একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৮

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৮
সাদিয়া জাহান উম্মি

‘ প্রতিদিন আর এসব নোংরামি দেখতে ভালো লাগে না।পারা প্রতিবেশিরা সবাই ছিঃ ছিঃ করছেন।সারাদিন ছেলেদের সাথে নোংরামি করে বেড়ায় আর মান ইজ্জত আমাদের যায়।’ বড় মামির এমন কথায় ইশি চোখ গরম করে তাকালো।রাগটা মাথায় চড়া দিয়ে উঠেছে।ইশি চিৎকার করে বলে,

‘ অনেক হয়েছে।কিসের নোংরামি হ্যা?হেমন্ত আমার ফ্রেন্ড।ও আমাকে রোজ ভার্সিটি নিয়ে দিয়ে আসে এটাতে কি নোংরামি হয়?তাহলে তোমার মেয়েরটা কি বলবে হ্যা?তোমার মেয়ে যে বিয়ের আগে প্রেগনেন্ট হয়ে এসেছে।তারপর তো সেই বাচ্চা নষ্ট করে দিয়ে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিলে।বিয়ের দু মাস না যেতেই সেই আগের প্রেমিকের সাথে ভেগে গেলো।তাতে তোমাদের মান ইজ্জত যায় নি?হ্যা?আর ছোট মামি তোমার ছেলে যে একটা মেয়েকে ধর্ষন করে সেই কেসে ৭ বছর যাবত জেল খাটছে এতে তোমাদের মান ইজ্জত যায়নি হ্যা?আমার এটুকুতেই তোমাদের এতো সমস্যা?ওকে ফাইন মামা’রা সন্ধ্যায় আসলেই আমি মামাদের বলবো কাল থেকে আমি হোস্টেলে থাকবো।বাবাকেও বলবো আমার খরচপাতির টাকা যেন সব এখন থেকে আমাকেই দেওয়া হয়।তোমরা থাকো তোমাদের মতো।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই বলে ইশি হনহন করে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।বাহিরে এসে দেখে হেমন্ত বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইশি ধুপ করে ওর পিছনে বসে পরলো।হেমন্ত সব শুনেছে বাহির থেকে।তারপরেও বললো,
‘ কি হয়েছে?এমন মুখ লোটকে আছিস কেন?’
ইশি ধমকে হেমন্তকে বলে,
‘ তোর সব শুনতে হবে?জলদি বাইক স্টার্ট দে।ভার্সিটি যেতে লেট হবে।’
হেমন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইক স্টার্ট দিলো।আসলেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।প্রাহি কয়েকবার ফোন দিয়ে ফেলেছে।অসহ্য সব।ইশির জন্যে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে।মেয়েটার এতো কষ্ট ও একদম সহ্য করতে পারে না।কবে যে ওকে নিজের করে নিয়ে আসবে ওর কাছে।ফাইনাল এক্সামটা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে শুধু ও।তারপরেই ইশিকে বিয়ে করে নিবে ও।আর অপেক্ষা করবে না।
ভার্সিটি পৌছাতেই হেমন্ত আর ইশি দেখে প্রাহি বড় বটগাছটার নিচে বসে আছে।ওরা সেদিকেই এগিয়ে গেলো।ওদের দেখে প্রাহি রাগি গলায় বলে,

‘ আমি গিয়ে আম্মুকেও দেখে আসলাম।তারপর ভার্সিটি আসলাম।আর তোদের এতো দেরি কেন?’
হেমন্ত টিপ্পনি কেটে বলে,
‘ এই পেত্নিটারই তো দেরি হয়েছে।আটা ময়দা মেখে পেত্নি থেকে মানুষ হতে সময় লাগে না বল?’
ইশি দাঁত খিচিয়ে তাকালো হেমন্ত’র দিকে।তেঁজ নিয়ে বলে,
‘ রাগাবি না হেমন্ত।এমনিতেই মন মেজাজ ভালো না।আমি গেলাম ক্লাসে।’
ইশি হনহনিয়ে ক্লাসে চলে গেলো।প্রাহি বুঝলো না ইশির এতো রাগ কেন?তাই ও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো হেমন্ত’র দিকে।হেমন্ত সেটা বুঝতে পেরে নিজেই বললো,
‘ রেগুলার যা হয়।ওই ওর মামিদের ওইসব আজেবাজে কথা।’

প্রাহি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।বাবা,মা না থাকলে নিজেকে কতোটা অসহায় মনে হয় তা এখন ও খুব ভালোভাবেই জানে।তবুও তো ও কপাল গুনে এতো ভালো একটা পরিবার পেয়েছে।কিন্তু ইশির তো তাও নেই।ওই মেয়েটা দিন দিন ধুকরে ধুকরে কষ্ট পাচ্ছে।এই হেমন্ত যে কবে ওর মনের কথা বলবে।প্রাহি এইবার রাগে কটমট করে বলে,
‘ তুই কবে ওকে প্রোপোজ করবি?কুত্তা একটা।’
হেমন্ত মুখ লটকিয়ে বলে,
‘ আমি কি করবো বল।অনেক চেষ্টা করি বলার কিন্তু ভয় হয় যদি ও রাগ করে আমাদের ফ্রেন্ডসীপটাও নষ্ট করে দেয়?’
‘ গাধা এতো ভয় পেলে হয়?ব্যস ওর চোখের দিকে তাকাবি।নিজের মনের সব আবেগ ভালোবাসা ঢেলে বলে দিবি আমি তোমাকে ভালোবাসি।’

‘ তাহলে তুই কেন বলতে পারছিস না যে তুই ভাইকে ভালোবাসিস বিগত সাতবছর যাবত।’
হেমন্ত’র কথায় চমকে তাকায় প্রাহি।বিষ্ময়ে চোখ বড়বড় করে হা করে তাকিয়ে রইলো হেমন্ত দিকে।তুতলিয়ে বললো,
‘ তু…ই,তুই কিভাবে মানে?’
হেমন্ত হাসলো।প্রাহির মাথায় হাত রেখে বলে,
‘ আমার বেষ্টফ্রেন্ড আমারই ভাইকে ভালোবাসে।সেটা আমি কিভাবে জানবো না বল?তুই আমার বেষ্টফ্রেন্ড তোর মনের কথা সব জানা এটা ব্যাপার না কোন।তুই যে আমার ভাইর ছবি তোর ব্যাগে নিয়ে ঘুরতি ওকে নিয়ে নিজের ডায়রীতে অসংখ্য ভালোবাসাময় বাক্য লিখতি। তুই কি বুঝিস?আমি এসব জানবো নাহ?হাহ্ এতোটাই হাবুলুলু না আমি। তুই আমাকে হয়তো বেষ্টফ্রেন্ড মানিস না তাই আমাকে কিছুই বলিস নি।কিন্তু তুইতো আমার বেষ্টফ্রেন্ড,আমার বোন,আমার ভাবি। তাই আমি সবটা তুই না বলতেও জেনে নিয়েছি।’

প্রাহির নিজেকে অপরাধী মনে হলো অনেক।হেমন্ত কি অনেক কষ্ট পেয়েছে ওর লুকানোতে এই কথা?প্রাহি ধরা গলায় বলে,
‘ এইভাবে বলিস না হেমন্ত।তুই আমার ভাই হোস।তোর থেকে আজ অব্দি কিচ্ছু লুকাই নি।শুধু এই কথাটা ছাড়।বিশ্বাস কর আমি যদি উনাকে ভালো না বেসে অন্য কাউকে ভালোবাসতাম আমি নির্দ্বিধায় তোকে সবটা বলে দিতাম।কিন্তু তোর ভাইকে ভালোবাসি এই কথাটা আমি কিভাবে তোকে বলবো বল?আমার ভয় হতো যদি তুই আমাকে খারাপ মনে করিস?যদি আমার সাথে বন্ধুত্ব শেষ করে দিস।এই ভয়ে আমি বলিনি।প্লিজ তুই কষ্ট পাস না প্লিজ।’
হেমন্ত বুঝলো আর একটু হলেই প্রাহি কেঁদে দিবে।তাই ও জলদি প্রাহিকে বললো,

‘ ধুর বোকা।আমি তোকে এইভাবেই বলছিলাম।তোর রিয়েকশনটা দেখার জন্যে।প্লিজ মন খারাপ করিস না।আমি জানি তুই আমার থেকে এটা লুকিয়েছিস কারন ছাড়া আর এটা করিস নি।এখন মন খারাপ ছাড়।ক্লাসে চল।গিয়ে দেখে ওই ভুতনী কি করছে।আমাদের তো আবাত ওটার মন ভালো করতে হবে।’
প্রাহি হেসে দিলো হেমন্ত’র কথায়।হেমন্ত’র মতো একটা ফ্রেন্ড থেকে বেশি ভাই পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।আর প্রাহি অনেক সৌভাগ্যবতী যে ও হেমন্ত’র মতো এমন বন্ধু পেয়েছে।আর এখন তো ও দেবরও হয় প্রাহির।প্রাহি হাসিমুখে চলে গেলো হেমন্ত’র সাথে।

অর্থ অফিসে কাজ করছে এমন টাইমে ওর পি.এ এসে বলে,
‘ স্যার একজন আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন। খুব আর্জেন্ট নাকি এটা।’
অর্থ ভ্রু-কুচকে ফেললো।এমন টাইমে ওর সাথে কেইবা দেখা করতে চাইবে।তাও আবার এমন জরুরি।অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘ নাম বলেছে কে সে?’
‘ না স্যার।বলছে আপনি না-কি উনাকে চিনেন খুব ভালোভাবে।’
অর্থ এতো আর মাথা ঘামালো না।ওর পি.এ কে বললো তাকে ভীতরে আসতে দিতে। অর্থ আবারও কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো।হঠাৎ কেউ এসে বলে,
‘ অর্থ?’

অর্থ ভ্রু-কুচকে তাকালো।পরক্ষনে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো।দাঁতেদাঁত চিপে বললো,
‘ তুমি আবার এখানে কেন এসেছো?সেদিনের মা’রটা কম হয়ে গিয়েছে?আর আরাফ কোথায়?ও থাকতে তুমি এখানে কি করে আসলে?’
ইলফা বাঁকা হেসে বলে,
‘ ও কামন অর্থ?ওর কি সেরকম ক্ষমতা আছে যে ও আমাকে আটকে রাখবে?’
অর্থ রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
‘ আমি নিজের কোন্ট্রোল হারিয়ে ফেলার আগে তুমি এখান থেকে চলে যাও।নাহলে ভালো হবে না কিন্তু।’
ইলফা উঠে দাড়ালো চিৎকার করে বলে,
‘ যাবো না কি করবে তুমি?তুমি এমন কেন অর্থ?বিগত কয়েকবছর ধরে আমি তোমার পিছন পিছন ঘুরছি।আমাকে তুমি একটু ভালোবাসতে পারলে না।আর দুইদিনের ওই মেয়েটাকে দেখার পলকেই তুমি বিয়েও করে নিলে?কি আছে ওই মেয়ের মাঝে হ্যা?যা আমার মাঝে নেই?’
অর্থ’র রাগে মুখশ্রী লাল হয়ে গিয়েছে।পারলে এক্ষুনি ইলফাকে এখনি গলা টিপে মেরে ফেলে ও।অর্থ হিংশ্র দৃষ্টিতে তাকালো ইলফার দিকে।চিবিয়ে বলে,

‘ গেট লস্ট ফ্রোম হিয়ার।আর আমার স্ত্রীর কি আছে না আছে সেটা অন্তত তোর মতো চরিত্রহীন কোন মেয়েকে আমি বলতে যাবো না।বের হয়ে যাহ আরিফ, আরিফ এই মেয়েকে এখুনি ঘার ধাক্কা দিয়ে আমার অফিস থেকে বের করে দেও।’
আরিফ অর্থ’র পি.এ ও কয়েকজন মহিলা স্টাফদের নিয়ে এসে ইলফাকে জোড় করে অফিস থেকে বের করে দিলো।ইলফা যেতে যেতে বলে গেলো,

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৭

‘ কাজটা একদম ঠিক করলে না অর্থ।এর জন্যে অনেক পস্তাতে হবে অনেক। অনেক ভয়ংকর হবে এর পরিনাম।’
‘ বের করে দেও একে।জলদি।’অর্থ’র ভয়ংকার চিৎকারে স্টাফরা ইলফাকে দ্রুত অফিস থেকে বের করে দিলো।অর্থ রাগ সামলাতে না পেরে মাথা চেপে ধরে বসে রইলো।এসব ঝামেলা আর ভালো লাগে না ওর।একটু শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারে না ও।নিজের জন্যে না প্রাহির জন্যে অনেক ভয় হয় ওর। যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যায় অর্থ পাগল হয়ে যাবে একদম পাগল হয়ে যাবে।এসব কিছু শেষ করতে হবে যতো দ্রুত সম্ভব।যে করেই হোক।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৯