নীড়ের খোজে পর্ব ১৬

নীড়ের খোজে পর্ব ১৬
জান্নাতুল বিথী

শৈবালের পাশে মুখ গম্ভীর করে বসে আছি,মূলত তার উপর আমি পুচুর রেগে আছি।তার জোরাজোরিতে আমাকে শাড়ি পরতে হইছে,বিয়ে বাড়ির এতো ভীড়ে শাড়িতে পা বেধে পড়ে যেতে ধরেছিলাম একবার!ভাগ্যিস একটা মেয়ে দ্রুত ধরে ফেলেছিলো,কতো জন হেসে উঠেছিলো।রাগে ল*জ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার মতো অবস্থা হইছে,তাই ভীড় ঠেলে শৈবাল কে খুজে বের করি!সে ছোট মামার পাশে স্টেজে বসে আছে,দেখে তো মনে হচ্ছে বর বসে আছে।কয়েকটা মেয়ে তার দিয়ে পলক হীন তাকিয়ে আছে আর কিসব বলাবলি করছে!আমি রে*গে গিয়ে তার হাত ধরে বলি,

‘এদিকে আসুন!’
‘কি হয়েছে তুহা কোনো সমস্যা?’ ছোট মামা বললা।
আমি মাথা দুই দিকে নেড়ে না বললাম,শৈবাল উঠে আমার হাত ধরে বাহিরে চলে আসে!এদিকে লোক জনের পরিমাণ তেমন নেই।
‘কি হইছে এতো ছেলেদের মাঝে তোমার স্টেজের ওইদিকে যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো?ফোন কোথায় তোমার,ম্যাসেজ করলেই তো চলে আসতাম আমি।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘এতো কিছু মাথায় ছিলোনা।’ চোখ মুখ কুচকে উত্তর দিলাম আমি।
‘কি হইছে বলো!’
‘কিছু হয়নি,আপনি আমাকে শাড়ি পরতে বলার কি দরকার ছিলো?এতো ভীড়ের মাঝে আমি শাড়ি সামলাতে পারি নাকি?’
একটু থেমে আবার বললাম,
‘আমাকে জোর করে শাড়ি পরিয়েছেন এখন আপনার শাস্তি হলো আমার পাশে দাড়িয়ে থাকবেন,একদম নড়াচড়া করতে পারবেন না!’

শৈবাল ঠোঁট কামড়ে মুচকি হেসে বললো,
‘এমন শাস্তি পাওয়ার জন্য হাজার বার এই কাজ করতে পারি!’
কথাটা শুনে ভেংচি কেটে অন্য দিকে ফিরে তাকাই আমি,সে দুইটা চেয়ার এনে বসতে ইশারা করে একটাতে নিজে বসে পড়ে!সেই থেকে এখনো তার পাশে গম্ভীর মুখ করে বসে আছি।সে চুপচাপ বসে গেইম খেলে যাচ্ছে,এদিকে আমি যে বিরক্ত হয়ে বসে আছি সেদিকে তার খেয়াল নেই,একটু পর তিথী এসে হাজির হয়।আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
‘তুহা ওইদিকে চলো আমরা খেতে বসবো!’

আমি উঠে যেতে চাইলেই শৈবাল আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বসে থাকতে বললো,তারপর তিথীর দিকে তাকিয়ে আড়মোড়া ভেঙ্গে বললো,
‘তিথী তুমি বরং অন্যদের সাথে এনজয় করো,আমার বউটা আমাকে চোখে হারায়!অন্যদিকে গেলে আমাকে না দেখে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।’

শৈবালের কথায় চোখ গরম করে তার দিকে তাকাই,তিথী ওওও বলে মৃদু চিৎকার করে উঠে মিটিমিটি হাসতে হাসতে চলে যায়!এদিকে লজ্জায় মরি মরি অবস্থা আমার,আমাকে লজ্জা পেতে দেখে শৈবাল আহাজারি করে বললো,
‘লজ্জায় এভাবে টমেটোর মতো লাল হয়ে যাবেনা বউ,টুপ করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে!’
কথাটা শুনে বিরবির করে কয়েক শত বার বললাম,

‘অ*সভ্য অ*সভ্য অ*সভ্য….’
‘চলো আমরা বরং খেতে যাই!’
বলতে বলতে সে টুপ করে আমার গালে ঠোঁট ছুয়ে সামনে এগিয়ে যায়,এদিকে তার কাজে হতভম্ব হয়ে গা*লে হাত দিয়ে আশে পাশে তাকাতেই আরো অ*প্রস্তুত হয়ে পড়ি!আমার থেকে কয়েক হাত দূরে কয়েকটা মেয়ে বসে এদিকেই তাকিয়ে আছে,এতক্ষন তারা এখানে বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে কিসব কথা বলতেছিলো!

শৈবালের এমন কাজে মেয়ে গুলোও মিটিমিটি হাসতে লাগলো,একসময় জোরে হেসে উঠতেই তড়িগড়ি করে উঠে শৈবালের পেছন পেছন হাটতে থাকি আমি!মনে মনে কয়েক হাজার গা*লি দিলাম।আমি এগিয়ে যেতেই শৈবাল একটা চেয়ার এগিয়ে দিলো,আমি বসতেই ন*জর পড়ে টেবিল ঘিরে আরো কয়েকজন ছেলে মেয়ে বসে খাচ্ছে!আমাদের বসতে দেখে তারাও আমাদের দিকে তাকায়,শৈবালের সাথে দু একটা কথা বলতে বলতে তারা খেয়ে যাচ্ছে।

যতোটুকু বুঝলাম তা হলো এরা মেয়ে পক্ষ,মেয়ের বোন,বোন জামাইরা!আমার দৃষ্টি সামনে বসা কপোত কপোতী দের দিকে নিবদ্ধ!মেয়েটা হয়তো অসুস্থ তাই ছেলেটা তাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর একটু পর পর তার মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিচ্ছে!এমন একটা দৃশ্য দেখে মুহূর্তেই মনটা ভালো হয়ে গেলো আমার,তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম আমি।

ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে নিচের দিকে তাকাতেই দেখলাম শৈবাল আমার প্লেটে পোলাও বেড়ে দিচ্ছে,অতঃপর তরকারি দিতে দিতে বললো,
‘গরু মাংশ যেনো টাচ ও করতে না দেখি তোমাকে,মাংশে এলার্জি আছে ভুলে যেওনা।’
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম তার কথার,কতো গুলো চোখ আমাদের দিকে নিবদ্ধ।শৈবাল সেসব কে উপেক্ষা করে খাওয়া শুরু করলো,সে খাওয়া শেষ করে বসে বসে আমার শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে!তার মাঝে তার ডাক পড়তেই সে আমাকে বললো,

‘আস্তে আস্তে খাও,একদম তাড়াহুড়ো করবে না আমি এখুনি আসছি!’
আমি তার দিকে তাকিয়ে হ্যা বললাম,সে যেতেই একটা মেয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো,
‘তোমার হাজবেন্ড তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই না?’
‘জানি না,হয়তো বাসে!’
তার পাশ থেকে একটা ছেলে বললো,

‘ওমা মেয়ে হয়তো বাসে বলছো কেনো?সে সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসে,কি সুন্দর তোমার সব দিকে খেয়াল রাখছে!মাছের কাটা পর্যন্ত বেছে দিলো তোমাকে ইশ কতো কেয়ারিং হাজবেন্ড তোমার,একদম আমাদের নিবিড় এর মতো!
শেষের কথাটা যে ছেলেটা এতক্ষন মেয়েটাকে খাইয়ে দিতেছিলো তার দিকে তাকিয়ে বললো,বুঝলাম ছেলেটার নাম নিবিড়!নিবিড় আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে তারপর বললো,

‘আমার চাইতেও কেয়ারিং কারন আজ পর্যন্ত কখনো আমি নূপুর কে মাছের কাটা কেছে দেইনি,এই কঠিক কাজটা আমার দ্বারা কখনো সম্ভব হয়নি!ছেলেটা অন্য রকম কে কি বললো কোনো কিছুর পরোয়া করে না।’
পাশ থেকে আরেক টা মেয়ে একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘দেখো দেখো তোমার ছোট দের কাছ থেকে অন্তত কিছু শিখো।’

ছেলেটা মুখ বাকিয়ে আবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলো,শৈবালকে নিয়ে এতো এতো কথা শুনে গর্বে বুক ফুলে উঠে আমার!ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে আমার,নিজেকে আজ সত্যিই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।খাওয়া শেষ করে ট্যিসু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে আসে পাশে তাকিয়ে শৈবালকে খুজতে থাকি,কয়েক সেকেন্ডের মাঝে হঠাৎ শৈবাল পেছন থেকে বললো,
‘খাওয়া শেষ?’

আমি পেছন ফিরে তার দিকে তাকাই,মানুষটার ঠোঁটের কোণে হাসি।যে হাসি টা আমার সাথে কথা বলতে গেলেই সব সময় খেয়াল করি আমি,অন্যদের সাথে সে অলওয়েজ গম্ভীর মুখে কথা বলে!আমি তার দিকে তাকালে সে বললো,
‘চলো মামার বউ দেখবে না?’

নীড়ের খোজে বোনাস পর্ব

আমি হু বলে তার সাথে এগিয়ে যাই,ঘরের ভেতর ঢুকতেই চারদিকে তাকিয়ে দেখি এদিকে মানুষের সমাগম তেমন নেই বললেই চলে!কেউ খেতে ব্যাস্ত তো কেউ বর দেখতে ব্যাস্ত।আমার মনে কি হলো ঠিক জানি না তবে হঠাৎ করে চোখ বন্ধ করে শৈবালকে বললাম,
‘আমি একবার আপনাকে জড়িয়ে ধরতে পারি শৈবাল?’

নীড়ের খোজে পর্ব ১৭