পর্শ পেয়ে।প্রাহিকে বুকে নিয়েই তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো অর্থ।প্রাহির মুখটা দুহাতের আজলে নিয়ে দেখে প্রাহির কান্না করছে নিস্তব্ধে।এতে অস্থির হয়ে উঠলো অর্থ।প্রাহিকে বুকে জড়িয়ে ধরে অস্থির হয়ে বলে,

‘ হেই প্রাহি কাঁদছো কেন? আমি সরি প্রাহি।প্লিজ কেঁদো না প্লিজ প্রাহি।’
প্রাহি দুহাতে অর্থ’র পিঠ আকড়ে ধরলো।প্রাহি আরো মিশে গেলো অর্থ’র বুকের মাঝে।কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
‘ আপনি সরি বলছেন কেন?প্লিজ অস্থির হবেন নাহ।আমি আপনার কারনে একটুও কষ্ট পাইনি।’
অর্থ প্রাহিকে আরো ভালোভাবে আকঁড়ে ধরলো।নরম গলায় বলে,
‘ কিন্তু আমি তো এটা ভালো করেনি।আমি তোমার অনুমতি ছাড়া তোমার সাথে…..।আমি সরি প্রাহি।’
প্রাহি মাথা উঠিয়ে তাকালো অর্থ’র দিকে।মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থেকে বলে,
‘ আমি আপনার স্ত্রী।আমাকে ছোঁয়ার অধিকার আপনার আছে।এতে এতোটা গিলটি ফিল করার কিছু হয়নি।এইভাবে বার বার সরি বলে আমাকে ছোট করবেন না প্লিজ।’
অর্থ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো প্রাহির দিকে।মেয়েটা কি সুন্দরভাবে সবটা সামলে নিলো।অর্থ এইবার সিরিয়াস হয়ে বললো,

‘ প্রাহি একটা কথা শুনে রাখো।আমার রাগটা না বড্ড খারাপ।আমার রাগ উঠলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।এইযে সকাল বেলা তুমি আমাকে কিছু না বলেই চলে গেলে এটা কি তুমি ঠিক করেছিলে?আমার ফোনটাও রিসিভ করোনি।আমার কতোটা টেন্সন হচ্ছিলো জানো তুমি?’
প্রাহি করূন গলায় বলে,

‘সরি আর এমন করবো না।আসলে সকালে আপনাকে আর ওই মেয়েটাকে ওই অবস্থায় দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।রাগ উঠেছিলো অনেক।তাইতো জলদি চলে গেলাম।নাহলে তখন রাগের মাথায় কিছু একটা করে ফেলতাম।তাই হেমন্তকে নিয়ে তাড়াতাড়ি সরে আসলাম ওখান থেকে।কারন আমি জানি আপনি ইচ্ছে করে ওই মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরেনি।ওই মেয়েটাই চিপকে ছিলো আপনার সাথে।’
প্রাহি কথায় অর্থ বাঁকা হাসলো।দুষ্টু কন্ঠে বলে,

‘ সকালে তাহলে কি তুমি জেলাস ফিল করেছিলে?’
প্রাহি থতমত খেয়ে গেলো অর্থ’র কথায়।আমতা আমতা করে বলে,
‘ আমি কেন জ্বেলার হবো আজব?’
‘তাহলে রাগ কেন লেগেছিলো?বলো বলো বলো?’
অর্থ’র খোচাখুচিতে প্রাহি রাগ নিয়ে স্বিকার করলো,
‘ হ্যা হয়েছি জ্বেলাস।জ্বেলাস কেন হবো না হ্যা?আমার সামনে আমার হাজবেন্ডকে অন্য একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরবে আমার কি এটা দেখে তাহলে ড্যান্স করার দরকার ছিলো?’
অর্থ হাসলো প্রাহির কথায়।বলে,

‘ ড্যান্স করা লাগবে না।আপাততো খাবার খেলেই হবে।দুপুরে তুমি খাওনি।তোমার চক্করে আমিও খাইনি।চলো।না-কি আমাকে অন্য কিছু খাইয়ে পেট ভরিয়ে দিবে?ওইযে একটু আগে যেটা খেলাম।অবশ্য এতে আমার কোন সমস্যা নেই।আমি ওটা পেলে তো আরো খুশি হবো।’
অর্থ’র কথায় প্রাহির লজ্জায় লাল হয়ে আসলো।লজ্জায় এদিক ওদিক তাকিয়ে একদৌড়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।অর্থ হেসে দিলো প্রাহির কান্ডে।উঠে গিয়ে নিচ থেকে খাবার নিয়ে আসলো।এসে দেখে প্রাহি এখনও বের হয়নি।অর্থ ওয়াশরুমে দরজা নক করে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

‘ প্রাহি লজ্জা পরে পেয়েও।এখন বেরেও।ক্ষুদা পেয়েছে আমার।এসো একসাথে খেয়ে নেই।’
অর্থ’র কথায় ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো প্রাহি।এখনো মেয়েটা মাথা নিচু করে আছে।লজ্জায় তাকাতে পারছে না অর্থ’র দিকে।বারবার অর্থ ওকে কিস করেছে সেটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।অর্থ প্রাহির হাত ধরে নিয়ে বিছানায় বসালো।এরপর দুজনে একসাথে খাবার খেয়ে নিলো।

সকাল থেকে অস্থির হয়ে আছে হিয়ার মন।মনটা বড্ড ছটফট করছে।সকালের ঘটনার পর ও যখন ওর মা আর কাকিকে ডাকতে গিয়েছিলো এসে দেখে আরাফ আর ইলফা কেউ নেই।অর্থও নেই।হিয়া যে অর্থকে ফোন করে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে।কিন্তু জড়তা আর ভয়ের কারনে আরাফের কথাটা জিজ্ঞেস করতে পারেনি।এতে অবশ্য অর্থই ওকে বলেছে যে আরাফ ইলফাকে নিয়ে ওদের বাড়িতে চলে গিয়েছে।সেই থেকে হিয়ার এই অবস্থা।

মনটা বড্ড খারাপ ওর।সকালে দুজন একসাথে ঝগরা করলো।আর এখন কিনা সে নেই।বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে হিয়ার কাছে।কিন্তু কেন এমন লাগছে জানে না ও।আরাফের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে ওর।হিয়া দ্রুত পায়ে হেটে গেলো ওর মার কাছে। মার ফোন থেকে আরাফের নাম্বারটা নিয়ে আসলো।ওর মার কাছে আরাফের নাম্বার আছে।মাঝে মাঝে অর্থকে না পেলে ওর মা আরাফকে ফোন দিতো।বাংলাদেশ আর কোরিয়া দুটো নাম্বারই আছে।হিয়া বাংলাদেশি নাম্বারটা নিজের ফোনে উঠিয়ে ওর রুমে চলে আসলো।কিন্তু ফোন দিতে গিয়েও দিচ্ছে।বিরবির করে বললো,

‘ উফফ! কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।ফোন কি দেবো? না-কি দেবো নাহ?দুরু দিয়েই দেই।কি আর হবে খেয়ে তো ফেলবে না আমাকে তাই নাহ?’
যেই ভাবা সেই কাজ হিয়া আরাফকে ফোন করলো।প্রথমবার রিসিভ হলো না।কিন্তু দ্বিতীয়বার ফোনটা কেটে দিলো।হিয়ার এতে রাগ লাগলো।ও আবারও নাম্বারটায় কল দিতে যাবে।দেখে ওই নাম্বারটার থেকেই ওর ফোনে রিটার্ন কল আসছে।হিয়া কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করতেই অপাশ থেকে আরাফের কন্ঠ,
‘ তা ম্যাডামের এখন আমার কথা মনে হলো?’
হিয়া চমকে গেলো।আতঙ্কিত গলায় বলে,
‘ আপনি জানলেন কিভাবে এটা আমি?’
আরাফ হাসলো।দুষ্টুমি করে বলে,
‘ ইট্স ম্যাজিক।তা বলুন ম্যাডাম কি বলবেন?’

হিয়ার মন খারাপ হয়ে গেলো সকালের কথা মনে পরায়।ও অভিমানি কন্ঠে বলে,
‘ আপনি আমাকে না জানিয়ে চলে গেলেন কেন?’
আরাফ মুঁচকি হাসলো।অবশেষে কি ও পেরেছে হিয়ার মনে অনুভূতি সৃষ্টি করতে?আরাফ বললো,
‘ এই জন্যে বুঝি অভিমান হয়েছে?’
‘ নাহ আসলে ওই….’
হিয়াকে বলতে না দিয়ে আরাফ আবার বললো,
‘ ইলফাকে নিয়ে চলে এসেছি।কারন ওকে নিয়ে চলে না আসলে অর্থ রাগের মাথায় আরো কিছু করে ফেলতো।সরি তোমাকে না বলে চলে আসার জন্যে।’

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৪

‘ ইট্স ওকে।’
‘ খেয়েছো?’
‘ হ্যা! আপনি?’
‘ আমিও!’
এইভাবেই ওদের কথা চলতে লাগলো।কিছু নতুন অনুভুতি সৃষ্টি।একটু ভালোবাসা হলো।আর কিছু মিষ্টি স্মৃতি।এইভাবেই হয় প্রেমের সূচনা।তবে কি ওরাও প্রেমে পড়েছে?

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৬