এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৮

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৮
নুসাইবা রেহমান আদর

সানা নিজের চোখ অফ করে আছে,সাফোয়ান পকেট থেকে চকলেট বের করে সানার মুখে পুরে দিলো। সানা চোখ খুলে সাফোওয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।সাফোয়ানের রিয়েকশন দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
– এইটুকু মেয়ে আর তার ভাবনা চিন্তা কি আল্লাহ।
– এই ঝালে কি আমার মাথা ঠিক ছিলো? আর আমি গল্পতে পড়ছি নায়িকার যখন ঝাল লাগে তখন নায়ক এভাবে ঝাল কমায়।

– না আমি কোনো নায়ক আর না তুমি নায়িকা। পিচ্চি কোথাকার।
এই এই আপনি আমাকে একদম পিচ্চি ডাকবেন না আধবুড়ো বেডা।
– সাট আপ সানা।
সানা মুখ গোমড়া করে চকলেট খেতে লাগলো। সাফোয়ান সেদিকে তাকিয়ে আছে৷
-এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আমার খাবারে নজর দিয়েন না। আমার পেটুতে ব্যাথা করবে।
– ভুলে যেওনা চকলেট আমার আনা। আরো চকলেট আছে কিন্তু তোমার এই কথার জন্য দিবো না মেয়ে।
– না দেন আমার লাগবে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– কার থেকে পারমিশন নিয়ে মাঝরাস্তায় নেমে তুমি ফুচকা খাও? আমাকে জিজ্ঞেস করছিলা? জানো এই যায়গায় আমাদের কতোটা বিপদ? যেখানে আমি কোনো গার্ড বা সিকিউরিটি ছাড়া যাই না কোথাও আমার স্ত্রী হয়ে তুমি কোনো পারমিশন ছাড়াই মাঝরাস্তায় এই আচরন কর। নেক্সট এইরকম কাজ দেখলে আমি সোজা তোমাকে তোমার বাপের বাসায় পাঠিয়ে দিবো।

সাফোয়ানের এই ঠান্ডা কন্ঠের ধমকিতে কাজ হয়ে যায়। সানার হাসোজ্জল চেহারা মলিনতায় ছেয়ে যায়। সে যে বাড়িতে ফিরত যেতে চায় না। সানাকে গভির চিন্তায় দেখে সাফোয়ান ভ্রু কুচকে
তাকিয়ে আছে।মাঝে মাঝে কোন ভাবনায় চলে যায় সানা কে জানে। সাফোয়ানের খুব টায়ার্ড লাগছে তাই ওয়াসরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে৷ সানাও বিছানা থেকে নেমে আলমারিতে গিয়ে সব ড্রেশ সাজাতে লাগে। এই প্রথম যে নিজে গিয়ে নিজের পছন্দ মতো কিনলো।

আজকের দিন টা সানার কাছে স্মরনীয় হয়ে থাকবে। ফুচকা অনেকদিন ধরে সানার খাওয়া হয় নাই তাই আজকে দেখে লোভ সামলাতে পারে নাই। আর যাইহোক ফুচকার লোভ সামলানো যায়না। সানার গুছানো শেষ হতেই সাফোয়ান চলে আসে। সানাও নিজের ড্রেশ বের করে সেও গোসলে চলে যায়। সাফোয়ান নিজের কাজ করা শুরু করে। ভোটের কাজ শুরু হইতে বেশি দেড়ি নাই কাজের অনেক চাপ।
সানা গোসল সেরে আসে,সাফোয়ান কে কাজ করতে দেখে।

– এই আপনি নিজের যত্ন নেন? গোসল করে আসছেন হাতে পায়ে লোশন দিছেন। সারাদিন কাজ কাজ নিজের ত্বকের যত্ন নিবেন।
– আমি কি মেয়ে নাকি যে সারাদিন রুপচর্চা করবো। আমি অনেক ব্যাস্ত অনেক কাজ আছে।
সানা লোসন এনে নিজেই সাফোয়ানের হাতে পায়ে মাখিয়ে দিতে লাগলো। সাফোয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সানার দিকে। এই মেয়ের কাজে সাফোয়ান দিন দিন অবাক হচ্ছে। সানা কে কিছু বলা না বলা সমান। এই এখন রাগ হয়ে আছে কিন্তু কিছুক্ষন পর সেই বিষয় নিয়ে কিছু মনে থাকে না।

– সানা
সাফোয়ানের কোমল ককন্ঠস্বরে কানে আসাতে কেপে উঠলো সানা। এইকয়েকদিনে এই প্রথম এতো কোমল কন্ঠে ডাকলো।
-জ্বী কিছু বলবেন?
– ক্ষুদা লাগছে নিচ থেকে খাবার নিয়ে আসো।
সানা সাফোয়ান কে ছেড়ে নিচে চলে যায়। কি ভাবে আর হয় কি। নিজেকে বকতে লাগলো সানা সে দিন দিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকে এতোদিন গল্প গুলা পড়তে পড়তে সে এখন সেই গুলায় কল্পনা করতে থাকে। আল্লাহ জানে সাফোয়ান তাকে কি ভাবে।

– রেহানা আপা আমাকে ভাত বেরে দেও তো ওনার ক্ষুদা লাগছে।
– ম্যাম আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।
– হ্যাঁ আপা বলেন।
– আজকে আমাদের সাথে সপিংমলে থাকা অই মহিলার কথা মনে আছে?
– হ্যাঁ অই ডায়েনী আন্টি?

– হ্যাঁ ওনার নাম মিথীলা, উনি হলেন সাফোয়ান স্যারের আগের প্রেমিকা। স্যার মিথীলা ম্যাডাম কে প্রচুর ভালোবাসতো। ম্যাডাম কিন্তু এরপরেও স্যার কে ছেড়ে চলে যান।
সানার মাথা মনে হয় ঘুরছে,সাফোয়ান কাউকে ভালোবাসতো? এই কারনেই কি সানাকে সাফোয়ান মেনে নিচ্ছে না। সানার কেমন যেনো লাগছে। তবুও সে নিজেকে সামলায়।
-আপা এসব বাদ দেন। এইসব নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাইনা। তাড়াতাড়ি আমাকে প্লেট টা দিন ওনার খুদা লাগছে।
– আমাকে ক্ষমা করবেন আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনাই।

– ছিহ ছিহ আপা আমি কষ্ট পাই নাই৷ এভাবে ক্ষমা চেয়ে আমাকে ছোট করবেন না। আপনি আমাকে বলছেন শুনছি।
সানা খাবার নিয়ে চলে গেলো উপরে। এসব নিয়ে ভেবে সানা নিজের মুড খারাপ করতে চায় না৷ সে ছিলো আর এখন সানা আছে। অতীত কে নিয়ে ভবিষ্যত খারাপ করতে চায়না। সানা খাবার নিয়ে রুমে যায়।
– আমাকে একটু খাইয়ে দেও তো সানা আমি অনেক ইম্পোর্টেন্ট কিছু টাইপ করছি।
– আমি?

সানা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাফোয়ানের দিকে। বিশ্বাস হচ্ছে না যে সাফোয়ান তাকে খাইয়ে দিতে বলে। সাফোয়ান বিরক্তিকর নিশ্বাস ফেলে।
– না খাইয়ে দিলে বলো এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেন?
– না না দাড়ান হাত ধুয়ে এসে দিচ্ছি।
– দাড়াতে পারবো না বসে আছি আমি।

সানা কথা বাড়ালো না। হাত ধুয়ে এসে খাবার মেখে সাফোয়ান কে খাইয়ে দিতে লাগলো। যে মেয়ে মায়ের হাতে খাবার খাওয়ার জন্য কি বায়না করতো,আজ সে তার স্বামী কে খাইয়ে দিচ্ছে।
সাফোয়ান কাজ করতে করতে সানার হাতে খাবার খাচ্ছ্র।
– কাল তৈরি থেকো সানা আমি তোমাকে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবো। কি নিয়ে পড়তে চাও তুমি?
– কি আমি কোনো স্কুলে টিশকুলে ভর্তি হচ্ছি না। আমার পড়াশুনা করার কোনো ইচ্ছা নাই। পড়ালেখার ইচ্ছা থাকলে তো আমি বাবার বাসায় ই পড়তে পারতাম। আমি আপনাকে বিয়ে ক রে কি লাভ হবে যদি সেই আপনি আমাকে স্কুলে ভর্তি করেন।

– সানা মজা বাদ দেও,আমি জানি এগুলা মজা করেই বলো। যাইহোক তোমার স্বপ্ন কি ভবিষ্যতে কি হতে চাও?
-অনেক ভালো একজন বউ,আর মা। মজ দিয়ে সংসার করতে চাই।
– সানা আমার মেজাজ খারাপ করো না। পড়াশুনা নিয়ে কেউ মজা করে না.।
সানার বলা কথা গুলো এতোদিন মজা ভেবে নিয়েছিলো সাফোয়ান।সে ভাবছিলো সানা মজা করে পড়বে না এসব বলছে। কারন প্রত্যেকটা মেয়ে চায় পড়াশুনা করে নিজে কিছু করতে। নিজের পায়ে দাড়ানোর কত স্বপ্ন থাকে। সানার কথায় সাফোয়ানের মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে যায়।

– কত মেয়ে জানো পড়াশুনো করতে চেয়েও সেই সুযোগ সুবিধা পায় না। হয়তো আর্থিকভাবে নাহয় পারিবারিক ভাবে। অনেকের স্বামী তাদের স্ত্রীদের সাবলম্বি হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সানা। জানো আমাদের দেশে একজন মেয়ে কতোটা স্ট্রাগল করে নিজের পড়াশুনা কান্টিনিও করার জন্য? সেই যায়গায় সব সুযোগ সুবিধা তুমি পাচ্ছো। তোমাত হাসবেন্ড তোমাকে পড়াশুনায় হেল্প করবে আর তুমি বলছো পড়বে না। আমি কোনো অশিক্ষিত মেয়ের সাথে সংসার করবো না শুনে নেও সানা।

– আমি তো ৮ অব্দি পড়েছি তাই না? সেই হিসেবে আমি অশিক্ষিত না৷
সানা করুন চোখে সাফোয়ানের দিকে তাকালো।
– আমার কথাই শেষ সানা। পড়া শুনা না করলে তুমি এই বাসায় থাকতে পারবে না আর না আমার জিবনে।
– আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন? পড়াশুনা জিনিসটা আমার সাথে যায় না। আমাকে দিয়ে হবেনা।
– আমার শেষ কথা সানা এটা। আমি চাইনা ভবিষ্যতে আমার বাচ্চারা অশিক্ষিত মা পাক। আর তাদের পড়াশুনা গোল্লায় যাক।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৭

– গোল্লায় কেন যাবে আপনার এতো টাকা পয়সা অনেক গুলা টিচার রেখে দিবেন তাহলেই হবে।এতো কিপটামি ভালোনা ।
-মা যদি হয় পড়াচোর , পড়ার আশে-পাশে ঘেঁষে না। এইরকম মায়ের সন্তান রাও সেম পড়াচোর হবে।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৯