একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৭

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৭
সাদিয়া জাহান উম্মি

(১৮+ এলার্ট)
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই নিভু নিভু চোখে তাকালো প্রাহি।দেখে অর্থ ওর মাথার কাছে বসে আছে আর ক্রমাগত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আরেক হাত দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে।সকাল সকাল বিরক্ত হলো প্রাহি।সারাদিন কি এতো কাজ করে লোকটা?হালকা রাগ নিয়ে প্রাহি বলে,

‘ সারাদিন কি করেন এতো ল্যাপটপে?কি এতো কাজ আপনার?’
প্রাহির কথায় চমকে যায় অর্থ।পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে ল্যাপটপ ওফ করে প্রাহির পাশে আবারও সুয়ে পরলো।প্রাহি নিজের প্রশ্নের জবাব না পেয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে,
‘ কি হলো?জবাব দিচ্ছেন না কেন? আর এতো সকালে উঠেই ল্যাপটপ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছেন?মাত্র ৬ঃ৪৫ বাজে।’
অর্থ প্রাহির ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়েই বলে,
‘ এখন কেমন লাগছে তোমার শরীর?’
প্রাহি চোখমুখ কুচকে ফেললো।তেজি কন্ঠে বলে,
‘ আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনাকে,আপনি আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উলটো আমাকে প্রশ্ন করছেন।এটা কি ঠিক?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অর্থ মুচঁকি হাসলো।প্রাহি যে রেগে গিয়েছে তা আর বুঝতে বাকি নেই।তাই এইবার সরাসরি উত্তর দেয়,
‘ কোরিয়ার বিজন্যাসটা বাংলাদেশেই স্যাটেল করে নিবো প্লান করেছি।কারন আর বিদেশে থাকতে ভালো লাগে না।আগে তো বউ ছিলো না টেন্সন ছিলো না।এখন বউ আছে ক’দিন পর বাচ্চাও হবে।তাদের ছাড়া কি আর আর এতো দূরে থাকা যায়?তাই এতো দিন রাত লাগিয়ে কাজ করছি।তা এখন বলো তোমার শরীরটা কেমন?’
এইভাবে অর্থ’র , ‘ ক’দিন পর বাচ্চাও হবে।’ কথাটা বলতে শুনে লজ্জা পেলো প্রাহি।আমতা আমতা করে বলে,
‘ ঠিক আছি আমি এখন! একটু শরীর দূর্বল লাগছে শুধু।’
হঠাৎই অর্থ ওর মুখশ্রী বেজায় গম্ভীর করে নিলো।অত্যন্ত শীতল কন্ঠে বলে,
‘ কাল কি হয়েছিলো প্রাহি?আমাকে বলো?কেন তুমি হঠাৎ এতো অসুস্থ হয়ে পরলে?গিভ মি দ্যা আন্সার্স।কোন ভণিতা করবে নাহ!’

প্রাহি ভয় পেলো অর্থ’র এমন শীতল কন্ঠস্বর শুনে।ও তো এমনিতেও বলে দিতো অর্থকে।কালই বলতো শুধু একটু অসুস্থ হয়ে পরার কারনে বলতে পারিনি।প্রাহি মুখ ফুলালো।এইভাব্র বলার কি আছে আজব?ভালোভাবে বললেই তো হতো?প্রাহি গোমড়া মুখে বিছানার পাশে ওর মোবাইল খুজতে লাগলো পরক্ষনে মনে পরলো ওর ফোন তো কাল ব্যালকনিতেই ফেলে দিয়ে আসছিলো প্রাহি।প্রাহির ভাবনার মাঝেই অর্থ ওর দিকে ওর ফোন এগিয়ে দিলো।প্রাহি ভড়কে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। ছোট্ট কন্ঠে বলে,
‘ ধন্যবাদ!’
তারপর নিজের ফোনে কাল জয়ের করা ম্যাসেজটা এনে অর্থ’র দিকে ফোনটা এগিয়ে দেয়।অর্থ ভ্রু-কুচকে প্রাহির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে পুরোটা ম্যাসেজ পড়তে লাগলো।আস্তে আস্তে রাগে অর্থ’র চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো,চোখজোড়া লাল হয়ে গিয়েছে,মুখশ্রীটাও লাল হয়ে আসছে।রাগে ফোনটা আছাড় মারতে নিলেই প্রাহি জলদি অর্থ’র হাত ধরে ফেলে।আতকে উঠে বলে,

‘ আরে কি করছেন?রাগ হয়েছে তো আমার ফোন ভাঙ্গতে যাচ্ছেন কেন?’
অর্থ দাঁড়িয়ে গিয়ে পাশে রাখা ফুলদানিটা এক আছাড়ে ভেঙ্গে চিৎকার করে বলে,
‘ হাও ডেয়ার হি?হাও ডেয়ার হি টু টেক্সট মাই ওয়াইফ ইন সাচ ফিলথি লেংগুয়েজ।আমি ওই জা*নোয়ারকে পেলে ওর শরীরকে এতো এতো টুকরে কাটবো যে ওর শরীরে কোন অংশ কুকুর বিড়ালরাও খুজে পাবে না।’
প্রাহি অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে অর্থ’র এমন রাগ দেখে।ভয়মিশ্রিত কাঁপা কন্ঠে প্রাহি বলে,
‘ আপনি এতোটা রাগবেন না প্লিজ।একটু শান্ত হোন।এইভাবে রাগ করলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে!’
অর্থ চিৎকার করে বলে,
‘ গো টু হেল উইথ দ্যাট!’

অর্থ রাগে কাঁপতে কাঁপতে কাকে যেন ফোন করলো।ফোন রিসিভ হতেই দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
‘ ওই জয়ের খোজ নেওয়ার জন্যে তোমাদের বলেছিলাম নাহ?এতোদিন লাগে তোমাদের?ওই জা*নোয়ারটা আজাদ হয়ে ঘুরতেছে আবার আমার বউকে থ্রেড দিচ্ছে।ওই কুকুরের বাচ্চাকে জলদি খুজে বের করো নাহলে তোমাদের একটাও আমি আস্ত রাখবো না।গট ইট।’
অর্থ নিজের চুল খামছে ধরে পিছনে ফিরে বড়বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগ সামলানোর চেষ্টা করছে।সব ধ্বংশ করে দিতে পারলে বুঝি ওর রাগটা কমতো।এদিকে অর্থ’র এহন রূপ দেখে প্রাহির অন্তর আত্মা লাফাচ্ছে।প্রাহি আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে অর্থকে পিছন হতে জড়িয়ে ধরলো।

এদিকে বুকে কারো নরম হাতের ছোয়া আর পিঠের উপর কারো অস্তিত্ব অনুভব করলো অর্থ।বুঝতে একটুও অসুবিধে হলো না যে ওটা প্রাহি।অর্থ প্রাহির হাত ধরে একটানে প্রাহিকে ওর সামনে এনে ওর প্রাহির কোমড়ে হাত রেখে প্রাহিকে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে আসলো।প্রাহির এলোমেলো চুলগুলো কানের পিছনে গুছে দিলো।মেয়েটাকে বুকে নিয়ে এখন রাগটা অনেকখানি কমেছে।অর্থ’র হাত প্রাহির সারামুখশ্রীতে বিচড়ন করতে লাগলো।প্রাহি চোখ বুজে নিলো।হঠাৎ অর্থ’র হাতের ছোঁয়া ওর ঠোঁটে অনুভব করতেই কেঁ পে উঠলো প্রাহির। অর্থ প্রাহির ঠোঁটে ক্রমাগত আলতো করে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।আর বারবার শুকনো গলায় ঢোক গিলছে।নিজেকে সামলানো বড় কষ্ট হয়ে পরছে।আচ্ছা,এতো কষ্ট কেন করবে ও?মেয়েটা তো ওর স্ত্রী ওর।ওকে ছুঁয়ে দেওয়ার,ভালোবাসার পুরো অধিকার আছে ওর।একটু নাহয় বেহায়া হবে ও তাতে ক্ষতি কি?ভালোবাসতে তো কোন মানা নেই?তাই নাহ?অর্থ ধীর কন্ঠে বলে,

‘ প্রাহি?’
প্রাহির শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়েছে।জোড়েজোড়ে শ্বাস নিতে নিতে বলে,
‘ হুম!’
‘ তোমার ওই ঠোঁটজোড়ার একটু খানি ছোঁয়া পেতে দিবে আমার এই তৃষ্ণার্থ ঠোঁটজোড়াতে।’
প্রাহি কিছু বললো না লজ্জায় ওর কথাগুলো গলাতেই আটকে আছে।ও নিজেও তো চায় অর্থ একটু কাছে পেতে।একটু না অর্থকে ও পুরোটাই চায়।কিন্তু কিভাবে নিজের মনের কথা বলবে অর্থকে?ও তো লজ্জায় মরেই যাবে!’

প্রাহি অর্থ’র টি-শার্টের কলার ধরে অর্থ’র সাথে আরেকটু মিশে গেলো।পা দুটো উচু করে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরলো।অর্থ এতে বুঝে ফেলেছে সব।তাই আর এক মুহূর্ত দেরি না করে।ডুব দেয় নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর ওষ্ঠজোড়ায়।প্রাহি অর্থ’র ঘার শক্ত করে চেপে ধরেছে।ও নিজেও আস্তে আস্তে অর্থ’র ভালোবাসার স্পর্শে সারা দিতো লাগলো।অর্থ প্রাহির কামিজের ভীতর দিয়ে ওর পেটে নিজের হাতের স্পর্শ দিতে লাগলো।এতে যেন প্রাহির সারাশরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো।থরথর করে কাঁপতে লাগলো ওর পুরো দেহ।অর্থ যেন নিজের কোন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে।উন্মাদ হয়ে প্রাহিকে চুঁমু খাচ্ছে অর্থ।প্রাহির যেন শ্বাস নেওয়া কষ্ট হয়ে পরেছে।আর কতোক্ষন এইভাবে চললে ও দম আটকে মারা যাবে।প্রাহি জোড় করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো অর্থ’র থেকে। দৌড়ে বারান্দায় চলে গিয়ে জোড়েজোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো।অর্থ’ও আস্তে আস্তে প্রাহির পিছন পিছন গেলো।তারপর আলতো করে প্রাহিকে পিছন হতে জড়িয়ে ধরলো।প্রাহির চুলগুলো একপাশে এনে। প্রাহির কাঁনে ঠোঁট ছোয়ালো।তারপর প্রাহির ঘাড়ে গভীরভাবে নিজের ঠোঁটের আবেশ দিতে লাগলো ছোট ছোট করে।প্রাহি চোখ বুঝে অর্থ’র ভালোবাসাগুলো উপভোগ করছিলো।কিয়ৎক্ষন পর নেশাক্ত কন্ঠে বলে,

‘ আমি সরি প্রাহি। তোমাকে আমি এইভাবে হার্ট করতে চাইনি।আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছিলাম।’
প্রাহি সাথে সাথে ঘুরে গিয়ে অর্থকে জড়িয়ে ধরে।কাঁপা কন্ঠে বলে,
‘ এইভাবে বলবেন না।আমি কিন্তু আগেও একবার বলেছি এখনো বলছি।আমি আপনার স্ত্রী, আপনি আমাকে আমাকে যেইভাবে মনচায় ভালোবাসতে পারবেন।এটা আপনার অধিকার।আমি আমার স্বামিকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবো এইটার সাধ্য আমার নেই। আমি গুনাহগার হতে চাই না নিজের স্বামিকে কষ্ট দিয়ে।’
অর্থ তৃপ্তীর শ্বাস নিলো। এই মেয়েটাকে নিজের স্ত্রী করে কোন ভুল করে নি অর্থ।এই মেয়েটাই ওর জন্যে ওর পার্ফেক্ট জীবনসঙ্গীনি।
হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শোনা গেলো।সাথে হেমন্তর কন্ঠ,

‘ প্রাহি কিরে এখনো উঠিস নি?ভার্সিটি যাবি না?আজ একটা ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস আছে।জলদি উঠে রেডি হো।আমি গেলাম।’
প্রাহি ধীর কন্ঠে জবাব দেয়,
‘ আচ্ছা যা তুই।আমি আসছি।’
অর্থ প্রাহিকে এখনো জড়িয়ে ধরেই আছে।সেইভাবে থেকেই বলে,
‘ তুমি যেতে পারবে ভার্সিটিতে?আর ইউ সিউর?’
প্রাহি মিষ্টি হাসলো।বললো,
‘ আপনি চিন্তা করবেন না।আমি ঠিক আছি। চলুম ফ্রেস হয়ে নেই।ক্লাস মিস করা যাবে না।’
অর্থও হাসলো।দুজনে ফ্রেস হয়ে তারপর খাওয়া দাওয়া করে অর্থ প্রাহিকে নিয়ে ভার্সিটি’র উদ্দেশ্য রওনা হলো।হেমন্ত বাইক নিয়ে গিয়েছে ও ইশিকে পিক-আপ করে নিয়ে একেবারে আসবে ভার্সিটিতে।যার যার উদ্দেশ্যে সে সে চলে গেলো।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৬

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।গল্পটি আর ভালো লাগছে না?রেস্পন্স কমে গেলো কেন?আর কয়েকদিন যাবত আমাদের এখানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।যেই কারনে কারেন্টও ঠিকঠাক থাকছে না।এই কারনে রেগুলার গল্প দিতে পারছি না।ছোট বলে কেউ লজ্জা দিবেন না।ফোনে চার্জ খুব স্বল্প আছে কারেন্ট না থাকার কারনে।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ১৮

2 COMMENTS

Comments are closed.