শেষ থেকে শুরু শেষ পর্ব

শেষ থেকে শুরু শেষ পর্ব
লাবণ্য ইয়াসমিন

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের এক নাম্বার গেটে দাঁড়িয়ে আছে হৈমন্তী। হৈমন্তী গেট থেকে চোখ ফিরিয়ে মেয়েটাকে দেখেলো নিলো। দূরে একটা আইসক্রিম হাতে জান্নাত দাঁড়িয়ে আছে।। মেয়েটা দেখতে মাশাল্লাহ্ বেশ সুন্দরী। দুরন্ত আর প্রচুর বাকপটুতার অধিকারী মেয়েটাকে হৈমন্তী খুব একটা কাছ ছাড়া করে না। সব সময় আগলে আগলে রাখে। উঠতি বয়স এই বয়সেই মেয়েরা যত রকম ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। মেয়েটার চঞ্চলতা দেখে হৈমন্তী মুগ্ধ হয়ে যায়।

নিজের বাল‍্যকালটা খুব মিস করে। কেনো যে নিজের মতো এমন একটা মা পেলো না আফসোস হয়। নিজের মতো জান্নাতকে ও কখনও কষ্ট অনুভব করতেই দিবে না। পৃথিবীর সব চাইতে ভালো মা হয়ে দেখিয়ে দিবে। ভুল করতে চাইলে বুঝিয়ে শুনিয়ে ফিরিয়ে আনবে। হৈমন্তীর ধ‍্যান ভাঙলো দূর থেকে কারো মুখে নিজের নাম শুনে। মূহুর্ত্তের মধ্যেই শরীর কেঁপে উঠলো। কেমন গা শীতল করা সেই অনুভূতি। হৃদয় আন্দোলিত হচ্ছে। হৈমন্তী চট করে সামনে তাঁকিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেই মুখটা দেখতে পেলো। আবির লাগেজ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মৃদু হাসি। লোকটা দ্রুতগতিতে সামনে এগিয়ে আসছে। হৈমন্তীর মনে হলো এইটুকু রাস্তা পার করতে এক বছর সময় নিয়ে ফেলেছে। আবির দ্রুত ওর ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে ওকে ঝাপটে ধরলো। হৈমন্তীর চোখে পানি তবে এটা দুঃখের নয় সুখের। আবির ওক বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

> প্রফেসর ম‍্যাম কেমন আছেন?
হৈমন্তী ওর পিঠে হাত রেখে মাথা নেড়ে বলল,
> দারুন। আপনি কেমন ছিলেন?
আবির ওকে ছাড়িয়ে দিতে নিজের বুকে হাত রেখে উত্তর দিলো,
> ভীষন বাজে ছিলাম। প্রফেসরকে রেখে ভালো থাকা খুব কষ্টের।
আবির হৈমন্তীর দিকে তাঁকিয়ে কথা বলছিল হঠাৎ জান্নাত দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
> মাম্মাকে দেখে আমাকে ভূলে গেছো তুমি?
আবির মেয়ে মেয়েকে আগলে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,

> তুমি ছাড়া কে আছে আমার যে তোমাকে ভূলে যাবো? তুমি আমার একমাত্র মাম্মা বুঝলে?
> সেতো বুঝলাম কিন্তু মামা কোথায়? ছোট মাম্মি আসেনি?
আবির পেছনে ফিরে তাঁকালো। দূরে আরাফাত একটা বাচ্চা মেয়েকে কোলে নিয়ে হাঁটছে। পাশে অরিন লাজুক হেসে হাত নাড়াচ্ছে। জান্নাত উত্তেজিত হয়ে লাফিয়ে উঠলো। আবির ওকে ছেড়ে দিয়ে হৈমন্তীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। হৈমন্তীর দৃষ্টি নিজের ভাইয়ের দিকে। আবির আলগোছে হৈমন্তীর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাস‍্যজ্বল চোখে সামনে তাঁকালো। হৈমন্তী একবার নিজের হাতটা দেখে ওষ্ঠে হাসি ফুঁটিয়ে মনে মনে বলল,
” অবশেষে সুখের দেখা পেলাম। জীবনের অর্ধেক সময় যতটা কষ্টে পার করেছি বাকীটা জীবন তাঁর অধিক পরিমাণ সুখের হবে। আর কোনো বাঁধা আসবে না। জীবন সরল রেখার মতো মশ্রিন সুখকর হবে। হৈমন্তীর ধ‍্যান ভাঙলো আবিরের ফিসফিস আওয়াজ শুনে,

> আমাকে দেখলেই তোমার লজ্জর পরিমাণ বেড়ে যায়? কৈই আগে তো এমন দেখিনি? হিটলারের মতো আমাকে ছুটিতে বেড়াতে। আমিও কি পাগল ছিলাম বাপবাহ। সেসব ভাবলে আমার হার্ট এটাট হওয়ার জোগাড় হয়ে যায়।
হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,
> ফালতু কথা বলবেন না। হার্ট এটাক কেনো হবে? ভুলভাল কথাবার্তা বলে বর্তমানটাকে নষ্ট করবেন না। মেয়ে বড় হচ্ছে।
> সেদিনের কথা মনে আছে তোমার? যখন জান্নাত কিডন‍্যাপ হলো। তুমি কলেজ থেকে ফিরে পাগলের মতো ভূল বুঝে আমাকে ফোন দিয়ে বকলে। জানো কতটা কষ্ট হয়েছিল? আমি খারাপ হতে পারি কিন্তু কখনও জান্নাত বা তোমার ক্ষতি করতে চাইনি।
> লজ্জা দিচ্ছেন কেনো। সেদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি জান্নাত নেই তখন পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আপনি বুঝি নিয়ে গেছেন।

কয়েক বছর আগে,
হৈমন্তী কলেজ থেকে ফিরে জান্নাতকে খুঁজতে থাকলো কিন্তু পেলো না। নির্জন বাড়িতে কাজের লোকজন বা আন্টি কেউ নেই। হৈমন্তী পাগলের মতো হন্তদন্ত হয়ে এদিক ওদিকে খোঁজ করে যখন পেলো না কেঁদে ফেলল। বারবার ভয় হচ্ছিলো মেয়েটাকে আবির নিয়ে গেলো নাতো? হঠাৎ রহমান আঙ্কেলের কথা শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখলো বাড়ির কাজের মেয়ে আর আন্টিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। রহমান সাহেব স্ত্রীর মুখ খুলতেই উনি বলে দিলেন মুখোশ পরা কিছু লোক এসেছিল ওরা জান্নাতকে তুলে নিয়ে গেছে আর হৈমন্তী কাছে কি একটা ফাইল আছে ওটা দিয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে বলেছে। সব শুনে হৈমন্তীর দিশেহারা অবস্থা। রাগে ক্ষোভে আবিরকে ফোন করলো। আবির তখন ভিসার ব‍্যপারে কথা বলছিল। হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার দেখে ফোন তুলবে না ভেবেও তুলল। ও হ‍্যালো বলার আগেই হৈমন্তী হুঙ্কার দিয়ে বলল,

> আমার মেয়ের কিছু হলে আপনাকে আমি খুন করবো। কি ক্ষতি করেছি আমরা আপনার? পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে আছেন। আমার মেয়েকে ফেরত চাই। আপনার ডকুমেন্ট আমি ফিরিয়ে দিব প্লিজ ওকে ফিরিয়ে দিন।
হৈমন্তী আগের কতগুলো তোড়ের সঙ্গে বললেও পরের কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলল। আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> জান্নাত কোথায়? হৈমী আমি ওকে আনতে কিডন‍্যাপ কেনো করবো? ওকে আনতে আমার সন্ত্রাসীর মতো খারাপ ব‍্যবহার করতে কেনো হবে? আমি আইনের সাহায্যে আনতে পারতাম। যাইহোক যারা নিয়ে গেছে ওরা নিশ্চয়ই ঠিকানা দিয়েছে ওটা আমাকে দাও। আর শোনো কোনো ফাইল কাউকে দিবে না।

হৈমন্তী তর্কাতর্কি ছাড়াই ঠিকানা আবিরকে দিয়ে নিজেও বেরিয়ে পড়লো। আবির ভ্রু কুচকে বিষয়টা নিয়ে ভাবলো তারপর বুঝতে পারলো কাহিনি কী। ও দ্রুত পুলিশকে ঘটনটা জানিয়ে দিয়ে জাবেদকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। ঘটনাস্থলে পৌছতে ওদের বেশ সময় লেগে গেলো। অন্ধকার রুম বাচ্চার কান্নার আওয়াজ হচ্ছে। আবির বাইরে জাবেদকে দাঁড় করিয়ে এসেছে। মেয়েটাকে টেবিলের উপরে বেঁধে রাখা হয়েছে। সারা রুমে আধার শুধু মেয়েটার মুখের উপরে আলো। এতেই ও ভয় পেয়ে চিৎকার করছে। আবির দ্রুতগতিতে মেয়েকে তুলে নিতে গেলো কিন্তু হলো না। কেউ অন্ধকার থেকে ওর পিঠে লাথি বসিয়ে দিলো। আবির পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিয়ে হুঙ্কার দিয়ে চিৎকার করে বলল,

> আম্মু তুমি এসব করছো তাইনা?তুমি সামান্য একটা ডকুমেন্টের জন্য ছোট্ট এই বাচ্চাটাকে কষ্ট দিচ্ছো কিন্তু কেনো? ওকে দিয়ে দাও প্লিজ।
আবিররের আওয়াজ প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসলো। কেউ উত্তর করলো না। আবির বেশ কিছুক্ষণ চিল্লাচিল্লি করে হাপিয়ে গেলো ঠিক তখনই ফারজানা হকের আওয়াজ আসলো,
> বাচ্চাটা তোমার নয় আবির। পরের বাচ্চার জন্য তোমার এতো মায়া হচ্ছে যে নিজের বাবা মাকে পযর্ন্ত ঠকিয়েছো?
> মানে?
> মানে খুব সহজ তুমি ইচ্ছে করে তোমার বাবাকে বোকা বানিয়েছো। হৈমন্তীর থেকে ওগুলো পাওয়া তোমার কাছে কোনো ব‍্যাপার ছিল না। তুমি ইচ্ছে করেইনি ঘুরিয়েছো। অনেক অপেক্ষা করেছি শেষপর্যন্ত তোমার বাবাকে বাধ্য হয়ে হত্যা করতে হলো। আমি জানতাম উনি না থাকলে তুমি এমনিতেই ভেঙে পড়বে। কৌশলে ওকে সরিয়ে ফেললাম।
আবির বিস্মিত হয়ে বলল,

> আম্মু তুমি না বলেছিলে আমাদের কথা ভেবে এমন করেছো?
> না বললে তোমাকে বোঝাতাম কিভাবে? যাইহোক পরের ছেলের জন্য আমি কেনো এসব করতে যাবো?
> লোকটা তোমার কে ছিল তুমি ভূলে গেলে?
> ভুলিনি মনে আছে। লোকটা আমাকে জীবনে কি দিয়েছে? শুধু নামমাত্র স্বামী ছিল। আমি বড়লোকের মেয়ে ছিলাম বিধায় ঠকিয়ে আমাকে বিয়ে করে নিলো। ঘরে গর্ভবতী স্ত্রী রেখে । তোমার কি মনে হয় আমি ওসব জানতাম না?সব জানতাম তাইতো কৌশলে তোমার মাকে সরিয়ে দিয়েছি। তোমাকে ওর থেকে কেড়ে নিয়ে এসেছি। লোকটা বুঝতেই পারেনি তুমি ওর নিজের সন্তান।তোমার মাকে মারতে চাইনি। তবুও কিছু করার ছিল না। গুম করতে হলো। তোমার বাবা জানলো তোমার মা অভিমান করে কোথাও হারিয়ে গেছে।

ফারহানা হকের কথা শুনে আবির ভ্রু কুচকে ফেলল। এই মহিলাকে এতদিন নিজের মা বলেছে ভেবেই ঘৃণা হচ্ছে। মানুষ এতটা নিচু কিভাবে হতে পারে। বাবাও যেমন ছিল তেমনি নিজের মতো আরেকজনকে জুটিয়ে নিয়েছিল।দোষ তার কম ছিল না। মাঝখানে আবির ফেঁসে গেছে। যা হয়ে গেছে তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। কিন্তু সামনে যা হচ্ছে আটকানো সম্ভব। কথাটা ভেবে আবির মলিন মুখে বলল,
> আমি তোমার বাড়ি থেকে চলে যাবো। বাচ্চাটাকে দিয়ে দাও। হৈমী ওকে ছাড়া বাঁচবে না।
ফারজানা হক হাসলেন। আবিরকে উনি ছাড়তে পারবেন না। এই ছেলেটা উনার সব পাপের সাক্ষী হয়ে যাবে। কথাটা ভেবে উনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

> তুমি যেখানে আছো সামনে এগিয়ে আসো। সামনে টেবিলের উপরে একটা কাগজ আছে ওটাতে সাইন দাও। আর হৈমন্তী এলেই ফাইনাল হবে।
আবির ভদ্রমহিলার কথামতো সামনে এগিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে পেপারটা হাতে নিলো। কিন্তু পড়তে পারলো না তার আগেই হৈমন্তী হাজির। ঝড়ের গতিতে ভেতরে এসে আবিরকে দেখে থমকে গিয়ে চিৎকার করে বলল,
> আপনি এনেছেন ওকে তাইনা? ওকে ছেড়ে দেন। আপনার পেপার আর ডকুমেন্ট।
হৈমন্তী সামনে হাত বাড়াতেই রুমটা আলোকিত হয়ে উঠলো।পাশে আগুন জ্বলছে। আবিরের সামনে রিভলবার ধরে রেখেছে ফারজানা হক। রোহান আর মেহুলও আছে। হৈমন্তী কিছু বোঝার আগেই আবির হুঙ্কার দিয়ে বলল,
> হৈমী দ্রুত ওগুলো আগুনে মধ্যে ফেলে দাও নয়তো ছিড়ে ফেলো। আমি কথা দিচ্ছি জান্নাতকে উদ্ধার করে ফেলবো। ওটা এদের কাছে দিলে ক্ষতি হয়ে যাবে। শেষবারের মতো বিশ্বাস করো প্লিজ।

হৈমন্তী কি করবে বুঝতে পারছে না। ওদিকে ফারজানা হক সমানে হুমকি দিচ্ছে। হৈমন্তী শেষমেশ পেপার গুলো পাশে জ্বলতে থাকা আগুনের মধ্যে ফেলে দিলো। আবির ফারজানা হক কে ধাক্কা দিয়ে জান্নাতের কাজে গিয়ে ওকে তুলে নিলো। কিন্তু সমস্যা হলো হৈমন্তীকে নিয়ে । ফারজানা হক রেগে গিয়েছেন হৈমন্তীর কাজে জন্য। উনার এতো পরিশ্রম এই মেয়েটা নষ্ট করে দিলো উনি মানতেপারছে না। শেষমেশ গুলি ছুড়লেন। আবির মেয়েটাকে পাশে রেখে ছুটে গিয়ে হৈমন্তীকে সরাতে গিয়ে গুলিটা ওর ডান বাহুতে গিয়ে লাগলো।

আবির ছুটে গিয়ে পড়লো ততক্ষণ পুলিশ হাজির। ফারজানা হককে ধরে ফেললেন। অরিন আর আরাফাত পুলিশের পেছনে পেছনে এসেছে। হৈমন্তী আবিরে মাথা কোলের উপরে নিয়ে নিলো। । গুলিটা ওর হাতের পা দিয়ে বেরিয়ে গেছে তবে মাথা দেওয়ালের সঙ্গে আড়ছে পড়ে থেতলে গেছে। রক্ত পড়ছে। হৈমন্তী আবিরের জন্য কষ্ট পাচ্ছে। লোকটা ওকে বাঁচাতে গিয়ে আহাত হলো যদি কিছু হয়ে যায়? আরাফাত দ্রুত আবিরকে হাসপাতালে নিলো। কিন্তু অবস্থা ততটা ভালো হলো না। হৈমন্তী নাওয়া খাওয়া ছেড়ে হাসপাতালে বসে থাকতে লাগলো। হাতের গুলিটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না কি মাথায় আঘাতের জন্য জ্ঞান ফিরছিল না। ডাক্তার আশা ছেড়ে দিলো।

শেষমেশ অরিন আর আরাফাত মিলে ওকে দেশের বাইরে নিয়ে গেলো। হৈমন্তী যেতে চেয়েছিল কিন্তু ওর যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। দেশেই থাকলো। নিজেকে বোঝালো। ডাবল খুনের কেসে ফারজানা হক আর মেহুলের ফাঁসির হুকুম হলো। । রোহানের জেল হলো। আবিরের দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চললো। হৈমন্তী ততদিনে মেয়েকে নিয়ে পরিবারেরর সঙ্গে থাকলো। ভালো একটা কলেজের প্রফেসর হিসেবে বেশ নামডাক অর্জন করেছে। আবির ধীরে ধীরে সুস্থ হলো। প্রথমে এলোমেলো বকতো। তারপর যখন ঠিক হলো হৈমন্তীর সামনে দাঁড়ানোর কথা ভাবলে লজ্জা পেতো।

তবে ফোনে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতো। আরাফাত আর অরিনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ওদের কোলজুড়ে ছোট্ট একটা পরি এসেছে। আবির ওদের সঙ্গেই থাকতো। অনেক জড়তা কাটিয়ে হৈমী নিজেই একদিন আবিরকে ফোন করেছিল। তারপর ফোনালাপ বাড়তে থাকলো। শেষমেশ এই দেশে ফেরা। মেয়েটা বড় হচ্ছে। হৈমন্তী জীবনে অবশেষে শান্তি ফিরলো। কোথাও কোনো জটিলতা নেই। ছেলেটাও ওকে মা বলেই ডাকে। চয়নিকা একদিন ছেলেকে সব ঘটনা খুঁলে বলেছিল। রনি বুঝেছে মায়ের কষ্ট। ফরহাদ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। মোটামুটি হৈমন্তীর জীবনটা সুখের বলা চলে। প্রথম জীবনে সুখের ছিল না তবে এখন তো সুখের। বয়স হয়েছে তাঁতে কি মনের কোনো বয়স হয়না। কিন্তু আবির যেমন ছিল তেমনি আছে। আগের থেকে বেশ প্রাণবন্ত।

হৈমন্তী আনমনে কথাগুলো ভাবছিল হঠাৎ আরাফাতের আওয়াজ শুনে চমকে উঠে মিষ্টি হেসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল,
> ভাইয়া কেমন আছো?
> আলহামদুলিল্লাহ্ বেশ ভালো। এখন থেকে আরও ভালো থাকবো। বাকিরা কোথায়?
> তাকিয়ে দেখো!
আরাফাত পেছনে তাকিয়ে দেখলো বাড়ির সবাই এসেছে। রাজীব,চয়নিকা, রনি, মাসুদ শুধু আসেনি ওর মা। উনার বয়স হয়েছে হাটতে চলতে পারেন না। বাড়িতে ফিরলে দেখা হবে।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ৩০

উন্মুক্ত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে আবির। ডান হাতটা হৈমন্তীর হাতের উপরে রাখা। আকাশে চাঁদ তারার মিলনমেলা। হৈমন্তী আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছে। কিছু অনুভূতি প্রকাশ করা যায়না অনুভব করতে হয়। আবির কোনো কিছু শুনতে চাইনা শুধু অনুভব করতে চাই। বাকি জিবন হাতে হাত ধরে পথ চলতে চাই। হৈমন্তী জীবনের সব বাঁধা কাটিয়ে উঠেছে। দুচোখ ভরা স্বপ্ন। সেখানে আবির ওর সঙ্গী। শেষ থেকে শুরু ও অনেক আগেই করে ফেলেছে। এখন শুধু সামনে এগোনোর দিন।

সমাপ্ত