শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৫

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৫
লাবণ্য ইয়াসমিন

হাসপাতালে এসে করুণ এক দৃশ্য হৈমন্তীর কোমল হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে ফেলল। নিয়তি এতো নিঠুর জানা ছিল না। কয়েকদিনের সদ‍্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাটাকে রেখে বাবা মা দুজনকেই মৃত্যুর দেশে পাড়ি দিয়েছে। বাচ্চাটার চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। মারিয়াম আন্টির দূর সম্পর্কের কোন এক বোনের মেয়ে আর জামাই সড়ক দুর্ঘটনাতে মারা গেছে। মেয়েটার চারকূলে মারিয়াম বানু ছাড়া কেউ ছিল না। ছোটবেলাতে মা মারা গেছে,বাবা থেকেও নেই। মারিয়াম বানু মেয়েটাকে নিজের কাছে রেখে লালন পালন করেছেন ।

পরে মেয়েটা থাইল্যান্ডের এক ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করে। ছেলেটার পরিবার সম্পর্কে উনারা কিছুই জানেন না। মারিয়াম বানু মাতৃস্নেহে মেয়েটিকে পালন করেছেন তার এমন করুন মৃত্যুতে উনি একদম ভেঙে পড়লেন। কান্নাকাটি করছেন। হৈমন্তী কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছে না। পুলিশ কেস হয়েছে যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনাতে মারা গেছে তাই। হাসপাতালে দুদিন ধরে লাশ পড়ে আছে মারিয়াম বানু জানতেন না। আজকে উনাকে একজন ফোন করে বললেন হাসপাতালে আসতে হবে একজন রোগী আছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পযর্ন্ত এসে গেছে। কয়েকজনের সহযোগিতাই লাশ দাফনের ব‍্যবস্থা করা হলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাচ্চাটাকে নিয়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বাচ্চার সব দায়িত্ব এখন মারিয়াম বানুর উপরে। কিন্তু উনি তো মুরব্বি মানুষ। আজ আছেন তো কাল নেই।তাছাড়া বাচ্চাটাকে লালন পালন করতে হলে উপযুক্ত মানুষের প্রয়োজন। হৈমন্তীর ভীষণ মন খারাপ হলো বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে। এতো কান্নাকাটি করছিল দেখে হৈমি খুব যত্ন নিয়ে নিজের কোলে তুলে নিলো। বাচ্চাটাকে দেখতে বিদেশীদের মতো মনে হলেও চুলগুলো কালো একদম মায়ের মতো। হৈমন্তী বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করতেই শান্ত হয়ে গেলো। ওর মাতৃহৃদয় আহাজারি করে উঠলো। নিজের বাচ্চার কথাগুলো মনে হলো। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। হৈমন্তীর মনে হলো বাচ্চাটা ওর দরকার। একাকিত্বের সঙ্গী হিসেবে এই বাচ্চাকে ওর চাই। হৈমন্তী সাহস করে মারিয়াম আন্টিকে বলল,

> আন্টি বাচ্চাটাকে আমি লালন পালনের দায়িত্ব নিতে চাই তাহলে কি আপনি দিবেন?কোনো অসুবিধা হবে না। ওকে আগলে রাখবো প্রমিজ।
হৈমন্তীর কথাগুলো শুনে মারিয়াম বানু অনেক ভাবলেন। বাচ্চা নিবো বললেই তো আর যাকে তাকে বাচ্চার দায়িত্ব দেওেয়া যায়না। তাছাড়া এখানকার একটা নিয়ম আছে। হৈমন্তী নিজের স্বামী বা পরিবারের লোকজন সম্পর্কে কিছু বলেনি। ওকে দেখলেও মনে হয়না ও বিবাহিত। মারিয়াম বানু বাঙ্গালী। উনি জানেন এটা নিয়ে পরে ঝামেলা হতে পারে তাই ভেবে চিন্তে বললেন,
> তোমাকে দিতে অসুবিধা ছিল না কিন্তু তুমি তো বিবাহিত নও। অবিবাহিত একটা মেয়েকে আমি এই বাচ্চার দায়িত্ব দিতে পারিনা। ওকে আমি এতিমখানাই দিয়ে দিবো।
হৈমন্তীর হঠাৎ আবিরের মুখটা মনে পড়ে গেলো। ওতো বিবাহিত। আর সেই বজ্জাত লোকটা ওর বর। কথাটা ভেবেই ও চট করে বলে ফেলল,

> আন্টি আমি বিবাহিত। আমার স্বামী আছে। উনি বাংলাদেশের আছেন।
ভদ্রমহিলার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। উনি চিন্তাই ছিলেন বাচ্চাটাকে নিয়ে। হৈমন্তীর কথায় উনি সন্তুষ্ট হয়ে বললেন,
> তোমার স্বামীর অনুমতি পত্র,সঙ্গে বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার আর তোমাদের দুজনের পক্ষ থেকে একটা পেপার কোর্টে জমা দিলেই হবে।

মারিয়াম আন্টির কথায় থতমত খেয়ে গেলো হৈমন্তী। ভেবেছিল শুধু বিবাহিত জানলেই বাচ্চা দিয়ে দিবে কিন্তু না এখানে তো রীতিমতো যুদ্ধ করতে হবে। তাছাড়া বাচ্চার বাবা মা মারা যাবার পর বাচ্চার দায়িত্ব একটা এতিমখানার উপরে ন‍্যস্ত করা হয়েছিল। ওখান থেকে নিতে হলে প্রপার কাগজপত্র লাগবে। এগুলো ছাড়া বাচ্চা কিছুতেই দিবে না। কি একটা বিপদ। হৈমন্তী তো আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে বাচ্চাটাকে ওর নিতেই হবে। যেকোনো উপায়ে। দরকার হলে বজ্জাত আবিরের সঙ্গে ও কথা বলবে। একটু কথা বলাই যদি বাচ্চাটা ওর হয়ে যায় তাহলে দোষটা কোথায়? হৈমন্তী কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই একজন এসে ওর কোল থেকে বাচ্চাটা নিয়ে গেলো। হৈমন্তী হতাশ হয়ে রুমে ফিরে আসলো। মন মেজাজ হঠাৎ খারাপ হচ্ছে। আবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আগামীকালের মধ্যেই ওগুলো ওর চাই। কথাগুলো ভেবে ও আবিরের নাম্বারটা ফোনে তুলে নিলো। ফোন দিয়ে কয়েকবার কাটাকাটি করলো। মনের মধ্যে লজ্জা নাকি জড়তা কাজ করছে বুঝতে পারছে না।

হৈমন্তী এবার মনে মনে সাহস সঞ্জয় করে ফোন দিয়েই ফেলল। দুবারের মাথায় ফোন রিসিভ হলো। হেমন্তী কি দিয়ে শুরু করবে বুঝর পারল না। চুপচাপ থাকলো। ওপাশ থেকে কয়েকবার হ‍্যালো হ‍্যালো করে চুপচাপ হয়ে গেলো। দু প্রান্তে দুজন মানুষের নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। আবির এবার গলা পরিস্কার করে বলল,
> এই অধমকে তাহলে এতদিনে মনে পড়েছে? কি সৌভাগ্য আমার। বরকে হঠাৎ মনে পড়লো কারণ?
হৈমন্তী চোখমুখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে বলল,
> আমার বাচ্চা চাই। চাই মানে এখুনি চাই। আপনি ব‍্যবস্থা করে দিবেন যেভাবেই হোক।
হৈমন্তীর এমন কথাবার্তা শুনে ও টাস্কি খেয়ে গেলো। মেয়ের মাথা কি গেছে। পাগল হয়ে গেছে।। আবির ঢোক গিলে ফিসফিস করে বলল,

> মাথা ঠিক আছে হৈমি?বাচ্চা নিতে চাইছো আমার অসুবিধা নেই কিন্তু তুমি তো দূরে আছো। আমার এখানে তোমাকেই আসতে হবে আমার ভির্সার মেয়াদ শেষ। সময় লাগবে যেতে।
আবিরের কথায় ভ্র কুচকে ফেলল হৈমন্তী। লোকটা ক বলতেই কোলকাতা চিনে গেলো? ওর নিজের উপরেই বিরক্ত লাগছে কি দরকার ছিল বিস্তারিত না বলে অর্ধেক কথা বলার। হৈমন্তী ধমক দিয়ে বলল,
> আপনি সত্যিই পাজি। পুরোপুরি না শুনেই মন্তব্য করছেনা আগে শুনবেন তো।
হৈমন্তীর ধমক শুনে আবির নিরাশ হলো। এতক্ষণ ও অফিসে ছিল। চেয়ারে বসে টেবিলের উপরে পা তুলে আয়েশি ভঙ্গিতে কফির কাপে মুখ ডুবিয়ে হৈমন্তীর কথা ভাবছিল। সেই সময় হৈমন্তীর ফোন আসলো। আমেরিকার নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে ফেলেছিল। পরে হৈমন্তীর নিশ্বাসের শব্দ শুনে শিউর হলো এটা হৈমন্তী। আবির একগাদা বিস্ময় নিয়ে ফোন রিসিভ করেছিল। হৈমন্তীর পক্ষ থেকে খুব দরকার ছাড়া ফোন আসবে না ওর জানা ছিল। তাছাড়া মেয়েটা যেখানে নিজের পরিবারের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতে চাইছে না সেখানে ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার তো প্রশ্নই আসে না। হৈমন্তীর কথাই ও ধ‍্যান ভাঙলো,

> মিস্টার আবির এহসান খুব দরকার বিধায় ফোন করেছি। আমি একটা বাচ্চা দত্তক নিতে চলেছি। আপনাকে ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। আশাকরি আপনি আমাকে সাহায্য করবেন?
আবিরের মুখটা এবার থমথমে হয়ে গেলো বিড়বিড় করে বলল,” কপালে এই ছিল। কোথায় নিজেদের বাচ্চা হবে সেই পরিকল্পনা করবো তানা। আবিরের কথা হৈমন্তীর কান পযর্ন্ত সবটা পৌচ্ছালো না। ও আবারও আগের কথাগুলো রিপিট করলো। আবির কিছু ভেবে দাঁত বের করে হেসে বলল,
> শর্ত মানলে নিশ্চয়ই সাহায্য করবো। তোমার বাচ্চা মানে তো আমারও বাচ্চা। বলো রাজি?
হৈমন্তী বুঝতে পারলো না শর্তে রাজি হবে কিনা। লোকটা যদি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে তখন? কিন্তু না মানলে তো ঝামেলা হয়ে যাবে তাই বিড়বিড় করে বলল,
> আচ্ছা রাজি বলুন কি আপনার মহান শর্ত?
আবির পা নাচিয়ে বলল,

> বাচ্চার বাবার নামটা কিন্তু আমার হওয়া চাই সেই সঙ্গে বাচ্চাকে আমার ছবি দিনে পাঁচবার নিয়ম করে দেখিয়ে বলতে হবে,”বাবু এইটা তোমার বাবা”। আর এক ছবি বারবার দেখালে কিন্তু চলবে না। প্রতিদিনকার ছবি প্রতিদিন। এক ছবি বারবার দেখালে বেচারী বাবাকে চিনতে পারবে না। ওসব হবে না।
আবিরের কথা শুনে হৈমন্তীর চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। এই লোকের মাথায় সত্যি সমস্যা আছে। ওর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। এইটুকু একটা বাচ্চা তাকে ওর ছবি দেখাতে হবে।ও কি বুঝতে পারবে? ছেলেটার মাথায় কি চলছে আল্লাহ্ ভালো জানে।হৈমন্তি কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিঞ্জাসা করলো,
> এতে কি হবে শুনি? এইটুকু একটা বাচ্চা শুধু ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে চেয়ে থাকে
> অনেক কিছুই হবে। ছোট থেকেই বাবাকে চিনে যাবে। তোমাকে বিশ্বাস নেই বাচ্চাকে ছোট থেকেই শিখিয়ে দিবে বাবু তুমি অনাথ। তোমার বাবা মারা গেছে। শোনো জীবিত অবস্থায় মৃতের মতো থাকতে পারবো না। শর্ত মানতে পারলে বলো এখুনি ব‍্যবস্থা করি।

হৈমন্তী উপাই না পেয়ে রাজি হলো। হৈমন্তী আবিরের সঙ্গে মারিয়াম আন্টির যোগাযোগ করিয়ে দিলো। ভদ্রমহিলা ওকে সব বুঝিয়ে দিলো। আবির তো মহা খুশী এমন একটা দিন আসবে কখনও ভাবেনি। বিষয়টা মনের মধ্যে চেপে রাখতে না পেরে সেক্রেটারি জাবেদকে ডেকে নিলো। জাবেদ ফাইল নিয়ে ঝামেলায় ছিল। হঠাৎ বসের ডাক শুনে দৌড়ে এসেছে। আবির দাঁত বের করে অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,
> জাবেদ অফিসে মিষ্টি বিলানোর ব‍্যবস্থা করো। বাবা হলাম বুঝলে?

জাবেদ সারাদিনের কাজকর্ম নিয়ে এমনিতেই টেনশনে ছিল তারপর আবার বসের এমন উদ্ভুট কথাবার্তা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো। স‍্যার বিবাহিত এতে সন্দেহ নেই তাই বলে বাবা কেমনে কি? দিনদিন বসের ব‍্যবহার জানি কেমন হয়ে যাচ্ছে। পাগল টাগল হয়ে গেলে মুশকিল। এমনিতেই বড় সাহেব ওকে ভরসা করে ছেলের সেক্রেটারি পদে নিয়োগ দিয়েছিল। ওকে এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবির গম্ভীর কন্ঠে বলল,
> আমাকে বোঝার সাধ‍্য তোমার নেই জাবেদ। তোমার ছোট মাথায় এতোসব ধরবে না। বাচ্চাটা সত্যিই আমার। কৌতূহল ছেড়ে সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানোর ব‍্যবস্থা করো। তবে বাচ্চার বিষয়টা কিন্তু গোপনী থাকা চাই। বুঝলে?
জাবেদ মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। এতো বোঝাবুঝির কিছু নেই। বসের মাথার তার ছিড়ে গেছে এটা অজানা নেই ওর।

রেললাইনের পাশে বসে আছে ফরহাদ। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি পরনে মলিন পোশাক। দুদিন আগে কোম্পানি থেকে ওকে বের করে দেওয়া হয়েছে। মায়ের সামান্য খাবারের দোকানের উপরে নির্ভর করে চলতে হচ্ছে। অভাব ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। হাতে একদম টাকা পয়সা নেই। এর মধ্যে ভয়ানক সিগারেটের নেশা ওকে পাগল করে দিচ্ছে। কাছে হাজার খানেক টাকা ছিল জুয়াড়ীদের খপ্পরে পড়ে সব শেষ। কি করবে কি হবে এই চিন্তাই মাথা পাগল হয়ে যাচ্ছে। পড়াশুনা বিদ‍্যা বুদ্ধি কিছুই কাজে আসছে না। পাপের শাস্তি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। হৈমন্তীর কথা খুব মনে পড়ছে। মেয়েটা ওকে ঘৃণা করে। ফরহাদ বুঝেছে ওদের বাচ্চা মারা যায়নি তবুও মেয়েটা এভাবে বলে দিলো।

মনে মনে হৈমন্তীর উপরে চাপা অভিমান হচ্ছে। কেমন মা সে যে নিজের জীবিত সন্তানের কথা মৃত বলে স্বীকার করে? যদি নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত হতো ওই মেয়েকে ও ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে ফিরিয়ে আনতো। মেয়ে মানুষের এতো জিদ কিসের? মেয়েরা হবে কোমল। তরল পদার্থের মতো। যেই পাত্রে রাখা হবে সেই পাত্রের আকার ধারণ করবে। কথাটা ভেবে ফরহাদ ভ্রু কুচকে ফেলল। না তরল পদার্থের মতো হতে হবে না। একটু নমনীয় হলেই হবে। লতার সঙ্গে ওর তেমন কথাবার্তা হয়না। লতার জন্য ঘরে ফিরতে ওর বিরক্তি লাগে। লতার কথা মনে হতেই যন্ত্রণায় হৃদয় ভেঙে যায়।বেহায়া বেলাজ মেয়ে একটা।। সব সময় আয়নায় ধরে লিপস্টিক নিয়ে বসে থাকে।

বাড়িতে এই অভাব অভিযোগ চলছে তবুও তার মেকাপের কোনো ঘাটতি হচ্ছে না। ওকে কিছু বলা মানে ঘরে অশান্তি সৃষ্টি করা। ঘরে একটা বাচ্চা আছে সেদিকে লতার কোনো নজর নেই। বাচ্চাটা নিজের মতোই বড় হচ্ছে। কোথা থেকে সে পাহাড় সমান গালি শিখেছে। এইটুকু বাচ্চার মুখের গালি শুনলে চোখ কোটরে থাকতে চাইনা। ফরহাদ ঘৃণাভরে সেগুলো লক্ষ্য করে আর ভাবে মায়ের মতোই হয়েছে। কিন্তু ওতো এমনটা চাইনি। লতাকে নিয়ে সুখের স্বপ্ন দেখেছিল। মাঝখান থেকে এসব এলোমেলো হয়ে গেলো। কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। ফরহাদ মুখটা কঠিন করে ভাবলো আর এভাবে বসে থাকা যাবে না। একটা উপাই খুজতে হবে। ধুকে ধুকে মরার চাইতে একবারে মরা ভালো। যা কিছু হারিয়ে ফেলেছে সব ফেরত পাবে না সত্যিই কিন্তু কিছুতো পাবে। ওর চেনাজানা এক মাদক ব‍্যবসায়ী আছে। আজ থেকে ওর সঙ্গেই থাকবে। দ্রুত টাকা কামানোর এটাইতো সহজ পথ। ভাগ‍্যকে নিয়ে আরেকবার জুয়া খেলবে। হয় হারবে নয়তো জিতবে।।।

মুখ গোমড়া করে বসে সেমাই খাচ্ছে অরিন। এক মিনিট পর পর সেমাই মুখে নিচ্ছে। আরাফাত সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। লোকটা ওকে আরেক দফায় অপমান করেছে যা ও মেনে নিতে পারছে না। মাথামোটা কথাটা ওর বড্ড বেমানান লেগেছে। তাছাড়া ও যথেষ্ট এডাল্ট। বিদেশে পড়াশোনা করছে। সম্মান ওর নেহায়েত কম না। লোকজন ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে যেটা দেখে ওর অহংকার হয়। কিন্তু আরাফাত ওকে এক পয়সার দাম দিচ্ছে না। বররা তো সারাক্ষণ বউয়ের কথায় চলাফেরা করে। কিন্তু ওর কপালে এ আবার কেমন বর জুটেছে? ফারজানা হক মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। উনি কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলেন,

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৪

আরাফাত কোথায়? ওর সঙ্গে তুমি ঝামেলা করেছো?
অরিন ঠোঁট উল্টে বলল,
> আম্মু তোমার জামাই আমাকে অপমান করেছে। মাথামোটা বলেছে। কথায় কথায় হারপিক নিয়ে খোটা দিচ্ছে। এমন হবে জানলে কখনও হারপিক খেতাম না। তুমি দেখে নিও আমার নাতি নাতনিদের সামনেও এসব বলবে। আমি জীবনে কখনও হারপিক ধরবো না। সুইসাইডের কথা ভাববো না।
ফারজানা হকের মুখে হাসি ফুঁটলো। মেয়েটা সম্পর্কটা নিয়ে ভাবছে এতেই অনেক।ভুলকে আকড়ে ধরে বাঁচার কোনো মানেই হয়না।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৬