শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৬

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৬
লাবণ্য ইয়াসমিন

আলো ঝলমলে শীতের সকাল। হৈমন্তী পিচ্চিটাকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে সোনালী রোদ্দুরের দাঁড়িয়ে আছে। মনটা বেশ ফুরফুরে আছে। গতকাল থেকে বাচ্চাটা ওর। হৈমন্তী ওর নাম রেখেছে জান্নাতুল এহসান জান্নাত। যদিও নামটা ওর দেওয়া না আবির কাগজপত্রের সঙ্গে নামটাও পাঠিয়েছে। হৈমন্তী আপত্তি করেনি। করবেই বা কেনো, বাচ্চা নিয়ে লোকটার আগ্রহ দেখে ওর ভালো লেগেছে। একজন নিজের সন্তানের দায়িত্ব নিতে ভয় পেয়ে অস্বীকার করে আরেকজন পরের সন্তানকে আপন করতে এক সেকেন্ড ভাবেনা। আবিরের খামখেয়ালিপনার জন্য হৈমন্তীর বিরক্তি লাগে তবে এদিক থেকে লোকটা খারাপ না। একটু বেশিই ভালো। তবুও হৈমন্তী লোকটার সঙ্গে নিজেকে জড়াবে না। ও আস্ত একখণ্ড অভিশাপের টুকরো। যেখানে যাবে পুড়িয়ে খাঁক করে দিবে। ছেলেটা বরং নতুন করে জীবন শুরু করুক। হৈমন্তীর সেই নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ থাকবে না। আনমনে ভেবে চলেছে হৈমন্তী। জান্নাতকে পাবার পর থেকে রনির জন্য খারাপ লাগাটা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। ভেবেছিল বাচ্চাটা কাছে থাকলে রনির জন্য খারাপ লাগবে না। কিন্তু উল্টো হচ্ছে। বাচ্চাটাকে কোলে নিলেই বারবার মনে হয়েছে রনিও ছোট থাকতে এমন ছিল। হৈমন্তীর ধ‍্যান ভাঙলো মারিয়াম আন্টির ডাক শুনে। হৈমন্তী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ। মারিয়াম বানু ধীরগতিতে হৈমন্তীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

আবির বাবা ফোন করেছে। তোমার ফোন বন্ধ পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে। ছেলেটির উপরে রাগ করেছো?
হৈমন্তী কি বলবে বুঝতে পারলো না। বাচ্চাটার দত্তক ও একা নেয়নি। আবিরের সঙ্গে মিলে নিয়েছে। যদি মারিয়াম আন্টি জানেন ওদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই তখন কি করবেন? কথাটা ভেবে হৈমন্তী লাফিয়ে উঠলো। না এমন হতে দিলে চলব্র ন। তাই মিনমিনে কন্ঠে বলল,
> আন্টি ফোনে চার্জ নেই। আপনি জান আমি কথা বলে নিব।
হৈমন্তীর কথা শেষ হলো না মারিয়াম আন্টির ফোনটা বেঁজে উঠলো। আবির ভিডিও কল করেছে। মারিয়াম আন্টি ফোন রিসিভ করে হৈমন্তীর দিকে ধরলো। আবির এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। হৈমন্তী তাঁকাতেই চোখে চোখ পড়েগেলো। হৈমন্তী চোখ নামিয়ে নিলো। আবিরের ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠলো। হৈমন্তী ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফোন করছেন কেনো?
আবির দাঁত বের করে হেসে বলল,
> বারে আমার বাচ্চাটা তোমার কাছে আছে তাঁর খোঁজখবর নেবো না? তুমি কি আমাকে পাষাণ ভাবো হৈমি?
আবিরে কথাগুলো শুন হৈমন্তীর মেজাজ খারাপ হলো। লোকটা অতিরিক্ত কথা বলে। হৈমন্তী বিড়বিড় করে বলল,
> ভাব নিচ্ছেন মনে হচ্ছে নিজের বাচ্চা। একদম অতিরিক্ত করতে আসবেন না।
হৈমন্তীর ফিসফিস বলা কথাটা অর্ধেক মারিয়াম আন্টির কানে যেতেই উনি চোখ বড় বড় করে বললেন,
> কি বলছো তুমি? আচ্ছা তোমাদের সম্পর্ক ঠিক আছে তো?
হৈমন্তী ঢোক গিলে ফেলল। পাশে মারিয়াম আন্টি আছে ভুলে গিয়েছিল। ওপাশে আবির মন খারাপ করে বসে আছে। বাচ্চাটাকে সত্যিই নিজের বলে মেনে নিয়েছে। একটুও মনে হয়নি ওটা ওর বাচ্চা না। তাহলে হৈমন্তী এসব কেনো বলল ভাবতেই একরাশ কষ্টে বুকটা ভরে উঠলো। তবুও হেসে বলল,

> তুমি ওকে আমার ছবিটা দেখাওনি? ওর ছবিগুলোও আমাকে দিবা। প্রতিদিন নিয়ম করে। আর ঠান্ডার মধ্যে ওকে নিয়ে বেলকনিতে কি তোমার?
হৈমন্তী অনিচ্ছাকৃতভাবে বলল,
> এমনিতেই দাঁড়িয়ে আছি। ও ঘুমিয়ে আছে। ঘুম ভাঙলে ছবি দেখাবো।
আবির কিছু একটা ভেবে বলল,
> তুমি একটা কাজ করো আমার কিছু ছবি দেওয়ালে টাঙিয়ে দাও। মাঝেমাঝে দেখবে। দারুণ হবে।
হৈমন্তী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> আপনার মতলোবটা কি শুনি?
আবির অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

> কোনো মতলব নেই। আমি চাইছি জান্নাত ওর বাবার মতো ভালো মানুষ হোক। আবির এহসানের মতো পিউর ফ্রেশ মনের মানুষ। তোমার কুটিল বুদ্ধি।
হৈমন্তী শরীর জ্বলে উঠলো। লোকটা নিজের প্রশংসা নিজেই করছে। নিলজ্ব বেহায়া লোক। মারিয়া আন্টি ফোন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,
> পরে কথা হবে। আমার ক্লাস আছে। যেতে হবে।
আবির চিন্তিত হয়ে বলল,
> ওকে একা রেখে যাওয়া কি ঠিক হবে? কান্নাকাটি করবে,ক্ষুধা পাবে না?
হৈমন্তী কিছু বলার আগেই মারিয়াম আন্টি উত্তর দিলো,
> অসুবিধা কেনো হবে আমি তো আছি। ওকে ঠিক দেখেশুনে রাখবো।

হৈমন্তী কিছু বলল না। ফোন কেটে ভেতরে চলে আসলো। জান্নান খুব শান্ত মেয়ে। একটুও কান্নাকাটি করবে না। একটু খাবার দিলেই ঘুমিয়ে থাকবে। হৈমন্তীর ক্লাসে মন টিকবে না। তবুও যেতে হবে। ভেবেছিল জব করবে কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না। মেয়েটার পাশে থাকা জরুরি। একটা এনজিওর সঙ্গে কাজের অফার পেয়েছে। হৈমন্তী করবে ভেবেছে। তাছাড়া ওখানে নিয়ম করে যেতে হবে না। বাড়িতে বসে অফিসের কাজকর্ম করা যাবে। মোটামুটি যুদ্ধ লেগে যাবে জীবনের উপরে। এক সঙ্গে তিনদিক সামলাতে হিমশিম খেতে হবে তবুও কিছু করার নেই। আবির প্রস্তাব দিয়েছে বাচ্চার দেখাশোনার জন্য একটা কাজের লোক রাখার জন্য। হৈমন্তী মানা করে দিয়েছে। নিজের মেয়েকে ও নিজেই মানুষ করবে। নিজের অপূর্ণতা মেয়েকে দিয়ে পূরণ করবে হৈমন্তী।

মন খারাপ নিয়ে মাথায় হাত রেখে শুয়ে আছে আবির। কিছুক্ষণ আগে হৈমন্তীর সঙ্গে কথা হয়েছে। মন খারাপ হচ্ছে বাচ্চাটার জন্য। হৈমন্তী যদি ওকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতো তবে কত ভালোই না হতো। ছোট একটা সংসার হতো। ছন্নছাড়া লাগছে। হৈমন্তীর উপরে রাগ হচ্ছে। মেয়েটার মাথায় হিটলারের মতো বুদ্ধি। হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ শুনে ওর ধ‍্যান ভাঙলো। আরাফাত এসেছে। আবির হন্তদন্ত হয়ে বসতে বসতে বলল,
>ভাইয়া ভেতরে আসুন।
আরাফাত ওর বয়সে বড় কিন্তু বোনটাতো ছোট। কি বলে ডাকবে বুঝতে পারছে না। শেষমেশ ভাইয়া বলল। আরাফাত চুপচাপ ও পাশে গিয়ে বসতে বসতে বলল,
> দুদিন পরে আমরা ফিরে যাচ্ছি। তোমার সঙ্গে তেমন কথাবার্তা হলো না। সেসময় যেভাবে আমাদের দুভাইবোনকে সাহায্য করেছিলে সত্যিই আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো।
আবির লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বলল,

> যা করেছি নিজের জন‍্য করেছি। তাছাড়া এটা আমার কর্তব্য ছিল। এখন আত্মীয় হয়ে গেছেন। আমার বোনটাকে দেখেশুনে রাখবেন। ও একটু আলাদা টাইপের। ইমোশনাল কখন কি করে বুঝতে পারে না। আর একটু খেয়াল রাখবেন খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে যেনো চলাফেরা না করে।
আরাফাত ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
> আমার সঙ্গে থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করোনা। আমি হৈমন্তীকে নিয়ে চিন্তিত আছি। কোথায় আছে বুঝতে পারছি না। বন্ধুদের সঙ্গে কথা হয়েছে ওরা খোঁজ করছে। মেয়েটা হঠাৎ জেদি হয়ে উঠেছে।
> ভাইয়া চিন্তা করবেন না। যেখানেই আছে ভালো আছে। আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। অরিন অপেক্ষা করছে।
আরাফাত কথা বাড়ালো না। যেভাবে এসেছিল সেভাবেই ফিরে গেলো। আবিরের মেসেঞ্জারে একটা ভিডিও এসেছে। কিছুক্ষণ আগে মারিয়াম আন্টি পাঠিয়েছে। বাচ্চাটা হাত পা নেড়েচেড়ে খেলছে। কি সুন্দর দৃশ্য মন ভরে যাচ্ছে। হৈমন্তী নেই হয়তো ক্লাসে আছে। ভিডিওটা প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত বেশ কয়েকবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেলো আবির ।

নেশায় বুদ হয়ে টলতে টলতে বাড়িতে ফিরেছে ফরহাদ। মনের শান্তির জন্য আজ ইচ্ছা মতো বাংলা মদ গলাই ঢেলে নিয়েছে। এর আগে কখনও এসব খাওয়া হয়নি। হাতে কিছু টাকা এসেছে।যদিও সামান্য পরিমাণ। এই টাকা দিয়ে দামি কিছু খাওয়া সম্ভব ছিল না তবে আশা করছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নিজের অবস্থা পাকাপোক্ত করে ফেলবে। হৈমন্তী এই টাকার জন‍্যই ওকে দুরে সরিয়ে দিচ্ছে। নয়তো যে মেয়েটা একদিন ওর সঙ্গে থাকার জন্য পা ধরে আকুতি জানিয়েছিল সে কিভাবে ওকে দূরে সরাতে পারে? টাকা পয়সা নেই বলে নিজের বউ বাচ্চার থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। কিভাবে মানবে ও? আজকে লতার মন বিশেষ ভালো নেই। চুপচাপ খাটের এক কোনে বসে আছে। ফরহাদ ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে ঘৃণা নিয়ে বলল,

> আমার বিছানায় তুমি আর ঘুমাবে না। এই বিছানা শুধু আমার আর হৈমন্তীর। তুমি ভীষন নোংরা। ঘৃণা লাগে তোমার দিকে তাকালে। তোমার পাপে আমি জ্বলে পুড়ে মারা যাচ্ছি। কখনও ক্ষমা করবো না তোমাকে।
লতার চোখ দুটো জ্বলে উঠলো। ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
> প্রেম উথলে পড়ছে। যখন ওকে ছেড়ে আমার কাছে এসেছিলে মনে ছিল না? আমাকে ছাড়ার কথা ভূল করেও ভেবোনা। আমি নিজের ইচ্ছেতে আসিনি। তোমার সঙ্গে এসে আমি কি পেয়েছি? ভেবেছিলাম কি আর হলো কি? ভিক্ষুকরা এর থেকে ভালো থাকে। বাচ্চাটার পড়াশোনা পযর্ন্ত করাতে পারছি না। আজেবাজে ছেলেদের সঙ্গে মিশে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ফরহাদ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। লতাকে বিছানা থেকে টেনে নামিয়ে দিয়ে বলল,
> চরিত্রহীন মহিলা,যার পাপ আমার ঘরে এনেছিস তাকে গিয়ে বল পাপ মোচন করতে। আমি তোর বা তোর ছেলের দায়িত্ব নিতে পারবো না। কোন কুলাঙ্গারের বাচ্চা তার ঠিক নেই। হয়তো বাপের মতোই হয়েছে। মুখের ভাষা শুনলে বমি আসে। আমার ছেলে মির্জ বাড়িতে আছে গিয়ে দেখে আসেক কতটা শান্ত আর ভদ্র।

ফরহাদের কথা শুনে লতার গা জ্বলে উঠলো। এমনিতেই হৈমন্তীর কথা ওর শুনতে ভালো লাগে না। তারপর আবার ছেলেকে নিয়ে বাঁজে কথা বলছে। ও উঠে গিয়ে চিৎকার করে বলল,
> ও তোমার ছেলে। ওকে নিয়ে একদম বাজে কথা বলবে না। হৈমন্তীর ছেলে কিভাবে তোমার হয়? তুমি নিজে ওকে স্বীকার করেছো সেকথা আমার অজানা নেই। হৈমন্তী নাম নিলে আমি এখুনি পুলিশে গিয়ে তোমাদের দুজনের নামে মামলা করবো। কি ভাবেছো আমাকে ডিভোর্স দিয়ে ওই বেলাজ বেশরম মহিলাকে ঘরে আনবে তা হবে না। ওই মহিলাকে আমি পুলিশে দেবো। আমার ঘরের দিকে নজর দিলে চোখ তুলে নিবো। আমি লতা, সহজে কাউকে ছাড়বো না।
লতার এতগুলো বাজে কথা শুনে ফরহাদের মেজাজ আরও বিগড়ে গেলো। মুঠো শক্ত করে ঠাটিয়ে লতার মুখে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। হাতের কাছে কিছু না থাকাই হাত দিয়েই এলোপাথাড়ি কিল ঘুসি মারলো।। লতা চিৎকার করে কান্নাকাটি করছে। ফরহাদের মা শায়লা বানু দরজায় চিৎকার করছে।

> বাবা দরজা খোঁল এভাবে ঝগড়া ঝামেলা করিসনা। লোকজন শুনলে খারাপ বলবে।
ফরহাদ জীবনে মায়ের কথার বাইরে কথা বলেনি কিন্তু আজকে ওর ধৈর্যের বাইরে। মনে হলো ওর জীবনটা এমন এলোমেলো হওয়ার জন্য কোথাও না কোথাও শায়লা বানু জড়িয়ে আছে। সন্তান খারাপ কিছু করলে বাবা মা তাকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করে কিন্তু ওর মা ওর জন্য কি করছে? শুধু উস্কানি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে দিয়েছে। অতিরিক্ত স্নেহ ওর জন্য ক্ষতি বয়ে এনেছে। ফরহাদ দুম করে দরজা খুলে মায়ের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাঁকিয়ে বলল,
> আমাকে দোজখের আগুনে পুড়িয়ে এখন শান্ত থাকতে বলছো?বদ বুড়ি একটা।

ফরহাদ কথাটা বলে আর অপেক্ষা করলো না। বেরিয়ে গেলো। শায়লা বানু হতভম্ব হয়ে গেলো ছেলের মুখে বাজে শব্দটা শুনে। ছেলের একি অর্ধপতন ঘটেছে যে নিজের প্রিয় মাকে বুড়ি বলছে। না এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। ফরহাদ উনার শেষ সম্বল। লতা ঘরের মধ্যে সুর তুলে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছে। পাশের ওর ছেলে বাবলু বসে আছে। মায়ের কান্নাভেজা মুখটা দেখে ওর কষ্ট হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাপের উপরে চাপা রাগ। ইচ্ছে করছে ছুরি দিয়ে লোকটাকে দুভাগ করে ফেলতে। কতো সাহস ওর মাকে মারধর করছে। বাবলু মায়ের গা ঘেঁষে বসলো। ওর ছোট্ট মনে প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। এই পাপের শেষ কোথায়?একটা মরলে দুটোর জন্ম নিচ্ছে।

ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে চুল চিরুনী করছে অরিন। আরাফাত ল‍্যাপটপ সামনে নিয়ে বসে আছে। দুদিন হচ্ছে শশুর বাড়িতে এসেছে বাড়ি যেতে দিচ্ছে না। শশুরের সঙ্গে বেশ ভাব জমেছে সেই সুবাদে পেয়েছে একগাদা কাজ। আরাফাত বিড়বিড় করে বলল,” কাজ আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে যেখানেই যায় ঠিক খুজেঁ নিবে। ভাগ্য করে শশুর বাড়ি পেয়েছি। কোথায় বসিয়ে বসিয়ে খাতির যত্ন করে খাওয়াবে।” অরিন আরাফাতের বিরক্তির কারণ বুঝতে পেরে চিরুনি রেখে বলল,
> আব্বুকে বলবো আপনাকে দিয়ে যেনো কাজ না করাই। মুখটা ওরকম করে রেখেছেন কেনো বেচারা ভ্রু কখনও আর সোজা হতে পারবে না।
আরাফাত ল‍্যাপটপে চোখ রেখেই বলল,

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৫

মাথা মোটা বলি কি আর এমনি এমনি। তোমার বাপ যৌতুক দেওয়ার ধান্দাবাজি করছে। এই কাজগুলো আমাকে দিয়ে করিয়ে দেখছে পারছি কিনা। অচিরেই একটা অফিসের দায়িত্ব ঝুলিয়ে দিবেন কাধে। যাইহোক তাকে বলে দিও আরাফাতের হাত আছে। পরের টাকার ধার ধারিনা। বউ ছেলেমেয়েকে খাওয়াতে কারো সাহায্য লাগবে না। আল্লাহ্ সহায় থাকলে কাজকর্ম যায় করবো চলে যাবে।
আরাফাত কথাগুলো বেশ ঝাঝালো ভাবেই বলল তবুও অরিনের ভালো লেগেছে। আরাফাত থাকতে ওর কখনও কোনো অসুবিধা হবে না।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৭