নীড়ের খোজে বোনাস পর্ব 

নীড়ের খোজে বোনাস পর্ব 
জান্নাতুল বিথী

কোলাহল পূর্ন আজকের সকাল,ঘুম ভাঙ্গে বিয়ে বাড়ির চিৎকার চেচামেছিতে!চোখ বন্ধ রেখে বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই রীতিমতো হা হয়ে যায় আমার মুখ।শৈবাল আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে আমায় তার বাহুডোরে,তার সামনের চুল গুলো চোখের উপর পড়ে আছে সে কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আমি একহাত দিয়ে তার চুল গুলো কপাল থেকে সরিয়ে দেই,এই চুল গুলোকেও হিংসে হয় আমার তার কপাল চোখ সব সময় ঢেকে রাখে।আমি চুলের ভেতর আঙ্গুল দিয়ে নড়াচড়া করতে করতে ফিসফিস করে বললাম,

‘শুনুন,আপনার এই চুল গুরো কেটে একটু ছোট করতে পারেন না?আপনার চোখ গুলো দেখতে আমার বেশ সমস্যা হয়।সব সময় চশমা আর চুল দুটোই আপনার চোখ গুলো ঢেকে রাখে,উফ কি যে বিরক্তি লাগে আমার আপনি বুঝবে না সেটা!’
কথাটা বলে তার খোচা খোচা দাড়িতে ঠোঁটের স্পর্শ একে দিয়ে উঠে পড়ি তড়িগড়ি করে,ভাগ্যিস সে ঘুমাচ্ছে নয়তো কেমন বেহায়া মনে করতো আমাকে ভেবেই ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ি।শৈবাল কাল রাত্রে কখন রুমে আসছে দেখিনি আমি,আমার সাথে কথা বলার ফাকে তার ডাক পড়ায় তাকে চলে যেতে হয়!তারপর তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ি আমি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হিমেলের পাশে দাড়িয়ে আছি ছেলেটা সেই কখন থেকে গাল ফুলিয়ে বসে আছে,তার একটাই কথা আমি এখন আর আগের মতো ভালোবাসিনা তাকে।যদি সত্যিই ভালোবাসতাম তাহলে তার খোজ খবর নিতাম,কাল থেকে অবশ্যই তার খোজ তেমন নেওয়া হয়নি!আমি ব্যাস্ত ছিলাম আমার কাজ নিয়ে আর সে ব্যাস্ত ছিলো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান নিয়ে।তাই তার খবর নেওয়া হয় আর তাই সে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকে পর্যবেক্ষন করছি,ছেলেটা সত্যিই রাগ করছে ভাবলেই প্রচুর হাসি পায় আমার!আশে পাশে একবার তাকিয়ে হাসি দমিয়ে নেই,অতঃপর ওর দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বললাম,

‘আচ্ছা বাবা স্যরি বলছি তো,তার পরেও রাগ করছো কেনো এই যে দেখো কানে ধরছি আর কখনো এমন হবে না!’
দুই কানে হাত দিয়ে মুখটা ইনোসেন্ট করে বললাম তাকে,সে তখনো গাল ফুলিয়ে বললো,
‘সত্যি তো?আর কখনো এমন করবে?’
আমি ওইভাবেই কানে হাত দিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম,হিমেল হেসে দেয়।চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
‘গুড গার্ল, লক্ষী আপু আমার।’
তাকে স্বাভাবিক ভাবে কথা দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলি আমি।দুজনেই গল্পে মেতে উঠি আবার,শৈবালের বড় মামা হিমেলের কাছে এসে জানতে চায়,

‘এই হিমেল রিজুর দলকে দেখেছিস?কোথায় গেলো হা*রামি দল কতো কাজ পড়ে আছে এদিকে।’
হিমেল মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘রিজু ভাইয়ের পুরো গ্যাং হাসপাতালে চিৎফটাং হয়ে আছে।’
‘মানে কি হয়েছে?’

‘জানিনা,তবে শুনেছিলাম রিজু ভাইয়ের গ্যাংকে, কে বা কারা যেনো পিটিয়েছে।সৈকত ভাইয়া সহ হাসপাতালে নিয়ে গেছে।’
‘কে মারবে ওর মতো ছেলেকে?আমাদের এলাকার কারো সা*হস হবে না ওকে মারার।তাহলে কে এই দুঃসাহস করলো?আর কেনো পিটালো ওদের?’
আহাজারি করে বলতে থাকে বড় মামা,আমি নিরব দর্শক হিসেবে সবটা দেখছি।পাশ দিয়ে একটা ছেলে যেতে যেতে বললো,

‘রিজু ভাইয়ের দল শুনেছিলাম কোনো মেয়েকে দেখে বা*জে কথা বলছে,তাই ওদের পিটিয়েছে দুইটা ছেলে।কিন্তু ছেলে গুলোর মুখ দেখিনি কেউ।’
কোনো মেয়েকে নিয়ে বা*জে কথা বলছে কথাটা শুনে চ*মকে উঠি আমি,আচ্ছা কোনো মতে আমাকে নিয়ে বা*জে কমেন্ট করার কারনে কেউ ওদের মারে নাই তো?পরক্ষনেই নিজের ভাবনাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেই,দুইটা ছেলে আসবে কোথা থেকে ওদের মারার জন্য?তাই এটা নিয়ে আমি আর না ভেবে ভেতরে চলে আসি।ভেতরে আসতেই বড় আম্মু বললো,
‘কি হয়েছে তুহা তুমি এখনো রেডি হওনি কেনো?বারোটার বেশি বেজে গেছে কখন রেডি হবে আর কখন যাবে?’
‘এখুনি যাচ্ছি বড় আম্মু।’

শৈবাল নিশ্চয় ছোট মামার কাছে তাকে রেডি হতে সাহায্য করছে।আমি বরং রেডি হয়ে নেই তার দেখা আজ পাবো বলে মনে হচ্ছে না,ভাবতে ভাবতে রুমে এসে দেখি তিথী সহ রেডি হচ্ছে।আম্মুও সেখানে উপস্থিত ছিলো,আমাকে দেখতেই ধ*মক দিয়ে বললো,

‘কোথায় কোথায় ঘুরিস তুই?কান্ড জ্ঞান হবেনা কখনো না?রেডি হবি কখন তোর সাথের সকাই রেডি হয়ে বসে আছে।’
আম্মুর কথা শুনে তার দিকে গার ফুলিয়ে তাকাই সে আমাকে তাড়া দিয়ে বললো,
‘যা তাড়াতাড়ি গিয়ে রুম থেকে শাড়ি নিয়ে আয়,আমি পরিয়ে দিচ্ছি। ‘
‘আমি শাড়ি পরবো না,ভালো কোনো জামা পরলেই হবে!’

কথাটা বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে আসি আমি,একবার যেহেতু বলেছি শাড়ি পরবো না তাম মানে কখনো পরবো না!ভেবেই রুমে এসে দরজা বন্ধ করে লাগেজের কাছে গিয়ে একটা সুন্দর জামা বের করে নেই!জামাটা নিয়ে পেছনে ঘুরতেই দেখি শৈবাল আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে,তাকে হঠাৎ এভাবে রুমে দেখে হকচকিয়ে যাই আমি।সে আমার দিকে এগিয়ে এসে হাত থেকে জামাটা নিয়ে আগের জায়গায় রেখে দিয়ে আমার সামনে ঝুকে দাড়িয়ে বললো,

‘নাও পাঞ্জাবির বোতাম গুলো লাগিয়ে দাও!’
‘পরবো না আমি।’
কথাটা শুনে সে বিরক্ত হয়ে আমার দু হাত এগিয়ে নিয়ে বুকের উপর রেখে ইশারা করে যেনো বোতাম গুলো লাগিয়ে দেই।তার ঘাড় ত্যাড়ামি দেখে আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাতেই বড় সড় একটা ক্রাশ খাই!তার গায়ে মেরুন রঙের পাঞ্জাবি জড়ানো,চোখে চশমা নেই চুল গুলো আগের তুলনায় ছোট করা!তার এই লুক দেখে আমি টাস্কি খেয়ে যাই,এতো দিন তাকে দেখে ব্রিলিয়েন্ট ব্রিলিয়েন্ট মনে হতো,আর এখন হিরোর মতো লাগছে।আমি ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছি!আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে শৈবাল বললো,

‘জামাইটা তোমারই ব্যাক্তি গত সম্পদ তাই যেকোনো সময় দেখতে পারবে,এখন ঝটপট্ বোতাম গুলো লাগিয়ে দাও তো।’
তার কথাটা শুনে তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নেই আমি,বোতাম গুলো লাগাতে লাগাতে বললাম,
‘আমি মোটেও আপনাকে দেখছি না,আমি তো ব্যস যাই হোক সেসব বাদ দেন চুল কাটলেন কেনো হঠাৎ?’
‘ইচ্ছে করছে তাই!’
কথাটা শুনে আমি আর কথা বাড়াই না তার বোতাম গুলো লাগিয়ে সরে আসি সামনে থেকে।একটু পর সে আবার আমার সামনে এসে হাতে একটা শাড়ি দিয়ে বললো,

‘এটা পরে রেডি হয়ে নাও!’
শাড়ি দেখে আমি চমকে উঠি,তাকে শাড়ি টা ফেরত দিতে দিতে বললাম,
‘আমি শাড়ি পরবো না!’
‘কেনো?’
‘ইচ্ছে করছে না তাই!’
‘তোমার ইচ্ছেতেই সব হবে?’
‘হ্যা!’

‘তুহা ত্যাড়ামি করবে না,তুমি জানো আমি কতো কষ্ট করে তোমার সাথে ম্যাচিং করে পাঞ্জাবি কিনলাম আর তুমি বলছো পরবে না?এটা আবার কেমন কথা?’
‘আমার ভালো লাগছে না প্লিজ জোর করবেন না!’
‘কালকের জন্য স্যরি বলছি তো,পরে নাও তাড়াতাড়ি!’
আমি তার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে বললাম,
‘বলছি তো পরবো না!’

নীড়ের খোজে পর্ব ১৫

‘রাগাবে না আমাকে তুহা খুব খারাপ হবে কিন্তু বলে দিলাম,বিশ মিনিট সময় দিলাম তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো আমি অপেক্ষা করছি।’
কথাটা বলে সে আমার হাতে শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আমি শাড়ি টার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বের হয়ে আম্মুর কাছে চলে আসলাম!সে যেভাবে রেগে রুম থেকে বের হলো শাড়ি না পরলে নির্ঘাত খু*ন করবে আমাকে।

নীড়ের খোজে পর্ব ১৬