এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ২১+২২+২৩+২৪+২৫

এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ২১+২২+২৩+২৪+২৫
Writer Nondini Nila

সাজেকের সবোর্চ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়। চূড়ায় উঠতে উঠতে দেখতে পাই মিজোরাম সীমান্তের পাহাড় ও সবুজের মিতালি। চূড়ায় উঠে চারপাশে তাকাতেই আমার সমস্ত ক্লান্তি, কষ্ট নিমিষেই দূর হয়ে এক মিষ্টি সিগ্ধ হাওয়া আর অপূর্ব সৌন্দর্যের এই প্রকৃতির দেখে দেহ, মন পুলকিত হয়ে উঠে।
পাহাড়ের চূড়ায় থেকে নেমে সবাই গ্রাম কংলাক পাড়া ঘুরে আসি। কংলাক পাড়া লুসাই জনগোষ্ঠীর অধ্যুষিত এলাকা। কংলাক পাড়া থেকে কর্ণফলীর নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের লুসাই পাড়া দেখা যায়।
এরপর রুইলুই পাড়া থেকে ট্রেনিং করে কমলক ঝর্না ভ্রমন করালাম। এই ঝর্নাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈস ঝর্না বা সিকাম তৈসা ঝর্না নামেও পরিচিত।

বিকেলে বের হতে চাইলেও রেস্ট নিয়ে সন্ধায় পর আগেই ডিনার করে বের হতে হয় সবাইকে। বেড়ানোর পর আমার মনটা অনেকটায় ভালো হয়ে আছে। তবু্ও মনের এক কোণে কষ্ট লুকিয়ে আছে। ইহানের জন্য ই এই কষ্ট টা অনেকটাই কাটিয়েছি। আসার সময় আমার ইহান আমার সাথে ছিলো। কিন্তু যাওয়া থেকে শুরু করে সব জায়গায় ই আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছিলো। আধা ঘন্টার মতো রেস্ট নিয়ে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। কোন গাড়িতে বসবো বুঝতে পারছি না। ইহানের আসার জন্য অপেক্ষা করলাম কিন্তু দেখা পেলাম না। স্যাররা তারা দিচ্ছে উঠার জন্য তাই আর না দাঁড়িয়ে আমাদের গাড়ির দিকেই হাঁটা ধরলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বাসে উঠার সিঁড়িতে পা রাখতে যাব এমন সময় হাতে টান পরে চমকে পেছন ফিরে দেখি ইহান আমার হাত ধরে আছে। কিছু বলার আগেই টেনে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো ইহান।
আমার রাগ লাগলো এমন টেনে আনার জন্য কড়া কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে র‌ইলাম। আজকে তিনি আমার মন ভালো করেছে তাই শান্ত থাকলাম। আগের বারের সেই সিট টায় ই এনে থেমেছে।
‘ আমি তো আপনার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। আপনাকে কোথাও দেখলাম না তাই ওই গাড়িতে উঠছিলাম। এখন আমাকে ভালো করে বললেই তো আসতাম এমন টেনে আনার কি দরকার ছিলো?’
ইহান আমার পাশের সিটে ধপাস করে বসে বললো,

‘ শোনো তোমাকে আমার পাশে বসে যাওয়ার জন্য আমি পাগল হয়ে যায়নি। শুধু মাত্র ফারিয়ার জন্য আমাকে এই নাটক গুলো করতে হচ্ছে। নাহলে….
আমি রাগী গলায় বললাম, ‘ আমি আবার আপনার পাশে বসার জন্য দেওয়ানা হয়ে গেছি তাই না।আমি বাধ্য হয়ে এসব করছে মনে রাখবেন যতসব ফালতু।’
বলেই রাগে গজগজ করতে করতে জানালার দিকে ঘুরে গেলাম। আজকের ব্যবহারে একটু উনাকে ভালো মনে হয়েছিলো কিন্তু না উনার মতো বদ লোক দুটো নাই। আমি কি করে ভুশৈ গেলাম। প্রথম থেকেই যা না তাই বলে আমাকে অপমান হেনস্তা করবেই সে।

গাল ফুলিয়ে বসে র‌ইলাম। ফোন বের করে গান ছেড়ে ইয়ার ফোন কানে লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে র‌ইলাম।
এবার পেছনের লম্বা ছিট দখল করে বসেছে ইহানের বন্ধুরা আমরা তাদের এক সিট আগে। ইহান ফট করেই উঠে চলে গেলো আর তার বন্ধুদের মধ্যে জায়গা করে বসে পরলো। আর শুরু হলো তাদের আড্ডা চিৎকার চেঁচামেচি।
ভেংচি কেটে একবার তাদের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।
হঠাৎ মিষ্টি কন্ঠের গান ভেসে এলো। আমি না চাইতেও পেছনে ঘুরে দেখলাম ইহান গান গাইছে আমি তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো।

তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি, তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি…
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে, বলো কিভাবে বুঝায় ভালোবাসি..
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে, রঙ মিশে যায় রদ্ধ দুপুরে, সেই রঙ দিয়ে তোমাকেই আঁকি আর কিভাবে বলো ভালোবাসি,
প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চায় তোমাকে, ওওওতোমাকে, স্বপ্ন সাজাই নিজেকে হারাই, আর দুটি নয়নে রোজ শুতে যাই তোমাকে ওওও তোমাকে,
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকি, রোজ দুই ফোঁটা যেন আর ভালো লাগে, লারে অভিসারে,চায় শুধু বারে বারে তোমাকে ওওও তোমাকে….

যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে, বুকের মাঝে জাপ্টে জরিয়ে ধরবো তোমাকে…
পথ চেয়ে র‌ই, দেরি করো না যত‌ই, আর ভুলা যাবে না জীবনে কখনো তোমাকে ওওও তোমাকে, ওওও তোমাকে..
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকি, রোজ দুই ফোঁটা যেন আর ভালো লাগে, লারে অভিসারে,চায় শুধু বারে বারে তোমাকে ওওও তোমাকে….

রেগে থাকলেও তার গানের গলা শুনে আমার রাগ উবে গেলো। মুগ্ধ হয়ে গান শুনলাম। লোকটা বদ থাকলেও গানটা খুব‌ই ভালো গায়। আরো কয়েকটা গান গাইলো বন্ধুরা মিলে। বাসের সবাই দাঁড়িয়ে হ‌ইহুল্লা করলো সবাই ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিলো। আড্ডা বন্ধ করে লাইট অফ করে দিলো। আমি অন্ধকারে বাসের ভেতরে উঁকি ঝুঁকি মারলাম। ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম একটার উপরে। দুই একজনের ফিসফিস ছাড়া আর কোনা কথা আসছে না।
সবার শ্বাস প্রশ্বাস শোনা যাচ্ছে শুধু ভয় লাগলো আমার সাথে চোখে রাজ্যের ঘুম। আমি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে পরলাম আর আমাদের সামনের সিটে উঁকি মারলাম। বাইরে থেকে চাঁদের আলো হালকা উঁকি মারছে গাড়িতে তাতে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি। ছিঃ বলেই ঠাস করে আমার সিটে বসে পরলাম।
ছিঃ এটা আমি দেখলাম। চোখ মুখ ঢেকে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলাম।‌ সামনের সিটে দুজন নর নারী লিপকিস করছিলো তা স্পষ্ট দেখেছি আমি। আর কারো না দিকে উঁকি না মেরে চোখ বন্ধ করে র‌ইলাম। ঘুম চোখে আগে থেকেই ছিলো এবার চোখ বন্ধ করতে ঘুমিয়ে পরলাম।

পেছনে থেকে ইহান ঊষার দিকে নজর রাখছিলো। ঘুমিয়ে গেছে গাড়ির ঝাঁকুনিতে ঊষার মাথা জানালায় বারি খাবে এমন সময় ইহান এসে ওর মাথা আটকে ধরলো। আর বিরক্ত হয়ে তাকালো ঊষার দিকে।
ভোরের আলো ফোটার আগেই ইহান ঊষার মাথা কাঁধে থেকে সরিয়ে আগের সিটে চলে গেলো।
আর এদিকে আমি ঝাঁকুনি তে হেলে কপালে বারি খেয়ে উঠে পরলাম। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি আমরা গাড়িতে আছি। কালকের কথা মনে পরলো। সাথে সামনের আপত্তি কর অবস্থা দেখেছিলাম। আমি আবার উঠে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালাম। তারা জেগে আছে দুজনেই ফোন টিপছে। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা আমার দিকে তাকালো ফট করেই আমি তা দেখে বসে পরলাম। সারা রাত কি একাই ছিলাম না সিটে! ভাবতে ভাবতে পেছনে তাকাতে যাব তার আগেই ইহান এসে আমার পাশে শব্দ করে বসে পরলো। আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললাম,

‘ আপনার চোখ লাল হয়ে আছে কেন?’
ইহান সিটে হেলান দিয়ে চোখ করে র‌ইলো। আমি উত্তরের অপেক্ষায় চেয়ে র‌ইলাম কিন্তু হুনুটা আমার কথা শুনে নি এমন ভাব করে র‌ইলো। রাগে আমার শরীর জ্বলে উঠলো। এতো ভাব দেখাতে পারে। ভাবে মাটিতে পরে না এনার। বিরবির করে বকতে লাগলাম।

সাতটায় আমার ঢাকায় এসে পৌঁছালাম। তখনো ইহান চোখ বন্ধ করে আছে। আমি তাকিয়ে চেয়ে আছি ডাকবো কিনা ভাবছি‌। বাবার সাথে কথা বলেছি বাবা বাসায় আছে দুপুরের পর নানুবাসায় যাব। আম্মু সেখানে আছে। এদিকে আমার নূপুর এর কথাটাই মনে নাই। ভুলে বসে আছি। গাড়ি থামতেই ইহান চোখ মেলে তাকালো। আমি তখনও তারদিকেই তাকিয়ে ছিলাম। ইহান চোখ মেলে সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ হা করে তাকিয়ে আছো কেন? জীবনে সুন্দর ছেলে দেখো নি?’
ইহানের কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে গেলো। এতো বড় অপমান। আমি না হা করে তাকিয়ে আছি।
আমি রাগী চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে ইহান হাত দিয়ে থামিয়ে বললো,
‘ এখন আমার ঝগড়া করার মুড নাই বাই!’
বলেই ব্যাগ হাতে বেরিয়ে গেলো। আমি রাগ নিয়ে নিজেও বেরিয়ে এলাম। বাইরে এসেই আব্বুকে দেখে ইহানের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলাম।

বিকেলে নানুবাড়ি এলাম। প্রথম দিন কার সেই পিচ্চি কে দেখলাম। আব্বুর থেকে জানতে পেরেছি এটা আমার মামাতো ভাই। আমার তিন মামা। আমাদের তো নানা দেখতে পারতো না তাই তারা ও তাই তাদের সাথে সম্পর্ক ছিলো না। নানা জান মারা যাবার আগে নাকি সবাইকে বলে গেছেন আমার আম্মুকে যেন আর দূরে সরিয়ে না রাখে। তিনি আম্মুকে ক্ষমা করে দিয়েছে। নানা জানের কথা সবাই আমাদের আপন করে নিয়েছে। যার জন্য দূরে ঠেলে দিয়েছিলো তিনি যেহেতু ক্ষমা করেছে সেখানে আর কারো কথা থাকতে পারে না।
বড় মামার দুই মেয়ে লিজা ও লিনা। লিজা আপু মাস্টার্সে পরে। লিনা আমার সমবয়সী। মেজ মামার এক ছেলে দুই মেয়ে। ছেলে আবির ভাইয়া অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে, দুই মেয়ে জমজ( দিনা, নিসা) দুজনেই থ্রিরিতে পরে। ছোট মামার এক ছেলে যাকে আমি প্রথম দিন দেখছিলাম সামি ফাইভে পরে।
আমার এক খালা তার বিয়ে হয়েছিলো স্বামী নেশাখোর তাই ডির্ভোস দিয়ে আলাদা থাকে তিনি স্কুলের ম্যাডাম। তার সন্তান নেই।

আমি আর লিনা এক রুমে ঘুমালাম। সব ভাই বোনরা রাত জেগে আড্ডা দিলাম। এক দিনে সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছে। সবাই এতো ভালো কি বলবো। এতো ভাই বোন আমার আর আমি কিনা এতো দিন নিঃসঙ্গ কাটিয়েছি।
এই বয়সেই আমাদের লিনা বয়ফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেলেছে তার ফেসবুক এ ঘুমাতে এলে আমাকে লুকিয়ে বললো। সাথে মেসেজ ও ছেলের ছবি দেখালো। ছেলেকে এখনো সামনে থেকে দেখে নি দেখবে কি করে ছেলের বাসা যে ঢাকায় আর আমাদের লিনার বাসা তো দিনাজপুর। একা একা ঢাকা যাবে কি করে?

তাই আমি বললাম, ‘ তাহলে আমার সাথে তুই চল আমাদের বাসায় তারপর দেখা করে নিবি।’
আমাদের মধ্যে তুই সম্পর্ক চলছে এসেছে। আমার কথা শুনে লিনা লাফিয়ে উঠে বললো,
‘ সত্যি। আচ্ছা আমি এক পায়ে খাড়া কিন্তু সামনেই তো পরিক্ষা যেতে দেবে না মনে হয়!’ মন খারাপ করে বললো।
‘ এখন না যেতে পারলেও সমস্যা নাই পরিক্ষার পর যাবি আর অনেকদিন থাকতে পারবি।’
‘ হ্যাঁ।’

পরদিন ও নানুবাড়িতে হেসে খেলে কাটিয়ে দিলাম। সাথে বিশাল আয়োজন হলো খাওয়ায় দাওয়া আত্নীয় স্বজন দিয়ে বাড়ি ভরে গেলো। পরদিন আমরা চলে এলাম বাসায় আমরা পরিক্ষা তাই আসতেই হলো।
এতো দিন পর নানু বাড়ি আদর খেলাম তাই আসতে মন চাইলো না।
বাসায় এসে ইহানকে ফোন করলাম রেগে নাম্বার বন্ধ। অসহ্য লোকটা আমার নূপুর দিবে বলেও দেয়নি। আমার না হয় মনে ছিলো না তার কি উচিত ছিলো না দায়িত্ব নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া। আর কখনো চাইবো না। পায়ে থেকে বাকিটাও খুলে রেখে দিলাম। আম্মু জিজ্ঞেস করলে বলেছি পরে থাকতে ভালো লাগে না তাই খুলে রেখেছি।
এস এস সি পরিক্ষা ঘনিয়ে এলো। মন দিয়ে পরতে লাগলাম। বিদায় অনুষ্ঠান এ ইহানের দেখা মিললো কথা বলতে চাইলাম কিন্তু সুযোগ হলো না।

দেখতে দেখতে এস এস সি পরিক্ষা শেষ হলো।
কাল লিনা আসবে বড় মামার সাথে। এর মাঝে নানু একবার এসেছে সবার সাথে সম্পর্ক ঠিক হয়েছে তাই আসা যাওয়া ও হয়েই থাকে।
লিনা এসেছে দুইদিন হলো। আজ আমি, লিনা, তুলি
আর রিমা বেড়াতে যাব। পরিক্ষার পর এক সপ্তাহ হয়ে গেছে ওদের সাথেও দেখা হয় না‌। আর লিনা ও আসার পর থেকে বের হ‌ওয়ার জন্য পাগল প্রায় হয়ে গেছে। তুষারের সাথে দেখা করবে। তুষার হলো লিনার সেই ফেসবুক বয়ফ্রেন্ড। একা তো বের হতেই দেবে না আর আমি ওর সাথে একা কোন ছেলের সাথে দেখা করতে যাব ভাবতে কেমন লাগে। তাই তুলি আর রিমাকেও ফোন করে বলেছি চলে আয় আজ আমরা বেড়াতে যাব।

রিমা আর তুলি আসতেই চারজন বেরিয়ে পরলাম। আজ লিনা খুব সেজেছে। গায়ের রং শ্যামলা হলেও দেখতে খুব মিষ্টি। ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক চোখে মোটা করে কাজল পরেছে। গায়ে বাসন্তী রঙের গাউন ওরনা একপাশে ফেলে রেখে চুল খোলা রেখেছে। প্রথম দর্শন তার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে তাই ও সকাল থেকে সাজুগুজু করেছে। ‘আমাকে দশ বারের মত জিজ্ঞেস করেছে ওকে সুন্দর লাগছে কি না? সবকিছু ঠিক আছে কিনা?’
তুলি দের সাথে লিনাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। লিনা খুব মিশুক একটা মেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই তুলি আর রিমার সাথে মিশে গেল।
দুই রিকশা করে রেস্টুরেন্টের সামনে এসে নামলাম। নেমেই লিনা আমার হাত খামচে ধরলো,

‘ আমার খুব নার্ভাস লাগছে রে ঊষা।’
‘ কেন এমন ছটফট করছিস কেন? চল তাড়াতাড়ি।’
বলেই ওর হাত ধরে ভেতরে হাঁটা ধরলাম।
লিনা আমাকে টেনে থামিয়ে বললো, ‘ আমার কেমন জানি লাগছে রে। এখন‌ কি করবো।’
বলেই অসহায় মুখে তাকালো। তুলিরা নেমেই আমাদের কাছে এসে বলল, ‘ কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভেতরে চল।’

‘ আচ্ছা দেখো তো সব ঠিক আছে কিনা।’ লিনা চুল ঠিক করতে করতে বললো। তা দেখে রিমা বললো,
‘ হায়রে কতো ভাব রে। এই শোন তোরে পছন্দ হ‌ওয়ার হ‌ইলে এমনেই হবে। এতো স্টাইল করার দরকার নাই। চল তো শরমে ও যেন মরে যাচ্ছে এতোক্ষণ খুব পটর পটর করছিলি এখন এমন মিইয়ে যাচ্ছিস কেনো?’
রিমাদের সাথে তুই করেই কথা বলা শুরু করেছে।
রিমা লিনাকে টেনে ভেতরে ঢুকলো। আমি আর তুলিও পেছনে পেছনে এলাম।

তুষার বসে আছে একটা সিন দখল করে। লাল পাঞ্জাবি পরা ক্লিন শেভ করা গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। তাল গাছের মতো লম্বা আমাদের দেখে দাড়াতেই বুঝতে পারলাম। দাঁত কেলিয়ে হাসলো আমাদের দেখে। লিনা লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। ছেলেটাও কেমন লজ্জা পেয়ে চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। এদিকে লিনা ও সেম নতুন বর ব‌উ যেন!! রিমা সব চেয়ে চঞ্চল মেয়ে আমাদের মধ্যে ও বসেই একের এক কথা বলেই যাচ্ছে। ছেলেটার ইন্টারভিউ নিচ্ছে তা দেখে তুলিও কথা বলছে‌। আমি শুধু হা করে ওদের কান্ড কারখানা দেখছি।
ছেলেটার বাসা বনানী। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার কাপড়ের দোকানে বসে।
লিনা কে ছেলেটা কেমন আছো বললো। লিনা লাজুক মুখে বললো,’ ভালো। আপনি?’
ছেলেটা এতোক্ষণ শত লজ্জায় থাকলো এখন বলে উঠলো, ‘ ফোনে তো তুমি করে কথা বলতে এখন আপনি বলছো কেন?’

লিনা মিনমিন করতে‌ লাগলো তা দেখে রিমা বললো, ‘ এই তুই মিনমিন করছিস কেন? এতো লজ্জা তাহলে রুমে দরজা আটকে বসে থাকতি। দেখা করতে এলি কেন রে লজ্জা বতী লতিকা।’
রিমার কথায় এক দফা হাসিল রোল পরলো। রিমা এত্তো এত্তো খাবার অডার করে টেবিল ভরে ফেলেছে। লিনা আস্তে আস্তে অনেকটা স্বাভাবিক হলো। খাবার খাওয়া হলো তুষার বিল মিটিয়ে তারা দেখিয়ে চলে গেলো। তার আগে একটা কল‌ এসেছিলো। যাওয়ার আগে লিনাকে ইশারায় কি যেন বললো।
এবার আমরা চারজন ই বসে আইসক্রিম খাচ্ছি আর কথা বলছি। তখন কোথা থেকে ইহানের আগমন ঘটলো। কোন কিছু বুঝার আগেই আমার পাশে এসে বসে পরলো। আর সবার দিকে তাকিয়ে হাই দিলো।

রিমা বললো, ‘ ভাই তুমি এখানে কি করে?’
‘ এদিকেই এসেছিলাম। তোদের দেখলাম তাই এলাম।”
‘ ওহ ভালো করেছো।’
লিনা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ইহানের দিকে। আমি মুচড়া মুচরি করছি তা দেখে লিনা বললো,
‘ কি হয়েছে ঊষা এমন করছিস কেন?’
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই ইহান লিনাকে বললো, ‘ হাই, তোমাকে তো চিনলাম না!’
লিনা বললো, আমি লিনা ঊষার মামাতো বোন।

ইহান আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে আমি জোর করেও হাত সরাতে পারলাম না। তাই বললাম, ‘পাগল নাকি আপনি এখানে আমার পাশে চপকে বসলেন কেন? আর আমার হাত ধরেছেন কেন ছারুন আমার হাত। ‘
ইহান হাত ছাড়লো আমি রাগী চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। আইসক্রিম মুখে দিতে যাব ফট করা ইহান আমার আইসক্রিম খাওয়া শুরু করলো। আমি চিৎকার করে উঠলাম,
‘ এটা আপনি কি করলেন? আমার খাওয়া আইসক্রিম খেয়ে নিলেন ছি!’
রিমা, তুলি লিনা হা করে তাকিয়ে আছে।আমার লাগে দুঃখে এখন কাঁদতে ইচ্ছে করছে।আমার চিৎকার এ রেস্টুরেন্টের অনেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছে।

ইহান ততক্ষণে বাই বলে উঠে দাড়ালো আর আমার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো,’ একটু টেস্ট করলাম মাত্র। তার জন্য এমন চিৎকার। উফফ কানটা গেলো।’
আমি রিমার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘দেখলি তোর ভাইটা কেমন খবিশের খবিশ। কিভাবে আমার আইসক্রিমটা খেলো। এই দেখ লাল হয়ে গেছে কেমন শক্ত করে হাত ধরেছিল।’
রিমা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে। লিনা তুলিও আমি কটমট করে ইহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। অসহায় মুখে আইসক্রিমের দিকে তাকালাম।

বাসায় আসার পর থেকেই আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে লিনা। কানের কাছে এক কথা ঘ্যানঘ্যান করছে। ইহান কি আমার বয়ফ্রেন্ড। আর এই এতো বড় কথাটা আমি কেন ওর থেকে লুকালাম।
‘ ওই কিউট হিরোর মতো দেখতে ছেলেটা তোর বয়ফ্রেন্ড তাই না। এই কথাটা তুই আমার থেকে কেন লুকালি বল। আমি তো প্রথম দিনেই তোকে আমার সব জানিয়েছি আর তুই সব কিছু আড়াল করে গেলি। সেদিন যখন বলেছিলাম তোর বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা, তুই কি বলেছিলি! বলেছিলি তোর এসব বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড নাই। ছেলেদের সাথে কথা বলা দূরে থাক কাছে ও ঘেঁষিস না। এখন কি হলো। খুব তো হাত ধরলো তোর খাওয়া আইসক্রিম অবধি খেয়ে গেলো। এই ভাবে আমাকে পর করে দিলি।’

রাগে এখন হয় নিজের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে নাহলে এই ন্যাকা টার। সব কিছু ইহানের জন্য হয়েছে। এখন এই মাথা মোটা টাও আমার কথা বিশ্বাস করছে না।কতো বার বললাম ও আমার বয়ফ্রেন্ড না ও আমার চরম শত্রু। কিন্তু উনি আমার কথা বিশ্বাস করছে না উল্টা এখন প্রেম কি ভাবে হলো, প্রথম দেখা কোথায়? এসব ফালতু কথা বলছে।
‘ তুই যদি এই নিয়ে আমাকে আর একটু বিরক্ত করিস। তাহলে এই মুহূর্তে আমি মামুকে কল করে তোর ওই তুষাপাতের কথা বলে দেব মাইন্ড ইট।’
এই একটা‌ কথাই ছিলো লিনার মুখ বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট।

কয়েকদিন পর আমি, লিনা আর আবির ভাইয়া বিকেলে বেরিয়েছি ফুসকা খেতে। হেঁটে ফুসকা খেতে চলে এলাম। আবির ভাইয়া এসেছে সকালে ঢাকায় কি একটা কাজে এসেছিলো তাই আমাদের বাসায় ও এসেছে।
তিন প্লেট ফুসকা হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলাম। আমার খাওয়া সবার আগে হয়ে গেছে। লিনার আর ভাইয়ার রয়েছে এবার ওদের টায় আমি ভাগ বসালাম। ভাইয়া তাই নিজেই আমাকে খাইতে দিতে লাগলো তার প্লেট থেকে। ভাইয়ার একটা তোতলা গার্লফ্রেন্ড ছিলো তার কথা বলছে লিনা। আর সেসব শুনে তিনজন‌ই হাসাহাসি করছি।

ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ডের নাম ছিলো হুমাইরা। মেয়েকে ভাইয়া ভার্সিটিতে ভর্তি হ‌ওয়ার পর পছন্দ করে দেখতে মারাত্মক সুন্দর ছিলো। ভাইয়াদের সেম ব্যাস ছিলো। ডিপার্টমেন্ট আলাদা। মেয়েটাকে দূর থেকে দেখেই খুব পছন্দ করে ফেলে। তারপর একদিন হুট করেই প্রপোজ করে‌ বসে। মেয়েটা হ্যা না কিছু না বলে নাম্বার দিয়ে চলে যায়। তিনমাস দূর চেখে দেখতে দেখতে মেয়ে টাকে অনেকটাই পছন্দ করে ফেলেছিলো সাথে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। তারপর এই ভাবে মেয়েটার নাম্বার পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় কিন্তু ফোন করে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম।
কথা শুনে তার মাথা ঘুরে যায়। প্রথমদিন সালাম দিতেই 10 মিনিট কভার করে ফেলেছিল। এমন তোতলানো কন্ঠ শুনে আবির ভাইয়া ফোন কেটে বলে মাইয়া তো খুব পাজি কোন কার কোন তোতলা কন্ঠের বেটির নাম্বার দিসে আমারে। পরের দিন মুখোমুখি ধরে মেয়েটাকে কঠিন স্বরে বলে,

‘এই মেয়ে তুমি আমাকে কার নাম্বার দিয়েছো? আমি তোমার নাম্বার চাইছি! আমি তোমাকে পছন্দ করেছি। প্রপোজ করেছি আর। তুমি কোন তোতলা বেটির নাম্বার দিয়েছিলা আমাকে হ্যাঁ।তোমার তো সাহস কম না তোমার আমাকে পছন্দ না। তাহলে আমাকে না করে দিতা এমন ঢং করার কী আছে অসভ্য মেয়ে।’
আবির ভাইয়া রেগে চেচিয়ে উঠলো। আবির ভাইয়ার কথা শুনে তো মেয়েটা চোখ মুখ লাল হয়ে ওঠে আর ঠাস করে গালের মধ্যে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসে। আবির ভাইয়া গালে হাত দিয়ে হতভম্ব মুখ করে মেয়েটার দিকে তাকায়। তারপর মেয়েটা ফোনের কন্ঠে তোতলাতে তোতলাতে আবির ভাইয়াকে বলে,
‘ কিইই ববলললি তুওওই আমি তোতততলা বেবেবেটি?’

আবীর ভাইয়া কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারে এই মাইয়ার কন্ঠ এই রকম। ভয়ে এক দৌড়ে মাঠের ওপারে চলে যায়‌। আর জীবনে মেয়েটার সাথে কথা দূরে থেকে আশেপাশে দেখলেও মুখ লুকিয়ে পালায়।’
তিনজন গলা ফাটিয়ে হাঁটতে লাগলাম আর এই হাসি আমার কাল হলো। আমার কাশি উঠে গেলো। চোখ মুখ লাল হয়ে উঠলো চোখে ও পানি চলে এসেছে আমার। ভাইয়া ও লিনা ভয় পেয়ে গেলো।
ফুসকা ওয়ালার কাছে পানি নাই। কিছুটা দূরে চায়ের দোকান আছে ভাইয়া দৌড়ে চলে গেলো। লিনা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমার গলা ব্যাথা করছে কাঁশতে কাঁশতে। এতো হাসা উচিত হয়নি। ফুসকা মুখে দিয়ে হেসেছি তাই এমন বাজে পরিস্থিতে পরতে হলো।

হঠাৎ কেউ পানির বোতল এগিয়ে দিলো। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে ঢকঢক করে অনেকখানি পানি খেয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। এখনো কাশি আসছে কিন্তু কম আগের থেকে। মাথায় কারো হাতের স্পর্শে চোখ তুলে তাকিয়ে চমকে উঠলাম‌। ইহান আমার মাথার হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর পলক হীন চোখে তাকিয়ে আছে‌ আমার মুখের দিকে। তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো।

ছোটখাটো একটা চায়ের দোকানে বসে আছি। আমার পাশের লিনা। আর আমাদের সামনে ব্রেঞ্চে ইহান ও আবীর ভাইয়া দুজনে বসে আছে‌। আর খুব আড্ডা দিচ্ছে। কতো শত কথা যে বলছে আল্লাহ। ইহান আবীর ভাইয়ার ছোট এক ইয়ারের ছোট দেখে মনে হচ্ছে না। দুজনে কিছুক্ষণের মধ্যে শত জনমের বন্ধুদের মতো বিহেভ করছে। কথার ফাঁকে এক দুই পলক আমার দিকে তাকিয়েছে ইহান। আমি চুপ করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি তীক্ষ্ণ চোখে। লিনা কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে,

‘ তুই ভাইয়াকে জানিয়ে এসেছিস তাইনা। তোরা ফোনে ও কথা বলিস। এটাও বললি না এতো নাটক করতে পারিস।’
আমি কটমট করে ওর দিকে তাকিয়ে ঠাস করে গাল থাপ্পড় মেরে দিলাম। লিনা গালে হাত দিয়ে বোকা চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি বললাম,
‘ আর একটা কথা বললে মেরে তোর গাল লাল করে দিবো আমি‌।’

আর কথা বলার সাহস করে নি। আমার হাতে মার খেয়ে লিনা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। দোকানদার এটা দেখে চোখ বড় করে তাকিয়ে ছিলো। আমি অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসি। ইহান ও বাই বলে চলে গেছে। আমার সাথে কোন কথা হয়নি। লিনা আর আবীর ভাইয়ার সাথে কথা বলেছে অনেক। বাসায় আসার পর থেকে লক্ষ্য করলাম লিনা আমার সাথে কথা বলছে না। সেই সময়কার ব্যবহারে মন খারাপ করেছে বুঝতে অসুবিধা হলো না। ইহান আর আমার পরিচয় থেকে সব কিছু ওকে খোলে বললাম। সব শুনে ও রাগ ভুলে গেলো। আর আমাকে সরি বললো। ভুল বুঝার জন্য। তাছাড়া আরো কথা বলেছে ইহান কে আমি পছন্দ করি কিনা! ও করে কিনা! আমি সব কিছু তে না করে দিয়েছে।

তিনজন রাত জেগে ভূতের মুভি দেখার প্ল্যান করল আবীর ভাইয়া। আমি সাথে সাথে চিৎকার করে উঠলাম। দিনের বেলায় হরর মুভির দেখতে পারি না। আবার রাতের বেলা অসম্ভব। আমার এই ভীতু মুখ দেখে দুজনে হাসাহাসি করলো। আমাকে বাদ দিয়ে নিজেরাই দেখবে বলল। আমি রুমে চলে এলাম।
পরদিন আবীর ভাইয়া চলে গেলো।
একদিন বিকেলে লিনাকে নিয়ে শপিং করতে চলে এলাম। আর দুইদিন পর লিনা চলে যাবে এজন্য আম্মু বলেছে ওকে নিয়ে শপিং করতে। লিনাকে ড্রেস কিনে দিতে। আম্মু আসতে চেয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ জ্বর আসার আসতে পারলো না। আমাকে আর লিনা কেই যেতে বললো। আব্বু গাড়ি নিয়ে সিলেট গিয়েছে অফিসের দরকারে। তাই আমাকে আর লিনাকে রিকশা করেই যেতে হলো।

দুজনে গল্প করতে করতে শপিং মলে চলে‌ এলাম। এখানে এসে তুষারের সাথে দেখা। হাসি মুখে তুষার এগিয়ে এসে আমাদের উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ তোমরা এখানে…?
খুশিতে লাফানোর মতো অবস্থা লিনার। ও চটপট উত্তর দিলো, ‘ আমরা তো এখানে শপিং করতে এলাম। তুমি এখানে কি করছো?’
তুষার বললো,’ আমার বাবার দোকান ওই যে ওইটা‌!’
‘ ওওওও’

আমার দিকে তাকিয়ে ও কেমন আছি জিজ্ঞেস করলো আছি হাসি ফুটিয়ে ভালো বললাম। আমি আগে আগে হাটছি আর তুষারের সাথে কথা বলতে বলতে লিনা হাঁটছে। আমি একবার ওদের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে দোকানে ঢুকলাম তাও সেটা তুষারদের দোকান। ইচ্ছে করেই ঢুকেছি দেখতে চাই তুষার ভাইয়া গার্লফ্রেন্ডকে কিছু গিফট করে কিনা? আমি দোকানে ঢুকে শয়তানি হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তখন আমার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে দৌড়ে এলো লিনা।
আর আমার হাত ধরে বললো,’ ঊষা বোন প্লিজ তুই একাই শপিং কর। আমাকে না তুষার ওর সাথে একটু বের হতে বলছে। কালদিন পর তো আমি চলে যাব। আবার কতোদিন দুজনের দেখা হবে না। একটু ওর সাথে সময় কাটাতে চাই।’

আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘ মানে কি আমি কি নিজের জন্য এসেছি নাকি। তোর জন্য ই তো শপিং করবো তুই না থাকলে কিভাবে হবে?’
‘তুই তোর পছন্দমত শপিং কর। আমার তাতে হবে প্লিজ একটু ম্যানেজ করে নে না।’

এত কাকুতি-মিনতি করলে কি আর তাকে বাধা দেওয়া যায়। অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হলাম। লিনা চলে গেলো খুশি হয়ে। যাওয়ার আগে বলে গেল এখানে অপেক্ষা করতে। এখান থেকে নাকি আবার একসাথে বাড়ি ফিরবে। আমি ঘুরে ঘুরে ওর জন্য দুই সেট ড্রেস নিলাম। আজ‌ই প্রথম একা শপিং করছি এর আগে কখনো একা শপিং করিনি আমি। অস্বস্তি হচ্ছিল কিন্তু কিছু করার নাই।লিনা বেসলেট খুব পছন্দ করে একটা বেসলেট নিলাম। আর কানের দুল নিলাম। চারটায় বের হয়েছিলাম। এখন 5:15 বাজে। লিনা আসছে না। ওর জন্য অপেক্ষা করছি মলের বাইরে এসে। পৌনে ছয়টা বাজে। 6:25 এই আযান দেয় আসছে না কেন? এত সময় নিচ্ছে কেন? এদিক ওদিক তাকাচ্ছি শুধু আমি হাতে দুটো ব্যাগ ও একটা পার্স তাতে ফোন আছে। লিনার নাম্বারে কল করলাম ঢুকলো কিন্তু রিসিভ হলো না। দুইবার কল করলাম রিসিভ করলো না।

এবার আমার খুব রাগ হচ্ছে আমাকে অপেক্ষায় রেখে এমন লেট করছে কি করে! ফোন পার্সে রেখে ডান পাশে তাকাতেই কেঁপে উঠলাম একটা ছেলে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। চাহনীটা মোটেও সুবিধা জনক না লোভনীয় তাকানো। আমি আচমকা ভয় পেয়ে গেলাম। আশেপাশের মানুষের সমাগম কম। কারণ রাস্তায় আমার মতো কেউ দাঁড়িয়ে নাই সবাই নিজেদের কাজে বিজি। এদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে। লিনা ও আসছে না। আমি এখন ভাবছি না এখানে আর এক মুহূর্তও দাঁড়িয়ে থাকা উচিত না। আমি বাসায় ফিরে যাই লিনাকে ওর বয়ফ্রেন্ড পৌঁছে দিবেনি। আমি ভয় পেয়ে যাওয়ার তাড়ায় পরলাম।

কিন্তু বিপদে সময় কি আর কোন রাস্তা খোলা রেখে আসে নাহ। তখন এক সাথে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আমার বেলায় ও তাই হলো। এতক্ষণ কত অটো- রিকশা গেল কিন্তু আমি তখন যাওয়ার ইচ্ছা ছিলাম না। কিন্তু এখন যখন আমি রিক্সা খুঁজছি তখন একটা রিক্সা ও পাচ্ছিনা খালি। আর যে একটা দুইটা আসছে সব ভর্তি। ছেলেটার লালসা ভরা দৃষ্টি দেখে আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম কি করব বুঝতে পারছি না। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ছয়টা দশ বাজে। আজান পড়তে আর বেশী সময় নাই। এদিকে গাড়ি পাচ্ছি না। অন্ধকার হয়ে আসছে। কি করবো? কি করবো? ভাবতে ভাবতে দেখলাম ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে তার আগে ফোন করলো কাকে যেন আমি লোকটাকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে তটস্থ হয়ে গেলাম। আর সামনের দিকে হাঁটা ধরলাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ছেলেটাকে আমি আগেও দেখেছি। কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে পরছে না। ভাবতে ভাবতে আজ হেঁটে বাসায় ফিরবো এমন একটা ভাব নিয়ে হাঁটছি। ঘার ঘুরিয়ে দেখলাম ছেলেটা পেছন পেছন আসছে। আমার হাতটা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ব্যাগ শক্ত করে ধরে ওরনা টানতে টানতে জোরে জোরে পা চালাচ্ছি।

বাইকের ‌তীব্র হন বাজতেই থমকে দাঁড়ালাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আরো দুটো ছেলে বাইক করে এসেছে। আগের ওই ছেলেটার পাশে থেমেছে।আমার আর বুঝতে বাকি র‌ইলো না ছেলে গুলো ওই ছেলেটার পরিচিত। তারমানে আগের ছেলেটার মতোই খারাপ হবে। আমাকে ধরা তো সেকেন্ড এর ব্যাপার তাদের কাছে। আমি আরো ভয় পেয়ে দৌড়ে দিলাম। এবার আমি আলো‌ ছেড়ে অন্ধকার এ এসে ঠেকলাম। এদিকটায় ল্যাম্পপোস্টের আলো নাই। আর দোকান পাট ও নাই। আমি ভয়ে এবার আরো জরোসরো হয়ে গেলাম পেছনে থেকে বাইকের আওয়াজ আসছে আমি দৌড়ে হঠাৎ ধপ করে রাস্তায় মুখ থুবড়ে পারলাম।

থুতনিতে খুব জোর ব্যথা পেলাম। জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। ব্যাথায়’ আহ ‘করে উঠলাম আমি। আমাকে পরতে দেখে ছেলে গুলো কিছুটাই পিছে বাইক থামিয়ে তিনজন নেমে পড়েছে। আর বিচ্ছিরি ভাবে হাসতে হাসতে বাজে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে। অনেক কষ্টে উঠে বসলাম পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা পেয়েছি। দাঁড়াতে পারছি না হাটুতে ও ব্যথা পেয়েছি। এ কোন বিপদে পরলাম আল্লাহ রক্ষা করো আমাকে এই জানোয়ারদের হাত থেকে।

তিনজনই আমাকে ঘিরে ধরল। ভয়ে আতকে উঠলাম। হঠাৎ আমার চোখে মেলার সেই দিনের কথা মনে পড়ল। সেদিনও এইরকমই কয়েকজন আমাকে ঘিরে ধরেছিল। ঝাপিয়ে পড়তে চেয়েছিল আমার উপর কিন্তু সেদিন ইহান আমাকে বাঁচিয়ে ছিলো। অবচেতন মন আজকেও ইহানের আগমন চাইছে। সেদিনের মত আজকেও যদি তার দেখা মিলতো।এই নরপশুদের থেকে আমাকে বাঁচিয়ে নিতো। আর তার সাথে আমি ঝগড়া করতাম না। আবুল তাবুল অনেক কথা ভাবছি। ভয়ে চোখ উপচে অশ্রু গড়িয়ে গাল ভিজে যাচ্ছে আমার। এমন বিপদ থেকে কিভাবে বাঁচবো আমি। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো।

ছেলেগুলোর কথা শুনে বুঝতে পেলাম সেই দিনের মেলা লোক গুলো এরাই ছিলো। এজন্যই তো প্রথমে একজনকে দেখে চেনা চেনা লেগেছে। কিন্তু মনে করতে পারিনি।

ছেলেগুলো একটা কথা কয়েকবার বললো খুব ক্রোধের সাথে,’ সেইদিন পালিয়ে গিয়েছিলি বয়ফ্রেন্ডের সাথে। পরে বয়ফ্রেন্ড দিয়ে মার খাওয়াইছিস। অনেকদিন ধরে‌ তোকে খুঁজছিলাম আজ এভাবে পেয়ে যাব ভাবিনি। আজ সব সুদে আসলে বুঝে নিবো। কিছু না করেই মার খেয়েছি। আজ তার সুদ তুলবোই এই রিমন তোল শালীকে।’

আমি তাদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। হঠাৎ হাতের মধ্যে পুরুষালী হাতের স্পর্শ পেয়ে ভয়ে আতকে উঠলাম। ছেলেটা আমাকে টেনে দাঁড় করালো সাথে সাথে একটা সিএনজি এসে থামলো। আর আমাকে টানতে টানতে জোর করে সিএনজি তে তুললো। আমি চিৎকার করে ছেড়ে দিতে বলছি কাদতে কাদতে অনেক কাকুতি-মিনতি করতে লাগলাম কিন্তু তারা আমার কথা শুনলো না মুখ বেঁধে দিতে লাগলো। আমি হাত নারিয়ে লাফালাফি করছি চিমটি দিচ্ছে কিন্তু কাজ হচ্ছেনা দুই হাত ও বেধে ফেলল।

তারপর টেনে হেঁচড়ে সিএনজি তে তুলে দুপাশে দুজন বসলো। আর একজন বাইরে বাইক চালিয়ে আসতে লাগলো। আমার চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পড়ছে। হাত-পা সমানে ছড়াছড়ি করছি‌। আমাকে এমন করতে দেখে গালি দিয়ে ঠাস করে গালে থাপ্পড় মেরে বসলো। এত জোরে থাপ্পড় টা মেরেছে যে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। চোখ বন্ধ করে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। শব্দ হচ্ছে না। মুখ বেধে রাখার জন্য।

সিএনজি থামল একটা নিস্তব্ধ নিরিবিলি জায়গায়। আমাকে টেনে হেঁচড়ে গাড়ি থেকে নামালো। তারপর টেনে অন্ধকারে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। সারা শরীর আমার শিরশির করে উঠলো। চোখের সামনে নিজের সর্বনাশ দেখছি আমি। আজ আর কেউ আমাকে বাঁচাতে আসবে না। আজ এই জানোয়ার গুলো আমাকে খুবলে খাবে। তারপর কি হবে! আমি তো আর বাঁচতে পারবো না এই রাস্তায় গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মরা ছাড়া আমার কোন গতি নাই। আল্লাহর নাম নেওয়া ছাড়া কোন উপায় আমার কাছে নাই।

আবসা আলোতে দেখতে পাচ্ছি ছেলেগুলো আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার উপর ঝাপিয়ে পরবে তখন পেছনে থেকে হট্টগোল শোনা গেলো। আরো কিছু পায়ের আওয়াজ শুনে ছেলেগুলো থেমে গেলো। ভয় পেয়ে তিনজন পেছনে তাকানোর আগেই চারজন লোক তিনজনের উপর ঝাপিয়ে পরে। এলোপাথাড়িভাবে মারতে লাগে এখন শুধু আর্তনাদ কানে আসছে। আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে কি হচ্ছে এমন আর্তনাদের আওয়াজ আসছে কেন? তখন কারো স্পর্শ হাতে পাই। তিনি আমার হাতের বাঁধন ও মুখের বাঁধন খুলে দিলো। আর বললো,

‘ ঊষা আর ইউ ওকে?’ পরিচিত কন্ঠ শুনে আমার ভয়টা কেটে যায়। আমি লোকটার দিকে তাকালাম। মুখ স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে না! কিন্তু আমি বুঝতে পারছি এটা ইহান!!
আমি ভয়ার্ত গলায় তোতলাতে তোতলাতে বললাম, ‘ ই–হা–ন?
ইহান ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে নিজের মুখের দিকে ধরতেই আমি ঝাপিয়ে পড়লাম ওর বুকে দুহাতে শক্ত করে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ‘ওরা আমাকে এখানে…..
ইহান আমাকে কথা বলতে দিলো না। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,’ আমি আছি ভয় পেয়ো না তোমার কিছু হবে না।’

আমি আর কথা বললাম না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। ইহান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর শান্ত হতে বলছে। বললেই কি আর নিজেকে শান্ত করা যায়! ভয়ে আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে! দ্বিতীয়বারের মত ইহান আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করল। আমি ও তার আগমন চাইছিলাম। আল্লাহ এইভাবে আমার চাওয়া পূর্ণ করবে কল্পনা ও করতে পারিনি।

‘ নাও পানি খাও।’ আমার দিকে বোতল এগিয়ে দিলো ইহান। আমি মাথা নিচু করে থেকে থেকে কাঁপছি। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। একটু পর পর ফুঁপিয়ে উঠছি। ইহান আমাকে ধরে রাস্তায় ওনার বাইকের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। শো শো করে গাড়ি যাচ্ছে তাতে আলো এসে আমাদের উপর পরলো। ইহান আমার দিকে বোতল এগিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা তুলে তাকালাম। আর বললাম,
‘ খাব না।’ বলেই চুপ করে গেলাম।

ইহান আর জোর করলো না। হাত গুটিয়ে নিলো। আমি দুহাতে নিজেকে ডাকার চেষ্টা করছি। ছেলেগুলোর টানা হেচড়াতে কোথায় যে ওরনা পরে গেছে জানা নাই। গাড়ির আলোতে নিজের গায়ে ওরনা নাই দেখে আঁতকে উঠছি। অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছি। ইহান তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। তাই উনার আমার অস্বস্তি বুঝতে অসুবিধা হয় না।
ইহান উনার গায়ের কালো জ্যাকেট আমার গায়ে জরিয়ে দেয়। আমি চমকে উঠি। উনি ঝটপট স্বরে বলে,
‘ রাত করে বাসার বাইরে কি করছিলে তুমি?’ গম্ভীর স্বরে বলে উঠে ইহান।
ইহানের কথা শুনে আমি জ্যাকেট গায়ে ভালো করে জড়াতে জড়াতে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ইহানের গম্ভীর চেহারাটা আবছা দেখা যাচ্ছে। আমি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে বলি,

‘ লিনাকে নিয়ে শপিং করতে এসেছিলাম?’
‘লিনা? কোথায় লিনা?’
‘লিনা ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে বেড়াতে গেছে!’ মাথা নিচু করে বললাম।
‘হোয়াট! ও তোমাকে একা রেখে চলে গেল?’
‘ও পরশু চলে যাবে এজন্য অনেক রিকুয়েস্ট করল এজন্য আমি রাজি হয়ে গেছিলাম।ও আবার আসবে বলে অপেক্ষা করতে বলেছিলো। আমি শপিং শেষ করে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে এলো ও এলো না তারপর অটো খুঁজলাম পেলাম না। তারপর এই ছেলেদের দেখলাম আর আমি ভয় পেয়ে কি করবো বুঝতে না পেরে এগিয়ে গিয়ে বিপদ হাতের কাছে নিয়ে এলাম।তারপর ওই ছেলেগুলো…

‘ থাক আর বলতে হবে না। তোমার মতো গাধা আমি আর দেখছি বলে মনে হয়না। পাকনামি করে এগুতে কে বলেছিলো। সেদিন ও তুমি এই ভুলটাই করেছিলে আর আজ ও!
বলেই একটা লাথি মারলো বাইকে আমি কেঁপে উঠে পিছিয়ে গেলাম। আমি ভয়ার্ত চোখে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছি। ইহান একটা লাথি মেরে ক্ষান্ত হলো না আরো কয়েকটা দিলো। তারপর চুল খামচে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ সংযত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে‌। আমি হাঁ করে তার রাগ দেখছি।
হঠাৎ ছুটে এসে আমার কাঁধ চেপে ধরল শক্ত করে। আমি ব্যথা পেলাম খানিকটা। আমার সারা শরীর ই এখন ব্যথা হয়ে আছে কারণ ছেলে গুলো আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছিলো। যার জন্য আমার শরীর ও ব্যথা সাথে মাটিও লেগে আছে।

ইহান রাগ মিশ্রিত গলায় বলল, ‘ আমি যদি সময় মতো না আসতাম কি হয়ে যেতো ভাবতে পারছো! এতোটা কেয়ারলেস কি করে হলে তুমি ডাফার!’
কান্না ভুলে আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ইহানের দিকে। ইহান আমাকে ঝাঁকিয়ে ধমকাচ্ছে। এদিকে আমি ব্যাথা পাচ্ছি উনার এমন শক্ত করে আমার কাঁধ চেপে ধরায়। আমি মৃদু স্বরে বললাম,
‘ আমি ব্যাথা পাচ্ছি!’
আমার কথা ইহানের কানে যেতেই ফট করে ছেড়ে স্বরে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তখন তার বন্ধুদের কেউ হয়তো কল করে উনাকে উনি ফোন কানে নিয়ে শুধু একটা কথাই বলে, ‘ তোরা হসপিটালে রেখে চলে যা‌। হুম আমি ওকে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি যাব।’

ফোন কেটে পকেটে রেখে বাইকে উঠে বসলো। আমি ইহানের দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেলাম। ইহান একবার ও আমাকে বাইকে উঠতে বলে নি। আমি তার বলার অপেক্ষা না করেই পেছনে উঠে বসলাম। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো আমার দিকে ইহান। আমি সেসব এ তোয়াক্কা করলাম না। আমার এখন বাসায় যাওয়া দরকার।
আগে যতবার বাইকে উঠতে বলেছে আমি না করেছি কিন্তু আজ নিজে থেকে উঠলাম এটা দেখে ভারি অবাক হয়েছে ইহান যা তার মুখ স্পষ্ট ভাবে বলেই দিচ্ছে।

‘ কি হলো যাবেন না?’
আমার কথা শুনে ইহান বললো, ‘ তুমি বাইকে উঠলে কেন? তোমার না ভয় করে!’
‘ আজ করছে না। চলুন প্লিজ আমার ভালো লাগছে না।’
ইহান আর কথা বাড়ালো না। বাইক স্টার্ট দিলো। কাঁপা হাত বাড়িয়ে ইহানের কাঁধে রাখলাম। সারা রাস্তা আর কোন কথা হলো না আমাদের মধ্যে। নিরবতায় কেটে গেলো বাকি সময়টা। রাস্তায় আমার ব্যাগ পরে গেছে সাথে শপিং ও পার্স হারায় গেল। বাসায় যে কিভাবে ঢুকবো। আম্মু এসব জানতে পারলে কি যে হবে। গন্তব্যে খুব দ্রুত‌ই পৌঁছে গেলাম যেন। বাইক থামতেই হালকা হেলে পরলাম আমি ইহানের উপর। বাসায় সামনে দেখেই তারাতাড়ি নেমে দাঁড়ালাম।
ভেতরে ঢুকার সহজ পাচ্ছিনা। আমার এই অবস্থা দেখে আম্মু সব বুঝে যাবে। আমি চিন্তিত মুখে গেটের দিকে তাকিয়ে আছি।

‘ কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে যাও!’
ইহানের কথায় আমি অসহায় মুখ করে উনার দিকে তাকালাম। আমার শুকনো ভয়ার্ত মুখ দেখে ইহান ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ কি হলো মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ কি করে বাসার ভেতরে ঢুকে আমার ভয় করছে। আম্মু জিজ্ঞেস করলে কি বলবো? খুব বকবে আমাকে। এদিকে লিনা বাসায় ফিরেছে কিনা তাও জানি না। আমার ও এই অবস্থা সবকিছু নিয়ে আমার খুব ভয় করছে।’
‘তাহলে কি সারা রাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকার প্ল্যান করেছো নাকি?’

আমি ইহানের দিকে চোখ করে তাকিয়ে আছে কি বলব বুঝতে পারছি না। ইহান আমার অবস্থা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বাইক পার্ক করে নেমে দাঁড়ালাম। আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছি। কি করতে চাইছে এইহান সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি। ইহান আমাকে রেখেই গেটের দিকে এগিয়ে গেল। আমি হকচকিয়ে দৌড়ে তার পাশে গিয়ে বললাম,
‘একি আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’
‘তোমার বাসায়! চলো আমার সাথে আমি আন্টির সাথে কথা বলে নেব!’
‘কিন্তু আপনি…

‘তুমি না বলেছিলে আন্টির সাথে সব শেয়ার করো।বিশেষ করে আগেরবারের কথাটাও তো বলেছিলে তাই না! আমার মনে হয় না আমি গেলে আন্টি আমাকে ভুল বুঝবে!’
ইহানের কথা শুনে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।এই কথাটা তো আমার মনেই ছিল না। ইহানের কথা তো আমি অনেক আগেই আম্মুকে বলেছি। আর আম্মু ইহানকে খুব পছন্দ করে।
আমি ইহানের পিছন পিছন ভেতরে চলে গেলাম। কলিংবেল চাপতেই লিনা এসে দরজা খুলে দিল। ভেতরে এসে দরজার কাছে লিনাকে থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। ভয়ে ওর মুখটা শুকিয়ে একটু খানি হয়ে আছে। আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।

ইহান আমার সাথেই ভেতরে এলো। আম্মুকে আসেপাশে দেখলাম না। আমি ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। ইহানকে সোফায় বসিয়ে দিলাম। লিনা টেনে আমাকে নিয়ে এলো।
‘ তোর এতো দেরি হলো কেন? আসতে কোথায় ছিলি তুই?’
আমি ঠাস করে একটা চর দিলাম লিনাকে। চড় খেয়ে ও লিনার কিছু হলো না। আমাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগল। এত রাত হলো কেন থাকে না কি হয়েছিল? কোথায় ছিলাম? নানান কথা।
‘তুই একটুখানি সময়ের কথা বলে হাওয়া হয়ে গেছিলি কোথায়?’

‘সরি রে ওর সাথে সময় কাটাতে গিয়ে আমি তোর কথা ভুলেই গেছিলাম। পরে যখন মনে পড়ল তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো। আমি ভাবছি তুই বাসায় চলে গেছিস।তাই তুষার আমাকে বাসায় পৌঁছে দেয়। আমি ভয়ে ভয়ে বাসায় এসে ভাবছিলাম ফুপিকে কি মিথ্যে কথা বলব? তুই আগে চলে এসেছিস আমি পরে কেন এলাম! কিন্তু বাসায় এসে দেখি তুই আসিস নাই। ফুপি তোর কথা বলে আমার মাথা খেয়ে দিয়েছিল।

আমি চিন্তায় পড়ে যাই রাত হয়ে গেছে তুই এখনো বাসায় আসিস না কোথায় গেলি। আমি ফুপিকে বলেছি মিথ্যা করে, যে তুই তোর ফ্রেন্ডের সাথে তার বাসায় গেছিস আমাকে চলে আসছে বলে তুই একটু পর আসবি। কোন বান্ধবী? কেন রাতে গেলি? নানা কথা বিশ্বাস করেছে কিনা তাও জানিনা কিন্তু আমাকে সন্দেহ করেছে আর বকেছেও একা যেতে দিছি আমাকে নিলি না কেন? আমি বলেছি আমি যাইনি একাই আপার জন্য জেদ করেছি। আমি তুষারকে কল করেছিলাম তোর খোঁজ করতে ও তোকে খুঁজছে। আল্লাহ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল রে। তুই সুস্থ ভাবে ফিরেছিস আমি বেঁচে গেছি না হলো আমি চিন্তায় ই মরে যেতাম। ভয়ে আমি হাঁসফাঁস করছিলাম।

এবার আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আর কি হয়েছিল? রাগী গলায় সব কিছু বললাম। সব শুনে ও আরো ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো আমার কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা।
‘ না ইহানের জন্য বেঁচে গেছি। না হলে আজ আমার সর্বনাশ কেউ ঠেকাতে পারত না।’
আম্মুর আওয়াজ আসতেই দুজনে চমকে উঠলাম। ইহানকে যে বাইরে বসিয়ে রেখেছি ভুলেই গেছিলাম। আমি তাড়াতাড়ি গায়ের জ্যাকেট খুলে ওরনা একটা জরিয়ে বাইরে এলাম। ইহান কিছু বলার আগেই আম্মুকে লিনার বলা মিথ্যে কথাটা বলতে হবে। না হলে দুজনের কারো রক্ষে থাকবে না। যদি এতক্ষণে বললে দেয় তাহলে.

তাড়াতাড়ি নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বের হলাম। টানা হেচরায় আমার অবস্থা তো নাজেহাল হয়ে গেছিলো।
ড্রইং রুমে এসে আমার চোখ চড়কগাছ। আম্মু আর ইহান অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে কি যেন কথা বলছে। আমাকে দেখে দুজন কথা থামিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমাকে দেখেই হুংকার দিয়ে উঠলাম আম্মু,
‘ এই তুই লিনাকে একা রেখে কোথায় গিয়েছিলে রাতের বেলা? কোন বান্ধবীর বাড়ি হ্যা বল?’
আমি ঢোক গিলে কিভাবে মিথ্যে কথাটা সাজিয়ে গুছিয়ে বলব তাই সাজাচ্ছি মনে মনে।এদিকে ইহানের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি সত্যি কথাটা বলার জন্য মুখ খুলবে। আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে আম্মুর দিকে তাকালাম। লিনা আমার পাশে দাড়িয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে অনবরত বলার জন্য।

ইহান এগিয়ে এসে বলতে যাবে আমি ছুটে এসে আম্মুর সামনে এসে দাড়িয়ে বলতে লাগলাম,
‘ আম্মুকে আই এ্যাম সরি। আসলে কি হয়েছে বলো তো। আমার সাথে শপিং মলে ইমা আপুর সাথে দেখা হয়েছিল। ইমা আপু কে বলতো ওই যে একদিন ওনার এক্সিডেন্ট হয়েছিল আমি তার সাথে ছিলাম। আব্বু রক্ত দিয়েছিল। সেই আপুটার সাথে দেখা আর আপুটা আমাকে দেখেই ছুটে এসে বললো তার সাথে তার বাসায় যেতে। না নিয়ে নাকি এক পা ও নড়বে না। এতো বলায় আমি রাজি হলাম কিন্তু লিনা যাবে বলে দিলো ওর নাকি মাথা ব্যাথা তাই বলে চলে এলো একাই আমি নিষেধ করেছি শুনেনি। আর আমাকেও আপুর জোরাজুরিতে যেতে হলো। পরে রাত হ‌ওয়ায় ওযে ওনার ভাই। মানে ইহান ভাইয়াকে আমায় পৌঁছে দিতে পাঠিয়েছে। তুমি যদি বিশ্বাস না করো এজন্য ইহান ভাইয়াকে রুমে এনে বসিয়ে রেখেছি।’

ইহান ভাইয়া আমার দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাবছে এতো বড় মিথ্যা কথা কেন বললো ফাজিল মেয়েটা। আমার দিকে ইহান কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। আর লিনা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আমার কথা শুনে।
লিনা চলে গেছে কাল। আমি ওর সাথে খুব একটা কথা বলিনি। ওর এই বিহেভিয়ার আমার খুব অপছন্দ ওর জন্য আমি আম্মুকে কাছে খুব বকা খেয়েছি। এতো বড় বিপদে পরেছিলাম। আম্মুর কাছে সেদিন মিথ্যা বলে ধরা খেয়ে গেছিলাম। কি একটা পরিস্থিতিতে পরেছিলাম আমি। ধরা খেয়ে ভয়ে লিনা কেঁদেই দিয়েছিলো।

বকা খাওয়ার আগেই ও কেঁদে উঠে। আর আমি চোরের মত মুখ করে এদিক ওদিক তাকাতে ব্যস্ত হয়ে পরি। কোন দিক দিয়ে পালাবো ভাবছিলাম। আমি ইহানের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখ টিপে হাসছে। আমি ভয়ার্ত চোখে একবার তাকিয়ে আম্মুর দিকে তাকায়,

‘ আমার মেয়ে তো কখনো আমাকে মিথ্যা বলেনা আজ কেন বললি? এটা আমি তোর থেকে আশা করিনি।’
আমি ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ সরি আম্মু। তোমাকে মিথ্যা বলার কোন ইচ্ছা আমার ছিলো না। কিন্তু লিনার জন্য আমি বলতে চেয়েছিলাম। ওতো চলেই যাবে তার আগেই তোমার চোখে ওকে খারাপ করতে চাইনি। তাই আমি…
আম্মুর ধমক খেয়ে কথা বন্ধ হয়ে যায়। আমি কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি। লিনা আম্মুর পায়ে পরে কান্না করে দিলো।

‘ ফুপি বাবাকে কিছু বলো না। আমি আর জীবনে ওই ছেলের সাথে কথা বলবো না। এই তোমায় ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি। বাবা এসব জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে। বাবা কতো রাগি তুমি তো জানো বলো।’
কাকুতি মিনতি করতে লাগলো। আমি ওর অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আম্মু লিনাকে কঠিন কিছু কথা বলছে লিনা মাথা নিচু করে হ্যা বলছে।

ইহান এই সুযোগে আমার পাশে দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘ বাব্বারে কি সুন্দর একটা কাহিনী বানিয়ে ফেলেছিলে। তোমাকে ধরা কারো সাধ্য হতো না। যদি না এখানে আমি থাকতাম। জানতেই পারতাম না এতো সুন্দর গুছিয়ে গল্প বানাতে পারো। তুমি কিন্তু লেখক হতে পারবে।’
ইহানের টিটকারি মারা কথা শুনে আমি কড়া চোখে তাকালাম। তারপর মুখটা অসহায় করে বললাম,
‘ আপনি এই ভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দিলেন।’
‘আগে যদি জানতাম তুমি এমন সুন্দর একটা বানানো কাহিনী বলার প্লান করেছেন তাহলে…
‘তাহলে কি?’
‘থাক তাহলে আর শুনতে হবে না।বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে কতবার যে ঘুরতে গেছো। আর মাকে এমন কাহিনী শুনিয়ে বোকা বানিয়েছো সেটাই ভাবছি!’

‘একদম বাজে কথা বলবেন না! আমি আম্মুকে কখনোই মিথ্যে কথা বলি না। আজকে বলতাম না কিন্তু লিনা মিথ্যে বলে দিয়েছে আগে। আর আমাকে অনুরোধ করেছে ওকে বাঁচিয়ে দেবার জন্য এবারের জন্য। এজন্য আমি এটা করেছিলাম। কিন্তু কিছুই হলো না। মাঝখান থেকে আমি মিথ্যেবাদী প্রমাণ হয়ে গেলাম। আপনাকে এখানে আনা টাই আমার ভুল হয়েছে।বাঁচানোর জন্য আনলাম উল্টা আপনি আমাকে আরো ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের নাকানিচোবানি খাওয়া টা দেখছেন।’

এদিকে আম্মু মামাকে কল করার জন্য ফোন হাতে নিয়েছে। লিনা পারেনা অজ্ঞান হয়ে যায়। কেঁদে কেঁদে আম্মুকে কত কথাই না বলছে। আম্মু মানছে না। উল্টা বলে যাচ্ছে এখানে প্রেম করার জন্য এসেছি। ছেলেদের সাথে দেখা করছিস। এই বয়সে এতোসব। আবার আজকে তার সাথে দেখা করতে গেছিলি। ঊষার আজ কতো বড় বিপদ হয়েছিলো। সময় মত ইহান লক্ষী ছেলেটা না আসলে কি হতো আমার মেয়ের। তুই যে ছেলেটার সাথে কথা বলছিস সে ও তো খারাপ হতে পারে। তাহলে তোর ওতো বিপদ হতে পারে। আমার বাসাই এসে এসব করে বেড়াচ্ছি। এইসব জানার পর আমার ভাইয়ের সাথে আবার আমার সম্পর্ক খারাপ হোক সেটা আমি চাই না। এখন এই মুহূর্তে আমি সব জানিয়ে দেবো। যার মেয়ে সেই শাসন করুক।

লিনা দৌড়ে এসে আমাকে বললো,’ ঊষা ফুপিকে বলনা আব্বা কে জেনো এসব না জানায়। এইসবের একটা কথা যদি আব্বার কানে যায়। আমাকে আর পড়ালেখা করতে দেবে না রে‌। লিমা আপুর আগে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। আব্বু কত রাগী জানিস। আমাকে মেরে হাড্ডি ভেঙ্গে দেবে।আমি কথা দিচ্ছি জীবনে আর তুষারের সাথে কথা বলবা না‌। এক্ষুনি আমি ওর নাম্বার ব্লক করে দেবো। আর কোনদিন কোন ছেলের সাথে কথা বলব না। এবার মতো ক্ষমা করে দিতে বল না ফুপিকে। আমি আর কোনদিন কথা বলব না প্লিজ প্লিজ।’

কেঁদে-কেটে লিনার অবস্থা একদম নাজেহাল খুব ভয় পেয়েছে ভয় সারা শরীর কাঁপছে ওর। আমি ইহানের দিকে তাকালাম। আমি এখন কিছু বললে আম্মু আমাকে মেরে দেবে। আমার কথা তো শুনবে না তিনি ফুঁসছে।
‘এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? আমার হেল্পের প্রয়োজন?’
‘হুম’ অসহায় মুখ করে বললাম।

‘ সরি আমি আর হেল্প করতে পারবো না। এমনিতেই আজ অনেক হেল্প করেছি। বিনিময়ে আমি তো কিছুই পেলাম না। আমার কাজ শেষ এবার গুড বাই। আমার লেট হয়ে গেছে।’
‘প্লিজ আম্মুকে একটু শান্ত করুন। মামাকে বললে সত্যিই খুব খারাপ হবে। লিনাকে ক্ষমা করে দেওয়াটা উচিত। ও ত ভুল করেছে আর এখন ভুল বুঝতে ও পারছে। এখন তোকে ক্ষমা করা উচিত তাই না।’
‘ অতো শত আমি বুঝিনা। আমি চলে যাচ্ছি।’

ইহান আমার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে চলে যাওয়া ধরলো। আমি ছুটে গিয়ে তার হাত ধরলাম। এদিকে আম্মুর মামার সাথে কথা বলছে এখন ও লিনার ব্যাপারটা বলে নাই। লিনা ফ্লোরে বসে কাঁদছে।
আমি ইহানের হাত ধরে অনুরোধ করলাম, ‘আপনার সব কথা আমি শুনবো প্লিজ আম্মুকে বলা থেকে বিরত করুন!’
ইহান মুখে শয়তানী হাসি দিয়ে আম্মুর কাছে গিয়ে ফোনটা টেনে নিয়ে বন্ধ করে দিলো।
‘এটা কি করলে তুমি ছেলে।’ রেগে বললাম আম্মু।

‘ আন্টি আপনি একটু শান্ত হোন। রাগের মাথায় কিছু করবেন না। পড়ে না আপনার নিজের‌ই আফসোস করতে হয়। এমন কিছু করে অবশ্যই পরে আফসোস করতে চান না!’
‘কি বলতে চাইছো তুমি? আমার মেয়েকে দুই বার তুমি বাঁচিয়েছো বিপদ থেকে। আমি তোমার উপর অনেক কৃতজ্ঞ। তুমি সত্যিই খুব ভালো একটা ছেলে। আজ কালকার দিনে এমন ছেলে পাওয়া মুশকিল। তাই বলে তুমি আমার কোন কাজে বাধা দিতে পারো না।’

‘আন্টি আমার কথাটা শুনুন। আমি আপনার কোন কাজে বাধা দিয়ে বেয়াদবি করতে চাইনা।লিনা কাজটা খুবই খারাপ করেছে। এভাবে ওর ঊষাকে একা রেখে কোথায় যাওয়া উচিত হয় নাই। আবার অপেক্ষা করতে বলেছিলো। কোনটাই আমি ওকে সাপোর্ট করছি না। কিন্তু ও ভুল করে সেটা বুঝতে পারছে ভুল শুধরে নিতে চাচ্ছে। আমার মনে হয় আপনার লিনাকে ক্ষমা করা বিষয়টা আরেকটু ভাবা উচিত। ঠান্ডা মাথায় একটু ভাবুন তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নেন কি করবেন। এভাবে রাগের মাথায় আরেকজনকে এসব বলে তাকে চিন্তায় ফেলা আমার মতে ঠিক হবে না।’
ইহান একদুমে তুমি কথাগুলো বলে থামল। আমি ভয়ার্ত চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি। আম্মু ইহানের কথা মেনে নেয় যেন।

চিন্তিত চোখের আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি। ইহান আরো কি কি যেন বলতে লাগলো। আম্মু মুখে রাগী ভাবটা কমতে লাগল। আম্মু ঠান্ডা হয়ে সোফায় বসে কি যেন ভাবছে। ইহান দিকে তাকিয়ে ইহানকে ও বসতে বললো।
এসব বিষয়ে আর কথা বললো না। আম্মু একবার আমার আর লিনার দিকে তাকিয়ে রুমে যেতে বললো। আমার সুরশুর করে রুমে চলে এলাম।
আমি দরজায় উঁকি মেরে দেখলাম ইহান আর আম্মু কি যেন বলছে। ইহান না না করে উঠে দাঁড়ালো তারপর চলে গেল।

আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ইহানের যাওয়া দেখছি। আজ এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে ইহানের জন্য। তার জন্য আমি এখন সুস্থ আছি। কত বড় বিপদ থেকেই না তিনি আমাকে বাঁচালো। আম্মুর সাথে কথা সুন্দর বিহেভ করল। ছেলেটা সত্যি খুব ভালো। আমার মনে অজানা এক ভালো লাগার অনুভূতি হতে লাগলো। আমি এক দৃষ্টিতে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ মনে পরলো ইহানের জ্যাকেটটা তো আমার কাছে। ইহানের পরনের একটা কালো টি শার্ট। হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে। গেট ক্রস করার আগে একবার পেছন দিকে তাকালো। তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। আমি নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে ছিলাম। ইহান বাইকে চড়ে চলে গেল। আমি ওর চলে যাওয়া দেখে মুখ মলিন করে চলে এলাম। আমি চাইলে চিৎকার করে জ্যাকেটের কথা বলতে পারতাম কিন্তু বললাম না।

আম্মু লিনাকে কড়া করে শাসন করেছে। এমন কাজ আবার করলে তখন আর ক্ষমা করবে না। লিনা মাথা ছুঁয়ে কথা দিয়েছে আর কখনও কোন ছেদের সাথে কথা বলবে না। আমার সাথে আম্মু কথাই বলেনা দুইদিন ধরে। কাল লিনা চলে গেছে। এখন আমি বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছি। আম্মুকে দেখলাম কাথা হাতে সোফায় বসে আছে। আমি সেদিকে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম।
আম্মু কোন রিয়েক্ট করলো না। আমি আহ্লাদ গলায় বললাম,

‘আম্মু প্লিজ তুমি আমার সাথে কথা বল! তুমি কথা না বললে আমার একটু ভালো লাগে না। কিচ্ছু করে শান্তি পায় না!তুমি তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলো সবার আগে তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোমার সাথে আমি এমন কোন কথা আছে যা অস্বীকার করেছি। বল! যত প্রপোজ পেয়েছি।সব তোমার কাছে বলেছি। আমি কখনো কোনো বিষয় তোমার কাছে গোপন করেনি। কিন্তু লিনার বিষয়টা বলে শুধুমাত্র তোমাকে চিন্তায় ফেলতে চাইনি। আর তুমি লিনা কে বকা দিবে। দুই দিন পর ও চলে যাবে। এজন্য ওকে তোমার চোখে খারাপ করতে চাইনি। ও ভয় পেয়ে অনেক অনুরোধ করেছিল। আমি ফেলতে পারিনি।না হলে তোমাকে মিথ্যে বলার কথা ভাবতামও না। আর কখনো কোন কিছুর বিনিময় তোমাকে মিথ্যে বলব না । এবারের মত ক্ষমা করে দাও। প্রমিস করছি।’

লিনা যাওয়ার তিনদিন কেটে গেছে। বাসায় বসে বসে থেকে বা কার ভালো লাগে আমারও ভালো লাগেনা। ফেসবুক এ রিমা তুলি ওদের সাথে কথা হয়েছে। ওরা সবাই ওদের নানু বাড়ি আছে। আমি নানু বাড়ি যেতে চাইছিলাম কিন্তু আম্মু যেতে দেয় নি। আম্মু এখন যেতে পারবেনা এজন্য আমাকে একটা ছাড়বে না। আমিও আর জোর করিনি। আমার মনটা খারাপ হয়ে আছে। কেন জানি না। ইহানকে মিস করেছি। কেন করেছি তাও জানি না। সেদিনের পর থেকে অদ্ভুত ভাবেই ইহানকে মনে পরে। তাই তো বেহায়ার মত ফোন করে বসেছিলাম। কিন্তু ইহান পাত্তা দেয়নি। উল্টা ভাব দেখিয়েছে।

সেদিন ফোন দিয়ে সালাম দিলাম। আমার বুকের ভেতর ধুকপুক করছিলো। ইহান সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
‘ কি দরকারে কল করেছো?’
আমি বললাম, ‘ না এমনি দিলাম। কেন আপনি কি বিজি?’
সাথে সাথে ওপাশ থেকে ইহান ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘ হ্যাঁ আমি খুব বিজি আছি দরকার না থাকলে ফোনটা রাখি।’
আমার মুখটা অপমানে লাল হয়ে গেছিলো। দরকার ছাড়া কি কল করা যায় না।কি মনে করে উনি নিজেকে আমার সমস্ত দরকারে উনি এছাড়া কি সাহায্য করার মত আর কেউ নাই? ভাব দেখলে বাঁচি না। উনাকে নিয়ে ভাবাটাই আমার উচিত হয়নি।এইভাবে কল কেটে দিলো। রাগে ছুঁড়ে ফোন বিছানায় ফেলে দিয়েছিলাম।

মনটা ভালো করার জন্য চলে এলাম ছাদে। রেলিং এ দাড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ পাশের ছাদে চোখ গেল মুনিয়া আপু আর একটা ছেলে খুব ক্লোজ হয়ে বসে কি যেন কথা বলছে। আমাদের পাশের বিল্ডিং তাদের আমি চোখ ছোট ছোট করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে দুজনের হাত আবদ্ধ করা। মুনিয়া আপু খুব পর্দাশীল মেয়ে। অনার্সে পড়ে। সব সময় হাত-পায়ে মোজা ও মুখ ঢাকা থাকে। তিনিও যে প্রেম করে আর এইভাবে বয়ফ্রেন্ডের সাথে গল্প করতে পারে জানা ছিলনা। মাথায় হাত দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমার দৃষ্টি ঘুরে নিচের দিকে গেলো একটা কাগজ আলাদা গায়ে কেউ ছুড়ে মারতেই..
আমি চমকে কাগজ হাতে নিচের দিকে তাকালাম। কে এন অসভ্যের মত কাগজ ছুড়ে মারল??
কুচকানো কাগজের বলটার হাতে নিয়ে নিচের দিকে উঁকি ঝুঁকি মারছি আমি। এই কাগজ কে ছুঁড়ল আমার দিকে? কাউকে দেখছি না। ছুড়ে মেরে লুকিয়ে পড়েছে। চিন্তিত চোখে কাগজ টার দিকে তাকিয়ে আছি। আদিম যুগের মত কি কাগজে প্রেমপত্র লিখে ছুড়ে মারল নাকি? আঙ্গুল চালিয়ে বল কাগজটা মেলে ধরলাম। খুব বড় না ছোট‌ই কিন্তু তার মাঝখানে দুইটা শব্দই লেখা আছে। আমি ভ্রু কুঁচকে লেখাটার দিকে তাকিয়ে আছি।
কাগজে লেখা আছে,

‘ নিচে আসো ‘
লেখাটা দেখে আমি আরো হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। নিচে আসো মানেটা কি? এটা কে লিখে পাঠালো আমাকে! আর নিচেই বা যেতে বলল কেন? আর আসেপাশে তো তেমন কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কি অদ্ভুত!
এমন অদ্ভুত কান্ড কি করলো! গিয়ে কি দেখব!সন্ধ্যা হয়ে আসছে এদিকে। এখন আবার নিচে যাব! যেতেও মন চাচ্ছে! কে এমন কান্ড করলো দেখার জন্য! আবার আম্মু কিছু যদি বলে! আগের মত আম্মু আর আমাকে স্বাধীনতার দেয়নি। কয়েক দিন ধরে বলে দিয়েছে বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ। সেদিনের জন্য আম্মু তো আমার উপর খুব রাগ ছিল। এখন মনটা ভালো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে খুব কঠিন। আমাকে নিয়ে কোন রিক্স নিতে রাজি না তিনি।

কিন্তু নিচে যাওয়ার ইচ্ছাকে ধমাতে পারলাম না। নিচে এসে দেখলাম আম্মু বাইরে না রুমে বসে কি যেন করছে এই সুযোগ আম্মু মাগরিবের নামাজের আগে বের হবে না মনে হচ্ছে আমি। তারাতাড়ি মেইন দরজা খুলে দরজা চাপিয়ে বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে। দারোয়ান চাচার সাথে হাসি বিনিময় আর কেমন আছেন চাচা বলে গেটের বাইরে পা রাখতেই কেউ ছুটে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো। তাকিয়ে দেখি ইহান! ইরানের কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। খয়রি শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। ফর্সা হাতে লোমগুলো লেপ্টে আছে শরীরে ঘামের জন্য। মনে হচ্ছে যুদ্ধ করে এসেছে কোথাও থেকে। আমি হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ঘামা ত্বক ভাবে যে কাউকে এত সুন্দর লিখতে পারি হ্যাঁ কি না দেখলে জানতে পারতাম না।

রুমাল বের করে ইহান কপালের ঘাম মুছে আমার হাত টেনে ধরলো। আমি চমকে উঠে হাতের দিকে তাকালাম। কিছু বলতে ভুলে গেছিলাম। এতোক্ষণ হা করে ইহানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলাম।
কিছু বলার আগেই ইহান আমাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। আমি অনেক কথা বলতে চাইছি। এসব কি হচ্ছে আমাকে ইহান টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? কেন নিয়ে যাচ্ছে? উনি এখানেই বা কেন? আর চিঠি ওয়ালা ক‌ই?

আচ্ছা চিঠি কি ইহান দিয়েছে? এতো এতো প্রশ্ন আমার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু কিছুই মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। আমি রোবটের ন্যায় ইহানের সাথে হেঁটে যাচ্ছি। কতোদিন পর দেখলাম। এই কয়দিন তাকে আমি অসম্ভব মিস করেছি। আর এত্ত মিস করার পর আচমকা চোখের সামনে দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। অতিরিক্ত উত্তেজনায় আমি কথা বলতে ভুলে গেছি।

ইহান আমাকে নিয়ে জামাল কাকার চেয়ার ছোট্ট দোকানে এসে থামলো। আর আমাকে টেনে নিয়ে বসিয়ে দিলো ব্রেঞ্চে। আর নিজেও আয়েশ করে বসে কাকার কাছে চা চাইলো দুই কাপ। আমি ইহানের দিকে দৃষ্টি রেখেই বললাম,
‘ এসব কি হচ্ছে বলুনতো??’
ইহান উওর দিলো না কাকার কাজ থেকে পানি নিয়ে মুখ ধুয়ে দিলো‌। আর বললো,

‘ কি হচ্ছে?’ ইহান মুখ মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
আমি বোকা চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ কি হচ্ছে বুঝছেন না আপনি? আপনি এখানে কি করছেন? আর আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন? কিছু তো বুঝতে পারছি না আমি। সব আমার মাথা উপর দিয়ে যাচ্ছে।’
ইহান আমার কথা শুনে বললো, ‘কত হেল্প তোমার বিনিময়ে একটা ধন্যবাদও দিলিনা। তাই নিজেই ধন্যবাদ ও চা খেতে চলে এলাম।’

‘ এ্যা..
ইহান আমার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে হো হো করে হেসে উঠলো। আর বললো, ‘ কি হলো হা করে আছো কেন?’
আমি মুখ বন্ধ করে কটমট করে তাকিয়ে আছি।
‘ ওই কাগজ টা আপনার ছিলো?’
ইহান উত্তর দিল না। চা দিতেই তা হাতে নিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে চুমুক দিতে লাগল। আমি উত্তরের আশায় তার দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু আমাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজের কাজে মগ্ন হয়ে আছে।
‘ আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে ‘চা’ খাও! শরবত হয়ে গেল তো!!’
‘আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেন?’

‘আমি খুব ক্লান্ত! আমাকে দেখে বুঝতে পেয়েছ নিশ্চয়ই।তাই এখন শান্তিমতো একটু চাও খেতে দাও।’
‘ আপনি এতো টায়ার্ড কেনো? কোন রাজকার্য করে এসেছিলেন শুনি?
‘আমি তোমার থেকে ধন্যবাদ ট্রিট হিসেবে চা খেতে এসেছি! তুমি নিজে থেকে আর ট্রিট দিবে না। তাই এইভাবে নিয়ে আসতে হলো।’
‘আপনি আমাকে কৃপণ বলছেন? আপনিই তো লাপাত্তা হয়ে গেছিলেন। কোন খোঁজ খবর নাই। এখন হঠাৎ করে এসে আমাকে কৃপণ বলেছেন?’ নাক ফুলিয়ে বললাম।
আমার কথা শুনে ইহান হো হো করে হেসে দিলো। আমি গাল ফুলিয়ে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছি। ফট করেই হাসতে হাসতে ইহান আমার গাল টেনে দিলো। আর বললো,

‘ গাল ফুলিয়েছ কেন?’
আমি চমকে পিছিয়ে গালে হাত দিয়ে বললাম, ‘ এটা কি হলো আপনি আমার গাল টানলেন কেন?’
‘ পিচ্চি রা গাল ফুলিয়ে অভিমান করলে। দেখতে খুব ইনোসেন্ট কিউট লাগে‌ দেখতেই। তখন গাল না টেনে থাকতে পারিনা গো।’
আমি ইহানের কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। আমাকে পিচ্চি বললো। আমাকে কোন দিক দিয়ে পিচ্চি লাগে। আমি তো যথেষ্ট বড়। আর কয়েকদিন পরে কলেজের স্টুডেন্ট হয়ে যাব‌। আর উনি আমাকে পিচ্চি বলছে! নিজের দিকে তাকিয়ে আছি আজকে আমি পড়ে আছি নীল প্লাজু, গোলাপি টপস ও ছোট জর্জেট গোলাপি ওরনা। পেছনে থেকে সামনে ঝুলিয়ে রেখেছি।

এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ১৬+১৭+১৮+১৯+২০

চুল গুলো খোলায় আছে বাসায় বেশির ভাগ সময় চুল খোলা রাখা হয় আজকে চুল খোলা রেখে ছাদে গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই তো ছুটে বাইরে এসেছি তাই চুল বাধা হয়নি। কোমর পর্যন্ত চুল আমার পিঠে ছরিয়ে আছে আচ্ছা এই এলোমেলো চুলের জন্য কি আমাকে পাগল লাগছে দেখতে? আমি চায়ের কাপ পাশে রেখে দুই হাতে এলোমেলো চুল ঠিক করতে লাগলাম। না পেরে হাত খোপা করার চেষ্টা করছি তখন ইহান বলে উঠলো,
‘অগোছালো চুলে পিচ্চি তোমায় লাগছে বড়‌ই সুন্দরী। এইভাবেই থাকতে দাও না খারাপ লাগছে না তো পিচ্চি!!’
আমার হাত থেমে গেলো আমি কটমট করে ইহানের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘বারবার আমাকে পিচ্চি বলছেন কেন? আমাকে কোন দিক দিয়ে আপনার পিচ্চি লাগে!’

‘ সব দিক দিয়েই তো লাগছে!’ বলেই পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরোক্ষ করতে লাগলো।
ইহানকে এভাবে তাকাতেই দেখে আমার খুব অস্বস্তি হতে লাগলো।
ইহান উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘ চলো সন্ধ্যা হয়ে গেল।’
সন্ধ্যা হয়ে গেল শুনতেই ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।আমার কথা তো মনেই ছিল না কখন বেরিয়ে এসেছিস অন্ধকার হয়ে এসেছে আমি এখানেই বসে নিজের ভাবনায় বিভোর হয়ে আছি।

হাঁটতে হাঁটতে আমি ইহানের সাথে বাসায় চলে এলাম। ইহানের পাশে হাটতে কেন যেন খুব ভালো লাগছিলো।মনে হচ্ছিল সময়টা যদি এখানেই থেমে যেতো। এভাবেই শত শত জনম ইহানের পাশে হাঁটতে পারতাম খুব ভালো হতো। আমি একটু পরপরই আড়চোখে অনেক দিকে তাকাচ্ছিলাম। কিন্তু ইহান একবার ও আমার দিকে তাকালো না। তার দৃষ্টি শুধু ফোনে নিবদ্ধ ছিলো।

গেটের ভেতরে ঢোকার আগে ইহান আমাকে ডেকে বলেছে,
‘বাই নেক্স টিট খুব তারাতারিই নেব।’
আমি কিছু বলবো তার আগে একটা বাইক এলো। বাইকে তার বন্ধু কে বসে থাকতে দেখলাম‌। আমার চোখের সামনে ইহান বাইকে উঠে চলে গেল। আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না। আমি হতভম্ব হয়ে কতক্ষণ ঐখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম আবার ট্রিট নেবে মানেটা কি!!

এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ২৬+২৭+২৮+২৯+৩০