শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৯

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৯
লাবণ্য ইয়াসমিন

গভীর রাত বাজে স্বপ্ন দেখে হুটকরে হৈমন্তীর ঘুম ভেঙে গেলো। শরীর কাঁপছে। বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে আছে জান্নাত। মেয়েটার ভারি নিশ্বাস হৈমন্তীর গলার সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছে। হৈমন্তী ভালো করে রুমটা পর্যবেক্ষণ করলো। আবির রুমে নেই। টেবিলের উপরে একটা ফাইল বাতাসে উড়ছে। হয়তো দরকারি কোনো কাগজপত্র হবে। হৈমন্তী সাবধানে উঠে আসলো। চুলগুলো বাঁধতে বাঁধতে চেয়ার টেনে টেবিলের সামনে বসে পড়লো। দরকারি ফাইলগুলো তাই ভাবলো এগুলো গুছিয়ে রাখতে হবে। আবির হয়তো তাড়াহুড়া করে চলে গেছে।

হৈমন্তী একে একে সব গুছিয়ে রাখতে গিয়ে ফাইলের ভেতর থেকে একটা পেপার খপ করে ওর পায়ের কাছে পড়ে গেলো। হৈমন্তী বিরক্তি নিয়ে পেপারটা রাখতে গিয়ে কৌতূহলী হয়ে পেপারটাতে চোখ রাখলো। সঙ্গে সঙ্গে হৈমন্তীর সারা শরীর বেঁয়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো। ও দ্রুতগতিতে বাকী ফাইলগুলোর পৃষ্ঠা একের পর এক উল্টাতে থাকলো। হৈমন্তীর চোখ থেকে পানি ঝরছে। বিশ্বাস অবিশ্বাসের খেলাই জীবনটা ওর আটকে গেছে। হৈমন্তী আর অপেক্ষা করলো না। তাড়াতাড়ি ফাইলগুলো নিয়ে জান্নাতকে বুকের সঙ্গে আগলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। খুব সাবধানে দরজা খুঁলে মেইন দরজা পার করে রাস্তায় গিয়ে উঠলো। আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। জোছনা উপছে পড়ছে। হৈমন্তীর হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই। এখান থেকে পালাতে হবে। চারপাশে সব মুখোশধারী লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কাকে বিশ্বাস করবে আর কাকে করবে না বুঝে উঠতে পারছে না। নির্জন রাস্তা লোকজন নেই। হৈমন্তীর আজ ভয় করছেনা। মেয়েকে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দূরে চলে যেতে হবে। এই শহর থেকে দূরে। মেয়েটার জন্য ওকে বাঁচতে হবে। শেষ থেকে শুরু করতে হবে। ছুটতে ছুটতে হঠাৎ একটা রিকশা দেখে হৈমন্তী থেমে গেলো। দ্রুতগতিতে লোকটার সামনে গিয়ে খুব অনুরোধ করে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

> খুব বিপদে পড়েছি আপনার ফোনটা একটু দিবেন ভাই? প্লিজ দিন আমি শুধু একটা কথায় বলবো।
গভীর রাতের এই অসহায় নারীর কন্দনরত প্রলাপে লোকটার দয়া হলো। উনি বিনা বাক্যে পকেট থেকে ফোনটা বের করে হৈমন্তীর সামনে ধরলেন। হৈমন্তী ফোন নিয়ে আর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত আরাফাতের নাম্বারে ডায়েল করলো।আজ সঙ্গে সঙ্গেই রিসিভ হলো। হৈমন্তী ফুপিয়ে উঠে বলল,
> ভাইয়া তুমি কোথায় আছো? আমি রাস্তায় বিপদে আছি। এখুনি আসো।
আরাফাত হাসপাতালের বারান্দায় বসে ছিল। মায়ের শরীর খারাপ তবে এখন মোটামুটি ভালো। তাই ও বাড়ির সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে বসে আছে। হঠাৎ হৈমন্তীর এমন কথা শুনে ও ঘাবড়ে গেলো। ভ্রু কুচকে বলল,
> তুই কোথায় আছিস?কি হয়েছে হৈমী? দ্রুত ঠিকানা বল আমি আসছি।
হৈমন্তী ঠিকানা বলে ফোন রাখতে গিয়ে বলল,
> ভাইয়া তুমি আসার সময় ফোন বন্ধ করে আসবে। তুমি আসলে আমি বিস্তারিত বলবো। দ্রুত আসো আমি অপেক্ষা করছি।

আরাফাত বোনের নির্দেশ অনুযায়ী ফোন বন্ধ করে পকেটে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। গাড়ি নিয়ে হৈমন্তীর কাছে যেতে ওর পনেরো মিনিট ও লাগলো না। হৈমন্তীর রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। আরাফাত আসা মাত্র হৈমন্তী গাড়িতে গিয়ে বসলো। মেয়েটা হাপাচ্ছে। আরাফাত এখনো বুঝতে পারছে না। হৈমন্তী গাড়িতে বসে চোখ বন্ধ করে বলল,
> ভাইয়া তুমি আমাকে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করবে? প্লিজ না করোনা। এমন জায়গাই পাঠিয়ে দাও যেখানে তুমি ছাড়া কেউ কখনও পৌঁছনোর সাহস পাবে না। এমনকি খোঁজ ও পাবে না।
> কি হয়েছে বলতো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। জান্নাত তো আবিরের কাছে ছিল তুই ওকে কোথায় পেলি?
> ভাইয়া অনেক কিছুই ঘটে গেছে। তুমি জানো না আমার সঙ্গে কি কি হয়েছে।
হৈমন্তীর ফরহাদের বিষয়ে সব খুঁলে বলল। এমনকী আজ আবিরের বাসা থেকে যে পালিয়ে এসেছে এটাও বলল। ফরহাদ বিস্মিত হয়ে বলল,

> আবির তো ভালো ছেলে ওখানে কি এমন বিপদ দেখলি বুঝলাম না। হৈমী আমি বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। বলবি?
> ভাইয়া আবিরকে দেখলে যেমন সোজাসাপ্টা ভালো মানুষ মনে হয় আসলেই উনি ওরকম না। উনার মুখোশের আড়ালে ভয়ঙ্কর একজন মানুষ লুকিয়ে আছে। তুমি জানো উনি কতটা ভয়ঙ্কর? আমেরিকা যাওয়ার প্রথম দিকে যেবার উনি আমাকে খারাপ কিছু লোকদের থেকে উদ্ধার করে তার আগের ঘটনা। উনার একটা ডকুমেন্ট অনিচ্ছাকৃতভাবে আমার হাতে এসে পড়ে। তখন আমার স্মৃতি এলোমেলো ছিল। এই ভালো তো এই খারাপ। তোমার সঙ্গে খেয়ে বের হয়েছিলাম। তুমি আমাকে রেস্টুরেন্টে বসিয়ে বাথরুমে গিয়েছিলে। তোমার খেয়াল নেই আমি বসে ছিলাম একা একা। হঠাৎ একটা পেনড্রাইভ আর একটা ফাইল আমার চোখে পড়ে। আমি আপনমনে ফাইলটা চেক করলাম। ওটা সাধারণ কোনো ফাইল ছিল না।

একটা ম‍্যাপ, কিছু নকশা আর গুরুত্বপূর্ণ একটা ফরমুলা ছিল। ভাইয়া ওই ফরমুলাটা কোনো সাধারণ ফরমুলা ছিল না। ওটা দিয়ে এক প্রকার কালো ধোয়ার সৃষ্টি করা যাবে। যেটা বোমার থেকেও খতরনাক। জনসমক্ষে যদি ওই ধোয়া একবার উন্মুক্ত করা হয় তবে লোকজন এক মিনিটের মধ্যেই মারা যাবে। মৃত্যুর কারণ কারো বাবাও ধরতে পারবে না। আমি বিস্তারিত পড়েছিলাম তারপর খুব কৌশলে সেটা নিজের কাছে লুকিয়ে টেবিল পরিবর্তন করে ফেলি। তুমি ফিরলে তখন না খেয়েই বেরিয়ে আসি। তুমি জানো সেই ফরমুলাটা কার? ওটা আবিরের ছিল। ওদের মিটিং ছিল সেখানে জানিনা কিভাবে এতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভূল করে ফেলে গিয়েছিল কিন্তু তুমি জানো ওই ফাইল যে আমার কাছে আছে এটা ওরা রেস্টুরেন্টের সিসি ক‍্যামেরা থেকেই বুঝে গিয়েছিল। সেদিন থেকে ও আমার পিছে আঠার মতো লেগে আছে। ডকুমেন্ট নিয়ে আসার পরেই কিন্তু আমার স্মৃতি পুরোপুরি ভাবে চলে যায়।

লোকটা আমার সব তথ্য সংগ্রহ করে খোঁজখবর নিয়ে অপেক্ষা করেছিল কবে আমার স্মৃতি ফিরবে আর আমি বলবো ওগুলো কোথায় রেখেছি। তোমার মনে হচ্ছে না ওর স্মার্ট বোনটা হঠাৎ করেই কিভাবে আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আসলো? ওটা ওর প্লানিং ছিল। আমাকে চোখে চোখে রাখার। কারণ ওর দেশে ফেরার তাগিদ ছিল। এই জন‍্যই অরিন বারবার আমার কাছে ফাইলের খোঁজ করতো আমি বুঝতাম না। এখন সিউর হলাম। দেশে ফিরলাম সেসব তো তুমি জানো? অরিন সব সময় বলতো দেশে ফেরার কথা। কারণ ডাক্তার বলেছিল দেশে ফিরলে আমার স্মৃতি ফেরার একটা সুযোগ আছে। হাসপাতালে ও এমন পাগলামি করতো কেনো জানো? যাতে সুযোগ বুঝে ফাইলের কথা জানতে পারে। কাছছাড়া হতো না। আরও আছে ভাইয়া। দ্বিতীয়বার যখন আমি আমেরিকা ফিরে গেলাম তখন জান্নাতকে পাওয়ার জন্য আমি আবিরের সাহায্যে নিয়েছিলাম। সেখানে আমার উপরে হামলা হয়েছিল ওটাও কিন্তু এই একই কারণে হয়েছে।

আমাকে মারতো না ভাইয়া ওরা ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিল। আমি পাগলের মতো ভূল করে পালিয়ে গেলাম।। কিন্তু ফল কি হলো? মেহুল সব খবরাখবর আবিরকে ঠিকই পৌঁছে দিতো। কিন্তু আমার কপাল ভালো ছিল আবিরের বাবা অসুস্থ হলো আবির সেটা নিয়ে বিজি হয়ে গেলো। আমার মাথা থেকে ফাইল আর ডকুমেন্ট ততদিনে বেরিয়ে গেছে খেয়াল ছিল না। দেশে ফিরলাম। আবির আবারও আমার পেছনে পড়ে গেলো।

উপর থেকে আমাকে পাওয়ার নাটক আর ভেতরে ভেতরে আমার ক্ষতি চাওয়া। বিয়ে পযর্ন্ত করে নিলো জোরজবরদস্তি করে। আমি কখনও ওকে সন্দেহ করিনি। ভাবতাম ও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। ওর বাবার মৃত্যুতে আমি ওর জন্য কষ্ট পাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম ওকে সুযোগ দিবো সংসার করবো। ওর জন্য মনের মধ্যে একটা জায়গা তৈরী হলো। কিন্তু আজকে রাতে সব শেষ। তুমি জানো এই পেপারে কি কি আছে? জান্নাতের সম্পত্তির দলিল। মেয়েটার মা একমাত্র সন্তান ছিল বিধায় ওর বাবার কোটি কোটি সম্পত্তির মালিক এই ছোট্ট মেয়েটা। আবির সবটা জেনে ওর প্রতি এমন মমতা দেখাই। আমাকে দিয়ে নিজে কৌশলে মেয়েটার বাবার পরিচয় তৈরী করে নিয়েছে। আরও আছে প্রতিবার আমার উপরে আক্রমণ হয় সেসবের ছবি। সবগুলো তারিখ দিন উল্লেখ করে লেখা আছে। প্রশ্ন করো ভাইয়া প্রশ্ন করো। আরও কিছু জানার থাকলে বলো?

হৈমন্তী একদমে কথাগুলো বলে থামলো। হাত পা থরথর করে কাঁপছে চোখে মুক্ত দানার মতো পানি চিকচিক করছে।আরাফাতের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। আবিরের মতো ছেলে এসব করতে পারে ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। আবির কিভাবে পারে এমন করতে?তাহলে কি অরিন ও এমন? অজানা আতঙ্কে বুক কাপছে।আরাফাত ঢোক গিলে বলল,
> অরিন কি আবিরের সঙ্গে জড়িত?
> জানিনা ভাইয়া। তবে মনে হয়না। আবিরের হাতের পুতুল ছিল অরিন। শুধু ভাইয়ের কথামতো চলেছে।
> রবিনের ঘটনা?
> ওটা সত্যিই ছিল। আবির নিজের বোনকে বাঁচিয়েছে। সব কিছু নিজের স্বার্থের জন‍্যই করেছে।
> ওর বাবার খুন?
> ভাইয়া ওদের ঘরেই ওদের শত্রু লুকিয়ে আছে। বাইরের কেউ নেই। বাইরের কেউ থাকলে আবির ধরে ফেলতো। তুমি প্রশ্ন করো না আমি আর পারছি না।

সব শুনে আরাফাত রাগে ফুলছে। আবির ওর বোনের সঙ্গে এমন জঘন্য কাজ কিভাবে করলো? আজকাল মানুষ চেষ্টা বড়ই কঠিন কাজ। হৈমন্তী ভাইকে বলে দিলো শহর থেকে দূরে ওকে রেখে আসতে। আর ওকে এখানে স্বাভাবিক থাকতে। হৈমন্তীর খোঁজ করলে বলে দিতে ও আবারও আমেরিকা ফিরে গেছে। আরাফাত বোনের কথামতো মফস্বলের একটা গ্রামে হৈমন্তীকে রেখে ফিরে আসলো। আমেনা বেগমের শরীর আগের তুলনায় ভালো। হাসপাতালে ফিরতে ফিরতে ও সকাল দশটা বেজে গেলো। আমেনা বেগম হৈমন্তীর জন্য উতলা হচ্ছে। আরাফাত এটা ওটা বলে বুঝিয়ে নিলো। সামনে কি অপেক্ষা করছে আল্লাহ্ ভালো জানে।

সারারাত ল‍্যাপটপ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে ভোরবেলায় আবিরের চোখ লেগে এসেছিল। বারবার শুধু একজনের উপরেই সন্দেহ হচ্ছে। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব বুঝতে পারছে না। স্ত্রী হয়ে কিভাবে নিজের স্বামীকে মারতে পারে? খুব জটিল বিষয়।আবির মানতে পারছে না। ঘুম ভেঙে তাকিয়ে দেখলো অফিস রুমেই চেয়ারে হালান দিয়ে শুয়ে আছে। আবির আর অপেক্ষা করলো না। এখুনি লোকজন চলে আসবে। তাই দ্রুত সব ঠিকঠাক করে রুমে ফিরে আসলো। কিন্তু সেখানে হৈমন্তী বা জান্নাত কেউ নেই। ও ছোট করে হৈমন্তীকে ডাকলো উত্তর পেলো না। দ্রুত বাইরে গিয়ে দারোয়ানকে জিঞ্জাসা করলো ওরাও বলতে পারলো না। সিসি ক‍্যামেরা রাতেই বন্ধ করা হয়েছিল আর অন করা হয়নি। নিজের বুদ্ধির উপরে নিজেই বিরক্ত হচ্ছে আবির। রুমে ফেরার সময় অরিনকে ফোন করে জেনে নিলো হৈমন্তী বাড়িতে যায়নি। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়তেই ও দৌড়ে রুমে গিয়ে ফাইল চেক করে দেখলো আসল ফাইলগুলো নেই। আবির পাগলের মতো খোঁজ করলো তারপর কপাল চাপড়ে বসে পড়লো। এতো দিনের সব পরিশ্রম ব‍্যর্থ। মেয়েটার হাতে সব পড়ে গেছে। আবির দ্রুত সেক্রেটারি জাবেদকে ফোন দিলো। জাবেদ ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,

> শুভ সকাল স‍্যার। কিছু লাগবে স‍্যার?
> ওর হাতে ফাইলগুলো পড়ে গেছে জাবেদ। মেয়েটা পালিয়ে গেছে। তুমি এখুনি খোঁজ লাগাও। টেনশন হচ্ছে। স্ত্রী লোকের বুদ্ধি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তোমার ধারণা নেই। আমি ওর মনের ভেতরে ঢোকার আগেই বেরিয়ে গেছি জাবেদ। ওকে যেভাবেই হোক আমার চাই।
আবির মুখ কঠিন করে শেষের কথাগুল বলল। মেয়েটা কোথায় যেতে পারে? আরাফাতের কাছে? কথাটা ভেবে ও আরাফাতকে ফোন লাগালো। আরাফাত যেনো ওর ফোনেরি অপেক্ষা করছিল। ফোন রিসিভ করেই বলল,
> তোমার সঙ্গে হৈমন্তী কিছু হয়েছে?

আবির ঢোক গিলে বলল,
> কি হবে ভাইয়া?
> জান্নাতকে নিয়ে ও আমেরিকা ফিরে গেলো। বলল এখানে আর এক মূহুর্তও থাকবে না। কি একটা ঝামেলা বলোতো। কাউকে কিছু না বলে চলে গেলো।টিকেট কাটা ছিল বলল আজকেই ফিরবে।।
আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> থাপ্পড় দিতে পারতেন। আপনাদের সাহস পেয়েই মেয়েটার এমন স্বভাব হয়েছে। যেতে চেয়েছে বলে যেতে দিবেন? একবার আমাকে বলতেন। জানেন গতকাল ফরহাদ কি করছে?
আবির ক্ষোভে ফেঁটে পড়ছে। আরাফাতের রাগ হচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করছে না। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে উত্তর দিচ্ছে। আবির ফোন রেখে চোখ বন্ধ করলো। মেয়েটার বড্ড বেশি সাহস হয়েছে। সব সময় ওকে লাটিমের মতো পিছু পিছু ঘুরিয়েছে। এবার ধরতে পারলে জনমের মতো ত‍্যাড়ামি ঘুচিয়ে দিবে। আবির মুঠো শক্তি করে টেবিলে বাড়ি দিলো। জাবেদ এসেছে তবে কোনো খোঁজ নিয়ে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলল,

> ম‍্যাডাম কখন বেরিয়ে গেছে অফিসের কেউ জানেনা। ফাইলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আপনার ঠিক হয়নি সেগুলো খোলা জায়গাই রেখে যাওয়া।
> খেয়াল ছিল না। সেবার আমার ভূলেই সেই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট গুলো হারিয়ে ফেলেছি। তুমি জানো ওগুলোর মূল্য কতো? ভাবতেও পারবে না। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ওই মেয়ের জায়গাই অন‍্য কেউ হলে এতোটা টাইম আমি নিতাম না। কি করতাম নিজেও জানিনা। জাবেদ আজকের মধ্যেই দারোয়ান চেঞ্জ করো। ওরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পাহারা দিচ্ছে আমার অফিস।
আবির জাবেদকে একগাদা ঝাড়ি দিয়েও শান্তি পেলো না। সব কিছু ভেঙে ফেলতে মন চাইছে। কি করবে বুঝতেই পারছে না। এমন সময় ফোন বেঁজে উঠলো। আবির তাঁকিয়ে দেখলো মেহুল ফোন করেছে। আবির অনিচ্ছা শর্তেও রিসিভ করে বলল,

> তুই বেইমানি করেছিস আমার সঙ্গে। আমি যেতে পারছিলাম না তাই ওকে চোখে চোখে রাখতে বলেছিলাম। কৌশলে দেশে ফিরিয়ে এনেছিস ওটা পযর্ন্ত ঠিক ছিল কিন্তু তারপর কি করলি? আমার নামে আজেবাজে কথা ওকে শুনিয়ে দিলি। মেজাজ খারাপ হচ্ছে তোর উপরে। ফোন করবি না একদম।
মেহুল কেঁদে ফেলল। আবিরের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ও কতকিছু করেছে তার ঠিক নেই। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত খুনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। হৈমন্তীর পেছনে পেছনে গোয়েন্দার মতো লেগে ছিল। সব শেষ হয়ে গেলো। কিন্তু ও তো ছাড়বে না আবিরকে। তাই কাঁদতে কাঁদতে বলল,
> আমার সঙ্গে এমন করতে পারো না তুমি। শুধু হৈমন্তী আর হৈমন্তী করো কেনো? ডিভোর্সী একটা মেয়ে। কি আছে ওর মধ্যে যেটা আমার নেই?

আবিরের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এই মেয়েটার উপরে ও আগেই বিরক্ত ছিল। হৈমন্তীকে ভয় দেখাতে গিয়ে ওকে প্রায় মেরেই ফেলছিল। মারিয়াম আন্টিকে পযর্ন্ত খুন করেছে। আবির বিরক্তি নিয়ে বলল,
> তোর মধ্যে আছেটা কি যেটা বলবো? সেবার মারিয়াম আন্টিকে মেরে ফেললি। হৈমন্তীকে ভয় দেখাতে বলেছিলাম কি করলি? ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে টর্চার করলি। ভাগ্য ভালো মেয়েটা পালিয়ে গেলো।
> খুনটা অনাকাঙ্খিতভাবে হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো ওদের সবাইকে মারলে খুশি হবে। তাছাড়া আমি কিন্তু পরবর্তীকালে ওর কলিগ হয়ে তোমাকে সব খবর দিয়েছি। বিনিময়ে কি পেয়েছি?
> তোকে এসব করতে আমি বাধ্য করিনি। তুই নিজে করেছিস। তাছাড়া প্রতিমাসে যে মোটা অংকের টাকা তোর একাউন্টে ঢুকতো তারবেলা? শোন বিরক্ত করিস না। ফোন রাখ।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৮

আবির খট করে ফোন কেটে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। বাড়িতে ফিরতে হবে। ওর বাবার খুনি এখনো বাড়িতেই আছে। তাকে প্রতিনিয়ত বুঝিয়ে দিবে জীবন্ত লাশ কাকে বলে। হৈমন্তীকে ঠিক পেয়ে যাবে আজ অথবা কাল।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ৩০