একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩৩

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩৩
সাদিয়া জাহান উম্মি

মুম্বাইয়ের পাঁচ তারকা এক হোটেলের রুমে আয়েশীভঙ্গিতে বসে আছে জয়।সাথে আছে ওর দুপাশে দুটো মেয়ে।জয় তাদের সাথে অশ্লীলতায় ব্যস্ত।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে জয়ের।এমন সময় হঠাৎ ফোন আসায় প্রচুর বিরক্ত হয় জয়।বিরক্তিতে রিতিমতো কপাল কুঁচকে এসেছে ওর।পাশের মেয়েগুলোকে ইশারা করতেই তারা একটু সরে বসে।জয় ফোন উঠিয়ে ফোনের স্ক্রিনে যার নাম দেখলো তাতে যেন মনে হলো ওকে কেউ করলার রস খাইয়ে দিয়েছে কেউ।জয় আবারও ইশারায় মেয়েগুলোকে একেবারে বাহিরে চলে যেতে বললো।মেয়েগুলো বেড়িয়ে যেতেই জয় ফোন রিসিভ করে কানে ফোন রাখলো।সাথে সাথে একটা কন্ঠস্বর ঝংকার তুললো যেমন।

‘ এই কি তোমাকে কাজ দিয়েছিলাম আমি?মুম্বাইয়ে গিয়ে তো দেখি সব কিছু ভুলতে বসেছো।তোমার দেখি কোন গুরুত্বই যেন কাজের উপরে।মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে তুমি সেখানেই আটকে। বলেছো কি যেন নাম হ্যা ইলফা ওকে দিয়ে অনেক বড় একটা কাজ করাবে।তা কাজ কতোদূর এগোলো?’ অপাশের ব্যাক্তির কথায় জয়ের কপালে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে আমতা আমতা করে বলে,
‘ আসলে হয়েছে কি?ইলফাকে ওই জয় ধরে ফেলেছে আর প্লান ফ্লপ!’
‘ কি আশ্চর্য? তুমি আমাকে জানাও নি কেন?আর ওই মেয়ে কোথায়?’
‘ ইলফাকে ওই জয় পাগলাগারদ পাঠিয়ে দিয়েছে।ওই স্টুপিড মেয়েটা প্রতিশোধ নিতে না পেরে মানষিক ভারসাম্য হারিয়েছে।’
অপাশের ব্যাক্তি বিরক্তি আর রাগে দাত কিরমির করলো।রাগে গজরাতে গজরাতে বলে,
‘ আমি তোমাকে এতো এতো টাকা কেন দিচ্ছি? তোমার কোন ভ্রুক্ষেপই তো আমি দেখছি না।কাজটা না পারলে বলবে আমায়!’
জয় নিজেও রেগে গেলো। বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ এইভাবে আড়ালে থেকে আমাকে কাজের হুকুম দিয়ে যান।আমি নিজের লাইফের রিস্ক নিয়ে কতোবার চেষ্টা করলাম।কিন্তু ওই অর্থ’র সাথে আমি পেরে উঠি না।ওই সালা অনেক চালাক।ওর সাথে আমি পেরে উঠবো না আমি বুঝে গিয়েছি।আপনি অন্য কাউকে খুজে নিন।আমি পারবো না!’
ব্যাক্তিটি বাঁকা হাসি দিলো বললো,
‘ ভেবে বলছো তো?পরে কিন্তু তোমায় পস্তাতে হবে অনেক।’
জয় চেঁচিয়ে উঠে,
‘ হ্যা যা মন চায় করেন আমি এইসবে আর নেই। প্রাহি’র মা বাবাকে খুন করে এমনিতেই আমি অনেক পস্তাচ্ছি।আমি আর পারবো না।’

‘ যাকে মারতে বললাম তাকে তো কিছুই করতে পারলে না?মারার কথা প্রাহিকে ছিলো ও তো দিব্বি বেঁচে আছে।ওই মেয়ের কারনে আমার প্লান সব ফ্লপ খেয়েছে।নাহলে এতোদিনে আমার প্লান সাকসেসফুল হতো।অর্থসহ ওর পুরো পরিবার এখন কবরে থাকতো।কিন্তু তা আর হলো কই।তোমার মতো রিডিউকুলাস একটা ছেলেকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েই আমি ভুল করেছি।পস্তাতে হবে অনেক পস্তাতে হবে সবাইকে।আমি যখন সামনে আসবো তখন কেউ বাঁচতে পারবে না কেউ না!’
‘ হ্যা আপনার যা মনে হয় করে নিন।আমি ভয় পাই না।আমাকে মুক্তি দিন।আমি আর আপনার কাজ করতে পারবো না।ওই অর্থ শিকদারের সাথে কেউ পারবে না!’
অপাশের ব্যাক্তিটি হিসহিসিয়ে হেসে উঠলো।গা হিম করা সেই হাসি।তারপর ফোনটা খট করে কেটে দিলো।জয় রাগে ক্ষোপে তৎক্ষনাৎ সেই স্থান ত্যাগ করলো।

‘ ওই ইলফা কিছু স্বিকার করেছে অফিসার?’ হেমন্ত’র ঠান্ডা প্রশ্ন।
অফিসার মাথা নিচু করে বলেন,
‘ সরি মিষ্টার হেমন্ত শিকদার।উনার মানষিক অবস্থা একেবারে খারাপ।তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে কিছুই বলছে না।তার মতো সে উলটা পালটা কথা বলতেই থাকে।’

আরাফ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।বুকটা ভার হয়ে আসে কষ্টে।হাজার হোক বোন তো ওর।চাচাতো বোন হলেও ইলফাকে নিজের আপন বোন মনে করে আরাফ।সেই বোনের জন্যে কষ্ট তো হবেই।ছোট থেকে এই বোনের সকল আবদার পূরন করেছে সে।ইস,, ইলফা যদি একটু ভালো মনের হতো তাহলে আরাফ অর্থকে যেকোন ভাবে রাজি করাতো ইলফাকে বিয়ে করার জন্যে।কিন্তু যেখানে ইলফাই ভালো না শুধু মাত্র টাকার লোভে পরে ও অর্থ’র পিছনে ছুটছে এসব জানতে পেরে ও নিজেই ইলফাকে অর্থ’র কাছে যাওয়ার জন্যে বারবার আটকাতো।

আরাফের চোখের কোনে জলবিন্দুরা চকচক করে উঠে।কিন্তু তা চোখের কোটর হতে গড়িয়ে পরতে দেয়না আরাফ।নিজেকে অতিসন্তর্পনে সামলে নেয়।অর্থ বন্ধুর অবস্থা বুঝতে পারে আরাফের কাধে হাত রেখে শান্তনা দেয়।বিনিময়ে মলিন হাসি দেয় আরাফ।সবাই গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। অর্থ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চললো অফিসের উদ্দেশ্যে।হেমন্ত কিছুদিন হয়েছে ওদের অফিসে জয়েন করেছে।ভার্সিটি করে দুপুরের পরে আসে ও অফিসে।এখন লাঞ্চ টাইম।আশেপাশে কোথাও লাঞ্চ করলে দেরি হয়ে যাবে।তাই সবাই ভাবলো অফিসে গিয়েই খাওয়া দাওয়া করা যাবে।অফিসে পৌছাতেই যার যার কেভিনে সে সে পৌছে গেলো।

আজ প্রাহি নিজের হাতে রান্না করেছে দুপুরের খাবার।সব অর্থ’র পছন্দের।অর্থ বলেছে আজ দুপুরে বাড়িতে আসতে পারবে না কাজের প্রেসার অনেক।তাই প্রাহি ভাবলো ও নিজেই রান্না করে অর্থ’র জন্যে লাঞ্চ নিয়ে যাক।সার্প্রাইজ হয়ে যাবে অর্থ। প্রাহির রান্না শেষ হতেই রান্নাঘর হতে বেড়িয়ে আসে প্রাহি।আজ ভার্সিটি যাওয়া হয়নি কারো।ভার্সিটিতে আজ কন্সার্ট হবে।আর প্রাহির এসব এটান্ট করার কোন ইচ্ছা নেই।প্রাহির নিজের মনে রুমে চলে গেলো।ঝটপট গোসল সেরে নিলো।আলমারি খুলে কি পরবে ভেবে পাচ্ছে না।হঠাৎ দৌড়ে গেলো ইশির কাছে।ইশির রুমে গিয়ে দেখে ইশি হেমন্ত’র জামাকাপড় ভাঁজ করে আলমারিতে গুছাচ্ছে।প্রাহি ইশির কাছে গিয়ে বলে,

‘ এই ইশি আমার রুমে চল না।’
ইশি হঠাৎ প্রাহিকে এখানে দেখে ভয় পেয়ে যায়।বলে,
‘ শাকচুন্নি মাইয়া আসবি তো একটু আওয়াজ দিয়ে।তা না করে হঠাৎ এমন ভুতের মতো এসে কথা বললে ভয় পাই না আমি?’
‘ আচ্ছা সরি।এখন চল না আমার সাথে।’
‘ আরে দারা হাতের কাজটুকু শেষ করে নেই।’ ইশিকে কাজ করতে না দিয়ে তার আগেই প্রাহি ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।বলল,
‘ দূর ওগুলো পরে করিস।এখন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।জলদি চল।’
ইশি আর কিছু না বলে প্রাহির পিছুপিছু চললো।

খাটের উপর বসে আছে প্রাহি।ইশি আলমারি ঘেটেঘুটে অবশেষে নেভিব্লু কালারের একটা জামদানি শাড়ি বের করে প্রাহির সামনে আসলো।মুচঁকি হেসে বলে,
‘ এইটা অনেক সুন্দর মানাবে তোকে।যা এটা পড়ে আয়।’
প্রাহি মুচঁকি হেসে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।তারপর সুন্দরভাবে শাড়িটা পড়ে বেড়িয়ে আসলো।ইশি এগিয়ে গিয়ে প্রাহির শাড়িটা আরেকটু ভালোভাবে গুছিয়ে দিতে দিতে বলে,
‘ আজ হঠাৎ ভাইয়ার অফিসে খাবার নিয়ে যাওয়ার প্লান?’
প্রাহি লাজুক হেসে বলে,
‘ আরে এমনি।তিনি ফোন করে জানালেন তিনি আজ বাসায় আসবেন না লাঞ্চ করতে তাই ভাবলাম আমি রান্না করে নিয়ে যাই উনার জন্যে।’

‘ বাহ বাহ এতো প্রেম!’ প্রাহি ইশির এইভাবে বলায় লজ্জা পেলো প্রচুর।ইশি প্রাহিকে নিয়ে হালকা সাজিঁয়ে দিলো।সাজানো শেষে ইশি মুখে হাত দিয়ে বড়সড় গলায় বলে,
‘ মাই গড।তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।ভাইয়া তো আজ তোকে দেখলেই কাত হয়ে যাবে।না জানি অফিসের ভীতরেই রোম্যান্স না শুরু করে দেয় দেখিস।’
প্রাহি হেসে ইশির বাহুতে থাপ্পর মেরে বলে,

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩২

‘ যাহ! অসভ্য মেয়ে কিসব বলিস।ভুলে যাস না আমি তোর বড় ঝা!’
‘ হ্যা হ্যা।তা বড় ঝা আপনি তাড়াতাড়ি যান নয়তো দেরি হয়ে যাবে!’
ইশির কথায় প্রাহি ঘড়ির দিকে তাকায়।আসলেই দেরি হয়ে যাচ্ছে।ইশিকে বলে নিচে নেমে আসলো।তারপর রায়হানা বেগমকে বলে টিফিন বক্স নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।গাড়ি ছুটলো অর্থ’র অফিসের দিকে।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩৪