এক চিলতে রোদ সিজন ২ শেষ পর্ব 

এক চিলতে রোদ সিজন ২ শেষ পর্ব 
Writer Nondini Nila

সকাল থেকে আমি শাড়ি পছন্দ করছি। আজ আমি। শাড়ি পরবো‌। কথায় কথায় ইহান বলেছিল আমাকে নাকি শাড়ি খুব ভালো লাগে ওর‌। তাই ইহানের পছন্দ মতো আজ শাড়ি পরতে চাই।
ইহান নিশ্চয়ই আজ আমাকে ফুল দিয়ে প্রপোজ করবে। সেই খুশিতে আমি বাকবাকুম করছি। আজ তো ভালোবাসা দিবস। সেই জন্য আমি এতো আয়োজন করছি। এখন ইহান আমাকে কল করেনি ঘুরতে যাওয়ার জন্য। রাতেই শেষ কথা হয়েছে। আম্মুকে আগেই ফ্রেন্ডের বাসায় যাব বলে রেখেছি। ইহান বললেই রেডি হয়ে বেরিয়ে পরবো। আজ আর আমি নিজে থেকে কল করবনা।

দিন গরিয়ে রাত হয়ে গেল ইহানের খবর নাই‌। বিকেলে আম্মু ও সুন্দর করে সাজুগুজু করে বসে ছিলো আব্বু আগেই এসে তাকে নিয়ে ঘুরতে গেছিলো আমাকে যেতে বলেছিল আমি যাই নি। তাদের কে একাকিত্ব সময় কাটাতে দিয়েছে। আগে যত বার গিয়েছে আমি যেতাম তখন এটা বুঝতাম না। এখন বুঝি। ইহান এইভাবে সারাটা দিন আমাকে ওয়েট করালো। আমি বিকেলে মন খারাপ করেই তুলিদের বাসায় এসে বসে আছি। আম্মু কে কল করে বলেছি আজ এখানে থাকবো। আম্মু রাগ করলেও শুনিনি। আমার খুব কষ্ট লাগছে ইহান এই ভাবেই এই দিনটা আমার সাথে কথা না বলে দেখা না করে থাকলো। উনি কি আদো আমাকে ভালোবাসে? না সব নাটক। এখন তো সব নাটক ই লাগছে। না হলে আজকে এমন বিহেভ করতে পারতো না। চোখ উপচে জল চলে আসছে। বাসায় থাকলে আম্মু দেখে নিত তাই এখানে থাকা তুলি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে‌।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ ও আমাকে একটু ভালোবাসে না রে!’
‘ একবার কল করে দেখ কোন বিপদ আপদ হয়েছে কিনা‌!’
‘ আমি পারবো না।’
‘ এমন ছেলেমানুষি করিস না। আগের বারের কাছ মনে নাই। ইহান ভাই ইনজুরি হয়েছিল। এবার ও হয়তো কোন বিপদ হয়েছে না ফলে কখনো কি ভাইয়া তোর সাথে এমন করেছে বল। তাই পরে আফসোস না করে এখনি ফোন দে।’

আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। সেদিনের কথা মনে পরে গেছে সত্যি কি তেমন কিছু হয়েছে। না হলে সত্যি তো ইহান কখনো এমন করে না‌। আমার ভয় হতে লাগলো‌। কি অবস্থা হয়েছিল ইহানের। আজ ও যদি তেমন না না।উনি সুস্থ থাকুক আমার আর কিছু চাইনা। অভিমানের তারনায় এসব আমি ভাবিনি। আমি তুলি জরিয়ে ধরলাম ও না থাকলে আজ ও রাগ করেই বসে থাকতাম এতো অবুঝ কেন আমি। ফোন হাতে নিয়ে ফোন করার জন্য নাম্বার ডায়াল করবো তখন হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো ইহানের নাম্বার থেকেই কল আসছে।
আমি চমকে উঠলাম। ঢোক গিলে কল রিসিভ করলাম,

‘ হ্যালো।’
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ইহানের ব্যস্ত কন্ঠ পেলাম। আমি থমকে চুপ করে গেলাম,
‘ ঊষা কোথায় তুমি? তুমি কি বাসা একা আছো? একা ভয় করছে না আমি আসছি ওয়েট ভয় পেয়ু না।’
‘ আমি একা কেন থাকবো আম্মু আব্বু আছে তো। আর তাছাড়া আমি এখন বাসায় নাই। তুলিদের বাসায় আছি।’
‘ হোয়াট কখন গেছো?’
‘ বিকেলের দিকে।’
‘ওহ তাহলে‌ থাকো আমি ওইখানেই আসছি। এড্রেস দাও।’
ঠিকানা জেনেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেটে দিলো।
‘ এটা কি হলো?’
‘ আমি কি জানি‌। হয়তো এখন তোর আশা পূরণ করতে আসছে।’
‘ তাই বলে‌ রাতে?’

‘ এটাই তো ভালো। এখনো সময় শেষ হয়নি সমস্যা কি। ‘
‘ কিন্তু আমার কেন জানি তা মনে হলো না।কেমন জানি তারাহুরা করছিল। আর বলছিল তুমি বাসায় একা ভয় পাচ্ছ? এসব কি বাসায় থাকলে আমি একা কেন থাকবো আম্মু আব্বু আছে না।’
‘আসছেই তো আসলেই জেনে নিস। বাবা মা বাড়িতে নাই তুমি এজন্য ভাইয়ার সাথে দেখা করতে পারবি না হলে কি হতো। দেখা করতি কি করে।’
‘ জানি না আমি কিছু আমার মাথা ফাঁকা লাগছে।’

‘ চল তো শাড়িটা পরিয়ে দেয়।’
‘ এখন আবার শাড়ি পরার কি দরকার? আর আমি শা রেগে ছিলাম।’
‘ রাগ সব ভুলে যা তো। এতো রাগ করলে এখনো সুন্দর মুহূর্ত অনুভব করতে পারবি না। তাই এই মুহূর্তে ভুলে যা পরে ঝগড়া করিস এখন রেডি হয়ে ভাইয়া সারপ্রাইজ দে তো।’
আমার কি হলো কে জানে আমি তুলির কথায় মেনে নিলাম। এক রঙা লাল শাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। সেটাই কুচি করে পরিয়ে দিল তুলি। হাতে লাল রেশমি চুড়ি পরলাম, কপালে টিপ, কানে জোমকা, চুল খোলা।রাতেই শাড়ি পরে বসে র‌ইলাম। আমার রেডি হ‌ওয়ার একটু পর‌ই ইহান এসে হাজির হলো। আমি খুব লজ্জা পাচ্ছি ইহানের সামনে যেতে। লজ্জা পাওয়া স্বাভাবিক কারণ রিলেশন এ যাওয়ার পর এতো সেজেগুজে ফাস্ট যাচ্ছি তার সামনে। তুলি টেনে টুনে নিয়ে এলো আমাকে ইহানের সামনে ইহান সোফায় বসে ছিল। আমি আসতেই যেন ঝটকা খেলো। চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ফেললো

আমার লজ্জা নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
‘ চলো।’
বলেই দরজার দিকে হাঁটা দিল। তুলি গলা উঁচিয়ে বলল, ‘ ভাইয়া আমি কি জেগে‌ থাকবো? আপনারা কখন ফিরবেন? নাকি চাবি নিয়ে যাবেন।’
ইহান পেছনে ফিরে বলল, ‘ কোনটাই দরকার নাই। তুমি ঘুমিয়ে পরো নিশ্চিতে ও আর আসবে না ওকে আমি বাসায় নিয়ে যাব।’
‘ কিন্তু ও তো এখানে থাকবে বলেছিল। বাসায় কেন নিয়ে যাবেন?’ অবাক গলাতেই বলল তুলি।
‘ সেটা আমি বুঝে নিব। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।’
ইহানের গম্ভীর গলার আওয়াজ শুনে আমিও তুলি আর কিছু বলতে পারলাম না। আমি নিঃশব্দে ইহানের পেছনে চলে‌ এলাম সাথে ব্যাগটাও নিয়ে এলাম আর যেহেতু ফিরবো না। ইহান ব্যাগ নিয়ে আগে আগে যাচ্ছে আমি পেছনে পেছনে। বাইরে‌ এসে আমাদের মাইক্রো দেখে থমকালাম এটা তো আব্বু আম্মু বেরাতে যাওয়ার সময় নিয়ে গেছিলো এটা উনার কাছে এল কি করে?

আমি প্রশ্নতোক চোখে ইহানের দিকে তাকালাম। ইহান বলল,
‘ তোমার বাবার গাড়ি আমি আনতে চাইনি জোর করে দিলো। বাইকের তেল শেষ সব সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে তাই বাইক আনতে পারিনি।’
‘ আপনি বাসায় গেছিলেন?’
‘ নাহ।’
‘ তাহলে আব্বুকে কোথায় পেলেন?’
‘ হসপিটালে।’
‘ মানে? আব্বু হসপিটালে কি করছে? কি হয়েছে আব্বুর।’
‘ কিছু হয়নি ব্যস্ত হয় না।’
‘ কিছু না হলে হসপিটালে কেন গিয়েছে?’

‘ কারো কিছু হয়নি‌ সবাই সুস্থ আছে। বিলিভ না হলে গিয়ে দেখো।’
আমি শান্ত হলাম কিন্তু ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তায় ভোগছি। ইহান আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এতো সেজেগুজে এসেছো কি আমাকে পাগল করতে? আমি তো কন্ট্রোল লেস হয়ে যাচ্ছি। কিছু করে টরে বসলে তখন কিন্তু দোষ দিতে পারবে না।’
বলেই একটা বেশি ফুলের মালা গাড়ি থেকে বের করে আমার মাথায় পরিয়ে দিল। তারপর আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। ইহান ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি চিন্তিত মুখে বসে আছি।কার কি হয়েছে যে হসপিটালে গেল আব্বু আম্মু ঠিক আছে তো। এদিকে ইহান স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে আমার চিন্তা দূর করছে। আমি তাই চুপ করেই আছি। গাড়ি এসে থামলো‌ দাদু বাসায়। ইহান তাদের বাসায় আমাকে কেন নিয়ে এলো আমার বোধগম্য হচ্ছে না। হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছে নেমে।

‘ এখানে আসলেন কেন? সবাই কি ভাববে রাতে আমি সেজে গুজে আপনার সাথে আপনাদের বাসায় আসছি ছিহ। চাচি খুব রাগ করবে। আমাকে আমাদের বাসায় দিয়ে আসুন।’
‘ ভেতরে‌ চলো।’
‘ পাগল হয়ে গেলেন নাকি।’
‘ তোমার প্রেমে আমি পাগল। ‘
বলেই আমার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে এলো। আমি কাচুমাচু মুখে ভেতরে এলাম।
ভেতরে আমার জন্য এমন চমক অপেক্ষা করছিলো যা আমি কল্পনাও করিনি। আমার জীবন টা এক নিমিষেই যেন পাল্টে গেল।

আব্বু আম্মুকে সোফায় বসে থাকতে দেখে আমি হতবিহ্বল হয়ে গেলাম।‌ আব্বুর হাত ধরে দাদু কেঁদেই চলেছে কি যেন বলে। তারপর হঠাৎ আব্বুর হাত মাথায় নিয়ে গেল। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। আম্মু আমাকে দেখে কাছে যেতে বলল। আমি ইহানকে ক্রস করে চলে গেলাম।
সব কিছু আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি অবুঝের মতো তাকিয়ে আছি। চাচি কে দেখলাম বিরক্তিকর মুখ করে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে আম্মুর কাছে এগিয়ে গেলাম। তা দেখে চাচি চেঁচিয়ে উঠে বলল।আমি এখানে কেন? আমি চমকে চলে গেলাম। ইহান চাচির কাছে গিয়ে কি‌ যেন বলল তা শুনে চাচি অগ্নি দৃষ্টি মেলে দেখছে আমাকে। আমি ঢোক গিলছি অনবরত। আম্মুর পাশে বসতেই দাদির কথা স্পষ্ট শুনতে পেলাম।

‘ তুই আমারে রাইখা আর যাইতে পারবি না। এই বাসায় তোর ও অধিকার আছে। আমি তোর ব‌উরে মাইনা নিমু তাও তুই আমারে একলা ক‌‌ইরা চ‌ইলা যাইস না। আমি এই শেষ বয়সে আইসা আর কানবার চাইনা তোর লাইগা। তোর লাইগা আমার পরাণ কান্দে মায়েরে এমন ক‌ইরা কান্দাস কেমনে তোরা। এই মার কথা মনে হলে না তোর? এইডা তোর মাইয়া তাই না। নতুন মা পাইয়া আমারে ভুইলা গেছত।’
বলেই দাদু আমার হাত টেনে জাপ্টে ধরলো।
‘ বুবুরে তোরে প্রথম দেখাই ই আমার আপন লাগছিল। তুই তো আমার জায়েদের মাইয়া আমার রক্ত। তাই তো এতো আপন আসান লাগছিল। আমারে ছা‌ইড়া তোরা যাইস না।’
আব্বু উঠে গেছেন।
‘ আম্মা ছাড়েন আমাদের যেতে হবে এবার।’

দাদু আমাকে ছেড়ে বলল,
‘ তুই আমার কথা শুনবি না। তাও চ‌ইলা যাবি!’
‘ আমারে ক্ষমা ক‌ইরেন আমমা।এটা সম্ভব না। আমি থাকতে পারবো না। ভাইয়া দেখলে খুব রাগ করবো আমি চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন। আপনি চাইলে আমার কাছে গিয়ে থাকতে পারেন।’
দাদু তখন চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ জায়েদ তুমি জামিন রে বুঝামো। তুই থাক ও রাগ করবো না। সব আমি দেখমু।’
‘ আমি থাকতে পারবো না।’

‘ তুই যদি আমার কথা না শুনে এই বাড়ির বাইরে পা রাখিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি জায়েদ।’
আব্বু থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। এমন কথা দাদু বলবেন যেন বিশ্বাস করতে পারছ না আব্বু।
‘আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন অন্তত এই বাড়িতে থাক এইটা আমার বাড়ি! আমার সন্তান থাকবে এইটা তোর ভাইয়ের বাড়ি না যে ও তাকে তাড়িয়ে দেবে! জামিনের এই বাড়িতে যত টুকু অধিকার আছে তোর আছে। আমি মরে যাওয়ার পর যদি তোর এইসব কিছু দরকার না পারে তুই চলে যাস কিন্তু আমি যতদিন বেঁচে আছি তুই আমার কাছেই থাকবি। আমি আমার সব সন্তান বৌমা নাতি নাতনি নতুন নিয়ে একসাথে থাকতে চাই। শেষ সময়ে এই আশা টুকু তুই আমার পুরন করবি না খোকা।’
আব্বু যেন দাদুর এই কথাটুকুতেই কাত হয়ে গেল। ইমোশনাল হয়ে পড়লো দাদুর কান্না দেখে।
আমি আর আম্মু নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছি। ইহান এগিয়ে এসেও আব্বুকে অনুরোধ করতে লাগলো। আব্বু অবশেষে হার মানলো। আজকে থাকতে রাজি হলো। কালকে কি হবে কে জানে। এদিকে আমি চাচা জানকে চারপাশে খুঁজছি উনি কোথায়?

আমাকে ইমা আপুর রুমে থাকতে দিবে তাই কাজের মহিলা আমাকে সেখানেই নিয়ে গেল। ইহান আমার সাথে এল। অদ্ভুত ভাবে আজ চাচি কথা বলেনি আমার সাথে। তিনি গম্ভীর মুখে চলে‌ গেছে। ইমা আপু নাই দেখে কেমন জানি খালি খালি লাগছে বাসাটা‌। আব্বুর রুমটা দেখলাম। যেটা তালা বদ্ধ অবস্থায় পরে আছে। ওই রুম পরিস্কার না করে কেউ থাকতে পারবে না।যেটা এই রাতে করা সম্ভব না। তাই ইহান নিজের রুম ছেড়ে দিলো আব্বু আম্মুর জন্য। আমি তখন জানতে পারলাম চাচাজান এর খবর। তিনি সকালে স্টক করেছিল। তাই নিয়ে দৌড়ের উপর ছিল ইহান। হঠাৎ সটক কেন করছেন জানতে চাইলে আম্মু আমাকে বলল!

বিজনেস এ নাকি দ্বিতীয় বার ও লস খেয়েছ। আর তার জন্য পাওনাদাররা টাকার জন্য অপমানজনক কথা বলেছে।‌এমনিতেই কোম্পানি তে এত বড় লোকসান হওয়ায় তার মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে ছিল। তার উপর পাওনাদারদের এমন অপমানজনক কথা তিনি সহ্য করতে পারেননি। সব মিলিয়ে তিনি সকালে স্টক করেন। তারপর থেকেই পরিবারের সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইহান বাবার এখন অবস্থা দেখে হসপিটালে দৌড়ের উপর থাকেন।

এখন অবশ্য সুস্থ আছেন তাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে বলেছেন। আব্বু আম্মু নাকি বেড়াতে যাচ্ছিলেন তখনই ইহানকে হসপিটালের বাইয়ের দাঁড়িয়ে চিন্তিত মুখে থাকতে দেখে গাড়ি থামিয়ে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারে সবকিছু আর তারা দুজন বেড়াতে যায় না গিয়ে হসপিটালেই আছে এখানেই সবার সাথে তাদের দেখা হয়। বিয়ে বাড়িতে শুধু চাচাজান চাচাজান সাথে দেখা হয়েছিল। আজকে দাদু ও হসপিটালে আসেন বড় ছেলের এমন অবস্থা দেখে তিনি বাসায় বসে থাকতে পারে না এখন একটু সুস্থ তাই দাদু হসপিটালে এসে পড়েছেন। সেখানে আব্বু-আম্মুর সাথে দেখা হয় আর দাদু তার পর থেকে সব বলে ছেলেকে আটকানোর চেষ্টা করতে থাকে। জোর করে বাসায় পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। তারপর ব্ল্যাকমেইল করে এখন বাবাকে এ বাসায় থাকতে রাজি করে ফেলেছে। আব্বু অনিচ্ছাসত্ত্বেও এখন দাদুর কথায় এখানে থাকতে হবে।

এত কিছুর মাঝে আমি যে শাড়ি পড়ে আছি সেটাই ভুলে গেছিলাম। মনে পড়তেই চমকে উঠলাম সবাই না জানি কী ভাবছেন। কিন্তু কেউ তেমন আমার শাড়ি নিয়ে কথা তুলল না আম্মুও না তিনি নিজের কথা বলে চলে গেল। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে আছি। এত সব ঝামেলা মধ্যে কেউ হয়তো এটাকে লক্ষ্যই করেননি। এই লক্ষ্য না করাটা আমাকে স্বস্তি দিল।

দরজা আটকে দিলাম শাড়ি পাল্টে অন্য ড্রেস পরার জন্য। আমার অবশ্য ভালোই হলো তুলি দের বাসায় যে ড্রেসটা নিয়ে গেছিলাম ওইটা এখন পড়তে পারব। শাড়ির আঁচলে পিন খুলতে যাব তখনই মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠল,
‘ ভুল করেও শাড়ি খুলবে না। যেভাবে আছে ওইভাবেই বসে থাকো।’
ইহানের নাম্বার থেকে মেসেজ দেখে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। উনি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছে নাকি উনি জানলে কিভাবে আমি শাড়ি পাল্টাচ্ছি।
আমি ঘুরতে ঘুরতেই ইমা আপুর বেলকুনিতে চলে এলাম। তখনই ইহান কে দেখতে পেলাম পাশের বেলকনি থেকে এ দিকে তাকিয়ে আছে ফোন হাতে। উনার কথা শুনে উনাকে দেখলাম।
‘এই যে আমি এখানে!’

‘আপনি ওইখান থেকে একটা মেয়ের পোশাক চেঞ্জ করা দিয়েছিলেন লজ্জা করে না!’রেগে কটমট করে বললাম।
‘আমি যথেষ্ট চরিত্রবান একজন ছেলে ওকে! আমার নজরে তো খারাপ না আমি তোমাকে না দেখেই এমন মেসেজ করেছি। কারণ তুমি যাতে চেন্জ না করো তুমি এখন চেঞ্জ করছিলে কিনা সেটা আমি জানতাম না।’
‘আপনার কথা আমি বিশ্বাস করিনা! ওকে বিশ্বাস না করলে আমার রুমে ব্যালকনিতে এসে দেখো রুমে কিছু দেখা যায় কিনা! জানালা খোলা থাকলে অবশ্য সবই দেখা যাবে কিন্তু জানালায় পর্দা টানা আছে সেটা ভালো করে দেখ।’
‘ আচ্ছা তাহলে মানলাম। শাড়ি চেঞ্জ করতে মানা কেন করলে আমি কি সারা রাত এমন সার্কাস সেজে বসে থাকব নাকি?’

‘সার্কাসে না তো আমার বউ সেজে বসে থাকো!’
‘আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসবেন আগে বললেই হতো আমি আর কষ্ট করে প্রেমিকের নজর কাড়তে শাড়ি পরে আসতে হতো না। অযথা এমন সাজলাম।’
‘কেন কি হয়েছে?’
‘কিছু হয়নি এইখানে এতসব ঘটেছে তার মধ্যে। আমি কি না শাড়ি চুড়ি পরে আপনাকে মুগ্ধ করতে চেষ্টা করলাম তার তো কিছুই হলো না আপনিতো আর আমার দিকে নজর দিলে না। অবশ্য দেওয়ার মত অবস্থাতেও নাই। উল্টো সবার কাছে কেস খেয়ে যেতাম। এইখানের অবস্থা খারাপ না থাকলে তো সবাই আমাকে এই শাড়ি পরা নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন করত। তখন আমি আম্মুকে কি বলে জবাব দিতাম।’
‘ যা হয়নি তা না ভাবাই ভালো। আর তোমাকে এই লুকে দেখে আমি আর চেঞ্জ করার কথা বলতে পারিনি।
‘কেন?’

‘ দেখার লোভ সামলাতে পারিনি। একটু মন ভরে দেখে নেয় তারপর চেঞ্জ করো।’
‘ তো দেখেন এখন‌। ‘
‘ এখন না একটু পর ছাদে এসো‌। বাই
ইহান চলে‌ গেল। আমি বোকার মতো তাকিয়ে র‌ইলাম।
আমি বেলকনিতে বসে রইলাম। আম্মু একবার আমাকে দেখে গেছে। তারপর থেকেই ইহানের রুমে থেকে আব্বু আম্মুর গলার আওয়াজ পাওয়া গেল ‌ আমি বুঝে গেলাম ঘুমানোর জন্য সবাই চলে এসেছে। খাওয়ার জন্য আমাকে ডেকেছিল আমি খেয়ে এসেছি বলেছি।

তাই আর কি আমাকে জোর করেনি। আম্মু আমাকে পোশাক চেঞ্জ করে ঘুমিয়ে পড়তে বলে চলে গেছেন।
বাসা নিশ্চুপ নিরবে হয়ে যেতেই ইহানের মেসেজ এলো ছাদে যাওয়ার জন্য। আমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম। ছাদের আমার জন্য আবার কি চমক অপেক্ষা করছে কে জানে!!’
আমরা সব প্রেমিকের মতো হাতের হেরে ফুল দিয়ে ভালোবাসে না হলেও ইহান আমাকে একটা ফুলের দোলনা গিফট করলো যেন। ছাদে এক

টা ফুলের দোলনা ছিল। যেটাই ইহান আমাকে দুল খাইয়েছে। অনেকটা সময় আমরা গল্প করেছি। পরদিন আমি চাচাজানকে দেখতে তার রুমে গেলাম
তিনি আমার সাথে ভালো করে কথা বলছিলেন তখনি চাচী এসে সব খুলে বললেন যে আমি তার ভাইয়ের মেয়ে তারপর থেকে তার মুখটা গম্ভীর দেখলাম। কিন্তু অদ্ভুত তিনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি সুন্দর করে কথা বলেছেন কিন্তু আগের হাসিখুশি মুখটা গম্ভীরতায় ছেয়ে গিয়েছিল।

‘ আম্মা প্লিজ এখন আর আপনি ঝামেলা করবেন না আমি এখানে এসে আপনাকে দেখে যাব। দরকার হলে একদিন দুই দিন থাকবো। কিন্তু এইখানে আমার পার্মানেন্ট থাকা পসিবল না। ঊষা নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে ওইখানে যাতায়াত কষ্টকর সেজন্য আমি কলেজের কাছে বাসা নিয়েছি। সেখানে আমাদের থাকতে হবে। আমি দুইদিন পর আপনাকে আমাদের ওইখানে নিয়ে যাব। আরেকটা কথা ভাইয়া তো আমার সাথে কথা বলে না। কিন্তু আমি তার সমস্যাটা সমাধান করার চেষ্টা করব তিনি যেন আমাকে বাধা না দেন। তিনি আমাকে সহ্য করতে না পারলেও আমি তাকে এখনো ভালবাসি তার প্রতি আমার কোন রাগ নাই। তাকে একটু বলবেন তার এই ছোট ভাই কে যেন তিনি ক্ষমা করে আপন করে নেয়।’

আব্বু দাদুকে কথাগুলো বলে চাচির কাছে গেলেন। পাওনাদারদের নাম্বার নিলেন। কত টাকা সেইসব চাচী বললেন। আব্বু সাহায্য করবেন শোনার পর থেকেই চাচি যেন আব্বুর সাথে সখ্যতা গড়ে উঠল সাথে সাথে চাচি এগিয়ে এসে আমাকে আম্মুকে থাকার জন্য অনুরোধ করতে লাগল সুন্দর করে কথা বলছেন। কালকের ওই রাগী মুখটা যেন যে হারিয়ে গেল। মুখের হাসি যেন তার রূপ চেঞ্জ হয়ে গেল। আমি অবাক চোখে তাকালাম আছি। তবু আমার ভালো লাগছে চাচীর ব্যবহারে। আব্বু যেহেতু আবার আসবে আর তাকে ও নিয়ে যাবে তাই দাদু শান্ত হলো তিনি আমার কথা শুনে আর মানা করতে পারলেন না যেতে দিল।

আমরা বাসায় ফিরে এলাম। দুদিন পর যথারীতি দাদুকে নিয়ে আসা হলো ইহানই নিয়ে আসলো।
আব্বু যেতে চাইছিল কিন্তু আব্বুকে হঠাৎ করে বিজনেসের জন্য খুলনা যেতে হলো। তাই ইহান নিয়ে আসলো। এখন অব্দি ইহান আমাদের বাসায় এসে থাকেন না ।এইবার আসলেই ইহানকে যে করেই হোক আমাদের বাসায় রাখবো এমনটাই ভাবছি আমি কিন্তু কিভাবে!!
কলেজ থেকে আজ আমি উজ্জল মুখে বাড়ি ফিরলাম। কারণ আজকে ইহান আর দাদু আসবে। লিফটে উঠতে যাব তখনই দেখতে পেলাম লিফটের ভিতরে শুভ্র আর তার সাথে একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা দাঁড়িয়ে। মনে হচ্ছে এটা ওনার মা। আমি জড়োসড়ো হয়ে এক পাশে দাঁড়ালাম। আগে আমি আরেকদিন দেখেছিলাম মহিলাটা কে তাই ভদ্রতা স্বরুপ সালাম দিয়ে কেমন আছেন কি করলাম। উনি বললেন,

‘ এইতো ভালো। তোমার কি খবর?’
‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি।’
শুভ্র উনার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে কি যেন বললো আমি আড়চোখে তা দেখতে পেলাম। উনি কথাটা শোনার পর আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার মুখে হাত দিয়ে চুমু খেলো হাতে। আমি থতমত খেয়ে গেলাম উনার কান্ডে।
‘ মাশাআল্লাহ।’

আমি ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। শুভ্রের মা আর কিছু বলল না আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলো চারতলায় আসতে আমি দ্রুতপায়ে বেরিয়ে পড়লাম। পেছনে একবার ফিরে দেখেছিলাম দুজনে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ওনার আমার চোখের আড়াল হতেই আমি একশ কুড়ি বকা দিলাম। এই শুভ্র নিজের মায়ের কানে কি কানপড়া দিল যে এমন ব্যবহার করলো। রুমে এসে গোসল করে খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর ভাবতে লাগলাম ইহানকে আজ থাকতে হবে আমাদের বাসায়। কিন্তু কিভাবে!! অনেকক্ষণ ধরে পরিকল্পনা করতে লাগলাম। তারপর অপেক্ষা করতে লাগলাম ইহানদের। তারা এসে পৌঁছেছে তিনটায়।

আমি খুশিতে জরিয়ে ধরলাম দাদুকে। আব্বু কাল আসবে। দাদুকে তার জন্য ঠিক করে রাখা রুমে দেওয়া হলো।
আম্মু তার সাথেই আছে তার রুমে। আমি ইহান কাছে আছি।
ইহান হঠাৎ বলল, ‘ আমার কি মনে হয় জানো? চাচিমা আমাদের বিষয়ে কিছু জানে। আচ্ছা তুমি কি কিছু তাকে বলেছ।’

আমি লাফিয়ে উঠে বললাম, ‘ কি বলছেন? মাথা খারাপ নাকি! আমি কেন এসব বলতে যাব‌।’
ইহান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘চাচিকে আমার সন্দেহ হচ্ছে। উনি বোধহয় আমাদের বিষয়ে কিছু জেনে গেছেন। চাচি মার বিহেব আর আমার সন্দেহ লাগছে। তুমি আর আমার আশেপাশে আসবে না এই বাসায় আসলে। না হলে কিন্তু আমি আর আসব না এখানে।’

বলেই দাদুর জন্য ঠিক করে রাখা রুমে চলে গেল। আমি সেখানেই থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
দাদুকে বিশ্রাম নিতে বলে সবাই বেরিয়ে এসেছে। আম্মু ইহান হালকা কিছু খাবার দিল। ইহান খেতে না চাইলে জোর করে। ইহান খেয়েই চলে যেতে উদ্ধত হোন। তখন আম্মু ইহানকে থাকতে অনুরোধ করতে লাগে।ইহান পরে বলছে এসে থাকবে। আম্মু তখন বললো,

‘ সেই কবে থেকেই তো বলছো। আজ থাকো তোমার চাচু ও বাসায় নাই। কোন বিপদ আপদ হলে তুমি অন্তত থাকো। নাকি তোমার বাবা এখানে থাকলে সমস্যা করবে।’
ইহান যেন এবার লজ্জা পেল বেশ‌।
‘ চাচি আপনি ভুল ভাবছেন তেমন না‌। আর সেদিন ও না থাকলাম। আব্বু তেমন কিছু বলেনি‌। এইযে দাদু কে নিয়ে আসার জন্য জিজ্ঞেস করলাম তিনি বলেছেন, ‘ মা তার ও তাই সে তার মাকে নিজের কাছে নিতেই পারে।’
‘ ছেলে তো তার তাই বোধহয় ছেলে থাকতে পারবে না তাই না।’
‘ আচ্ছা আমি থাকবো।’

আম্মু চলে গেল। ইহান আবার সোফায় বসে পরল। আমি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ইহানের পাশে বসে পরলাম।
‘ আমার কাজটা আম্মুর করে দিল।আহ কি শান্তি!’ রিলাক্স মুডে বললাম আমি।
আমার কথা শুনে ইহান ভ্রু কুটি করে তাকালো। আর বললো,
‘ মানে? কিসের কাজ!’
‘ আমি সকাল থেকে আপনাকে থাকতে রাজি কারাতে ছক কষছিলাম। কিন্তু এখন আমার কিছু করতেই হলো না তার আগেই আম্মু সব করে দিল।’
‘ এতে এতো খুশি হয়ে লাভ নাই। আমার থেকে দশ হাত ফাঁকে থাকবে। এখানে আমরা কোন গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড না‌।’
‘ আপনি বললেই হলো নাকি।’
‘ হ্যা!’

‘ আমি আপনার কথা শুনবো না।’
‘ ওই যে চাচি আসছে যাও তুমি। এভাবে দেখলে কিন্তু আমি সত্যি আর আসবো না।’
‘ আপনি তো ভিশন খারাপ দেখছি। এইভাবে আমাকে তারাচ্ছেন!’
‘ হুম।’
‘ আপনি আমাকে একটু ও ভালোবাসেন না‌!’ গোমরা মুখে বললাম।
‘ এসব বলে লাভ নাই‌ আমি গলছি না।’

আমি রাগ করে চলে গেলাম দাদুর রুমে। সেদিন আর আমি ইহানের সামনে এলাম না। আম্মুর সামনে ও না। বিকেদে লুকিয়ে ছাদে চলে এলাম। উদ্দেশ্যে ইহানের চোখের আড়ালে থাকা। আমাকে কথা শুনানো তাই না। এবার মজা বুঝ। আমি ছাদে এসে শুভ্র কে দেখে আবার তখন কার কথা মনে পরলো আমি তেরে তার দিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আপনার আম্মু তখন ওমন করলো কেন? আপনি নিজের মাকে কি বলেছেন সত্যি করে বলেন।’
শুভ্র হেসে উঠে বলল, ‘ এতো রেগে আছো কেন?’

‘ আপনি বলেন কি বলেছেন আন্টিকে!’
‘ আম্মুকে বলেছিলাম। আম্মু এই যে সামনের এই মিষ্টি মেয়েটিকে তোমার ব‌উমা করতে চাই তুমি কি রাজি!!’
আমি বিষ্ময় এ হতবাক হয়ে গেলাম উনার কথা শুনে। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। আমার কেমন রিয়াক্ট করা উচিত ভুলে গেছি যেন। শুভ্র নিজে থেকে আবার বলল,
‘ আম্মু তখন কি বলেছে জানো!’
আমি বোকার মত জিগ্যেস করলাম, ‘ কি?’

‘ আম্মু বলেছে, ব‌উমা হিসেবে আমি এই মেয়ে ছাড়া আর কাউকেই চাই না। একেই আমার ব‌উমা করে দে শুভ্র।’
আমি এবার রাগে ফেটে পরলাম। এতোক্ষণের সব মাথায় পৌঁছাতেই রাগে আমার শরীর জ্বলে উঠলো। কটমট করে তাকিয়ে আছি। আর শুভ্র হাসছে। মন চাইছে শয়তান টার নাক ফাটিয়ে দিতে। আমি যদি সত্যি এবার এটাকে মেরে নাক ফাটিয়ে দিতাম যদি বক্সিং শিখা থাকতো‌।
আমি এই শুভ্র কে ঝারি মারতে যাব তখন দেখতে পেলাম ইহানের রাগী দৃষ্টি। দুজনকে একা একা পাশে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইহান রাগে ফায়ার হয়ে গেছে।

অন্যদিন হলে আমি এখন ইহানের কাছে ছুটে যেতাম। কিন্তু ইহান আজকে আমার সাথে খারাপ বিহেভ করেছে। আম্মুর জন্য কিনা আমাকে তার আশেপাশে আসতে মানা করল সেই রাগে আমি ইচ্ছে করে শুভ্র এর সাথে হেসে কথা বলতে লাগ্লাম। আর ইহান তা দেখে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গটগট করে চলে গেল। আমি ইহান চলে যেতেই দৌড়ে নিচে নেমে এলাম।

আমার সেই একটু মজার জন্য যে পরে আমার জন্য এমন ভোগান্তি ছিল সেটা আমি তখনও বুঝতে পারিনি। আমি আমার ভাব নিয়ে আমি এখানে থেকে দূরে দূরে ছিলাম ইরান অবর্শন একবার আমার সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করলো যখন দেখল আমি দরজা আটকে বসে আছি আর কোন উপায় নাই তখন নিজেও হাল ছেড়ে দিল আমি রাতে খাবার রুমে খেলাম রুমে এসে খেলাম।
ইহান আর আমার সাথে সেদিন যোগাযোগই করতে পারল না। পরদিন ইহান চলে গেল। আব্বু এলো দুপুরে পর।
দুইদিন পর

আমি কলেজে থেকে বাসায় ফিরবো তাই গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন হঠাৎ ইহানকে বাইক নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে চমকে উঠলাম। কিন্তু সাথে খুশি ও হলাম। কারণ সেইদিন থেকে ইহান আমার কল রিসিভ করছিল না। এখন দেখে খুশি হলাম। ইহান গম্ভীর গলার বলল,
‘ বাইকে উঠো।’

আমি মাথা দুলিয়ে উঠে পরলাম। সেইদিন ইহান এক অদ্ভুত কাজ করল। আমি নতুন এক ইহান কে দেখলাম। এতো রাগ কারো থাকতে পারে জানা ছিল না। এর পর থেকে ভালোবাসার থেকে যেন ভয় দানা বাঁধতে থাকলো আমার মনে‌।
ইহান আমার চোখের সামনে নিজের হাতে অনবরত ঘুসি মেরে হাত রক্তাক্ত করে ফেলল। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। লাল হয়ে আছে অসম্ভব। আমি ভয়ে এক কোনে জড়োসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বাসায় না এসে পার্কে এসেছে ইহান আমি ভেবেছি বেড়াতে কিন্তু না এসেই এরকম করে যাচ্ছে।আমি ভয়ে কিছু বলতে ও পারছি না। ইহান সেই একটা কথাই বলেছিল আর কথাও বলেনি।

এমন রাগ ই বা কেন করছে। নিজেকে আঘাত‌ই বা করছে কেন? আমি আজকেই এই ইহানকে চিনতে পারছি না। এতোটা ভয়ংকর লাগছে তাকে। তার রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকালে মাইল বুক কেঁপে উঠছে। ইহানকে আটকানোর সাহস ও দেখাতে পারছি না‌ আমি সেকেন্ড এ ভীতুর খাঁতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছি। ইহান নিজেই নিজেকে শান্ত করে ফোন এগিয়ে নিয়ে এলো আমার কাছে। আর সেখানে একটা রেকর্ড শুনালো। যেখানে আমি আম্মুর কন্ঠ শুনতে পেলাম সাথে একটা পুরুষ ও আরেকটা মহিলার আওয়াজ। তাঁদের কথা বার্তা স্পষ্ট হলো তারা কি নিয়ে কথা বলছে‌।

তারা বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। আর বিয়েটা আমাকে নিয়ে। আর ওই অপরিচিত মহিলাটির ছেলেকে নিয়ে। তার ছেলের জন্য আমার কথা বলছে। আম্মু রাজি না হলেও না করছে না। হেসে হেসে ভদ্রতা স্বরুপ কথা বলছে। হঠাৎ মহিলাটা ছেলেটাকে নাম ধরে ডাকলো সাথে সাথে শুভ্র নামটা কানে এসে বাড়ি খেলো। আমি যেন আসমান থেকে ধপ করে জমিনের পরলাম। ইহান আগুন চোখে ঘাসের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছি। এই শুভ্র আমাকে এই ভাবে ফাঁসালো। এবার আমার ও রাগ হচ্ছে। মা ছেলের পেটে এই ছিল। এজন্য সেইদিন মহিলাটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল ওমন করে।

‘আমি এসবে কিছু জানিনা বিশ্বাস করুন‌।’ ভয়ার্ত গলায় বললাম।
ইহান ফোনটা একটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলল।
‘ ওই ছেলের থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু তুমি আমার কথা শুনো নি। আরো হেসে হেসে কথা বলেছ। এই সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী ‌”
‘ আরে এমন করে বলছেন কেন? আমি কখনোই উনার সাথে কথা বলিনি। ওইদিন শুধু আপনার উপর একটু রাগ করে মজা করছিলাম। এছাড়া…
‘ তোমার সামান্য মজার জন্য কি হতে দেখতে পাচ্ছ! বুঝতে পারছো কিছু আমি তোমার ভালোর জন্য একটা কথা বলেছি আর তুমি তাতে রেগে আমাকে এরিয়ে চললে এটা কি ঠিক করেছো তুমি। আনসার মি।’
ইহান আমার কাঁধ ঝাঁকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। আমি কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারলাম না। ভয়ে আমার মুখের সমস্ত ভুলি অফ হয়ে গেছে। ইহান রেগে গেল আমার এমন নিরব চাহনী দেখে ও আমাকে ছেড়ে গাছের গোড়ায় জোরে লাথি মেরে চিৎকার করে বলল,

‘ ওই শালা কে আমি দেখে নেব‌। ও সব জানার পর ও আমার সাথে গেম খেলতে এসেছে ওর বিয়ের ভূত যদি না নামিয়েছি তো আমার নাম ইহান না‌।’

বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে ইহান চলে গেছে। আমি গুটিগুটি পায়ে হেঁটে লিফটে উঠলাম। আজকেও শুভ্র কে দেখলাম। শুভ্র দাত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার ইহান কথা মনে পরলো কি রাগ টাই না করছিল। সব এই ছেলেটার জন্য আমি তেরে তার কাছে গেলাম,
‘ আপনার সাহস কি কে হলো আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ায়।’
‘ কেন এখানে সাহসের কি আছে‌?’

‘ আপনি জানেন আমি ইহান ভাইকে ভালোবাসি তাও এমন কেন করলেন আপনার মতলবটা কা বলুন তো।’
‘ তোমার ওই ইহান আমাকে খুব বাজে ভাবে অপমান করেছিল জাস্ট তোমার সাথে সেইদিন কথা বলেছিলাম বলে। এটা ঠিক আই লাইক ইউ‌। তাই বলে উনি আমাকে থ্রেট দিতে পারেন না। একা অন্যায় আমার সাথে অপরাধ করেছে আমার গায়ে হাত তুলে। এবার আমি তোমাকেই ওর কাছ থেকে আলাদা করে দেব‌। দেখি ও কি করছ আটকায়।’
‘ ছিহহ আপনি এতো খারাপ। আপনাকে আমি এতোটা খারাপ ভাবিনি।’
‘ তোমার ভাবনায় তো আর সব হবে না তাই না। তোমার মাকে পটাতে না পারলেও বাবাকে পটিয়ে ফেলেছি। ইউ কামিং মাই লাইফে‌ ‘

‘ আপনাকে আমি জীবনে বিয়ে করবো না বলে রাখছি। আপনার মতো জঘন্য মানুষ আর একটাও দেখি আমি।’
রাগে আমার শরীর কাঁপছে। এত নির্লজ্জ বেহায়া কেউ হতে পারে?!!

বাসায় এসেই আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম এসব কি? আম্মু বললো।
‘ আমি কি জানি বাড়িওয়ালা মহিলাটা হঠাৎ এসেই এসব বলবে আমি জানতাম নাকি‌। কিন্তু তুই জানলি কি করে।’
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। তারপর আমতা আমতা করে বললাম, ‘ উনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল বাইরে।’
‘ ওহ। তুই এসব এ পাত্তা দিস না। আমি তোকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেব না। তোর আব্বু আসুক উনার সাথে কথা বলে নিব।’
‘ আচ্ছা।’

আমি মনে মনে চিন্তিত হয়ে আছি। আব্বু কে কি রাজি করিয়েছে শুভ্র কি বললো কিছু তো বুঝতে পারলাম না। আমি ইহানকে কল করলাম।
‘ আমার খুব চিন্তা হচ্ছে শুভ্র আব্বুকে কি রাজি করিয়েছে বলল।’
‘ তুমি আবার ওর সাথে কথা বলেছো?’ রাগান্বিত স্বরে।
‘ না আসলে ওই জিজ্ঞেস করিছি।’
‘ তোমাকে সামনে পেলে থাপ্পড় দিয়ে দিতাম একটা ইডিয়েট। কথা কে বলতে বলেছে।’
‘ আমার খুব রাগ হয়ছিল তাই সামনে পেয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি।’
‘ যা করার আমি করবো। তোমাকে কিছু করতে হবে না।’

‘ ওকে।’
রাতে খাবার টেবিলে আব্বুর কাছে কথা তুললো আম্মু। আমি চুপচাপ খাচ্ছিলাম। আব্বু সব শুনে বলল,
‘ ছেলেটা তো ভালোই‌। আমার সাথে কথা হয়েছে কয়েকবার। আর ছেলের বাবা ও কথা বলেছে।’
‘ তুমি কি এই সমন্ধে তাহলে রাজি? এই বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দিবে?’
‘ আমি কি তাই বলেছি নাকি। ছেলেটা ভালো জব করে। টাকা পয়সাও ভালোই আছে। ফ্যামিলির ব্যাকগ্ৰাউন্ড ও ভালো।’

‘ তো তোমার কি সিদ্ধান্ত?’
‘ আমি বলেছি। এই মুহূর্তে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দেব না।’
‘ ওহ ভালো করেছো না করে দিয়ে। যাক বাবা উনি এসে আমার সাথে এমন করছিল যেন আমার মেয়ে আমার অনুমতি ছাড়াই বিয়ে দিবেন ভাব একবার।’
‘ আমি না করিনি।’
‘ মানে তুমি তো না করেছো। এখন বিয়ে দিবেনা মানে তো নাই ই। আর উনার ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে। তার ছেলেকে কি আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হ‌ওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন নাকি। ক্লিয়ার করে বলো তো।’
‘ উনি এটাই বলেছে‌। ঊষার জন্য অপেক্ষা করবেন উনারা।’
‘ কি বলছো এসব তুমি। মুখের উপর না করতে পারো নি।’

‘ না কেন করবো। ছেলে ভালো তারা অপেক্ষা করতে চাইলে আমি না কেন করবো।’
‘ তুমি তাই এইভাবে বাজিয়ে রাখবে কেন। আর ভালো ছেলে নাই নাকি দুনিয়াতে।’
‘ আমি কি তাই বলেছি নাকি। উনাদের কথা দেয়নি কিন্তু উনারা বসে থাকলে থাক। পরে আমাদের ইচ্ছা হলে বিয়ে দেব না হলে নাই। ‘
‘ তবুও তুমি কাজটা ঠিক করো নি।’
‘ তুমি এতো হায়পায় হচ্ছ কেন সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।’
আম্মু আর কিছু বললো না। আমিও আর খেতে পারলাম না। হাত ধুয়ে চলে এলাম। ইহানকে কল করলাম রিসিভ করলো না।
আমি এসব জানানোর জন্য পাগল পায় একবার ধরে ইহান ধমক দিয়ে ফোন অফ করে রাখল। আমি যেন কল কাটার আগে ওইখানে শুভ্র এর আওয়াজ পেলাম।

ইহান চলে গেছিল পরদিন যথারীতি। প্রথম প্রথম প্রচুর কষ্ট পেতাম একারণে কিন্তু আস্তে আস্তে মানিয়ে নিচ্ছি নিজেকে। প্রহর গুনছি ইহানের ফিরে আসার। ওই ফারিয়া আছে বলেই আমার চিন্তা বেশি। কিন্তু তা আমি কারো কাছে প্রকাশ করিনা করাটা যুক্তি যুক্ত ও না। কারণ আমার এই ভয়ের জন্য ইহান সেই কাজটি করেছে যা আমরা কেউ এইভাবে করতে চায়নি। সেইদিন পার্টি থেকে আমাকে টেনে নিয়ে গেছিল। আমি থমকে গেছিলাম। পরদিন ইহানকে বিদায় দিলাম। ইহান চলে যাওয়ার পর আমরা ও ও বাসা ছেড়ে চলে আসতে ছিলাম। সেইদিন আরেকটা আশ্চর্য জনক ঘটনা ঘটে। আর তা হলো চাচাজান সেদিন আব্বুর সাথে কথা বলেছিল। আমরা সবাই অবাকের চরম সীমায় পৌছে যায়।

সেইদিন চাচাজান আব্বুকে একটা কথাই বলে গটগট করে উপরে চলে যায়। তার কথাটা ছিল এমন,
‘ জায়েদ আজ থেকে যা। আম্মা এতো রিকোয়েস্ট করছে তার কথাটা শুন অন্তত। আমার কথা তো সব সময় অমান্য‌‌ই করলি।’
আব্বু স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি আর চলে যাননি। সেই রাতে আমরা কাটিয়ে পরদিন চলে আসি।
ইহানের সাথে এখন কথা ফোনের ভিডিও অডিও কলে প্রতিনিয়ত হচ্ছে। ওইখানে ওর ভালোই চলছে ফারিয়ার সাথে এক ফ্লাইটে নাই তাই আমি শান্তি তে আছি। নতুন ফ্রেন্ড ও হয়েছে ইহানের যাদের সাথে পরিচিতি করিয়েছে আমাকে। কলের মাধ্যমে। আমার এ এতো সুন্দর নামটা তারা ডাকতে পারে না। ঊষার জায়গায় তারা তাশা, ফাশা বলেছে। ইহান এসব শুনে গলা ফাটিয়ে হেসেছে।

আমি তখন রাগ দেখিয়ে কল‌ কেটে দিয়েছি। পরে ইহান কল করে সরি বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। এবং কি ভিডিও কলে কান ও ধরে সরি বলেছে। তখন আর রাগ করে আমি থাকতে পারিনি। খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছি। মাঝে মাঝেই আমি সুন্দর করে শাড়ি পরি রাতে। তারপর ইহানকে ভিডিও কল দিয়ে চমকে দেয়। ইহান‌ আমার এমন লুক দেখে ফিদা হয়ে যায়। আর আফসোস স্বরে বলে,

‘ আমার বাচ্চা ব‌উটার দিন দিন বুদ্ধি বাড়ছে।আমাকে শায়েস্তা করতে তিনি এখন মুখ না অন্য জিনিস দিয়ে আমাকে কাবু করে দেখছি। তোমার এই লুকে তো আমার তৃষ্ণা দিন দিন বাড়ছে। এখন মন হচ্ছে এইখানে আসা টাই ভুল। না বলে এখন শশুর বাড়ি গিয়ে একটা অঘটন ঘটিয়েই ফেলতাম।কেউ আমাকে থামাতে পারতো না। এইভাবে দহন জ্বালায় ঝলছে দিচ্ছ কেন এই পুরুষের বুকটা। তার তো এই দহনেই বুঝি মরণ হবে। তখন পারবে তো প্রেমিকের মৃত্যুর সুখ সহ্য করতে।’

আমি বিনিময়ে শুধু খিলখিলিয়ে হাসতে থাকি‌। ইহানের এমন দৃষ্টি দেখে আর আফসোস করতে দেখে আমার মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে। আমাকে এইভাবে ছেড়ে গিয়ে যে যন্ত্রণা দিয়েছে তার সুদ তুলতে পেরেছি।
ইহান আমার দিকে ঘোর লাগা চোখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘ এই দুই বছরে আর কখনো শাড়ি পরবে না তুমি। শাড়ি তুমি সেইদিন পরবে যেদিন আমাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে মিলিত হবো। দুজনে দুজনের চোখের সামনে খুব নিকটে থাকবো। এতোটা নিকটে যে আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস একজন আরেকজনের গুনতে পারবো। ছুঁয়ে দেবো দু’জন দু’জনের অঙ্গ। তুমি সেইদিন হলুদ শাড়ি, কপালে কালো টিপ, চুল গুলো অগোছালো করে পিঠে ছেড়ে রাখবে। আমার জন্য এলোমেলো চুলে, হলুদ কড়ি সেজে আসবে।’

আমি‌ কপাল কুঁচকে বললাম, হলুদ কেন? আপনার তো কালো রং পছন্দ।’
‘ হুম। কিন্তু আমার বাচ্চা বউটাকে যে হলুদে বেশি মানায়। তুমি জানো আমি ফার্স্ট তোমার হলুদ শাড়িতে দেখেই প্রেমে পরেছিলাম। সেই রিমঝিমের গায়ে হলুদ এ আমি এক হলুদ পরীর সন্ধান পেয়েছিলাম। যে শাড়ি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল। চোখে মুখে তার বিরক্তিকর ভাব। আমি তো সেই মুখটা দেখেই থমকে গেছিলাম। আমার হার্ট মিস করছিলাম প্রথম বার। প্রথম আমি আমার চোখে যাকে সব চেয়ে অপছন্দ করা মেয়েটার মায়ায় সরে গেছিলাম।’
‘ আপনি সেই রিমঝিম আপুর বিয়ে থেকে আমাকে পছন্দ করেন?’ অবাক হলাম।
‘ ইয়েস।’

‘ তারমানে ওই যে নাটক করতে বলেছিলেন ওইসব কিছু আপনার প্লাণ ছিল।’
‘ ইয়েস মাই ডেয়ার বউ। এতো বোকা তুমি আজ বুঝলে।’
‘ আজ ও বুঝতাম না আপনি না বললে। আমি ভাবতাম আপনি আমাকে সহ্য ই করতে পারেন না পছন্দ তো দূরের কথা।’
‘ এজন্য তো আমি তোমাকে গাধা বলি।’
‘ আপনি যেমন খারাপ ব্যাবহার করতেন কি করে বুঝতাম। আমি কি সর্বজান্তা নাকি‌। আগে সব সময় রুড বিহেভ করতেন আমার সাথে।’
‘ সেটা তো নিজেকে কন্ট্রোল করার জন্য। যাতে ধরা না পরে যাই আমি যে এই পিচ্চি মেয়েটার উপর দূর্বল হয়ে গেছে।’

সেইদিন অনেক কথা হয়েছে আমাদের কথা বলতে বলতে আমি ভোর করে ফেলেছিলাম। সকালে যে আমার ক্লাস পরিক্ষা ছিল সব ভুলে গেছিলাম। ফজরের আযান দিতেই টনক নড়লো‌ আর কর কেটে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন আমাকে টেনে তুলেছে আম্মু পরিক্ষা না থাকলে কেউ আমাকে উঠাতে পারতো না। লাল টকটকে ফোলা চোখ নিয়ে উঠতে আম্মু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
‘ একি রে তোর চোখ এতো লাল কেন? রাতে বেশি ঘুমান লি নাকি সারা রাত ঘুমাসনি কোনটা।
‘ ঘুমিয়েছি। বেশি ঘুমিয়েছি তাই।’

বলে ডুলতে ডুলতে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা না করেই কলেজে চলে এলাম। আমার ঘুম ছুটছেন না খালি ডুলছি ‌ আমার এমন অবস্থা থেকে আমার নতুন ফ্রেন্ড আমাকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে আমার। আমি ওকে ইহানের কথা আগেই বলেছি তাই কালকের কথা বলার কথাটাও বলে দিলাম। ও হাসতে হাসতে শেষ প্রেম করে রাত জাগার ফলে এবার ভোগ করো। বলেছে। আমি প্রথম ও দ্বিতীয় ক্লাস ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটালাম। তৃতীয় ক্লাসে পরিক্ষা কোন মতে দিয়েই লুকিয়ে বাসায় এসেই পরলাম।আর এসেই কিছু খেয়ে একটা ঘুম দিলাম।
সেদিন রাতে ইহানের সাথে কথা বলা হলো বেশি। ঘুমিয়ে কাটালাম। পরদিন কথা বলতে গিয়ে আমার কেমন জানি মনে হলো ইহান‌ অসুস্থ কিন্তু জিজ্ঞেস করলে ইহান বলল তার কিছু হয়নি। আমি মেনে নিলাম। পরের দিন কল করে ইহানের সাথে কন্টাক্ট করতে পারলাম না

নাম্বার বন্ধ বলছে আমি। ইহানের নতুন ফ্রেন্ড জ্যাক কে কল করলাম। তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ইহান‌ অসুস্থ তার জ্বর হয়েছে মারাত্মক ভাবে। ও হসপিটালে ছিল আর তখন ফোনের দিকে কারো নজর ছিল না। ইহানের জ্বর হয়েছে শুনে আমার অবস্থা তো বেহাল। দিক দিশা পাচ্ছি না। ইহানকে দেখতে পারছি না। সে কতোটা অসুস্থ বুঝতেও পারছিনা। এতো অসহায় লাগছিল কি বলবো রাতে আর খাবার গলা দিয়ে নামলো না।খারাপ লাগাটা ভালো করেই জেঁকে ধরলো আমাকে।

ইহানের সাথে কথা বলেও শান্ত হচ্ছি না। ইহান ফোন করে বারবার করে বলছে,
‘ আমি একদম ঠিক আছি‌। এতো চিন্তা করো না তো। ‘
‘ চুপ করুন আপনি। নিজের কেয়ার একটুও নেন না। আপনি এমন কেন? আমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছে না। কেন অসুখ বাধালেন। আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে। খুব দূর্বল লাগছে অসুস্থ লাগছে শরীর শুকিয়ে গেছে।’
‘ আমার কিছু হয়নি। জ্বর এখন বেশি নাই‌। কালকেই একদম ফিট হয়ে যাবে। তোমার টেনশন দেখে মনে হচ্ছে আমি মরে গেছি।’
আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম,
‘ আপনি খুব খারাপ আমাকে খালি কষ্ট দেন। মরার কথা বললেন কেন আর কথা বলবো না আমি আপনার সাথে। রাখছি ।’
কল‌ কেটে কাঁদতে লাগলাম।
দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। আমার ইন্টার পরীক্ষা দুইদিন পর। আমি এখন এক মনে পরায় নিজেকে রেখেছি। মাঝে মাঝেই কথা হয় ইহানের সাথে কিন্তু আগের মতো না। ইহান ই বলে না। ও আমার পড়া নিয়ে খুব সিরিয়াস।

তাই সম্পূর্ণ নজর এখন পরা লেখায় দিতে বলেছে। তাই নিজে থেকে কথা কমিয়ে দিয়েছে। ইহানের সাথে কথার মধ্যে আমি বলেছি কথা একটু হলেও প্রতিদিন বলতে হবে। ইহান রাজি হয়েছে। পরদিন রাতে,,,
‘ আমাদের বিয়ে কবে হবে বলেন না প্লিজ। আপনি তো আর দুই মাস পর‌ই চলে আসবেন। তাই না।’
‘ হুম। আমি একবার আসি তারপর আর আমার এই বাচ্চা ব‌উকে শশুর বাড়ি ফেলে রাখবো না। বিয়ে করে নিয়ে আসবো।’

‘ আমার না খুব আনন্দ হচ্ছে আমি কতোদিন পর আপনাকে দেখবো উফ আমার কেমন যেন সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে।’
‘ তাই!’
‘ হুম আচ্ছা আপনার সাথে কি সত্যি জ্যাক ভাইয়া আসবে?’
‘ হ্যা। ওর নাকি বাংলাদেশে বেড়ানোর অনেক শখ তাই আসবে আমার সাথে। আর আমাদের বিয়ে খেয়ে নাকি ফেরত যাবে।’
‘ ওয়াও অনেক ভালো হবে।’
‘ আচ্ছা এবার পরতে বসো কাল তো পরিক্ষা।’
‘ হুম আচ্ছা রাখছি। কাল আমি পরিক্ষা দিতে যাওয়ার আগে কিন্তু কল করবো।’
‘ ওকে আমি এ্যাম ওয়েটিং ম্যাম। বাই গুড নাইট ‌’
আমি কল কেটে পরতে বসলাম।

আম্মু এসে জোর করে দুধ খাওয়ালো আমি নাক চেপে তা খেলাম। রাত বারোটা পর্যন্ত পরে ঘুম দিলাম। আবার সকাল চারটায় উঠে পরতে বসলাম। চোখে মুখে পানি দিয়ে‌।‌সাড়ে আটটা বাজতেই পড়া ছেড়ে উঠে গেলাম। রেডি হতে‌ লাগলাম। তারপর ইহানকে কল করে কথা বলে নিলাম। আম্মু খাইয়ে দিলো তাই হালকা খেয়ে আব্বুর সাথে বেরিয়ে গেলাম। আব্বু গেটের কাছে দাঁড়িয়ে রইলো আমি ভেতরে চলে গেলাম। আব্বু আজ এখানেই ছিল আমি পরিক্ষার ফল থেকে বেরিয়ে ইমা আপু ও আব্বুকে দেখলাম। তাদের সাথে কথা বলে বাসায় চলে এলাম।
মাঝে মাঝেই আব্বু নয়তো ইমা আপু আম্মু কেউ না কেউ আমার সাথে গেছেই পরিক্ষার পৌঁছে দিতে। একদিন চাচাজান ও চলে এলো। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম আব্বু আর চাচাজান মিলে গেছে বলে।

একমাস ধরে পরিক্ষা চললো। মাঝে কতো যে বন্ধ গেছে। বারোটা পরিক্ষা শেষে প্র্যাটিকাল হলো কয়েকটা সব শেষে আমি ফ্রী এখন শুধু আমার একটাই অপেক্ষা প্রিয় মানুষটির ফিরে আসার অপেক্ষা। আমি ইহানের অপেক্ষায় বসে আছি আর মাত্র চারদিন পর তিনি আসবেন আমি পারিনা নেচে দেয়।
আমি প্র্যাটিকাল আজ শেষ করে এলাম এসেই ঘুম দিয়েছি‌। উঠে আজ সারারাত ইহানের সাথে কথা বলবো ভাবছি। ঘুম ভাঙে আম্মুর ডাকে। আমি ঘুমঘুম চোখে আম্মু বললাম,
‘ কি হয়েছে আম্মু ডাকছো কেন? আজ পরিক্ষা শেষ আজ আর কোন ঝামেলা নাই তাই শান্তি মতো ঘুমাতে দাও।’
‘ তারাতাড়ি উঠ আর হাত মুখ ধুয়ে একটু সাজগোজ করে বাইরে আয়।’
আমি ভ্রু‌ কুঁচকে বললাম, ‘ সাজবো কেন? কোথাও যাব নাকি আজ?’

আম্মু আমাকে টেনে ওয়াশ রুমে ঢুকিয়ে দিলো। আমি ফ্রেশ হয়ে এলাম আম্মু ভালো পোশাক বের করে দিল জিজ্ঞেস করছি এসব কেন পারবো আম্মু উওর না দিয়ে রেডি করিয়ে চুল বেঁধে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এলো। আমি বিরক্তিকর মুখে এখানে এসে দেখি শুভ্র ও তার মা পাশে একজন ভদ্র লোক ও একটা মেয়ে ছোট বাবু কোলে বসে আছে। আমি এরা এসেছে কেন ভাবছি আম্মু সালাম দিতে বলল,
আমি কিছু না বুঝেই সালাম দিলাম।

শুভ্র মুচকি মুচকি হাসছে। আমার হঠাৎই মনে পরলো শুভ্র আরেকবার এসেছিল আর আমার আর তার বিয়ের কথা বলেছিল আমি তখন ইহানের সাথে ছিলাম। কতো রাগ করেছিল ইহান। আজ ও শুভ্র এসেছে গোষ্ঠি সুদ্ধ এসেছে এবার ও কি তাই জন্য। ভয় হতে লাগলো। আব্বু ও পাশের ভদ্রলোক টার সাথে কথা বলছে খুশি মনে এটা হয়তো শুভ্রর বাবা। আমি ঢোক গিলে আম্মুর দিকে তাকালাম। তখনি শুভরূমা টেনে তার পাশে আমাকে বসিয়ে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে আমি সহ্য করতেই লাগলাম সব। চোখ ফেটে জল আসছে। শুভ্র মা আমার গালে হাত দিয়ে বলল,
‘ মাশাআল্লাহ। এখন আরো সুন্দর হয়েছে আমাদের ঊষা। আপনাদের মেয়েকে তো আমরা পছন্দ করেছি আরো দুই বছর আগে এখন আর কি বলবো এখন শুধু ঘরে‌ তোলার অপেক্ষায় আছি। ভাইসাহেব( আমার আব্বুকে বলল) আমি আজকেই এনগেজমেন্টটা করিয়ে নিতে চাই। আমি আংটি নিয়েই এসেছি আর বিয়েটাও এবার তারাতাড়ি হারতে চাইছি। এবার তো ঊষা আর ছোট্ট টি নাই আঠারো বছর হয়ে গেছে।’

‘ আপনার তেমন ইচ্ছে। কিন্তু এতো‌ তারাতাড়ি ওদের মতামত টা’
‘ আমার ছেলে তো রাজিই। এখন ঊষা মামনির আমার ছেলেকে পছন্দ হয়েছে কিনা বল তো মামনি!’
আমি অসহায় চোখে আব্বু ও একবার আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মু অগ্নি দৃষ্টিতে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে। আব্বু আমাকে রাজি হ‌ওয়ার ইশারা করছে।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আব্বুর কথার বিরুদ্ধে আমি কখনো যেতে পারবো না। আম্মু আমাকে উঠে চলে আসতে বলছে। আমি দুটানা পরে গেলাম। আমি অশ্রু সিক্ত চোখে আমার বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলে তাকিয়ে আছি। সেখানে জ্বলজ্বল করছে একটা আংটি আংটির উপরে E লেখা ইংরেজি তে। এই আংটিটা দুইবছর আগে‌ ইহান আমাকে পরিয়ে দিয়েছিল‌‌। আর আমার হাতের পিঠে চুমু খেয়ে বলেছিল,
‘ আজ থেকে তুমি হাফ ইহান চৌধুরী হলে। ফিরে এসে ফুল করে ফেলবো।’

আমি বিনিময়ে লজ্জা হাসি দিয়েছিলাম।
এক ফোঁটা জল গলিয়ে পরলো আব্বুর কথা শুনে,
‘ আপনাদের যেমন ইচ্ছা।’
আমি অবাক হয়ে তাকালাম আব্বুর দিকে আমার মতামতের তোয়াক্কা না করেই এই রকম করলো। আজ বাবাকে চিনতে পারছি না যেন আমি। শুভ্র মা হাসি মুখে পার্স থেকে আংটির কোটা বের করে আমার দিকে এগিয়ে এলো।আর আমার হাত উঁচু করে ধরলো।আমি চোখ বুজেই আছি ইহানের দেওয়া আংটি আমি কিছুতেই খুলবো না।
শক্ত হয়ে বসে আছি আড়চোখে শয়তান শুভ্রকে দেখলাম। লোকটা ইচ্ছে করে এমন করছে। আমার আর ইহানের কথা জানার পর ও এই ভাবে কষ্ট দিচ্ছে।

আম্মু হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ আপনার কিছু মনে করবে না। আজ আংটি পরাবেন না। আমাদের আরো অনেক আত্নীয় স্বজন আছে তাদের মতামত ছাড়া বিয়ের মতো এতো বড় সিদ্ধান্ত হুট করছি নিতে পারছিনা। ক্ষমা করবেন আমাদের সময়ের প্রয়োজন।’
আম্মু বলেই আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় রুমে যেতে বললো। আমি কৃতজ্ঞ চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে চলে গেলাম রুমে।
বাইরে কি হলো আর তার কোন খবর নাই। রুমে এসেই ইহান কে কল করলাম কিন্তু সে অনলাইনে নাই।আজ সারাদিন ই সে অফলাইন দেখা যায় সকালে কথা হয়েছে আসার পর থেকে আমি খাওয়ার পর ঘুম দিলাম আর কথা হয়নি।

আমি দরজা আটকে বসে আছি। ইহান রাত আটটায় আমাকে কল দিয়েছে আমি রিসিভ করেই কেঁদে দিলাম। আর বিকেলের সব বললাম।সব শুনে ইহানের রিয়াকশণ কি জানা হলো না আমি কল কেটে ভিডিও কল দিচ্ছি। ইহান রিসিভ করছে না। আমি বিরক্তি হয়ে আবার অডিও কল দিতে যাব তখন ইহানের সেই আগের পরিচিত বাংলাদেশের নাম্বার থেকে কল এলো আমি চমকে উঠলাম।
আমি রিসিভ করতেই ইহান বলল,
‘ দুই মিনিটের মধ্যে নিচে আসো। আমি অপেক্ষা করছি।’

তারপর কল কেটে দিল। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি ফোনের দিকে উনি বাংলাদেশ চলে এসেছে আজকেই আর আমাকে জানায় নি। আমরা আমার পরিক্ষার পর‌ই নিজেদের বাসায় চলে এসেছি। প্র্যাটিকাল পরিক্ষা আমি এই বাসায় থেকেই দিয়েছি। আম্মু আব্বু নিজেদের রুমে কি নিয়ে যেন করা কাটাকাটি করছে। এগুলো যে আমার বিয়ে নিয়ে আমার বুঝতে বাকি নাই। কারণ আম্মু এখানে বিয়ে আমাকে কিছুতেই দিবে না। তিনি তো জানেন‌ই আমি অন্যজনের প্রেমে দেওয়ানা। আম্মু আমাকে অনেক সাপোর্ট করে। এমন মা পেয়ে আমি সত্যি খুব ভাগ্যবান।
আমি পা টিপে টিপে বাইরে চলে এলাম। ইহান গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল দারোয়ান কাকা নাই আমি আবসা অন্ধকারে মধ্যে দৌড়ে ইহানকে জরিয়ে ধরলাম। কত অপেক্ষার পর মানুষটার দেখা পেলাম তাই নিজেকে আর কন্ট্রোল রাখতে পারিনি ঝাঁপিয়ে পরেছি তার বুকে।

আচমকা এমন ছুটে এসে জরিয়ে ধরায় ইহান কিছুটা পিছিয়ে যায় তাল সামলাতে না পেরে। কিন্তু পরতে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয়। ইহান ওইভাবেই ওকে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।
‘ এবার বলো ফোনে কি বলছিলে?’
আমি লজ্জা পেয়ে ইহানের থেকে একটু সরে দাঁড়ালাম।
‘ লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া অফ করে আসল কথা বলো!’
‘ আপনি এমন করে কথা বলছেন কেন?’

‘ তো কেমন করে কথা বলবো। আমার হবু ব‌উকে কিনা অন্য কেউ দেখতে আসে আবার এনগেজমেন্ট করাতে চায়। এসব শোনার পর আমার অবস্থা কেমন হয়েছে ভাব। আমি যদি সারপ্রাইজ দিতে আজ না আসতাম তখন ওই বিদেশে থেকে আমার কি অবস্থা হতো ভাব!’
‘ হয়নি তো শেষ মুহূর্তে আম্মু সব আটকে দিয়েছে। এখনো তারা দুজন কি নিয়ে যেন কথা কাটাকাটি করছে মনে হলো বিয়ে নিয়েই। আম্মু তো সব জানে আম্মু বোধহয় এবার আব্বু কে জানিয়েই দিবে।’
‘ দিক ভালোই হবে। কিন্তু আমার এক জায়গায় ভয়। চাচু এসব জানার পর আবার হিতের বিপরীত হবে না তো। যদি না‌ মেনে উল্টা সম্পর্ক‌ নষ্ট করে দেয়।’

আমি বললাম, ‘ আমার মনে হয় না এমন করবে। আব্বু ও তো ভালোবেসে বিয়ে করেছে। তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে আমাদের। আমরা তো দুজন দুজনকে ভালোবাসি তাই না। তিনি আমাদের মাঝে ভিলেন হবেন না। আপনি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন না এবার‌।’
‘ ভেতরে চলো।’
বলেই গাড়িতে উঠে বসলো ইহান। আমি ও উঠে বসলাম।
‘ আমরা কোথায় যাব এখন। আম্মু আব্বু খুঁজবে আমাকে।’
‘ এতো দিন পর দেখা একটু ঘুরাঘুরি না করলেই নয়।’
‘ ওকে‌ চলুন। বাসায় কিছু জিজ্ঞেস করলে আপনার কথা বলে দেব। কেমন।’
‘ আমি এতো ভীতু নাকি যে বলার কথা শুনে ভয় পাবো। তোমার যা খুশি বলো।’
‘ ওকে তাহলে চলুন শুনেছি রাতে নাকি প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য আইসক্রিম ওয়ালা থাকে সেখান থেকে না হয় আইসক্রিম খাওয়েইন।’

ইহান ড্রাইভ করছে এই গাড়িটা নতুন কিনেছে চাচাজান। আমাকে প্রথম দিন পরিক্ষা দিতে নিয়ে গেছিল আর আজ ইহানের সাথেও ওই গাড়িতেই যাচ্ছি। আমি ইহানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছি। ইহান বিদেশে গিয়ে ক্লিন শেভ করেছে‌। আগে দাড়ি ছিল এখন নাই। এইভাবেও মানিয়েছে খুব লোকটাকে। আমি আড়চোখে তাকে দেখছি। আর মুচকি মুচকি হাসছি হঠাৎ বলে উঠলাম,
‘ জ্যাক ভাইয়া আসে নাই?’
ইহান এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ এসেছে তো।’
‘ তাকে একা রেখেই চলে এলেন বোর ফিল করবে তো!’
‘ তিনি এখনো জেগে থাকলে তো।এসেই ঘুম দিছে।’

‘ আপনি এখানে চলে এলেন যে আপনি ক্লান্ত না। কষ্ট করে আসলেন কেন? কাল আসতে পারতেন।’
‘ বাসায় থাকলে ও আমার ক্লান্ত দূর হতো না। আমার দু’চোখ ব্যাকুল তৃষ্ণার্ত থাকতো একজনকে দেখতে। এখানে এসে যতটা শান্তি পাচ্ছি ঘুমালেও পেতাম না।’
‘ আপনাকে না খুব সুন্দর লাগছে!’
ইহান ঠাস করে গাড়ি থামিয়ে ফেললো।আর আমার দিকে পূর্ণ নজরে তাকালো।আ‌র বলল,
‘ কি বললে?’
আমি কথাটা বলে থতমত খেয়ে গেলাম।
‘ কিছু না।’

‘ শিকার করার সৎ সাহস নাই। ওকে নো প্রবলেম।’
ইহান গাড়ি থেকে নামতে গেলে আমি বললাম, ‘ নামছেন কেন?’
ইহান পেছনে ফিরে বলে, ‘ তুমি না বলে এই রোমান্টিক ওয়েদারে আইসক্রিম খাবে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে তাই নিয়ে এলাম। নাম এবার।’
আমি গাড়ি থেকে নেমে দেখি সামনে একটা আইসক্রিম ওয়ালা দাড়িয়ে আছে। সেখানে দিয়ে কয়েকজন কাপেল যাচ্ছে আমি বললাম আর ইহান নিয়ে আসবে আমি ভাবিনি।
চকলেট ফেভারের আইসক্রিম নিলাম একটা ইহান নিলো না। আমি তাই জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আপনি খাবেন না? আপনি কি আইসক্রিম খান না? ‘
ইহান বলল, ‘ খাই না কিন্তু আজ খাবো।’

‘ খাবেন কি করে আপনি তো নিলেন না!’
‘ নিতে হবে কেন? এই যে এই টা খাব।’
বলেই ইহান আমার খাওয়া আইসক্রিম হাত থেকে টান মেরে নিয়ে নিল। আর আমি যেখান থেকে খাচ্ছিলাম ইহান ও ঠিক সেই খান থেকেই খেতে লাগলো।
‘ ছিহ এটা কি করলেন? আপনি আমার খাওয়া আইসক্রিম খেলেন কেন? আর আপনি খেয়ে নিলেন এখন আমি খাব কি করে? আপনি এতো কৃপণ যে টাকা বাঁচাতে একটা কিনে শেয়ার করে খেতে চাইছেন।’
ইহান আমার হাত হাত টেনে আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ কৃপণ না ওকে। এটা করলাম কেন জানো। শুনেছি স্বামী স্ত্রীরা ভাগাভাগি করে খেলে তাদের ভালোবাসা বাড়ে। আর আমরা এখন প্রেমিক প্রেমিকা আমরা ও ভাগাভাগি করলে আমাদের ভালোবাসা বাড়বে।’
‘ এ্যা কি অদ্ভুত লজিক।’

আমি খেতে না চাইলেও ইহানের জন্য আমাকে তার সাথে শেয়ার করেই খেতে হলো আইসক্রিম। আমরা অন্ধকার রাস্তায় ল্যামপোস্টের আলোতে হাঁটলাম। তারপর ইহান গাড়িতে এসে পেছনের সিটে বসে আমাকে নিয়ে। আমার কোলে মাথা রেখে সিটেই শুয়ে পরে।আর বলে চুল টেনে দিতে।
আমি বললাম, ‘ মাথা ব্যাথা করছে?’
ইহান বলে, ‘ হুম।’
‘ আচ্ছা চোখ বন্ধ করে‌ থাকুন কিছুক্ষণ তারপর আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবেন।’
‘ ওকে।’

ইহান চোখ বন্ধ করে নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শে। ওইভাবেই ওর ঘুম চলে আসে। আর ও ঘুমিয়ে যায়।আমি ইহানের ক্লান্ত মুখটা দেখে ডাকতে পারিনা আর কিছুক্ষণ থাক ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরি। যখন চোখ মেলে তাকায় তখন সকাল। ইহান এখনো আমার পেটে মুখ গুজে ঘুমিয়ে আছে আর আমি সিটে হেলান দিয়ে। তারাতাড়ি ইহান কে ডাকলাম। এখন কয়টা বাজে কে জানে সূর্য ও উঠে গেছে। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে আব্বু আম্মু কি করছে কে জানে আমাকে নিশ্চিত খোঁজে হয়রান হচ্ছে।
ইহানকে ধাক্কা দিতেই উঠে গেল।

তারপর ভ্রু কুঁচকে চারপাশে তাকিয়ে বলল, ‘ আমরা গাড়িতে কেন?’
‘ সব দোষ‌ আপনার কাল যদি মাথা টিপে দিতে না বলতেন তাহলে এই কেলেঙ্কারি হতো না!’
‘ হোয়াট কি হয়েছে?’
‘ আপনার জন্য সারারাত আমরা দুজন এই গাড়িতেই ছিলাম বাসায় পৌঁছাতেই পারিনি। আল্লাহ জানে বাড়ির কি পরিস্থিতি। আমি এখন বাড়ি যাব কি করে। কি জবাব দেব।’
‘ কেন কাল না বললেন আমার সাথে গিয়েছো বলবে?’
‘ ওইটা তো এমনি মজা করেই বলেছিলাম।’

‘ কেন মজা করবে কেন? আমি তোমাকে নিয়ে খুব সিরিয়াস। মজা না ওকে তাই যা সত্যি তাই বলবো!’
‘ সারারাত এক সাথে কাটিয়েছি এটা জানলে কি মিন করবে বুঝতে পারছেন।’
আমরা তো জানি আমরা খারাপ কিছু করিনি।’
‘ তবুও‌ আমি আব্বু আম্মু কে মুখ দেখাবো কি করে? আম্মু বলেছে আমার পাশে সব সময় থাকবো।আব্বু কে তিনি রাজি করাবেন তবুও তার বিরুদ্ধে গিয়ে এসব জানলে খুব কষ্ট পাবেন।’
‘ প্লিজ ঊষা কুল।আমি ম্যানেজ করে নেব চলো আমার সাথে। কিছু হবে না!’
আমাকে নিয়ে বাসায় আসবে তখন আবার‌ গাড়ি থামিয়ে ইহান চা বিস্কুট নিয়ে এলো। আমার মন‌ খারাপ সাথে চিন্তিত তাই আমি খেতে চাইলাম না কিন্তু ইহানকে মানাতে পারলে তো। জোর করেই খাইয়েছে।তারপর গাড়ি চলতে লাগলো বাসায় উদ্দেশ্যে।

গাড়ি থেকে নেমে ইহান আমার হাতের কব্জি কেটে ধরলো। নির্ভর দিয়ে হাত ধরেই বাসার ভেতরে যেতে লাগলো। বাইরে একটা গাড়ি দেখলাম। আমার বুক ধুকপুক করছে ইহান কলিংবেল দেওয়ার আগে বলল,
‘ চাচচুর কাছে আজ আমার এই বাচ্চা ব‌উকে চাইবো‌। তাকে মানাতে যা করতে হয় সব করবো কিন্তু আমার এই সুখ আমি ছিনিয়ে নিতে দেবো না কাউকে।’
আমার কপালে ছোট করে ভালোবাসার পরশ দিয়ে কলিংবেল চাপলো।

গেটের সামনে বড় বড় করে লেখা ইহান & ঊষা। বর কনের নাম জ্বলজ্বল করছে। বিয়ের আমেজে চৌধুরী ভিলা সেজে উঠেছে।বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। ভাই বোন আত্নীয় স্বজন সবাই হ‌ইহুল্লায় মেতে আছে। এসব কিছুই আগুন দৃষ্টিতে দেখতেছে শুভ্র। ও গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতরে যায়‌। আর ওর সাথে আরো চার পাঁচ জন যায়। সবাই গুন্ডা ও এসেছে ঊষা কে নিয়ে যেতে আর এই বিয়ে ভন্ড করতে।

এদিকে আমি বিয়ের সাজে নিজের রুমে বসে আছি। কাজি আসতেই কবুল বলতে বলা হয়। আমি কবুল বলতে সময় নেয় না।কারণ আমার তো আর বিদায় হবে না। আমি থাকবো নিজের দাদু বাসায়‌ই। বিয়ের একমাস আগেই চাচাজান আমাদের এই বাসায় নিয়ে এসেছে। সেইদিন আমি আর ইহান ভয়ে ভয়ে বাসার ভেতরে ঢুকতেই চমকে উঠি। ড্রয়িং রুমে চাচা চাচি , ইমা আপু রিফাত ভাইয়া , ইলা আপু, আম্মু আব্বু সবাই বসে আছে। আমরা ঢোট গিলে এগিয়ে যাচ্ছি ইহান তখন ও আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আমি হাত মুচরাচ্ছি ছারাতে কিন্তু ইহান আরো শক্ত করে‌ ধরেছে। ইমা আপু উঠে এসে ইহানের কান টেনে ধরলো। আমি চমকে উঠলাম।

‘ কি হচ্ছে আপু ছারো।’ ইহান বলল।
‘ এসব কি? তোরা কোথায় ছিলি সারা রাত?’
‘ ওই আমি আর ঊষা একটু…
‘ প্রেম করতে গেছিলি তাই না।একটু ও তর সয় না তাই না। বাঁদর কোথাকার এক জায়গা থেকে এসেই রেস্ট না নিয়ে কারো সাথে দেখা না করেই গার্লফ্রেন্ড এর সাথে লং ড্রাইভে যাওয়া হচ্ছে তাইনা।’
আমি ইমা আপুর কথা শুনে ভয়ে ভয়ে আব্বুর দিকে তাকাচ্ছি তার চাহনী স্বাভাবিক।
আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না সবাই এই সকাল বেলা আমাদের বাসায় কেন? আর এসব শুনে কারো রিয়েক্ট করতে দেখছি না সবাই স্বাভাবিক ভাবেই আছেন। আম্মু এগিয়ে এসে বলল,

‘ এই দুজন আমাকেও ভরসা করতে পারলো না। আমি তো ভাবছি দুজন বোধহয় কালের ঘটনার জন্য পালিয়ে গেছে।’
ইহান মাথা নিচু করে আছে। আমি অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি শুধু। লজ্জা ও ভয় আমাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে।
আব্বু এগিয়ে এসে ইহানকে বলল,

‘ চাচু কে বিশ্বাস করে বলা যেতো না কথাটা‌ আমি কি এতোটাই খারাপ চাচু যে তোর ইচ্ছে পূরণ করতাম না। আমার মেয়ে আমার কলিজা আর তুই আমার জান। দুজনে আমার খুব কাছে। তোদের ভালোবাসা কি আমি মানতাম না নাকি‌। তুই আমার এই ছোট মেয়েটাকে ভালোবাসিস জানলে আমি কবেই নিশ্চিত হতে পারতাম। এর বিয়ে নিয়ে আমার অন্য জায়গায় যেতে হবে কেন? আমার ঘরের ছেলেই তো আছে। এবার আমি নিশ্চিত আমার ঘরের সন্তান ঘরেই থাকবে। আমার পরে আমার ঊষাকে তুই আগলে রাখতে পারবি আমি জানি। আগে এসব জানালে আমি ওই সব করতাম‌ই না।’

চাচাজান আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘ আমার তো আরেকটা মেয়ে হয়ে গেল। এটা আমার ছোট মা আমার ঘরের লক্ষি। আমার সোনা মা কে আমার ঘরের ব‌উমা করে তারা তারি নিয়ে যাব দেখিস। এই অপদার্থ টা একটা অন্তত সঠিক কাজ করেছে।’

সেদিন সব মিটে যায় এক মাস পর আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করে। সেইদিন সবাই আমাদের বাসায় থাকে পরদিন চাচাজান জোর করে আমাদের সাথে করে এই বাসায় ফিরে আসে। আমার জন্য একটা রুম খোলে দেওয়া হয় বিয়ের আগ পর্যন্ত থাকার জন্য। এক মাসে আমি আর ইহান চুটিয়ে প্রেম করেছি‌। বিয়ের প্লাণ করেছি শপিং সব কিছু। এর মাঝে ইলা আপুর এনগেজমেন্ট করে নিয়েছে। বিয়ের আগেই আমার নানু বাড়ির সবাই এসেছে এখানে এখন আমার পাশে বসে আছে লিনা।

আমার এখানের কাজ শেষ হতেই কাজি ইহানের কাছে চলে গেল। লিনা ও চলে গেল বিয়ে পরানো দেখবে বলে। আমার পরনে গোল্ডেন লেহেঙ্গা ও ফতুয়া পিন কালারের। দুপাট্টা গোল্ডেনের মধ্যে পিন। বিয়ে পরানো শেষ হতেই আমাকে ইহানের পাশে নিয়ে বসানো হলো। ইহান আমার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাসিং করে গোল্ডেন শেরোয়ানি পরেছে।
আমি ইহানের পাশে বসে আছি। ইহান হুট করে আমার হাত ধরে টেনে স্টেজে থেকে নামালো আমি লেহেঙ্গার জন্য দৌড়াতে পারছি না ইহান আমাকে কোলে তুলে পিছন গেইট দিয়ে বেরিয়ে এলো আমি চমকে উঠলাম।
‘ আরে কোথায় যাচ্ছেন? আর এইভাবে দৌড়ে এলেন কেন?’
ইহান আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পরলো। আমার কথার উত্তর না দিয়ে। গাড়ির ভেতরে দেখলাম ল্যাকেজ রাখা আমি ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে আছি। গাড়ির সামনে তাকিয়ে দুটো প্যাকেজ চোখে পরলো কক্সবাজার এর। তিনদিনের টিপ‌।

‘ এসব কবে প্লান করেছেন?’
‘ আগেই এটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ। আমাদের বাসর রাত হবে কক্সবাজার।’
‘তাই বলে কাউকে না জানিয়ে এইভাবে মাঝ অনুষ্ঠানে বেরিয়ে আসবেন?’
‘ মিসেস ইহান সবাই জানে এই টিপের কথা। শুধু আপনি জানতেন না। আর অনুষ্ঠান দিয়ে কি হবে তোমার জন্য আরো সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। এখানের কাজ ছিল বিয়ে তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী করা তা সম্পূর্ণ তো কাজ খতম।’
‘ তাই নাকি!’
‘ হুম। তোমাকে আজ এতো সুন্দর লাগছে যে খালি আদর করতে ইচ্ছে করছে। মন চাইছে শক্ত করে একটা চুমু খাই ওই ওষ্ঠে।’

আমি লজ্জা রাঙ্গা হয়ে ঠোঁটে হাত চেপে অন্য দিকে ঘুরে গেলাম আর বললাম।
‘ ছিহ কি অশ্লীল কথা বার্তা?’
‘ এখন তো শুধু বলছি একটু অপেক্ষা করো জান সব প্র্যাটিকাল করে দেখাবো।’
” আমি কিছু দেখতে চাইনা‌। আমাকে নামিয়ে দিন আমি কোথাও যাব না। ‘
বলেই আমি দরজা খুলতে গেলে ইহান আমাকে টেনে সিট বেল লাগিয়ে বলে,
‘ চুপচাপ বসো নাহলে কিন্তু সময় নষ্ট না করে গাড়িতেই বাসরটা সেরে ফেলবো।’
‘ ধ্যাত।’

গাড়ি চলতে লাগলো। আমি লজ্জা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকি। হঠাৎ আমার ফারিয়ার কথা মনে পড়ে। এক মাসে এক বার ও দেখি নাই‌। জিজ্ঞেস করলে ও ইহান বলে নি। আজ আবার জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আচ্ছা ফারিয়া আপু কোথায় তাকে ইনভাইট করেন নি।’
‘ ও তো অস্ট্রেলিয়া। ইনভাইট করলেই আস্তে পারবে নাকি‌।’
‘ আপনি চলে এলেন উনি এলো না কেন?’
‘ সে অনেক কাহিনী। এতো বলতে পারব না। শুধু জেনে রাখো আমার আরেক ফ্রেন্ড ছিল না এরিক।’
আমি বললাম, ‘ হুম।’

‘ ওরা দুজন বিয়ে করেছে।’
‘ কিহ ওই ছেলেটা না খ্রিস্টান।’
‘ হুম।’
‘ তাহলে বিয়ে আর উনি না আপনাকে ভালোবাসে।’
‘ বললাম তো অনেক কাহিনী বলা যাবে না।’
‘ ধুর’
ফারিয়াকে নি ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরি। ইহান আমার মাথা ধরে কাঁধে রেখে ড্রাইভ করতে লাগে।
এদিকে শুভ্র রা ভেতরে গিয়ে ঊষাকে নিয়ে হাঙ্গামা করবে ভেবেছে কিন্তু একি ঊষা ইহান কোথায়? ওরা কেউ তো নাই। স্টেজে বর কনে বসবে স্থানে ছোট কয়েকটা বাচ্চারা ছবি তুলছে লাফালাফি করছে। সারা বাড়ি খুঁজে ওদের না পেয়ে পাগলের মতো ব্যর্থ হয়ে চলে গেল‌। ওরা আত্নীয় দের মতো সেজে গিয়েছিল তাই কেউ চিনতে পারিনি। আত্নীয় ভেবেছে।

ইহানের ডাকে জেগে উঠলাম।‌ আমাকে টেনে প্লেনে উঠলো। সাতটায় কক্সবাজার এসে পৌঁছেছি আমরা।
কটেজে উঠলাম। খুব সুন্দর সাজ সজ্জা সেখানের। আমার ফ্রেশ হতে এক ঘন্টা লাগলো সুতি সেলোয়ার কামিজ পরে নিলাম। তারপর দুজনে খাবার খেয়ে একটা ঘুম দিলাম।
এগারোটার দিকে ইহান আমাকে উঠিয়ে একটা সাদা সিল্কের শাড়ি পরতে দিল। নিজে হাতে সাজিয়ে চোখ বেধে কোথায় জানি নিয়ে এলো কোলে করে।
ঠান্ডা বাতাস বইছে আমার ঠান্ডা লাগছে তাই ইহানের সাথে চিপকে আছি।

এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২+৩৩+৩৪+৩৫

ইহান আমাকে নামিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দিল। গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাস্তা করা। দূরে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা চারপাশে ফুল দিয়ে সাজানো। আর লাল নীল বাতি জ্বলছে নিভছে‌। আমি ইহানের হাত ধরে এগিয়ে গেলাম সামনে। তখন উপর থেকে ফুলের বৃষ্টি হতে লাগলো। ঝরঝর করে ফুল আমার শরীরে পরছে আমি দু হাত মেলে এগিয়ে যাচ্ছি। এটাই আমার সারপ্রাইজ বুঝি‌। ইহান আমাকে টেনে ছোট টেবিলের সামনে নিয়ে এলো। একটা চকলেট কেক রাখা তার উপর আমার আর ইহানের নাম লেখা। সাথে সাথে সামনে লাইটিং এর মতো করে জ্বলে উঠলো একটা কথা। আমি লাভ ইউ মাই লাভ‌। আমার বাচ্চা ব‌উ।

আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। ইহান আমার হাত ধরে কেকটা কেটে এক টুকরো আমাকে খাইয়ে দিল আমিও খাইয়ে দিলাম।
ইহান পেছনে থেকে আমাকে জরিয়ে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
‘ নতুন জীবনের জন্য স্বাগতম বাচ্চা ব‌উ। এই আমাকে সারাজীবন সহ্য করতে পারবে তো! আমার ভালোবাসার অত্যাচার সারাজীবন তোমাকে সহ্য করতে হবে কিন্তু বাচ্চা ব‌উ।’
আমি ইহানের দিকে ঘুরে ইহানের কপালে চুমু খেলাম উঁচু হয়ে। তারপর বললাম, ‘ আপনাকে জীবনে পেয়ে আমি ধন্য। আপনি আমার জীবনের এক চিলতে রোদ। যা আমি সারাজীবন ধরে রাখতে চাই। আপনার বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে চাই।’

ইহান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ভালোবাসি প্রিয়তমা। আমার সুখের চাবিকাঠি।’
‘ আমিও ভালোবাসি খুব বেশি।’
সারপ্রাইজ টা কেমন হলো। শেষ করে দিলাম তো। সবাইকে ধন্যবাদ পাশে থেকে আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। লাভ ইউ অল। সবাই ভালোবাসা নিবেন আমার। নতুন গল্পে নতুন টুয়েস্ট নিয়ে আসবো। ততক্ষন অপেক্ষা করুন। ধন্যবাদ ❤️

( লেখাঃ Nondini Nila ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ১ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন

1 COMMENT

Comments are closed.